এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • প্রতিশোধস্পৃহা অনিন্দ্য দত্ত প্রতিশোধস্পৃহা অনিন্দ্য দত্ত

    Anindya Dutta লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | ২৪৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Anindya Dutta | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ১১:৫৭728618
  • “Neighbor’s Envy, Owner’s Pride” কথাটা বহুদিন আগে মাঝেমাঝেই টেলিভিশনে “Onida TV র“ বিজ্ঞাপনে ভেসে উঠত। এই বিজ্ঞাপন টি নিয়ে নানাবিধ সমালোচনাও হয়েছিল। বিশেষ করে ঈর্ষা কে বিজ্ঞাপনের বিষয় করা নিয়ে। নিঃসন্দেহে নিন্দার্হ। কিন্তু তখন ভাবিনি যে নিন্দনীয় কোনটি, ইর্ষা না গর্ব? যদি শুধুমাত্র ইর্ষাই নিন্দনীয় হয়, তবে অবশ্যই এর মধ্যে একটা দ্বিচারিতা আছে। যেমন অনেকে বলবেন টেলিভিশনের মতো একটি পণ্য নিয়ে এত গর্বিত হওয়ার কি আছে? ঠিক আছে, তা না হয় মেনে নেওয়া গেলও, কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে যা গর্ব করার মত। যেমন আমার কোন নিকট আত্মীয় মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করেছে, বা, আমার মেয়ে টেলিভিশনে নিয়মিত নাচ করে গুনী সমাজে বেশ নাম করে ফেলেছে, বা আমার কাছের কেউ বিশাল বড় মাইনার চাকরী যোগার করেছে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এই ধরনের যে কোন কিছুতেই আমরা গর্বিত হই এবং পাড়া প্রতিবেশির কাছে বুক ফুলিয়ে বলে বেড়াই। অথচ যে বা যারা এ সব কিছু হতে পারলো না বা পেল না, তারা এ সব শুনে সমান আনন্দ পেল কি না, এ আমরা কখনই ভাবি না। আসলে আমাদের বলার ভঙ্গিমাতেই প্রকাশ পেয়ে যায় আমরা আসলে কি চাই। বলতে দ্বিধা নেই যে আমরা মুলত চাই যে, আনন্দের থেকে আশেপাশের লোকেরা একটু ঈর্ষাহ্নিত হোক। তবেই তো আমার গর্বিত হওয়া সার্থক। আসলে গর্ব যে কখন অহঙ্কারে বদলে গেছে তা আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি না। কাছের মানুষের সম্বন্ধে ভাল খবর শুনলে যে আনন্দ হয় তা আশেপাশের মানুষের সাথে প্রান খুলে বেঁটে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাতে গর্ব থাকে কিন্তু অহঙ্কার থাকে না। অহঙ্কার মোড়া গর্ব তখনি উপস্থিত হয় যখন তা আর কারও ইর্ষা জাগায়। আনন্দ না গর্ব, কোনটা আসলে মানুষকে বেশি আকর্ষন করে তারি এক বিজ্ঞাপিত রূপ হল অনিডা টিভি র ওই বয়ান টি। বহুদিন আগেই বিজ্ঞাপন জগতের কোন এক দক্ষ কর্মী এই সত্য টিকে আবিস্কার করে এবং তার অসাধারন প্রয়োগ করে, ONIDA TV র বিক্রি বহুশতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার ফল স্বরূপ তিনি কি পেয়েছিলেন জানি না, কিন্তু, মানুষের এই বিপজ্জনক প্রবণতাকে চেনাতে সাহায্য করেছিলেন এটা অবশ্যই অনস্বীকার্য
    আমাদের চারিপাশে আসলে এমনি এক পরিবেশ এবং পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যা আমাদের প্রতিনিয়ত চালনা করছে এমন এক জীবনশৈলীর অনুসন্ধানে যা আমাদের অন্যের থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে এবং অন্যের ইর্ষা উদ্রেককারী এই মনন কে আঁকরে ধরে আমরা পৌছতে চাইছি এমন এক উচ্চতায়, যেখান থেকে পৃথিবীটা কেই ছোট মনে হবে। এমনি ছোট যে তাকে যেন তালুবন্দী করা যাবে। এই ভ্রমই আসলে সৃষ্টি করে সেই ক্ষমতার দম্ভ, যা এই পৃথিবী তে একের পর এক জন্ম দিয়ে চলেছে ভয়ঙ্কর, অমানবিক নানা ঘটনা, যা সমগ্র মানবসত্তা কে এই বিশ্বপ্রকৃতির সামনে অপরাধী হিসাবে দাড় করিয়ে দিয়েছে। যারা এ ঘটনাগুলির বলি তারা বিদ্রোহ করছে না ঠিকই, কিন্তু মনে মনে মেনে নিচ্ছে না এই গর্ব থুরি অহঙ্কারের দম্ভ। ভিতরে ভিতরে এক ইর্ষার আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছে দিন রাত। এই ইর্ষাই শেষমেশ পরিনত হয় তীব্র প্রতিশোধস্পৃহায়, আর তা লালিতপালিত হয় যুগযুগান্ত ধরে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহন করে যায় সেই প্রতিশোধের বীজ। আমাদের চাওয়া বা না চাওয়ার ব্যতিরেকে এই ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিঃশব্দে বপন করে যাচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কের ভিতরে গর্বের ছলনায় অহঙ্কার আর ইর্ষার বীজ। আমাদের সামনে হাজির করে একটিই সম্ভাবনা, হয় তুমি ধনী হও অথবা মুছে যাও। কিন্তু কেই বা আর মুছে যেতে চায়। অতএব ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় আমরা সবাই হাজির। লড়ে যাচ্ছি একে অপরের সঙ্গে। এই লড়াই আসলে এক প্রতিযোগিতা যা একদিকে দাড় করাচ্ছে একদল অহঙ্কারী মানুষকে, যারা পৃথিবীর যা কিছু শ্রেষ্ট, যা কিছু সুন্দর তার দখল নিচ্ছে, আর চারিপাশের হেরে যাওয়া অসংখ্য মানুষকে ডেকে আস্ফালন করে বলছে, দেখ, আমিই শ্রেষ্ঠ, তোমাদের থেকে উন্নত, আর তাই এ সব কিছুর ভোগ করব আমিই। আর অপর দিকে তৈরী হচ্ছে শূন্যতা, ইর্ষা, ক্লীবতা, এবং ভয়ঙ্কর প্রতিশোধস্পৃহা।
    প্রতিশোধস্পৃহা কিন্তু মনের সংগোপনে শুধু লালিতই হয় না, সে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, আর সুযোগ পেলেই প্রকাশিত হয়। ঘটিয়ে ফেলে এমন কিছু ঘটনা যা এক কথায় মর্মান্তিক। মুশকিল হল যে ঘটায় আর যার উপর ঘটে, উভয়ের কেউই জানতে পারে না এর আসল উৎস কোথায়। যারা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করে তারাও সময়ে সময়ে পাড় পায় না এর আঁচ থেকে। আর যারা অরক্ষিত তারাতো আরো বেশি করে জ্বলে পুড়ে মরে এই প্রতিশোধের আগুনে।
    ভাতৃঘাতী দাঙ্গা, মহিলাদের উপর অত্যাচার, বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে খুন করে তাদের সম্পত্তি হস্তগত করা, বা বাসের পাদানী থেকে নামার মুহূর্তে বাস ছেড়ে দেওয়া, যার ফলস্বরুপ পঙ্গু হয়ে গেছে বহু মানুষ, ইত্যাদি নানা ঘটনায় আসলে কাজ করে হয়তো এই প্রতিশোধস্পৃহা। সমস্ত মানবিক গুনকে দলিত মথিত করে, মানুষকে না-মানুষে পরিনত করাই আসলে এর একমাত্র ফলন। গর্ব (অহঙ্কার) এবং ইর্ষার পৃথিবীতে এ এক উচ্চফলনসীল ফসল। এর চাষ থেকে বিরত হওয়া খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন নিজের মনের মধ্য আরও গভীর অনুসন্ধান। প্রয়োজন সাহিত্য, সঙ্গীতের চর্চা এবং তাকে এমন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা যাতে মানুষ সুন্দরকে উপলব্ধি করতে পারে।
    আমাদের এক ছোট্ট আলোচনার পরিসরে আমরা নিজেরাই অবাক হয়ে যাই যখন দেখি, কি পরিমান প্রতিশোধস্পৃহা বহন করে নিয়ে চলেছি আমরা সবাই, যার প্রকাশ ঘটে তীব্র অসহিষ্ণুতার মধ্য দিয়ে। সমস্ত যুক্তি তক্ক, জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য সবই অমুলক হয়ে যাবে, যদি না আমরা মননে এবং অভ্যাসে নিজেদের বিযুক্ত করতে না পারি, এই গর্ব(অহঙ্কার) এবং ইর্ষার পরিচালন থেকে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন