১
ইস্পাতের মিনার থেকে প্রতিফলিত আলো
নষ্ট করে দিচ্ছে চোখের রেটিনা,
সাতজন অন্ধ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মক্কা চলেছে;
দুটো চেয়ারে বসে যীশু ও মহম্মদ লক্ষ্য রাখছেন
দুনিয়া জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে কিনা ঠিকঠাক
আর পার্মাফ্রস্টের নীচে থেকে ভেসে উঠছে
অজানা জন্তুর ফসিলগুলি।
ডুবন্ত আলোয় তাদের কথা মনে পড়ে —
পৃথিবীর শ্যাওলাধরা বিভিন্ন পুরাতন প্রাসাদের গঠন,
টেবিলক্লথের জটিল নকশা এবং
ইতালির এক শহরতলিতে বন্ধ গাড়ীর ভেতর
কোনো ডেলিভারি-বয়ের
পচাগলা লাশ: সিগন্যালে ইলেকট্রিক স্কুটার
থামিয়ে এসব ভাবছি —
মেয়েরা বেলুনে চড়ে উড়ে যাচ্ছে উত্তুরে হাওয়ায়।
২
ব্যাঙ্ক থেকে ফিরে কঞ্চা উর্কিজা দেখলেন
খরগোশগুলো মরে পড়ে আছে;
বাগানে পিঁপড়েদের একটা দীর্ঘ বাদামী লাইন —
সূর্যের ক্রোমিয়াম আলো খাচ্ছে জলগুলি,
আসলে কার্গো জাহাজের সামনে অবনত
হবে বলে প্রতীক্ষমান।
পাহাড়ী হোটেলের জানলাতে কুয়াশার ফ্রেমে
সারি সারি নৃতাত্ত্বিকের মুখ,
অজস্র লগইন স্ক্রিনের প্রুশিয়ান ব্ল্যু চিৎকারে
তাদের মাথার ভেতরটা ভরে যাচ্ছে
সেলুনে মুখোমুখি দুটি দেয়াল-আয়নার মতো।
৩
ইলেকট্রিক করাত এসে চিরে দিচ্ছে
কোমরে দড়িবাঁধা আসামীদের মুন্ডুগুলো;
ফ্রন্টাল লোব ফেটে ফ্যানা-ফ্যানা রক্ত
উগড়ে আনছে পেনাল কোডের নম্বর —
ধারা অ্যাতো, ধারা অ্যাতো, ধারা অ্যাতো।
অবিশ্বাসীর চোয়ালে গেঁথে যাচ্ছে দাঁতালো ফর্ক,
যাদুঘর থেকে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে আসছে
মধ্যযুগের বিকটদর্শন টর্চার মেশিন;
শুধু অ্যাকোরিয়াম-পালানো একটা সাদা হাঙর
গভীর রাতে নেক্রোপলিসের মোড়ে মোড়ে
নিভে-আসা গ্যাসবাতি জ্বালিয়ে দিতে গিয়ে
লক্ষ্য করছে ঘুমন্ত মানুষের মুখ
কেমন শিশুর মতো রুগ্ণ দেখায়।
৪
মেরুজ্যোতি-উজ্জ্বল ইয়েলোনাইফের আকাশ
তাকে আশ্চর্য ডিপ্রেশন দিলো।
প্রথম রাতটা অগোছালো কেটেছিল
একটি নিঃসঙ্গ-হলুদ কফির দোকানে —
সাড়ে পাঁচটার সময় রুমে ফিরে
নিজের ব্যাকপ্যাকের ছায়াকে মড়ার মাথা ভেবে
সে চমকে উঠেছিল হঠাৎ, এবং স্বপ্নে
কোনো বাদামী উটের স্মৃতি তাকে দুঃখিত করে;
সেটা এখন ফিরে এলো
সাদা-কালো ভিন্টেজ ফরাসী ফিল্মটার ফ্রেম ভেঙে।
ভারতীয় গ্রীষ্মে কলকাতার কোনো সস্তা হোটেলে
পিটারের সাথে ওরাল সেক্সের ঘামেভেজা দুপুরগুলো,
আর তারপর এলএসডির ঘোরে
গঙ্গার পাশে চুল্লীতে আধখাওয়া লাশ পোড়ানোর দৃশ্য
এখন রঙহীন প্রেক্ষাগৃহে আচমকা আলোময় হলো।
৫
যেসব মেয়েরা আজ রাতে লেখা ছেড়ে দিলো,
তারা কাল লিখবেই;
রাষ্ট্র শুধুই ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করায় না,
বিদ্রুপে-হতাশায় নষ্ট করে দিতে চায় সবকিছু,
যা রুক্ষ, আর মনে হয় স্বাভাবিকের বাইরে।
রাষ্ট্র শুধুই যুদ্ধজাহাজ বানায় না,
সুইসাইড বোম্বারের মতো
সরল শান্ত পাঠকের রেজিমেন্টেশন তৈরি করে।
একজন লোরকা খুন হয়,
আর অনেক লোরকা এমনিই লেখা ছেড়ে দেয়
এবং বেছে নেয় চুপ করে যাওয়া।
সরে যাওয়া যথেষ্ট পরিণতি নয় — এই বুঝে
লিখে যেতে হবে ফেরারী আসামীর মতন;
যেসব মেয়েরা আজ রাতে লেখা ছেড়ে দিলো,
তারা কাল লিখবেই।
ভালো লাগলো।
৩ নম্বর লেখায় "উগড়ে আনছে..." আর "ধারা অ্যাতো" পরস্পর জায়গা বদল করলে একটা এক্সট্রা মজা হতে পারতো।