এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বিষাক্ত সব খাবার দাবার ......

    Dilip Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ২৯ মে ২০১৬ | ১৯২২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Dilip Ghosh | ২৯ মে ২০১৬ ১৩:১২710282
  • এখন শোনা যাচ্ছে পাউঁরুটি কর্কট রোগের উৎস। কিছুদিন আগে "আবিষ্কৃত" হয়েছিল ম্যাগি অতি বিষাক্ত বস্তু! এইসব "বৈজ্ঞানিক" তথ্যের আবির্ভাব তিরোভাব দেখতে দেখতে আবার একটা "উপ"-কথা মনে পড়ল।

    এ ঘটনাটাও গত শতকের মধ্য ভাগ পার করা কোনো একটা বছরের। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম অতিবৃহৎ জেলার কাহিনী। সেই জেলা উপশাসক এবং উপসমাহর্তায় পরিপূর্ণ। বস্তুত সবসময়েই অনুমোদিত সংখ্যার থেকে একটু বেশীই থাকতেন। যাঁদের হৃদকমলে ধুম লেগেছে, যাঁরা সঠিক সুতো ধরে টানতে জানেন, যাঁদের সঠিক মহলে সঠিক আত্মীয় বন্ধু আছেন ইত্যাদি ইত্যাদি তাঁরা এখানে আসতে পারতেন। শক্ত পরীক্ষা উৎরে আসা মেধাবী ছাত্র এঁরা, অতএব অনেকেই সফল হতেন।

    সেই জেলার অফিসারদর সংখ্যা বেশী হবার ফলে যেমন আড়ালে থেকে ফাঁকি মারার সুযোগ থাকত, তেমনি আবার উচ্চাভিলাষীদের ক্ষেত্রে জেলাশাসকের কাছে আসাও একটা কঠিন প্রতিযোগীতার ব্যাপার ছিল।

    জেলাশাসকের নৈকট্য লাভের বেশ কয়েকটি শর্ট কাট আবিষ্কার করেছিলেন উৎসাহী জনেরা। কথিত ছিল যে আবিষ্কৃত ধাপের মধ্যে সবচেয়ে দুরূহ এবং কার্যকর পথ ছিল "ব", সাহেবের খাস বেয়ারা। জেলা শাসক মহাশয়ের আবাস এবং খাসকামরা একই ভবনে অবস্থিত হওয়ার দরুন এই খাস বেয়ারার আধিপত্যের কোনো পাবলিক প্রাইভেট সীমারেখা থাকতো না। শুধু সাহেব নন, সমগ্র পরিবারের ওপরই ব এর প্রভাব বিপুল। আর কে না জানে মিসেস জেনারেল রুলস দ্য আর্মি। অতএব ব-এর কানের নাগাল পেলেই.......এঁর সুপারিশ থাকলেই........কৃপাদৃষ্টি অবধারিত।

    "ব"- এর কান, কোনো কোনো উদ্যোগী আবিষ্কার করেছিলেন, ব -এর পকেটের কাছাকাছি। স্বাভাবিক ভাবেই দোল-দূর্গোৎসবে-ঈদে , মাসে আট টাকার ডিএ র বাজারেও, ব-কে পুরস্কৃত করার ব্যাপারে উদারহস্ত হবার চেষ্টা করতেন উদ্যোগীরা। ব বেইমানী করতেন না, দাতারা সাফল্য পেতেন। ব ক্রমশই একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠলেন, পার্বণীর হারও চড়তে শুরু করল।

    এহেন সময় এক নতুন আধিকারিক যোগ দিলেন জেলায়। যুগপৎ নীতিবাগীশ ও উচ্চাভিলাষী। ব-কে তুষ্ট করার ব্যাপারে এঁর বিশেষ উৎসাহ দেখা গেল না। ইনি নিজ যোগ্যতায় দৃষ্টি আকর্ষণে বিশ্বাসী। এসেই চেষ্টা শুরু করলেন। ব আকারে, ইঙ্গিতে, লোক মারফৎ, নানা পন্থায় প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ম গুলি এঁর ক্ষেত্রে কার্যকর করার চেষ্টা করে ফেল করলেন। অন্যদিকে অফিসারটির কাজকর্মে বড় সাহেবও কেমন যেন পটে গেছেন, ব এর ইন্টারমিডিয়েশন ছাড়াই। এমনটি হতে থাকলে বাজার দ্রুত খারাপ হবে। পুজোর কিছুদিন আগে একটি সপ্তাহান্তিক মিটিং-এর সময়ে ব ভাল করে লক্ষ্য করে রাখলেন এই নতুন অফিসারটি কোন চেয়ারে বসেছেন।

    পরের দিন রবিবার। জেলা শাসক বকেয়া কাজ কর্ম নিরিবিলিতে সেরে ফেলার জন্য চেম্বারে ঢুকলেন প্রাতরাশ সেরে। তার দুই চঞ্চল সন্তানও ছুটির দিনে হানা দেয় অফিস ঘরে। সেই উৎপাত শুরু হবার আগেই ফাইল পত্তর শেষ করতে হবে। জেলা শাসক মশায়ের পেছন পেছন একটা নতুন ঝাড়ন হাতে ঢুকলেন ব। প্রবল ভাবে নতুন অফিসার মশাই যে চেয়ারে বসেছিলেন সেটির ঝাড়ামোছা করতে শুরু করলেন। মুখ দিয়ে অনর্গল স্বগতোক্তি বেরোচ্ছে। "কি খারাপ ব্যাপার! খোকাবাবুরা এই খানে খেলা করে! যদি কিছু হয়ে যায়!" ইত্যাদি। কিছুতেই ব থামছেন না দেখে জেলাশাসক মশাইও কৌতুহলী হলেন, "কী হয়েছে?" ব বললেন, "দেখুন না স্যার, ওই যে নতুন সাহেব এসেছেন। দেখে তো বোঝার উপায় নেই, কিন্তু স্বভাব চরিত্তির ভাল নয় স্যার! অজায়গা-কুজায়গায় যান। সেই থেকেই কী সব খারাপ ছোঁয়াচে অসুখও বাঁধিয়ে বসে আছেন। এখানে খোকাবাবুরা খেলে, যদি কিছু হয়ে যায়!" জেলা শাসকের প্রবল আস্থা ব- এর ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কে। পরের দিন থেকেই নতুন অফিসারটি জেলা শাসকের বিরাগভাজন হতে শুরু করলেন হঠাৎ। অকারণেই বকুনি জুটতে শুরু করল। আরো আশ্চর্য, সুভদ্র জেলাশাসক মশাই সবাইকে বসতে বললেও ওঁকে বসতে বলেন না কখনো। বুদ্ধিমান অফিসার কিছুদিন চোখকান খুলে চলে ব্যাপার বুঝে পুজোর মুখে মুক্তহস্তে খুশি করলেন ব-কে।

    বিজয়ার সকালে আবার ঝাড়পোছের অছিলাতেই জেলাশাসকের চেম্বারে ব এর প্রবেশ এবং স্বগতোক্তি। " আহা কি ভালো মানুষটা, বদলোকে কুকথা রটায়। হবে না! ঘুষ খান না, আইনের বাইরে কাউকে খাতির করেন না," ইত্যাদি। জেলাশাসক বললেন, "বিড়বিড় করে কার কথা বলছো?" ব বললেন, "ওই আমাদের নতুন সাহেবটি স্যার। কি ভাল মানুষ! বদলোকে এমন কুকথা রটালো, যে আমার মতো ঝানু লোকও ঘোল খেয়ে গেল!"

    নতুন সাহেব বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে এসে জেলাশাসকের গৃহের বৈঠকখানায় ডাক পেয়েছিলেন। গৃহকর্ত্রীর নিজের হাতে সাজানো মিষ্টিও জুটেছিল। ব কে ভাইফোঁটা উপলক্ষে পুরস্কৃত করার রীতি নাকি সেই জেলায় এই নতুন সাহেবই চালু করেছিলেন।

    এ ঘটনা আমি স্বচক্ষে দেখিনি, অগ্রজদের কাছে স্বকর্ণে শুনেছিলাম চাকরীর আদি যুগে

    ম্যাগীর দুর্দশা অবশ্য নিজের চোখেই দেখলাম। ম্যাগীওয়ালারা নির্ঘাত পতঞ্জলি মুনির পার্বণী চোকাতে ভুলেছিলেন। তাই ওঁদের যেই 'সারা' হল পতঞ্জলি দেশী নুডল তখনি শুরু করল।

    পাঁউরুটিওলারা কার পার্বণী ভুলেছেন কে জানে?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন