এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষেঃ পুরনো সিল্ক রুট।

    I
    অন্যান্য | ২৮ মার্চ ২০১৩ | ২৯২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • I | 24.99.***.*** | ২৫ আগস্ট ২০১৩ ২২:২৮599893
  • ফিরে আসছি। আবার সেই খারাপ রাস্তার স্ট্রেচ, বরফের রাজ্য। কিন্তু এবার চারিদিক ঘিরে মেঘাতুপাহাড়, চারিদিকে বরফের বিপন্ন বিকেল। এক পেট খিদে, এক গাদা ক্লান্তি। নতুন দেখার উত্তেজনা মিইয়ে গেছে। বরং একটা কী হয় কী ভাব। ড্রাইভার সাহেব তো খেলেনও না তেমন কিছু। একটু যেন চিন্তিত মুখ। বরফ পড়বে সারা আকাশ জুড়ে? ধস্‌ নামবে নাকি?
    কথা-গান-গল্প-আড্ডা থেমে গেছে। সবাই কেমন ঝিমন্ত, এ ওর ঘাড়ে ঢুলে পড়ছে। শুধু কার স্টিরিওতে গান যথারীতি বেজে চলেছে। এখানে আসার পথে, মানে শিলিগুড়ি থেকে এখন অবধি যখনই গাড়ি চড়েছি, কার স্টিরিও অবধারিত বেজেছে। অল্প ক'টা গান ঘুরে-ফিরে বাজে, শুনতে শুনতে গানগুলো প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে। ক্লান্তিকরও। হাম বড়ি দূর চলে আয়ে হেঁ, চলতে চলতে/ আও অব লওট চলে শাম ঢলতে ঢলতে।

    আকাশ আরো গোমড়া হচ্ছে, ভিসিবিলিটি কমছে ক্রমেই। ফগলাইট জ্বলে উঠেছে। হঠাৎ করে চমকে দিয়ে সামনে থেকে কী একটা পাখি রাস্তার ওপর দিয়ে দৌড়ে গেল । মোনাল ! ঐ আবছায়াতেও পুরুষ মোনালটির রঙীন পালক ( ডানার ফ্লুরোসেন্ট ময়ূরকণ্ঠী নীল) মুহূর্তের জন্য ঝলসে উঠে মিলিয়ে গেল। ক্যামেরা বের করতে না করতেই সে হাওয়া। ঐ অবস্থায়, ওরকম আবহাওয়ায় গাড়ি দাঁড় করাতে বলাও পাপ। মোনাল, যদিও দুর্লভ, এই এলাকায় মাঝে মধ্যে দেখা দিয়ে যায়। সকালবেলায় সেই আশা নিয়েই বেরিয়েছিলাম। আলো ঝলমলে আকাশ দেখে আশা বেড়েও গিয়েছিল। কিন্তু আলোয় তো তার দেখা পেলাম না। সে এল আবছায়াতে। বিকেলের দিকেই হয়তো ওরা জঙ্গল ছেড়ে রাস্তায় চড়তে বেরোয়। ভুটানের রাস্তাতেও তিন -চারটে মোনাল দেখেছিলাম। কিন্তু ঐ বিকেলের মিয়োনো আলোতে। তারা ক্ষিপ্রপদ, ক্যামেরা নিয়ে বেরোনো মাত্র পাশের ঝোপে ঢুকে গেছিল। এলাম আর পটাপট ছবি তুলে নিলাম-এমন ভাবে তো আর বার্ড ফটোগ্রাফি হয় না!

    মেঘ-কুয়াশা আসছে -যাচ্ছে। পাইন বনের মধ্য দিয়ে, পাথরের স্তূপ, পাহাড়িয়া ঘর-বাড়ির ওপর দিয়ে। আশপাশ দিয়ে।একেক বাঁকে একটু হাল্কা হচ্ছে, পরের বাঁকেই আবার ঘন চাপ চাপ মেঘ ঘিরে আসছে নিরাশা আর অনিশ্চয়ের মত। খানিকক্ষণ পরেই ড্রাইভারসাহেবের ওয়েদার ফোরকাস্ট সত্যি করে বরফ পড়া শুরু হল। পেঁজা তুলোর মত নয়, শিলের মত নয়, ছোট-বড় নকুলদানার মত বরফ। রাস্তার আশপাশ ঢেকে যাচ্ছে দ্রুত, ছাই-ছাই সাদাটে বরফে। ভিজিবিলিটি প্রায় শূন্য। রাস্তা খুব পিছল। বুক চেপে বসে থাকা। আশপাশ জনমানবহীন, বৃক্ষহীন, পাথর, পাথর। সাদাটে বরফে ঢাকা। আকাশে কোনো আলো নেই। বস্তুতঃ আকাশই নেই কোথাও। পৃথিবীও নেই এখন আর আমাদের। শুধু গাড়ির সামনের একটুখানি হলদেটে অবাস্তব আলোয় দৃশ্যমান একটুকরো জমিনখণ্ড। যেন পৃথিবীর বাইরে কোথাও চলে এসেছি আমরা। কিম্বা মেরুপ্রান্তরে। এক্ষুনি শুরু হবে অরোরা বোরিওলিস কিম্বা অস্ট্রেলিসের ভুতুড়ে নাচ। শুধু আমরা সে দৃশ্য, সে জঙ্গমতা দেখতে পাবো না। হাম বড়ি দূর চলে আয়ে হেঁ, চলতে চলতে।

    এক সময় এসে পৌঁছলাম নাথাং ভ্যালিতে। একটু যেন অস্বস্তি কাটে মানুষের বসতির দেখা পেয়ে। বরফে ঢাকা একটি পাহাড়ী জনপদ। এবার সমতলের স্বস্তি, এবার পাশে পাশে খাদের সঙ্কুলতা নেই। মানুষজন ছাতা মাথায় হাঁটাচলা করছেন ঐ ওয়েদারের মধ্যেই, আদতে হয়তো ওটাই ওঁদের স্বাভাবিক ওয়েদার। বাড়ির চিমনি দিয়ে ধোঁয়া উঠছে, রান্নাঘর থেকে স্যুপ/মোমোর স্বাস্থ্যকর গন্ধ আসছে। নাকি সেসব আমার বানিয়ে -তোলা ঘ্রাণের আনন্দ, মস্তিষ্কের ঘ্রাণকেন্দ্র তাকে প্রোজেক্ট করছে মস্তিষ্কেরই খুশির সেন্টারে?
    এই নাথাং ভ্যালিতে বেশ কিছু হোম স্টে রয়েছে। সেসব ভর্তি বলেই মনে হল। কাঠের বাড়ির দোতলার ব্যালকনি থেকে ঝুব্বুসঝাব্বুস শীতপোষাক পরা বাঙালী বরফ দেখে খুশিয়াল হয়ে কলকল করছে, চা খাচ্ছে, ছবি তুলছে। দেখেই নাথাংয়ে থাকতে ইচ্ছে করল।

    প্রায় পৌঁছে গেছি জুলুকে। আর এক কিলোমিটার মত রাস্তা । মনে খুব সাধ এই আব্ছায়ার ছবি তুলবো। সকলেই জেগে উঠছে আড়মোড়া ভেঙ্গে। ঘুমিয়েই পেরিয়ে গেল ঝুঁকির রাস্তা, নো টেনশন, নো বুক ঢিপঢিপ। আমি শুধু একা জেগে, ড্রাইভারের সঙ্গে। বোধ হয় সুমনও, এখন আর মনে পড়ছে না।

    জুলুক পৌঁছে যদিও হতাশ। এখানে আর সেই বিশ্রুত মেঘ-কুয়াশার আনাগোনা নেই। বরফ নেই। বরং এক ফ্যাটফেটে গেরুয়া-ইয়েলো অকারে মেশানো আলো, ম্লান যদিও, আকাশ জুড়ে রাজ করছে। এর কোনো ছবি হয় না। গাড়ি এসে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়তে শুরু করল। পরিমরি করে ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই আকাশ-ভাঙা বৃষ্টি। এবার এই বৃষ্টি চলবে রোজ কয়ামত অবধি।
  • ঐশিক | 24.14.***.*** | ২৬ আগস্ট ২০১৩ ১১:৩৪599894
  • ইন্দোদা দারুন!!!!!!
    আবার ভিড় করে ফিরে আসে খুব চেনা পাহাড়ের গন্ধ
  • Blank | 180.153.***.*** | ২৬ আগস্ট ২০১৩ ১৬:৪৫599895
  • রাবাংলার দিকটাতে মোনাল দেখা যায় এখনো। যদি মৈনাম পিকে উঠতে পারো আর একরাত কাটাতে পারো, তো খুব ই ভালো। মোনাল দেখার সুযোগ মিলে যাবে জঙ্গলে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন