এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • মমতার কৌশল বুঝতে সঠিক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় কি বিরোধীরা দিচ্ছেন?

    gautam roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৭৭৪ বার পঠিত
  • ঘরে আগুন লাগাবার যাবতীয় ষড়যন্ত্র করে, আগুন লাগার পর প্রতিবেশির সহানুভূতি কুড়োনোর কৌশল নিয়েছেন মমতা। রামকাহিনির নায়কের রাজনীতিকরণ কেন বাজপেয়ী জামানাতে সাড়ে ছয় বছর চুপ করে সহ্য করেছিলেন মমতা? তিনি যখন বাজপেয়ীর ক্যাবিনেটে শোভাবর্ধন করছিলেন, তখন আরএসএস-বিজেপি দশরথনন্দনকে তাঁদের রাজনৈতিক শ্লোগান করে গুজরাটে যখন মুসলমানের মুন্ড নিয়ে গেন্ডুয়া খেলেছিল, তখন কোথায় ছিল মমতার প্রতিবাদ?

    বিজেপি যেমন রাজনীতির স্বার্থে নরচন্দ্রমাকে ব্যবহার করছে, ঠিক তেমন ভাবেই নিজের তৈরি ফ্যাঙ্কেনস্টাইন আজ ছেঁকে ধরছে মমতাকে। তাঁর দলের ভিতরে আরএসএসের লোকেরা ঘাপটি মেরে বসেছিল, আর সুযোগ পেলেই সঙ্ঘের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপিতে তাঁরা চলে যাবে, এটা মমতা জানতেন না?

    যদি না জেনে থাকেন সেটা মমতা, তাহলে, সেটা তাঁর রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা। আর যদি জেনেও চুপ করে বসে থেকেছিলেন, সেটা তাঁর রাজনৈতিক শঠতা এবং সুবিধাবাদ। তাই ভিক্টোরিয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মমতার এই নিজের প্রতি সহানূভূতি তৈরির কৌশলের রাজনীতি সম্পর্কে সর্বাত্মক সতর্কতা আমাদের জরুরি।

    তথাকথিত লিবারালরা মমতার হয়ে সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের যে উদ্যোগ চালাচ্ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে, সেই সামাজিক প্রযুক্তির একটি উপকরণ হিশেবে মমতা ভিক্টোরিয়ার মঞ্চটিকে এমনভাবে ব্যবহার করলেন, যাতে তাঁর রাজনৈতিক শঠতাকেও কার্যত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অপমান হিশেবে ধরে নিয়ে, বিজেপির আচরণের বিরোধিতা করতে হল মহঃ সেলিম থেকে অধীর চৌধুরীর মতো শীর্ষস্তরের বামপন্থী নেতা থেকে শুরু করে শীর্ষস্তরের কংগ্রেস নেতারও। অথচ এই মমতাই গত লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর দশরথনন্দনকে বিজেপির রাজনৈতিক শ্লোগান করা নিয়ে ভাটপাড়াতে প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে এমন আচরণ করেছিলেন, যার ফলে মমতাকে দেখলে এইভাবে নিজেদের রাজনৈতিক শ্লোগান দিয়ে উত্তেজিত করে তোলা, বিজেপি কর্মীদের একটা নেশায় পরিণত হয়েছে। এই নেশাগ্রস্থ করে তোলার যাবতীয় ব্যবস্থা কিন্তু মমতাই করেছিলেন। আর সেই নিজের তৈরি কৌশল কে ব্যবহার করেই এখন মমতা নিজের প্রতি সহানুভূতি তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

    নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনটিকে নরেন্দ্র মোদি যেমন বিজেপির স্বার্থে ব্যবহার করলেন, ঠিক তেমনিই এই দিনটিকে মমতাও তাঁর নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে ব্যবহার করবার ক্ষেত্রে কোনো অংশেই মোদির থেকে কম গেলেন না। কিছুদিন হল, সদ্য বিজেপিতে যোগদানকারী শুভেন্দু অধিকারী যেমন বামপন্থীদের সম্পর্কে বেশ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, সাধারণ বাম সমর্থকদের ভিতরে বিজেপির পক্ষে একটা বড় রকমের বিভ্রান্তি তৈরি করতে চেষ্টা করছেন, ঠিক তেমনটাই করলেন মমতাও। বিজেপির যে রাজনৈতিক শ্লোগানকে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিষ্ঠা করবার ক্ষেত্রে মমতার ভূমিকা এবং অবদান খোদ আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের থেকে কোনো অংশে কম নয়, সেই শ্লোগানকে কেন্দ্র করে মমতা এমন একটি সুচতুর অভিনয় করলেন যার ফলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অপমান হিশেবে গোটা বিষয়টিকে ধরে নিয়ে নিজেদের অবস্থান নিতে বাধ্য হল বাম এবং কংগ্রেস।

    সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য মহঃ সেলিম অত্যন্ত যথার্থ ভাবে তুলে ধরেছেন মোদির ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সরকারি অনুষ্ঠানকে বিজেপি যেভাবে তাদের রাজনৈতিক শ্লোগান দিয়ে কার্যত দলীয় সভার আকার দিয়েছিল, সেই প্র্যাকটিসটা গত দশ বছরে মুখ্যমন্ত্রী হিশেবে কেবল পশ্চিমবঙ্গেই নয়, গোটা দেশের বুকে তুলে দরবার ক্ষেত্রে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদির থেকেও বেশ কয়েককদম এগিয়ে আছেন মমতা।

    পশ্চিমবঙ্গের ভোটের মুখে এখন নিজের অভ্যাসটি মোদির দলের সমর্থকদের ভিতরে দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত মমতা একটা শ্যভিনিজিমের খেলা খেলতে শুরু করে দিয়েছেন। গত ২০১৬ র বিধানসভার ভোটের আগে নারদা ডট কমের ভিডিও ফুটেজ গুলি প্রকাশ্যে আসার পর খানিকটা মানসিক স্থৈর্য হারিয়ে, কলকাতা এবং সন্নিহিত এলাকার ভোটের আগে মমতা ভোটারদের কাছে ফলেছিলেন, তাঁকে বললে, তিনি ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে বাসন মেজে দিয়ে আসবেন।

    কলকাতায় মোদির সভাতে পশ্চিমবঙ্গীয় স্বাভিমানকে চাগিয়ে দিতে, সেই বিধানসভার ভোটের আগে মোদি আবার তাঁর সেই নাগরিকদের বাড়িতে গিয়ে বাসন মেজে দিয়ে আসার কথাগুলির পুনরাবৃত্তি করেছেন। একজন মুখ্যমন্ত্রীর কাজ কি লোকের বাড়িতে গিয়ে বাসন মাজার? এই কথার ভিতর দিয়ে মমতা ভোটারদের সঙ্গে একদিক থেকে নিজের যেমন একটা বিশেষ নৈকট্যের অভিনয় করেছেন, তেমনিই অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষ, বিশেষ করে নারী সমাজ, যাঁদের কায়িক শ্রমের উপর নির্ভর করে পেটের ভাত জোগার করতে হয়, তাঁদের সঙ্গে তাঁর নিজের একটা গভীর নৈকট্যের অভিনয় করবার চেষ্টা করেছেন।

    বিজেপির রামকথার নায়ককে ঘিরে রাজনৈতিক শ্লোগানের যদি সত্যিই বিরোধিতা মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে করতে হয়, তাহলে প্রথম দরকার তাঁর সাড়ে ছয় বছর বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদী জোটে থাকার জন্যে নতজানু হয়ে মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া। নন্দীগ্রাম পর্বের পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কার্যত নতজানু হয়ে ক্ষমা চেয়ে মানুষের কাছে বলেছিলেন, যদি তিনি অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠন করতে পারেন, তাহলে কোনো অবস্থাতেই নন্দীগ্রামে গুলি চালনার মতো দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না।

    মমতা কিন্তু বিজেপির দশরথনন্দনকে ঘিরে কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে যান নি। বামপন্থীরা যেভাবে রামকাহিনির নায়ককে বিজেপির পোষ্টারবয় করবার ধারাবাহিক বিরোধিতা করে আসছেন, মোদির সামনে কিন্তু মমতা সেই পথে হাঁটেন নি। না হাঁটার কারণ, পাছে হিন্দু ভোট চলে যায়। তাই মমতা অতিথিকে ডেকে এনে অপমান করবার কথা বলেছেন। মমতার এই কথাকেই কিন্তু বিজেপি এভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করছে যে, রামচন্দ্রের নামকে মমতা অপমানের দ্যর্থক ভাবছেন। অর্থাৎ, গত লোকসভা ভোটের পর থেকে মমতা যেভাবে সুপরিকল্পিতভাবে বিজেপির 'রাম' কে ধর্মীয় পরিচয়ে আবদ্ধ রাখার প্রচেষ্টা কে আরো চাগিয়ে দিচ্ছেন, সেই প্রচেষ্টাকেই ফলপ্রসু করে রাজনৈতিক হিন্দু ভাবাবেগকে বিজেপি নিজেদের দিকে সংহত করবার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

    বামপন্থীরা কিন্তু দশরথনন্দনকে চিরদিনই সাহিত্যের নায়কের মর্যাদা দিয়ে আসেন। তাই বামপন্থীদের দশরথনন্দনকে ঘিরে মূল্যায়ণের যতোই সমালোচনা রাজনৈতিক হিন্দুরা করুন না কেন, বামপন্থীদের সেই মূল্যায়ণকে নিজেদের স্বার্থে একবিন্দু ব্যবহার করতে পারে না আরএসএস বা তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি। কিন্তু আরএসএসের আদলেই, বিজেপির মতোই দশরথনন্দনের অবতারত্বের তত্ত্বকেই স্বীকৃতি দেন মমতা। তাই নেতাজির জন্মদিনে মমতা বলতে ওঠা মাত্রই একাংশের দর্শকের শ্লোগান ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যে প্রতিক্রিয়া জানালেন,
    সেই প্রতিক্রিয়াতে অতিথির অপমানের প্রসঙ্গ যতোই উঠে আসুক না কেন, সেই প্রতিক্রিয়ার ভিতরে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার লেশমাত্র ছিল না। সাহিত্যের নায়ককে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি যেভাবে সাম্প্রদায়িকতার আইকনে পরিণত করেছে, মমতাও কিন্তু নিজের আচরণের ভিতর দিয়ে, নিজের অপমানিত হওয়ার কথা বলে রাজ্যবাসীর ভিতরে একটা সহানুভূতির ঢেউ তোলবার অভিনয়ের ভিতর দিয়ে রামকাহিনির নায়কের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পথেই হেঁটেছেন।

    মমতার রাজনীতির প্রতিটি পদক্ষেপই যে বিজেপির ভোটবাস্কে ব্যালেন্স বৃদ্ধির সহায়ক - এটা সাধারণ মানুষদের কাছে বোঝাতে না পারাটা সার্বিকভাবে পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করেন, তাঁদের একটা খুব বড়ো রকমের ব্যর্থতা, সেই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। মমতার ভিতরে যাঁরা যখনই প্রগতিশীলতার স্ফুরণ দেখতে পেয়েছেন, তাঁরাই যে কেবল পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা ভারতে প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রতিষ্ঠা, সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান অনুঘটক, সেই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। এই অপরাধের দায় থেকে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় থেকে নকশাল নেতা অসীম চট্টোপাধ্যায় সহ কাউকেই বাদ দেওয়া যায় না। এমন কি একটা সময়ে গীতা মুখোপাধ্যায়ের মতো আত্মনিবেদিত বামপন্থীও মমতার প্রতি কিছুটা নরম। মনোভাব দেখিয়ে মমতার ছদ্মবেশি সাম্প্রদায়িক চরিত্রকে যে আড়াল করেছিলেন, সেই বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

    মমতার লোকদেখানো, আপাত সহজসরল জীবনযাত্রা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও অনেক বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের এক প্রথমসারির নেত্রী, মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁর অবদান ঐতিহাসিক, তিনি ও একবার কোন জায়গা থেকে লড়াই করে উঠে এসেছেন মমতা - এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে নিবন্ধকারকে খানিকটা তিরস্কারই করেছিলেন। মমতার এই আড়ম্বরহীনতার অভিনয় কৌশল সম্পর্কে রাজনৈতিক মোকাবিলার পথে সেভাবে বামপন্থীরা কখনো হাঁটেন নি। তাঁরা হয় ব্যক্তিস্তরে মমতাকে উপদেশ দিয়েছেন, নয়তো রাজনৈতিক মোকাবিলা না করে কেবলমাত্র উপহাস করেছেন। মমতার ডক্টরেট ঘিরে জ্যোতিবাবুর উপহাসকে কেন্দ্র করে মমতা অনুযোগ করেছিলেন প্রয়াত গীতা মুখোপাধ্যায়ের কাছে।গীতা মুখোপাধ্যায় মমতাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, তুই ওটা না লিখলেই পারিস।

    বস্তুত গীতা মুখোপাধ্যায়ের এই উপদেশের পর মমতা তাঁর নিজের নামে আগে 'ডঃ' শব্দটি আর না লিখলেও এই গীতা মুখোপাধ্যায় ওঁকে সরাপরি মুখের উপরে বলেন নি, সেই উপাধি তুই অর্জন করিস নি, সেটি অসত্য ভাবে লেখাটা একটা মানসিক অসুস্থতা। এই যে গীতা মুখোপাধ্যায়ের মতো সর্বজনশ্রদ্ধেয়া রাজনীতিকের কাছ থেকেও একটা স্নেহ মিশ্রিত ব্যবহার আদায় করে নেওয়া মমতার, এটাই তাঁকে ধীরে ধীরে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে সবথেকে সাহায্য করেছে। এই কৌশলটিই মমতা নিজের আপাত সারল্য, সহজ জীবনযাপনের অভিনয়ের ভিতর দিয়ে একদিকে জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্তরে নিজৃর গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের হাতিয়ার হিশেবে ব্যবহার করেছেন। আর অপর দিকে মমতার ব্যক্তি উচ্চ আকাঙ্খাকে এই কৌশলের ভিতর দিয়ে ক্রমশঃ তীব্র করে তুলে হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি নিজেদের পক্ষে ভোটকে সংহত করেছে। সেই সংহতিকরণের একটা পারস্পরিক বোঝাপড়ার ছবিই আমরা গত কয়েকদিন আগে, নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রধানমন্ত্রী মোদির সভাতে মমতার আচরণের ভিতর দিয়ে দেখতে পেলাম।

    নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্মদিনে সরকারি অনুষ্ঠানে বিজেপির ধর্মান্ধতার সংমিশ্রণ যুক্ত রাজনৈতিক শ্লোগান শুনে মমতার প্রতিক্রিয়াতে রাজনীতির বাইরে থাকা, আপাতভাবে যাঁরা নিজেদের দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ প্রগতিশীল বলে থাকেন, তাঁরাও সামাজিক গণমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর 'অপমান' ঘিরে সরব থাকলেন। তাঁরা কিন্তু মমতার এই 'অপমান' ঘিরে সরব হতে গিয়ে একটিবার ও এই প্রশ্ন তুললেন না যে, এই নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই, আজ যে শ্লোগানে অপমানিত বলে অতি নাটুকেপনা মমতা করলেন, সেদিন, সেই শ্লোগান দিয়েই মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল রাষ্ট্রীয় মদতে। মমতার কিন্তু সেদিন সেই শ্লোগানের রাজনৈতিক উত্তাপ ঘিরে কোনো বিরক্তির ন্যুনতম প্রকাশ আমরা দেখি নি। বরং, সেই শ্লোগান দিতে দিতে ত্রিশুল দিয়ে গর্ভবতী মুসলমান রমণীর পেট চিরে ভ্রূণ এবং মা কে যখন হত্যা করেছিল আরএসএস, বিজেপি, এই মমতাই কিন্তু তখন দিল্লিতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার শোভাবর্ধন করছিলেন। সেই শ্লোগানে ভর করে বিধানসভার ভোটে জিতে আবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর, এই মোদিকেই কিন্তু এই মমতাই ফুল পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। আজ বাম, অবাম, প্যত্যক্ষ রাজনীতির লোক, প্রত্যক্ষ রাজনীতি করি না বলে যাঁরা সবথেকে বেশি রাজনীতি করেন, তাঁদের কারো কিন্তু মমতার এই দ্বিচারিতা ঘিরে সোচ্চার প্রতিবাদ আমরা শুনি নি। ব্যতিক্রম কেবল মহঃ সেলিম। কংগ্রেস নেতা অধীরবাবু তো মমতার 'অপমানে' আর একটু হলেই কেঁদে নদী তৈরি করে দিচ্ছিলেন।

    প্রয়াত সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়েরা এককালে মমতার ভিতরে প্রগতিশীলতা খুঁজে পেয়েছিলেন কেবলমাত্র সিপিআই(এম) কে শায়েস্তা করতে। কিন্তু এই সিপিআই(এম) কে শায়েস্তা করতে মমতার প্রতি পরোক্ষ সহানুভূতি যে বিজেপিকে প্রচন্ড রকম ভাবে সাহায্য করতে পারে, সেটা মেনে নেওয়ার মতো রাজনৈতিক স্থিতধি বুদ্ধি সেইদিন ও যেমন অনেকের ছিল না, তেমনি আজ ও অনেকেরই নেই। মমতা যে বিজেপির ঘরে পৌঁছানোর একটি চৌকাঠ, এটা তিস্তা পানি চুক্তি করতে না দেওয়া পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে দেখেও বুঝে উঠতে না পারা বাংলাদেশের সেই মুক্তিযুদ্ধের বহু পরীক্ষিত নেত্রীর ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার চরম পরিচায়ক, এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। এই ঘূর্ণাবর্তের ভিতরেই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আসন্ন নির্বাচন যে কেবলমাত্র এই অঙ্গরাজ্য বা গোটা ভারতের রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্যতম দিকনির্ণায়ক, এমনটা ভেবে নেওয়ার আদৌ কোনো কারন নেই। এই নির্বাচন গোটা দক্ষিণ এশিয়ার গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার কাছে একটি চরম অগ্নিপরীক্ষা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন