এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পরহিতৈষণা

    sosen
    অন্যান্য | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১০১০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • a x | 138.249.***.*** | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২০:৫৩630730
  • ইয়ানি কি অলট্রুইসম? ইন প্রাণী জগৎ?
  • sosen | 125.242.***.*** | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২১:০৩630731
  • **************************************
    পরোপকার করার প্রাণপণ ইচ্ছে, সে ভারী সাংঘাতিক রোগ। সিধে বাংলায় আমরা তাকে কই, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো। বাংলা সাহিত্যে এমন পরোপকারী দাদাদের উদাহরণ ভূরি ভূরি, আর তাঁদের ঘরে রেগে আগুন হওয়া গিন্নিদের সংখ্যা-ও বড় কম নয়। একটু যাচিয়ে দেখা যাক, কার পাল্লায় ওজন বেশি।
    পরের কারণে স্বার্থ বলি দেওয়ার একটা ভারী গালভরা নাম আছে ইংরিজিতে। Altruism । বাংলায় একে বলা যেতে পারে পরহিতৈষণা । তা এই পরহিতৈষণা ব্যাপারটি হঠাত একদিনে তৈরী হয়নি । বহু যুগের ইতিহাস ধরে রেখেছে এই গুণের বিবর্তনের সাক্ষ্য। একটু তলিয়ে দেখি, কবিতা , সাহিত্য, বীরপূজা ছাড়া আর কি নিহিত থাকতে পারে এই পরহিতৈষণার অন্দরে। এ ধর্ম কি জৈবিক, হলে কতটা? আর কেনই বা এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে এত তফাত এই ধর্মে?
    কোনো কোনো বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের মতে, মানুষকেই শুধু প্রকৃত অর্থে পরহিতৈষী প্রাণী বলা যেতে পারে। কারণ, না-মানুষী প্রানীদের পরহিতৈষণার গরজ সাধারণত খুব সরাসরি আত্মমুখীন। মৌমাছির চাক বাঁচাতে আত্মদান সরাসরি তার গোষ্ঠিকে উপকৃত করে। বাঁদরদের বিপদ দেখলে চিত্কার করে দলকে সতর্ক করে দেওয়া, তার গোষ্ঠিকে বিপদের হাত থেকে বাঁচায়। ফলে, ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার্থেই এই ব্যবহার। কাজেই, অনেক বিজ্ঞানীর মত, প্রকৃত পরহিতৈষী কেবল মানুষ।
    বিপক্ষের মত বলে, এই ধারণা অসম্পূর্ণ। ব্যবহার হিসেবে ব্যক্তির তাত্ক্ষনিক প্রেরণা, পার্শ্ববর্তী মানুষকে/প্রাণীকে সাহায্য করার প্রবণতাই পরহিতৈষিতা। প্রাণীকুলের এই ব্যবহারগুলি স্বার্থপর হতে গেলে, গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ উপকার, ও তার ফলে পরোক্ষভাবে নিজের উপকার যে হতে পারে সে সম্পর্কে তাদের সচেতন হতে হবে। কিন্তু সে রকম কোনো প্রমাণ দুর্লভ। প্রাণীর পক্ষে অতটা তলিয়ে বোঝা ও মনে রাখা আদৌ সম্ভব-ই নয়। অর্থাত, পরোপকারের প্রত্যক্ষ প্রেরণা ও দূরবর্তী ফলাফল( গোষ্ঠীর উপকার) এই দুয়ের মাঝে চেতনার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যদি জানি, যে এই ব্যবহারের ফলে ক্ষতি বই আমার ও আমার গোষ্ঠীর কাছের প্রানীদের লাভ হবে, তবে তা স্বার্থপরতা। কিন্তু, আমরা জানি না, অথচ প্রকৃতি জানে এটি স্বার্থপরতা, এমনটাও হামেশাই ঘটে থাকে। তখন যে তাকে ঠিক কি বলা হবে, তা ভারী বিতর্কের বিষয়।

    বিবর্তনীয় জীববিদ্যা বলে, আমাকে তখন-ই পরহিতৈষী বলা যেতে পারে, যখন কিনা আমার কোনো ব্যবহারে পরের তো উপকার হয়, কিন্তু আমার নিজের বেশ ক্ষতি-টিই হয়। নিজের ঘর ঠিক রেখে ট্যাক্সো বাঁচানোর জন্য পরোপকারকে জীববিজ্ঞান পাত্তা দিচ্ছে না, খ্যাল রাখবেন। তা এই ক্ষতি কিম্বা লাভ, কি ভাবে মাপবে জীববিদ্যা? প্রথমত বংশবৃদ্ধির সাফল্যের হার, বা reproductive fitness দিয়ে। অর্থাৎ পরোপকারী জীবের প্রজননগত সাফল্য এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
    পরোপকারের সাধারণ বা মনুষ্যসৃষ্ট ধারণার সঙ্গে জৈবিক ধারণার একটা গোড়ার ফারাক দেখা যাচ্ছে। সেটা হলো, দর্শন বলছে চেতনাহীন পরোপকার আদপেই পরোপকার নয়। কিন্তু জীববিদ্যা গোড়াতেই জানিয়ে দিচ্ছে , নিজের ক্ষতি, অন্যের লাভ , সে সচেতনে করা হোক কি অচেতনে, সেই ব্যবহারকে পরোপকারই ভাবা হবে। এইভাবে ভাবলে মানুষ ছাড়া তথাকথিত চেতনাহীন জীবেদেরও এই তত্ত্বে সামিল করা যাচ্ছে।
    জীববিজ্ঞানের এই চর্চিত ধারায় একটি লুপহোল আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। অভিপ্রায় (intention ) এবং পরিণাম( কনসিকোয়েন্স) এর মধ্যে যে ধরনের সরাসরি সম্পর্ক খোঁজা হয়, আদপে জীবজগতে তা অনুপস্থিত। এমনকি, কোনো একটি ব্যবহারের ফলাফল কি হবে , সে ভাবার মত উন্নত মস্তিষ্ক বেশিরভাগ সামাজিক (এবং কখনো পরোপকারী) প্রাণীর নেই।নিজের ক্ষতি হবে সেটা জেনেই কি চেতনাহীন জীবেরা কাজ করে? না কি এই ধর্মের উপর তাদের কোনো কন্ট্রোল-ই নেই?
    altruism বা পরোপকারের স্পৃহার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা হলো empathy বা সহানুভূতি । এই বিশেষ ধর্মটি শুধু মানুষ নয়, বিভিন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যেই দেখা যায়, কিন্তু পরিমাণে ফারাক আছে । প্রথমেই সহানুভূতির জীববিজ্ঞানসম্মত সংজ্ঞা নির্ণয় করে নেওয়া যাক । সহানুভূতি, অর্থাৎ কিনা ১। অন্যের আবেগ ও অনুভূতি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ক্ষমতা। সহানুভূতি তৈরী হয় emotional contagion বা আবেগের সংক্রমণ থেকে ২। অন্যের মানসিক অবস্থার কারণ বিচার করার ক্ষমতা। ৩। নিজেকে অন্যের জায়গায় বসিয়ে তার দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীকে দেখার ক্ষমতা। এই সর্বসিদ্ধ সংজ্ঞাগুলি নির্ণয় করার পর আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি যে জীবজগতে সমস্ত রকম পরোপকার-স্পৃহাই কিন্তু সহানুভূতি থেকে উদ্ভূত নয়। বা প্রচলিত দৃষ্টিতে যাকে পরোপকার স্পৃহা মনে হচ্ছে তা আসলে কিছুটা বিস্তৃত পরিধিতে স্বার্থপরতা। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক বাঁদর ও পাখিদের বিপদের সম্ভাবনা দেখলে একে অন্যকে সতর্ক করা, মৌমাছির চাক বাঁচাতে কোনো অনুপ্রবেশকারীকে আক্রমণ ও তার ফলে প্রাণত্যাগ, বা খাবার দেখলে গোষ্ঠীর অন্য প্রাণীকে ডেকে নিয়ে আসা। এই সব ব্যবহারকে আলগাভাবে altruism বা cooperation বলা হয়ে থাকে জীববিজ্ঞানে, কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে এই ধরনের ব্যবহার স্বত:স্ফূর্ত এবং স্বার্থপরতার গন্ডির ভিতরেই এদের অবস্থান।
  • sosen | 125.242.***.*** | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২১:০৭630732
  • ইয়ানি কি, চলবে।:- ) অন্যেরাও লিখতে থাকুন।
  • sosen | 125.242.***.*** | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ২১:১৫630733
  • কারেকশন:
    "যদি জানি, যে এই ব্যবহারের ফলে ক্ষতি বই আমার ও আমার গোষ্ঠীর কাছের প্রানীদের কোনো লাভ হবে না , তবে তা স্বার্থপরতা"
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন