এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কোহিনূর

    Abhyu
    অন্যান্য | ২৪ মার্চ ২০১৩ | ১৩৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Abhyu | 34.158.***.*** | ২৪ মার্চ ২০১৩ ০৫:১৯600255
  • http://justnewsbd.com/details.php?jnewsbd=NjExMg==

    16 July 2012, Monday
    অভিশপ্ত কোহিনূর

    জাস্ট নিউজ -
    সাহাদত হোসেন খান

    কোহিনূর হলো বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও বৃহত্তম হীরা। তবে দামি হলেও এ মহামূল্যবান খনিজ সম্পদটি অভিশাপ হিসাবে পরিচিত। কোহিনূরকে সাম্রাজ্যের জাঁকজমক ও ক্ষমতার প্রমাণ হিসাবে গণ্য করা হতো। ভারতে মোগল শাসনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করতে গেলে যে কয়টি বস্তুর উল্লেখ করতে হয় কোহিনূর হলো তার অন্যতম। এ হীরা দ্বাদশ শতাব্দীতে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টার জেলার হিন্দু অধ্যুষিত সন্তোষনগর অঞ্চলে কল্লর গ্রামে কল্লুর খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। একইসঙ্গে কোহিনূরের জমজ দরিয়া-ই-নূর-ও উত্তোলন করা হয়। কোহিনূর ছিল একটি সামন্তক মনি। হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে, অর্জুনের বাহুতে এ হীরাটি শোভা পেতো। তবে অন্যরা ঐতিহাসিক ভাষ্যকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশের কর্ণূল ও অনন্তপুর জেলা হীরক খনির জন্য খ্যাতি লাভ করায় সেখানে এ ধরনের হীরা প্রাপ্তি অসম্ভব কিছু ছিল না। পরবর্তীতে মালবের রাজপরিবারের কাছে কয়েক প্রজন্ম হীরাটি সংরক্ষিত ছিল।

    আকৃতি
    কোহিনূর ডিম্বাকৃতির একটি শ্বেত হীরা। দেখতে অনেকটা ছোট মুরগির ডিমের মতো। বর্তমান ওজন ১০৫ ক্যারেট (২১.৬ গ্রাম) বা ৩১৯ রতি। প্রাথমিকভাবে ওজন ছিল ৭৫৬ ক্যারেট। শাহজাহানের রাজদরবারে কোহিনূরের ওজন পরীক্ষা করা হয়। ফরাসি রত্ম ব্যবসায়ী তাভারনিয়ার যাচাই করে দেখেন যে, তার ওজন ২৬৮ ক্যারেটের সামান্য বেশি। ভেনিসের হীরক কর্তনকারী হরটেনসিও জর্জিস প্রথম অদক্ষ হাতে এ হীরা কেটে ফেলেন। এত বড় সর্বনাশ করায় সম্রাট শাহজাহান তাকে ১০ হাজার রুপি জরিমানা করেন। কোহিনূর কখনো ক্রয় বিক্রয় করা হয়নি। এতে ৩৩ টি পার্শ্ব রয়েছে।

    ইতিহাস
    ১৭৩০ সালে ব্রাজিলে হীরা আবিষকৃত হওয়া নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের
    সন্তোষনগর ছিল হীরা উত্তোলনের একমাত্র জ্ঞাত উৎস। খনি থেকে উত্তোলনের পর এ মূল্যবান রত্মটি কাকাতিয়া রাজাদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। কাকাতিয়া রাজারা তাদের রাজধানী বারাঙ্গলে একটি মন্দিরে দেবীর চোখ হিসাবে হীরাটি বসিয়েছিলেন। বিভিন্ন সময় হীরাটি হিন্দু, পার্সী, মোগল, তুর্কি, আফগান, শিখ এবং ব্রিটিশ শাসকদের অধিকারে ছিল। স্যার ওলফের মতে, কোহিনূর মোগলদের অধিকারে ছিল ২১৩ বছর, আফগানদের অধিকারে ছিল ৬৬ বছর এবং ২০১১ সাল নাগাদ ব্রিটেনের অধিকারে ১২৭ বছর। আওরঙ্গজেবের পর এ হীরা ১৭০৭ সাল থেকে ১৭৩৯ সাল পর্যন্ত মোগল কোষাগারে সংরক্ষিত ছিল। তবে গোপনে মোহাম্মদ শাহ রঙ্গিলা গোপনে তার পাগড়িতে এ হীরা পরতেন। তবে সম্রাট শাহজাহানের ময়ুর সিংহাসনের সৌন্দর্য বর্ধন করায় ইতিহাসে এ হীরা সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করে। বহু হাত বদল ঘটার পর ১৮৭৭ সালে কোহিনূর ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে হস্তান্তরিত হয়। বর্তমানে কোহিনূর তার রাজমুকুটে শোভা পাচ্ছে। কোহিনূর নামকরণের আগে ঐতিহ্যগতভাবে হীরাটি মধ্যনায়ক বা রত্মের রাজা হিসাবে পরিচিত ছিল।
    ১৩২০ সালে দিল্লিতে খিলজি রাজবংশের শাসনের অবসান ঘটলে তুর্কি শাসক প্রথম গিয়াসউদ্দিন তুঘলক শাহ সিংহাসনে বসেন। ১৩২৩ সালে তিনি কাকাতিয়া রাজা প্রতাপ রুদ্রকে পরাজিত করার জন্য তার সেনাপতি উলুগ খানকে পাঠান। উলুগ খানের আক্রমণ প্রতিহত করা হয়। তবে তিনি এক মাস পর একটি বিরাট বাহিনী নিয়ে এগিয়ে যান। কাকাতিয়া রাজ্যের অপ্রস্তুত সৈন্যবাহিনী তার কাছে পরাজিত হয়। কাকাতিয়া রাজ্যের রাজধানী বারাঙ্গলে এক মাস পর্যন্ত লুণ্ঠন ও ধ্বংসলীলা চলতে থাকে। হাতি, ঘোড়া ও গাধা বোঝাই করে দিল্লিতে স্বর্ণ, হীরা, মনি মানিক্য ও হস্তীদন্ত পাঠানো হয়। দিল্লিতে প্রেরিত এসব মূল্যবান গণিমতের মধ্যে কোহিনূরও ছিল। তখন থেকে এ মূল্যবান রত্ম দিল্লির শাসকদের হাত বদল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সম্রাট বাবরের হস্তগত হয়।

    মোগল আমলে কোহিনূর
    পানিপথের যুদ্ধের পর বাবর ১৫২৬ সালের ৪ মে লোদি বংশের রাজধানী আগ্রায় পৌঁছলে পুত্র হুমায়ুন পরদিন তাকে এ হীরা উপহার দেন। সম্রাট বাবর হুমায়ুনের কাছে হীরাটি ফিরিয়ে দেন। গোয়ালিয়রের রাজপুত পরিবার থালাসহ হুমায়ুনকে হীরাটি উপহার দিয়েছিল। পানিপথের যুদ্ধে গোয়ালিয়রের রাজা নিহত হলে তার পরিবার আগ্রা দুর্গে আশ্রয় নেয়। গোয়ালিয়রের রাজপুত পরিবার মোগলদের নৃশংসতার কাহিনী শুনে আতঙ্কিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে মোগল সম্রাট বাবরের পুত্র হুমায়ুন তাদেরকে লুণ্ঠনকারীদের হাত থেকে রক্ষা করেন। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তারা তাকে এ হীরাটি উপহার দেয়।

    আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়, হুমায়ুন ইব্রাহিম লোদির প্রাসাদে প্রবেশ করে গোয়ালিয়রের রাজা বিক্রমাদিত্যের পরিবারের মহিলা সদস্যদের কাঁদতে দেখতে পান। ক্রন্দনরত মহিলাদের তিনি আশ্বাস দেন যে, প্রাপ্য মর্যাদা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে আচরণ করা হবে। হুমায়ুনের একথা শুনে ইব্রাহিম লোদির মা সেখান থেকে নীরবে বেরিয়ে যান এবং কম্পিত হাতে সোনালী একটি বাঙ নিয়ে সেখানে আবার প্রবেশ করেন। তিনি বাঙটি হুমায়ুনের হাতে তুলে দেন। হুমায়ুন বাঙটি খুলে একটি হীরা দেখতে পান। হীরাটি তিনি সযত্মে গ্রহণ করেন। তবে সব ঐতিহাসিক একমত যে, আগ্রা দুর্গে কোহিনূর পাওয়া গিয়েছিল এবং তখন তার ওজন ছিল ১৮৬ ক্যারেট। ১৬৬৫ সালে আওরঙ্গজেব ফরাসি পরিব্রাজক বার্নিয়ারকে হীরাটি দেখিয়েছিলেন।

    হুমায়ুনের হাতে অর্পণ করার সময় কোহিনূরের কোনো নাম ছিল না। ১৫২৬ সালে সম্রাট বাবর প্রথম হীরাটির কথা উল্লেখ করেন। তার হিসাব অনুযায়ী কোহিনূরের মূল্য ছিল তৎকালীন পৃথিবীর সব মানুষের আড়াই দিনের খাবারের মূল্যের সমান। তিনি তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ বাবরনামায় উল্লেখ করেন, ১২৯৪ সালে হীরাটির মালিক ছিলেন মালবের এক অজ্ঞাতনামা রাজা। চতুর্দশ শতাব্দীতে সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজি মালব রাজপরিবারের কাছ থেকে হীরাটি কেড়ে নেন। তবে সম্রাট বাবর কোন সূত্রের ভিত্তিতে এ বর্ণনা দিয়েছিলেন তা অজ্ঞাত। তিনি সম্ভবত তার সময়ে প্রচলিত জনশ্রুতির ভিত্তিতে এ তথ্য পরিবেশন করেন। তিনি মালবের রাজাকে বারাঙ্গলের রাজার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। সম্রাট বাবর রত্মটিকে তার বর্তমান নামে আখ্যায়িত করেননি। প্রাথমিকভাবে বাবরের হীরা নামে পরিচিত এ মূল্যবান পাথর নিয়ে সামান্য বিতর্ক সত্ত্বেও মনে হচ্ছে এ রত্মটি ছিল পরবর্তীকালের কোহিনূর। বাবর ও হুমায়ুন তাদের আত্মজীবনীতে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বাবরের হীরার জন্ম বৃত্তান্ত উল্লেখ করেন। বাবর দাবি করেছেন, হুমায়ুন তাকে যে হীরাটি উপহার দিয়েছিলেন তা ছিল আলাউদ্দিন খিলজি আনীত সেই হীরা। তবে কোনো কোনো সূত্র দাবি করছে, বাবরের উল্লেখিত হীরাটি কোহিনূর নয়, দরিয়া-ই-নূর।
    দিল্লি থেকে গোয়ালিয়রে কিভাবে হীরাটি গেল তা স্পষ্ট নয়। গোয়ালিয়রের কাঁচবাহা রাজাদের কাছে হীরাটি ছিল এবং তোমার (ঞড়সধৎ) রাজবংশ উত্তরাধিকার সূত্রে তা লাভ করে। সর্বশেষ তোমার মানসিং দিল্লির সুলতান সিকান্দার লোদির সঙ্গে সন্ধি করেন এবং সন্ধি সূত্রে তিনি দিল্লি সালতানাতের করদ রাজায় পরিণত হন। লোদি বংশের পরবর্তী শাসক হিসাবে মোগলরা কোহিনূরের মালিকানা লাভ করে। হুমায়ুন জীবনে ভাগ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন। পারস্যে আশ্রয় গ্রহণের সময় তিনি হীরাটি সঙ্গে করে নিয়ে যান। একবার তিনি তা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলেন। হুমায়ুন তার পকেটে মূল্যবান হীরা ও রুবি বহন করতেন। একদিন অজু করার সময় অন্যমনস্কভাবে তিনি তার পুঁটলি হারিয়ে ফেলেন। জওহর ছিল তার ব্যক্তিগত সেবক। জওহর পুঁটলি পেয়ে তার কাছে ফিরিয়ে দেন। তারপর হুমায়ুন আরো কয়েকটি রত্মসহ তা পারস্য সম্রাট শাহ তাহমাস্পকে উপহার দেন। হীরক ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পুনরায় সেই হীরাটি ভারতে আসে। শাহ তাহমাস্প আহমদনগরের সুলতান বোরহান নিজাম শাহকে তা উপহার দেন। কোনো একসময় হীরাটি গোলকুন্ডার উজির ও হীরক ব্যবসায়ী মীর জুমলার অধিকারে আসে। ১৬৫৬ সালে মীর জুমলা সপক্ষত্যাগ করলে তিনি তা সম্রাট শাহজাহানকে উপহার দেন। শাহজাহান হীরাটি তার ময়ুর সিংহাসনে ব্যবহার করেন। তার পুত্র আওরঙ্গজেব তাকে আগ্রা দুর্গে বন্দি করেন। শোনা যায় যে, সম্রাট আওরঙ্গজেব এ দুর্গের জানালায় এমনভাবে কোহিনূর বসিয়েছিলেন যাতে শাহজাহান তার প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে তাজমহল দেখতে পারেন। একসময় আওরঙ্গজেব তার রাজধানী লাহোরে কোহিনূর নিয়ে যান এবং তার ব্যক্তিগত বাদশাহী মসজিদে তা স্থাপন করেন। ১৭৩৯ সালে নাদির শাহের লুণ্ঠন নাগাদ কোহিনূর সেখানে ছিল।

    ভারতের বাইরে পাচার
    নাদির শাহ দিল্লি ও আগ্রা লুণ্ঠন করেন এবং ময়ুর সিংহাসনসহ কোহিনূর পারস্যে নিয়ে যান। দাক্ষিণাত্যের আহমদনগর, গোলকুন্ডা ও বিজাপুরের শাসকগণ পারস্য সম্রাটকে তাদের ধর্মীয় নেতা হিসাবে গণ্য করতেন। আহমদনগরের নিজাম শাহী রাজবংশের শাসক মোহাম্মদ শাহ রঙ্গিলা ছিলেন তাদের অন্যতম। নাদির শাহর কাছে ময়ুর সিংহাসন অর্পণ করার সময় মোহাম্মদ শাহ তার পাগড়ির ভেতর কোহিনূর লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোহাম্মদ শাহর হেরেমের এক সদস্য নাদির শাহকে কোহিনূর লুকিয়ে রাখার অবস্থান জানিয়ে দেয়। ঘটনা শুনে নাদির শাহ একটি পরিকল্পনা আঁটেন। মোহাম্মদ শাহের সিংহাসন পুনরুদ্ধার উদযাপনে তিনি একটি বিশাল ভোজের আয়োজন করেন। ভোজের সময় তিনি বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের নিদর্শন স্বরূপ পাগড়ি বদলের প্রস্তাব দেন। মোহাম্মদ শাহ বিস্মিত হন। কিন্তু তার করার কিছু ছিল না। বিনা বাক্য ব্যয়ে তিনি পাগড়ি বদল করেন। নাদির শাহ পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় তার একান্ত কক্ষে প্রবেশ করেন। তখন ছিল রাত। পাগড়ি খুলে তিনি বলে উঠেন, কোহিনূর! কোহিনূর শব্দটি ফারসি। তার অর্থ আলোর পাহাড়। নাদির শাহ আৎকে উঠে যে শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন তাই হীরাটির বর্তমান নামে রূপান্তরিত হয়। ১৭৩৯ সালের আগে কোহিনূর নামটির কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। কোহিনূরের মূল্য সম্পর্কে কিংবদন্তীতে বলা হয়েছে, নাদির শাহর জনৈক অনুচর বলেছিল, যদি কোনো বলবান ব্যক্তি ৫টি পাথর হাতে নিয়ে একটি উত্তর দিকে, একটি দক্ষিণ দিকে, একটি পূর্ব দিকে, একটি পশ্চিম দিকে এবং শেষটি আকাশে ছুঁড়ে মারে তাহলে মাঝে যে ফাঁকা জায়গা হবে তাকে যতখানি স্বর্ণ ও মনি মানিক্য দিয়ে বোঝাই করা যাবে কোহিনূরের মূল্য হবে তার সমান।

    ১৭৪৭ সালে নাদির শাহর হত্যাকান্ডের পর কোহিনূর আফগানিস্তানের বাদশাহ আহমেদ শাহ আবদালির হাতে পড়ে। ১৮৩০ সালে আফগানিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত শাসক শাহ শূজা কোহিনূর নিয়ে পালাতে সক্ষম হন। পরে তিনি লাহোরে এসে পৌঁছান। তিনি হীরাটি পাঞ্জাবের শিখ মহারাজা রনজিৎ সিংয়ের কাছে অর্পণ করেন। বিনিময়ে রনজিৎ সিং শাহ শূজাকে আফগানিস্তানের সিংহাসন পুনরুদ্ধার করে দেন। ১৮৩৯ সালে শিখ রাজা রনজিৎ সিং মৃত্যু শয্যায় শায়িত হয়ে উড়িষ্যার জগন্নাথ মন্দিরের জন্য কোহিনূর উইল করে দান করে যান। কিন্তু মৃত্যুর পর ব্রিটিশ সরকার তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করেনি। ১৮৪৯ সালের ২৯ মার্চ ব্রিটিশরা লাহোর দুর্গে তাদের পতাকা উত্তোলন করে। পাঞ্জাবকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অংশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। লাহোর চুক্তির শর্তে বলা হয়েছিল, কোহিনূর নামে পরিচিত যে রত্ম মহারাজা রনজিৎ সিং শাহ শূজা-উল-মুলকের কাছ থেকে লাভ করেছিলেন, লাহোরের মহারাজাকে তা ইংল্যান্ডের রানীর কাছে সমর্পণ করতে হবে।

    ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি এ সন্ধি অনুমোদন করেছিলেন। অন্য যে কারো চেয়ে ব্রিটিশদের জন্য কোহিনূর লাভে তার অবদান বেশি। লর্ড ডালহৌসি সারাজীবন এ হীরার প্রতি গভীর আগ্রহ প্রদর্শন করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবহারের জন্য ভারতের সম্পদ কুক্ষিগত করা ছিল তার মূল কাজ। ব্রিটিশদের অনেকে অন্যায়ভাবে তার কোহিনূর দখলের কার্যকলাপের সমালোচনা করেন। কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, হীরাটি উপহার হিসাবে রানীকে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু ডালহৌসি তাকে গণিমতের মাল ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেননি। ১৮৪৯ সালের আগস্টে তিনি তার বন্ধু জর্জ কুপারের কাছে প্রেরিত এক পত্রে লিখেছিলেন:

    আপনি বলছেন, রানীর কাছে মহারাজাকে কোহিনূর সমর্পণে বাধ্য করায় আমার কাজকর্মে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আদালত বিব্রত। অন্যদিকে আমি রানীর জন্য সবকিছু বাজেয়াপ্ত না করায় ডেইলি নিউজ এবং আমার লর্ড এলেনবরো (১৮৪১-৪৪ সালে ভারতে নিযুক্ত গভর্নর জেনারেল) আমার প্রতি রুষ্ট। আমার উদ্দেশ্য হলো এই যে, উপহার হিসাবে কোহিনূর রানীকে প্রদান করার পরিবর্তে সার্বভৌম বিজয়ীর মাধ্যমে বিজিত রাজার হাত দিয়ে সরাসরি রানীর কাছে সমর্পণ করা তার জন্য বেশি সম্মানজনক। রানীর অধীনস্থ যে কোনো জয়েন্ট স্টক কোম্পানির জন্য এটাই শোভনীয়। অতএব আদালতকে একথা বিবেচনা করতে হবে।

    ডালহৌসি ব্যবস্থা করেন যে, ১৮৫০ সালে মহারাজা রনজিৎ সিংয়ের কিশোর উত্তরাধিকারী দালিপ সিং রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে হীরাটি সমর্পণ করবেন। দালিপ সিং ছিলেন রনজিৎ সিং ও তার পঞ্চম স্ত্রী মহারানী জিন্দা কাউরের কনিষ্ঠ পুত্র। তার বয়স ছিল তখন মাত্র ১৩ বছর। দালিপ সিংকে ডা. লগিনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা হয়। লগিন ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একজন সার্জন। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কয়েক বছর কাজ করেন। তিনি ছিলেন স্কটল্যান্ডের অর্কনি আইল্যান্ডের স্ট্রর্মনেসের লোক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে লগিনের পরিবার স্ট্রর্মনেসে তার হোটেল পরিচালনা করতো। রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে হীরাটি সমর্পণ করার জন্য ডা. লগিন, তার স্ত্রী লীনা ও দালিপ সিং ইংল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করেন।

    যথাসময়ে পাঞ্জাবের গভর্নর স্যার হেনরি লরেন্স ডা. লগিনের কাছ থেকে কোহিনূর লাভ করেন। লগিনকে রাজকীয় কোষাগারসহ লাহোর দুর্গের গভর্নর হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। লগিনের হিসাব অনুযায়ী ১৮৪৯ সালের ৭ ডিসেম্বর কোহিনূর বাদে রাজকীয় কোষাগারের মূল্য ছিল ১০ লাখ পাউন্ড। তিনি স্থানীয় ব্রিটিশ রেসিডেন্ট এইচ.এম লরেন্স, সি. সি. ম্যানসেল, এইচ. এম. লরেন্সের ছোট ভাই জন লরেন্স এবং ভারত সচিব স্যার হেনরি এলিয়টের উপস্থিতিতে এ হিসাব দিয়েছিলেন। জন লরেন্স এবং সি. সি. ম্যানসেলের তত্ত্বাবধানে বোম্বাই থেকে যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস মিডীয়া যোগে কঠোর প্রহরাধীনে হীরাটি ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। জাহাজে লোহার একটি বাঙে হীরাটি রাখা হয়। অন্য কেউ দূরে থাক, জাহাজের ক্যাপ্টেন কমান্ডার লকইয়ার পর্যন্ত কোহিনূর বহন করার কথা জানতেন না।

    যাত্রা পথে জাহাজটি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। মরিশাসে পৌঁছলে জাহাজে কলেরা দেখা দেয়। স্থানীয়রা বন্দর ত্যাগ করার দাবি জানায়। এমনকি তারা গোলা ছুঁড়ে জাহাজ ধ্বংস করে দেয়ার জন্য মরিশাসের গভর্নরের প্রতি আহ্বান জানায়। শিগগির একটি ঝড় জাহাজে আঘাত হানে। অন্তত ১২ ঘণ্টা ঝড় বয়ে যায়। লরেন্সের পরিবার দাবি করে যে, সমুদ্র যাত্রাকালে লন্ড্রিতে পাঠানোর সময় জন লরেন্স তার কোটের পকেটে কোহিনূর রেখেছিলেন। একজন স্টুয়ার্ড তা পেয়ে তৎক্ষণাৎ ফেরত দেয়।

    ব্রিটেনে এসে পৌঁছানোর পর প্লিমাউথ বন্দরে যাত্রী ও মেইল নামানো হয়। তবে পোর্টসমাউথ বন্দরে পৌঁছানো নাগাদ কোহিনূর ছিল জাহাজে। পোর্টসমাউথ থেকে লরেন্স ও ম্যানসেল হীরাটি লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া হাউজে নিয়ে যান এবং ইস্ট ইন্ডিয়া হাউজের চেয়ারম্যান ও ডেপুটি চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করেন। ১৮৫০ সালের ৩ জুলাই ইংরেজ-শিখ যুদ্ধ নিষ্পত্তির চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রানীর কাছে কোহিনূর হন্তান্তর করা হয়। সেদিন ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া হাউজ প্রতিষ্ঠার ২৫০তম বার্ষিকী। ১৮৫৪ সালে ডা. লগিন রানী ভিক্টোরিয়ার কাছ থেকে স্যার উপাধি লাভ করেন। সেদিন থেকে তিনি স্যার জন স্পেন্সার লগিন হিসাবে পরিচিত হন।

    কোহিনূরের অভিশাপ
    বিশ্বাস করা হয় যে, কোহিনূরের সঙ্গে অভিশাপের একটি রহস্যময় সম্পর্ক রয়েছে। তবে মহিলারা ব্যবহার করলে অভিশাপ তাদের স্পর্শ করে না। যেসব পুরুষ কোহিনূরের মালিক ছিলেন তারা হয়তো তাদের সিংহাসন হারিয়েছেন অথবা তাদের ওপর দৈব দুর্বিপাক নেমে এসেছে। রানী ভিক্টোরিয়া হলেন একমাত্র ব্রিটিশ রানী যিনি এ হীরা পরিধান করেছেন। রানী ভিক্টোরিয়া মহিলা হওয়ায় ব্রিটিশরা আতঙ্কিত হয়নি। কিন্তু ভবিষ্যৎকালের জন্য তারা আতঙ্কিত হয়ে উঠে। এ আতঙ্ক থেকে তখনি আইন করা হয় যে, ব্রিটিশ রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী পুরুষ হলে এ রত্ম ব্যবহার করবেন তার সহধর্মিনী। কোহিনূরের মালিক পুরুষ হলে তার অভিশাপের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে ১৩০৬ সালে একটি হিন্দু গ্রন্থে বলা হয়, যে পুরুষ এ হীরার মালিক হবেন তিনি হবেন পৃথিবীর অধিশ্বর। তবে তাকে সব দুর্ভাগ্য বরণ করতে হবে। একমাত্র দেবতা অথবা মহিলারা অভিশাপ থেকে অব্যাহতি পাবেন।
    ঘটনা প্রবাহের প্রতি লক্ষ্য করলে এ সতর্ক বাণীকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। এ মহামূল্যবান রত্ম যিনিই ধরেছেন তারই যেন হাত পুড়ে গেছে। কাকাতিয়া রাজা প্রতাপ রুদ্র গিয়াসউদ্দিন তুঘলক শাহর সেনাপতি উলুগ খানের কাছে পরাজিত হয়ে সিংহাসন হারান। আলাউদ্দিন খিলজি গোদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গোয়ালিয়রের রাজা মানসিং তোমার যুদ্ধে পরাজিত হন। সম্রাট হুমায়ুন শের শাহ সূরির কাছে সিংহাসন হারিয়ে পারস্যে পালিয়ে যান। দুর্ঘটনাক্রমে গোলাবারুদ বিস্ফোরণে শের শাহ মৃত্যুমুখে পতিত হন। আওরঙ্গজেব পিতা সম্রাট শাহজাহানকে আগ্রা দুর্গে বন্দি করেন। বন্দিশালায় শাহজাহান চিৎকার করতেন। ছেলের পিতা হওয়ার জন্য নিজেকে অভিশম্পাত করতেন। ১৭৪৭ সালের ১৯ জুন পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ঘুমন্ত অবস্থায় গুপ্তঘাতকের হাতে প্রাণ হারান। ১৮৪২ সালের ৫ এপ্রিল শূজাউদৌলা আফগানিস্তানের শাসক শাহ শূজাকে হত্যা করেন। শিখ মহারাজা রনজিৎ সিং ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাজ্য ও সিংহাসন সবই হারান। সম্রাট বাবর কোহিনূর গ্রহণ না করে দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা পান। হুমায়ুনের পুত্র সম্রাট আকবর কখনো কোহিনূর ব্যবহার করেননি। জাহাঙ্গীর ও আওরঙ্গজেবও নয়। এসব ব্যতিক্রমের কোনো ব্যাখ্যা নেই।

    মহাপ্রদর্শনী
    ১৮৫১ সালের পহেলা মে থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত লন্ডনের হাইড পার্কে একটি বিশাল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হলে ব্রিটিশ জনগণ কোহিনূর দেখার সুযোগ পেয়েছিল। এ প্রদর্শনী সম্পর্কে দ্য টাইমসের একজন সাংবাদিক লিখেছিলেন, নিঃসন্দেহে বর্তমানে কোহিনূর হলো এ প্রদর্শনীর মধ্যমনি। এ হীরাকে কেন্দ্র করে একটি রহস্যময় আগ্রহ তৈরি হওয়ায় পর্যাপ্ত সতর্কামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। হীরাটি দেখার জন্য বহু ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। দর্শকদের আগ্রহ উপচে পড়ছে। সুরক্ষিত পার্কের প্রবেশ দ্বারে মোতায়েন পুলিশ অসহিষ্ণু জনতার ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। গতকাল অন্তত কয়েক শত দম্পতি কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষমান ছিল। কিন্তু তারা হীরাটি দেখার সুযোগ পায়নি। হয়তো ক্রটিপূর্ণভাবে হীরাটি কেটে ফেলার জন্য অথবা যথাস্থানে বাতি স্থাপন না করার জন্য কিংবা রত্মটি সরানো সম্ভব না হওয়ার জন্য এমন হয়ে থাকতে পারে। কোনো একটি নির্দিষ্ট কোণ থেকে দেখলে বিচ্ছুরিত ঔজ্জ্বল্যের খানিকটা চোখে পড়ে।

    রাজকীয় রত্ম
    এ হীরার আকার নিয়ে ব্রিটিশরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তাই ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে ১৮৫২ সালে রানী ভিক্টোরিয়ার স্বামী যুবরাজ আলবার্টের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে এবং ইংরেজ খনিজ বিজ্ঞানী জেমস টেন্যান্টের কারিগরি দিকনির্দেশনায় আমস্টারডামে এ হীরা ১৮৬/১৬ ক্যারেট (৩৭.২১ গ্রাম) থেকে বর্তমানের ১০৫.৬০২ ক্যারেটে (২১.৬১ গ্রাম) রূপান্তরিত করা হয়। কাটতে সময় লেগেছিল ৩৮দিন। হীরাটি ছোট করার জন্য আলবার্ট ব্যাপক পরামর্শ করেন, অক্লান্ত পরিশ্রম করেন এবং ৮ হাজার পাউন্ড ব্যয় করেন। ছোট করায় হীরাটির ওজন ৪২ শতাংশ হ্রাস পেলেও আলবার্ট অসন্তুষ্ট হননি। তারপর হীরাটি একটি কারুকাজ করা টায়রার ওপর বসানো হয়। রানী ভিক্টোরিয়া এ টায়রা মাঝে মাঝে পরিধান করতেন। লন্ডন টাওয়ারের পরিবর্তে কোহিনূর উইন্ডসর ক্যাসলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। রানী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর তা রানী আলেঙান্ড্রার আনকোরা হীরার মুকুটে বসানো হয়। তার স্বামী সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ডের অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি এ মুকুট পরেন। রানী আলেঙান্ড্রা হলেন প্রথম যিনি তার মুকুটে এ হীরা পরেছিলেন। তারপর পরেছিলেন রানী মেরি ও সম্রাট পঞ্চম জর্জের স্ত্রী রানী এলিজাবেথ।

    কোহিনূরের মালিকানা দাবি
    ভারত কোহিনূরের মালিকানা দাবি করে বলছে, ব্রিটিশরা অন্যায়ভাবে হীরাটি অধিগ্রহণ করেছিল। তাই ভারতের কাছে হীরাটি ফিরিয়ে দেয়া উচিত। ১৯৯৭ সালে ভারতের ৫০তম স্বাধীনতা বার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠানে যোগদানে ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরকালে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্যসহ বহু ভারতীয় কোহিনূর ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। কেন্দ্রীয় সরকারের মতো উড়িষ্যার কংগ্রেস সরকারও হীরাটি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানায়। উড়িষ্যার রাজ্য সরকার ব্রিটিশ সরকারকে অবহিত করে যে, হীরাটির মালিক হলেন ভগবান জগন্নাথ। পাঞ্জাবের রনজিৎ সিংয়ের পরিবারও কোহিনূরের মালিকানা দাবি করছে। রনজিৎ সিংয়ের কোষাধ্যক্ষ বলেছেন, হীরাটি তাদের এস্টেটের সম্পত্তি। ১৯৭৬ সালে পাকিস্তানের মরহুম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুটো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জেমস কালাহানের কাছে প্রেরিত এক চিঠিতে হীরাটি তার দেশের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। ব্রিটিশ সরকার তার দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও জানিয়ে দেয় যে, তারা কোনো দেশের কাছে কোহিনূর হস্তান্তর করবে না। ইরানের একটি প্রভাবশালী দৈনিক হীরাটি তেহরানের কাছে ফিরিয়ে দিতে ব্রিটেনের প্রতি অনুরোধ জানায়।

    কিংবদন্তী
    কোহিনূরের জন্ম বৃত্তান্ত অস্পষ্ট। কোনো কোনো সূত্রের মতে, প্রায় ৫ হাজার বছর আগে কোহিনূর পাওয়া গিয়েছিল এবং সামন্তক নামে কয়েকটি প্রাচীন সংস্কৃত গ্রন্থে তার উল্লেখ রয়েছে। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়েছে, সূর্য দেবতা তার শিষ্য ছত্রজিৎকে হীরাটি প্রদান করেছিলেন। কিন্তু ছোট ভাই পারসাই তার কাছ থেকে হীরাটি কেড়ে নেয়। একটি সিংহ পারসাইকে হত্যা করলে ছত্রজিতের কন্যা জাম্বাবতী তার দেহ থেকে হীরাটি কেড়ে নিয়ে কৃষ্ণের হাতে তুলে দেন। ছত্রজিৎ তার ভাই পারসাইকে হত্যা এবং পারসাইয়ের কাছ থেকে কোহিনূর চুরি করার জন্য কৃষ্ণকে অভিযুক্ত করেন। কৃষ্ণ তার সুনাম পুনরুদ্ধারে জাম্বাবানের সঙ্গে তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত হন এবং ছত্রজিতের কাছে হীরাটি ফিরিয়ে দেন। লজ্জায় ছত্রজিৎ কোহিনূরসহ কন্যা সত্যভামাকে তার কাছে অর্পণ করেন। কৃষ্ণ সত্যভামাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেন। সত্যভামাকে বিয়ে করায় তিনি যৌতুক হিসাবে ছত্রজিতের কাছ থেকে পুনরায় কোহিনূর লাভ করেন। কৃষ্ণ সূর্য দেবতার কাছে হীরাটি ফিরিয়ে দেন। ইতিহাসের বিভিন্ন বাঁক পেরিয়ে পাঞ্জাবের রাজা পুরুর কাছে হীরাটি পৌঁছে। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালে তিনি গ্রীক সম্রাট আলেঙান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করলেও নিজের কাছে কোহিনূর রেখে দেন। মৌর্য যুগে চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন কোহিনূরের মালিক। তারপর তার নাতি সম্রাট অশোক মালিকানা লাভ করেন। পরবর্তীতে মালিক হন উজ্জয়িনীর রাজা সমপ্রতি।
  • Abhyu | 34.158.***.*** | ২৪ মার্চ ২০১৩ ০৫:২১600256
  • http://www.anandabazar.com/24rabipro1.html
    রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ১
    কোহ-ই-নুর হিরে যার কাছে গেছে, তারই ঝঞ্ঝাট হয়েছে।
    অরুণাভ পাত্র
  • Abhyu | 34.158.***.*** | ২৪ মার্চ ২০১৩ ০৫:৪৩600257
  • এবার http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE

    সত্যভামা শ্রীকৃষ্ণের ১৬১০৮ মহিষীর একতম। ইনি বৃষ্ণিবংশীয় সত্রাজিতের কন্যা। একবার সূর্যদেব দ্বারকার বিশিষ্ট নাগরিক বৃষ্ণি বংশীয় সত্রাজিতের ভ্রাতা প্রসেনকে স্যমন্তক মণি উপহার প্রদান করেন। তখন সত্রাজিৎ সকল দ্বারকাবাসীগণকে সেই মণি দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান। দ্বারকাধীশ শ্রীকৃষ্ণও সেই মণির কথা শ্রবণ করে কৌতুহলী হয়ে সেই মণি দর্শন করতে সত্রাজিতের গৃহে আগমন করেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যখন সত্রাজিতের কাছে স্যমন্তক মণি দেখতে চাইলেন তখন সত্রাজিৎ তাঁকে সন্দেহ করলেন এবং ভাবলেন যে বাসুদেব তার মণিটির কথা শুনে প্রলুব্ধ হয়েছেন এবং সেটি অপহরণ করার অসদুদ্দেশ্য নিয়েই মণিটি দেখতে চেয়েছেন। তিনি স্যমন্তক মণিটি তাঁকে দেখালেন বটে কিন্তু মনে মনে শ্রীকৃষ্ণের নামে কলঙ্ক রটানোর পরিকল্পনা করলেন। সত্রাজিতের বাড়ি থেকে প্রস্থানকালে সত্রাজিতের একমাত্র কন্যা সত্যভামার সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের সাক্ষাৎ ঘটে। সত্যভামাকে দর্শনমাত্র বহুরমণীভোগী শ্রীকৃষ্ণ পরম প্রীত হন এবং তার প্রতি প্রণয়াসক্ত হয়ে তাকে কামনা করেন। সত্রাজিৎতনয়াও শ্রীকৃষ্ণের বলদৃপ্ত, তেজোদীপ্ত অপূর্বমনোহরকান্তি দেখে এবং তাঁকে সুচতুর বাকপটুত্বের সঙ্গে রসালাপ করতে দেখে বিমুগ্ধ হন ও তাঁকে পতিরূপে স্বীকার করেন। এরপর গোপিনীবল্লভ শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বাড়ি থেকে প্রস্থান করা মাত্রই তিনি তার ভাই প্রসেনকে স্যমন্তক মণিটি দিয়ে তাকে আত্মগোপন করে থাকতে বললেন। এরপর তিনি সমগ্র দ্বারকায় প্রচার করে দিলেন যে স্যমন্তক মনিটি অপহৃত হয়েছে এবং দ্বারকেশ্বর দেবকীনন্দন মণিটি দেখে চলে যাওয়ার পরেই মণিটি অদৃশ্য হয়েছে। এইকথা শ্রবণমাত্র শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ঘটনার প্রকৃত সত্যতানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হলেন। বহু অন্বেষণের পর তিনি এক দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ভল্লুকরাজ জাম্ববানের কাছে স্যমন্তক মণির সন্ধান পেলেন। শ্রীকৃষ্ণ মণিটি তার কাছে প্রার্থনা করলে জাম্ববান তা দিতে অস্বীকৃত হলেন। জাম্ববান বললেন যে যদি যাদবশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ তাকে মল্লযুদ্ধে পরাস্ত করতে পারেন তবেই তিনি মণিটি তাঁকে দিয়ে দেবেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ সেই শর্তে সম্মত হলেন এবং বললেন যে যদি জাম্ববান মল্লযুদ্ধে তাঁর কাছে পরাভব স্বীকার করেন তবে স্যমন্তক মণির সাথে সাথে জাম্ববানের পরমাসুন্দরী কন্যা জাম্ববতীকেও স্বয়ং বাসুদেবের হস্তে সমর্পণ করতে হবে। যথানিয়মে মল্লযুদ্ধ আরম্ভ হল। জাম্ববান বীর হলেও মহাবলবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে অতি সহজেই পরাভূত হলেন। এরপর স্যমন্তক মণি এবং জাম্ববতীকে নিয়ে যদুকুলপতি দ্বারকায় প্রত্যাগমন করলেন। দ্বারকার পৌরপরিষদে উপস্থিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণ যখন সকল কথা বিবৃত করলেন তখন দ্বারকার সকল বিশিষ্ট নাগরিক এই রায় দিলেন যে এই মণি এখন শ্রীকৃষ্ণের, সত্রাজিতের এর উপর আর কোন অধিকার নেই। তখন সত্রাজিৎ তার ভুল স্বীকার করলেন এবং বললেন যে প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ তিনি তার একমাত্র কন্যা সত্যভামাকে শ্রীকৃষ্ণের হাতে প্রদান করবেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামাকে গ্রহণ করলেও স্যমন্তক মণি গ্রহণ করেননি।[১]

    সত্যভামার গর্ভাধান করে শ্রীকৃষ্ণ দশটি পুত্রসন্তান লাভ করেন।
  • শঙ্খ | 118.35.***.*** | ২৪ মার্চ ২০১৩ ২০:২৭600258
  • বাহ দারুন তো!

    কোহিনূরের চক্করে 'ক্স' গুলো সব 'ঙ' হয়ে গেছে। ঃ-))
  • pi | 78.48.***.*** | ২৪ মার্চ ২০১৩ ২০:৪০600259
  • আবাপ র লেখাটা কেমন জোর করে হাইপোথেসিসে ফিট করানো মনে হল। মানে, ১০০ বছর পরে কিছু হলে তার জন্যেও কোহিনূর , তিন দশক পরে কিছু হলেও তাও, সবেতেই নন্দ ঘোষ !
  • | 24.97.***.*** | ২৪ মার্চ ২০১৩ ২০:৫৯600260
  • আচ্ছা কেটে বাদ দেওয়া অংশগুলো থেকে কি অন্য কোনও হীরে বের করা হয়েছিল?
  • Blank | 69.93.***.*** | ২৪ মার্চ ২০১৩ ২১:০১600261
  • পৃথিবীর বৃহত্তম হীরে Cullinan I । বাজারের হিসেবে এটাই সবচেয়ে দামী। কোহিনুর যেদিন বাজারে বিক্রী হবে সেদিন জানা যাবে যে সেটার দাম কত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন