স্কুল-কলেজে থাকতেই খুব বেশিই সাধারণ টাইপের একজন ছাত্রী ছিলাম। স্কুলে থাকতে যাও বা টুকটাক গান বাজনা করতাম, বা সিনিয়র ব্যাচ হয়ে গেলে যেমন শেষ বছরের সব অনুষ্ঠানগুলো ক্লাস টেন এর মেয়েদেরকেই এরেঞ্জ করা লাগে, সেটুকুই করেছিলাম। অতটুকু অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়েই এলাম শহরের টপ কলেজে। এখানে এসে তো আরও সংকুচিত হয়ে গেলাম। কলেজের স্যারেরা কোনোদিন জানেনই নি যে আমি গান গাইতে পারি, দৌড়াতে পারি, ছবি আঁকতে পারি, উপস্থাপনা করতে পারি, রচনা লিখতে পারি। সব ছেড়ে দিয়েছিলাম। একমাত্র ফোকাস ছিল এডমিশন, ভালো রেজাল্ট। এর মধ্যে অবশ্য বেশ কিছু ঘটনা ঘটতে দেখেছি। কলেজে শহরের, অবশ্য শুধু শহরের বলছি কেন বিভাগেরও অনেক ভালো স্কুলের টপ ছেলেমেয়েরা ভর্তি হয়েছিল, প্রতিবারই হয়ে থাকে। তো তাদের নানান শখ, নানান কর্মকাণ্ড। সব মিলিয়ে কলেজে বিভিন্ন কাজ কর্ম, গ্রুপ-দল-ক্লাব দেখে আমি মাঝে মাঝে অবাকই হতাম। এসবের অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই। আর একজন সাধারণ ছাত্রী, এবং তার থেকেও বেশি সাধারণ একজন মেয়ে হিসেবে সবার সাথে হাসিমুখে হাই-হ্যালো বলা যতটা সহজ, যেকোনো গ্রুপে ভীড়ে যাওয়া ঠিক ততটাই কঠিন। বলতে সঙ্কোচ নেই, পড়াশুনাতেও সকলকে ছাপিয়ে উঠতে পারছিলাম না। বলা ভালো বেশ পেছনেই পড়ে ছিলাম। তাই সবটুকু শক্তি কেবল একটা দিকে দিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে দেখতাম, খবর পেতাম কলেজে বন্ধুদল ভাঙছে, নতুন করে গড়ছে, রাস্তার ওপারের ক্যাফেতে বসে আড্ডা জমতে জমতে প্রেম হচ্ছে, আবার দুম করে ভেঙেও যাচ্ছে, ক্লাব মেম্বার বাড়ছে-কমছে, কেউ ইউটিউবার টিম বানাচ্ছে, কেউ ফোটোগ্রাফির দল, কেউ বা ব্যান্ড ও বানিয়ে ফেলছে, কেউ পথশিশুদের সংগঠন। অর্থাৎ, বলতে চাইছি এটাই যে এই ব্যাপারগুলো অত্যন্ত সাধারণ ছিল। তাই হুট করেই যখন একদিন একটা ফেসবুকের গ্রুপে এড হলাম আর পেজ লাইক দেওয়ার ইনভাইট পেলাম অতটা গুরুত্ব দেই নি, আর এটাই সত্যি। কিন্তু পথকুড়ি যে টিকে যাবে সেদিন হয়তো বুঝি নি। তবে সবগুলো দল-ক্লাব-গ্রুপের মধ্যে এটা সবথেকে সাধারণ হলেও আমার ভালোলাগার ক্রাইটেরিয়ায় এটা অনেক এগিয়ে থাকল। পরোক্ষ ভাবে ফলো করতে থাকলাম ওদের স্টেপগুলো, কাজগুলো। প্রথমবারের প্রোগ্রামের জন্য টাকা দেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তোমাদের সাথে যাওয়া যাবে? বিতরণের সময়?” যদিও ভালো করেই জানতাম, ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা এই শহরকে এখনো ভালো করে না চেনা আমিকে, এই স্বল্প পরিচিত ছেলেমেয়েগুলোর সাথে বাবা কিছুতেই যেতে দেবে না। পরে অবশ্য কী কারণে যেন এমনিতেও যাওয়া হয়েছিল না, বাসায় জিজ্ঞেস করারও দরকার হয় নি তাই। ছবিগুলো দেখছিলাম ফেসবুকে। আস্তে আস্তে সংগঠনটার প্রতি ভালোলাগা বাড়ছিল, সবার একই লোগোযুক্ত টি-শার্ট, সারাদিন ধরে গোটা শহর ঘুরে ঘুরে পথশিশুদের কাছে খাবার আর বস্ত্র বিতরণের পরেও দিনশেষে সবাই ক্লান্ত কিন্তু হাসিমুখে তোলা ছবি, সবটাই ইচ্ছেটা বাড়াচ্ছিল যে যদি আমিও যেতে পারতাম, বা আমিও ওদের সাথে হতাম। কিন্তু ওই যে, খুব বেশি সময় দেওয়া সম্ভব ছিল না, আর গ্রুপে ভীড়ে যাওয়া আমার জন্য সহজ না_দুটো মিলিয়ে আর হয়ে ওঠে নি। ইভেন্টগুলোতে টাকা দেওয়া পর্যন্তই দৌড় সমাপ্ত ছিল। পথকুড়ি নামটা নেওয়া, পথশিশুদের জন্য সংগঠন থেকে। আস্তে আস্তে কাজের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, তবে ফাউন্ডিং নামটা বদলানো হয় না। এবার থেকে মূল ঘটনাটা একটু ডিটেইলে লিখি।
২০১৯ এর নভেম্বর বা ডিসেম্বরের দিকের কথা, এডমিশন সিজন শেষ, অফুরন্ত অবসর চলছে। আর কিছুটা ঘুরাঘুরিও বেড়েছে, সহজ ভাবে মিশতে পারার যোগ্যতাও কিছুটা তৈরি হয়েছে বৈ কি। আবার ওদের ইভেন্টের পোস্ট দেখলাম। শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসুচি। এবার ডোনেট করার পাশাপাশি সব রকম ডিটেইলেও খেয়াল রাখলাম। যদি যাওয়া যায়! পথকুড়ির এরকম ডোনেটিং মেম্বার মোটামুটি সংখ্যায় খারাপ না, তাছাড়া ফাউন্ডিং মেম্বাররাও অনেকেই এখনও আছে। খুব দহরম-মহরম না থাকলেও কলেজের ক্লাসমেট তো বটে সবাই। একবার সাহস করে ওদেরই একজনকে নক দিয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, “তোমাদের সাথে যাওয়া যাবে?” সে বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, কেন না? নিশ্চয়ই। কোন সময়ের ইভেন্টে যাবা?” জিজ্ঞেস করলাম, “কখন কখন ইভেন্ট?” মোটামুটি বিস্তারিত উত্তর দিল, “ভোরে চাদর দেব রাস্তায় ঘুরে ঘুরে, দুপুরে স্টেশনে প্রোগ্রাম, বাচ্চাদের খাবার আর হুডি দেব, ওখানে আগে থেকে গিয়েই ওদের টোকেন করানো আছে, এটাই মেইন প্রোগ্রাম বলতে পারো। আর রাতে বের হবো, কম্বল দেব, একটু রাতের দিকেই যাব আর কি।“ “সকালে যাই?” ভোরের খুলনা আমার অদেখা নয়, কিন্তু অন্য রকম ভোর দেখতে খুব ইচ্ছে হলো। “সকালে আসো চাইলে, সেটা তোমার ইচ্ছা। কিন্তু আমরা চাই যত বেশি সম্ভব মেম্বাররা দুপুরে আসুক, কারণ ওটাইয় বাচ্চাদের নিয়ে ইভেন্ট হবে, অনেক মজা হবে। ওটাই মেইন ইভেন্ট বলতে পারো।“ বলল ও। এদিকে একই দিনে আমার আরেক বন্ধুর সাথে দেখা করার কথা। বেচারা যশোর থেকে আসবে দেখা করতে। এখন সময় নিয়ে গোলমাল লেগে যাবে তো! নিজে নিজে হিসাব কষলাম, যে কখন কোথায় সময় দেব, আবার সারাদিন টানা বাইরে থাকলে তো বাসায় বকুনি নিশ্চিত। নিজে হিসেব করে যা বুঝলাম, বকুনি এক্কেবারে নিশ্চিত, তাই আর আগেভাগে মা কে কিছু বললাম না সময় নিয়ে, বললাম শুধু দুবেলা ইভেন্টে যাব। যা হোক, ৫-১০ মিনিটের ব্যবধানে বেশ কয়েকটা এলার্ম সেট করে ঘুমাতে গেলাম। একেই শীতের দিন, তার উপর ছুটি চলছে, ভোর দেখি না কতদিন তা গুণেও বলা যাবে না। তাই ঘুম থেকে সময়মতো উঠতে পারা নিয়ে নিজের উপর যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই বারবার এলার্ম দিলাম। অথচ কীভাবে কীভাবে যেন একদম প্রথম এলার্মেই একদম ঠিক টাইমেই উঠে পড়লাম। দ্রুতই রেডি হয়ে ফোন হাতে অপেক্ষা, যাতে এক মিনিটও দেরি না হয় আমার জন্য। এদিকে শীতের দিন, সকাল ছয়টা মানে কাকভোরও নয় তখন, বলা ভালো যে ভোররাত। এমনকি আমি বাসার সামনের রাস্তাটা পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না ঠিক মতো, কুয়াশার কারণে। বাসার সামনে এসে ওরা ফোন দিল। ফোন পেয়েই প্রায় ছুটতে ছুটতে গিয়ে হাজির হলাম মেইন রোডে। দেখলাম দু অটো ভর্তি মানুষ, আর চাদরের বান্ডিল। আট কি দশজন ছিলাম আমরা। আমাদের বাসার এদিক থেকেই শুরু হলো খুলনা ঘোরা। ঠাণ্ডায় হাত পা কাঁপছে, মাথা থেকে চাদর পড়ে গেলেই কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস কানে ঝাপটা দিচ্ছে যেন, এরই মধ্যে কিছু চেনা, কিছু অচেনা আর কিছু চেনা অচেনার মাঝামাঝি মানুষগুলো নিজেরা আড্ডায় মেতে উঠলাম। অদ্ভুত একটা খুশি কাজ করছিল। আর মাঝে মাঝেই অটো থামিয়ে রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা, গুটিসুটি মেরে বসে থাকা, রাস্তা ঝাট দিতে আসা, বা কোনোরকমে একটা পাতলা চাদরে নিজেদের মুড়ে ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোকে চাদর দিতে দিতে যাচ্ছিলাম আমরা। ওরাই দিচ্ছিল, আমি সাহায্য করছিলাম। নিউমার্কেটের কাছাকাছি এক জায়গায় একটা ছোট্টো ঝুপড়ির বাইরে দাঁড়ানো একটা কিশোরী মেয়েকে চাদর দেওয়ার সময় আমাকে একজন বলল, “ওকে তুমি দাও।“ আগে কখনও এধরণের মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখি নি আমি। নিজে ওকে চাদরটা দিতে কেমন যেন এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করল। ভোর ৬টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম। শেষ করলাম বিতরণ ১০টা নাগাদ, হাদিস পার্কের দিকে গিয়ে। এতটা সময় যে কীভাবে কোথা দিয়ে কেটে গেল টেরই পেলাম না। দেখতে দেখতে সময়টা কেটে গেছিল। এতগুলো মানুষকে চাদর দিয়েছি, গোটা খুলনাটা ঘুরে বেড়িয়েছি, কাকডাকা ভোরের ফাকা, নিশ্চুপ খুলনার স্তব্ধতা কাটিয়ে রাস্তার দাঁড়িয়ে হো হো করে হাসতে হাসতে চা খেয়েছি, ভোরের রূপসা ঘাট, জেলখানা ঘাটের কুয়াশামোড়া ভিউ! উফ, এই খুলনা এতদিন না দেখা ছিল! রেশ না কাটতেই চলে আসতে হলো বন্ধুর সাথে দেখা করতে, তবে মনে মনে ঠিক করে ফেললাম, দুপুরের ইভেন্টে যাবই। বাসায় এসেছিলাম ঘণ্টা খানেকের জন্য, চটজলদি স্নান সেরে, খেয়ে নিলাম। আড়াইটাতেই বেরিয়ে চলে গেলাম রাহাতের বাসার ওদিকে, কাছাকাছিই বাসা, জিনিসপত্র সব ওর বাসাতেই, তাই নিজেরাই গেলাম, সব কিছু অটোতে তুললাম, আর হাসাহাসি আড্ডা দিতে দিতেই চলে গেলাম স্টেশনে। যেখানটা প্রোগ্রাম করার জন্য ঠিক করা ছিল, বলাই বাহুল্য সে জায়গাটা আমি এর আগে শুধু ট্রেনের ভেতর থেকেই দেখেছি, সেদিন প্রথম গেলাম। বেশ অনেকটা খোলা জায়গা। পাশে একটা ছোটো প্রাইমারি স্কুল আছে। আর আশপাশে অনেক ঝুপড়ি ঘর। অনেক বাচ্চারা, যাদের আগেরদিন এসেই নাম লিখিয়ে টোকেন করে যাওয়া হয়েছে। নিজেকে বাইরের মনে হওয়ার ব্যাপারটা সকালেই কেটে গেছিল, আর এখন আরও কেটে গেল। মিশে গেলাম সবার মধ্যে। বেশ কসরত করে জায়গা খুঁজে ব্যানার টানালাম। আশপাশে পড়ে থাকা কাচের টুকরো দিয়ে দড়ি কাটা লাগল ব্যানার টানাতে গিয়ে। সবাই মিলে টোকেন দেখে সাইজ মিলিয়ে হুডি গুলো পরপর সাজাচ্ছিল। আমরা কয়েকজন আর সেদিকে না গিয়ে, বাচ্চাদের সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তাদের একটু বড় ভাইবোনেরা, তাদের মায়েরা, অনেক আগ্রহ নিয়ে এসে দেখছিল, দাঁড়িয়েছিল। তাতে সুবিধে তো নয়ই, বরং সবটা সামলাতে কিছুটা সমস্যাই হচ্ছিল। মোটামুটি সবটা গুছিয়ে নিতে কিছুটা সময় তো দিতেই হতো। এখানে আদিব ম্যাজিক করার মতো কাজ করল। হ্যান্ড মাইকটা হাতে নিয়ে সবাইকে কেমন নিমেষের মধ্যে কন্ট্রোল করে ফেলল। বাচ্চাদের মধ্যে গুড়োগুলোকে সামনে, একটু বড় গুলোকে তার পিছনে এভাবে এরেঞ্জ করতে আমাদের হেল্প করল। আর হেল্প করল কীভাবে? হাহাহা, বাচ্চাগুলোকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে। মানে যে বাচ্চারা নিজেই এভাবে এরেঞ্জ হয়ে যাবে তাদেরকে আগে চকলেট দেওয়া হবে। এরপর হাসি তামাশা করতে করতে বাচ্চাদের সবার মধ্যে কবিতা বলা, গান গাওয়ার ধুম তুলে দিল। ব্যস শুরু হয়ে গেল, ‘আমি একটা গান বলব’ রব। একটা বাচ্চা ছেলে ছিল, চানমিয়া নাম। কত আর বয়স হবে, পাঁচ কিংবা ছয়। সেই বাচ্চাটার একটা অদ্ভুত স্ট্রং ভয়েস আছে। সেই বাচ্চাটা যখন ‘তুমি কার পোষা পাখি’ গানটা গাইল(তার ভাষায়, ‘বলল’) আমরা গান জানা মানুষগুলোও খুব অবাক হয়ে গেলাম। কী টান গলায়, অথচ এই প্রতিভাগুলো উঠে আসে না। আরও কয়েকজন বেশ কয়েকটা গান, কবিতা বলল। বেশ অন্যরকম ভালো লাগছিল। শেষমেশ তো ব্যাপারটা এমন হয়ে গেল যে তখন কে চুপ থাকতে পারে তার উপর ভিত্তি করে চকলেটও দিতে শুরু করল আদিব। হাহাহা, আদিব পারেও বটে। আমরা মেয়েরা বাউন্ডারি দিয়ে দাঁড়িয়েও যাদের সামলাতে পারছিলাম না, তাদের কয়েক মিনিটের মধ্যেই অনেকটা শান্ত করে ফেলল ও। শায়ানকে গান গাওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে সে গান গাইতে বাধ্য হলো। আমি আরামসে বাউন্ডারির দড়ি ধরে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনছিলাম। ওমা, হঠাত করেই ঘোষণা দেওয়ার মতো করে রাহাত বলে বসল, এবার নাকি আমি গান গাইব। এতটা আনপ্রিপেয়ারড ভাবে আমি জীবনে কোনোদিন গান গাই নি, শায়ানকে রিকোয়েস্ট করে সাথে নিয়ে যা হোক ম্যাসাকার ভাবে গান করলাম আর কি। তো এরপরে ছিল মূল কাজ। বাচ্চাদের টোকেন মিলিয়ে হুডি, কেক আর ভ্যাসলিন দেওয়া। আমাকে একবার বলল কে যেন, বাচ্চাদের হাতে টোকেন নিয়ে মার্কারের দাগ দেওয়ার কথা, একবাক্যেই রাজি হয়ে গেলাম, কাছ থেকে দেখার সুযোগ ছাড়ব না বলে। টোকেনগুলো জমা রেখে, নাম ডেকে, হাতে মার্কারের দাগ দিয়ে দিচ্ছিলাম ওদের। সম্ভবত এই প্রথম আমি বাচ্চাগুলোকে ছুঁলাম, আগে কখনও টাকা দেওয়ার সময় ছোঁয়া হয় নি। ৪০টা মতো টোকেন, আমি নিয়ে এসেছিলাম সবগুলোই, অনেকদিন ছিল আমার কাছে। সন্ধ্যে হয়ে আসছিল। নিজেদের ব্যানার আর অন্যান্য জিনিসগুলো নিয়ে যখন স্টেশনের গেটের দিকে ফিরে আসছিলাম, তখন মাত্র সন্ধ্যে হচ্ছে। একটা অদ্ভুত, অন্যরকম ভালোলাগার রেশ মন থেকে যেন কাটছিল না। মোস্টলি ব্যাচমেট, তবে এক দুইজন সিনিয়র আর জুনিয়রও ছিল। অবাক লাগছিল, সেই ছেলেমেয়েগুলোর কথা ভেবে, যাদের কখনও সেভাবে চিনতেও চেষ্টা করি নি, তাদের সাথে এত সুন্দর একটা দিন কাটালাম। সবাই চা খেতে যেতে জোর করছিল। কিন্তু তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে, আর সারাদিনে এক ঘণ্টা মাত্র বাসায় গেছি, তাও মা তখন স্কুলে ছিল, তাই বাসা থেকে অনবরত ফোন আসতেই আছে, জোর করেই চা কে একরকম ‘না’ বলে বাসার দিকে রওনা হলাম। পথকুড়ির বয়স তিন বছর। এতগুলো ইভেন্টের মধ্যে আমার সরাসরি যাওয়া ইভেন্ট এই একটাই। আস্তে আস্তে চেষ্টা করা হচ্ছে, দেশের সব ক্যাম্পাসে ব্রাঞ্চ খোলার, আরও বেশি মানুষকে সাহায্য করার, শুধু পথশিশু না, সাহায্য দরকার এমন আরও অনেক মানুষকে। আপাতত প্যান্ডেমিকের কারণে আটকে আছে, আমাদের অনেক ভাবনা, দ্রুতই সেগুলো বাস্তবায়নে যেতে পারব আশা রাখি। হ্যাঁ, ভুল পড়েন নি, ‘আমরা’ই, এখন আমিও মেন্টরস প্যানেলের একজন, আর নিজের ক্যাম্পাসের ক্যাম্পাস এম্বাসেডর। ভালো থাকুক এই সব ভাবনাগুলো, প্রসারিত হোক এই রকম সংগঠনগুলো, অন্যের হাসির কারণ হই আমরাও। ভালো থাকুক, পথকুড়ি।
খুবই প্রাণোচ্ছল লেখা, পরিচিত খুলনা, রূপসা ঘাটের আরেক মানবিক রূপ যেন দেখলাম। "পথকুঁড়ি" পরিস্ফুটিত হোক নিজস্ব বর্ণে-গন্ধে। ব্রেভো অর্পিতা!
লেখা পড়তে পড়তে এক ফাঁকে সেই জনপ্রিয় গানটিও শুনলাম।