এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  বিবিধ

  • পুলিশি রাষ্ট্রের উত্থানঃ হতাশ "পুরুষে"র ক্রোধ ও ফ্যাসিবাদী প্রতিক্রিয়া

    সৈকতমিস্ত্রী
    আলোচনা | বিবিধ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ২৪৩০ বার পঠিত
  • পুলিশের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন জাগছিল। সচারাচর থানায় যেতে হয়না। তবে যেটুকু খোঁজ পাচ্ছিলাম পুলিশ পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। সাম্প্রতিক এক তৃনমূল এম এল এও বলছিলেন কথাটা। আসলে তৃনমূল একটা ক্লাবের মতো। একটি পোস্ট। বাকিগুলো তোলা থাক। সেই পোস্টের সাথে বিজেপি রোগের গূঢ় তত্ত্ব কথা কান পাতালে শোনা যায়। এটা বাহ্য। একটা পরিসংখ্যানে দেখছিলাম ভারতীয় পুলিশ বাহিনীর ৭২% (পরিসংখ্যানটি ঠিক বা ভুল তার দায় সমীক্ষা কারীদের) কর্মীর ধারণা মুসলিমরা অপরাধ প্রবণ।তার সামাজিক নৃতত্ত্ব আলাদা। যে কোন থানার নোটিস বোর্ডেও অভিযুক্তদের যে ছবি ও নাম টাঙানো থাকে তাতে বেশ এমন নামের আধিক্য, যা দিয়ে আমরা সেই ব্যক্তিদের মুসলিম বলে চিহ্নিত করতে পারি।

    বছর আটেক আগের কথা। অশোকনগরে দেবু দত্ত বলে জনৈক দেশি মদের একটা কাউন্টার খোলে একটি ফাঁকা জায়গায়। যেখানে তিনটি মুসলিম গ্রামের রাস্তা মিশেছে। কাউন্টার থেকে মদ কিনে "হিন্দু " ছেলেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মদ খেয়ে স্কুল ফেরত মেয়েদের উত্যক্ত করত। কোন একদিন মাত্রা ছাড়ালে গ্রামবাসীরা একজোট ভাবে দোকানটি ভেঙে দেয়।তার দিন দুয়েক বাদে থানায় যেতে হয়। একজন এস আইকে চিনতাম।তার সাথে কথা বলছিলাম।লোকটি অকপটে জানায় - "একজন হিন্দু ভাইয়ের দোকান ওরা ভাঙল, আমরা কিছু করতে পারলাম না।" সুতরাং পুলিশের অন্দরে হিন্দুত্বের চোরা কারেন্ট ছিল,বিজেপি তাকে কাজে লাগাচ্ছে। যা ফ্যাসিবাদের পক্ষেও কাজ করছে।

    প্রাথমিকে এক স্কুলের জনৈক সহপাঠী ছিল। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে পুলিশের কনস্টেবলে চাকরি নেয়।আমার সাথে যোগাযোগ ছিল। আমায় ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রির বিষয়ে খোঁজ নিতে বললে, আমি খোঁজ খবর করি তাকে বলি। অবশ্য বোধহয় পরে সে আর ভর্তি হয়নি। তার সাথে পানাহারও একযোগে করেছি। তার বক্তব্যের হতাশা লক্ষ্য করার মতো। নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে সে কাজ করেছে। এক, চাকরি করেই তিনবছরের মধ্যে সে হাউস লোন নেয়,ফলে প্রতিমাসে প্রচুর ই এম আই দিয়ে তার হাত প্রায় শূন্য। চাইলেও " মস্তি" সে করতে পারে না। দ্বিতীয়ত, কোন মেয়ের সাথে প্রেমজ সম্পর্কে সে যেতে পারেনি। অথচ প্রবল যৌনতার ইচ্ছা। যাকে অবদমিত করে তাকে চলতে হয়। এর অবস্থান এত নিচুতে যে বিনামূল্যে বিকল্পও তার সম্ভব নয়। সম্প্রতি একটি কাজের দিনে তার নাম্বার থেকে বার দশেক কল আসে। ব্যস্ততা ছিল। তবু কল ব্যাক করতে সে ওপার থেকে বলতে থাকে কেন আমি সিএএ বিরোধী পোস্ট করে চলেছি। বিজেপি নাগরিকত্ব দিয়েছে। তাকে সিএএ আইন এর পিডিএফ পাঠিয়ে কথা বলার চেষ্টা করি, বলি নাগরিকত্ব দেয়নি। আবেদন করার কথা বলেছে। এরপর কোন যুক্তিতে নাগিয়ে বিজেপির এক বগ্গা কথাই সে আওড়াতে থাকে। শিক্ষিত লেকগুলো নষ্টের গোড়া। সে শিক্ষিত না।
    বেঁচে গেছে।

    পুলিশ একটি মসকুলিনিটি ও "পুরুষের" প্রতীক। তাই আন্দোলন বা লড়াইতে সফট টার্গেট করা হয় মহিলাদের। সোনি সোরির যৌনাঙ্গে পাথর ভরা হয় অতৃপ্ত ও বিকৃত "পুরুষ" কে তৃপ্ত করতে। গণআন্দোলন রত মেয়েদের প্রায়ই যৌনতার ইঙ্গিত মূলক কথা বলা, "করে দেব" ইত্যাদি ন্যরেটিভ পুলিশ ব্যবহার করে। আর পরিসংখ্যান দেখায় আমাদের দেশে নারীর প্রতি হওয়া অত্যাচারের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে পুলিশ ও সেনাদের নাম বার বার ওঠে। আর মুসলিম মহিলা হলে কথাই নেই। হতাশা, অবসাদ আর অন্তর্লীন "পুরুষ" ঋপুর কামড়ে তারা লজিক বা যৌক্তিকতা হারায়। তখন একটি আজ্ঞা পালক ও ধর্ষকামী যন্ত্র হয়ে ওঠে। যা রাষ্ট্র শক্তি বিশেষত ফ্যাসিবাদকে পুষ্ট করে।

    সাত আটকে বছর আগে। আমি ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করি। ধর্মতলা চত্বরে কোন এক সন্ধ্যার কথা মনে এলো। আমি ফিরছি। সাদা পোশাকের একজন পুলিশ খুব চেঁচাচ্ছে। দুজন যুবক কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ানো।ছেলেদুটে ভীত। পুলিশটি বার বার একই কথা বলে চলেছে - "কেন ছেলে হয়ে ছেলেকে চুমো খাবে? চুমো খাবে কেন?" বিষয়টি স্পষ্ট হল।বললাম ক্ষতি কি হয়েছে। পুলিশটি রেগে গিয়ে জানতে চাইল - "আপনি কে?" আমার সাংবাদিকতার কথা শুনে সে বললেন - "আপনারাই নষ্টের গোড়া।দেশ উচ্ছন্নে যাবে।"

    ২০০৬ সাল নাগাদ ধর্মতলায় আইন অমান্যে ব্যপক গন্ডগোল হয়। পুলিশকে তখনও বলতে শুনেছি - নচ্ছার... ব...ক... নষ্টের গোড়া।"

    আজকের বইমেলাতে পুলিশের মারমুখী ভূমিকার নেপথ্যে রাজ্যসরকারের ভূমিকার পাশে পুলিশের নিজস্ব একটা সক্রিয় জায়গা ও প্রক্রিয়াকরণ আছে। বিজেপি মানে মুসলিমকে টাইট দেবে। অতএব বিজেপিকে রক্ষা করা। কারণ "পুরুষ" হল বিজেপির আইকন। আমার সেই সহপাঠী পুলিশ কর্মীটি তর্কে হেরে গিয়ে আমায় থ্রেটই দিয়েছিল একপ্রকার - "এবার মোদীর বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করবে, তাকেই মেরে ঠ্যাং ভাঙবে।" সমীক সরকার "সমতার ইস্তেহার"-এ বিজেপির উত্থানের পেছনে দুটি কারণ দেখান - (১) পুরুষের প্রতিক্রিয়া (২) হিন্দু উদ্বেগ। সেই সাথে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত করা। এই প্রতিটি ন্যরেটিভ বর্তমানের সামাজিক অসুখ, হতাশা ও অবসাদগ্রস্ততা থেকে আসে। আর এই ন্যরেটিভের পেছনে লুকিয়ে আছে ফ্যাসিবাদের মারাত্মক হাতছানি। যার থেকে ফ্যাসিবাদ ও তার রক্ষক রাষ্ট্রের "সংগঠিত" গুন্ডা পুলিশের সৃষ্টি। বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ব এই বাহিনিকে অনেকটাই মোহগ্রস্ত করেছে। আজকের ঘটনায় পুলিশের অতি সক্রিয়তার পেছনে এমন ভূমিকা কাজ করছে নয় তো? অনেকে বিতর্ক করতে পারে। "দিদি- মোদির সেটিং" এর কথা বলতে পারেন। তাতে আপত্তি করারও কিছু নেই। তবে হতাশ, অবসাদগ্রস্ত "পুরুষের" প্রতিক্রয়া উগ্র মারমুখি গুন্ডামিতে যে থামে, তাকি বলার অপেক্ষা রাখে?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kbf2020 | 162.158.***.*** | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:২৩729598
  • রৌহিন | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:০৪729599
  • একেবারেই তাই। শুধু "সেটিং" এর গল্পে এই আচরণের ব্যাখ্যা হবে না। এ হল পুলিশের স্বতস্ফুর্ত আচরণ। হিন্দুত্ব, পৌরুষ আর সেই সঙ্গে যোগ করতে হবে তথাকথিত "ট্রেনিং" - যা ন্যুনতম মানবিক বোধগুলিকে নষ্ট করে দেয়
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন