এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • চেনা নববর্ষের অচেনা কথা

    Somnath Bandyopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৫ এপ্রিল ২০২১ | ১৬৭৯ বার পঠিত
  • পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের সঙ্গে আমাদের পরিচয় শৈশব কাল থেকেই। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে বছরের ১ম দিনটিকে বলা হয় পয়লা বৈশাখ। এখন সম্ভাব্য প্রশ্ন এটাই বাংলা নববর্ষ এর সূত্রপাত কিভাবে হয়েছিল .....

    মধ্যযুগের ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্ম প্রবেশের সূচনা থেকেই হজরত মহম্মদ প্রবর্তিত হিজরি পঞ্জিকার প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীকালে দিল্লির দরবারে সুলতানী শাসকের সময়কালে হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে অর্থনৈতিক বছরকাল গণ্য করা হত, সেই সময় এক হিজরি বছরকাল এর মধ্যেই সমস্ত প্রজাদের রাজকর প্রদান বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু হিজরি পত্রিকা চন্দ্রবছর অনুসারে গননা হওয়ায় যে সময়ে প্রজাদের কর প্রদান করতে হত ভারতের মত কৃষি প্রধান দেশে সেই সময় কৃষকদের ফসল উঠত না, তাই তারা কর দিতে প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হত।

    পরবর্তীকালে প্রজা বৎসল মুঘল সম্রাট আকবর এই সমস্যা সমাধানের জন্য জ্যোতির্বিদ ফতুল্লাহ সিরাজিকে রজকর আদায় ও ফলন মৌসম সংমিশ্রণে এক নতুন পঞ্জিকা তৈরির দায়িত্ব দেন। ফতুল্লাহ সিরাজির দীর্ঘ গবেষণার পর ৯৬১ হিজরি বা ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে নতুন অর্থনৈতিক বছর কার্যকর করা হয় চন্দ্র বছর হিজরির পরিবর্তে সৌরবছর বঙ্গাব্দ দিয়ে বা বলা ভালো দিন ও মাসের পরিবর্তন ঘটিয়ে হিজরিকে বঙ্গাব্দ তে রুপান্তর করা হয়। অর্থাৎ বাংলা সন কিন্তু ১ থেকে শুরু হয় নি, শুরু হয়েছে ৯৬৩ থেকে। অর্থাৎ বাংলা পঞ্জিকার বয়স (১৪২৮ - ৯৬৩ ) = ৪৬৫ বছর। শুধু তাই নয় ১৫৫৬ এর আগে অবধি রাজকর আদায় হত হিজরি পঞ্জিকার শেষ মাস "আল হাজ" এ যখন মাঠে ফসল বোনা হত কিন্তু প্রজা সুবিধার্থে ১৫৫৬ থেকে রাজকর প্রদানের সময়সীমা করা হল বঙ্গাব্দের শেষ মাস "চৈত্র" যাতে প্রজাদের ঘরে ফসল উঠে যাওয়ার পর তাদের রাজকর দিতে সমস্যা না হয়।

    পরবর্তীকালে দেশের বনিক সম্প্রদায়ও তাদের অর্থনৈতিক হিসাবকাল কে বঙ্গাব্দ হিসাবে গ্রহণ করেন ও পুরাতন ধারবাকি হিসাবকে নতুন বছরে স্থানান্তর এর জন্য হালখাতার ধারনা শুরু হয়।



    যদিও নববর্ষে পূজা অর্চনার সূত্রপাত হয় ১৯১৭ সালে, সে বছর সারা বাংলা জুড়ে পয়লা বৈশাখের দিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদানকারী ভারতীয় সেনাদের বিজয় কামনা করে পূজা অর্চনা হোম কীর্তন এর ব্যবস্থা করা হয় .... বর্তমানেও সেই ধারা বহাল রেখে সারা বছরের মঙ্গল কামনায় পূজা অর্চনা করা হয় ।

    বর্ষবরণের সাথে শোভাযাত্রা বা রবীন্দ্রচর্চা অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। এর প্রেক্ষাপট ও নিজগুণে গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন আইয়ুব সরকারের আমলে পূর্ব পাকিস্তানে রবীন্দ্র চর্চার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলে এর প্রতিবাদে ছায়ানট ১৯৬৫ সালে প্রথম "এসো হে বৈশাখ" গানটির মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ উৎসবের সূচনা করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে (১৩৭৯ সন) বর্ষবরণ উৎসবকে বাংলাদেশের জাতীয় পার্বণ বলে ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে ১৯৮৯ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় যা ২০১৬ সালে ইউনেস্কো দ্বারা বিশেষ সন্মান লাভ করেন। এইভাবেই কালের নিয়মে ও দীর্ঘ যাত্রাপথের মাধ্যমে বর্ষবরণ উৎসব দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বৈশাখের নব বার্তা প্রদান করে চলেছে।

    #শুভ_নববর্ষ

    তথ্য সূত্র :

    ১) জাতীয় গ্রন্থাগার
    ২) ভারতের পঞ্জিকা দর্পন ( প্রসূন উপাধ্যায় )
    ৩) বাংলার ইতিহাস সমাচার ( মধুসূদন পণ্ডিত )
    ৪) google
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন