এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • নূতনদের জন্যে

    Ritwik Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৭ নভেম্বর ২০১৬ | ২২০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ritwik Roy | ২৭ নভেম্বর ২০১৬ ১০:০৪723651
  • হে নূতন, আপনাদের জানাই, আপনাদের বিবেচনায়, প্রাগৈতিহাসিক জীবটির আন্তরিক উষ্ণতা ও সাদর অভ্যর্থনা যে আপনারা এসে গেছেন মঞ্চতে—প্রাগৈতিহাসিকদের বিদায়ের পালা অতএব, আপনারা অগ্রগামী হো্ন, মঞ্চ সুন্দর হোক – এলিয়ট সাহেবের সেই আর্তরব, সেই হাহাকার – “আমার পিতার চেয়ে কোনো অংশে উন্নত নই আমি” – মুছে দিয়ে আপনারা রচনা করুন মঞ্চটিকে – ভেবে দেখুন নতুন করে করবেন রচনা অথবা শুরু করবেন সেই অবস্থা থেকে যে অবস্থায় রেখে বিদায় নিয়েছেন প্রাগৈতিহাসিকেরা, বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন অথবা আপনাদের নবতর উল্লাসে! শুনতে পাচ্ছেন সময়ের ঘন্টাধ্বনি? পড়তে আগ্রহী হবেন চরণ কয়খানি –
    বর্তমানের উল্লাস চীৎকারে বিহ্বল
    শিশুদের দাল,
    হৃদয়ের অন্তস্থলে চূড়ান্ত বেদনা
    নিয়ে বো্বা প্রবীণ প্রবীণা।
    তবুও “আমরা (আপনারা) নতুন যৌবনেরই দূত / আমরা (আপনারা) চঞ্চল, আমরা (আপনারা) অদ্ভূত...”
    অর্থাৎ চঞ্চলতা বনাম উল্লাস। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অতএব। যে এমত কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা ঐ প্রাগৈতিহাসিকদের – একথা বলাই বাহুল্য। নূতন, আপনারা তন্নিষ্ঠ উল্লাসে, উল্লাস প্রকাশে। আপনারা সময়ের রচয়িতা, থাকুন আপনারা আপনাদের রচনায় অবিচল –মগ্নতা, হোক সে বিলো্প এ মরুবাসে।
    হে নূতন, এ প্রাগৈতিহাসিকের কথাগুলো্কে নিক্ষেপ করুন কৃ্ষ্ণগহ্বরে অতঃপর। তবু ত’ আর্তের আর্তরব থাকেই – থাকেই মৃত্যুপথযাত্রীর মৃত্যুযণ্ত্রণা – যেমত যদিও দহনরতা সতীর দহনজ্বালা সমবেত সুধীজনের উল্লাসে থাকত অশ্রুত, দহনজ্বালা থাকত না কি? সেই মৃত্যুচিতায় দহনরতা সেই রমণী কি জানান দিতেন না তাঁর যণ্ত্রণা তীব্র চীৎকারে? ধরেই নিন এ এক আর্ত চীৎকার তীব্র – অশ্রুত অথচ। এরকমই সাড়ম্বর বাহ্যতায় হারিয়ে যাওয়া, হারিয়ে দেওয়া অথবা, কোন এক গলা-চিরে-ফেলা আর্ত চিৎকার মনে করুন না কেন কোন এক দিগভ্রান্ত, দিশাহীনও বা প্রাগৈতিহাসিকের। -- হে নূতন...
    সময় হয়েছে বন্ধ্যা,
    দেখি তাই ক্লীব সন্নিবেশ
    মগ্নতা মাথা কুটে মরে
    দুয়ারে দুয়ারে।
    আড়ম্বরে উপস্থিত
    কতগুলি কীট
    টক্ টক্ টকাটক্
    উদ্যত নিঃশব্দ হত্যায়
    মগ্নতারে।
    সময় হয়েছে বন্ধ্যা,
    নামে তাই চিন্তার সন্ধ্যা
    নিশির শয়ানে বিলীন
    অতঃপরে।
    যে সময়ের বন্ধ্যাত্বে দায়ে দায়ী নন আপনারা – এ অভ্রান্ত। উর্বরও মস্তিষ্কে। বুধ্যঙ্কে দৃপ্ত আপনারা যথেষ্ট। তবু বন্ধ্যা সময়। সামাজিক জালে বদ্ধ সময় – কুশীলব আপনারা – আপনারা নূতন – যারা যৌবনের দূত – অচঞ্চল চঞ্চলতায় – বন্ধ্যা সময় অতএব। নোঙর ফেলা আর নোঙর তোলাতে ব্যস্ত আপনারা বা বরং বলা ভাল ব্যতিব্যস্ত – সন্তরণের সময় কই? তাতে চাই নিবেশ, চিন্তিত নিবেশ – নেই নূতন বন্ধু, নেই। সময় বন্ধ্যা অতএব। আপনারা শিকার কোন্ এক চতুর শিকারীর – যে শিকারি মাকড়সার মত জালে আবদ্ধ আপনাদের মতো পতঙ্গদের লোলুপ দৃষ্টিতে দেখে, ধীরে ধীরে এগোয় তার শিকারের দিকে লেহন, পেষণের উদ্দেশ্যে – আপনারা নিরূপায়, অসহায় ক্রীড়নক।সময় বন্ধ্যা অতএব।
    হারিয়ে-যাওয়া চীৎকার এ প্রাগৈতিহাসিকের, মশায়েরা আপনারা কিছু মনে করবেন না, মনে রাখবেন না – আপনাদের দামামা চলুক বেজে, এ চীৎকার মিলিয়ে যাক, মিলিয়ে যাক কাড়ানাকাড়ার ব্যঞ্জনধ্বনিতে। মাঝে মাঝে আপনারা বিরক্ত হোন, এ প্রাগৈতিহাসিকের অগোচর নয় তা, আহা সে ত’ বিরক্তই করতে চায় – সে যে শরবিদ্ধ, যন্ত্রণার্ত, ভয়ার্ত, -- সে যে মৃত্যুপথযাত্রী – সে ত’ প্রাণপণ চেষ্টা করবেই আপনাদের নজর কাড়তে যে সে মৃত্যুপথযাত্রী – আপনারা থাকুন অচঞ্চল চঞ্চলতায় – দেখুন, উপভোগ করুন মঞ্চে রচিত স্বর্গ, নরক অথবা! – যে মঞ্চতে অসংজ্ঞাত শব্দ “সম্ভ্রম” – বা আপনাদের নবতর সংজ্ঞায়নে যে শব্দ সম্ভোগ সমীপ। আপনারা শুনুন, অথবা না, হে নূতন, -- আপনারা অচঞ্চল দূরভাষে চঞ্চল, আপনারা অচঞ্চল সামাজিক জালে চঞ্চল, আপনারা অচঞ্চল মুখপুস্তকে চঞ্চল! মূল্যবান সময়ের কিমত মূল্যবান ব্যবহারে ব্রতী আপনারা ! কাড়ানাকাড়া ! শুনবেন না মশায়েরা, শুনবেন না – কর্ণগহ্বরে তুলো প্রবেশ করান, পাছে সে শব্দ, সে যন্ত্রণারব স্পর্শ করে স্নায়ু –
    ইতিহাস অস্বীকার?
    হুঁশিয়ার
    ভাইসব হুঁশিয়ার।
    সময় স্বর্ণসন্ধানে জ্ঞানীগুণীজন
    যে যে পথে করেছেন ভ্রমণ
    বা করেছেন আক্ষেপ
    এই বলে “জীবন যদি হত দীর্ঘতর”
    তোমাদের ব্যবহার তাদের অস্বীকার –
    রেখ মনে।
    সময় করে না ক্ষমা
    না জেনে যত তমা
    আনো পৃথিবীতে।
    প্রয়োজনে উদ্ধত তুমি
    সময়ে গম্ভীর
    জ্ঞানী হাসেন, হাসেন গুনী
    তবু তুমি স্থির
    কালক্ষেপে।
    আহা পতঙ্গ তুমি
    রেখ না মনেতে কিছু
    কোন স্থায়ী দাগ
    চিন্তাহীন কালস্রোতে
    ঘুরে নাও পথে পথে,
    সময়ের পিঠে বসে
    কালনেমির লঙ্কা কর ভাগ।
    হে নূতন, আপনারা জানেন কি কলির তপস্যা, সমস্যা কথান্তরে – যার কাজ যেটা, সেটা না করে অন্য কাজ করা, অন্যের কাজ করা। যেমত এ প্রাগৈতিহাসিক কলমচি – যার কাজ এখন মৃত্যুবরণ করা, তা না করে সে কলম নিয়ে চীৎকার করে বাঁচতে চায় আপনাদের বমনেচ্ছার কারণ হয়ে। আবার সাহস দেখুন তার – সে আপনাদের শোনায় হুঁশিয়ারি – স্পর্ধা কত!অফিসে বসে কলম পেশা যাঁর পেশা তিনি তাঁর-সঙ্গে-তুলনা-হয়-না এমন গুনীজনকে জ্ঞান বিতরণ করেন! যাঁর কাজ যজন, যজনা না করে করেন তিনি আন্দোলন! অধ্যয়ন যাঁর কাজ, তাঁকে দেখা যায় মায়াবন বিহারে! অধ্যাপকদের দেখা যায় মঞ্চে অভিনয় করতে! আপনাদের তর্ক আছে – যে রাধেঁ, সে চুলও বাঁধে। এবার এ প্রাগৈতিহাসিক মহা ফ্যাসাদে – কেননা নিরেট মস্তিষ্ক তার, গোময়পূর্ণ হয়ত’ বা – আপনাদের উর্বরতা সে পাবে কোথায় – দীর্ঘ দীর্ঘ দিন ধ’রে এ পৃথিবীর আলো-বাতাস হেন সম্পদ ধ্বংস করে বেঁচে থেকে এখনও সে বেচেঁ থাকতে চায় আরও ধ্বংসকল্পে। সে তার অস্বস্তিকে আপনাদের শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চায় অত্যন্ত নির্লজ্জতায়...
    হিসেব নিকেশ শেষ হলে পর
    চায়ের কাপে তুফান তুলে
    ছাত্র করে রাজ্যজয়!
    রাজামশাই বসে ঠান্ডাঘরে
    গণিত শেখেন সাদা কাগজে
    তিন গুণ তিন নয়!
    অধ্যাপকরা ঘন্টা গোনেন
    মঞ্চে কখন আলো নিক্ষেপে
    পর্দা যাবে উঠে!
    নতুনরা সব বাঁক কাঁধে নিয়ে
    করবে নাটক ফেরিওয়ালা হয়ে
    সকল বাঁধন টুটে।

    দিন শেষ হয়
    নিশি আসে নেমে
    সময় হয়েছে বন্ধ্যা—
    রাগ কর কেন ভাই
    সত্যিই ত’ কাজ নাই
    সকাল থেকে সন্ধ্যা—
    সময় হয়েছে বন্ধ্যা।
    বেচারা প্রাগৈতিহাসিকের ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন আপনারা, আপনারা মহানুভব। তার গোময় পুষ্ট ইঙ্গিতগুলো আপনাদের চারিত্রিক দৃঢ়তায় উপেক্ষা করবেন এই বলে যে হোয়াট দ্য ওল্ড হ্যাগার্ড ইজ মার্মারিং? মাই ফুট। প্রাগৈতিহাসিকের গলা-চীরে-যাওয়া চীৎকারকে মার্মার হিসেবেই ভাববেন। এতে অশান্তি কমবে অন্ততঃ। এক কাজ করুন না মশায়েরা, উল্লাসে প্রশান্ত আপনারা, উল্লাসকে বেঁধে নিন না উচ্চগ্রামে — অশান্ত-গলা-চীরে-যাওয়া চীৎকারকে মার্মারিং মনে হবে না—বেশ থাকবেন।
    হে নূতন, তাহলেও কথাটা থেকেই যাবে, গোঙানি হলেও থেকে যাবে। গোঙানির এক অদ্ভূত প্রান আছে, জানেন? – এ হে আবার জ্ঞান দিতে বসল সেই প্রাগৈতিহাসিক। না, মশায়েরা, না – জ্ঞান দেওয়া উদ্দেশ্য নয় তার – যে তা আপনাদের যথেষ্টই আছে, উল্লাসই তার প্রমাণ। মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘবেচ্ছায় সে চাইছে তার অনুভূতিটুকুকে তরঙ্গে মিলিয়ে দিতে।মিলছে না, মিলছে না,-- সে বুঝছে যে মিলছে না তরঙ্গে – তবু চেষ্টার তার কসুর নেই। বড় বেয়াড়া। ত’ মশায়েরা করুন উপেক্ষা তাকে। আপনারা ত’ বীর্যবান – পাদাঘাত করতে রুচিতে বাধবে আপনাদের কেননা সকলে বলবে “ছিঃ”। তাতে আপনাদের শ্লাঘায় পীড়ার কারণ হবে। সে প্রাগৈতিহাসিকের এখানেই ভরসা – দূ্র্বলতাই বল অর্থাৎ। গোঙানি হলেও তার তিক্ততার স্বাদ যে নিতেই হবে আপনাদের যতক্ষণ না পর্যন্ত না সে প্রাগৈতিহাসিকের মৃত্যু হচ্ছে । ত’ শুনুন মশায়েরা, শুনুন উল্লাস উপভোগের মধ্যেও, শুনুন গোঙয়ানির আওয়াজটুকূ – যে সময়ের বন্ধ্যাত্বে আপনারা দায়ী নন বটে, তার বন্ধ্যাত্বমোচনে আপনাদের আগ্রহ কই? গোঙানির মধ্যে চিঁ চিঁ শব্দে আসছে এই আওয়াজও, কি আশ্চর্য – ছাত্রদের অন্য কাজই বা অকাজই তপস্যা, নৈব নৈব অধ্যয়নং। সেটি উপলক্ষ্যমাত্র। অধ্যয়ন মুখোশের আড়ালে আলু-পেঁয়াজ বিক্রী, নাটক বিক্রী, বাহ্য আত্মম্ভরিতা, উদ্দেস্যহীন ভাবনাবিলাস, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিক্ষিপ্ততা, এখনও-উপার্জনক্ষম-নন যেহেতু, পিতা-মাতা-পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় বহুমূল্য মোবাইল ফোন, ট্যাব, সিগারেট ইত্যাদির অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার আপনাদের বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অথবা কিন্তু ছিত্র-লক্ষ্যহীন অথচ। গোঙানি, গোঙানি মশায়েরা – কাড়ানাকাড়ার প্রবল তোড়ে করে দিন বিলীন ---
    হয়েছে বন্ধ্যা সময় ----
    তোমরা করবে জয়
    জীর্ণ বটের ক্ষীণ সব কথা;
    কোরো না ধ্যান,
    না অধ্যয়ন
    কালের বিবিধ বারতা।
    মাত উল্লাসে
    মদ পেয়ালায়
    করো দাপাদাপি
    ভূতের নাচ
    জানো কি উজান
    কাকে কাকে বলে ?
    চুল আলুথালু যে
    যত্নের ছাঁচ!
    তুমি বন্দী তোমারই ঘরে
    আমি সেই দেখে মরি যে ডরে –
    তোমার অজানা তুমি যে বন্দী
    সঙ্গী তোমার ভৃঙ্গী নন্দী –
    লাফাও যত ইচ্ছে যেমন
    মন্ত্রের সাধন বা শরীর পাতন।
    গড়ো বনিয়াদ তাসের ঘরের,
    যে ঘর তোমার ভাবী সময়ের
    থাকবে বিলাপ হয়ে।
    ভাইসব করো রব
    রাতি পোহাইল
    কাননে দানব ঐ
    জাগিল জাগিল।
    মশায়েরা, আসুক না কাননে দানব, আপনারা স্পর্ধিত বীর্যে, বলীয়ান যৌবনে, নিশ্চিন্ত আপনারা অতএব। সহবত বিরোধী হলেও হোক! দস্তুর পুস্তকলগ্ন হওয়ার বদলে হস্তলগ্ন হওয়া, কন্ঠলগ্ন হওয়া অথাবা, কিঞ্চিৎ অধিক স্পর্ধায় ওষ্ঠলগ্ন হওয়া অথবা।এ প্রাগৈতিহাসিক লজ্জিত হবে বা ভ্রূকুঞ্চিত – আপনারা ভাববেন ঈর্ষান্বিত, ঈর্ষায় প্রজ্জ্বলিত, জ্বলনে ভস্মীভুত হতে হতেও হয় না যে, মনোলগ করবেন, চীৎকার করবেন অথবা এই বলে যে “ড্যাম ইট”। কিন্তু কেন মশায়েরা পারেন না করতে উপেক্ষা সেই মৃতপ্রায়, প্রাণ-এখনও-আছে-অথচ প্রাগৈতিহাসিক জীবটিকে? উত্তর জানেন হয়তবা, জানেননা জানান দিতে – দ্বিধা, দ্বন্দ, সন্দেহ, ইত্যাদিতে অচঞ্চল চঞ্চল লক্ষ্যে – উত্তাল, উদ্দাম। সাহসী আপনারা, ম্রিয়মাণ প্রাগৈতিহাসিকের রেশন-শেষ-হয়ে-যাওয়া-সত্ত্বেও-বেঁচে-থাকা অসহ্য আপনাদের অথচ। সাহসে দম নিয়ে পড়ুন চরণ কয়খানিঃ
    “ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
    আমরা ঘুচাব তিমির রাত
    আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
    বাধার বিন্ধ্যাচল”
    এই “আমরা”দের দল আপনারা? সময় কই আপনাদের? হে নূতন, মত্ত আপনারা সত্যকে আঘাতে আঘাতে জীর্ণ করতে, রাঙা প্রভাতে মসীলেপনে, তিমির রাতকে তিমিরতর করতে। আপনারা নিজেদের শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত যে শৃঙ্খলার নাম উচ্ছৃঙ্খলা। আপনারা নিজেদেরকে স্বাধীন করবার ব্রতে ব্রতী যে স্বাধীনতার নাম উচ্ছৃঙ্খলা। মশায়েরা, আপনারা জানেনই না যে বন্দী আপনারা – কৃ্ত্রিম নৈকট্যের অধীন, তৈ্রী-করা-নিশি-আড্ডার অধীন, পপ-জ্যাজ-বাগাড়ম্বরের অধীন, সামাজিক জালের অধীন। শিষ্টাচার আপনাদের সংজ্ঞা্য সোশাল ট্যাবু, কথোপকথনের বাক্যান্তে বলতে ভোলেননা – থ্যাঙ্কস্, টাটা, ইত্যাদি। বিষয় আপনাদের কাছে মেকী, ঔদ্ধত্য যে স্বতোৎসারণ।
    ‘শৃঙ্খলা’ শৃঙ্খলা নয়, ‘শৃঙ্খলা’ শৃঙ্খল?
    বিচার কেমনতর? উদ্ধত স্থূল ভূল
    করে যাও তুমি – না পাওয়া রঙীন স্বাদ
    আহ্লাদে নিতে চাও। বোঝ কি খাদ
    গভীর কত? তেতো হোক, হোক মিষ্টি,
    মদির বাতাসে ঝাপসা হোক দৃষ্টি
    তবু তা নিতেই হবে? হে আমার
    অপবিত্র আবেগ, শঙ্কি্ত আত্মার
    কম্পনে কেন যে চীৎকার কর?
    শঙ্কা ? ... বর্জন কর, বর্জন কর।
    বয়সের প্রজ্ঞাকে না করে পাথেয়
    নষ্টের জাল বুনে, পুঁজিকে ক’রে হেয়
    চেখে দেখ মদির নিশির সাজ।
    আমি বসে ভাবি, স্বপ্ন বিপন্ন আজ।
    এ প্রাগৈতিহাসিক লোকটি রসিকও বটে। আপনাদের দেখিয়ে দেখিয়ে সে আবার লেখালেখিও করে। আপনারা কি বিচলিত তাতে? কেন মশায়েরা, আপনারা বিচলিত কেন? আপনারাও ত’ লেখেন কবিতা – ভালই ত’ লেখেন – আপনারা হস্তী এক এক – অনেক অনেক কঠিন-কঠিন-পাশাপাশি-বসালে-মানে-না-হওয়া-শব্দ কাছাকাছি এনে মানে করে দেন – দ্বান্দিক, বৈপ্লবিক, রাজনৈ্তিক, অরাজনৈ্তিক অথবা, পক্ষহীন, দূরন্ত, নৈবর্ক্তিক কখনও বা, বাঙ্ময়, বেপরোয়া। এতে লজ্জিত সেই প্রাগৈতিহাসিক জীবটি – তার কলমের নির্যাস ঠিক এমনটি নয় -- যেমনটি তিক্ষ্ণধী আপনারা হামেশাই চর্চ্চাতে রাখেন। ত’ আপনারা, সুচিন্তিত গদ্য লেখেন কই? অথবা দীর্ঘ কাব্য ? হে নূতন, গর্ভযাতনা অনুভবে এসেছে কখনও? যে গর্ভ, যন্ত্রণা হলেও সৃষ্টিশীল? যে গর্ভ প্রসবে দীর্ঘ কাব্য, প্রবন্ধ অথবা – চিন্তিত প্রয়াস অত্নতঃ ।
    যতনে যাতনা নাও ভরে
    সুঠাম শরীরে
    যাতনা শুক্রের মতো
    চিন্তাতে ক’রে ক্ষত
    করুক গর্ভ সঞ্চা্র—
    যত যত ক্লীবতা,
    দীনতা আর হীনতা
    করুক সঙ্ঘার।
    বুক ভরে শ্বাস নাও,
    স্থির হও, ধীর হও,
    হও ধৈ্র্য্যশীল---
    বীর্য নাও, মগ্ন হও
    হে নূতন,
    হও চঞ্চল, হও অদ্ভূত...... যে
    তোমরা নতুন যৌবনেরই দূত।
    মৃত্যুপথযাত্রী এ প্রাগৈতিহাসিকের তোমাদের আত্মার কাছে নিবেদিত আর্তি --- leave a trace of your existence before you become extinct.
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন