এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • ছড়ানো ছেটানো কথা ও ঘটনা।

    সে
    নাটক | ২০ আগস্ট ২০১৩ | ৩০৮৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৬:১৪619904
  • এরকম চমৎকার একটা বিকেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার কোনো মানে হয় না। তা সে তাড়াতাড়ি ছুটি পেলেও না। এরকম একটা কর্মব্যস্ত জনবহুল ট্র্যাফিকবহুল হৈহৈচেঁচামেচিমুখর জায়গায় কোনো একটা ওয়ার্কিংডের বিকেলে আমি উপস্থিত থাকিনি প্রায় তিন বচ্ছর। এই সময়ের মধ্যে এই জায়গাগুলো কতটা পাল্টেছে ঠিক বুঝতে পারছি না।
    দেবাশিসদা আমাকে কীরকম একটা কাটিয়ে দেবার অ্যাটিটিউডে ছিল বলে মনে হল। আমরা দুজনেই সাউথে থাকি। সেক্ষেত্রে অনায়াসে মেট্রোয় করে রাসবিহারী কি হাজরার মোড় অবধি যাওয়া যেত। পাশেই মেট্রো স্টেশন। এমন কিছু ভিড় হবার কথা নয়। কিন্তু আমাকে মেট্রোর দিকটায় যেতে দেখেই পেছন ফিরে দেবাশিসদা জিগ্যেস করল, তুমি কি সাউথে থাকো নাকি?
    থাকি। তবে সেটা অনেক দূর এখান থেকে। সেখানে মেট্রো নেই কাছাকাছি। তবে রাসবিহারী অবধি যেতে পারি।
    এটুকু শুনে দেবাশিসদা হাঁটার গতি কমিয়ে বলে, আমি চেতলায় থাকি। তবে এখন বাড়ি যাব না। অন্যদিকে যাব।
    এই শেষের বাক্যদুটো বলবার ধরণে এমন কিছু একটা ছিল যাতে আমার মনে হয় দেবাশিসদা আমার সঙ্গে যেতে চাইছে না। এটা আমার একান্ত নিজস্ব মনে হওয়া। তৎক্ষণাৎ আমি মত বদলাই। বলি, তাহলে কাল সকালে চলে আসব। চলি।
    এটুকু বলে আমি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে উল্টো দিকে চলি কিছুটা। তারপরে রাস্তা ক্রস করা, সেই ক্যাথলিনের কাছ দিয়ে আপন মনে অলিগলি হাঁটা। এবং একটু পরে দেখি, যে সরু গলিটার মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছি তার নাম প্রিটোরিয়া স্ট্রীট। এই নামটা ভীষণ চেনা। সঙ্গে সঙ্গে মনেও পড়ে যায়। ২/২ নম্বর বাড়ী। বাক্স রহস্যে ছিল। ২/২ ই কি? নাকি অন্য নম্বর? গল্পে এই নম্বরটা ছিল ভুয়ো। খুঁজে দেখি, ওই নম্বরের বাড়ি সত্যিই নেই। ঐ গলি ধরে আরো হাঁটতে আমার বেশ মজা লাগে সেই বিকেলে।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৭:১৪619905
  • পরদিন সকালে ধুরন্ধরের সঙ্গে একই লিফটে করে ওপরে উঠলাম। সারভাররুমের সামনের সেই ছোট্ট করিডোরে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছে দেবাশিসদা ও সিদ্ধেশ্বর। আরিব্বাস! কী গলায় গলায় বন্ধুত্ব দুজনের। নিজের চোখকে বিশ্বাস করব না কানকে? চব্বিশ ঘন্টাও হয়নি, গতকাল সকালে দেবাশিসদা সম্বন্ধে সিদ্ধেশ্বর ফোনে যেভাবে কথা বলেছিল সেটা খুব একটা সম্মানজনক নয়। আর এখন? জাস্ট জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে বাকি রেখেছে। বা পায়ের ধুলোটুকু নেওয়া বাকি। দুজনে কত কথা বলে যাচ্ছে, তার মধ্যে সিদ্ধেশ্বর ভাবে গদোগদো হয়ে দেবাশিসদার দীর্ঘ এক্সপিরিয়েন্স ও গভীর নলেজের কথা বলছে বারবার। ধুরন্ধর আমার কফি খাবার ব্যবস্থা করে দিল। খুবই বাজে কফি। তবে চিন্তা নেই, দুপুরে আজ ওর কোম্পানীর খরচেই আমরা ভালো একটা লাঞ্চ খাবো।
    ধুরন্ধর গতকাল যাবে যাবে করেও বিকেলে অফিস থেকে চলে যায় নি। সন্ধ্যে আটটা অবধি কাজ করেছে। খুব যত্ন করে সমস্ত লিখেও রেখেছে একটা খাতায়। আমরা তার পেছনে দাঁড়িয়ে রইলাম, সে আবার কাজের মধ্যে ঢুকে গেল। আমরা তিনজনে তাকে ঘিরে দাঁড়ালেও আমি প্রায় কিছুই দেখতে পাচ্ছি না কী হচ্ছে স্ক্রীনে। দেবাশিসদা ও সিদ্ধেশ্বর যেভাবে দুদিক থেকে ঝুঁকে আছে যে আমার একমাত্র উপায় ধুরন্ধরের মাথার ওপর দিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখবার চেষ্টা করা। সেটায় সুবিধে করবার টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। আমি নিজে ছেলে হলে পারতাম পেছন থেকে ধুরন্ধরের পিঠের কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তার কাঁধের ওপর হাত রেখে বা না রেখে ঝুঁকে পড়ে দেখবার চেষ্টা করতে, কিন্তু এখন পারছি না সে হয়ত আমি মেয়ে বলেই। একটা দূরত্ব রাখতে হয়। ঠিক যেমন ওরা নিজেদের মধ্যে কয়েকটা জোক বলল ঐ কাজের মধ্যে ইন্টারেস্টিং কীসব পেয়ে, যে জোকগুলোর মধ্যে আদিরসের ছোঁয়া ছিল, আমি হেসে উঠতে পারলাম না। হাসি পেলেও হাসলাম না। এসব জোক শুনলে মেয়েরা হাসে না, না শোনার ভাণ করে অন্য কিছু করবার ভঙ্গী করে। এরকম আগেও দেখেছি। তাই ফ্যাক করে হেসে ফেলতে গিয়েও নিজেকে সামলাই। পুরো কাজটা হয়ে চলেছে আমাকে না দেখিয়ে। একদুবার বললাম যে আমি দেখতে পাচ্ছি না কিছু। তখন সিধু কি দেবাশিসদা একটু সরে গিয়ে বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ দ্যাখো না।
    তারপরেই ফের সরে গিয়ে ঢেকে দেয়। এরকম করলে আমি কাজ শিখব কীকরে? এদিকে আমাদের কোম্পানীর কত বড়ো বড়ো বানী, উই আর ইকুয়াল অপরচুনিটি এম্পলয়ার। কোথায় সেই ইকুয়াল অপরচুনিটি? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা ব্যাথা হয়ে গেল। না পারলাম ওদের আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে, না পারলাম কাজটা কেমন করে হচ্ছে সেটা দেখতে। একটা অতিরিক্ত মানুষ হয় নিজেকে। ওঘরে আমার থাকা বা না থাকায় কোনো পার্থক্য হয় না কারো। ওদেরো। আমারো।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২৩:০০619906
  • লাঞ্চের জন্য সবাই বেরিয়ে এসেছে ঘর থেকে। ধুরন্ধর অফিসের ভেতরে গেল, যদি ওদের ডিরেক্টর আমাদের সঙ্গে লাঞ্চ করতে আসে।
    না। ডিরেক্টরের পক্ষে আমাদের জয়েন করা সম্ভব হলো না। ওরা তিনজনে পুরোনো গল্পের রেশ টেনে এখনো কথা বলে যাচ্ছে। সম্ভবত এই আলোচনাটা শুরু হয়েছিল সার্ভাররুমে, যখন আমি আস্তে আস্তে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়ে অন্য কথা ভাবছিলাম, তারপরে ওঘর থেকে বেরিয়ে করিডোরের সেই জানলার সামনে দাঁড়িয়ে নীচের দিকে দেখছিলাম।
    কথা সবচেয়ে বেশি বলছে সিদ্ধেশ্বর। দেবাশিসদাও বলছে, তবে কম। ধুরন্ধর মোটামুটি চুপ। একটা দুটো কথা বলে, তবে সেই কথায় কেমন একটা আঞ্চলিক টান।একটু অন্যরকমের বাংলা বলে সে। দেবাশিসদার চেয়েও এ পাড়া ভালো চেনে সিধু। দমদমে থাকলে কী হবে, কোলকাতার ভালো ভালো খাবার জায়গা ওর সব জানা। ওরা তিনজন আগে আগে যায়, আমি পেছন পেছন ফলো করি। কিছুটা গিয়ে একটা বাড়ি বাড়ি মতো রেস্টুরেন্টে ঢোকা হয়। উঠোনের মত জায়গা। এখানে মোমো পাওয়া যায়। খালি টেবিল নেই, তবে আমরা তক্কে তক্কে থাকি, ঐ কোণে একটা টেবিলে খাওয়া দাওয়ার পাট প্রায় চুকে এসেছে। সেদিকেই এগোলাম সকলে। কিন্তু ধুরন্ধর কোথায়? এই তো এতক্ষণ আমাদের সঙ্গে ছিল, কোথায় গেল সে? টয়লেটে গেল নাকি?
    দেবাশিসদা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। আমিও বসলাম। সিদ্ধেশ্বর খুঁজতে গেল ধুরন্ধরকে। এমনও হতে পারে, যে সে টের পায় নি আমরা কখন ঢুকে গেছি এই জায়গাটায়, বা হয়ত সিগারেট কিনতে গেছে। কত কী হতে পারে। হুট করে চেনা কারো সঙ্গে দেখা হয়ে গেছে বাইরে, কোনো পুরোনো বন্ধু হয়ত। দেখা যাবে তারই সঙ্গে কথা বলছে বাইরে।
    দেবাশিসদা পলিথিনে মোড়া মেন্যুকার্ড টেনে নিয়ে পড়ে। নানান রকমের মোমোর বিবরণ ও দাম দেখতে দেখতে নিজেই বিড়বিড় করে কীসব বলে। লোকটার মাথায় ছিট আছে মনে হয়। আমি ভাবি ঠিক কতগুলো মোমো খেলে পেট ভরবে। লাস্ট টাইম গোটা পঁচিশ তিরিশ অনায়াসে খেয়েছি। কিন্তু এখানে তো দেখছি ছোট্টো ছোট্টো প্লেটে গোটা ছয়েক করে সার্ভ করছে। অত সফিসটিকেটেড পদ্ধতিতে মোমো খাওয়া পোষাবে না। কিন্তু কোলকাতার লোক মোমো খেতে শিখে ফেলল কবে থেকে?
    সিদ্ধেশ্বর ফিরে এসেছে একা। দেবাশিসদার দিকে তাকিয়ে বলল, চলুন, ধুরন্ধর এখানে খাবে না। ওর একটু প্রবলেম আছে।
    সেকি! কেন? কী হলো আবার?
    আঁতকে ওঠে দেবাশিসদা। সিদ্ধেশ্বর গলার স্বর নীচু করে বলে, আরে বাবা ও হচ্ছে উড়িষ্যার লোক, এসব পর্ক ফর্ক দেখে ঘাবড়ে গেছে। তবে চিকেন খায়, চাইনীজ রেস্টুরেন্টে খাবে বলল। এমনকি এও বলছে যে আপনারা খান আমি বাইরে আছি। কিন্তু সেভাবেতো হয় না। হয়ত ভয় পাচ্ছে যে এখানে কী বলতে কীসের মীট দিয়ে দেবে। চলুন, মোমো আরেকদিন খাওয়া হবে।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৬619907
  • এবার অ্যাবাউট টার্ণ করে উত্তরমুখো হাঁটা। এই লোকগুলো এত অদ্ভুত যে কোথায় খাবে, কী খাবে, কে কে কী কী খায় বা খায় না, সেসব না জেনেই একটা রেস্টুরেন্টের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এমনকি আমাকে একটিবারের জন্যেও জিগ্যেস করে নি যে আমি মোমো খাই কি না, বা চাইনীজ খাবো কি না, কোনো খাবারে অ্যালার্জি আছে কি না। তিন বছর ধরে এই শহরে এ সবই দেখে চলেছি বারবার। কেবল চাকরির জায়গাটা বদলায়। কেউ জানতে চায় না আমার মতামত। সে হয়ত আমি নরম হয়ে থাকি বলে। হয়ত এই কারণেই অফিসে কিছু মেয়ে দেখেছি যারা সবসময় গম্ভীর, কড়া মেজাজ, কেউ কথা বলতে এলে তার দিকে গম্ভীরভাবে তাকায়। হয়ত। অনেক কিছুই শেখা বাকি। আবার মাঝে মধ্যে ভাবি কী হবে এসব ফালতু শিখে।
    যাইহোক, কিছুটা হাঁটার পরে একেবারে চৌরঙ্গীর ওপরে পাওয়া গেল একটা চাইনীজ রেস্টুরেন্ট। একদম অথেন্টিক, সেখানে প্রচুর লাল ও সোনালী রঙের ডিজাইনওয়ালা পর্দা ওয়ালহ্যাংগিং এসমস্ত ছিল, ছিল ড্র্যাগনওয়ালা কারুকাজসমূহ।
    একটা টেবিলে সিধুর মুখোমুখি আমি, ধুরন্ধর সিধুর পাশে দেবাশিসদার মুখোমুখি। তারমানে দেবাশিসদার পাশে আমি। সিদ্ধেশ্বরের গল্প এখন নতুন টপিকে চলে গেছে। ওর বাবা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের উচ্চপদস্থ অফিসার, সেটাই নানানভাবে ঠারেঠোরে বোঝাচ্ছে। বছরে একবার নাকি দুবার পুরো ফ্যামিলি নিয়ে ফ্রি এয়ারট্র্যাভেলের সুবিধা ও সেই কারণেই হাজারে অসুবিধার ওপর গল্প ফেঁদে বসতেই আমাদের খাবারের অর্ডার নিতে ওয়েটর এসে গেল। এই কোম্পানীতে এই প্রথম কোলিগদের সঙ্গে বসে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ খাচ্ছি, সবাই উচ্চশিক্ষিত লোকজন, পরিবেশটাই ভদ্রভদ্র। এর আগেও বিবিধ কর্মস্থলে নানারকম লোকজনের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট ও বারের অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু আজকের পরিবেশ ইন্টেলেকচুয়ালময়। মিক্সড ফ্রায়েড রাইস এবং দুতিনরকমের চিকেন ও ফিশের ঝোলজাতীয় খাবার। ধুরন্ধরের জন্য যদিও ভেজিটেবল ফ্রায়েড রাইস, ঐ আমিষ ঝোল মাছ চিকেন ইত্যাদি খেতে তার আপত্তি নেই। ধুরন্ধর খাওয়াচ্ছে বলেই হয়তবা দেবাশিসদাএকবার বিয়ার নেবো নেবো করেও নিল না।
    ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের কর্মচারীদের ফ্যামিলিসহ ফ্রিটিকিটে ভ্রমণের অসুবিধের দিকগুলো জানতে আমরা উদ্গ্রীব হয়ে সিধুর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। সিধু অনেক পাঁয়তাড়া কষে আল্টিমেটলি যা জানালো সেটা হচ্ছে যে এসব টিকিট আগে থেকে বুক করা যায় না, সবার আগে পয়সা দিয়ে টিকিট কাটা যাত্রীরা সীট পাবে। ফ্লাইটে ফাঁকা সীট থাকলে তবেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব বলে সিধু হাত ধোবার নাম করে টয়লেটে চলে যেতেই দেবাশিসদা স্বগতোক্তি করল, সিদ্ধেশ্বর বহুক্ষণ ধরে ভাঁজ মারছে।
    "ভাঁজ মারা" শব্দবন্ধ আগে না শুনলেও অর্থ বুঝতে অসুবিধে হবার কিছু নেই। কিন্তু উড়িষ্যার ছেলে ধুরন্ধরের বাংলা ভোকাবুলারি অপেক্ষাকৃত কম রিচ্। তবু সে কিছু একটা আঁচ করে নেয়। দেবাশিসদা আমার দিকে ফিরে বলে, তুমি এত চুপচাপ কেন আজ? কথাটথা বলো।
    ব্যস, এবার আমায় আর পায় কে! বললাম, দেবাশিসদা আপনি কি নকশাল পার্টি করতেন?
    দেবাশিসদা বলল, হ্যাঁ, তা করেছি একসময়। কে বলল তোমাকে?
    অফিসেই শুনেছি। আচ্ছা আপনি কি মানুষ খুন করেছেন?
    এই শেষ প্রশ্নটার উত্তর শোনা হলনা। সিদ্ধেশ্বর ফিরে এসেছে। চেয়ারে বসতে বসতে সে দেবাশিসদার দিকে তাকিয়ে বলল, কী? একটা ড্রিংক্স ফিংস কিছু বলি? এরা কিন্তু খাবার বানাতে অনেকটা টাইম নেয়।
  • Ranjan Roy | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৫:০৬619908
  • ব্যাপক । কুমড়ো অভিজ্ঞতার খনি।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১০:২৩619909
  • দেবাশিসদা চোখ পিটপিট করে মুচকি মুচকি হেসে একবার নিজের রিস্টওয়াচ আরেকবার সিধুর চোখে চোখ রেখে লজ্জা লজ্জা করে বলল, না থাক। এরপরে আবার অফিস আছে। তাছাড়া অ্যালকোহল আমি বড়ো একটা খাই না।
    বিয়ারে আবার অ্যালকোহল কতটুকু?
    সিধু একটু চাপ দেয় দেবাশিসদাকে।
    না না, থাক। আজ থাক। তোমরা নাও না। নাও।
    হাতের ভঙ্গিমায় অনিচ্ছা প্রকাশ করে দেবাশিসদা। ফের ডাকা হয় ওয়েটারকে। কী কী বিয়ার আছে জানতে চাওয়া হয়। ধুরন্ধর বিয়ার খাবে না আগেই বলে দিয়েছে, আমি মেয়ে, দেবাশিসদাও অনিচ্ছুক, অতএব সিধুর জন্য খুব সম্ভবত একটা কল্যানী আসে। বাকিরা জল, কোক।
    আমি একটু টেনশনে পড়ে গেছি। ঐ লাস্ট কোশ্চেনটা তড়বড়িয়ে বলে ফেলেই মনে হয়েছে এরকম বলবার ফল ভালো না ও হতে পারে। এই কোম্পানীতে আমার তিন মাসও হয়নি। এখনো প্রোবেশন পিরিয়ড। তারপরে লোকজনের যা যা নমুনা দেখছি, দেবাশিসদা যদি রেগে টেগে যায়, তাহলে কী হবে কে জানে, চাকরি ফাকরি খেয়েও ফেলতে পারে, কিছুই অসম্ভব না। তারপরেই আবার ভাবলাম, ধূর, বহুৎ ভয়ডর হয়েছে, এভাবে বাঁচা যায় না।
    সিধু বিয়ার খাচ্ছে দেখে দেবাশিসদার কী যেন মনে পড়ে গেল, ওয়েটরকে ডেকে জানতে চাইল চাইনীজ বিয়ার আছে কি না।
    নেই।
    আমরা কৌতুহলী হই। চাইনীজ বিয়ার কেন? চাইনীজ ফুড কি চাইনীজ বিয়ার দিয়ে বেটার খেতে লাগে?
    সিধু বলে, আপনি তো চায়নায় ছিলেন অনেকদিন তাই না?
    আবার মুখখানা লাজুক মত হয়ে যায় দেবাশিসদার। স্লাইট নস্টালজিয়া মত ভাব। হাসি হাসি মুখে বলেন, ওরে বাবা সেসব বহু আগে। হ্যাঁ, থেকেছি কিছুদিন।
    ওখানে রোজ এরকম চাইনীজ ফুড খেতেন?
    এই প্রশ্ন ধুরন্ধরের। খাবার সার্ভড হয়ে গেছে।
    না না না না! ওখানে একদম অন্য রকম খাবার। ভাত, সুপ, সবজি টবজি, মাংস, মাছ, কিন্তু অন্যরকমের রান্না।
    চায়নার গল্প সহযোগে আমরা খেতে লাগলাম। প্রসঙ্গটা অন্যদিকে ঘুরে গেছে। হয়ত দেবাশিসদা ভুলেও গেছে কী জিগ্যেস করেছিলাম। আমি মোটামুটি একটু নিশ্চিন্ত। মাঝখানে একটু কাজের কথা হলো। খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, দেবাশিসদার হঠাৎ মাথায় খেয়াল চাপল। ওয়েটরকে ডেকে চপস্টিক চাইল। চপস্টিক এসে গেছে। দেবাশিসদা চপস্টিক দিয়ে খেয়ে দেখাবে আমাদের। কিন্তু পাতে তো কিছুই প্রায় পড়ে নেই। প্লেটের ওপরে সামান্য যা ভুক্তাবশেষ পড়ে রয়েছে সেগুলো চপস্টিকে ওঠে না, সুড়ুৎ করে পড়ে যায়। ধুরন্ধর মনোযোগ দিয়ে দেখছে ব্যাপারটা। কিন্তু সাকসেসফুলি কিছুই উঠছে না কাঠি দিয়ে। দেবাশিসদার রোখ চেপে গেছে। এভাবে এত সহজে হার স্বীকার করার স্টেজে ব্যাপারটা আর নেই। ওয়েটরকে ডাকা হলো।
    ক্যান ইউ ব্রিং সাম রাইস?
    ফ্রায়েড রাইস?
    নো নো। জাস্ট প্লেন রাইস।
    ওয়েটর চলে যাচ্ছিল।
    এইযে, এদিকে, লিসন্। পুট ইট ইন এ বোল।
    দেবাশিসদা হাত দিয়ে দেখিয়ে দেয় ব্যাপারটা কীরকম হবে।
    প্রায় মিনিটের মধ্যে প্লেন রাইস এসে গেল। এদিকে সিধুর মোবাইল বেজে উঠেছে, সিধু ফোন ধরে "হ্যালো দেবাশিসদা, ...", চেয়ার ছেড়ে উঠে রেস্টুরেন্টের বাইরে চলে যায় ফোনে কথা বলতে। বেশ বোঝা যায় ওটা "আমাদের দেবাশিসদা"র ফোন। এবার দেবাশিসদা দেখাল তার কেরামতি। ছোট্ট বোলের মধ্যেকার ভাত চপস্টিকের সাহায্যে উঠে আসতে লাগল। একেবারে বোল সাফ করে খেলো দেবাশিসদা। সাদা ভাত। নো ঝোল, নো তরকারি। শুধু ভাত। বলল, চায়নার ভাত খুব স্টিকি। তাতে চপস্টিকে করে তুলতে ঝামেলা কম। ফোনে কথা শেষ করে সিধু ফিরে এসেছে।
    ইশ্। তোমার তো দেখা হলো না।
    আপনার ভাত খাওয়া হয়ে গেছে এর মধ্যে?
    দেবাশিসদা মুচকি হাসল। আমরা তারিফ করলাম দেবাশিসদার খাওয়ার। কিন্তু সিধুও দেখতে চায়। ভাত শেষ।
    বিশ্বাস করছো না? দেখবে?
    আবার ডাকা হোলো ওয়েটরকে। আবার এক ছোটো বোল ভাত অর্ডার করল দেবাশিসদা। ওয়েটর কেসটা জানে। কোণায় দাঁড়িয়ে সব দেখেছে। মুহূর্তের মধ্যে সে এনে দেয় আরেকবাটি ভাত। দেবাশিসদা শুরু করে দেয় তার অঁকোর পারফরম্যান্স।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৪:৩৮619910
  • প্যান্টি
    -------
    সেবার পুজোয় পরপর দুদিন নবমী পড়েছিল এটা আমি জানতাম না। দুর্গাপুজো যে সমস্ত বাঙালীর একমাত্র বড়ো উৎসব, এই ধারণা বহুদিন হলো আস্তে আস্তে মুছে গেছে মনের ভেতর থেকে। যেটুকু পালন করি, তা কিছু পারিপার্শ্বিকের চাপ এবং কিছু পুরোনো স্মৃতিকে যত্নআত্তি করতে। তাই পুজোর কয়েক সপ্তাহ আগে অফিসের প্রোজেক্টের জন্য যখন পাঠিয়ে দিলো গুরগাঁওয়ে, বুঝেই গেছলাম যে পুজোয় আর কোলকাতা ফেরা হয়ে উঠবে না।
  • কুমড়োপটাশ | 198.155.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৪619911
  • এবারেও দিল্লি এসেছি ফ্লাইটে। সেখান থেকে কোম্পানীর গাড়িতে ডিএলেফ বলে একটা জায়গায় আমাদের ক্লায়েন্ট সাইট। এরা বানায় নানারকমের সফটড্রিংকস। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা আমার দারুণ প্রিয়। কোলা ড্রিংক আছে, অরেঞ্জ ফ্লেভার আছে, আছে মিনারাল ওয়াটার। তারপর দামি দামি ফ্রুটজুস আর পটেটো চিপস। কোলকাতা থেকেই বলে দিয়েছে যে ওখানে যখন কাজ করব, ওদের অফিসে এই সব ড্রিংকস ফ্রি। যত খুশি খাও, যতবার খুশি। খেতে খেতে পেট ভরে যাবে মুখ পচে যাবে, আর খেতে ইচ্ছে করবে না।
    এয়ারপোর্ট থেকে সোজা ক্লায়েন্ট সাইট, মানে আমাদের অফিস। বেশ সুন্দর বিল্ডিং। এলাকাটা তখনো তৈরী হচ্ছে। যেদিকেই চোখ যায় মিস্তিরি আর কামিন। অনেক বিল্ডিং তৈরী হবে। আপাতত মোটামুটি রুক্ষ্ম একটা জায়গায় অফিস বাড়িটা।
    আমাদের প্রোজেক্ট ম্যানেজার মনোজ। মনোজ দুবে। কোলকাতার ছেলে। খেলাধুলোয় ভালো ছিল, স্পোর্টস কোটায় পড়াশুনো করেছে। ওর বেস অফিস অবশ্য দিল্লি। আমাকে তার কেবিনে নিয়ে গেল সে। প্রথমে সৌজন্যমূলক দুটো বাক্য, জার্নি কেমন ছিল এবং এখানে ক্লায়েন্ট কোম্পানীর গেস্ট হাউসে আমাদের সকলের থাকার ব্যবস্থা ইত্যাদি বলেই কাজের কথায় চলে এলো সে।
    বাকি সব মডিউলের লোকজন আগেই এসে গেছে। প্রোজেক্টের এটা ফাইনাল ফেজ। বছরখানেক ধরে কাজ করে চলেছে এমন লোকজনও আছে। এসমস্ত বলবার পরে সে আমার কাছে আমার সিভি চাইল। ক্লায়েন্টের কাছে নাকি সিভি দেওয়াটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সিভিতো আমি সঙ্গে করে আনিনি। মনোজ চিন্তায় পড়ে গেল। সে বলছে আমি যেন মিনিট পনেরোর মধ্যে একটা সিভি টাইপ করে ফেলি। একটু ভেবে দেখলাম, একটা উপায় আছে। ইমেলে অ্যাটাচমেন্টে সিভি থাকে। বললাম, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস থাকলে ইমেল থেকে নামিয়ে দিতে পারব।
    একথা শুনে সে সন্দেহমাখা হাসিহাসি মুখে বলে, ওরে বাবা, ইমেলে সিভি! তুমি রেগুলার জব অ্যাপ্লিকেশন করছ নাকি?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন