অদ্ভুত রকমের ভাল লেখা। একটা আস্ত সময়কে তুলে আনলেন!
রঞ্জনদা, খুব ভাল লাগল।
আমাদের উঠতি বয়েসে শুনতাম সমর সেনের মতন শহুরে কবি আর আসেননি। তবে বুদ্ধদেব বসুর 'আধুনিক বাংলা কবিতা' পড়ে সমর সেন টানেননি। বরঞ্চ 'বাবু-বৃত্তান্ত' পড়ে বাগবাজারী ফচকেমি 'দাদু, পুরুষাঙ্গ বাঁধা দিয়ে বিলেত যাবনা' টেনেছিল বেশি। অথবা, রবীন্দ্রনাথকে রবিবাবু সম্বোধন শুনে রবীন্দ্রনাথের "আপনার বাবা আমার ছাত্র ছিলেন" বলা।
১৯৯২ সালে সুমনের প্রথম স্টেজ শো দেখতে গিয়ে সমর সেনের উদ্দেশে ওনার "না বুঝে ছিলাম আমি যার প্রতিবেশী" শোনা ও তৎসহ সুমনের বাচনে ওনার শেষবয়সের একাকীত্বের গল্পে আরেক সমর সেনের ছবি ধরা পড়ে। সেই সঙ্গে ফ্রন্টিয়ারের কথা জানা, ওনার অতি বাম রাজনীতির প্রতি সমর্থন এসবই ওনার ভাবমূর্তিতে খাপ খেয়ে যেতে থাকে।
খাপ খায়না সুনীলের 'অর্ধেক জীবন' নামক আধা আত্মজীবনীতে পড়া কনসুলেটের পার্টিতে সুনীলের প্রতি ওনার উষ্মা প্রদর্শন ও খতমের ধমক। অবিশ্বাসের কোন কারণও দেখিনা।
বা:
সমর সেনকে নিয়ে খই ওড়ানো দুঃসাহসের কাজ। কিন্তু এই লেখাটি সমর সেন নামক এনিগমা'টিকে অনেকটা ছুঁতে পেরেছে। বিশেষত হাল প্রজন্মে যাঁরা বাংলা কবিতা লেখেন বা 'রাজনীতি সচেতন' ইংরেজি গদ্য লেখেন, তাঁদের সমর সেনের থেকে কয়েকটি স্কিল শেখা প্রয়োজন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে এককালের বাংলা কবিতা পাঠক সমর সেনের ক্লোন বলতেন।
বছর চল্লিশ আগে জামশেদপুরে একটি সেমিনারে সুভাষ মুখুজ্যে ও সমর সেনের কবিতা সম্পর্কে তুলনামূলক আলোচনায় বলেছিলুম, সমর সেনের নাগরিক স্মার্টনেসের প্রবল আকাঙ্খা ওঁর মানসভুবনের কিছুটা ক্ষতি করেছিলো। প্রত্যয় ও প্রতিজ্ঞার ভারসাম্য রক্ষা করা যেকোন বড়ো লেখকের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জ। সমর সেন যেন প্রতিজ্ঞার ভারেই প্রত্যাশিত কক্ষপথ থেকে সরে গিয়েছিলেন। সুভাষের উপর ছিলো প্রত্যয়ের ভার। সুভাষ রয়ে গেছেন নিজের শর্তে। সমর সেন পারেননি। বাংলা পাঠকের দুর্ভাগ্য।
ঐ সভার দুই মডারেটর, প্রবীণ নারায়ণ চৌধুরী এবং 'নবীন' নবনীতা দেবসেন, দুজনেরই এই মূল্যায়ণটি ভালো লেগেছিলো।
মনে পড়ে গেলো।
সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ। সম্বিতের সঙ্গে সহমত। সমর সেন এর কবিতার পরিশীলিত নাগরিকতার একাকিত্ব ওই বয়সে আমাকেও দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। টেনেছে ভিলাইয়ে রোগশয্যায়, ঘরবন্দী একাকিত্বে।
সুমনের গানটির জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।
শিবাংশু'র বক্তব্য প্রত্যাশিত নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সমর সেন : কিছু উড়ো খই - রঞ্জন বাবুর শক্তি শালী লেখা। প্রায় তথ্য চিত্রের মেজাজ। সমর সেনের কবিতা নানা সময়ে পড়লেও এভাবে ভাবতে পারি নি। তাঁকে ধন্যবাদ।
রঞ্জনবাবুর এই অসামান্য শ্রদ্ধা নিবেদনটি বড্ড ভালো লাগল। সমর সেন আমারও বড় প্রিয় কবি। সত্যি কথা বলতে, জীবনের একটা সময়ে তিনি জীবনানন্দকে সরিয়ে আমার কাছে আধুনিক বাংলা কবিতার শ্রেষ্ঠতম কবি হয়ে উঠেছিলেন।
শুধু একটা মৃদু অভিযোগ রয়ে গেল। গোটা লেখাটায় তিনিএকবারের জন্যও এলিয়টের অনুষঙ্গ আনলেন না। এলিয়ট, যাঁকে সমর সেন চিহ্নিত করেছিলেন 'আমাদের বখাটে জেনারেশনের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি' বলে।
১৯৮৮ সালে দ্য ওয়েস্টল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য থাকার কারণে, তিরিশের কনিষ্ঠতম পঞ্চম পাণ্ডবটির কবিতা আমাকে অবশ করে দিয়েছিল। সেই আমার প্রথম সমর সেন পড়া। তাঁর তীক্ষ্ণ শ্লেষ, অননুকরণীয় গদ্যছন্দ, কাটা কাটা শব্দনিক্ষেপ, নাগরিক মনন - এর অনেকটাই এলিয়ট প্রভাবিত।
বিষ্ণু দে নিজেও এলিয়ট প্রভাবিত ছিলেন। তিনি এলিয়টের একাধিক কবিতার অনুবাদ শুরু করেননি, তাঁর কবিতার একাধিক চিত্রকল্পের কারণে তিনি এলিয়টের কাছে সরাসরি ঋণী। সমর সেন এখানেও ব্যতিক্রমী। তিনি এলিয়টকে ব্যবহার করেছেন একদম স্বকীয়ভাবে, নিজস্ব স্টাইলে। খুব খুঁটিয়ে না পড়লে, সেসব জায়গায় এলিয়টের প্রভাব নজরেই আসে না।
আরও একটা ক্ষেত্রে তিনি চিরব্যতিক্রমী। সেটা হল মধুসূদন ও বঙ্কিমের সাহিত্য ঘরানার উল্টোদিকে হেঁটে, তিনি বাঙালির সাহিত্যচর্চার মিথ একা হাতে ভেঙে দিয়েছেন। দিয়েছেন বলেই প্রথমে শুরু করেছেন বাংলায়, এবং পরে ইংরেজিতে থিতু হয়েছেন। তাঁর তীর্যক প্রকাশভঙ্গি যদিও দুটি ভাষাতেই এক রয়ে গেছে।
এবং নিজেকে রিপিট না করতে চাওয়া। কবিতার ভুবনকে সেই যে তীব্র তাচ্ছিল্য করে সরে গেলেন, পরবর্তীকালে আর সেই ছেড়ে যাওয়া চটিতে পা গলাননি।
আমার অশেষ সৌভাগ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্য ওয়েস্টল্যান্ড, ট্র্যাডিশন অ্যান্ড ইন্ডিভিজুয়াল ট্যালেন্ট এবং মার্ডার ইন দ্য ক্যাথিড্রাল-এর পাঠ আমি এমন একজনের কাছে গ্রহণ করেছিলাম, যিনি ভারতবর্ষে এলিয়টের ওপর প্রথম ডক্টরেট।
অনেক পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য রঞ্জনবাবুকে অজস্র অভিনন্দন।
থ্যাঙ্কু রঞ্জনদা।
ইয়ে, কয়েকদিন আগে ফ্রন্টিয়ারের তরফ থেকে কিছু সাহায্যের আবেদন পেয়েছিলাম।সাহায্য মানে আর কিসুই নয়, লাইফ মেম্বার হয়ে যাওয়া।
বি,
ফ্রন্টিয়ার এখনও টিকে আছে? বাঃ , খুব ভাল লাগল। তিমির বসুই কি সম্পাদক? লাইফ মেম্বারের টাকা কত ?
এই নিন
আর, মণিভূষণের কবিতাটাও থাক ঃ
কি হবে আর পাতা উল্টে শঙ্খ ঘোষ আর হার্ট ক্রেনের
ভারতবর্ষ রেসের মাঠ মুৎসুদ্দী বেনের
খবর হতে পারি নি তাই
অভিমানে আঙুল ফোলাই
এখন শুধু গদ্য পড়ি
ফ্রন্টিয়ারে, সমর সেনের।
ভালো লাগলো, এই লেখাটার জন্যে রঞ্জনদাকে
থ্যাঙ্কিউ। ইনফ্যাক্ট আমি এলেবেলের থেকেও সমর সেন বিষয়ে লেখা আশা করছিলাম বেশ কিছুদিন ধরেই, ভাতের কোন কথার সূত্র ধরে, ঠিক মনে নেই।
তবে আমার কিনা দুটো আজাইরা কথা না বললে ভাত হজম হয় না, তাই বলি, রঞ্জনদার লিস্টিটায় একটু গোলমাল আছে, যেমন বড়াই আর ইন্দো ডাক্তার এক লোক, আর লিস্টির কারো কারো সমর সেন বিষয়ে আর যাই থাকুক, ঠিক অ্যাপ্রিসিয়েশনের দৃষ্টি নেইঃ) (নিতান্তই ভাট টাট থেকে আহৃত তথ্য, অফলাইন কিছু না)।
আর দ্বিতীয়ত, ঐ পুরুষাঙ্গ বাঁধা দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে সমর সেন খুব আলোচিত, আর আমার ঐ একটি মন্তব্যের জন্যেই এই ভদ্রলোকের ওপর কিঞ্চিৎ বিরাগ।
আদারওয়াইজ তৎকালীন সাহিত্যিক হিসেবে সমর সেন শ্রদ্ধেয়, কৌতুহলোদ্দীপক ইত্যাদি তো বটেই।
হুতো, আপনি যে ভাটে বলা আমার সমর সেন সম্পর্কে বলা কথা মনে রেখেছেন, এতে আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি। কারণ আমি নিজেই কী বলেছিলাম, তা ভুলে মেরে দিয়েছি! ইচ্ছে আছে সমর সেনকে নিয়ে একটা বড় করে লেখার। তরুণ বয়সের দুর্বলতা তো। তবে এখানে সমর সেনের এত ভক্ত দেখে কিঞ্চিৎ বুক দুরুদুরুও আছে। দেখা যাক, কবে হয়ে ওঠে। কিংবা আদৌ হয়ে ওঠে কি না।
খুব ভালো লাগল এই লেখাটি
হুতো,
আর যেটা বহুপ্রচারিত ভেবে লিখিনি সেগুলোঃ
১ শান্তিনিকেতনে দাড়িদাদুকে 'রবিবাবু' সম্বোধন করে ঝাড় খাওয়া? " তোমার বাবা আমার বন্ধু ছিলেন "। সম্ভবতঃ দীনেশ সেন, অরুণ সেন ব্রাহ্ম ছিলেন।
২ দিল্লিতে প্রতিবেশি কিশোরী কন্যাকে রোজ দেখতে দেখতে ভাবলেন "বেশ লাগছে" ; তারপর বিয়ের কথা ভাবা হচ্ছে শুনে হঠাৎ পাত্র হিসেবে "আমাকে ভেবে দেখতে পারেন" বোলে উঠে কাট মারা? উনিই কবিপত্নী সুলেখা দেবী।
৩ আমার লেখাটা শেখরের কথায় একরাত্তিরে তাড়াহুড়ো করে লেখা। বাদ পড়েছে ওঁর ডায়েরি থেকে-- মাটিতে বিছানা পেতে ঘুমুচ্ছেন কবিবন্ধু কামাক্ষীপ্রসাদ (দেবীপ্রসাদের দাদা), ] একটা মাছি উড়ে উড়ে বসছে। গালে একটা দাগ দেখে সমর সেনের চিন্তা "বোধহয় রেখা কামড়ে দিয়েছে" ।
'বাগবাজারী বখামি"? আমার ভাবতে ভাল লাগে যে একটা বয়েসে আমরা সবাই সমান "বখা", সে রবিঠাকুরের প্রজন্মই হোক, কি সমর সেনের, বা আমার এবং হুতোর।
বি,
অনেক ধন্যবাদ। আশ্চর্য , একাউন্ট খুলল না। খানিকক্ষণ পর পর নানাভাবে চেষ্টা করলাম ।অবশেষে বড় করে বাণী আসতে লাগল--Account Suspended! Ask your provider.
লেখাটি চমৎকার ! একটা সময়ে সমর সেনে ডুবে ছিলাম। এখন ততটা না হলেও পুরনো চাল সবসময়ই ভাতে বাড়ে।
ei bhabei saccha marxbadi ra saccha theke jai.dada / neta ra moi diye uthe moi kere nei...thake kichu abashistha manush...Samar Sen er moto.Kintu boro Bhishon bhabe thake...Bhishon bhabe !!