স্বর্গের রত্নখচিত প্রধান ফটকটি উন্মোচিত করে বিরস বদনে দ্বাররক্ষী একটি গভীর আরমোড়া ভেঙে নিল। নাহ! আর পারা যাচ্ছে না।
ভারতভূমির পুণ্যক্ষেত্রে আরব্ধ ভারতযুদ্ধ স্বর্গবাসীর ঘুম কেড়ে নিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই স্বর্গতঃ বীরগণের ঠেলাঠেলিতে প্রধানদ্বার ভেঙে পড়ার উপক্রম।
অথচ প্রথমে পরিকল্পনা অন্যরকম ছিল। আয়োজনের ত্রুটি ছিল না। যুদ্ধ শুরুর খানিক পূর্ব থেকেই স্বর্গদ্বারে তূর্য-ডিন্ডিম-আতোদ্য নিয়ে বাদকরা ছিল প্রস্তুত। বন্দীরা প্রস্তুত রেখেছিল শ্রুতিসুখকর ভাষ্য। স্বর্গীয় বরনারীগণ শোভনদর্শনা হয়ে দ্বারে মঙ্গলশঙ্খ নিয়ে সমাগতা। মান্য দেবগণের নির্বাচিত মণ্ডলী পুষ্পবর্ষণের দায়িত্বে, দেবরাজ ইন্দ্র স্বয়ং আপ্যায়ন করে নেবেন আগত বীরগণকে।
শাস্ত্রকারগণ বলে গেছেন, সম্মুখযুদ্ধে নিহত বীর স্বর্গস্থ হবেন।
কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, দুনিয়ার যত ব্যভিচারী, শঠ, বিদ্বেষপরায়ণ, জুগুপ্সা পোষণকারী, নির্যাতক, নারীঘাতী, নিন্দুকরা সম্মুখযুদ্ধে প্রাণত্যাগ করে স্বর্গের দরজায় মহা গোলযোগে প্রবৃত্ত হলেন। মহার্ঘ্য পারিজাত পুষ্প বরণ করার পরিকল্পনা ছিল। ইন্দ্রদেব পারিজাত তুলে দিলে বন্দী বলে উঠবেন "হে বীর! আপনার পুণ্যপদপাতে স্বর্গভূমি আজ ধন্য হল। আপনি প্রবেশ করুন। বিনা ব্যয়ে যথেচ্ছ গমন-ভোজনাদি করে অনন্ত পুণ্যফল ভোগ করুন।"
কিন্তু শুরুতেই তাল কাটল। বীরের দল বাঁধভাঙা বন্যার জলের মত নিঃশেষে স্বর্গভূমিতে প্রবেশ করল।পারিজাত পুষ্প লুণ্ঠন করে, স্বর্গীয় নারীগণকে যথেচ্ছ কটাক্ষ ও টিটকারি দিয়ে তাঁরা মুক্ত ষণ্ডের মত স্বর্গভূমিতে দাপিয়ে বেড়াতে লাগল।
তারপর থেকে স্বর্গের অবস্থা সঙ্গীন। দেববিস্ফোরণে স্বর্গে সূচ্যগ্র পরিমাণ ভূমিও আর উন্মুক্ত নেই। তিলার্ধ স্থান বিরল, সর্বত্র অশান্তি, কলরোল এবং আকচা-আকচি চলছে। এখনও মুখ্য ও মহান বীরগণ গতায়ু হননি। আগাছাতেই স্বর্গভূমি পরিপূর্ণ। মহান বীরগণের আসতেও বিশেষ বিলম্ব নেই। তাঁদের অভ্যর্থনা কীদৃশ হবে তা স্থির করতে করতেই ইন্দ্রদেব এবং স্বর্গীয় আধিকারিকগণ নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত হয়েছেন। কী দিন ছিল আগে। রম্ভা-উর্বশী-মেনকাদের শিল্পকলা আস্বাদ করতে করতে সুবাসিত অমৃতসহযোগে মধুর আহার্য ভক্ষণের দিন অপগত।
এখন দ্বাপরের অন্তিমকাল। কলি আরম্ভ হলে নরাধমগণের নরকবাস নিশ্চিত। তাই স্বর্গে প্রবেশ করার ব্যগ্রতা এত। এমনিতেই স্বর্গ সম্প্রসারিত হয়ে হয়ে নরকের সীমায় চলে গেছে। আর সত্য বলতে, নরকে স্বর্গের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা খানিক আধুনিকতর। তার উপর মানুষকে নানাবিধ পীড়নের ভয় দেখিয়ে এখনও ঠেকিয়ে রাখা গেছে। কিন্তু স্বর্গের মোহ এবং স্বর্গ নিয়ে যথেচ্ছ অবাধ প্রচার মানুষকে স্বর্গলাভের জন্য এমন ক্ষেপিয়ে তুলেছে যে তা প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আর ভারতযুদ্ধে মৃত প্রত্যেক আত্মার নিশ্চিত স্বর্গলাভের কথা কল্পনা করে স্বর্গবাসীর ঘুম উড়ে গেছে। এখন নিজভূমে পরবাসী হওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা। সীমান্ত সমস্যা প্রকট। নিত্যই নরকস্থ প্রাণিগণ স্বর্গের সীমান্তে প্রবেশ করে উত্পীড়ন চালায়। কলির সন্ধ্যা এলে যাবতীয় দুরাচারী দুবৃত্তগণ নরকস্থ হয়ে সীমান্তরেখা লঙ্ঘন করে স্বর্গে প্রবেশ করতে চাইবে। তখন মাত্স্যন্যায় ঠেকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
যুদ্ধ ক'দিন গড়াতেই স্বর্গের দ্বারে দিবারাত্রব্যাপী মহাযজ্ঞ ও চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গেল। এতটা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। সকলেই সকলের আগে প্রবেশ করতে চায়। প্রবেশ নিশ্চিত জেনেও কোন্দল লেগেই আছে। স্বর্গেরক্ষীগণ হোমরা-চোমরা বীরদের ঠেকিয়ে রাখতেই বিপর্যস্ত। অভ্যর্থনা ঘুচে গেছে। এখন পারিজাত বৃক্ষের পাতায় ক্রমানুসারী সংখ্যা লিখে উপস্থিতির অভিজ্ঞানস্বরূপ বিতরণ করা হচ্ছে। তারপর পরিচয় সম্যক অবগত হয়ে প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে। স্বর্গীয় ক্ষমতাপ্রাপ্তির সীমারেখার আগেই বংশদণ্ড দিয়ে বেষ্টনী নির্মাণ করে মৃত আত্মাগণের তীব্রবেগ রোধ ও সংহত করা হচ্ছে। তারপর প্রবেশাধিকার। আগে তালে গোলে ইতর ও তির্যকযোনির জীবাত্মাগণ স্বর্গে সকলের চোখ এড়িয়ে প্রবেশ করেছে। বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন বীরগণের জন্য পৃথক তোরণের ব্যবস্থা। মহান বীরগণ আসতে শুরু করেছেন। দ্রোণাচার্য, বিরাট, দ্রুপদ, উত্তর, অভিমন্যু, ঘটোত্কচ, কৃপ, জয়দ্রথ, শকুনি, কর্ণ সকলেই প্রায় পৌঁছে গেলেন বলে। ইন্দ্রদেব সেদিকেই ব্যস্ত আছেন।
ভীষ্মের জন্য স্বর্গবাসী বিশেষ প্রতীক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তাঁদের অধৈর্য করে ভীষ্ম শরশয্যাগত হলেন। কা গতিঃ! মহামতি ভীষ্ম এখন যথাবিধি বীরগতি প্রাপ্ত হলে সকলে নিশ্চিন্ত হন।
এদিকে স্বর্গীয় সৌন্দর্য লুপ্তপ্রায়। নন্দনকানন কানায় কানায় পূর্ণ। কলিযুগের দণ্ডকারণ্যের মতই তার অবস্থা। এর পূর্বে রঘুবংশীয় যে রাজন্যবর্গ স্বর্গস্থ হয়ে অনন্ত সুখভোগ করছিলেন তাঁরা এই নবীন বিপর্যয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন।
যজ্ঞে উত্সর্গীকৃত পশুসকল যুগে যুগে স্বর্গীয় পশুশালা সমৃদ্ধ করে নন্দনকাননের শ্যামতরুণ তৃণ অহর্নিশি চর্বণ করে স্বর্গসুখ যারপরনাই ভোগ করছিল। মহাসমরে বীরগতিপ্রাপ্ত পশুগণের ভিড়ে স্বর্গের অশ্বশালা, হস্তীশালা ইত্যাদি উপচে পড়তে লাগল। পশুগণের দাপাদাপিতে স্বর্গভূমি স্পন্দিত হতে থাকল ক্ষণে ক্ষণে। ইন্দ্রের গোশালায় দেবগাভী কামধেনু সুরভি সমরহস্তিগণের প্রবল বৃংহণে কম্পমানা হয়ে আর্তরব করতে লাগলেন। দেবরাজের প্রিয় ঐরাবত ও উচ্চৈশ্রবা যারপরনাই খিন্ন ও বিষণ্ণ হয়ে পড়ল। অন্যদিকে আগত পুণ্যাত্মাগণের হিসাব রাখতে না পেরে স্বর্গদ্বারের রক্ষিগণ খাবি খেতে লাগলেন। আচার্য আর্যভট্ট তাদের উদ্ধার করলেন। তাঁর পরামর্শে সংখ্যার পশ্চাতে শূন্য প্রয়োজনমত সংযুক্ত করে এ যাত্রায় উদ্ধার পাওয়ার আশা দেখা গেল। অহো! শূন্যের কী অসীম শক্তি! পূর্ণতার যে অপার মহিমা উপনিষদে উদ্ঘোষিত হয়েছে, তার স্বাদ প্রকৃতপক্ষে কীদৃশ তা স্বর্গবাসী এখন মজ্জায় মজ্জায় উপলব্ধি করছেন। কী কুক্ষণে কোন্ শাস্ত্রকার যে বীরগতিপ্রাপ্তির তত্ত্ব দর্শন করেছিলেন!
সূচ্যগ্রপরিমাণ মেদিনীর অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব যে আজ স্বর্গলোকে এমন স্থানাভাব আনবে কে জানত। দেবগণ প্রচ্ছন্নে এই মহাযুদ্ধে যে দৈবী অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, তা যে এমন পরিণতি ডেকে আনবে কে জানত! দেবগণ হবির্ভুক্। ধরাবাসীর উৎসর্গ করা হবিঃ তাঁদের প্রাণধারণের জন্য বিশেষ উপযোগী। অগ্নি স্বয়ং হবিঃ বহন করে দেবসন্নিধানে পৌঁছে দেন। তবে শোনা যায়, অগ্নি একদা হবির্ভাগ অপহরণ করে পলায়ন করতে গিয়ে ধরা পড়ে নিগৃহীত হন। তবে সে অনেক পূর্বের কাহিনী। ইদানীং অগ্নি স্বয়ং অগ্নিমান্দ্যে ভুগছেন। হবিতে তাঁর আর রুচি বিশেষ নেই। খাণ্ডববন সপশু ভোজন করে পক্ব পশুমাংসে ইদানীং তিনি আসক্ত। দেবগণের খাদ্যরুচিও বদলেছে। তবে স্বর্গলোকে এই নিদারুণ উপদ্রবে দেবভোগ্য আহার্যাদির না অভাব ঘটে। ধরাতলে যজ্ঞবিমুখতা ক্রমবর্ধমান। স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্রের অস্তিত্ব নিয়েও সংশয়বাদিগণ চিন্তাকুল। দ্বাপর যুগ অবসিতপ্রায়। পুরনো ঠাট-বাট সব দোদুল্যমান।
দেবরাজ ইন্দ্র সংশয়াকুল হয়ে দেবগুরু বৃহস্পতির সন্নিধানে উপস্থিত হলেন। দেবগণ যুগে যুগে অরিবশীভূত হয়ে বিপন্ন হলে দেবগুরুর সদ্বুদ্ধি ও সদুপদেশ বিশেষ কার্যকর হয়। বর্তমান অভূতপূর্ব মানুষী বিপত্ দেবগুরু সম্যক অবগত ছিলেন। ইন্দ্র প্রণিপাত করে দেবগুরুর শরণ নিলে আশীর্বাণী শ্রবণ করিয়ে দেবগুরু ইন্দ্রকে বললেন -
"পুত্র! মা ভৈষীঃ। স্বর্গভূমিতে যে আকস্মিক বিপদ্পাতে তোমরা কণ্টকিত তা অচিরেই অপগত হবে। মনে রেখ, স্বর্গ ত্রিবর্গের যথার্থ সেবার সাময়িক পুণ্যফলমাত্র। মানবলোক অমৃতের সন্তান। অনন্ত-ই তাদের অন্তিম গতি। মানবকুল তাই মোক্ষমার্গী। স্বর্গের অভীপ্সা অনন্তের আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করতে পারে না। যাঁরা স্বর্গলাভ করেন, তাঁরা পুণ্যক্ষয়ে পুনরায় জননমরণচক্রে নিপতিত হবেন। সুতরাং স্বর্গের আকাঙ্ক্ষা নিতান্তই মোহমাত্র। স্বর্গের লোভ দেখিয়ে অকারণ যুদ্ধে প্রশ্রয় দিয়ে তাকে ধর্ম আখ্যা দেওয়া কি উচিত কার্য? প্রাণহানি সর্বথা পরিত্যজ্য, তাতে আত্মা কখনোই সদ্গতি লাভ করে না। জীবন ক্রমপূর্ণতা লাভ করে অমৃতময় হয়ে উঠুক, এটিই পরম অভীষ্ট। মাটির পৃথিবীকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে নরকতুল্য করে তোলার সার্থকতা কোথায়? দেব-মানব সকলেই পরম সত্তার অংশভূত। পরম সত্তাই তাদের একান্ত ও চূড়ান্ত আশ্রয়। অতএব, স্বর্গভূমিও অনন্তের অংশভূত। তড়াগে লোষ্ট্র নিক্ষেপ করলে সাময়িক আলোড়ন ওঠে। তারপর সব পূর্ববত্ নিষ্কম্প হয়ে যায়। লোষ্ট্রখণ্ডও তড়াগের গভীরে বিলীন হয়। স্বর্গভূমিতে এই আলোড়ন সাময়িক, অবিলম্বেই নমস্কার সকল সমস্যা তিরোহিত হবে। যাও। স্বকার্য নিশ্চিন্তে সমাধা কর। তথাস্তু।"
অষ্টাদশ দিবসব্যাপী মহাসমরের অন্ত্যে একদিন দেখা গেল, ভগ্ন ঊরুদেশের বেদনায় কাতর এক মহারথী স্বর্গের দ্বারদেশে উপস্থিত হলেন। আগন্তুককে চিনতে পেরে সাদরে সকলে তাঁকে নিকটস্থ স্বর্গীয় চিকিত্সাকেন্দ্রে নিয়ে এলেন। দেববৈদ্য অশ্বিদ্বয় মুচকি হেসে আগন্তুকের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে লাগলেন। সকল কার্যক্রমেই উদ্যোক্তাদের সমাবস্থা। তাঁরা ছাড়া পান সবার শেষে। সুখস্বাচ্ছন্দ্যের বিশেষ কিছুই তাঁদের জন্য অবশিষ্ট থাকে না।
যুদ্ধ মিটে গেছে বহুদিন হল। স্বর্গীয় আকস্মিক গোলযোগ স্তিমিত হয়ে গেছে। নন্দনকানন আবার পুষ্পোদ্গমে দ্যুতিময়, সর্বত্র শান্তির বাতাবরণ। ইন্দ্র কামধেনুর দুগ্ধে প্রস্তুত পরমান্ন আস্বাদন করছিলেন, রম্ভা নিকটেই একছড়া কদলী নিয়ে মহামতি হনুমানের সঙ্গে ছদ্ম কোন্দল ও রসালাপ করছিলেন, এমন সময় স্বর্গের দ্বারে এক বিক্ষিপ্তচিত্ত আগন্তুক দেখা দিলেন। স্বর্গদ্বারিগণ সবিস্ময়ে দেখল, আগত ব্যক্তি নরদেহধারী। তাঁর শরীর কম্পমান। মুখে যুগপত্ বিস্ময় এবং বিরাগ, দেহ রোমাঞ্চিত। আগত ব্যক্তির পশ্চাতে সারমেয়ের ছদ্মরূপে স্বয়ং ধর্ম রক্ষিগণের দিকে ইঙ্গিতবাহী সংকেত দিয়ে চোখ টিপছেন। অহো। মহানুভব যুধিষ্ঠির সশরীরে স্বর্গে এসেছেন। আসার পথে নরক দেখে তাঁর ভাবান্তর ঘটেছে।
ইন্দ্র সংবাদ পেয়ে শশব্যস্ত হয়ে ছুটে এলেন এবং মহাসমাদরে ধর্মপুত্রকে রাজসভায় এনে বসালেন।
ইন্দ্র সস্মিতে বললেন--"ত্রেতায় শ্রীরামচন্দ্র নিতান্ত শোকবিহ্বল হয়ে নরশরীর ত্যাগ করেন। দেহ জীর্ণবাসের মত পরিত্যজ্য, আত্মা নবদেহ ধারণ করে পুনরায়। ধরাতলে পুণ্যকর্মা জিতেন্দ্রিয় বিগতস্পৃহ রাজর্ষিগণ পার্থিব লীলার অন্ত্যে স্বর্গস্থ হন। তবে মোক্ষমার্গ কি একান্তই জনসাধারণের অবলম্বনীয়? সম্মুখে কলিকাল। পুণ্যকর্মা মনুষ্যগণ স্বর্গভোগের অন্ত্যে ধরাতলে প্রত্যাবর্তন করে পূর্বসংস্কারানুগ সত্কর্মে প্রবৃত্ত হবেন নাকি সেই সংস্কারের প্রভাবেই যুদ্ধোন্মত্ততার শিক্ষা দেবেন তা-ই কেবল পর্যবেক্ষণের বিষয়। ভাবীকালে ধরাতলে স্বর্গ নেমে আসবে নাকি ধরা নরকতুল্য কদর্য হয়ে উঠবে তা কেবলই ভবিষ্যতের গভীরে উপ্ত আছে।"
যুধিষ্ঠির উষ্ণ শ্বাস ত্যাগ করে বললেন - -" অষ্টাদশদিবসব্যাপী সংগ্রামের শেষে আমাদের আকাঙ্ক্ষা কুরুক্ষেত্রের সমরভূমির মত রিক্ত ও দীর্ণ হয়ে গেছে। হে দেবরাজ, তোমার সুকঠোর বজ্রের আঘাতে ভাবী মানবের রিপুসকল নিঃশেষে বিনষ্ট কর। অন্তর থেকে বিদ্বেষবিষ হরণ করে মুক্ত কর অমৃতধারা। সিক্ত হোক মানবলোক। ধরাতল মধুময় হোক। জন্মভূমিঃ স্বর্গাদপি গরীয়সী। স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি।"
©️অভিষেক ঘোষ