আমাদের পাঠকদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় লেখকদের মেরে ফেলার অদ্ভুত এক প্রবণতা রয়েছে। অনেকের ধারণা একজন জনপ্রিয় লেখক মাত্রই মৃত।
ধৈর্য্য ধরুন, খুলে বলছি।
ক.
সমরেশ মজুমদার নামে একজন লেখক আছেন তা আমি প্রথম জানতে পারি ২০১৮ সালের শুরুর দিকে। একই সময় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথাও জানতে পারি। তার পরের বছর লেখকদ্বয় কয়েকদিনের ব্যবধানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাতিঘর ঘুরে যান। একদিন আলাপের মাঝে এক পাঠককে বললাম, সমরেশ-শীর্ষেন্দু তো ঢাকা ঘুরে গেল। দেখা করেছিলেন তাদের সঙ্গে?
তিনি আমার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লেন। বললেন, মৃত মানুষ আবার ঘুরে বেড়ায় কিভাবে?
বুঝলাম, সমরেশ-শীর্ষেন্দুর বেশ কয়েকটা উপন্যাস পড়লেও পাঠক ভদ্রলোক লেখকদের জীবনবৃত্তান্ত সম্পর্কে অবগত নন।
খ.
নিমাই ভট্টাচার্য মারা যান গতবছরের ২৫শে জুন। সেদিন ফেসবুকের পাতায় লিখলাম, প্রখ্যাত লেখক নিমাই ভট্টাচার্য মারা গিয়েছেন। উনার লিখা 'মেমসাহেব' আমার অন্যতম প্রিয় উপন্যাস।
আরেক পাঠক ভদ্রলোক এসে তাতে মন্তব্য করে বসলেন, বলেন কী? উনি এতদিনও বেঁচে ছিলেন?
গ.
দিন কয়েক আগের কথা। আমার পরিচিত এক ভাই লাইব্রেরিতে গিয়ে হাসান আজিজুল হকের 'আমার ইলিয়াস' বইটি হাতে নিয়ে ফেসবুকে ছবি দিলেন। আমি তাতে মন্তব্য করলাম, লেখক সাহেব অসুস্থ হয়ে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন। এক পাঠক ভদ্রলোক আমার মন্তব্যের জবাবে লিখলেন, লেখক তো বহু আগেই ইন্তেকাল করেছেন। তাহলে আবার হাসপাতালে ভর্তি হলেন কিভাবে?
আমি উনার ভুল ভাঙিয়ে বললাম, লেখক গুরুতর অসুস্থ, তবে এখনো জীবিত রয়েছেন।
ঘ. [ ব্যতিক্রম ]
এ বছর বই মেলার সময় একটা ঘটনা পড়েছিলাম। এক নারী প্রতিদিন অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীর দোকানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন কিন্তু কোনও বই কেনেন না। একদিন এক কর্মচারীর সাথে তার চোখাচোখি হলে তিনি বলেন, আচ্ছা এবার দোকানের উপরে হুমায়ূন আহমেদের বদলে বঙ্গবন্ধুর রেপ্লিকা তৈরী করেছেন বলে কি লেখক অভিমান করে মেলায় আসা বন্ধ করে দিয়েছেন?
কর্মচারী অবাক হয়ে উত্তর দিলেন, উনি তো ২০১২ সালেই মারা গিয়েছেন। কর্মচারীর কথা শুনে নারীটি দোকানের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
ঙ.
কয়েকদিন আগে অর্থাৎ ২৫শে আগস্ট নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের জন্মদিন ছিল। পাঠক মহল ও তসলিমা পন্থীরা বেশ সোৎসাহে লেখিকার জন্মদিন উদযাপন করেছে। এক নারী লেখিকার একটি ছবি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে উপরে লিখেছেন-
'নারী জাগরণের অগ্রদূত ও রবীন্দ্রনাথ পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক তসলিমা নাসরিনের আজ শুভ জন্মদিন। লেখিকার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।'
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।