অসাধারণ লেখা। অভিভূত হলাম পড়ে।
ধন্যবাদ সন্দীপনবাবু, প্রবন্ধটি পড়ার জন্যে।
যদি যুক্তিতে কোন অসম্পূর্ণতা বা সীমাবদ্ধতা দেখতে পান নির্দ্বিধায় বলবেন, তাহলে আমি আরও খুঁটিয়ে দেখব।
আপাততঃ নাগার্জুনের মাধ্যমিক দর্শনের 'লজিকের বিরুদ্ধে লজিক' থিসিস মন দিয়ে পড়ছি। শংকরাচার্য ওখান থেকেই তাঁর শাণিত যুক্তিগুলো ধার করেছেন।ঃ))
রঞ্জনদা,
এই লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি কিছুদিন থেকে অদ্বৈতবাদ পড়ার চেষ্টা করে খুবই ঠেকে যাচ্ছি। মনেমনে ভাবতাম "কেউ যদি একটু সহজ করে বুঝিয়ে দিতো"। কিন্তু কাকে বলবো তা জানতামনা। আপনার এই লেখাটা অনেক জট খুলে দিচ্ছে। আমি একবার পড়লাম। কিন্তু পুরোটা মাথায় তুলে নেবার জন্য আমাকে আরো বেশ কয়েকবার পড়তে হবে। মনে কিছু প্রশ্ন আছে। আরো কয়েকবার পড়ার পরেও যদি তা থাকে তাহলে আপনাকে জিজ্ঞেস করবো। কী যে উপকার করলেন আমার তা আপনি নিজেও জানেননা রঞ্জনদা!
কেকে,
কী বলব? আমি একলব্য ছাত্র। প্রথাগত ভাবে পড়িনি। কিন্তু দর্শন আমার প্রিয় বিষয়। সবসময় চাই নিজের যা মনে হচ্ছে সেটা কতদূর ঠিক বা আদৌ ঠিক কিনা--বাজিয়ে নিতে। খুব মন দিয়ে শংকরাচার্য্যের অদ্বৈত বেদান্ত ও রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈত পড়লাম। কিন্তু এই পড়াগুলো তো অন্তহীন।
আমি একেবারে ধার্মিক নই, পাঁড় নাস্তিক। চেষ্টা করছি বিশুদ্ধ দর্শনের মাপকাঠিতে পড়তে। এরপর কুমারিল ভট্টের পূর্বমীমাংসা পড়ব, গঙ্গানাথ ঝা'র ইংরেজি ভার্সনে। ভারতীয় দর্শনে বিভিন্ন স্কুলের মধ্যে মেটাফিজিক্স ও এপিস্টেমোলজির প্রশ্নে যে বিতর্ক গুলো রয়েছে তা অত্যন্ত আকর্ষক ও সেকুলার। চিন্তার পরিধি আজও প্রাসঙ্গিক।
আমি খুব আগ্রহী আপনার প্রশ্ন শুনতে। যে যা বুঝেছি, যতটুকু বুঝেছি ভাগাভাগি করে নেব।
রঞ্জনদা,
একটা ব্যপারে আপনার সাথে মিলে যাচ্ছে। আমি আদৌ ধার্মিক নই, কিন্তু 'দর্শন' বিষয়টায় আমারো প্রচুর ইন্টারেস্ট আছে। অবশ্য আপনার সাথে অমিল এখানে যে আমার পড়াশোনা এ বিষয়ে, খুব বেশি নয়। সবেই একটু বোঝার চেষ্টা শুরু করেছি। কোনদিক দিয়ে এগোতে হবে, বইপত্র কোথায় পাওয়া যাবে এসব আটঘাট খুব ভালো বাঁধা নেই। কিন্তু আমার স্বভাব মত প্রশ্ন আসে অনেক। কাকে জিজ্ঞেস করবো সে ভেবে পাইনা। এখন আপনাকে বাগে পেয়েছি। প্রশ্নগুলো নামিয়ে রাখি। আগেই বলেছি, আমার পড়াশোনা (বুদ্ধি-সুদ্ধিও) তেমন নেই। কাজেই প্রশ্ন শুনে হাসি পেলেও চেপে রাখবেন। ঠিক আছে তো?
১) প্রথম প্রশ্নটা ঠিক আপনার এই লেখাটা নিয়েই তা নয়। ইন জেনেরাল অদ্বৈতবাদ এর কনসেপ্ট নিয়ে। এই কনসেপ্ট অনুযায়ী তো পরম ব্রহ্ম ছাড়া আর কোনকিছুই এক্সিস্ট করেনা। আমরা কেউ আসলে সত্যি নই। শুধুমাত্র অবিদ্যার কারণে আমরা ইলিউশন দেখছি যে আমরা আছি। ব্রহ্মকে কেউ সৃষ্টি করেনি সে বুঝলাম। তা, এই অবিদ্যার সৃষ্টি কে করলো? বা আদৌ যদি কেউ কোনোরকম সৃষ্টি করছেনা এই ধারণাই যদি সত্যি হয়, তাহলে অবিদ্যা জিনিষটা এলো কোথা থেকে? একটা এত স্ট্রং ইলিউশন তৈরী হয়েছে যে কোনো মতেই সেটা ভাঙা যাচ্ছেনা (মানে ধরে নিচ্ছি অন্তত ৮৫-৯০ শতাংশ লোক সেটা ভেঙে বেরোতে পারছেনা)। এত বড় ব্যাপারটা ঘটছে কেন? মানুষ নেই, জন নেই, আপনি আমি কেউ নেই। তাহলে এই মায়া আর বিভ্রম দেখছে কারা? ব্রহ্ম নিজেই দেখছেন? নাকি অবিদ্যা ব্রহ্মের কোনো স্বপ্ন?
এই প্রশ্নেরই জের টেনে আরেকটা প্রশ্ন আসছে। আমি রবার্ট অ্যাডামসের কিছু লেখায় পড়েছি-- যা কিছু আমরা দেখছি, এক্সপেরিয়েন্স করছি সেগুলো মায়া তো বটেই, এগুলো আসলে আমাদের এক একটা চিন্তা। থট। উনি বলছেন যখনই থট আসবে, তাকে যদি আমি মানসিক জগতের চিন্তা বলে চিনতে পারি, বা কোনো অভিজ্ঞতা কি ধারণা হিসেবে চিনতে পারি, তাহলে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে যে এই চিন্তাগুলো কার আসছে? " Who is thinking this? Who does this thought belong to?" তাহলে ধীরে ধীরে একদিন সেই জায়গায় পৌঁছনো যাবে যেখানে দেখা যাবে আমি ও আমার চিন্তা এক নই। এমনকী আমি বলেই কেউ নেই। বেশ। আমি বলে যদি কেউ না থাকে, তাহলে সেটা বুঝবে কে? ব্রহ্মই বুঝবেন? আমরা কী একটা ছবির একেকটা ইন্ডিভিজুয়াল পিক্সেলের মত ব্রহ্মের পার্ট? যে পিক্সেলগুলো স্বাধীনভাবে ইলিউশন দেখতে পারে?
২) দ্বিতীয় প্রশ্ন আপনার লেখার সাথেই সম্পর্কিত। এই যেখানে এই কথাটা আসছে " টিভি সেটের অস্তিত্ব যদি আমার চেতনার উপরই নির্ভর করত তাহলে আমি ঘরেই থাকি বা বাইরে, টিভিটা সবসময় দেখতে পেতাম। কারণ টিভি আমার ঘরে নেই, চেতনায় রয়েছে।" এমন কি হতে পারে যে আমার চেতনায় এই ব্যাপারটা আছে যে টিভিটা আমার ঐ বিশেষ ঘরটার একটা বিশেষ জায়গাতেই শুধু আছে? আর সেই জন্যই সেই বিশেষ জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও আমি টিভিটাকে দেখতে পাচ্ছিনা? হতে পারে যে এটা একটা খুব স্ট্রং সাজেশন, আর সেইজন্যই চেতনাতে থাকা সত্বেও আমি ঘরে-বাইরে যেকোনো জায়গাতেই টিভিটাকে দেখতে পাবোনা?
৩) তিন নম্বর প্রশ্নও এই লেখা নিয়েই। " স্বপ্নের অনুভূতিকে জাগ্রত অনুভূতি খারিজ করে দেয়। তারপর যদি কোন অনুভূতি জাগ্রত অনুভূতিকে খারিজ না করে তাহলে বুঝতে হবে দ্বিতীয় অনুভূতিটি সত্যি, মানে জেগে আছি " আমি শুভগুপ্ত বা কুমারিল ভট্টের দর্শন কিছুই পড়িনি। 'অবিসম্বাদদৃষ্টি' সম্পর্কেও কিছুই জানিনা। কিন্তু এমন কি হওয়া সম্ভব যে যাকে এখানে 'জাগরণ' ভাবা হচ্ছে সেটাও আসলে স্বপ্ন, কিন্তু অন্য স্তরের স্বপ্ন? যেমন ধরুন 'ইনসেপশন' সিনেমাটায় দেখানো হয়েছিলো লেয়ার আফটার লেয়ার অফ ড্রীমস। সেখানে এক লেয়ারের স্বপ্নে যখন ডিফ্রিবিলেটার দিয়ে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হচ্ছে, তার পরের লেয়ারের স্বপ্নে সেটাকেই মনে হচ্ছে থান্ডার স্টর্ম। এমনি আমাদেরও প্রতিটা স্বপ্নের স্তর, তার আগের স্তরের থেকে কিছুটা বেশি কমপ্লেক্স হতে পারে না? ধরুন যাকে আমি জাগরণ ভাবছি, সে এসে আমার 'স্বপ্ন'কে ভেঙে দিলো। কিন্তু হয়তো জাগরণ এতখানিই স্ট্রং ও কমপ্লেক্স স্বপ্ন যে সেটাকে ভাঙা অত সহজ নয়। সেইজন্যই আমি ধরে নিচ্ছি এটা আর স্বপ্ন নয়। এবার দেখুন আমাদের মধ্যে এমন মানুষ আছেন যাঁদের কনশাসনেস অন্য লেভেলের। তাঁরা অনেককিছু এমন ভাবে দেখতে পান যেটা সাধারণ মানুষের কনসেপ্টে মোটেই ধরা পড়েনা। সুপারন্যাচারাল ট্যাচারাল বলছিনা কিন্তু! জাস্ট অ্যাওয়ারনেসের কথা বলছি। আমি নিজের কথাই বলতে পারি। অনেকদিন অব্দি জীবনের কিছু কনসেপ্ট একেবারে ধ্রুব সত্য বলে জানতাম। আজকে সেগুলোরই সম্পুর্ণ অন্য একটা দিক দেখতে পাই। যেগুলো আবার কাউকেই বলে বোঝাতে পারিনা। তো জাগরণের মধ্যেই বিভিন্ন লেভেল এটা কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারি। সেই অন্য লেভেল গুলো 'সেকেন্ডারি জাগরণ', 'টার্শিয়ারী জাগরণ' এমনিই মনে হয়। কিন্তু সেগুলো অন্যভাবে অ্যাক্ট করে হয়তো, তাই 'স্বপ্ন' আর 'জাগরণের' মত অত স্ট্রেট ফরোয়ার্ড ভাবে ডিস্টিংট নয়। কিন্তু এটা তো ঠিক যে ঐ পরের লেভেলের জাগরণ এসে হিদারটু পরিচিত জাগরণকে কিছুটা হলেও ভেঙে দিচ্ছে?
তো এই হলো আমার সব জিজ্ঞাসা। আমি অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী তা নই। সত্যি বলতে কী কোনো 'বাদ' এই বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী নই। আমি শুধু ভালো করে বুঝতে চাই। আর পুরোপুরি মন খোলা রেখেছি। কোনো বায়াস নেই। কাজেই আপনার কথা শোনার জন্য খুব আগ্রহ রইলো। তবে ঐ কথাই, বেশি পড়াশোনা না করেই কথা বলতে নেমেছি। আপনি স্বচ্ছন্দে আমাকে বলতে পারেন "বাপু হে নিজে খুঁটে খাও।" তাহলেও কিছু মনে করবোনা :-)
কেকে
আমার জীবনের ১৯ থেকে ২১ বছর কেটেছে, টিবিতে মরমর হয়ে বিছানায় শুয়ে। জয়েন্ট ফ্যামিলির লালুছেলে পাকামি করে সো কল্ড বিপ্লব করতে ঘর ছেড়ে অল্পদিনেই টিবি ধরিয়ে ভিলাইয়ে বাবার হোটেলে ফিরে চিকিতসা করাই। তখন বেশ কিছু বই পড়েছি। যেমন লেনিনের মেটেরিয়ালিজম অ্যান্ড এম্পিরিও ক্রিটিসিজম, ফিলজফিক্যাল নোটবুক, বুদ্ধের দর্শন নিয়ে দেবীপ্রসাদ ও রাহুল সাংকৃত্যায়ন ইত্যাদি। সব বুঝেছি এমন নয়, তবে সবচেয়ে লুসিড মনে হয়েছিল দেবীপ্রসাদ ও লেনিনের এম্পিরিও ক্রিটিসিজন। তারপর ২৭ থেকে ৫৭ বছর কেটেছে ছত্তিশগড়ের গ্রামে, চাকরিসূত্রে। না বই, না লাইব্রেরি না কেনার পয়সা, না তর্কবিতর্ক, আলোচনা করার মত উৎসাহী বন্ধুবান্ধব। সবাই দেখি দর্শন আর অধ্যাত্মকে এক করে দেখে। ছত্তিশগড়ের গ্রামজীবনে কাছ থেকে আদিবাসী ও কৃষক দেখার অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়েছি নিঃসন্দেহে। কিন্তু পড়াশোনার ব্যাপারে খামতি রয়ে গেল।
এখন লেগে পড়েছি। কারণ টেকনোলজির উন্নতি এবং পেনশনের ফলে বই কেনার সামান্য সামর্থ।
এই বার আপনার প্রশ্ন। দুটো ভাগে আমার মতামত জানাচ্ছি।
(১) পৃষ্ঠভূমিঃ
বিশ্বের সমস্ত দার্শনিক স্কুলকে মোটামুটি দুরকম ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমে ভাববাদী ও বস্তুবাদী; তারপরে অস্বৈত ও দ্বৈত।
যাঁরা মনে করেন ভাব বা আইডিয়া বা চেতনাই হোল আদি কারণ এবং আল্টিমেট সত্য, বস্তু বা জড়জগত তার উপজ মাত্র, তাঁরা হলেন ভাববাদী(আইডিয়ালিস্ট)। এদের মধ্যে আবার যাঁরা মনে করেন শুধু বিশুদ্ধ চেতনা সত্য বা আদি কারণ; জড়জগত তার উপজ মাত্র এবং কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্বহীন, তাঁরা অদ্বৈত ভাববাদী( ভাব=আইডিয়া, চেতনা)। যেমন শংকরাচার্য, বিশপ বার্কলি। হেগেল, লাইবনিজ এবং ভারতের বিশিষ্টা্দ্বৈতবাদীরা (রামানুজ,নিম্বার্ক, চৈতন্যদেব) সবাই ভাববাদী হয়েও এক পরম চেতনার বিকাশ বা বিস্তার রূপের জড়জগতের অস্তিত্ব স্বীকার করেন।
অন্যদিকে যাঁরা মনে করেন জড়জগত হোল আদি কারণ এবং আল্টিমেট সত্য, কারণ চেতনা তার একটি অংশের ( অরগানিক ম্যাটারের ) বৈশিষ্ট্য তাঁরা বস্তুবাদী বা মেটেরিয়ালিস্ট। তাঁদের মধ্যে যাঁরা বস্তু বা জড়জগতকেই আদি কারণ এবং আল্টিমেট ধরে নেন তাঁরাও অদ্বৈতবাদী, শুধু অদ্বৈত বস্তুবাদী। দিদেরো বেকন ফয়েরবাখ, মার্ক্স এংগেলস, রাসেল , এঁদের মোটামুটি এই দলে ফেলা যায়। ভারতে ন্যায় ও বৈশেষিক দর্শনকে খানিকটা এই দলে ধরা যেতে পারে। কারণ তাদের মেটফিজিক্সে ঈশ্বর অণু পরমাণু ও আকাশ(স্পেস) সৃষ্টি করেননি। এগুলো আগে থেকেই আছে।
এছাড়া রয়েছেন দ্বৈতবাদীরা, যাঁরা মনে করেন-- চেতনা ও বস্তু দুইই সত্য, এবং দুইয়ের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রয়েছে। এঁদের মধ্যে প্রমুখ হলে ১৬শতকের রনে দেকার্ত, ভারতে সাংখ্য দর্শন (কপিল) এবং মধ্বাচার্য ।
এদের বাইরে রয়েছেন এক বড় প্রভাব শালী স্কুল অফ থট-- অজ্ঞেয়বাদীরা (অ্যাগনস্টিক)। এঁরা মনে করেন আল্টিমেট ট্রুথ বা পরম সত্য, সেটা বস্তু হোক কি চেতনা, তা সঠিক ভাবে কখনই জানা যাবে না। নয়ন ওরে খুঁজে বেড়ায় পায় না ঠিকানা! এর সবচেয়ে বড় দার্শনিক হলেন ইম্মানুয়েল কান্ট , আমার ব্যক্তিগত মতে উনি শুদ্ধ দার্শনিক বিচারে মার্ক্স বা হেগেলের থেকেও বড়! (ক্যাল খাওয়ার ভয় থাকলেও বললাম!)।
আজকের অধিকাংশ বিজ্ঞানী (বিশেষ করে ফিজিসিস্ট) অজ্ঞেয়বাদের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন বলে আমার ধারণা। কারণ বিজ্ঞানের সত্য কন্টিঞ্জেন্ট ট্রুথ, নতুন তথ্য ও যুক্তির আলোকে পরিবর্তনশীল। এনিয়ে আপনি ভাল জানেন, আমার ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। কার্ল পপারের 'ফলসিফায়েবিলিটি' মাপকাঠি আমার মতে গুরুত্বপূর্ণ।
একটি বিধিসম্মত সতর্কীকরণঃ ওপরে ভাগাভাগিটা খুব মোটাদাগের। অনেকেইএক অর্থে একটি ভাগে আবার অন্য অর্থে অন্য শেডে। যেমন মোদী সরকার বাজারপন্থী হয়েও অনেক ক্ষেত্রে বামেদের মতই স্টেটিস্ট এবং সেন্ট্রালাইজেশনের পক্ষে। আবার বামেরাও আজকাল উন্নয়নের মডেল বলতে বিগ ইন্ডাস্ট্রি ও ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের বাইরে কিছু ভাবতে পারছেনা। মাওবাদীরাও তাই। ওদের সাইটে ওদের স্বপ্নের ভারতেও সেই সেন্ট্রালাইজড স্টেট, সেই বিগ ইন্ডাস্ট্রি। পরের পোস্টে আপনার স্পেসিফিক প্রশ্নগুলো নিয়ে কথা বলছি।
একটি সতর্কবাণী। ওপরের ওই ভাগ বাঁটোয়ারা
১ অবিদ্যা। আমার ব্যক্তিগত মতে 'অবিদ্যা' হোল শংকরের যুক্তি শৃংখলায় অ্যাকিলিস হীল। অবিদ্যা কি ব্রহ্মের অংশ? মায়া ব্রহ্মের অংশ (উপনিষদ এবং রামানুজ আদি বিশিষ্টাদ্বৈতবাদীদের মতে।
১ অবিদ্যা। আমার ব্যক্তিগত মতে 'অবিদ্যা' হোল শংকরের যুক্তি শৃংখলায় অ্যাকিলিস হীল। অবিদ্যা কি ব্রহ্মের অংশ? মায়া ব্রহ্মের অংশ (উপনিষদ এবং রামানুজ আদি বিশিষ্টাদ্বৈতবাদীদের মতে)। শংকর কিন্তু কোথাও মায়া ও অবিদ্যার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করেননি। বরং এই দুটোকে সুবিধেমত পালটাপালটি করে ব্যবহার করেছেন।
যেমনঃ অবিদ্যার প্রভাবে দুটো কাজ হয়। এক, সত্য রূপকে আবৃত করা , দুই, মিথ্যা ভ্রম সৃষ্টি করা। যেমন দড়ি পড়ে আছে, আপনি অবিদ্যার প্রভাবে দড়ি বা আসল রূপ দেখতে পাচ্ছেননা। আবার দড়ির বদলে সাপ দেখছেন যেটা আসলে ওখানে নেই।
উপনিষদে 'অবিদ্যা' শব্দটি নেই। 'মায়া' আছে। মায়া হোল ব্রহ্মের বিভুতি বা বৈশিষ্ট্য। বলা হয়েছে যে ব্রহ্ম মায়িক শক্তির প্রভাবে জগত সৃষ্টি করলেন। মায়া এভাবে ব্রহ্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
কিন্তু অবিদ্যা ব্রহ্মের কেউ নয়। সে ব্যক্তিচেতনায় বা চোখে পড়া ময়লা। জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত হলে অবিদ্যা ভ্যানিশ। তাহলে অবিদ্যা ব্যক্তিমানুষের চেতনায় একটা সাময়িক ঘোর বা নেশার মত। মারিজুয়ানা খেয়ে গোলাপি হাতি দেখার মত। কিন্তু এটা বললেই মারিজুয়ানা এবং যে খাচ্ছে দুজনেরই স্বতন্ত্র অস্তিত্ব মানতে হয়। শুধু গোলাপি হাতির অস্তিত্বটি বিভ্রমের ক্যাটেগরিতে।
একই ভাবে ব্রহ্ম এবং জীব ও অবিদ্যার স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকলে তবেই অবিদ্যার প্রভাবে জীব ব্রহ্মকে না দেখে স্থুল জগতকে পরম সত্য ভাববে।
শংকরাচার্য্যের নিজস্ব অবস্থান কোথায়? উনি কোথায় দাঁড়িয়ে? ব্রহ্মের অংশ হিসেবে? নাকি তার বাইরে? বাইরে না দাঁড়ালে উনি ব্রহ্ম এবং ব্যক্তিমানুষের অবিদ্যার প্রভাবে ধোঁকা খাওয়া কীভাবে অবজার্ভ করতে পারেন?
আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রয়েছে মানে অবিদ্যাও রয়েছে। এক হিসেবে অবিদ্যাও ব্রহ্মের মতন চিরস্থায়ী ও অনন্ত, নইলে চেতনা সম্পন্ন ব্যক্তিমানুষ যারা বস্তুজগতকে বাস্তব ভেবে তার হিসেবে বাঁচছে, জীবন যাপন কড়ছে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কীকরে?
২ আমি ও আমার চিন্তাঃ
রবার্ট অ্যাডামসের লেখার অনুষঙ্গে আপনার যুক্তি-পরম্পরা সঠিক।
দেকার্ত ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন। ওনার প্রশ্নঃ আমি বলে কেউ বা কিছুর অস্তিত্ব আছে তার প্রমাণ কী? বা আমি যে বেঁচে আছি তার প্রমাণ কী?
-- আমি যে এই প্রশ্ন করছি তার মানেই আমি আছি, নইলে প্রশ্নটা কড়ছে কে? কজিতো এরগো সুম! আই আস্ক/থিংক , দেয়ারফোর আই এক্সিস্ট!
আবার উনি বলছেন -মানুষের মোড অফ এক্সিস্টেন্স হোল চিন্তা করা। মানে যতক্ষণ চিন্তা করছি ততক্ষণ আছি?
৩ স্বপ্নের জগত ও জাগরণের জগত।
'অবিসম্বাদিত দৃষ্টি' মানে যে সত্য বা পারসেপশনকে কোন কাউন্টার বা সুপিরিয়র ডেটা এসে খারিজ করেনি, নেগেট করেনি। এটি ভারতীয় ন্যায়/লজিকের সর্বস্বীকৃত ম্যাক্সিম। কোন একটা ডেটা বা অবজার্ভেশনকে যতক্ষণ অন্য কোন সুপিরিয়র ডেটা এসে কাউন্টার বা নেগেট না করছে ততক্ষণ আগের ডেটাকে সত্যি বলে মানতে হবে। এই ম্যাক্সিমের সুযোগমত ব্যবহার সব স্কুল এমনকি, শংকরাচার্য, রামানুজ, কুমারিল ভট্ট --সবাই করে থাকেন।
স্বপ্নের দুনিয়া ও জাগ্রত দুনিয়ার কাউন্টার কুমারিল ও ন্যায়দর্শনের দার্শনিকেরা দুভাবে করে থাকেন।
এক, একটাকে মিথ্যা বলছ কিসের ভিত্তিতে? তার মানেই তুমি অন্য কোনটাকে সত্যি মনে করছ, তাই তার তুলনায় অন্যটাকে মিথ্যা বলছ। একটা হাতকে বাঁহাত বললে তবেই অন্যটাকে ডান বলার বা একটা সময়কে রাত বললে তবেই অন্যটাকে দিন বলার মানে হয়। দুটোকে এক ক্যাটেগরিকে ফেলতে পারোনা। সেটা সফিস্ট্রি বা বাকচাতুরি।
দুই, একটা সময় (জাগ্রত অবস্থায়) আমরা যে হাইপোথিসিস ধরে কাজ করি বা প্রতিক্রিয়া দিই, সেটা পুরণ হচ্ছে মানে হাইপোথিসিস সত্যি বা আমরা বাস্তবে জেগে আছি। স্বপ্নে কলসি কলসি জল খেলেও তেষ্টা মেটেনা। জাগ্রত অবস্থায় সেটা হচ্ছে। তাই ওটা জাগ্রত অবস্থা বা সত্য।
মানে এই পর্য্যন্ত আমার জাগ্রত অবস্থা 'অবিসম্বাদিত দৃষ্টি' বিচারে উতরে গেছে। বৌদ্ধ বিজ্ঞানবাদী দার্শনিক (এখানে বিজ্ঞান মানে বিশুদ্ধ চেতনা) আচার্য বসুবন্ধু বলছেন-- স্বপ্নেও নাইটফল হয়ে যৌন্তৃপ্তি লাভ হয়, ঠিক জাগ্রত অবস্থার মত।
শুভগুপ্তদের কাউন্টার হচ্ছে মোটেই না। যেই বাস্তবে বা জাগ্রত অবস্থায় যৌন সুখ পাবেন, তখন ঠিক বুঝতে পারবেন যে বাস্তব জীবনের তৃপ্তি কত সুপিরিয়র। তখনই আপনার স্বপ্নের ধারণা 'অবিসম্বাদিত' রইল না, 'বিসম্বাদিত' (ডিস্পুটেড) হয়ে গেল আর আপনি তার ফলে স্বপ্ন ও জাগ্রত অবস্থার তফাৎ বুঝতে পারলেন।
তবু বোলব, এই স্বপ্নের যুক্তিটা বেশ স্ট্রং। আপনার লেয়ার্ড স্বপ্নের কথাটাও।
৪ ভুলে গেছলাম টিভি সেট। হতেই পারে আমার চেতনায় টিভি সেট একটি নির্দিষ্ট স্থানেই রাখা আছে। সেটা কল্পনা না হয়ে বাস্তব হলে চুরি হয়ে গেলে সেই জায়গাটায় সেটা আর দেখতে পাবনা।
যেমন, নাকতলায় দেখা এক অষ্টাদশী তরুণী আমার চেতনায় আজও তাই রয়ে গেছে। চল্লিশ বছর পরে নাকতলায় গিয়ে তাকে আর চিনতেই পারিনা। সে রয়ে গেছে শুধু আমার চেতনায়।
রঞ্জনদা, থ্যাংকিউ। আপনি এই নিয়ে আরো যদি লেখেন কখনো তো উৎসাহ নিয়ে পড়বো।
আমার এক বন্ধু,যার এব্যাপারে বেশ পড়াশোনা আছে তাকে লেখাটা শেয়ার করার পর মেনশন করেছিলাম।তার মন্তব্যটি এখানে দিলাম।আপনার ভালো লাগবে হয়তো।
Sandipan Majumder
পড়লাম। ভাল লিখেছেন। বেশ সহজ ক'রে অদ্বৈতবাদের অর্থাৎ ব্রহ্মসূত্রের শঙ্করভাষ্যের, যার পোশাকি নাম শারীরক ভাষ্য, মূল প্রতিপাদ্য তুলে ধরেছেন। তবে প্রতিক্রিয়ার কথা যদি বলো, আমার দু'টো বিষয়ে কিছু কথা বলার আছে। ১) নির্গুণ ব্রহ্ম, যেটার ব্যাখ্যায় উনি খুব স্পষ্ট হতে পেরেছেন ব'লে আমার মনে হল না। ২) মায়াবাদ, যেটাকে শুধু অবিদ্যা দিয়ে ধরা যায় ব'লে আমি মনে করি না। এক্ষেত্রে অধ্যাসের ধারণা নিয়ে আসা দরকার, যদিও শারীরক ভাষ্য স্বপ্ন সুষুপ্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খুব গুছিয়ে উঠতে পারেনি, বলা যায়, গুবলেট ক'রে ফেলেছে। কিন্তু আমার মনে হয়, ওটাকে এক্সপ্লোর করা যায়।
যাই হোক, এই দুই ব্যাপারে আমার বক্তব্য আমি হয়ত আমার ওয়ালে লিখব। কেননা, কমেন্ট সেকশনে ওটা করা মুশকিল। তবে, লেখকের মূল বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত।
ধন্যবাদ সন্দীপনবাবু
অপেক্ষায় রইলাম।
সন্দীপনবাবু,
আপনার বন্ধু ঐ দুই বিষয় নিয়ে যা লিখবেন সেটা পড়তেও আমি আগ্রহী। আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। কাজেই ওঁর ওয়ালে লেখা আমি পড়তে পারবোনা। আপনি যদি ওঁকে একটু জিজ্ঞেস করেন যে লেখার পর তা এখানে এই কমেন্ট সেকশনে কপি পেস্ট করে দেওয়া যায় কিনা তাহলে খুব ভালো হয়। আগাম ধন্যবাদ রইলো।
আমার মূল লেখাটিতে গোড়াতেই ছিল 'অধ্যাস,' এটা এই লেখা পোস্ট করার সময় বাদ দিয়েছিলাম, টেকনিক্যাল শব্দ কম রাখব ভেবে। আসলে শংকর অন্য স্কুলগুলোর সঙ্গে বিতর্কে প্রবিষ্ট হয়ে নিজেই তাঁর ব্রহ্মসূত্রের শারীরক ভাষ্যের গোড়ায় 'অধ্যাস' বলে একটি স্বতন্ত্র চ্যাপটার জুড়ে দিয়েছেন। এটি বাদরায়ণের মূল ব্রহ্মসূত্রে বা ব্রহ্মসূত্রের অন্যান্য স্কুলের ব্যাখ্যায় নেই। আর অধ্যাসের মূলেই রয়েছে 'অবিদ্যা'।
অধ্যাস (superimposition)
শংকরের মায়াবাদ নামের দার্শনিক তত্ত্বকে এককথায় বলতে গেলে দাঁড়ায়ঃ “ব্রহ্ম সত্য জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈচ নাপরঃ”।[1]
অর্থাৎ, উপনিষদে বর্ণিত ব্রহ্ম হলেন একমাত্র সত্য, একমাত্র অস্তিত্ববান; অন্য কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। আমরা চর্মচক্ষে যে বিশ্বব্রহ্মান্ড দেখি তা অবাস্তব, সাময়িক, ক্ষণস্থায়ী; আদৌ স্থায়ী শাশ্বত সত্যবস্তু নয়। জীব বা ব্যক্তি আত্মা সেই এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্মের থেকে অভিন্ন, তার কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই।
বিভিন্ন উপ্পনিষদ যেমন বলছেঃ
“ব্রহ্ম হলেন সত্য,জ্ঞান ও অনন্ত”,(তৈত্তিরীয় উপনিষদ,২.১.১)।
“ব্রহ্ম হলেন জ্ঞান ও আনন্দস্বরূপ”,(বৃহদারণ্যক উপনিষদ,৩.৯.২৮)।
“হে শ্বেতকেতু, তুমিই ব্রহ্ম -তত্ত্বমসি”(ছান্দোগ্য,৬.৮.৭)।
“আমিই ব্রহ্ম—অহম ব্রহ্মোস্মি”(বৃহদারণ্যক, ১.৪.১০)।
এখানেই অন্য দার্শনিকেরা প্রশ্ন তুলেছেন—যদি সেই এক পরব্রহ্মই সত্য, তাহলে আমরা এই চারপাশের বৈচিত্র্যময় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যে জগতকে দেখি তার অস্তিত্বকে উড়িয়ে দিই কী করে? সত্য কী করে আমাদের বাহ্যজগতের সম্বন্ধে দৈনন্দিন জীবনের প্রতিনিয়ত অনুভবকে খারিজ করে দেবে? এই বিরোধাভাসকে শংকর কী করে মেলাবেন?
শংকর মেলালেন বাহ্যজগতের অস্তিত্বকেই নাকচ করে দিয়ে। ওঁর মতে বাহ্যজগতের বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই। যা দেখছি বা অনুভব করছি তাহল মায়া, ভ্রম, স্বল্পস্থায়ী। যেমন জাদুকরের ইন্দ্রজাল।যেই সঠিক জ্ঞানের ফলে মোহ কেটে যায় তখনই দেখতে পাই ব্রহ্মের আসল স্বরূপ। যেন কুয়াশা সরে গিয়ে রোদ উঠল, আর মায়ার দুনিয়াটা ‘কোথায় বা কি ভুতের ফাঁকি মিলিয়ে গেল চট করে’।
অথবা আলো-আঁধারিতে যেমন ‘রজ্জুতে সর্পভ্রম’ হয়। আমরা ভয় পাই, কিন্তু কাছে গেলে বা ঠিকমত আলো পড়লে ভ্রম কেটে যায়, ভুল ভেঙে যায়।
প্রশ্ন ওঠে অমন হয় কেন? কেন আমরা জন্মের সময় থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিদিন এই মায়ার সৃষ্ট সংসারকে বাস্তব দেখি? কেন বিশ্বসংসার একবারও মিলিয়ে যায় না? শংকর এই সমস্যার ব্যখ্যা করতে আমদানি করেন আরেকটি ধারণা বা ক্যাটেগরি –অবিদ্যা।
এই অবিদ্যার কারনেই আমাদের দৃষ্টি আবিল হয়, আমরা রিয়েলিটি বলতে চৈতন্যস্বরূপ এক এবং অদ্বিতীয় ব্রহ্মকে দেখার বদলে ব্রহ্ম এবং বস্তুজগত –এই দুই বাস্তবের চক্রে ফেঁসে যাই। অতএব, আসল দোষী হল ওই ‘অবিদ্যা’। এই অবিদ্যাও ব্রহ্মের মতন ‘অনাদি’। কেউ কেউ ‘অবিদ্যা’ এবং ‘মায়া’কে একই মনে করেন। দেবীপ্রসাদও কখনও কখনও এই দুটি পদকে একে অপরের বদলে পালা করে ব্যবহার করেন।
তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল দুটোকে আলাদা করে দেখা। ‘অবিদ্যা’ হচ্ছে কারণ বা কারক তত্ত্ব যার অধিষ্ঠান আমাদের চেতনায়, আর তার ফলে আমরা যে অবাস্তব ক্ষণভঙ্গুর দুনিয়াকে দেখি সেটা হল মায়া।
ধরুন, আপনার চোখের পাওয়ার বদলে গিয়েছে, ফলে আপনি সবকিছু ঝাপসা বা ভুল দেখছেন। অথবা এলএসডি খেয়ে চোখের সামনে গোলাপি হাতি দেখছেন।
এই দুই উদাহরণে ভুল পাওয়ারের চশমা বা এলএসডি হল অবিদ্যা, আর ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিতে যা দেখছেন—ঝাপসা বা গোলাপি হাতি সেটা হল মায়া।
তবে শংকর সবচেয়ে বেশি যে উদাহরণটি দিয়েছেন তাহল—রজ্জুতে সর্প ভ্রম। মানে দড়ি দেখে সাপ বলে ভয় পাওয়া। এছাড়া যাদুকরের মায়ায় হাতির উদাহরণও দিয়েছেন বা শামুকের শুক্তিকে রজত বা রূপো ভেবে ধোঁকা খাওয়া।
কিন্তু শাস্ত্রে কোথাও ‘অবিদ্যা’ নিয়ে কোন কথা বলা নেই।
[1] বীরেশ্বরানন্দ সম্পাদিত ‘ব্রহ্মসূত্র”(শাংকরভাষ্য),অধ্যাস, পৃ ১,(অদ্বৈত আশ্রম প্রকাশিত)।