*১*
ইন্দো - আমেরিকান মোড় কে LED আলোর তলায় রেখে গাড়ির হ্যন্ডেল ডানদিকে ঘুরাতেই একরাশ ঠান্ডা হাওয়া মুখে এসে লাগলো। দুপুরের ঘুমোট গরমে ঘরগুলো ক্রমশ যখন যতুগৃহ হয়ে উঠেছে সেই সময়ে ভাবলাম শেষ বিকেলে নিজেকে একটা ঘুড়তে যাওয়া ট্রিট দেওয়াই যায়! বিশেষত রবিবার! যদিও এখন সবদিনই কমবেশি রবিবার! যাই হোক গাড়ি ডানদিকে ঘোরাতেই চোখ চলে গেলো স্কুটির ডিজিটাল স্ক্রিনে, সে জানান দিলো সামনের পাম্প থেকে পেট্রোল ভরাতেই হবে! আমার বহুদিনের ইচ্ছে যে একটা ব্যাট নিয়ে পেট্রোল পাম্পে আসবো! ৯৭-৯৮ টাকার এক্সট্রা প্রিমিয়াম ভরাতে গিয়ে সেই ইচ্ছে আরো বেড়ে গেলো। ১০০ হলেই শচিনের মতো ব্যট উঠিয়ে অনুপম রায়ে সুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে *"বাড়িয়ে দাও তোমার হাত*" গাইবো! এরপর একরাশ আশা নিয়ে ধরে ফেললাম জাতীয় সড়ক, শেরশাহের আমলে তৈরি পোস্ট অফিস কে ডানপাশে রেখে এগিয়ে চললাম! সুন্দর হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে আমার গাড়িও তখন বলছে *ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর* মাঝে মাঝে হলদে আলোর ঢেউের মধ্যে দিয়ে লাল*নীল আ্যমবুলেন্সের ছুটে যাওয়া ছাড়া প্রায় পুরোটাই ফাঁকা,।
*২*
সিটি সেন্টার এলাকাতে ঢুকতেই মনে হলো সন্ধেেবেলায় মাঝরাতের সুর! *বিকেলবেলা গোধুলী বেলা , সন্ধেবেলা সব অতীত, , পাচতলা মল পুরোটাই মাঝরাত* একবার ঘড়ির দিকে তাকালাম! না আমি টাইম ট্র্যাভেল করিনি কোনোভাবেই!
রাস্তার পাশে সিভিক ভলিন্টিয়ার আর তাদের অফিসার দুজন বসে! গতানুগতিক দৃশ্য! পুলিশ কিছু বললোনা দেখে মনে হলো বহুদিন না যাওয়া NIT, CMERI এর রাস্তাটা ধরে একরাউন্ড দিয়েই আসি! রাস্তায় যেতে দুপাশে কেবল লাল কমলা আর নীলের জটলা ! নানা এরমধ্যে রাজনীতি খুঁজবেন না, লাল মানে Zomato কমলা মানে Swiggy আর নীল মানে সিভিক ভলিন্টিয়ার! গোটা শহরটা যেন এই কয়দিনে গড় হয়ে উঠেছে আর এনারা ঘাটি বানিয়ে দুর্গ রক্ষার কাজ নিরলস ভাবে করেই যাচ্ছেন! এভাবে NIT এর কাছে আসতেই মনে পড়ে গেল " *এই রাস্তাতেই তো সেই অশরীরির গল্পটা বেশ চলতি আছে*! সরকারী একটি কলেজের উল্টো দিকে গভীররাতে এবং ফাঁকা রাস্তায় অনেকেই দেখেছেন বলে দাবী করেন! " *এখন রাত গভীর না হলেও রাস্তা পুরো ফাঁকা! কি হবে এগোব কি??????* "
*৩*
সরকারী কলেজটি থেকে ১০০-১৫০ মিটার দুরে থেকেই বুঝতে পারলাম, সেই অভিশ্পত গাছটার তলায় কিছু একটা আছে, গাঢ় অন্ধকার, গাড়ির যা গতি আর অশরীরী দের যা শক্তি তাতে আমা র পক্ষে পালানো সম্ভব না, তাই এগিয়ে গেলাম, একদম কাছে যেতে দেখলাম একটি ঠেলাগাড়ি নিয়ে একজন ফুচকা বিক্রেতা সাদা জামা পড়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন! ভয় ও নিষেধের সমুদ্রের মধ্যে একমাত্র স্বাদবদলের দ্বীপ ! *ভয়* অপেক্ষা *প্রয়োজনীয়তা* মানুষ কে অনেক বেশি সাহসি করে তোলে, *হয়তো ছেলেটি জানেইনা এখানকার অশরীরীর গল্প অথবা ভুতের ভয়ের থেকে না খেতে পাওয়ার ভয় সে বেশি পায়*!
যাইহোক এই ভয়ের বাতাবরনের মধ্যে একট ফুচকার স্টল খুজে পাওয়া সিন্ধবাদের সমুদ্র যাত্রা বা কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারে থেকে কম নয়! একপ্রস্থ খেয়েদেয়ে আবার ঘরে ফেরা! সেই থোড় বড়ি খাড়ার গল্প শেষ করে ঘরে ফিরতে দেখি । সিড়ির দরজার সামনে আমার ব্রাউনি দাড়িয়ে, ব্রাউন প্রতিদিন দাড়িয়ে থাকে, আজও ছিলো, আমাকে দেখে বিস্কুট খাবে বলে ঝটপট উঠে বসে, আজকাল ও দুটো স্কিল সুন্দর শিখেছে, এক বিস্কুট ছুঁড়লে ও দারুন ক্যচ করতে পারে, আর হাতে করে খাওয়ালে খুব সুন্দর কায়দা করে খাবার তুলে নেয়! যাই হোক এই সব কাজ কর্ম করে আসতে আসতে সিড়ি পেড়িয়ে ক্রমশ ওপরে উঠতে থাকলামখ, এরপর ফ্রেশ হয়ে হাওয়ার সন্ধ্যার ছাদের বসে আপনাদের জন্য লেখা টাইপ করতে হবে!
অর্ক গোস্বামী