এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কাজের নোকের গপ্পো

    sosen
    অন্যান্য | ২৪ মে ২০১৩ | ৯২৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sosen | 24.139.***.*** | ২৪ মে ২০১৩ ১২:৪২611821
  • ১।

    সে এক কোলকুঁজো বুড়ি। কি করে যে সে লোকের বাড়ি কাজ করত জানিনে। ছোট্টবেলার শ্যামনগরের সেই মামাবাড়িতে উনুন জ্বলত তিনখান, চোদ্দ পনেরো জন লোক খেত , খাঁ খাঁ উনোনে এইয়া বড় বড় হাঁড়ি বসত। না, আমার দিদা , অর্থাত দোদন তখন-ও তেমন বৃদ্ধা ছিলেননা, অথচ রান্নাঘরে থেকেই বোধহয় বুড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর অল্পবয়েসী মুখ বা ছবি কিছুই মনে পড়ে না। তিনটে উনানের একটাও কারোর হাতে ছাড়তে প্রস্তুত ছিলেননা তিনি। সকাল থেকে কারোর রুটি, কারোর লুচি, পাঁচ মেয়ে, দুই ছেলে, ভাগ্না, শাশুড়ি, স্বামী, নাতনি, আশ্রিত সকলের মেনুকার্ড ঠিক্কর্তে দিন যেত তাঁর। আর সেই সময়কার দোদনকে ভাবলেই দোদনকে ছাপিয়ে চোখের উপর ভেসে ওঠে উনুনের পাশে সাদা থান গায়ে জড়িয়ে বসে থাকা সেই কুঁজো বুড়ি।
    সে কিছুই কাজ করত না আর। করতেও পারত না। কুঁজো শরীর নিয়ে সারাদিন বসেই থাকত। আর দোদন, নিজের অক্ষম শাশুড়িকে গাল দিয়ে ভূত ভাগিয়ে দিলেও কেন কে জানে সেই বুড়ির উপরে ভারী দয়াশীল ছিলেন। কেন, তা বুঝতে পারিনা, আজ-ও।
    আমার দেখা প্রথম "কাজের লোক" সেই বুড়ি। সে নাকি মায়েদের জন্ম থেকে বাসন মাজত মামাবাড়িতে। শেষ যখন আমি তাকে দেখি, তখন-ও সে বাসন মাজত। শুধু নিজের আর দোদনের দুটি থালা। অন্য কাজের লোক ছিল বাড়িতে। তবু তার অন্ন ছিল বাঁধা। একটা আসবাব কিংবা একটা ভুতুড়ে ছায়ার মত দোদনের সিঁদুর লেপা কপালের পাশেই তাকে মনে পড়ে। স্মৃতি আর কিছু বলেনা।
    আজকাল দোদনের থান জড়ানো হালকা পুলকা শরীর দেখলে বড় তার কথা মনে পড়ে। তার মুখখানি শুধু কি অদ্ভুতভাবে স্মৃতিতে অটুট।
  • Ishani | 233.239.***.*** | ২৪ মে ২০১৩ ১৭:৫৯611822
  • লালবাতির নীলপরী
    …………………………

    ব্যাঙ্গালোরে যখন প্রবাসজীবন শুরু করি , এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল. বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসার সাজিয়ে বসেছিলাম...অভ্যেস , যে কাজের একটি মেয়ে ছাড়া চলবে না...তাই একটি অল্পবয়েসী মেয়ে এলো আমার বাড়িতে. সকালে এসে কাজকর্ম করে দেবে..বিকেলের পর আসতে পারবে না. অগত্যা ! নাম লছমী. যদিও দক্ষিণী , হিন্দী বোঝে ,ওইটুকুই উপরি পাওনা . মেয়েটি শ্যামা , তন্বী , হাস্যমুখী, কপালে সিঁদুর , দুটি সন্তান...পাঁচ আর তিন.যখন আমার কাছে কাজে থাকবে, বাচ্চারা পাড়ার নার্সারী স্কুলে যায়. বা:, চমত্কার ব্যবস্থা. হাসিমুখে কাজ করে, আমিও খুশি.

    এক প্রতিবেশিনী এলেন আলাপ করতে. লছমীকে দেখে উশখুশ উশখুশ.খানিক বাদে আমাকে বললেন, "একে কাজে রেখেছেন? একে তো আমরা চিনি. এই দিনেরবেলা আপনার কাছে কাজ করছে বটে, কিন্তু নির্ঘাত আপনাকে বলেছে বিকেলে আসবে না..তা তো বলবেই..সন্ধের পর মুখে রং মেখে গলিতে দাঁড়ায় যে !"

    ভদ্রমহিলা চলে যাবার পর লছমীকে ডাকলাম. ও বোধ হয় অনুমান করেছিল, আমি কী জানতে চাইছি .আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সটান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, "যা শুনলে দিদি, সব সত্যি.তবে যেটা জানো না, তা হলো ,আমার বর দুটো বাচ্চাকে আমার কাছে ফেলে রেখে অন্য মেয়ে নিয়ে সংসার পেতেছে . আমি দিনের বেলা তোমার কাছে থাকি, নইলে তো দিনেরবেলাতেও রেহাই পেতাম না গো ! বাচ্চাদুটোর খিদে আছে, জামাকাপড়ের দরকার, দুটি আবার মেয়ে..লেখাপড়া শেখাবার চেষ্টা করছি..যাতে আমার মতো নির্বিচারে ঘরে লোক ঢোকাতে না হয়.এবার তোমার যা বলার বল. "

    ও চোখ নামাচ্ছিল না.আমি চোখ নামিয়ে নিয়েছিলাম.শুধু বলেছিলাম, " খুব বেশি তো পারব না, তোকে বাড়তি কিছু টাকা দেব..বাচ্চাদের স্কুলের মাইনে দিবি ওটা থেকে..আর...সেটা হিসেব করে একটা দুটো পুরুষ কম নিবি, কারণ তোকে তো এই শরীরটা ভাঙিয়ে আরও কিছু দিন চালাতে হবে !”

    সেইমতো বেশ ২/৩ বছর. তারপর আমি চলে আসি অন্য পাড়ায়.অতদূরে এসে লছমী কাজ করতে পারত না. ওকে ছেড়েই দিতে হয়.তবে আমি যখন বাড়ি বদলাই, সেই প্রবল ব্যস্ততার সময় ক' টা দিন ও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমার নতুন /পুরনো বাড়ি সামলিয়েছিল . ওই ক'টা দিন ও আমাকেই দিয়েছিল ... আর কাউকে নয় !

    আমি জানি না..মূল্যবোধ কাকে বলে. ওটা বড়ই গালভারী শব্দ.মনীষীদের জন্য, আদর্শবাদীদের জন্য.আমি জানি.."জীবনবোধ" বা "হৃদয়বোধ " কী আর কেন .

    আর শুধু তারই জন্য লছমী অপার কৃতজ্ঞতায় অসীম ভালোবাসায় আমার ঘরকন্না গুছিয়ে দেয় পরিপাটি করে, আর আমিও..ওই একই কারণে আর হয়ত তার সঙ্গে চুপিসারে মিশে থাকা ওর জীবনদর্শনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে আজও মাঝে মাঝেই আমাদের দুজনের ওই অসম সখীত্বের জন্য , ওই ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিতে হা হুতাশ করি..
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন