এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • যেসব শিক্ষকদের ভুলি নি

    bip
    অন্যান্য | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | ৭৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ | 79.25.***.*** | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২৩:৫০684972
  • আজ শিক্ষক দিবস। ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে শিক্ষকদের ভূমিকাকে স্বরণ করার দিন।

    আমার বাবা মা দুজনেই হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন। দাদুওশিক্ষক। সেই হিসাবে, আমার ও শিক্ষক হওয়ার কথা। সেই দিকেই এগোচ্ছিলাম। কিন্ত হঠাৎ করে একাডেমিক্সে মোহভঙ্গ হওয়ায়, লাইফে সব ঘেঁটে যায়। যাইহোক এই লেখা শুধুই ঋণ স্বীকার করার চেষ্টা মাত্র।

    ক্লাস টু থেকে সিক্স পর্যন্ত আমার গৃহশিক্ষক ছিলেন অশ্বিন বাবু। উনি প্রাইমারী স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক -কিন্ত উনার সব থেকে বড় পরিচয় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামী। একঘন্টা পড়াতেন। কখনোই প্রথাগত পাঠ না-উনার মুখে শুনতাম স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবীদের গল্প। উনাদের ছেলেবেলা, স্কুল বেলার গল্প। কতশত বীরেদের গল্প। কোনদিন স্কুলের সিলেবাসে কি আছে পড়ান নি। উনি বলতেন তোমার জীবনে শিক্ষকের দরকার নেই-দরকার অনুপ্রেরণার। এইভাবেই অজান্তে ইতিহাসের প্রতি এক নিবিড় ভালোবাসা উনি গড়ে দিয়েছিলেন।

    আমি মাধ্যমিকে ছিলাম করিমপুর জগন্নাথ হাইস্কুলে। আমাদের সময়ে গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতার মান বেশ উঁচুই ছিল। গ্রামের স্কুলে সব থেকে বড় সুবিধা এই যে, ওখানে জীবনে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এসবের চাপ ছিল না। সহপাঠিদের অধিকাংশের বাবারা ছিল করিমপুর শহরের ব্যবসায়ী। ছোট বড় মাঝারী। ফলে খেলার সময় ছিল অফুরন্ত- পড়াশোনা ভাল লাগলে কর। না করলে বাবার দোকানে বসবে। এই ছিল বন্ধুদের এটিচুড! এই স্কুলের যেসব শিক্ষকের কথা না বলেই না-তাদের মধ্যে বাংলার শিক্ষক অরুন চ্যাটার্জি, ইতিহাসের পার্থ রুজ এবং বিজ্ঞানের শ্যামল বাবু। অরুনবাবু কোনদিন সিলেবাসে কি আছে দেখতেন ও না। উনি ক্লাস নিতে ঢুকলেই স্যার আজ শনিবারে চিঠি নিয়ে হয়ে যাক এই হত আমাদের আবদার। বা রবীন্দ্রনাথ কেন শেষের কবিতা লিখতে বসলেন। সাহিত্য যে নিছক বইএর বাঁধন না, অপার সম্ভাবনা, তা উনার কাছেই শেখা। পার্থ রুজ যখন যোগ দেন আমরা ক্লাস নাইনে পড়ি। ক্লাস নাইনে তখন প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পড়তে হত-উনি বিশ্বভারতীতে পি এই চ ডি করছিলেন। সেই প্রথম আমরা বুঝি যে ইতিহাস যে গল্প বলে তার পেছনে কত নথি, কত গবেষনা থাকে। উনি উনার ভান্ডার উজার করে পড়াতেন। শ্যামল বাবুর স্পেশালিটি অঙ্ক ক্লাসে। উনি ভীষন জটিল অঙ্ককেও সহজ ভাবে দেখতেন। উনার কাছ থেকে লাইফে প্রথম শিক্ষা পাই যে কোন অঙ্ক জটিল লাগছে মানে, আসলেই অঙ্কটাই ঠিক ঠাক ভাবে বুঝি নি। আগে বোঝ, তারপরে সমাধানে হাত দেবে। এর ভিত্তিটা উনিই গড়ে দিয়েছিলেন।

    নরেন্দ্রপুরে দুবছরের উচ্চমাধ্যমিক আরেকটা অভিজ্ঞতা। মাধ্যমিকে প্রথম হওয়া ছেলেটি বাদ দিয়ে বাকী প্রায় সব র‍্যাঙ্কাররাই একসাথে ভর্তি হল। গ্রামের স্কুলে অত চাপ ছিল না। কিন্ত এন ডিপিতে সবাই আই আই টি জয়েন্টের জন্য দৌড়াচ্ছে। নরেন্দ্রপুরে আমাদের সময়ে কতগুলো দুর্দান্ত শিক্ষক ছিলেন। প্রথমেই ইনঅরগানিক কেমিস্ট্রিতে আরোগ্য সাহার [ এভিএস] কথা আসবে। উনি আবার কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি এস সি পান। এটমিক স্টাকচার পড়াতেন। সম্পূর্ন বই ছাড়া- ইতিহাস থেকে একেকটা এক্সপেরিমেন্ট কি করে এটমিক স্টাকচারের দিক খুলে দিল-পূরোটা একদম ম্যাজিক রিয়ালিজম। স্টাটে ছিলেন প্রবাদপ্রতিম পি গিরি। সংখ্যা যে কথা বলে, সেটা উনিই হাতে নাতে শিখিয়ে ছিলেন। ফিজিক্স ডিপার্টমেন্ট ছিল বেশ খাজা। নরেন্দ্রপুরে সেরা শিক্ষক ছাত্ররাই। আমরা এ ওর কাছ থেকে শিখতাম। শেখানোর চেষ্টা থেকেই নিজে সব থেকে ভাল শেখা যায়, এটাই নরেন্দ্রপুরে শেখা। পাশাপাশি সত্যাদা বা স্বামী সূপর্নানন্দের কথা না বললে এই লেখা অসম্পূর্ন থাকবে। উনি ব্রহ্মানন্দে নিজের রুমে রাত দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত ভারতীয় দর্শনের ক্লাস নিতেন। অপশনাল। মাত্র ছ সাত জনই থাকত। মাঝে মাঝে হত। হিন্দু দর্শনের প্রায় সবকিছুই উনার ওই ক্লাসগুলো থেকেই শেখা। এখন ত উনি গোলপার্কের অধিকর্তা। মাঝে সাঝে পেপারে উনার ছবি দেখি।

    আই আই টি খরগপুরের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে পাঁচ বছরে ভালো শিক্ষক হাতে গুনে ছিল চারটি। অধ্যাপক জিপি শাস্ত্রী এবং ডি বসু অসাধরন। যেমন মাপের মানুষ, তেমন মেধা। উনারা যেভাবে ছাত্রদের ইন্টেলেকচুয়ালি চ্যালেঞ্জ করতেন, সেটা আমাদের জীবনের সেরা ক্লাসরুম অভিজ্ঞতা। ভাল শিক্ষক ছাত্রদের ইন্টেলেকচুয়ালি চ্যালেঞ্জ করবেন-এটা ছাত্রদের ডেভেলেপমেন্টের জন্যই দরকার। এছাড়া এইচ এন আচার্য্যর কথা লিখব। উনি ইলেকট্রনিক্স এর পেপারগুলো নিতেন। উনার একটা শিক্ষা ভোলার না-যে প্রথমেই তালগাছের মতন ন্যারো ডোমেনে নিজেকে টেনো না। পৃথিবীতে অনেক কিছুর বেসিক শেখার আছে। যেকোন ফিল্ডে ভাল কাজ করতে গেলে সব সাবজেক্টের বেসিক গুলো শেখা অনেক বেশী কাজের।

    আই আই টিতে ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকম ডিপার্টমেন্টে পি এই চ ডির সময় দুজনের কথা না বলেই না। প্রথমজন এন বি সি বা এন বি চক্রবর্ত্তী। আমি যখন পি এই চ ডিতে ঢুকি উনার বয়স সত্তর। উনি আমার গাইডের গাইড। পি এই চ ডির সময় আমাকে প্রচুর পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়াল ইকোশেন সলভ করতে হত। উনাকে কোন কিছু প্রবলেম বল্লেই বলে দিতেন , ওই বেল সিস্টেম টেকনিক্যাল জার্নালে ওমুকের ১৯৩৪ সালের পেপারটা দেখ!! পুরো ফটোজেনিক মেমোরি। ভারতে ইলেকট্রনিক্স গবেষনার ইতিহাসে এন বি সি একজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব। উনার কাছে অনেক শিখেছি। আরেকজন প্রফেসর অজয় রায়। অজয়দা এখন শিবপুরে ভিসি। কিন্ত উনি ছাত্রদের সাথে নানান টাইপের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন। তাতে সিস্টেম থেকে পলিটিক্স সব কিছুই থাকত।

    নিউ জার্সিতে, জীবনের প্রথম চাকরীতে একজন অসাধরন লোককে মেন্টর এবং শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলাম। প্রফেসর এডেল সালে। অরিজিন্যালি ইজিপ্টের লোক। এম আই টির ইলেক্ট্রিক্যালের অধ্যাপক ছিলেন-আমাদের কোম্পানীটা ছিল উনার দ্বিতীয় স্টার্টাপ। উনি বলতেন আর এন্ডিতে ভুল হবেই, তাই বুক চিতিয়ে গর্ব করে ভুল স্বীকার করবে। নইলে পুরো ডেভেলেপমেন্টটাই মাখাবে। এডেল লোক হিসাবেও অসাধারন ছিলেন। জীবনে এত খ্যাতি, টাকা-কিন্ত সম্পূর্ন নিরাহঙ্কার। উনার শর্ট ফ্রেজ ছিল-ক্যান বি ডান-ইউ হ্যাভ টু উইশ ফর ইট!

    জীবনে শিক্ষক কে? শিক্ষক সেই, যে অনুপ্রেরণা যোগায় নতুন কিছু শেখার জন্য। সবার কাছ থেকে সব পরিস্থিতি থেকেই শিখে যেতে হয় এই জীবনে। শেখাটা এক চলমান প্রবাহ। কাজের মাসি থেকে প্রফেসার সালে-আমার সারাজীবনই মনে হয়েছে সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শেখার আছে।
  • potke | 116.216.***.*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১৩684973
  • রাম গোপাল চ্যাটার্জী কেমন পড়াতেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন