এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • স্বাস্থ্য সাথী

    arpita Sarkar লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ এপ্রিল ২০২১ | ১৯৬২ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • স্বাস্থ্য সাথীর খেল আমার নিজের চোখে দেখা। আজ বরং সেই অভিজ্ঞতা share করি।

    একটু বুদ্ধি থাকলেই বোঝা যাবে এই প্রকল্প চালুর পেছনে বীমা কোম্পানিকে তোষণের পরিকল্পনা আছে। সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে দলে দলে মানুষ বেসরকারি হাসপাতালএ ছুটছে, অথচ সরকারি হাসপাতালের বেড খালি পরে থাকছে -- ব্যাপারটা কিরকম যেন 'ইয়ে' নয়?

    MD পাশ করার পর চাকরি না পেয়ে কিছুদিন এরকমই এক হাসপাতালে RMO র কাজ করেছিলাম। স্বাস্থ্য সাথীর নিদারুন এবং করুন কাহিনী নিজের চোখে দেখেছি। শুনবেন?

    হাসপাতাল থেকে ক্যাম্প বসতো গ্রামে গ্রামে। সন্ধ্যেবেলা বাস ভর্তি করে গ্রামের ভালোমানুষদের বুঝিয়ে সুজিয়ে ব্যাগ এ জামাকাপড় ভর্তি করে নিয়ে এসে ওঠানো হতো ঝাঁ চকচকে কেবিনে। মানুষগুলোতো বেজায় খুশি। তারা গরগড়িয়ে রোগের ফিরিস্তি দেয়, এতো সুন্দর ব্যবস্থা দেখে খুশিমনে ভালো ভালো খাবার খেয়ে ঘুমোতে যায়।

    প্রথম প্রথম আমিও ওদের সঙ্গে হাসতাম। যখন নিষ্ঠুরতাটা ধরতে পারলাম, হাসি বন্ধ হয়ে গেলো।

    ওদের মানে স্বাস্থ্যসাথীর স্পেশাল লোকজনেরা। নার্সরা, সিকিউরিটি গার্ডরা।

    প্রথমত দু তিনদিন পর থেকেই অসহিষ্ণুতা আরম্ভ হতো। স্বাস্থ্যসাথির গেরো তো সাংঘাতিক! সবে তা পাকানো হয়েছে, বাস বয়ে কেবিন ভর্তি করা হয়েছে। দাঁড়ান!

    প্রথমত, অনেক চিকিৎসাই এর অন্তর্ভুক্ত নয়। তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হত -- দাঁড়ান দাঁড়ান! ডাক্তার ছুটি লিখে দিত। এই পর্যন্ত।

    বাকিদের বসে থাকতে হত ডেট পাওয়ার অপেক্ষায়। সেখানেও হাজার গেরো। এই সুবিধে পাওয়া যাবে না, এই test এর আওতায় পড়ে না। ইত্যাদি ইত্যাদি।

    তখন ভালোমানুষ গ্রামের লোকটা বলে "বাড়ি যাবো" ---

    না। বাড়ি তো এখন চট করে যাওয়া যাবে না! তোমার সমস্ত খরচের এখন হিসেব হবে। কবে হবে বলা যাচ্ছে না - তুমি ভাই হাসপাতাল এর ভাত খাও।

    এইবারে হাল ধরে সিকিউরিটি বাহিনী। ভরকানো ,চমকানো, তারসঙ্গে অসীম ধৈর্য সম্পন্ন নার্সিং বাহিনী।

    একদিন দেখি এক মহিলা হাউ হাউ করে কাঁদছে। "আমার বাড়িতে বাচ্ছা একা" ইত্যাদি। আরেকদিন সকালে এসে দেখি নার্সিং স্টেশন রণক্ষেত্র। সবাই ব্যাগ বেঁধে নিয়ে তৈরী - মাঠে ধান কাটার সময় এসে গেছে, আমাদের ছেড়ে দিন!

    কাউকেই ছাড়া হয় না। একি বাসে সবাই ফিরবে। কারোরই officially ছুটির বিধান আসে নি যে! অনেকে দেখেছি মরিয়া হয়ে একাই পালাবার প্ল্যান করতো। কিন্তু তারা কলকাতার কিচ্ছু চেনেনা। বড়ো বিশ্বাস নিয়ে গ্রামের সবাই একসাথে বাসে উঠে পড়েছে যে।

    আমি নিজে সত্যি একটা বড়ো হাঁফ ছাড়তাম। যেদিন এসে শুনতাম ওরা বাড়ি গেছে, বাস ছেড়েছে।

    হাসপাতালের স্বাস্থ্য সাথী বাহিনী তখন নতুন ক্যাম্পের আয়োজন করছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kausik Banerjee | ০৯ এপ্রিল ২০২১ ২০:৩৫104565
  • পাঠকের পক্ষে এক বিরল অভিজ্ঞতার সুযোগ দিলেন লেখক। এটি নিশ্চয় বেসরকারি হাসপাতাল ছিলো। সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত ফাঁদ!

  • Aa | 2409:4060:8c:97cf:6fe1:f914:81b8:***:*** | ১০ এপ্রিল ২০২১ ০০:৫০104576
  • " সন্ধ্যেবেলা বাস ভর্তি করে গ্রামের ভালোমানুষদের বুঝিয়ে সুজিয়ে ব্যাগ এ জামাকাপড় ভর্তি করে নিয়ে এসে ওঠানো হতো ঝাঁ চকচকে কেবিনে."


    এরকম ভুল বোঝানো তো সর্বক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। সব মানুষই career, পড়াশুনা, স্বাস্থ্য , ব্যবসা, জমি কেনা বেচা ইত্যাদি কোনো না কোন ক্ষেত্রে ট্র্যাপ এ  পড়েন বিষয় গুলো ভালো ভাবে না জানার জন্য। নিজে সচেতন না হলে কোনোভাবেই এগুলো ঠেকানো যাবে না। মানুষ ফ্রী তে কিছুটা হলেও উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে এই ভাবেও তো আমরা দেখতে পারি। এটা তো আগে করা যায় নি কোনোদিন - যদিও বামপন্থী শাসকদের চেষ্টার কমতি ছিল না। 

  • Aa | 2409:4060:8c:97cf:6fe1:f914:81b8:***:*** | ১০ এপ্রিল ২০২১ ০০:৫৪104577
  • আর সরকারি হসপিটালে চিকিৎসার মান কিরকম সেটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি। নেহাত দায়ে না পড়লে কেউ সরকারি হসপিটালে যেতে চায় না।

  • Ramit Chatterjee | ১০ এপ্রিল ২০২১ ১১:৩১104586
  • এইসব লোকের থেকে কি আদৌ টাকা আদায় করতে পারতো বেসরকারি হাসপাতাল গুলো ? আর না পারলে স্বাস্থ্য সাথী ক্যাম্প গুলো করার মানে টা কি ? এদিকে  আবার অনেক অসুখ বিমার আওতায় নয় বলছে, তাহলে তো সরকারের টাকাও পাবে না। কেস টা কি। একটু বুুুঝিয়ে  বলুন।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন