এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • হইতে সাবধান

    Prabhash Chandra Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ | ৮৫৩ বার পঠিত
  • (আজকাল খুব ভয়ে ভয়ে থাকি)

    সত্তর সালের মাঝামাঝি, সদ‍্য শেষ হয়েছে রেল স্ট্রাইক, আর ক'দিন পর ঘোষণা হবে কুখ্যাত স্টেট এমার্জেন্সির নোটিফিকেশন, এটা সেই সময়ের কথা -

    জায়গাটি গৌহাটিতে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের প্রধান কার্যালয়, মালিগাঁওয়ের রেলওয়ে ইন্সটিটিউট। সেখানে উল্লেখিত দুটি ঘটনার ঠিক মাঝখানের সময়টুকুতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দলের একাধিক একাঙ্ক নাটক দেখেছিলাম। নাটকগুলো কি ছিল, কেমন ছিল, তার অধিকাংশই আজ আর মনে নেই। কেবল একটি নাটকের কিছুটা মনে আছে -

    'হইতে সাবধান'

    তখন আসামের, কাছার ডিস্ট্রিক্ট বাদে, সেখানকার বেশিরভাগ সাধারণ বা উচ্চ শিক্ষিত বাঙালি এবং অসমিয়াদের মধ্যে বেশ বড় একটি অংশ ছিল, বাম মনোভাবাপন্ন।

    আবার কাছারের যে সব ছেলেমেয়েরা গৌহাটিতে ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ শিক্ষার জন্য পড়তে আসতেন, তাদের মধ্যেও এই একই মনোভাব প্রভাব ফেলেছিল, সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই।

    তবে নির্বাচনে নির্ণায়ক শক্তি তারা ছিল না।

    অবশ্য একাধিক রাজ‍্যের মতো, আসামেও তখনকার নির্বাচনগুলো ছিল ঠিক পশ্চিমবঙ্গের বিগত কয়েক বছরের নির্বাচনগুলোর মতোই একেবারে 'স্বচ্ছ এবং নিষ্কলুষ'।

    সুতরাং বাংলা নাটকের অ্যামেচার দলগুলির বেশিরভাগই ছিল বামপন্থী এবং তাদের নাটকগুলো ছিল তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধীর স্বৈরাচারী শাসনের ভীষণরকম বিরোধী।

    'হইতে সাবধান'

    একক চরিত্র অভিনিত উপরোক্ত নাটকটি সেখানে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। আমারও খুবই ভালো লেগেছিল।

    দলটি এসেছিল আসামের লামডিং রেল নগরী থেকে।

    একক চরিত্র, নিরাভরণ মঞ্চ। মঞ্চে উপস্থিত একটি মাত্র কাঠের টেবিল। নাটকে আরও একটি চরিত্রের নীরব উপস্থিতি ছিল, সেই ব‍্যক্তি মাঝেমধ্যে মঞ্চে এসে অভিনেতার ঊর্ধাঙ্গের পোষাক বা অন্য কিছু, আলতো করে গায়ে চাপিয়ে দিচ্ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রটি পাল্টে পাল্টে যাচ্ছিল। পরে অরুণ মুখোপাধ্যায়ের 'মারীচ সংবাদ' নাটকেও এরকম দেখেছিলাম। তবে সেটা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ নাটকের অংশ।

    তীক্ষ্ণ আক্রমণাত্মক সংলাপ, পোষাকের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে যাকে আক্রমণ করছে, পর মুহূর্তে তার পূর্ব অভিনিত চরিত্রটি সে আক্রমণের লক্ষ্য।

    আক্রমণের তীর তীব্র ভাবে বিদ্ধ করছে তৎকালীন দিল্লির স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, তাকে সমর্থন দেওয়া দলগুলোকে। আবার কখন সে নিজেই সেই স্বৈরাচারের অংশ।

    বশংবদ বুদ্ধিজীবী, সুশীলবাবুবিবিরাও ছাড় পাননি সে আক্রমণ থেকে।

    অথবা সে নিজেও তারই অংশ -

    'হইতে সাবধান'

    না, সে নাটক নিয়ে আলোচনা আমার উদ্দেশ্য নয়।

    তাহলে -

    আসলে,

    এখন আবার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি সেই একক প্রহসনের অভিনেতাকে।

    তবে কোনো নাটক নয়, প্রহসন নয়,

    রাজনীতির বাস্তব চরিত্ররা সেই নাটকের প্রধান চরিত্র হয়ে, বহু বহু সংখ‍্যায় নেমে পড়েছে এই বঙ্গ রঙ্গমঞ্চে। মূহুর্মূহু পাল্টে যাচ্ছে তাদের অবস্থান। আজ যে নেতা বা নেত্রী বিরোধী দল অথবা কোন ব‍্যক্তিকে আক্রমণের নিশানা করছেন, কাল দেখছি তিনি জামা পাল্টে অন্য ভূমিকায়।

    আক্রমণের লক্ষ্য তখন সদ‍্য বিরোধী হয়ে যাওয়া তাঁর পূর্বতন দল।

    সংলাপের কোন পরিবর্তন নেই, একই তার অঙ্গভঙ্গি।

    অভিনয়ের স্টাইল ইত্যাদি -- সব এক।

    জানিনা, গত পরশু যাকে একটি দলের হয়ে অভিনয় করতে দেখেছি গতকাল তিনি তাঁর জামাটা পাল্টে ফেলেছেন কিনা !

    এতো মুহুর্মুহু সব পাল্টে যাচ্ছে, তাল রাখতে পারছি না।

    "কে বলে 'যাও যাও'-- আমার যাওয়া তো নয় যাওয়া"

    আসলে এ তো দল পাল্টানো নয়, এ যে ঘর পাল্টাবার খেলা।

    কুৎসিত, নোংরা একটি বাগানের দুটো নেতিয়ে পরা ফুল মাত্র-

    অতএব, হইতে সাবধান।

    পুনঃ- আজকাল খুব ভয়ে ভয়ে থাকি মশাই -

    -- প্রভাস চন্দ্র রায়।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন