
এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০৩ মে ২০২১ ১৩:০৬734262বিগত দশ বছরে (যেহেতু তিনো আমল এই লেখার বিষয়বস্তু তাই বাম আমলের কথার উল্লেখ করলাম না) সরকারি বা সরকার পোষিত বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোর অবস্থা শোচনীয়। শেষ শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে আজ থেকে ৮ বছর আগে। ফলে প্রত্যেকটা স্কুল শিক্ষক স্বল্পতায় ভুগছে।
প্রশাসনে মারাত্মক রকমের দলীয় রাজনীতিকরণ হয়েছে। অভিভাবক প্রতিনিধিদের নির্বাচন বন্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় এমেলের প্রতিনিধি হিসেবে একজনকে প্রেসিডেন্ট করা হচ্ছে, সঙ্গে ঢাকের বাঁয়া হিসেবে আরও দুজনকে। তাঁরাই দুজন অভিভাবক প্রতিনিধি বেছে নিচ্ছেন। প্রশাসনে বকলমে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট এবং প্রায় ৮০% ক্ষেত্রে মিডডে মিলের পুরো দায়িত্ব কব্জা করে দেদার লুঠ চালাচ্ছেন বীরবিক্রমে। গত আট বছর নতুন করে শিক্ষক প্রতিনিধি অবধি নির্বাচন করা হয়নি।
মাইনরিটি গ্র্যান্টের পরিমাণ অবশ্যই বেড়েছে কিন্তু সেখানেও বিশেষত প্রাথমিকে শূন্য পাওয়া ছাত্রদের ৫০% নম্বরপ্রাপ্ত দেখিয়ে গ্র্যান্ট দেওয়া হচ্ছে। ফলে মেরুকরণ ও অসন্তোষ বাড়ছে। পার্শ্বশিক্ষকদের অবস্থা শোচনীয়। বেতনবৃদ্ধি বলতে গেলে হয়নি কিন্তু দায়িত্ব বেড়েছে অস্বাভাবিকহারে। দলীয় শিক্ষকদের রবরবা বাম আমলের মতোই অব্যাহত আছে। এমনকি প্রধান শিক্ষকরাও নিয়মের তোয়াক্কা না করে চুটিয়ে টিউশন করে চলেছেন বুক ফুলিয়ে।
ছাত্রদের ইউনিফর্ম প্রস্তুত করার চুক্তি করছে স্থানীয় প্রশাসন এবং দেদার কাটমানির আদানপ্রদান চলছে। বছরে বুকগ্র্যান্ট হিসেবে ৪০০ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে সরকারি বই দেওয়া হচ্ছে। ফলে পাঠ্যপুস্তক বিক্রেতারা পথে বসেছেন। কোনও রেফারেন্স বই পড়ার চল উঠে গেছে। সরকারি টাকায় টেস্ট পেপার দেওয়া হচ্ছে বটে কিন্তু তার গুণমান অতি জঘন্য।
সবচেয়ে বড় কথা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখার ক্ষেত্রে অতি ঢিলেমি ও ঢালাও নম্বর দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। কলকাতা শহরের একাধিক বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্রসংখ্যা বছরের পর বছর শোচনীয়ভাবে কমছে এবং সেসব স্কুলকে মার্জিং করার কোনও সুষ্ঠু পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছে না।
যাঁরা অবস্থাপন্ন তাঁরা বিকল্প হিসেবে ইংরেজি মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছেন এবং বাকিরা হাতের পাঁচ বাংলা মাধ্যম। সমস্যাগুলো তুলে ধরলাম। সমাধানের বিষয়টা লাখ টাকার প্রশ্ন।
একমত
শিক্ষক-স্বল্পতার কারণে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে,আবার শিক্ষার্থীর ঘাটতির কারণে শিক্ষকের পদ পূরণ করা হবে না -- এ এক অদ্ভুত খুড়োর কলে পড়ে খাবি খাচ্ছে অধিকাংশ সরকারি বিদ্যালয়। এ সমস্যার নিরসন করবে কে?
শিক্ষার্থীঃ শিক্ষক রেশিও সরকারের নির্দেশিকা মতে ৩০ঃ১, ভারতের গড় মান ৩৬ঃ১ আর পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্কুলে তা ৭২ঃ১- এইটা প্রাথমিকের হিসাব
Abhyu | 47.39.***.*** | ০৬ মে ২০২১ ১৯:০৬734359"আমাদের রাজ্যের স্কুলশিক্ষা কতটা উৎকৃষ্ট ছিল, আমরা যারা সেখান থেকে বেরিয়েছি, সকলেই জানি।"
হাড়ে হাড়ে জানি। এখনকার অবস্থা ভালো সেটা বলছি না তবে আমাদের সময়ের (শ্রদ্ধেয় অনিল বাবুর সময়ের) শিক্ষাব্যবস্থার যে মুখ আমি দেখিয়াছি, নিজে ছাত্র আর মা অ-সিপিয়েম শিক্ষিকা হিসেবে, তার কথা বলে আর হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর মানে হয় না।
তবে পরিস্থিতি এখন নিশ্চয় আরো খারাপ।
আমার ইস্কুল খুবই ভালো ছিল। পরবর্তীকালে যতটুকু যা করতে পেরেছি স্কুলশিক্ষার ভূমিকা তাতে প্রচুর। একমাত্র বাজে জিন্সি ছিল টেস্ট আর মাধ্যমিকের মধ্যে তিন মাস সময় নষ্ট করা হত।
সম্বিৎ | ০৬ মে ২০২১ ২৩:২২734361আমি বাইরে থেকে যা দেখি, বাম আমলের থেকে এখন শিক্ষার অবস্থা অনেক খারাপ। বাম আমলও মোনোলিথ কছু নয়। আটের আর নয়ের দশকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সত্যিই ভাল ছিল। নয়ের মাঝামাঝি থে পড়তে শুরু করে। তবে আটের দশক থেকেই স্কুল-কলেজে ছাত্র রাজনীতি বাড়ান হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।
&/ | 151.14.***.*** | ০৬ মে ২০২১ ২৩:৩০734362আমার ছিল অজপাড়াগাঁয়ের বাংলামাধ্যম স্কুল। পরিকাঠামো বলতে কিছুই ছিল না। অথচ সেই স্কুলের কারণেই কিছুকিঞ্চিৎ শিক্ষালাভ করে রুটিরুজির ব্যবস্থা পরবর্তীকালে করতে পেরেছি। তার অন্যতম কারণ, স্কুলের পরিবেশ। সেই সময়ে, অর্থাৎ কিনা গত শতকের আশি-নব্বইয়ের দশকে সেই স্কুলে ছাত্রছাত্রী হিসেবে যারা আসত তারা ছিল সমাজের প্রায় সর্বস্তরের, শিক্ষক অধ্যাপক চিকিৎসক অফিসার ইঞ্জিনিয়ার সকল পেশার বাবামায়ের সন্তানরা ওই বাংলামাধ্যম স্কুলে পড়ত । বহুরকম অভিযোগ ( প্রধান অভিযোগ ছিল ইংরেজীর ব্যাপারে অভিযোগ, ভালো ইংরেজী শেখার ব্যবস্থা ছিল না, বলা ও শোনার কিছুই ছিল না, লেখা ও পড়ার ইংরেজীও নোট থেকে শেখা, খুবই খামতি ছিল ) ও অভাব থাকা সত্ত্বেও। তদানীন্তন শিক্ষক শিক্ষিকারা অনেকেই প্রাইভেট টুইশন করলেও কেউ কেউ স্কুলেও ভালো করে পড়াতেন।
এখনকার দিনে তো শুনছি শিক্ষক চিকিৎসক অধ্যাপক কেউই নিজের সন্তানদের বাংলামাধ্যম স্কুলে পাঠান না।
যে যাই বলুক, স্কুলের নামডাক হয় প্রধানতঃ ছাত্র-ছাত্রীদের কারণে, শিক্ষকদের ভূমিকা থাকে যদিও। কিন্তু সমাজের এই শিক্ষানুরাগী মুখগুলো, অর্থাৎ অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার ইত্যাদিরা যদি নিজের সন্তানদের সরকারী সরকারপোষিত স্কুলে না পাঠান, তাহলে কোথাও একটা বিরাট গন্ডগোল আছে।
&/ | 151.14.***.*** | ০৬ মে ২০২১ ২৩:৪৭734363আরো একটা কথা, সেই আমলে অর্থাত গত শতকের আশিনব্বইয়ের দশকে ক্লাস ফোর অবধি প্রাইভেট ইংরেজিমাধ্যম স্কুলে পড়েছে, এমন ছাত্রছাত্রীরাও ক্লাস ফাইভে এসে সরকারী বা সরকারপোষিত বাংলামাধ্যম স্কুলে ভর্তি হত। পরিবেশের ব্যাপারটা এতটাই গুরুত্বের।
&/ | 151.14.***.*** | ০৭ মে ২০২১ ০০:২৮734366আমাদের সেই স্কুলেই এখন কিছু সহপাঠী বন্ধু শিক্ষকতা করছেন। তাঁরা কেউই নিজের সন্তানদের ওই স্কুলে ভর্তি করেন নি। মহার্ঘ্য প্রাইভেট স্কুলে পাঠিয়েছেন।
স্কুলের পরিবেশ এখন সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। এমনকি এখন মাধ্যমিকে উচ্চমাধ্যমিকে ওই স্কুল থেকে বোর্ডে র্যান্ক পাওয়া রেজাল্ট হয়। তাতেও কিস্যু এসে যায় না। এই বন্ধুরা কেউ তাদের সন্তানদের ওখানে পাঠাবে না।
অর্থাৎ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এই পরীক্ষাগুলোই এখন মূল্যহীন হয়ে গিয়েছে। অন্ততঃ লোকজনের প্রতিক্রিয়া দেখে তাই সন্দেহ হয়।
&/ | 151.14.***.*** | ০৭ মে ২০২১ ০০:৩৩734367পশ্চিমবাংলার শিক্ষাব্যবস্থাটা (যে শিক্ষা স্বীকৃতি পাবে যে শিক্ষার ভিত্তিতে জীবনের জীবিকা ইত্যাদি হবে ) আস্তে আস্তে অবাঙালি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে। রাজনীতির নাট্যরঙ্গ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে আমাদের সবচেয়ে বড়ো জিনিস ডাকাতি হয়ে যাচ্ছে। সামনের ইঁদুর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছি, পেছন দিয়ে হাতী চলে যাচ্ছে।
&/ | 151.14.***.*** | ০৭ মে ২০২১ ০৪:৩৬734368এই নতুন সরকার কী করবেন কেজানে! হয়তো সব প্রাইভেট করে দেবেন। মিষ্টি মিষ্টি হেসে হেসে বলবেন, "আহা, আপনাদের ছেলেমেয়েরা যখন প্রাইভেট স্কুলেই পড়ছে, তখন আপনারাও প্রাইভেট স্কুলে চাকরি করুন। দেখুন কত ধান্যে কত তন্ডুল। কত মৌচাকে কত মধু। কত ঝাড়ে কত বাঁশ। কত চিনিতে কত মিষ্টি । "