দামোদর নদীতে বান আসছে।
বাঁধের রাস্তা।
কাঁধে স্কুলের ব্যাগ।
চটি খুলে এক হাতে নিয়ে অন্য হাতে ছাতার ভার সহ্য করে
ঝিম ঝিম বৃষ্টিতে পা টিপে টিপে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফেরা।
কিংবা, বৃষ্টি থেমেছে।
ফুল প্যান্টের হাঁটুর কাছে ভাঁজ তুলে।
কোনো কোনো সাইকেল আরোহী
সাইকেল হাতে হেঁটে চলেছেন।
তাঁর সাইকেলের চাকা থেকে মাডগার্ড কাদায় বসে গেছে।
খ্যাঁস্ খ্যাঁস্ শব্দে চলেছেন।
বড়োরা কেউ কেউ কেরিয়ারে জুতো আটকে
কাঁধে সাইকেল নিয়ে হাঁটছেন।
সেই সময় কাদায় পিছলে পড়ার অভিজ্ঞতা
প্রায় সকলেরই ছিল।
ধুতিপরা মাস্টারমশাই এর এক হাতে সাইকেল।
সাইকেলের রডে বড়ো একটা ছাতা বাঁধা থাকতো।
অন্য হাতে ধুতির কোঁচা।
গামবুট পরে মাস্টারমশাই হাঁটছেন।
এই মাস্টারমশায়ের নাম জানতাম না তখনও।
মাস্টারমশায়ের সাইকেলে একটা কাপড়ের ব্যাগ থাকতো
ব্যাগে থাকতো একটা লম্বা বড়ো টর্চলাইট।
তাতে বড়ো বড়ো পাঁচটা ব্যাটারি থাকতো বলে
বলতেন পাঁচ ব্যাটারি টর্চ।
টর্চের দু’দিকে একটা নাইলন দড়ি বেঁধে
কাঁধে ঝোলানোর কৌশল করেছিলেন।
মাস্টারমশাই এমন বর্ষাতেও
স্কুল থেকে ফেরার পথে একজায়গায় তাস খেলেন।
তারপর রাত হলে দড়ি বাঁধা টর্চটা কাঁধে নিয়ে জ্বেলে
সাইকেল চালিয়ে বাড়ি যেতেন।
সেই বর্ষাটা আর ফিরবে না কখনো।
যে বর্ষা স্কুল ছুটির পর পেটে খিদে নিয়ে
ঘন্টাখানেক দাঁড় করিয়ে রাখতো।
কিংবা বড়দের বকুনির তোয়াক্কা না করেই
ভিজতে ভিজতে বাড়ি আসার বর্ষা।
সন্ধেবেলা মুষলধারে বৃষ্টির আওয়াজ।
বাইরে ব্যাঙেদের অসম্ভব চিৎকার!
নাকি চিৎকার প্রতিযোগীতা!
সঙ্গে এক ভাবে ঝিঁঝি পোকার ডাক।
ঘরে হ্যারিকেনের আলোয় স্কুলের পড়া।
আঁচের উনুনে রুটি তরকারি রান্নায় বসে মা পড়াচ্ছেন।
কিংবা বাপি উপেন্দ্রকিশোর সমগ্র শোনাচ্ছেন।
সেই ঘনঘোর বর্ষা আর আসবে না কখনো।
গৃহপালিত গরুকে বাইরে বের করা যেত না
সেই বর্ষায়।
অথচ বেশিরভাগ দিনেই স্কুলে যাওয়ার সময়
ঠিক আকাশটা পরিস্কার হয়ে আসতো কিছুক্ষণ!
আর বর্ষায় স্কুলে যাওয়া না হলে জল ঘাঁটাঘাঁটি।
খাতার পাতা ছিঁড়ে কাগজের নৌকো বানিয়ে
উঠোনের জমা জলে ছাড়তাম।
খিচুড়ি আর ইলিশ মাছের বর্ষা।
দূপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে বড়দের রেডিও শোনার বর্ষা।
সময়টা আটের দশকের শেষ দিক।
আকাশবাণী কলকাতার ভুলে যাওয়া সেই সুর।
কিংবা ন’য়ের দশকের সেই বর্ষাটা আর আসবে না—
যে বর্ষা বিকেলে পাড়ার লাইব্রেরিতে আসতো।
সে কিছুতেই আর ফিরতে চায় না এই ইমেলের যুগে!
—সুবিমল
বর্ষা স্মৃতি ভাল লাগল। বিশেষ করে মাস্টার মশাইয়ের সাইকেল।
অহেতুক লাইন স্পেস কী খুব জরুরি?
আরো লিখুন