হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ _______
জয় গোস্বামী বলতেই আমরা বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য কবিতা বুঝি। বুঝি ভুতুম ভগবান, পাগলী তোমার সঙ্গে, সূর্য পোড়া ছাই, ঘুমিয়েছো ঝাউপাতা?। মনে পড়ে তাঁর মালতী বালা বালিকা বিদ্যালয়।
"হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ" বইটি কোনও কবিতার বই নয়। বইটি আদ্যন্ত গদ্যে লেখা। উনি যে শুধু কবিতা নয় সুন্দর, সরস, গুঢ়, গভীর ও চোখ ঝলসানো গদ্যও রচনা করেন এই বইটি তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। বইটি কবির আত্মজীবনী মূলক রচনা। তাঁর ছোটবেলার খুব রূঢ় বাস্তবতাকে বেশ নরম সুরে পরিবেশন করেছেন। রুগ্ন অশক্ত শরীর, অভাব অনটন দুঃখ, কষ্ট তাঁর শৈশব ও কৈশোর জড়িয়ে ছিল। মাত্র আট বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান (১৯৬২) আর মা মারা যান ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে। পাঁচ বছর বয়স থেকে রাণাঘাটে থাকতেন। ওখানেই একাদশ শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। মা একটি স্কুলে পড়াতেন।
ছোটবেলায় একটি কবিতা লেখেন সিলিংপাখা নিয়ে, সেই শুরু তাঁর কাব্যের জগতে যাত্রা। ছোটবেলায় তিনি যে অত্যন্ত ভিতু প্রকৃতির ছিলেন সে কথার অকপট স্বীকারোক্তি এখানে রয়েছে। অভাব আর অসুস্থতার সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করে গেছেন - এসব কথা এখানে চারটি ব্যাক্তিগত নিবন্ধে রয়েছে - "নিজের জীবন বীজের জীবন" ,"পাগল যে তুই", "শরতে আজ কোন অতিথি"
আর "হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ"এ। এর মধ্যে প্রথমটিতে পাঠককে জানিয়েছেন তাঁর কবিতা রচনার প্রেরণার জগতের কথা। লিখেছেন নিজের জীবনের টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতার কথা, বেঁচে থাকার, এমন কি স্বপ্নের কথাও। বাবার কাছে রবি ঠাকুরের ছড়া ও গান শেখা, গান গাইবার পর বাবার কাছ থেকে সন্দেশ উপহার পাওয়ার কথা, বাবার মৃত্যু শয্যার কথা। মৃত্যু, অসুখ, লোভ, প্রেমের বর্ণাঠ্য চালচিত্র যেন।
"পাগল যে তুই" এ তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলেছেন। কীভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পরিবারের একজন হয়ে আশৈশব তাঁর সঙ্গে মিশে ছিলেন তা মজার ছলে বলেছেন। বলেছেন শৈশবের গান আর পিতৃ বিয়োগের কথা। "শরতে আজ কোন অতিথি" তে তাঁর ছেলেবেলার শরত্কালের কথা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতার কথা, পরীক্ষার দিন রাতের কথা,আর বাল্যপ্রেমের কথা বলেছেন। "হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ" নিবন্ধে প্রেমের বিষয়ে নিজস্ব ধারনা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লিখেছেন তার নিজস্ব মতামত। গ্রন্থটির শেষে তাঁর গদ্য যেন কবিতা হয়ে উঠেছে, যখন তিনি লিখেছেন. "...কিন্তু ওই রাত্রি মরুভূমি জানে, নদী পথেরাও জানে, ওই ধ্বংসাবশেষ জানে, জানে নিঃশব্দ বয়ে চলা ওই ভালো বাসার নদী পথেরাও-যে উড়ে চলেছে, সে কেউ নয় - সে কেবল কবি!" তাঁর কবিতার মতোই ভাষা, ভাব ও বিষয় বস্তুর দীপ্তিতে আকর্ষণীয় এই গদ্য গ্রন্থটি।
এই বইটা একসময় খুব প্রিয় ছিল। এখনো পড়ি মাঝে মাঝে।