এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • টুক করে ক্যান্সার ধরা পরলে কী করবেন ?

    একক
    অন্যান্য | ০১ এপ্রিল ২০১৫ | ১৩৯৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Aniket Pathik | 24.139.***.*** | ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ১৩:০০674830
  • প্রবীণ বিজ্ঞানী প্রফেসর মঞ্জু রায়, কলকাতার কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সের বিজ্ঞানী ছিলেন, সারাজীবন কাজ করছেন ক্যান্সারের ওপর। এখন আছেন বসু বিজ্ঞান মন্দির (বোস ইন্স্টিটিউট) এর কাঁকুড়গাছি শাখায়। ওঁর ক্যান্সারের ওষুধ বাজারে আসতে চলেছে, যতদুর জানি এখন হিউম্যান ট্রায়াল পর্যায়ে আছে, ফলাফল খুবই আশাজনক। ওঁর গবেষণার বিষয়ে নেটে সব খবরই পাওয়া যাবে। কারুর দরকার হলে ওঁর সঙ্গে অবশ্যই যেন যোগাযোগ করতে পারেন সেই জন্য এখানে তথ্যটা দিয়ে রাখলাম। এমনকি চিকিত্সা শুরু হয়ে গেলেও ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে, কারণ উনি বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গেই কাজ করেন। বোস ইন্স্টিটিউটের ঠিকানা ও ফোন নম্বরে ওঁকে পাওয়া যাবে।
  • tania | 27.246.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৩674831
  • ২০০৯ এর জুনে আমার বাবার প্রস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। অ্যানুয়াল ফিজিকাল চেকাপে PSA কাউন্ট বেশী ছিল, তাই ফ্যামিলি ডাক্তার বলেছিলেন একজন ইউরোলজিস্ট দেখিয়ে নিতে। ইউরোলজিস্ট (ফোর্টিসের) বললেন আরও কয়েকটা টেস্ট করাতে। এই টেস্টেই ধরা পড়ে। অন্য কোনো সিম্টম ছিলনা।

    এবার শুরু হল খেলা। ইউরোলজিস্ট প্রথমে তো রিপোর্টই দেবেননা। বললেন, আপনাকে দেবনা, বাড়ির লোক নিয়ে আসুন। বাবা পরিষ্কার জানায় বাড়ির লোকের আসা সম্ভব নয়, আমাকেই দিতে হবে। তখন হাজার প্রশ্ন, বাড়িতে কে কে আছে, কেন আসতে পারবে না এটসেটরা। অনেক সাধ্য সাধনা করে রিপোর্ট বাবার হাতে দিলেন উইথ রেকমেন্ডেশন ফর ইমিডিয়েট প্রসট্র্যাকটমি।

    তো আমরা কলকাতা গেলাম। প্রথম কাজ ছিল একটা সেকন্ড ওপিনিয়ন নেওয়া। গেলাম আরেক ইউরোলজিস্টের কাছে। উনি বললেন বোন স্ক্যান করে রিপোর্ট নিয়ে আসতে। গেলাম। দেখে উনি বললেন সার্জারী তো আমি করি না, আমার কাছে এসেছেন কেন? আমরা বললাম সেকেন্ড ওপিনিয়ন নিতে। উনি হেসে বললেন আমি বলব হর্মোন ইন্জেক্শন নিন। সার্জেন হলে অপারেট করাতে বলতাম।

    এখানে বলা দরকার ক্যান্সার তখন অলরেডী স্টেজ ফোর। D9 vertibraর কাছের একটা লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে গেছে। দুজন ডাক্তারকেই বলেছি অঙ্কলজিস্ট একজন কন্সাল্ট করে সার্জারি বা হর্মোন থেরাপি ডিসাইড করব আমরা। তাতে দুজনেরই উত্তর ছিল তাহলে আমার কাছে এসেছেন কেন? অঙ্কলজিস্টের কাছেই যান।

    এই সময় আমার এক ডাক্তার বন্ধু আমাদের অর্নব গুপ্তের নাম বলল। অর্নব আর এই বন্ধু ক্লাসমেট ছিল, আলাপও করিয়ে দিল। Arnab is a class apart from these previous doctors! আমাদের প্রত্যেকটা কনসার্ন শুনত, উত্তর দিত, নেটে বিভিন্ন ট্রিটমেন্ট নিয়ে খোঁজ নিতে উৎসাহ দিত। We finally felt comfortable with a doctor regarding this!

    অর্নব খুব খোলাখুলি বলেছিল, দেখুন আমাদের হাতে কয়েকটা অস্ত্র আছে। আমরা একে একে সেগুলো ব্যবহার করব। তারপর বুঝতেই পারছেন অস্ত্র শেষ হয়ে গেলে এক্দিন আমরা হেরে যাব। আমার বাবা প্রচন্ড পসিটিভ মানুষ ছিলেন, অসম্ভব মনের জোর! He insisted to be part of these conversations and his only focus was quality of life. প্রথম দিন থেকে বাবা বলত দেখ, চলে যেতেই হবে, কিন্তু যতদিন আছি আমি কোয়ালিটি অফ লাইফ কম্প্রোমাইজ করবনা। বিছানায় পড়ে থেকে বাঁচতে চাইনা। অর্নবকেও সেই মত বলেছিল। ট্রিটমেন্ট সেভাবেই প্ল্যান করার জন্য।

    শুরু হল চিকিৎসা। রেডিয়েশন। সপ্তাহে ৫ দিন। আমরা শুরু করিয়ে দিয়ে ফেরত চলে এলাম। বাবা নিজেই যেত গাড়ি চালিয়ে রেডিয়েশন নিতে। পরের দিকে আমার এক কাকা সঙ্গে যেত, মা গাড়ি চালাতে দিতনা বলে ড্রাইভার সঙ্গে থাকত। এটা চলল ৬ সপ্তাহ। তারপর আবার সব টেস্ট। দেখা গেল PSA অনেক কমেছে। এবার শুধু ওষুধের ওপর থাকতে হবে। এভাবে চলল প্রায় দেড় বছর। তার মধ্যে বাবা কিভাবে জীবনটা এনজয় করেছে না দেখলে বিশ্বাস হবেনা! বেড়াতে গেছে, আড্ডা দেওয়া, নাটক দেখা, সবাইকে নিয়ে গেট টুগেদার - আগে কখনও বোধহয় এত করেনি।

    ২০১০ এর নভেম্বরে ব্লাড টেস্ট করে দেখা গেল আবার PSA বাড়ছে। এবার দ্বিতীয় অস্ত্র। সার্জারি। আমরা আবার কলকাতা গেলাম। যেদিন রাতে হসপিটালে ভর্তি হবে সেদিন ও সারাদিন সায়েন সিটি ঘুরেছে আমার ছেলেকে নিয়ে। আমাকে বলেছে, প্লিজ বারন করিসনা। নাতির সঙ্গে একটু কোয়ালিটি টাইম কাটিয়ে নি। সার্জারির পরের দিন ডাক্তারকে রাজি করিয়ে বাড়ি ফিরেছে কারন আমরা তার দুদিন পরে ফিরে আসব।

    আবার ওষুধের ওপর। একমাসের মধ্যে আবার মর্নিং ওয়াক শুরু। তিন মাস পর আবার বেড়াতে যাওয়া। খুব ইচ্ছে ছিল আর একবার আমার এখানে আসার কিন্তু মা সাহস করেনি। মায়ের ওপর খুব রাগারাগি করেছে এই নিয়ে। এভাবে ছিল বছর দুয়েক। শরীর এতটাই ভাল ছিল যে কেরল যাবার প্ল্যান করল। টিকিট কাটা হয়ে গেল, সমস্ত বুকিং ও। ২০১২ ডিসেম্বর।
  • Tim | 101.185.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ২২:৩১674832
  • অক্ষদা কে ক দিয়ে গেলাম।

    আমার বহুদিন ধরে মনে হয়, বেঁচে থাকার এত স্ট্রেস, সে নাহয় নিলাম কিন্তু অন্তত মরার স্ট্রেসটা যদি একটু কম হতো। অন্তত যাদের খুন করবে বলে লোকে বসে নেই তারা যদি সহজে ইউথেনশিয়া পেত তো একটা কাজের মত কাজ হতো।
  • aranya | 154.16.***.*** | ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৭674833
  • অক্ষ-কে আমারও ক।
  • aranya | 154.16.***.*** | ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪০674834
  • তানিয়া-র বাবার জন্য শ্রদ্ধা, হ্যাটস অফ
  • ranjan roy | 24.96.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ১৭:০০674835
  • অমন ক্লিয়ার থিংকিং খুব কম দেখা যায়। অবশ্যই মনে রাখব।

    অনেককেই দেখেছি নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে ভেঙে পড়তে , তাবিজ মাদুলি জলপড়া নিতে। করুণ আকুতি।
    উনি অবশ্যই ব্যতিক্রমী।
  • একক | 24.96.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ১৭:৩১674836
  • আমার ক্যান্সার ধরা পরলে ব্যাপক কান্নাকাটি করবো । এমনিতেই প্রচন্ড ভীতু । তার ওপর মৃত্যুভয় । যখন ছোটো ছিলুম তখন বলতুম ক্যান্সার ধরা পরলে হারিয়ে যাবো । সারা ভারত ঘুরে বেড়াবো ।এখন জানি সেসব কিছুই করবোনা । কিছু করতে ইচ্ছেই করবেনা । এক সময় জানতুম ক্যান্সার হলে চিকেন স্যুপ খেতে পাওয়া যায় । একের পর আত্মীয় এসে ভর্তি হত কলকাতায় ।মা রান্না করে নিয়ে যেতেন ।সঙ্গে আমি । মামাকে এক সময় মনে হত জীবনমশাই । নির্বিকার মুখে রোগীর পরিবারকে বলে দিতেন ...সার্জারির পর ম্যাক্সিমাম ছ মাস । অমুক স্টেজ তমুক স্টেজ রোজ খেতে বসে শুনছি । সেই মামা ,দিদার যখন ক্যান্সার ধরা পরলো পুরো যেন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিলেন ।বাড়িতে আইসিসিইউ ,চতুর্দিকে শুধু সুঁচ ভরা ।দিদা কোনোভাবে "বেঁচে" আছেন । মামার লড়াই চলছে । মারা যাবার কদিন আগে দিদা বলেছিলেন ...ছেলেকে সার্জেন বানিয়েছিলুম তার শাস্তি পাচ্ছি । মৃত্যুর পর শুনলুম প্যানক্রিয়াস ক্যান্সারে এতদিন বাঁচার রেকর্ড খুব কম ।সব ডেটা রিসার্চে লাগবে ।তখনও মনে হয়েছিল পালাবো ঠিক পালিয়ে যাবো ডাক্তার দের থেকে । কিন্তু জানি পালাবোনা। বই পড়া,গান শোনা কিছুই ভালো লাগবেনা । লাগেনা । গোটা শরীর জ্বলতে থাকে । আর মাথার মধ্যে হ্যামারিং চলে মরে যাচ্ছি । মরে কোথাও কেও যায়না । জাস্ট অফ । চোখের তলায় কালি পরবে ।চোয়ালের হাড় বেড়িয়ে আসবে । এক্সট্রা বালিশের ওয়ারের মত বিছানার এককোনে পরে থাকবো আর ঘ্যানঘ্যান করবো । কেও জোরে সাড়া দিলে কিছুক্ষণ একটু চুপ করে যাবো । আলো নিভিয়ে দিতে বলবো ।
  • Tim | 101.185.***.*** | ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ১৭:৪৬674837
  • তানিয়াদির পোস্ট এখন পড়লাম। হ্যাটস অফ
  • santanu | 102.99.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০১৫ ২০:৫২674838
  • তানিয়া, একজন কাছের মানুষের টুক করে ক্যান্সার ধরা পরেছে, ডাক্তার অর্নব গুপ্তের Contacts দেওয়া যাবে?
  • santanu | 102.99.***.*** | ১০ এপ্রিল ২০১৫ ২১:০২674842
  • এটাই তো হওয়া উচিত। এতে তো নাড়ি-নক্ষত্র সব দেওয়া। যোগাযোগ করি।
    অনেক ধন্যবাদ।
  • tania | 27.246.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:২৫674843
  • শান্তনু, দমুদি অর্নবের কন্ট্যাক্ট দিয়েছে দেখলাম। আর কিছু জানার থাকলে মেইল করতে পারেন tania90 gmail এ।

    -----

    ফিরে যাই ২০১২ ডিসেম্বরে। ৩১ তারিখ। হঠাৎ সকালে বাবার ইউরিনে ব্লাড আসতে লাগল। সেদিন কোনো ডাক্তার পাওয়া গেলনা। অর্নব ফোনে বললেন মাইক্রোল্যাপে ভর্তি হতে (ওটাই আমাদের বাড়ির সবচেয়ে কাছে)। ২রা জানুয়ারি ল্যাপ্রোস্কোপিক সার্জারি। ইউরিনারি ব্লাডারে টিউমার। আমি যেতে পারিনি। বাবা নিজেই হস্পিটাল বেডে শুয়ে ফর্মে সই করেছে, ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট করেছে।

    বায়াপ্সি রিপোর্ট এলো। ক্যান্সার স্প্রেড করে গেছে অনেকটা। শেষ অস্ত্র। কেমো। যেদিন কেরল যাবার কথা সেদিন ছিল বাবা মায়ের ৪১ তম ম্যা অ্যা। সেইদিনই প্রথম কেমো হল। কেরল আর হলনা। মায়ের কাছে শুনলাম কেমো নিয়ে বাড়ি ফিরে বাবা বাচ্চাদের মত বায়্না করেছে রান্না করার জন্য। আমি তি একদম সুস্থ আছি, ঠিক পারব। রাতে নিজে চিকেন গ্রিল করে মা আর কাকাকে খাইয়েছে। সেকেন্ড কেমো যেদিন হবে তার দুদিন আগে আমি কলকাতা গেলাম। আগে থেকে না জানিয়ে। দরজা খুলে আমাকে দেখে বাবার সেদিনের মুখ কোনোদিন ভুলবোনা! কেমো নেবার দুতিনদিন পর জোর করে আমার সঙ্গে বেরোনো। হইহই করে সাউথ সিটি ঘোরা। বাইরে লাঞ্চ। নিজে গাড়ি চালিয়ে। মনেই হয়নি এমন একটা অসুখ মানুষটাকে ভেতরে ভেতরে শেষ করে দিচ্ছে। আমি ফিরে এলাম দুসপ্তাহ পর।

    আরও চারটে কেমো হল। কিন্তু এবার আর PSA তেমন কমলনা। he understood সময় ফুরিয়ে আসছে। এই সময়ে খবরের কাগজে একটা বিজ্ঞাপন বেরোল alternative medicine for cancer। কাঁকুড়গাছিতে ওদের সেন্টার। ওদের ওষুধ খেয়ে নাকি কোয়ালিটি অফ লাইফ ভালো থাকে পেশেন্টদের। অমায় বলল এটা একবার চেষ্টা করি। বুঝলাম, ওদের ক্যাচ লাইন বাবাকে দুর্বল করে দিয়েছে। আমাদের এই চিকিৎসায় ভরসা ছিলনা। কিন্তু যেহেতু এটা প্যারালালি চলবে অন্য ওষুধের সঙ্গে, রাজি হয়ে গেলাম। এটা চলেছিল মাস ছয়েক।

    দিন দিন বাবাকে একটু একটু করে ক্ষয়ে যেতে দেখলাম এই কয়েক মাস। মাথা পুরো সাফ। শরীর শুধু বইছে না। এই সময় বাবা কি কি সব করেছে, কি করে মাথা ঠান্ডা রেখে একে একে করে গেছে ভাবতেই পারি না। সমস্ত ইন্ভেস্টমেস্ট এক জায়্গায় ডকুমেন্ট করা, আফ্টার ডিমাইস (হ্যাঁ, ঠিক এইটাই লেখা ছিল প্রতিটা ফাইলে) কি করতে হবে তার স্টেপ বাই স্টেপ প্রসেস, সমস্ত ডিটেল ডকুমেন্ট করা, এমনকি, ছোট ছোট জিনিস - মা ভুলে যায় টিভি তে কত নম্বর টিপলে কোন চ্যানেল - সেগুলো পর্যন্ত একটা ছোট নোটবুকে লিখে টিভির রিমোটের পাশে রাখা। ক্রেডিট কার্ড একটা বাদে বাকিগুলো বন্ধ করা। মা পার্ক স্ট্রিট পোস্টাপিসে যেতে পারবে না, সেখান থেকে টাকা উঠিয়ে এনে লোকাল ব্যাঙ্কে রাখা। মাছের অ্যাকোয়রিয়াম কাউকে দিয়ে দেওয়া। এরকম আরও কত কাজ।

    এর মধ্যেও রোজ বিকেলে একটু একটু হাঁটা। আমি রোজ ফোন করতাম। তখন সব পুরোনো দিনের গল্প। যখন আমার কাছে এসেছিল। যখন আমরা কোথাও বেড়াতে গেছিলাম। আর বলত এবার ডিসেম্বরে একবার আয় ছেলেকে নিয়ে। আমি একটু সময় কাটিয়ে নি ওর সঙ্গে। এর পর তো আর পারবনা। আমি চাইনা ও আমাকে শুয়ে থাকতে দেখুক।

    গেলাম ডিসেম্বরে। গিয়ে চমকে গেলাম। চোখের তলায় কালি। দড়ি পাকানো চেহারা। রোগটা কি অবস্থা করেছে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়্না। কিন্তু আরও অবিশ্বাস্য হল, মানুষটা স্পিরিটটা ছুঁতে পারেনি একটুকু! সেই আগের মতই সেন্স অফ হিউমার, আগের মতই জীবনটাকে উপভোগ করার অদম্য জেদ! যেদিন চলে আসছি সেদিন বাবার চোখে জল। বলল খুব ইমোশনাল লাগছে, তোকে আর কখনও দেখতে পাবনা। আমি বললাম আমি আবার আসব, ঠিক দেখা হবে। প্রমিস? প্রমিস!

    এখানে ফিরলাম ২০১৪ জানুয়ারির ৬ তারিখ। ১৮ তারিখ খবর এল হঠাৎ অবস্থা খুব খারাপ। অর্নব ফোন করে বলল, ৪৮ ঘন্টা। পারলে চলে এস। সমস্ত ফেলে রেখে আমি ছুটলাম। দুবাইতে যখন কানেক্টিং ফ্লাইটের অপেক্ষা করছি তখন ফোনে জানলাম একবার জ্ঞান ফিরেছিল, তখন আমার কথা জিজ্ঞেস করেছে আমায় খবর দেওয়া হয়েছে কিনা। যখন শুনেছে আমি আসছি, তখন বলেছে চিন্তা নেই, আমি বাড়ি যাব কদিনের মধ্যেই। সত্যিই তাই। আমি কলকাতা পৌছে দেখলাম অনেকটা বেটার (যদি তাকে বেটার বলা যায়)। তবে he has lost his stand for quality of life। এখন সত্যি সত্যিই বিছানায়। অর্নব বলল মিরয়াকল, উনি যে এবার বাড়ি ফিরবেন ভাবা যায়নি। ওঁর ইচ্ছাশক্তির তুলনা হয়না।

    এখানে একটা কথা না বললে অন্যায় হবে। সেটা হল অর্নব এবং ওর হাসপাতাল আমাদের জন্য যা করেছে। প্রতি সপ্তাহে একজন ডাক্তার একজন নার্স বাড়ি এসে বাবাকে দেখে গেছে। এটা ওদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের পার্ট। এর জন্য ওরা একটা পয়সাও নেয়নি। ওদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের যিনি হেড, রাকেশ রায়, ওঁকে বলেছিলাম, আমরা তো অ্যাফোর্ড করতে পারি, আমরা কিছু টাকা দি। উনি হাত জোর করে আমায় বলেছেন, দেখুন, আপনারা তো এতদিন করলেন, আমরাও চেষ্টা করলাম। মেশোমশাইকে তো আর ভালো করতে পারব না। এটুকু আমাদের করতে দিন। ডাক্তারদের আমরা অনেক গালমন্দ করি, কিন্তু এখনও কয়েকজন আছেন যাঁরা কল অফ ডিউটির অনেক ওপরে গিয়ে ভাবেন। অর্নব এবং রাকেশ আমার দেখা এরকমই দুজন মানুষ।

    দুসপ্তাহ থেকে ফিরে এলাম। এবার আর বাবা কিছু বলেনি। বলার হয়ত তেমন কিছু ছিলও না। কোনো প্রমিস করিনি। কারন রাখতে পারব কিনা আন্দাজ করতেও ভয় পেয়েছিলাম। দুজনেই।

    মাসখানেক এভাবে চলে। যেটা কোনোদিন চায়নি, যা প্রচন্ড ভয় পেত, তেমন ভাবে। বিছানায় শুয়ে। তারপর একদিন আর সাড়া পাওয়া যায়না। ডাকলে অনেক কষ্টে চোখ খোলে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে একটু জ্ঞান ফেরে একদিন। কাকাকে বলে I am tired. আর পারছি না। পরের দিন সকালেই সব শেষ। দিনটা পয়লা এপ্রিল। ২০১৪।
  • | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৯:২০674844
  • আমার মোটামুটি আবছা একটা ধারণা ছিলই যে টুক করে ধরা পড়লে কী করব, কোয়ালিটি অব লাইফ যতটা সম্ভব কম্প্রোমাইজ করব না এটাও ভাবনা ছিল।

    তানিয়ার বাবার কথা পড়ে এখন একদম নিশ্চিত যে হ্যাঁ যদি ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে এইভাবেই মুখোমুখী হব। একদম।
    শ্রদ্ধা রইল ওঁর জন্য। মনে রাখব। ধন্যবাদ তানিয়া শেয়ার করার জন্য।
  • pi | 37.62.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৯:৩৯674845
  • তানিয়াদির লেখাটা ...
  • aka | 34.96.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ১০:০৩674846
  • তানিয়ার গল্পোটা গল্পের মতন। সব সময় এমন হয় না। তানিয়া ভাগ্যবান ওর বাবা এমন পজিটিভলি সবকিছু হ্যান্ডেল করেছেন। হ্যাটস অফ। আমাকে দীর্ঘ চার বছর ধরে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে শেষে কি? জীবন, সাফল্য ও তদ্দজনিত কন্ফিডেন্স বোধহয় ম্যাটার করে। ক্যান্সার হলে কি করবর থেকেও বোধহয় গুরুত্বপূর্ণ হল ক্যান্সার এর চান্স কি করে কম করা যায়। হলে খুব কম কিছুই নিজের হাতে।
  • b | 135.2.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০১৫ ১১:১৬674847
  • তানিয়া, আপনার বাবা নমস্য। এরকম ভাবেই যেন নিজের রোগ ও মৃত্যুকে ফেস করতে পারি।
  • মেহেদী | ***:*** | ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ২২:৫৭674848
  • জানিনা ক্যান্সার কিনা, ৩য় বারের মত কোলকাতা যাচ্ছি, বায়োপসি টা করিয়েই নিব, ১ বসন্ত সেই ৩ মাস আগেই পেরিয়েছে, জিভের ঘা টা যে শুকোচ্ছেই না।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন