এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ভারতের বিভিন্ন সময় অঞ্চল (Time Zone) - ইতিহাসের কিছু বিস্মৃত ঘটনা

    Partha Pratim Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ | ২২৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Partha Pratim Roy | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ১৪:৫১622872
  • সময় অঞ্চল (Time Zone)
    +++++++++++++++++++

    প্রাচীন নথিপত্রে ভারতবর্ষের মানক সময় ঠিক হতো সূর্য সিদ্ধান্ত মতে। এই হিসেবে শূন্য দ্রাঘিমাংশের রেখা কল্পনা করা হয় অবন্তী ও রোহিতাকার মধ্যে দিয়ে। অবন্তী (২৩°১০′৫৮″উঃ, ৭৫°৪৬′৩৮″পূঃ) হলো অধুনা উজ্জয়নী এবং রোহিতাকা (২৮°৫৪′উঃ, ৭৬°৩৮′পূঃ) হলো অধুনা রোহতাক। সূর্য সিদ্ধান্তে উজ্জয়নীর মানক সময় থেকে স্থানীয় সময় নির্ণয় করার পদ্ধতি বলা হলেও, তার ব্যবহার জ্যোতির্বিদ্যার মধ্যেই সীমিত ছিলো। বিভিন্ন রাজ্যের শাসকরা সুবিধেমতো নিজেদের স্থানীয় সময় ঠিক করে নিতেন। যেমন ১৭৩৩ সালে জয়পুরে মহারাজা সোঁয়াই মান সিংহের তৈরী যন্তর মন্তর সঠিকভাবে স্থানীয় সময় নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হত।

    ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম মানমন্দির তৈরী করে চেন্নাই বা তৎকালীন মাদ্রাজে, কারণ মাদ্রাজ ছিলো অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্রায় মধ্যরেখায় অবস্থিত। উল্লেখ করা যেতে পারে তৎকালীন কেন্দ্র মাদ্রাজের দ্রাঘিমাংশ ৮০°১৭' আর অধুনা কেন্দ্র এলাহাবাদের নিকটস্থ মির্জাপুরের দ্রাঘিমাংশ হলো ৮২°৩০'। ১৮০২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম জ্যোতির্বিদ জন গোল্ডিংহ্যাম মাদ্রাজ মানক সময় চালু করেন। এটি ছিলো গ্রিনউইচ মান সময়ের থেকে ৫ ঘন্টা ২১ মিনিট ১৪ সেকেন্ড আগে ছিলো। সেই অর্থে বলা যায় মাদ্রাজ সময় ( ইউটিসি + ৫:২১) মাত্র প্রায় ৯ মিনিট তফাতে, স্বাধীন ভারতের মানক সময়ের সবথেকে নিকটতম অগ্রদূত ছিলো।

    পরে যখন ইংরেজ শাসিত ভারতে কলকাতা ও বোম্বে নামে দুটি সময় অঞ্চল (টাইম জোন) চালু হয়, তখন ভারতীয় রেল মধ্যবর্তী সময় অঞ্চল হিসেবে মাদ্রাজ মানক সময় মেনেই সময়সূচী তৈরী করতো। তাই অনেকসময় মাদ্রাজ মানক সময়কে বলা হয় ভারতীয় রেলের মানক সময়। প্রায় ৮২ বছর মাদ্রাজ মানক সময় ছিলো, ভারতের মানক সময়। তখন মাদ্রাজ মানমন্দিরের ঘড়ির সাথে একটা বন্দুক এমনভাবে জোড়া ছিলো যে, ঠিক রাত ৮ টার একটা বন্দুকের ঘোড়াটিতে টান পড়তো। এই গুলির আওয়াজ জানান দিতো যে সারাদিন মানক সময়ের সবকিছু ঠিকঠাক চলেছে। ১৮৯৯ সালে কোদাইকানালে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান কেন্দ্র চালু হয়। এটি একটি সৌর পদার্থবিদ্যা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতো। এই সময় থেকে মাদ্রাজ মানমন্দিরের সমস্ত কাজকর্ম কোদাইকানালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

    ১৮৮৪ সালে প্রশাসনিক কাজকর্মের সুবিধের জন্যে দুটি ভারতের দুটি সময় অঞ্চল তৈরী হয়। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল মেরিডিয়ান কনফারেন্স সময় ঠিক হয় একটি কলকাতা (এখন কোলকাতা), অপরটি বোম্বে (এখন মুম্বাই)। কলকাতার সময় ঠিক হয় ৯০° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপর ভিত্তি করে (আসলে ৮৮°২২') এবং বোম্বের সময় ঠিক হয় ৭৫° পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপর ভিত্তি করে (আসলে ৭২°৫৪')। সেইমত কলকাতা সময় (ইউটিসি + ৫:৫৩:২০ বা ইউটিসি + ৫:৫৪) ভারতীয় মানক সময়ের (ইউটিসি + ৫:৩০) থেকে চব্বিশ মিনিট আগে, বোম্বে সময়ের (ইউটিসি + ৪:৫১) থেকে এক ঘন্টা এবং তিন মিনিট আগে এবং রেলের মানক সময় বা মাদ্রাজ সময় (ইউটিসি + ৫:২১) থেকে ৩২ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগে ছিলো।

    ১৮৭৪ সালের পঞ্জিকা ও ডাইরেক্টরীতে দেখা যায় রেলের সময় উল্লেখ করা হয়েছে "রেলওয়ে কোম্পানির গাড়ি গমনাগমনের নিয়মিত সময়, কলিকাতার টাইম হইতে ৩৩ মিনিট কম"। তৎকালীন ভারতবর্ষের রাজধানী হওয়ার সুবাদে কলকাতার সময় সারা ভারতবর্ষেই বহুল ব্যবহৃত সময় ছিলো। অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংবাদ সম্প্রচার হতো কলকাতা সময় অনুসারেই। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জ্যোতির্বিদ্যা এবং ভূতাত্ত্বিক ঘটনার নথিতেও এই সময়ই মেনে চলা হতো। ব্রিটিশ অধিকারীকরাও সচরাচর এই সময়কেই মেনে চলতেন। ১৯০৬ সালে ভারতীয় প্রমাণ সময় (আইএসটি) গৃহীত হবার পরেও প্রায় ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত্য কলকাতা সময় চালু ছিলো।

    বোম্বে সময়ও (ইউটিসি + ৪:৫১) চালু হয় ১৮৮৪ সাল থেকে। ১৯০৬ সালে ভারতীয় মানক সময় চালু হওয়ার সময় স্বাধীনতা সংগ্রামী বাল গঙ্গাধর তিলকের একটি বোমা বিস্ফোরণের মামলায় বিচার চলছিলো। সরকারের বিরুদ্ধে জনমতের সুযোগ নিয়ে বিশিষ্ট ব্যারিস্টার ফেরোজশাহ মেহতা জোর করে সময় অঞ্চল পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সওয়াল করেন। সরকারও জনমতকে নিজেদের দিকে আনতে ব্যর্থ হয়ে এই ব্যাপারে হল ছেড়ে দেয়। এর ফলে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত্য বোম্বে সময় চালু ছিলো।

    এছাড়াও উনিশ শতকের শুরুর দিকে পোর্ট ব্লেয়ার গড় সময় চালু হয় বঙ্গোপসাগরে ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জন্যে। ৯২°৪৩'৩৩.৬'' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের উপর ভিত্তি করে এই সময় ছিলো সবথেকে আগে (ইউটিসি + ৬:১১)। কলকাতা সময়ের থেকেও ১৭ মিনিট ৩৪ সেকেন্ড আগে। তবে ১৯০৬ সালে থেকে ভারতীয় মানক সময় চালু হলে পোর্ট ব্লেয়ার গড় সময় লোপ পায়।

    ভারতীয় মানক সময় (আইএসটি) চালু হয় ১৯০৬ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে। এটি উত্তরপ্রদেশে এলাহাবাদের কাছেই অবস্থিত মির্জাপুরের একটি ঘড়ি টাওয়ার অনুসারে ৮২°৩৪'৪৮'' দ্রাঘিমাংশের ভিত্তিতে গণনা করা হয়, যাতে হিসেবের সুবিধের জন্যে এটি গ্রিনউইচ মান সময়ের সাথে ঠিক সাড়ে পাঁচ ঘন্টা আগে থাকে (ইউটিসি + ৫:৩০)। কোদাইকানাল থেকে মানমন্দির চলে আসে মির্জাপুরে। স্বাধীনতার পর প্রায় তিন বছর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) সহ সমগ্র পাকিস্তানেই ভারতীয় মোন সময় মেনে চলা হতো। ১৯৫১ সালের পর পাকিস্তান এবং পরে বাংলাদেশ অন্য সময় অঞ্চল মেনে চললেও ভারতীয় মানক সময় ভারত ও শ্রীলঙ্কার সর্বত্র মেনে চলা হয়।

    সামরিক ও বিমান চালনা সময় আইএসটিকে বলা হয় ই* ("ইকো ষ্টার")। ১৯০৬ সালেও কলকাতা ভারতের রাজধানী হওয়ার সুবাদে IANA Time Zone Database-এ ভারতীয় মানক সময় হলো এশিয়া/কলকাতা। অল ইন্ডিয়া রেডিও বা দূরদর্শনের মাধ্যমে সংবাদ সম্প্রচারের আগে ভারতীয় মানক সময় প্রচার করার রীতি আজও চালু আছে। ভারতে দিবালোক সংরক্ষণ সময় (ডিএসটি) বা কোনো ঋতু অনুসারে সময় সমন্বয় করা হয়না। যদিও অসামরিক ক্ষেত্রে শক্তি খরচ কমানোর জন্যে ভারতে সংক্ষিপ্তভাবে তিনবার ডে লাইট সেভিং বা দিবালোক সংরক্ষণ সময় চালু হয়। এই তিনটি সময় হলো ১৯৬২ সালের ভারত চীন যুদ্ধ এবং ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ।

  • Partha Pratim Roy | ১৬ নভেম্বর ২০১৩ ০১:০৫622873
  • আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন