এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আআপ এর থেকে বামেরা যা শিখতে পারে

    শুভদীপ
    অন্যান্য | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৬৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শুভদীপ | 212.142.***.*** | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০৮669415
  • অনেকে আআপ আর বামপন্থীদের নিয়ে অনেক কিছু লিখছে । ভাবলাম আমিও একটু লিখি, মৌলিক লেখা অবশ্যই নয়, কারণ টোকা আমাদের ভিসিগত অধিকার । যাই হোক, পড়ে মতামত দিলে ভাল লাগবে ।
    .
    প্রথমেই এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেওয়া ভাল, না তারা মডেল নয় । এমনকি আআপ যে ছকে দিল্লির মসনদে এলো, সেই ছকে তাদের পক্ষে দেশের অন্যত্র প্রভাব বিস্তার করাও সম্ভব নয় । দিল্লির পরিস্থিতি আলাদা, এবং তাদের বহুদিনের ক্ষোভ-না পাওয়ার যন্ত্রণার কালমিনেশন হলো আআপ । আআপ তৈরীর আগে পরে কেজরিওয়াল নিজে দিল্লির প্রায় আশিভাগ মহল্লায় গিয়েছেন, যেটা পশ্চিমবঙ্গ-অন্ধ্র-বিহার কোথাও কোনও একজন নেতার পক্ষে করা সম্ভব নয় । অনেকগুলো সিভিল সোসাইটি আন্দোলনকে এক সুতোয় গেঁথে আআপ এর উত্থান (অনেকেরই ধারণা আআপ বুঝি শুধুই জনলোকপাল আন্দোলনের ফসল । নির্ভয়া কান্ডের প্রতিবাদে দিল্লিতে হওয়া জনজাগরণ কে তারা ভুলে যান) ।
    .
    তবে আআপ এর উত্থান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনের সংযোগ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে । পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে বইতে কি লিখেছিলাম, সেটাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা আর যাই হোক, মার্কসবাদী রাজনীতি নয় । ভারতে খেটে খাওয়া মানুষের যে সংজ্ঞা পঞ্চাশ বছর আগে ছিল, এখন তাতে প্রভূত পরিবর্তন এসেছে । ভারতে ৪৭% মানুষের বয়স ৩৫ এর নীচে । এদের জ্ঞান হওয়া ইস্তক এরা নিওলিবারেল অর্থনীতিকেই দেখে এসেছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন-পূর্ব ইওরোপ দেখেনি ।
    .
    গত আড়াই দশকে বা তারও আগে থেকে ভারতের নানাপ্রান্তে নানা রকমের আন্দোলন দানা বেঁধেছে, এবং এসব আন্দোলনের ধারা দেখলে এটা স্পষ্ট হবে যে পার্টি সব জানে, এরকম একটা ধারণাকে এরা নস্যাৎ করেছে । এই আন্দোলন থেকে বামপন্থীদের পাওয়ার-শেখার অনেক কিছু আছে । কিন্তু তার জন্য তাদের এই আন্দোলন গুলোর সাথে যুক্ত হতে হবে, বাইরে থেকে “অপ্রাসঙ্গিক”, “গুরুত্বহীন”, “আসল সমস্যা থেকে চোখ ঘোরানোর চেষ্টা” বা “আমরা না গেলে সফল হবে না” এরকম টীকাটিপ্পনী করে আখেরে ক্ষতিই হবে । ভারতের বামপন্থীদের কাছে আআপ এর শিক্ষা এই যে নিপীড়িত মানুষের মৌলিক স্বার্থরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তবেই আন্দোলনের ময়দানে বামপন্থীদের প্রাসঙ্গিকতা, বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে ।
    .
    দেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বামপন্থীদের মধ্যে একটা লাইন খুব পপুলার- যুক্তফ্রন্ট । নামে যুক্তফ্রন্ট, আদতে তা হলো নিওলিবারেল লাইন নিয়ে চলা কিছু দলের সঙ্গে নির্বাচনী গাঁটছড়া, এবং সেটা যে বামপন্থীদের বিপর্যয়ের পথেই নিয়ে গেছে বরাবর, সেটা তাদের দলীয় পর্যালোচনাতেও এসেছে, কিন্তু তারা বরাবরই সেই ISO certified বিপর্যয়ের পথেই হাঁটতে ভালবাসেন, জানি না কেন ! নিজেদের খোয়া যাওয়া বিশ্বাসযোগ্যতাকে পুনরুদ্ধার করতে গেলে বামপন্থীদের এই আত্মহত্যার লাইন থেকে সরে আসতেই হবে, যুক্তফ্রন্ট হতে পারে একমাত্র খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষের রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও নিপীড়িত মানুষের আন্দোলনগুলোর সঙ্গেই । আআপ এর আর্থিক নীতি এখনও পরিষ্কার নয় । যদি ধরেও নি যে তারা আর্থিক দিক দিয়ে নিও লিবারেল (যদিও এখনও অবধি তার উলটো প্রমাণই মিলছে) আআপ গ্রাসরুটে গিয়ে নিপীড়িত মানুষকে সংগঠিত করার কাজ করেছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিজেদের সাথে যুক্ত করতে পেরেছে, আত্মস্থ করেছে স্থানীয় স্তরের বিভিন্ন আন্দোলনকে । কিন্তু দুঃখের বিষয় বামপন্থীরা সেই সময় দূর থেকে শুধু সমালোচনা আর সিনিসিজম করে গেছে, তাদের রণকৌশল থেকে শিক্ষা নেয়নি । [অবশ্য সেই সমালোচনার কোনও ভিত্তি নেই তা নয়]
    .
    শেষে আসবো ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে । আআপ দেখিয়ে দিয়েছে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের সম্পর্কে গদগদ ভাব না দেখিয়েও সংখ্যালঘুর স্বার্থরক্ষা করা যায় । জামা মসজিদের ইমামের suo moto সমর্থন ফিরিয়ে দিয়ে দিয়ে তারা ভারতের রাজনীতিতে সত্যিই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে । পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূল ধর্মীয় পোলারাইজেশন ঘটিয়ে শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে যেটা পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীই শুধু নয়, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত মানুষের কাছেই চিন্তার কারণ । হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা অবশ্যই দেশের পক্ষে সবচেয়ে বড় বিপদ, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সামান্য কিছু স্বল্পমেয়াদী লাভের জন্য সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতে হবে ।
    বামপন্থীদের আআপ-এপিসোড থেকে কি শেখার আছে ?
    .
    প্রথমতঃ নিজেদের মধ্যে সঙ্কীর্ণ দলাদলি বন্ধ করতে হবে, কে বেশী লাল, কে কম লাল, কে গোলাপী এই এশিয়ান পেইন্টসের দোকানিগিরি ছাড়তে হবে, ফ্যাসিজমের মার সব ব্র্যান্ডের লালের গায়েই সমানভাবে লাগে ।
    দ্বিতীয়তঃ শুধু কংগ্রেস নয়, বুর্জোয়া সমস্ত দলের সঙ্গে গলাগলির রাস্তা ছাড়তে হবে, সংসদে ফ্লোর কো-অর্ডিনেশন হলে আলাদা ব্যাপার ।
    তৃতীয়তঃ সারা দেশে হওয়া সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন--- কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, জমিহারা দের আন্দোলন, উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলন, LGBT আন্দোলন, পরিবেশ আন্দোলন এ যোগ দিতে হবে (পাশে দাঁড়িয়ে টীকাটিপ্পনী তে ক্ষতি হবে, আর শুধু সহমর্মিতা জানিয়ে একটা দুটো মিছিল করলে লাভের লাভ তেমন হবে না)
    .
    সিপিআইএমের পার্টি কংগ্রেস সামনে আসছে । বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে তাদের খসড়া দলিল এসেছে । বামফ্রন্ট সরকারের সময় নেওয়া বহু নীতিকে কঠোর ভাবে সমালোচনা করা হয়েছে খসড়ায়, জানা নেই সেগুলো কংগ্রেসে গৃহীত হবে কি না !! তবে পার্টিকে এটা বুঝতে হবে যে নিজেদের হৃত বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারে শুধু এইটুকু যথেষ্ট নয় । এবং সিপিএমের বামদিকে যে বামদল গুলো রয়েছে, তাদেরও বুঝতে হবে ফ্যাসিস্ত নিওলিবারেল শক্তিকে যদি সত্যিই তারা ভয়ানক বিপদ বলে মনে করে, তবে সঙ্কীর্ণতা কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাম বিকল্প গড়ে তোলা ছাড়া কোনও পথ নেই ।
  • robu | 122.79.***.*** | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৯:৪২669416
  • মোটামুটি একমত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন