এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • যেখানেতে অবাধ ছুটি

    DB
    অন্যান্য | ০৬ ডিসেম্বর ২০১২ | ১২৬৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • DB | 125.187.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:২১583137
  • সেই এপ্রিল-মে মাস থেকে আমাদের জেমস সায়েব আমকে সমানে তাতাচ্ছিলেন দুজনে একসঙ্গে ”কোথাও বেড়াতে যাবার” জন্য ।আমার মন এমনিতেই উড়ু উড়ু করে সর্বদা , এবার তার সঙ্গে যোগ হল জেমসের মন্ত্রণা।আমায় আর পায় কে ! তবে, গুপি-বাঘার মত ভুতের রাজার উপহার , যাদু মন্ত্রপূত জুতজোড়,তো নেই আমার বা জেমসের যে তা পায়ে গলিয়ে, হাতে হাতে তালি বাজান মাত্র পছন্দ সই জায়গায় একলহমায় পোঁউছে যাব।কোথাও যেতে ইচ্ছে হলে সেই ভারতীয় রেলই ভরসা আমাদের।সেই সঙ্গে আবার খাজাঞ্চিখানার খবর ও রাখতে হয় – ল্যাঠা বড় কম নয়।
    শলাপরামর্শ করে স্থির করা হল আমরা কলকাতা থেকে সোজা জবলপুরে গিয়ে নামব। সেখানে মার্বল রকস সহ অন্যান্য দর্শনীয় জায়্গাগুলি দেখে যাব খাজুরাহোর মন্দির দেখতে।আয়োজন বলতে বাকি রইল শুধু রেলের টিকিট কাটা।তাতে বিশেষ বেগ পেতে হলনা ইন্টারনেটের দৌলতে, কিন্তু ঝাম্লেআ বাধল যাত্রারম্ভের মুখেই।বাড়ি থেকে লোটাকম্বল কাঁধে নিয়ে বেরিয়েই পড়লাম রাস্তার জ্যামে।২৫শে নভেম্বর মহরম, তার মিছিলের পথ সুগম করার্তে বড় বড় রাস্তাগুলি দিয়ে সাধারণের যাতায়াতে বেড়ি পরান ছাড়া গতি নেই।অতয়েব আমার মত পাতি জনতার পক্ষে গাড়িতে বসে বসে উৎকন্ঠায় ঘামা ছাড়া কিইবা আর করার থাকে।তবু তো কপাল ভালো যে আমি ও জেমস উভয়েই ট্রেন ছেড়ে যাবার আগেই হাওড়ায় পোঁউছে গিয়েছিলাম! সাবেক হাওড়া স্টেশনের ক্যাব রোডের পাশের অনুসন্ধান খিড়কির সামনে দাঁড়িয়ে ফোন করলাম জেমসকে - ”আমি হাওড়ায় পোঁউছে গেছি, আপনি এখন কোথায়?” জেমস জবাব দিলেন ”আমি বড় ঘড়ির তলায়… “
    শক্তি পুঞ্জ এক্সপ্রেঅস ট্রেনটার সম্পর্কে আমার একটু খুঁতখুঁতনি ছিল।গাড়িটা এমন এক লাইনে চলে যাতে ধানবাদ পেরিয়ে যাবার পর জবলপুরে পোঁউছনর আগে পর্যন্ত কোথাও ভদ্র গোছের খাবার পাওয়া যায়না। তবে মনমত সঙ্গী পেলে খাওয়াদাওয়ার মত তুচ্ছ ব্যপারে মাথা ঘামায় কোন আহাম্ম্ক।লিলুয়া পার হয়েছি কি হইনি জেমস তাঁর ঝুলি থেকে বের করলেন এক ব্যাগ মুড়ি , এক প্যাকেট চানাচুর আর লাল রঙের একডাব্বা।একটু খাটো গলায় জানিয়ে রাখলেন তাঁর ঝোলায় পথশ্রান্তিহরা সঞ্জীবনী সুধাও আছে – ইচ্ছ হলে সেটিও নিবেদন করতে পারেন।কিন্তু প্রকাশ্যে দ্রব্যটি সেবন করার ঔচিত্য নিয়ে একেবারে নিশংসয় হতে না পেরে তখনকার মত বাসনটাকে হিমঘরে পাঠিয়ে গলগল্পে মেতে উঠলাম দুজনেই।
    এই ট্রেনে প্যন্ট্রি কার নেই বাইরেও খাবার পাবার আশা ছিলনা – তবু কোথায় যেন এক ফেরিওয়ালার কাছ থেকে অতি অখাদ্য নিরামিষ বিরিয়ানি কিনে তাই দিয়ে পেটের জ্বালা মিটিয়ে শুয়ে পড়লাম।ঘুম ভাঙল একটি বালিকার ডাকে। ”চাচাজী ,আপকা সর থোড়া সা উস তরফ কর লিজিয়ে।ব্যাগ সে মুঝে কুছ সামান নিকালনা হ্যায়” ঘুম চোখ খুলে দেখি আমদের মাথার কাছে দুটো বার্থের মাঝখানে ডাঁই করে রাখা এক গাদা ব্যাগ।মেয়েটি তার মধ্যে থেকে একটি ব্যাগ টেনে হিঁচড়ে বের করার চেষ্টা করছে।মহা বিরক্তিতে খিঁচিয়ে উঠলাম এতগুলো ব্যগ ডাঁই করে রাখার জন্য।ও মা! মেয়েটি আমার খিঁচুনিতে এতটুকু বিচলিত না হয়েই বলে উঠলো ”আপকে ভলাই কে লিয়েই তো বোল রহি হুঁ।কঁহি আপকো চোট উট না লগ যায়” মেয়েটির কথা বলার ভঙ্গীতে এমন একটা কর্তৃত্বের সুর ছিল যে অল্প সময়ের জন্য হলেও আমাকে নির্বাক করে দিল।অপরদিকে দেখি জেমস ও সসব্যস্ত হয়ে উঠেছেন- তাঁর বিছানায় মেয়েটি একটা নোংরা ব্যাগ তুলে দিয়েছে !
    ভালো করে চোখ মেলে দেখি আমাদের সংরক্ষিত নিচের দুটি বার্থ বাদ দিয়ে ওপরের চার্টি বার্থে তেনারা ছানাপোনা নিয়ে উঠেছেন জনা দশেক মহিলা – কাটনি অবধি গিয়ে সেখান থেকে জয়পুর গামি ট্রেনে চেপে জয়পুরে যাবেন কোন আত্মীয়ের বিয়ে বাড়ি।ঘড়িতে দেখলাম ভোর চারটে বাজে ।নিরুপায় হয়ে ঘুমের আশা জলাঞ্জলি দিয়ে দলটির কান্ড কারখানা দেখতে লাগলাম শুয়ে শুয়ে।জেমস বোধ হয় একবার ” এই লড়কি …”বলে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন ,মেয়েটি মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠল ”মেরা নাম খুসবু।মুঝে খুসবু নামসে পুকারিয়ে দাদাজি ” জেমস বোধ হয় মেয়েটিকে ওদের ব্যাগগুলো একটু সরিয়ে নিতে বলতে চাইছিলেন।মেয়েটি অনুরোধ রক্ষা করে অন্য দিকে মন দিতে নিচু গলায় জেমস আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ” বাসু, এতো মেয়ে নয় – একেবারে ধানি লঙ্কা !
    ধানি লঙ্কাই বতে।তবে সে যে আবার ফোটা ফুলের মত নিজের চারপাশকে সুরভিত করে তুলতে পারে তার পরিচয় পেয়েছিলাম দিনের বেলা।
    ঘুমের দফা রফা আগেই হয়ে গিয়েছিল আমাদের – কামরার ভেতরের অন্ধকার একটু একটু করে ফিকে হয়ে আসছিল।ভোরের নরম আলোয় চোদ্দো পনেরো বছর বয়সী মেয়েটিকে দেখে ভারি ভালো লাগল। তীক্ষ্ণ নাক – তাতে ছোট্টো নাকচাবি , চোখ দুটি টানা টানা আর গোটা মুখে তার বালিকা সুলভ চপলতা মাখান।এককথায় সুন্দরী না হলেও তকে বেশ সুশ্রীই বল চলে ।সে তখন জেমস কে বিয়ে বাড়িতে পরার জন্য নতুন কেনা সাজ দেখাতে ব্যস্ত। আমি উঁকি দিয়ে পোষাকটা দেখার চেষ্টা করছি দেখে কপট রোষে
    আমার দিকে চোখ পাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে উঠলো -”আপকো নেহি দিখায়েঙ্গে”।
    আমার খিঁচুনির কথা মনে রেখেছে দেখে আমি হো হো করে হেসে উঠতেই কিছুটা লজ্জ পেয়েই যেন ”আচ্ছা দেখ লিজিয়ে” বলে আমার সামনেও মেলে ধরল তার নতুন ঝলমলে পোষাক খানা।আবার জানতেও চাইল কেমন হয়েছে পোষাকটা।ব্যাস - সন্ধি হয়ে গেল দুই দলে।জেমস তাঁর ঝুলি থেকে বের করলেন দেশ থেকে আনা মাখা সন্দেশ বাড়িয়ে দিলেন খুসবুর দিকে,তার সঙ্গের মাসি পিসিরাও বাদ গেলনা।কানে এলো খুসবুর মাসির গল-” এ খুসবু,উনকা দিয়া হুয়া খানা তো হম লে লিয়ে,উনসে পুছ হমারা খানা ও স্বীকার করেঙ্গে তো?” আমাদের সম্মতি পাওয়া মাত্র এক ছুতে অদৃশ্য হয়ে গেল খুসবু।কয়েক মিনিট পরেই দেখি সে ফিরে এসেচে একটা প্লেটে দুটো কালজামুন আর কিছু নিমকি সাজিয়ে”খেতেই হল সবটা – কারণ খুসবুর চোখকে ফাঁকি দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।
    খাবার দাবার বিনিময়ের পর এবার জেমস তাঁর ঝোলা থেকে বের করলেন একটি সুদৃশ্য কলম এবং স্নেহউপহার স্বরূপ তা দিলেনখুসবুকে। এখন আর তকে ধানি লঙ্ক বলে মনে হচ্ছেনা।আনন্দে তার চোখ মুখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল – জেমস কে উদ্দেশ্য করে বলল ”Thank youদাদাজিদাদাজি”।
    বস্তুত,কাটনিতে তারা নেমে যাওয়ার পর মনে হল কামরাটা যেন বড্ড খালি হয়ে গেল।
  • sosen | 111.62.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২০:১০583148
  • বা:!
  • কৃশানু | 213.147.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:৩৯583157
  • কি সুন্দর লেখা। আপনার সুদৃশ্য কলম চলতে থাকুক।
  • pi | 127.194.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:৪৫583158
  • ভাল লাগছে বাসুদা, চলুক !
  • pipi | 139.74.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:৫১583159
  • বাহ! পেলব আর মায়াময়!
  • Rit | 213.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২৩:০০583160
  • জেমস স্যরের সাথে পরের ট্রিপ টা আমার ।ঃ)
    ওড়িষ্যা। অবশ্য তার আগে হাওয়াই টা সেরে আসি।
  • গান্ধী | 213.***.*** | ০৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২৩:০১583161
  • অনেকদিন বাদে?? আপনার নিকটা চেনা চেনা লাগে

    শক্তিপুন্জ খুব বাজে ট্রেন। গোপ্পো এগোক
  • db | 125.187.***.*** | ০৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:৩২583162
  • গাড়ি চলেছে তো চলেইছে পথ যেন আর ফুরয়না।বিকেল পৌনে চরটে নাগাদ আমদের জবলপুর পৌঁছনর কথা, কিন্তু নির্ধারিত সময়ে পৌঁছন বোধ হয় এ লাইনের ট্রেনের দস্তুর নয়।স্থানীয় লোকজন যারা প্রায়শই যাতায়াত করেন এ পথে তাঁরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছেন রেলগাড়ির এই গদাই লস্করি চালে।তাই গাড়ির দুই এক ঘন্টা দেরিতে চলাটা তারা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননা।কাটনি থেকে ওঠা এক যাত্রীর কাছে জানতে চাইলাম গাড়ি কাটনিতে কত দেরিতে এসে পৌঁছেছে। তিনি পরম ঔদাসিন্যে জানালেই এই দেড় কি পৌনে দুঘন্টা মত লেট ছিল বোধহয়।আমার সামনের বার্থে বসা জেমস এর ভাব দেখে মনে হল তিনি যেন পালাতে পারলে বাঁচেন।হাওড়া স্টেশনে গাড়িতে চড়ার আগে একটা শারদীয়া পত্রিকা কিনেছিলেন প্রানপনে সেই পত্রিকাটায় মননিবেশ করার চেষ্টা করছেন।অথচ আমি জানি ঐপত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলি এমন কিছু নয় যা পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে রাখবে মানুষকে।বেশ কয়েক বছর হল নামি পর্তিকাগুলোর শারদীয় সংখ্যাগুলির মান এত টাই নেমে গেছে যে ব্যক্তিগতভাবে আমার ওগুলি কেনা নিতান্তই অর্থের অপচয় বলেই মনে হয়।
    আমায় উসখুস করতে দেখে পত্রিকার পাতা থেকে মুখ তুলে জেমস কিছুটা স্বগতোক্তির মত করে বললেন - ”বুঝলেন বাসু, ঐ খুসবু মেয়েটি একদিন বড় হবে – স্কুলের গন্ডী পার হয়ে কলেজে যাবে – গ্রাজুয়েট হবে হয়ত বা তারপর বিয়ে করে সংসারী হবে। Kএ জানে আজ থেকে বেশ কয়েক বছর পরে হঠাৎ কোনদিন পুরন জিনিষপত্র ঘাঁটতে গিয়ে খুঁজে পাবে আমার উপহার দেওয়া কলমটা।তখন হয়ত আবার নতুউন করে মনে পড়বে এই ”>daadaajira<” কথা,এই ট্রেন জার্নির কথা!” জেমসের কন্ঠস্বরে এমন একটা কিছু ছিল যা আমাকে স্পর্ষ করল মনের গভীরে।এ এক নতুন অচেনা জেমস – অন্তত আমার চোখে।ভদ্রলোকের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়েছিল চ্যাটের হাল্ক কথার আসরে।ঠাট্টা ইয়ার্কি ফাজলামির আসরে জেমসের যে ছবি আমার মনে আঁকা ছিল তার সঙ্গে এই জেমস এর মিল পাওয়া দুস্কর।
    অবশেষে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামল ,গাড়ি পৌঁছল জবলপুর স্টেশনে আর আমরাও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।এর পর একটা পছন্দ সই মাথাগোঁজার জায়্গা চাই।একটা অটো চেপে দুইতিনটে হোটেল ঘুরে শেষ পর্যন্ত একটা হোটেল পাওয়া গেলো , যেটা আমাদের দুজনের কাছেই চলনসই বলে মনে হল।
    আন্থশালার ঠিকান মিলে যাবার পর মনে পড়ল আমরা সারাটাদিন কিছু খইনি ! খাওয়া প্রসঙ্গে জেমসের মনে পড়ল খাবার জলের বোতল কিনতে হবে।অন্যত্র একবোতল পানীয় জল বারোটাকায় মেলে – সেই জলই ট্রেনে জেমস কিনতে বাধ্য হয়েছেন পনেরোটাকায়।এতোটা ঠকতে তিনি মোটেই রাজি নন - ”শালার সব চোর বুঝেছেন বাসু, চলুন বাইরে কোন দোকান থেকে দু বোতল জল কিনে আনি।আমার আপত্তি হলনা কারণ আমার নেশার বস্তুটিও কিন্তে হত।নেমে এলাম একতলায় রিসেপশন ডেস্কের সামনে।যে প্রৌঢ ভদ্রলোক রিসেপশনের দাইত্বে ছিলেন তাঁর কাছে ঘরের চাবি জমা দিতে গিয়ে দেখি ভদ্রলোকের চোখে মুখে চিন্তার কালো ছায়।
    ”আপনারা হোটেল ছেড়ে দুরে কোথাও যাবেননা।শহরের অবস্থা ভালো নয়।মহরমের মিছিলকে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা ঝামেলা বেধ্হেছে আজ দুপুরে। একটা বিশেষ অঞ্চলে সাধারন লোক চলাচলের ওপরে বিধিনিষেধ বলবৎ করা হয়েছে দুপুর থেকে”।
    মনটা ভারি দমে গেল আমার।এত কষ্ট করে এত দূর থেকে এসে হোটেলের ঘরে বন্দী হয়ে থাকতে হবে আমাদের?প্রশ্ন করলাম ”কাল সকালে কি তা হলে আমরা বেড়াতে বেরতে পারবনা ?”
    রিসেপশনের ভদ্রলোক বিরসবদনে জানালেন” দেখুন কাল সকালে কি হয়।আর যদি কোন গন্দগোল না বাধে তাহলে যেতে পারবেন।যে অঞ্চলটায় ঝামেলা বেধেছে সেটা আপনাদের গন্তব্যের উল্টো দিকে।কিছুটা রিস্ক থাকবে।নিজেদের দায়িত্বে যেতেই পারেন আপনারা।”
    বুঝলাম ভদ্রলোককে আর প্রশ্ন করে লাভ নেই।জেমস ততক্ষণে জল কিন্তে বেরোনর পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।সিগারেট কেনার জন্য আমাকে বেরোতেই হল হোটেল ছেড়ে।কিন্তু রাস্তায় পা রাখা মাত্র অবিস্কার করলাম রস্তাঘাট অতি দ্রুত ফাঁকা হয়ে আসছে।দশ মিনিট আগে রাস্তায় যে পরিমান যান চলাচল করছিল এখন তার ভগ্নাংশ মাত্র চলছে। একে একে
    ঝাঁপ নামিয়ে দোকানদারেরা বাড়ি ফিরে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সামনে রাস্তা পার হয়ে উল্টো দিকের একটা দোকানে যাবার মৎঅলব ছিল আমার, পিছন থেকে জেমসের ডাক শুনে ফিরে তাকালাম।জেমস চেঁচিয়ে বললেন ”বাসুউউউউউউউউ শহরে কার্ফু জারি হয়েছে। এখনি ফিরে আসুন হোটেলে” হঠকারিতা করে লাভ নেই।আমকে ফিরতেই হল হোটেলে।আমি ঢোকা মাত্র হোটেলের মূল দরজাটি বন্ধ করে দিল হোটেল কর্মীরা।ভেতরে ভেতরে একটু চিন্তা যে আমার হচ্ছিলনা তা বলবনা,কিন্তু জেমস দেখলাম বেজায় ঘাবড়েছেন।বললেন মাথায় থাকুন ধুঁয়াধার আর ভেড়াঘাট হোটেল ছেড়ে আমি এক পাও আর নড়ছিনা।
    এ অর এক নতুন ফ্যাসাদ।জেমসকে যতই বোঝাই চিন্তা না করতে, কাল সকালে সব ঠিক হয়ে যাবে, আমরাও বেড়তে যেতে পারব।আর সব চেয়ে বড় কথা হল আমরা যে দিকে যাব সেদিকে তো আর কোন গোলমাল নেই।বললাম থ্রী ইডিওট্স সিনেমায় আমীর খাঁর মত মনে মনে বলতে থাকুন ”আল ইজ ওয়েল।দেখবেন কাল সকাল সত্যই সব ঠিক হয়ে গেছে।”কিন্তু জেমস বোঝার পাত্র নন।তাঁর এক কথা হোটেল ছেড়ে তিনি এক কদম ও নড়বেন না।কথায় বলে আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
    ইক্যমতে পৌঁছন যাচ্ছেনা দেখে তখনকার মত আলোচনটাকে মুলতুবি রেখে বললাম ”ছাড়ুন কাল সকালে কি হয় সকালেই দেখা যাবে। খন বার করুণ আপনার পথশ্রান্তিহরা সঞ্জীবনী সূধা।আজ রাতটা অন্তত শান্তিতে কাটুক।
  • DB | 125.187.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:৩৮583163
  • ঘুম ভেঙে গিয়েছিল অনেক আগেই ,তবু গড়িমসি করে বিছানাতেই শুয়ে শুয়ে উদ্গ্রীব কান পেতে রেখেছিলাম রাস্তায় – গাড়িঘোড়া চলাচলের আওয়াজ শোনার আশায়।রাত্রে যতক্ষণ না ঘুম এসেছে ততক্ষণ রাতের নীরবতা ভেদ করে মাঝে মাঝে কানে আসছিল পুলিশের গাড়ির হুটারএর শব্দ।আর ।খুব মনখারাপ লাগছিল – তবে কি বেড়াতে এসে শেষ পর্যন্ত পান্থশালার ঘরে আটকে থাকতে হবে ?
    নাহ।দুইএকটা ট্রাক বা বাসের হর্ণ যেন কানে আসছে!উৎসাহিত হয়ে উঠে পড়লাম বিছানা ছেড়ে।বাইরে বেরিয়ে সরেজমিনে দেখে আসতেই হবে অবস্থাটা।বেরতে যাচ্ছি , পিছন থেকে জেমসের ডাক কানে এলো-”বাসু বাইরে যাবেন? দাঁড়ান আমিও আসছি”।
    দুজনে বেরোলাম হোটেল ছেড়ে।হোটেলের ভেতর থেকে বেরন মাত্রই জবলপুর শর যেন আমাদের ”সুপ্রভাত মহোদয়” বলে স্বাগত জানাল।ভারি সুন্দর সকাল- গতরাতের আতঙ্কের চিহ্নমাত্র পেলামনা কোথাও।রাস্তাদিয়ে দুই এক জন সাইকেল আরোহী দিব্বি খোস মেজাজে চলেছে আপন আপন গন্তব্যে।কিছু অটোরিক্সাও দেখলাম চলছে ,হোটেলের ঠিক পাশেই একটা গলির মুখে দেখি কয়েকজন লোক ভোরের নরম রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে জটলা করছে।এগিয়ে গেলাম সেই দিকে।”অহো! একি দেখি ! গলির ভেতরে লোকগুলির জটলার ঠিক পেছনেই একটা ঠেলা গাড়িতে গ্যাসের চুলায় তৈরী হচ্ছে গরমা গরম চা ! বাঙালীর শরীর দাদা।ভোর বেলা ঘুম চোখ খুলেই এককাপ গরম চা না পেলে শরীরের ইঞ্জিন স্টার্টই নেয়না।ঠেলা গাড়িটা চোখে পড়া মাত্রই জেমস উৎসাহে উত্তেজনায় চেঁচিয়ে ওঠেন -”বাসুউউ চাআআআআ”।
    জেমসের উত্তেজনা একেবারে অহেতুক নয়।গত সন্ধ্যায় হোটেলের ঘরে ঢুকেই আমার অভ্যাস মত এক পট চায়ের অর্ডার দিয়েছিলাম।চল্লিশ না পঁয়্তাল্লিশ টাকায় পেয়েছিলাম দেড় কাপ মত অতি অখাদ্য চা।রাতের খাবারও তেমনি।জেমস তখনই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ” এ শালার হোটেলে আর কিচ্ছুটি খাবোনা”
    ”আপনি একটু দাঁড়ান।আমি রুম থেকে আমার কাপটা নিয়ে আসি” বলে জেমস এক চুতে চলে গলেন তাঁর কাপ আনতে।ইতিমধ্যেই আমি অবিস্কার করেছি পরিচ্ছন্নতা নিয়ে জেমসের একটু খুঁতখুঁতানি আছে –যা প্রায় সাবেক বাঙালী ঘরের বিধবাদের ছুঁতমার্গের সমতুল।কয়েক মিনিটের মধ্যেই জেমস ফিরে এলেন- হাতে একটা ঢাকনা দেওয়া প্লাস্টিকের কাপ। চা খাওয়া হল অনেকটা সময় ধরে অয়েস করে।আমার নজর ছিল পথের দিকে।লোক অর গড়ি চলাচল দেখে অনুমান করার চেষ্ট করছিলাম বেড়াতে বরনটা নিরাপদ হবে কিন।দেখলাম অদুরে একটি মোড়ে একদল পুলিশ তাদের বেড়া পেরিয়ে কোন যানবাহন ঢুকতে দিচ্ছেনা কিন্তু পথচারিদের যাতায়াতে কোন বাধা নেই।গলির মুখে দাঁড়িয়ে জটলা করা লোক গুলির কথপোকথন যে টুকু কানে আসছিল তাতে মনে হল পুলিশ ব্যারিকেড এর ওপারটা হল একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের এলাকা।সেখানে এক সঙ্গে অনেক লোকের প্রব্শ নিষিদ্ধ।শরের বাকি অংশে কোন গোলমাল নেই।অতয়েব আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই।
    সকাল নটার একটু পরেই গাড়ি এসে গেল আমাদের দুজনকে বেড়াতে নিয়ে যাবার জন্য। অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখেও গত সন্ধ্যায় আমি গাড়িটা বুক করে রেখেছিলাম,কারণ রিসেপশন থেকে আমাকে এই মর্মে আ্স্ত করা হয়েছিল যে শরে তেমন কোন গন্ডগোল থাকলে গাড়িওয়ালাই গাড়ি বারই করবেনা।ঝটপট তৈরী হয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুজনে।
    ভাঙাচোরা পথে প্রায় চার পাঁচ কিলোমীটার দুরে এসে গাড়ি থামল পিসান শিব মন্দিরের সামনে।গাড়ি থেকে নেমে সামনের সাজানো গেট পেরিয়ে আমরা মন্দির প্রাঙ্গনে ঢুকে কিছুটা হতাশই হলাম।কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা একটা সবুজ ঘাসের লন এর দূর প্রান্তে একটা বিশাল শিব ঠাকুরের ধ্যানমূর্তি বসান।একটি মাত্র কারণে মূর্তিটিকে উল্লেখ যোগ্য মনে হল ,তা হল তার উচ্চতা।সম্ভবত একটা দোতলা বাড়ির সমান বড় মুর্তিটি।নিতান্ত অভ্যাসের বশে তার ছবিও তুলে নিলাম আমি ও জেমস উভয়েই।এবার গাড়ি চলল ধুঁয়াধারের উদ্দেশ্যে।
  • kiki | 69.93.***.*** | ০৮ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:১৪583138
  • বাসুদা,
    বড়িয়া.............ঃ
  • DB | 125.187.***.*** | ১০ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:৩৯583139
  • আরবি ভাষায় নাকি ”>jabala<” শব্দের অর্থ পাথুরে জমি আর সেই আরবি শব্দ থেকেশহরের নাম জবলপুর হয়েছে।শহরের নামকরণ নিয়ে অন্যএকটি মতের কথাও পড়েছিলাম - ব্রম্হর্ষি জাবালির তপস্যাক্ষেত্র নাকি ছিল এই অঞ্চলে এবং তাঁরই নমে শহরের নাম হয়েছে জবলপুর।রাজ্যের উৎপটাং ভাবনা কাজ না থাকলেই আমার মাথায় ভীড় করে আসে।হাতা কোলে করে চলন্ত গাড়ির মধ্যে চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে মনে হল এমন তো নয়,যে পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা ”জবল”ভূমিতে তপস্যাকরার কলে স্থানীয় লোকেরা ব্রম্হর্ষির কথা উল্লেখকরতে গিয়ে তাঁকে জাবালি নমে চিন্হিত করত ! তা হলে আর দুটি মতে কোন বিরোধ থাকেনা। একটা ভারি জটিল ঐতিহাসিক সমস্যার এমন চমৎকার সমাধান খুঁজে পেয়ে নিজের মনেই বেশ পুলকিত বোধ করলাম।বিষয়টি সম্পর্কে জেমসের মতামত নেব বলে কথাটা পাড়তে গিয়ে দেখি আমাদের চালক জিতেন্দ্র গাড়িটাকে একটা সিমেন্ট বাঁধান চাতালে নিয়ে দাঁড়া করিয়েছে - আমরা পৌঁছে গেছি ধুঁয়াধারএর কাছে।বেশ প্রসস্ত চাতালটায় দেখি মেলা বসে গেছে ছোট বড় নানান গাড়ি আর টুরিস্ট বাসের।আমারা পৌঁছনর আগেই আরো অনেকেই এসে হাজির হয়েছেন ধুঁয়াধার জলপ্রপাতে। এখান থেকে অল্প কিছুটা হেঁটে আমাদের পৌঁছতে হবে জলপ্রপাতের কাছে।
    একটা ছোটোখাটো বাজার বসে গেছে পার্কিং থেকে জলপ্রপাতের ধার অবধি রাস্তার দুপাশে।চুনাপাথরে তৈরী দেবদেবী-মূর্তি,বিভিন্ন ভঙ্গীমায় দাঁড়ান নারী মূর্তি ছাড়াও আরো অনেক ছোট বড় ঘর সাজানর উপকরণের পশরা সাজান সে সব ঝুপড়ি দোকানে।আমাদের ছেঁকে ধরল একদল লোক।সুদৃশ্য পাথরের ফলকে কিনে তাতে নিজেদের নাম লিখিয়ে জবলপুর ভ্রমন-স্মৃতি চিন্হ হিসেবে সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য।কিন্তু নাম লেখা কয়েকটি ফলকে লেখার কায়দা দেখে তকে এতটাই মোটাদাগের মনে হল যে ও জিনিষ ঘাড়ে করে বয়ে নিয়ে আসার কোন মনে হয়না।দোকানিদের ভীড় কাটিয়ে আমরা দুজনে এগিয়ে চললাম ধুঁয়াধারের দিকে।
    পার্কিং এ যেখানে আমরা গাড়ি থেকে নেমেছিলাম সেখান থেকে ঢালু রাস্তাটা ক্রমশ নিচের দিকে নামতে নামতে একেবারে জলপ্রপাতের কিনারায় গিয়ে থেমেছে।সেখানেও লোহার রেলিং ঘেরা একটা চাতাল – সেই চাতালে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে ধুঁয়াধার জলপ্রপাত দেখা যাবে।
    একটু দুর থেকেই আমারা দেখতে পেয়েছিলাম বাঁদিক থেকে নর্মদার জলধারা বয়ে এসে অকষ্মাৎ খাদের মধ্যে বিপুলবেগে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।কাছে গিয়ে দাঁড়াতে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলাম নর্মদা নদীর প্রবল ধারা ধেয়ে এসে নিচের খাদে আছড়ে পড়ে সফেন ঘুর্ণাবর্তের সৃষ্টি করেছে আর তার পরে তীরের বেগে বয়ে চলেছে শ্বেত মর্মরের জঙ্গলএর মাঝখান দিয়ে ।ল্ক্ষলক্ষ কিউসেক জল যেখানটায় মাটিতে আছড়ে পড়ছে সে জায়গাটায় অতিসূক্ষ্ম জলকণারা বাতাসে উড়ছে – দেখলে মনে হবে যেন এক লীলাচঁচলা নারী তার রেশমী ওড়না বাতাসে উড়িয়ে নিচে গেয়ে ধেয়ে চলেছে – কোথায় সে যাবে তা সে নিজেই জানেনা।
    রেলিং ঘেরা চাতালে দাঁড়িয়ে আমার মনে হল একদিকে এ যেমন সুন্দর আবার তেমনি ভয়ঙ্কর ও বতে।নিজের বাড়িতে আরামে বসে ধুঁয়াধারের বর্ণনা করতে গিয়ে আমার মনে আসছে রবীন্দ্রনাথের গানের লাইন –
    ”ভীষন আমার, রুদ্র আমার, নিদ্রা গেল ক্ষুদ্র আমার
    উগ্র ব্যথায় নুতন করে বাঁধলে আমার ছন্দ…”

    রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে সত্যই মনে হচ্ছিল সত্যই এই বিপুল প্রকৃতির সামনে কত ক্ষুদ্র আমার অস্তি্টুকু!একই সঙ্গে আবার টের পাচ্ছিলাম শরীরে রক্তধারায় সংগোপনে কোথাও যেন ছন্দ্স্পন্দন যেগেছে আমার।
    লিখতে বসে এখন মনে পড়ছে আজ থেকে প্রায় চুয়াল্লিশ বছর আগে কলেজে পড়ার সময়ে দার্জিলিং এ গিয়েছিলাম।শিলিগুড়ি থেকে ল্যান্ড রোভার গাড়িতে চেপে হিলকার্ট রোড ধরে পাহাড়ের পাকদন্দী পথে দার্জিলিং এ ওঠার সময়ে নিস্তব্ধ নির্জন পাহাড়ী প্রকৃতির বিশালত্ব আমায় স্তব্ধ করে দিয়েছিল।সেদিন ও সেই বিশাল বিশ্বপ্রকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল সত্যই কত ক্ষুদ্র আমাদের এই অস্তিত্ব !
  • Ben Arfa | 131.24.***.*** | ১০ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:৪৭583140
  • ওখানকার স্থানীয় লোকেরা বলে ধুঁয়াধারের আরো ওপরে একটা বাঁধ দেওয়ার ফলে ধুঁয়াধারের "ধুঁয়া" (যেটার জন্যে ওর সৌন্দর্য আর নাম) অনেক কমে গেছে। এখন বর্ষার পরে ড্যাম থেকে হু হু করে ঘোলা জল নেমে ধুঁয়াধার এবং বাকি মার্বল রক্‌স-এর পিন্ডি চটকে দেয়।
  • DB | 125.187.***.*** | ১২ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:২৫583141
  • বেশ কিছুটা সময় জলপ্রপাতের সামনে কাটিয়ে এগিয়ে গেলাম নদীর গতি পথ অনুসরণ করে।সবুজ রঙের জলধারা খরস্রোতে বয়ে চলেছে – তার দুই পাশে শ্বেত পাথরের দেওয়াল।নদীর দুই পারে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে আছে শ্বেত পাথরের চাঁই।প্রাকৃতিক ক্ষয়ের দরুণ তার কোন কোনটি বিচিত্র আকার ধারণ করেছে।একটা বিশাল মার্বল পাথ্রের চাঁই দেখে মনে হল যেন গর্জনরত একটা সিংহের মুখ ! আরো কিছুটা এগোতেই চোখে পড়ল নর্মদার সরু সবুজ ধারা ঢুকে পড়েছে পাথরের উঁচু দেওয়াল ঘেরা নিরালায়।সেই নিভৃত নির্জনে নদী গান গায় – শ্বেত মর্মরে প্রতিধ্বনিত হয় তার সুর।সে অপার্থিব সংগীত আশ্রুতই থেকে যায় সাধারণ মানুষের।
    ধুঁয়াধারকে পিছনে রেখে এবার আমরা এসে পৌঁছলাম চৌষট যোগীন মন্দিরের কাছে। উঁচু টিলার চুড়ায় মন্দির – সেখানে পৌঁছতে হলে ধাপে ধাপে ১০৮টি সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হবে টিলার ওপরে।জেমস উৎসাহী ছিলেননা অতগুলো সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে।কাজেই আমাকে একাই এগিয়ে যেতে হল সিঁড়ির দিকে।মাঝ পথ অবধি ওঠার পর দেখি দুরে একটা সাদা রঙের মন্দির মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার পিছনে আকাশী নীল রঙের নর্মদা নদীর নিস্তরঙ্গ ধারা।তার এক পাড়ে কন্ক্রিটের ঘাট ।ঘাতের ধারে বাঁধা নৌকায় কিছু লোক ওঠা নামা করছে।ওটা যে কোন মন্দির বা ঘাটের নামটাই বা কি তা বলে দেবার মত কাউকে পেলাম না আমার আসেপাশে।
    হাঁপাতে হাঁপাতে একটা সময়ে পৌছে গেলাম টিলার চুড়ায় একটা বৃত্তাকার সমতল চাতালে।আমার সামনেই উঁচু পাথরের দেওআল ঘেরা মন্দির।মন্দিরের চুড়াটি দেয়াল ছাপিয়ে বাইরে থেকেই দেখা গেল।এই মন্দিরে কি প্রাচীন কলে ধনরত্ন মোজুদ থাকত ভারতের আরো অনেকগুলি বড় বড় মন্দির গুলির মত, নইলে এত মোটা পাথরের দেয়াল কেন ? দেয়ালের প্রয়োজনটা অবশ্য সঙ্কীর্ণ প্রবেশ দ্বার পথে নিচু হয়ে ধোকার পর মন্দির প্রঙ্গনে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারলাম।দোয়ালের গায়ে ছোটো ছোটো খুপরি ঘরে দেবীর চৌশট্টি রূপের বেলে পথারে তৈরী মুর্তি বসান।তার অধিকাংশই অত্যন্ত জির্ণ অবস্থায় কোন মতে টিকে আছে।দেবীমুর্তি গুলির একটির সঙ্গে অন্যটির বিশেষ প্রভেদ আমার চোখে পড়লনা।তবে,শাস্ত্রজ্ঞ যাঁরা তারা হয়ত বুঝিয়ে দিতে পারতেন দীব্র নানা রুপের বৈশিষ্ট।
    এবার চোখ ফেরালাম মূল মন্দিরটার দিকে।প্রাচীন মন্দিরের শরীরে কালের ছাপ স্পষ্ট।তবু মন্দিরটা দেখতে আকর্ষনীয়।
    মূলমন্দিরের ঠিক সামনেই একটা ঢাকা বারান্দার মাথায় দেখলাম সামনের দিকে একটা ছোটো মিনারেট।হিন্দু মন্দিরে কি এই রকম মিনারেট দেখেছি আগে? মনে করতে পারলাম না।ছদের পিছনদিকে সুন্দর রোশন চৌকি।এককালে হয়ত এই মন্দির ভক্ত জন সমাগমে গমগম করত।এখন দেবীর সে দিন নেই মন্দিরে পুজ হয় বতে কিন্তু খুব বেশী ভক্ত সমাগম হয় বলে মনে হলনা।কেবল আমার মত কিছু অত্যুৎসাহী টুরিস্টরাই বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘুরে যান মন্দিরে।
    মন্দির থেকে বেরিয়ে জুতো পরছি নিচু হয়ে – কানে এলো বয়স্কা এক বাঙালী গৃহিণী কন্যাকে নির্দেশ দিচ্ছেন একটি বিশেষ গাছের গুঁড়িতে মাথা ঠেকাতে।গাছটি বুঝি কোন ভাবে ভৃগু মুণির স্মৃতি ধন্য !বাইশ তেইশ বাছর বয়সী মেয়েটি মায়ের নির্দেশ অমান্য করেনি বতে ,কিন্তু যে মন দায়সারা ভাবে গাছের পায়ে মাথাটা ঠেকাল তাতে তার বিশেষ পূন্যলাভের বাসনা আছে বলে মনে হলনা।আমি তকে লক্ষ্য করেছি বুঝেই বোধ হয় সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মায়ের কান বাঁচিয়ে একটু খাটো গলায় আমাকে জানায় ” মায়ের কান্ড ঐ রকম।কোথায় কোন গাছে একটু সিঁদুর মাখান আছে কি নেই , ব্যাস মা অমনি তার সঙ্গে ভৃগু বা অন্য কোন মূনির সম্পর্ক বের করে নেবে….”
    আমি হাসতে হাসতে জবাব দিলাম ”সাবালিক মেয়ের মায়েদের অমনি হয়।তুমিও একদিন হয়ত একই রকম মেয়ের মঙ্গল কামনায় রাজ্যের ঠাকুর দেবতার পায়ে মাথা নোয়াবে”
    ” আমার বয়েই গেছে …” বাক্যটাকে সম্পুর্ণ না করেই মেয়েটি তরতরিয়ে এগিয়ে গেল নিচের দিকে।
    পরিবারটির পেছন পেছন সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আমার মনে পড়ে গেল নিজের মায়ের কথা।ছোটোখাটো কোনো ব্যপারে মা বকাবকি করলে আমিও বলতাম ” সামান্য দেরি হলে তুমি এত চিন্তা করো কেন।আমি কি বাচ্ছা ছেলে যে হারিয়ে যাব কি ছেলে ধরায় ধরে নিয়ে যাবে আমকে?”অপ্রতিভ হয়ে মা কথা খুঁজে পেতেননা।একটিউ আহত স্বরে বলতেন ”তোরা যখন ছেলেপুলের বাবা হবি , তখন বুঝবি আমার চিন্তা কেন হয়।” মায়ের কথাটা কতটা অভ্রান্ত তা আজকাল প্রায়ই টের পাই বটে।
  • DB | 125.187.***.*** | ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:২১583142
  • রাস্তা থেকে নদীর ঘাট অনেকটাই নিচুতে।বাঁধান সিঁড়ি দিয়ে নামতে অসুবিধা নেই,কিন্তু ফেরার সময়ে অতগুলই সিঁড়ি ভেএ আবার উঠতে আসতে পরিশ্রম যথেষ্ট হবে,কিন্তু নর্মদা নদীর দুই তীরে প্রকৃতি আপন খেয়ালে মার্বল ও স্লেট পাথরে যে অপরূপ ভাষ্কর্য রচনা করে রেখেছে তার এত কাছে এসেও স্বচক্ষে না দেখে সামান্য শারীরিক পরিশ্রমের ভয়ে পিছিয়ে যাওয়াটা হাস্যকর বোকামি হবে।জেমসের মনেও কিছুটা দ্বিধা ছিল বটে,তবে আমি সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে তিনিও নীরবে অনুসরণ করলেন আমায়।
    ঘাটের ধারে নৌকা বাঁধা ছিল।তাতে জন পনের যাত্রী ইতিপুর্বেই উঠে বসে অপেক্ষা করছিলেন আর জনাপাঁচেক যাত্রীর অপেক্ষায়।মোট কুড়ি জন যাত্রী না হলে মাঝি নৌকা ছাড়বেনা।আমি ও জেমস নৌকায় ওঠার পর আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। জেমস গিয়ে বসলেন একটু ভেতরের দিকে – নৌকার মাঝামাঝি একটা আসনে।আমার জায়গা হল একেবারে সামনের দিকে।আমার পক্ষে সেটা উৎসাহব্যঞ্জক ব্যপার।ছবি তোলার জন্য অনেকটা খোলা জায়গা পাওয়া গেল।যদিও মাঝি কোথা থেকে বিশালাকায় এক মহিলাকে এনে বসিয়ে দিলেন আমার পাশে।মাহিলার সঙ্গে আবার হুবহু শক্তি কাপুর মার্কা এক পীস স্বামিও এসে বসলেন।মহিলাটিকে আমার পাশে ধপ করে বসেপড়তে দেখে জেমসের সেকি উল্লাস! ”ভাগ্য করে জন্মেছেন বাসু”। পিছন ফিরে দেখি জেমস জুতো জোড়া খুলে সীটে বসে দিব্বি ঠ্যাঙ দোলাচ্ছেন।জেমসের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কথাটার মোড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে বলি-”ও বাবা ! আপনি তো দেখছি বেশ জুতো টুতো খুলে আয়েস করে গুছিয়ে বসেছেন !মনে হচ্ছে জলবিহারটা আপনি সত্যি উপভোগ করার জন্য সম্পুর্ণ প্রস্তুত”।জেমস বলেন - ”ব্যপারটা তা নয়।নৌকাটা ওভারলোডেদ মনে হচ্ছে।মাঝনদীতে যদি উল্টে যায়? আমি ভাই সটান ঝপাং।জুতো পরে সাঁতার কাটা যাবেনা বলেই এই ব্যবস্থা!” কথা শুনে হাসব না কাঁদ্ব বুঝে উঠতে পারিনা।আসলে জলে আমারও বেজায় ভয়।তবু সুন্দরের নিবিড় সাহচর্যের সম্ভাবনার কথা মাথয় রেখে ভয়টাকে মনের পিছনে সরিয়ে রেখেছিলাম।জেমসের কথায় আমার দৃষ্টি আপনা হতে চলে গেল নদীর জলের দিকে।নৌকার কিনার থেকে জলের মাত্র ব্যবধান বড় জোর এক কি দেড় ফুট মত হবে।কোন কারণে নৌকা একটু ঝুঁকে গেলেই বিপদের সম্ভাবনা।তবে ঝুঁকির ভয়টা কতটা বাস্তব আর কতটাই বা কাল্পনিক তা স্থির করা মুশকিল।তাই মন থেকে সে ভাবণাটা সরিয়ে দিলাম।
    ইতিমধ্যে নৌকা চলতে শুরু করেদিয়েছে।দুই দাঁড়ি প্রাণপনে দাঁড় টেনে নৌকাটাকে তীর থেকে ক্রমশ নদীর মাঝ বরাবর অগিয়ে নিয়ে চলেছে।দুরে সরে সরে যাচ্ছে বাঁধান ”বাবু অম্বিকা ব্যানার্জী ঘাট, নদীতীর শিব মন্দির … ।নদীর দুইঅ পারে দেখা যাচ্ছে কোথাও সাদা কোথাও কালো রঙের পাথরের চাঁই দেওয়ালের মত দাঁড়িয়ে আছে।পাথরের বুকে নানান প্রাকৃতিক আঁকিবুকি কাটা।কোথাও কোথাও বা আবার মনে হয় যেন পাথর একটা পরিচিত আকার নিয়েছে।কখনও তা মানুষের মুখ কোথায় কোন পশুর মুখ।নদী পথে কিছুদুর এগনর পর মাঝিরা তাদের ”>kamenTaari<” শুরু করল।এক একটি জায়গা নির্দেশ করে তারা জানাচ্ছিলেন কোথায় কোন সিনেমার শ্যূতিং হয়েছিল,।কোন নায়ক-নায়িকার যুগল নৃত্য চিত্রায়িত হয়েছে সেই সব বিববরণই জুড়েছিল ধারাভাষ্যের অধিকাংশটাই।বিষয়টি আমার চোখে তখনকার পরিবেশে ঠিক মানানসই ছিলনা।তবু অস্বীকার করার উপায় নেই মাঝিদের ছড়া কেটে ধারাভাষ্য শুধু পরিবেশনের গুনে অধিকাংশ যাত্রীরা যথেষ্ট উপভোগ করছিলেন।
    নদীর সবুজাভ জলে ভাসতে ভাসতে আমরা একটা বাঁক নিয়ে এমন একটা জায়গায় পৌঁছলাম যেখানে দুপাষের পাথরের দেওয়াল যেন আরো নিবিড় করে ঘিরে ধরেছে আমাদের।মাঝিরা থেকে থেকে জানান দিচ্ছিল এখানে নদীর গভীরতা তিনশো ফুট কোথাও চারশো ফুট।পাশ থেকে কে জানি ভয়ে আঁৎকে উঠলেন।তাকে বলতে ইচ্ছে করল ডুবে মরতে হলে ছয় সাত ফুট গভীরতাই যেখানে যথেষ্ট সেখাঅনে নদীর গভীরতা তিনশো ফুটই হোক বা চাশো – তাতে কিই বা এসে যায়।একটা বাঁকে পৌঁছে দেখা গেল অতিকায় একটা শ্বেত পাথরের স্তুপ। দেখতে অনেকটা একটা বসে থাকা ষঁড়ের মত লাগল।মাঝি যাত্রীদের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলে ” ঐ দেখুন,পাথরের নন্দী”।একটা শ্বেত পাথরের স্তুপ দেখে মনে হল ঠিক যেন একটা ময়ুর পঙ্খী নদীর নীল জলে অলসভাবে ভেসে চলেছে।
    হ্যাঁ।এই জায়গাটায় নদীর জল আর সবুজ নয় – নদীর জলে কেউ যেন কোবাল্ট নীল রঙ গুলে দিয়েছে।সেই নীল জলে শ্বেত পাথরের ছায়া পড়েছে।দৃশ্যটা সত্যই স্বর্গীয়।মন থেকে আমার সব দুর্ভাবনা কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে।একটা গভীর আনন্দবোধ আমার মনকে সিক্ত করে তুলেছিল।
    তবে সব কিছুরই শেষ থাকে।অনেকটা পথ ধরে এগোনর পরে নৌকার মুখ ঘুরল।এখান থেকে ফিরে যাব আমরা।জনৈক যাত্রী কিচুহুটা হতাশ স্বরে বলে উঠলেন ” আর আগে যাবেনা নৌকা?”মাঝির সরস জবাব ”এর আগে স্বর্গদ্বার।ওখানে গেলে আর ফেরা যায়না।”অনুমান করলাম আমরা নৌকা বেয়ে ধুঁয়াধারের অদূরে হাজির হয়েছি।ধুঁয়াধর জলপ্রপাতের কাছে জলের শ্রোতের চেহারা একটু আগেই দেখে এসেছি।সেই সোর্তের বেগে ছোট্টো এই নৌকা নিতান্ত খড়কুটোর মত ভেসে যাবে সন্দেহ নেই।
  • DB | 125.187.***.*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ ১০:৫৩583143
  • নৌবিহার সেরে আমরা এবার ফিরে চললাম জবলপুর শহরের দিকে।শহরে পৌঁছনর ছয় সাতকিলোমীটার আগে একটা উঁচু পাহাড়ী টিলার সামনে জিতেন্দ্র গাড়ি থামাল।টিলার মাথয় গোন্দ রাজা মদন শাহের দূর্গ ও প্রাসাদ।১১১৬ খৃস্টব্দে নির্মিত দূর্গপ্রাসাদে পৌঁছতে হলে বেশ অনেকটা পাহাড়ী পথে উঠতে হবে।জেমস ও আমি উভয়েই উঠতে শুরু করলাম চড়াই ভেঙে ওপরের দিকে। প্রতিষ্ঠাতা মদন শাহের নাম অনুসারে এই দূর্গপ্রাসাদ মদনমহল নামেই অধিকতর পরিচীত।গাইড বইয়ে আর এক রানী দূর্গবতীর উল্লেখ ও দেখেছিলাম।১৫৬৪ খৃষ্টাব্দে আকবরের সৈন্যবাহিণীর কাছে পরাজয় নিশ্চিত জেনে নিজের গলায় ছুরি বিঁধিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন দূর্গাবতী।এই সব গল্প করতে করতে উঠছিলম দুজনে।হঠাৎ একটা বড় পাথরের চাঁইয়ে হিন্দিতে লেখা বিচিত্র এক সতর্কবার্তা দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লাম।জায়্গাটায় অনেক গুলো বড় বড় পাথরের চাঁই কিছুটা জায়্গাকে ঘিরে বুনো গাছপালায় ঢাকা বেশ একটা নিরালা কোন সৃষ্টি করেছে।সেই নিভৃত নিরালায় হয়ত জবলপুর শহরের প্রেমিক প্রেমিকা জুগলেরা মাঝে মাঝে লোকচক্ষুর অন্তরালে দুদন্ডের জন্য পরস্পরের সঙ্গসূধা উপভোগ করতে আসেন।কিন্তু নেইতীবাগিসদের তা সহ্য হয়না।তারা কালো পাথরের গায়ে চুন দিয়ে বিধিবদ্ধ সতর্কিকরণ নোটিস জারি করেছেন -”ইস ক্ষেত্রকে পাস লড়কা লড়কি কা বৈঠনা এবং আপত্তিজনক স্থিতি মে বৈঠনা সখ্ত মনা হায়।পায়ে জানে পর সখ্ত কারবাহি হোগি”পথ চলতে আরো দুই জয়্গায় অনুরূপ দুটি বেসর্করি সতর্কবর্ত চোখে পড়েছিল।অন্য একটি বার্তায় বলা হয়েছে তথাকথিত”>aapattijanaka<” অবস্থায় কোন প্রেমিক প্রেমিকা যুগল যদি ধরা পড়ে তবে তাদের সোজা থানায় চালান করা হবে অন্য একটি বার্তায় অপরাধী যুগলকে নিয়ে ”জুলুস”বারকরার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।আমি আর জেমস দুজনেই হেসে কুটিপাটি।
    আমরা যখন নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছি তখন ওপরদিক থেকে এক তরুনকে ভিডিও ক্যমের হাতে নেমে আসতে দেখে তকে জিজ্ঞাসা করলাম আর কতটা দূরে আছে দূর্গটা।জবাব শুনে জেমসের ক্ষু ছানাবড়া।তরুনটি জানালেন আমরা নাকি অর্ধেক রাস্তা পার করেছি মাত্র।সঙ্গে এও যোগ করলেন যে পহড়ে চড়ার পরিশ্রম এড়ানর জন্য আমরা যেন দূর্গপ্রাসাদটা না দেখে ফিরে না যাই।জেমস আর এগোতে চাইলেননা।ফিরে চললেন নিচের দিকে।বললেন- ” আপনি দেখে আসুন।আমি গাড়িতে অপেক্ষা করব আপনার জন্য।”অগত্যা আমি একাই এগিয়ে চললাম। ক সময়ে পৌঁছেও গেলাম পাহাড় চুR্হায়।চুড়ায় পৌঁছে প্রথমেই যে জিনিষ্টা আমার দৃষ্টি আকর্ষন করল তা হল একটা প্রকান্ড গ্রানাইট পাথরের চাঁইএর মাথায় একটি দোতলা বাড়ি।আমার অবস্থান থেকে দেখে মনে হল যেন একটা বসে থাকা হাতির পিঠে রাজকীয় হাওদা বসান।আর একটু কাছে যেতে দেখলাম যে পাথরের চাঁইয়ের ওপরে প্রাসাদ গড়া হয়েছে সেই চাঁইটি একটা চোটো পাথরের ঠেকনায় প্রায় তিরিশ ডিগ্রী কোন করে বেঁকে আছে! একটা মুখ খোলা ঝিনুকের খোলের কথা চিন্তা করলে ব্যপারটা বুঝতে সুবিধে হবে।পাথরের পাশে প্রসদে ঢোকার গেট।বেশ উঁচু উঁচু অনেকগুলো সিঁড়ির ধাপ পেরিয়ে উঠে পারাখলাম পাথরের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা একটা চাতালে।সেই চাতালের এক ধারে দুই কামরার নিতান্ত সাধার্ণ মানের একটা বাড়ি।ঘরগুলির ওপরে আরো একটি তলা ছিল কিন্তু সেখানে যাবার সিঁড়ি দেখলাম বন্ধ করা রয়েছে।জনহীন ঘরগুলি নিতান্তই আড়্ম্বর হীন সাধার্ণ গৃহস্ত ঘরের মতই দেখতে।এই নাকি রাজপ্রাসাদ! রাসাদের একটি ঘরের জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি সম্পুর্ণ জবলপুর শহরটা দেখা যাচ্ছে একটা ছবির মত।ক্ষণিকের জন্য সেই ঘরে দাঁড়িয়ে মনে পড়ল এই দুটির কোন একটি ঘরেই হয়ত রানী দূর্গাবতী আক্রমনকারি মোগলবাহিনীর হাতে বন্দীনী হবার অশঙ্কায় আত্মহ্ত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে।এই চিন্তা গুলো মাঝে মাঝেই আমার মনে উদয় হয়ে আমাকে শিহরিত করে তোলে।প্রাসাদের সামনে একটা খোলা জয়্গায় দেখতে পেলাম প্রাচীন ধংসাবশেষ।আমার প্রশ্নের জবাব দেবার কেউ ছিলনা কাছাকাছি তাই অনুমান করে নিলাম সেটা হয় তো মদন শাহের তৈরী দুর্গেরই ধংসাব্নশেষ।
  • ঐশিক | 132.18.***.*** | ১৪ ডিসেম্বর ২০১২ ১৫:০৮583144
  • সঙ্গে আছি,
  • nina | 233.29.***.*** | ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ ০৮:৪৪583145
  • ক্যা বাৎ !! বাসুভাই সঙ্গে আছি--
  • DB | 125.187.***.*** | ১৫ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:৪৮583146
  • দূরপাল্লার বাসে দরদস্তুর করে ভাড়া দেবার অভিজ্ঞতা ইতিপূর্বে কারো হয়েছে কিন আমার জানা নেই,সাতনা থেকে খাজুরাহো যাবার বাসে আমাদের সেই বিরল অভিজ্ঞতা হল।জবলপুর থেকে খাজুরাহো যাবার দুটি উপায় আছে।হয় নশো থেকে বারোশোটাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করতে হবে নচেৎ লোকাল বাসই এক মাত্র ভরসা।
    সকাল সাতটায় রেওয়া যাবার শটলে ট্রেন জলপুর থেকে ছাড়ে। আমরা সেই গাড়িতে পৌঁছেছি সাতনা।
    স্টেহনের কছেই বাস স্ট্যান্ড।সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল দুপুর দুটোয় আসবে খাজুরাহোর বাস,ভাড়া লাগবে মাথা পিছু দেড়শোটাকা।চালাক চতুর রোগা মত যে ছেলেটি আমাদের বাসের খবর দিল তার কাছেই মিলবে সংরক্ষিত অসনের টিকিট।ঘড়িতে তখন বেলা বারোটা-বাস আসতে তখনও ঢের দেরি তাই আমরা সঙ্গে সঙ্গে টিকিট না কেটে ছেলেটির পরামর্শ মত বাসস্ট্যান্ডেরই একটা দোকানে আহার পর্ব সেরে প্রতিক্ষালয়ে গিয়ে বসলাম।ছেলেটি আমাদের আস্বস্ত করেছিল যে সে যথা সময়ে আমাদের ডেকে নিয়ে বাসে বসিয়ে দেবে।
    কিন্তু হায়, বসে আছি তো আছিই।দুটো বেজে গেছে তবু বাসের আর দেখা নেই।অবশেষে নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু পরে বাস স্টাঅন্ডে এলো ।বাসটা একেবারে খালি তাই আমি ও জেমস উভয়েই একটি করে জানালার ধারের সীট দখল করে বসে পড়লাম।বাস ছাড়তে তখনও কিছু দেরি আছে দেখে জেমস জল বা ঐ জাতীয় কিছু একটা কিনতে গলেন এবং ফিরে এলেন একটি মহা মূল্যবান তথ্য নিয়ে।অন্য আর এক যাত্রীর কাছে তিনি নাকি শুনেছেন সাতনা থেকে খাজুরাহোর ভাড়া একশো পঞ্চশ নয় – একশো কুড়ি টাকা।
    ”দেখেছেন বাসু, ঐ ছেলেটা আসলে টাউট।আমাদের থেকে তিরিশ তিরিশ ষট টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার তালে ছিল!”
    আমি তো অবাক, এমনও হয় নাকি? অবশ্য অবাক হবার তখনও আরো কিছু বাকি ছিল আমার।বাস ছাড়ার বেশ অনেক্ষণ বাদে পিছন থেকে জেমসের গল পেলাম - ”বাসু , বাসের আসল ভাড়া মাথাপিছু একশো টাকা।আমি কন্ডাক্টরের সঙ্গে কথা বলে একশো টকাতেই রফা করেছি !
    সাতনা থেকে খাজুরাহো একশো সতেরো কিলোমীটার পথ পাড়ি দিতে বাস যে চার ঘন্টারও কিছু বেশি সময় লাগিয়ে দেবে আমি কল্পনা করতে পারিনি।বাস ঘন্টায় পঁয়্তাল্লিশ কিলোমীটার বেগে চালালেও আমাদের পৌঁছে যাওয়ার কথা সন্ধ্যা ছটা বা তার কিছু আগে। সে জায়গায় আমরা পৌঁছলাম সন্ধ্যা সাতটারও পরে।অন্ধকার নেমেছে অনেক্ষণ হল রাস্তাঘাট ও একেবারে শুনসান। ক্লান্তি আর বিরক্তি নিয়ে হোটেলের সন্ধানে আর ঘুরতে মন চাইলনা।কাছেই পাওয়া গেল মধ্যপ্রদেশ পর্যটন বিভাগের পরিচালনাধীন ঝঙ্কার হোটেল।সেখানেই ঢুকে পড়া গেল।বেশ ছিমছাম হোটেল,সামনে বিশাল বাগান আর ঘর খানিও বেশ বড় ও সুসজ্জিত।ভলো হোটেল পেয়ে মনের বিরক্তি উধাও হয়ে গেলদুজনেরই।
    খাজুরাহো বেড়াতে যাব শুনে জনৈক বন্ধুপত্নি সহাস্যে মন্তব্য করেছিলেন ”ব্যপার কি বলুন তো,এই বয়েসে খাজুরাহো যাচ্ছেন বেড়াতে!” বন্ধুপত্নির ইঙ্গীত না বোঝার ভান করে নীরিহ মুখে জবাব দিয়েছিলাম ”বেড়াতে যাবার জন্য যথেষ্ট অর্থ ,ইচ্ছা আর শারীরিক সক্ষমতা ছাড়া আর কিছুর প্রয়োজন হয় বলে তো শুনিনি।এর সব কটিই যখন আমার আছে তখন বয়সের বিচার করতে বসব কেন?তা ছাড়া আমি তো আর চপলমতি বালক নই যে খাজুরাহো মন্দিরের মিথুন মূর্তি দেখে মানসিক বিকার ঘটবে আমার”
    বন্ধুপত্নির আর দোষ কি – বহু শিক্ষিত শহুরে মানুষের চোখে খাজুরাহোর মন্দির আর রগরগে যৌনতা প্রায় সমার্থক! এই বিষয়্র আরো একটি চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছিলাম পরে খাজুরাহো থেকে সংগ্রহ করা অতি সুদৃশ্য এবং মোটামুটি তথ্য সমৃদ্ধ গাইড বইএর সৌজন্যে।
    ভারতীয় সমাজের একটা বড় অংশ যৌনতা বিষয়টি সম্পর্কে বরাবরই অত্যন্ত স্পর্শকাতর।আর ঠাকুর দেবতার সঙ্গে যদি বিষয়টির সামান্যতম যোগসুত্র থাকে তবে তো আর কথাই নেই।সাম্প্রতিক অতীতে হুসেনের আঁকা বাগ্দেবী সস্বতির নগ্ন চিত্রা সমাজে যে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল তা আজ আর কারোরি অজানা নয়। খাজুরাহো মন্দিরের মূর্তিগুলিও একইভাবে আলোড়িত করেছিল সমাজের একটি অংশকে।
    Even that great Victorian puritan Mohandas Karamchand Gandhi,found the temples deeply distressing and gave his blessing to a band of pious vandals who wanted to chip the walls of the temples clean from these “indecent and embarrassing” affronts to their ignorant notions about Indian culture. It took the intervention of no less than Rabindranath Tagore who wrote an appalled letter to Gandhi, explaining that this was a national treasure and could not be so cavalierly demolished because some people were uncomfortable that their ancestors were sexual beings.
    শুধু গান্ধীজি নয় – বনজঙ্গল সাফ করে খাজুরাহোর বিষ্মৃত, পরিত্যক্ত মন্দিরগুলিকে উদ্ধার করে তাদের সম্পূর্ন অবলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন Captain T.S.Burt নমে যে ইংরেজ রাজকর্মচারি তিনিই উচ্ছসিত হয়ে লিখেছিএল্ন Probably the finest aggregate number of temples congregated in one place to be met in all of India,and in an area within a stones’s throw of one another.আবার সেই বার্ট সায়েবের চোখে খাজুরাহোর কিছু কিছু মূর্তি extreamly indecent and offensiveঠেকেছিল !
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.***.*** | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:১১583147
  • কুয়াশাঘেরা হ্রদ-পাহাড়ের উপকথা :: বিপ্লব রহমান
    ____________________________________
    দুর্গম পাহাড়ে ডিসেম্বরের ভোরে হিম বাতাসের কামড় ছাপিয়ে প্রধান হয়ে ওঠে দৃষ্টি আচ্ছন্ন করা কুয়াশা নয়, নারকেল দুধের মতো ঘন সাদাটে ধোঁয়াশা। শীতলতায় হাত-পা অবশ হয়ে আসতে চায়, ঘোলাটে চশমার কাঁচ বাস্পাচ্ছন্ন হয়ে আসে, তখন হাত তিনেক দূরের দৃষ্টিও বুঝি অসাড়। কুয়াশা জমে জমে বৃষ্টির মতো টুপটাপ ঝরে পড়ে জলকণা অরণ্য সবুজের মগডাল থেকে। ভিজিয়ে দেয় পোষাক-আশাক,ব্যাগ-ব্যাগেজ,সর্বস্ব। দূরে রাতজাগা কোনো পাখি কর্কশ স্বরে ডেকে বলে, হুঁশিয়ার!

    এরই মধ্যে রেস্ট হাউজ নামক বাঁশের তৈরি মাচাং ঘর থেকে গুটি গুটি পায়ে একাই বেরিয়ে পড়া। হাতে তিন ব্যাটারির টর্চ, গেরিলা কায়দায় 'রেকি' করা চারপাশ, ক্ষীণ আশা - সকালের আলোয় বগালেকের অপার বিস্ময় যদি খানিকটা ধরা পড়ে! কিন্তু টর্চের আলো ফ্যাকাশে বলে ভ্রম হয়, তখনো সকালের আলো ফোটেনি। চারপাশের চাপ চাপ ধোঁয়াশার বিস্তার দেয়ালসম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। চামড়ার পুরনো জ্যাকেট, আর কোমড় তাঁতে বোনা চাকমা সুতি মাফলারে শীত তাড়ানোর অবিরাম কসরতের অংশ হিসেবে একটি সিগারেট ধরানো। তাতে ধোঁয়াশা আরেকটু বাড়ে বৈকি, শীতের দাপটে রক্ত জমে আসতে চায়। আবারো ফিরে আসা এক কামরার মাচাং ঘরের ওমের ভেতর।

    সহ-সাংবাদিক বুদ্ধজ্যোতি চাকমা তখনো মাচাং ঘরের দ্বিতীয় সিঙ্গেল খাটে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন। ঘুমের ঘোরেই অস্ফুট স্বরে নির্দেশ পাওয়া যায় শুয়ে পড়ার। আরেক সিঙ্গেল খাটে বম কম্বলে প্যাকেটজাত ও আধ শোয়া হয়ে খাটের নীচ থেকে টেনে নেওয়া ছোট্ট পানীয়ের বোতল, কড়া স্বাদের মারমা লিকারটির নাম - প্রাইং। শীত ও ক্লান্তি নিবারণে বিন্নি ভাতের এই চোলাইটির কার্যকারিতা বিস্ময়কর। কয়েক চুমুক পান করার পর বুদ্ধ তার খাট থেকেই হাত বাড়ায় বোতলটির দিকে, দু-এক টানেই শূন্য করে ফেলে। টর্চের লালচে আলোয় ক্রেওকাডং শিখর জয়ের পরিকল্পনা করা হয়। তার আগে বগালেক তো অবশ্যই…

    লোকালয় বিচ্ছিন্ন বান্দরবানের রুমার দূর বগালেকের পাড়ের রেস্ট হাউজ কাম মাচাং ঘরটি প্রাচীন কোনো গুহা বলে ভ্রম হয়। যেন পথহারা দুই পর্বত অভিযাত্রী অবিরাম পরিকল্পনা করে চলেছে উদ্ধারের আশায়। বন মোরগের ঝাঁক প্রাতরাশ সারতে বেরিয়ে তীব্র চিৎকারে ডাকে বার বার। দ্বিপাক্ষীয় আলোচনা দ্রব্যগুণের প্রলাপে ছেদ পড়ে।

    এমনি করে সকাল খানিকটা চড়লে নয়টা নাগাদ দেখা মেলে সুর্যদেবের। আউট অব ফোকাস থেকে আস্তে আস্তে দৃষ্টি গোচর হতে থাকে লেকপাড়ের বম পাড়া। আড়মোড়া ভেঙে একসঙ্গে বেরিয়ে পড়া। জগের পানিতে চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে মাইনস-সিক্স-বাইফোকাল চশমার কাঁচের ভেতর দিয়ে প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে আর বাক্য সরে না। সামনে হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন নীলাভ রঙা সুবিশাল এক প্রাকৃতিক জলাশয়– বগালেক! অশেষ অপার বিস্ময়ের বগালেক!

    এই লেক, লেক ঘেরা সবুজ পাহাড়ের দেয়াল, বম পাড়া – সবই বুদ্ধর খুব চেনা। তবু একান্ত মুগ্ধতাটুকু ওকেও স্পর্শ করে আরেকবার।
    অলিম্পাস অটো-জুম ক্যামেরার শাটার টিপে ঝটপট তোলা হয় একের পর এক ছবি। তখনো কুয়াশায় মোড়া হ্রদের দূর পাড়ে যেন সাদা রহস্য-ঝাঁক উড়ে যায়। বুদ্ধ বলে, ওগুলো নিছক কুয়াশা নয়, বিশাল এক সাদা বকের দল। লেকে মাছ শিকারে নেমেছে।

    এরপর লেকপাড়ের বড় বড় পাথরের বোল্ডারের একটি দখল করে বসা।পায়ের নীচে বরফ শীতল স্বচ্ছ পানিতে ভাসতে থাকে থোকা থোকা লাল শাপলা-শালুক। সেখানে ঘাই মারে ট্যাংরা-পুঁটির ঝাঁক। বুদ্ধ কোথা থেকে একটি বাঁশের কঞ্চি নিয়ে শাপলা-শালুক লতা টেনে নেয়। বলে,আমরা আজ সকালে খানিকটা সিঁদোল শুটকি দিয়ে এই লতার ঝোলের সঙ্গে গরম ভাত খাবো। সঙ্গে থাকবে কচি লেবুর পাতা। তারপর বম গ্রাম প্রধান সাংলিয়ান কারবারিকে গাইড বানিয়ে উঠে যাবো ক্রেওক্রাডং-এর চূড়ায়।

    আরো পরে সকালের আহার শেষে ক্রেওক্রাডং-এর দীর্ঘ পথযাত্রায় একের পর এক চড়াই-উতরাই, গিরিখাদ, ঝরনা ও ঝিরি পেরোতে পেরোতে সাংলিয়ান দা'র কাছে শোনা হবে বগালেক নিয়ে প্রাচীন এক বম উপকথা।
    যাত্রা বিরতি হয়, নাম বিস্মৃত একটি ছরার পাশে। শীতলতর অবাক জলপানের পর ভূপতিত মৃত গাছের গুঁড়ির ওপর বসলে কারবারি দা' খুলে বসবেন মালাকাইটের ঝাঁপি। ...

    বম ভাষায় বগা লেক হচ্ছে-- বগা রেলি। 'বগা' মানে অজগর, আর 'রেলি' হচ্ছে লেক। লেকের উত্তরে বাস ছিলো এক ম্রো পাড়ার। সেটি ব্রিটিশ আমলেরও আগের কথা।

    একবার ম্রো' শিকারিরা পর্বতের গুহা থেকে বিশাল এক অজগর সাপ জ্যান্ত ধরে ফেলে। পাড়ার সবচেয়ে বুড়ো লোকটি অনুরোধ জানান, সাপটিকে যেন অবিলম্বে আবার বনে ছেড়ে দেওয়া হয়; কারণ এটি কোনো সাধারণ অজগর নয়, এটি হচ্ছে পাহাড় দেবতা। বুড়োর কথায় কেউ কান দেয় না।

    ওই রাতে সবাই মিলে গ্রামের উঠোনে জ্বালে বড়সড় এক অগ্নিকুণ্ড। তারা সাপটিকে আগুনে ঝলসে মহা আনন্দে মদ দিয়ে খায়। সুস্বাদু সাপের মাংসর ভাগ পায় গ্রামের সকলেই। কেবল সেই বুড়ো লোকটি সাপের মাংস ছুঁয়েও দেখেন না। সেদিনই ভোর রাতে বিরাট এক পাহাড়ি ঢল নেমে আসে ম্রো গ্রাম জুড়ে। পানির তোড়ে ভেসে যায় পুরো গ্রামটি, অজগর-পাহাড় দেবতার অভিশাপে মারা পড়ে সবাই। কিন্তু অলৌকিক আশীর্বাদে বেঁচে যান একমাত্র সেই বুড়ো লোকটি। অজগর-অভিশপ্ত ওই পানির ঢল থেকেই বগালেকটির সৃষ্টি। এখনো নাকি সেই ম্রো বুড়োর ভিটে আর অজগরটির গুহা অবিকল টিকে আছে…।
    ________________
    http://www.amaderchhuti.com/mag5/story_bogalake.php
  • DB | 125.25.***.*** | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৯:১৪583149
  • বিপ্লববাবুকে আমন্ত্রন জানানর জন্য ধন্যবাদ।আমি পরবর্তী সময়ের লেখা অবশ্যই আপনাদের কাছে পাঠাব।
  • DB | 213.17.***.*** | ১৯ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:১৩583150
  • খাজুরাহোতে পৌঁছে ছোট্ট ছিমছাম শহরটাকে দেখে বেশ ভালো লাগল।বিশেষ করে শ্যাম পোদ্দার চক এ যেখানে মধ্যপ্রদেশ প্র্যটন বিভাগের ঝঙ্কার হোটেলটি অবস্থিত সেই জায়্গাটা খুবই সুন্দর।চৌরাস্তার মোড়ে সুদূর অতীতে যে সব শিল্পী ভাস্করেরা মন্দিরের গায়ে তাঁদের কল্পনাকে রুপের আধারে ধরেছেন তাদের স্মরণে একগ্রচিত্তে পাথরের বুকে খোদাইকর্মরত এক শিল্পীর প্রতিকৃতিস্থাপন করা হয়েছে।ভারতবর্ষের অন্যত্র যেখানে যত বিখ্যাত মন্দির আছে সেগুলির নির্মানের যাবতীয় কৃতিত্ব সমকালীন রাজাদের ওপরেই বর্তেছে।যে সমস্ত শিল্পী একদা নিজেদের শ্রম, স্বপ্ন দিয়ে অসামান্য শিল্পকীর্তি স্থাপন করেগেছেন তাঁরা উপেক্ষিতই থেকে গেছেন।খাজুরাহো তার ব্যক্তিক্রম।
    খাজুরাহের মন্দিরগুলি পুর্ব,পশ্চিম ও দক্ষিন – এই তিন খন্ডে এক একটি গুচ্ছে অবস্থিত। শ্যাম পোদ্দর চক থেকে যে রাস্তাটি রাজনগরের দিকে চলে গেছে হোটেল থেকে বেরিয়ে সেই পথ ধরেই হাঁটা দিলাম আমি ও জেমস পরের দিন সকালে। দশ কি বারো মিনিট হাঁটতেই একটা বাজারে পৌঁছে গেলাম।বাজারে রাস্তার একধারে সারি সারি দোকান ,রেস্তোঁরা,ব্যাঙ্ক , বাহারে সাজপোষাক আর স্থনীয় হস্ত শিল্প সামগ্রীর সম্ভার সাজান দোকানগুলিতে।আর উল্টো দিকে বেশ বড় একটি জলাশয় – নাম শিবসাগর।
    বাজারের মধ্যে দুকদম এগোতেই দেখি সামনে অনুচ্চ পাঁচিল।দুটি গেট দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পরে কিন্তু গাড়িঘোড়ার প্রবেশ নিষেধ।ভালই ব্যবস্থা।নিস্চিন্তে পর্যটকেরা হাঁটা চলা করতে পারবেন এই ঘের জায়গায়।এখানেও দেখি বেশ জমজমাট বাজার।সেই জমজমাট বাজারেরই এক ধাকে রেলিং দিয়ে ঘেরা এক বিস্তীর্ণ বাগানে অবস্থিত পশ্চিম খন্ডের মন্দির গুচ্ছ।দশ টাকার তিকিট কেটে ঢুকতেই সিকিউরিটির লোকেরা এগিয়ে এলো আমাদের তল্লাশী নিতে।ভারতীয় প্রত্নতাত্বিক বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত মন্দির প্রাঙ্গনে পাছে কেউ অস্ত্র বা বিষ্ফোরক নিয়ে ঢুকে পড়ে সেদিকে কড়া নজর কর্তৃপক্ষের।তল্লাশীতে জেমস পার পেয়েগেলন অক্লেশে,আটকে গেলাম আমি।আমার পকেটে এক প্যাকেট সিগারেট ও একটি দেশলাই আবিস্কার হল।অবশ্য সেগুলিকে নিজেদের হেপাজতে রেখে সিকিউরিটি আমাকে ছড়পত্র দিল সংরক্ষিত উদ্যানে প্রবেশের।
    আমার চার পাশে এখন সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ।মাঠের মাঝে জায়গায় জায়গায় ছোটো বড় অনেকগাছ – আর সেই গাছের ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ল মাঠের দূর প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মন্দির গুলি।মন্দির তো নয় যেন এক একটা সোনায় মোড়া কারুকার্যখচিত রাজপ্রাসাদ !গৈরিক বর্ণ বেলে পাথরে তৈরী মন্দিরের গায়ে প্রভাতী সূর্যের আলো পড়ে পাকা সোনার মতই রঙ ধরেছিল মন্দিরগুলি।দুপাশে কেয়ারি করা বাগান এর মাঝখান দিয়ে পর্যটকদের হাঁটার জন্য কংক্রিটের রাস্তা।সেই রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলাম মন্দিরের সারির সামনে।আমাদের বাঁয়ে জমি থেকে সাত – আঠ ফুট মত উঁচু একটা বিশাল চাতালের ওপরে সকালের সোনালি রোদ্দুরে ঝলমল করছে ল্ক্ষন মন্দির।স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম কয়েক মুহুর্তের জন্য।কি বিপুল আয়োজন!অথচ কি অসামান্য সঙ্গতী সেই আয়োজনের সমাহারে !সামনেই দেখতে পাচ্ছি জমি থেকে নয় কি দশ ধাপ সিঁড়ির উঠে গেছে অনুচ্চ পাথরের দেওয়াল ঘেরা চাতালে - সেই চাতালের মাঝখানে মাথাউঁচু করে দাঁড়িয়ে মন্দিরটি।
    আবিষ্ট ভাব কাটিয়ে এগিয়ে গেলাম দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে (খৃঃ৯৩০-৯৫০) রাজা যশোবর্মনের আমলে তৈরী লক্ষনের মন্দিরের কাছা কাছি।
  • DB | 125.187.***.*** | ২০ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৩৫583151
  • মন্দিরচাতালের পাশ দিয়ে রাস্তা করা আছে চাতল বেষ্টন করে ঘোরার জন্য।চাতালের গায়ে অসংখ্য পাথরের মূর্তি।এক একটি ব্লকে কোথাও সৈন্যদলের মহা সমারোহে যুদ্ধযাত্রার বর্ণনা।একদল পদাতিক ,তাদের পিছনে এক অশ্বারোহী,আবার দুজন পদাতিক সৈন্যের পিছনে গজবাহিণি।প্দাতিক সৈন্যদের কাঁধে উদ্যত তরবারি।ঘোড়া হাতি ইত্যদি পশুর গড়ণ এককথায় অসাধারণ।একটি প্যানেলে দেখা গেল সামনে ভেরি ,বাঁশি,ঢোলক,খঞ্জনী প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের বৃন্দ-সঙ্গীত সহযোগে সৈন্যবাহিনীর কুচকাওয়াজের দৃশ্য।আমার মনে হল এ কোন যুদ্ধ জয়ের বিজয়মিছিল বুঝিবা।নক্সা কাটা প্যানেলও রয়েছে মাঝে মধ্যে।
    চাতালের চারপাশ পরিক্রমা করতে করতে হঠাৎ একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়াতে হল। আমার সামনেই পর পর কয়েকটি প্যানেল জুড়ে বিভিন্ন ভঙ্গীমায় রতিক্রিয়ারত নারী পুরুষের কিছু মূর্তি।আত্মরতি,মুখ মেহন থেকে শুরু করে অজাচার - কিছুই বাদ নেই সেখানে। ঐ প্যানেলগুলোর কাছেই অন্য একটি প্যানেলে দেখা মিলল তথাকথিত ”69” আসনে সম্ভোগলিপ্ত যুগলের।নিজেকে ঠকান সবচাইতে কঠিন কাজ।স্বীকার করে নেওয়া ভালো খুব খুঁটিয়ে দেখেও ঐ কয়টি প্যনেলের মূর্তিগুলির মধ্যে আমি সৌন্দর্য আবিষ্কারকরতে পরিনি।তাদের রঙ,><Texture গড়ন সবকিছুই অন্যান্য প্যানেলের মূর্তি গুলির সঙ্গে সমন্জস্যহীন ও বালখিল্য বোধ হয়েছে।তবে স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে এ মনভাবের পিছনে আমার ব্যক্তিগত সংস্কার কাজ করেছে কিনা সে ব্যপারে আমি একশো ভাগ নিশ্চিত নই।
    মূল চাতালের চারকোনে চারটি অপেক্ষাকৃত ছোটো মন্দির।তাদের একটির পরিচয় পাওয়া গেল। প্রাথমিক পর্বে এই ছোটো মন্দিরটি গরুড়ের জন্য প্রস্তুত হয়েছিল।কিন্তু পরবর্তী কোন এক সময়ে গরুড়ের পরিবর্তে সে মন্দিরে ঠাঁই পেয়েছেন ব্রাহ্মনি নমে এক দেবী।
    যদিও স্থাপত্য বিদ্যায় আমার কোন অধিকার নেই , তবু মন্দিরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার আনাড়ি চোখ দিয়েই বুঝে নিতে চেষ্টা করলাম মন্দিরের গঠনশৈলী।চাতালের তল থেকে আরো সাত আঠ ফুট উঁচুতে মন্দিরের প্রধান প্রবেশ তোরন।তোরনের দুপাশে দুটি বর্গাকার থাম – থামের মাথায় পাথরের ছদ এবং তার ওপরে তোরনের গম্বুজাকৃতি চুড়া।তোরনের উপরিভাগে দুদিক থেকে ঝোলানো দুটি কুমীরের(কুমিরের চেয়ে বিছের সঙ্গেই সেগুলির সাদৃশ্য বেশি) দেহ ঠিক তোরনের মাঝামাঝি এসে মিলিত হয়েছে অনেকটা মকরমুখি বালার মত।প্রাচীন স্থাপত্য রীতিতে একেই বোধ হয় মকর তোরণ বলা হয়।
    তোরনের চুড়র পিছনে অপেক্ষাকৃত উঁচু মন্ডপের চুড়া এবং সবার পিছনে সবচাইতে উঁচু চুড়াটি গর্ভ্গৃহের। চুড়াগুলির মাপ এমন ভাবে নির্ধারণ করা যে দূর থেকে দেখলে প্রত্যেকটি চুড়র শীর্ষ বিন্দুগুলিকে তেরছা ভাবে টানা একটি কল্পিত রেখায় যোগ করা যায়।তোরণের দুই পশ থেকে দেখা যায় দুটি সুক্ষ্ম কারুকার্যে কন্টকিত বার্ন্দা।আমার অনাড়ি চোখ বারান্দাগুলির সঙ্গে রাজস্থানের প্রাসাদের ঝরোখার মিল আছে বলে মনে হল।
    মান্দিরের গায়ে খোপে খোপে অসংখ্য মূর্তি।তার মধ্যে আছে বিভিন্ন দেবতার মূর্তি পাশাপাশি দেখা যাবে সুরসুন্দরী ও অপ্সরাদের।তার দেবতার সেবার জন্য উপস্থিত।
    চাতল থেকে সাত আট ধাপ সিঁড়ি ভেংএ তোরন পারহয়ে একটি সরু প্রবেশ পথ পেলাম।সেই সরু প্রবেশ পথের প্রান্তে মন্দিরের অন্দরে প্রবেশের দরজা।মাথার ওপরে অপূর্ব নক্সা কাটা চাঁদোয়া- তার বর্ননা করি এমন ভষার কেরামতি আমার অধিগত নয়।মন্দিরের ভিতরে পা যে হল ঘরে পা রাখলাম তার চার দেওয়ালে নানাভঙ্গিমায় খোদাই করা অসংখ্য অপ্সরার মূর্তি।হলের মাঝখানে একটি বর্গাকার মন্ডপ।মন্ডপের চার কোনে চারটি কারুকার্য খচিত থাম ওপরের চাঁদোয়াকে ধারণ করে আছে।সেখানেও পাথরে খোদাইঅ করা নক্সার কাজ দুচোখ ভরিয়ে দেয়।
    সামনেই প্রায়ান্ধকার গর্ভগৃহ।তার মুখেও বিষ্ণুর মৎস,বড়,অর্ধনারীশ্বর প্রভৃতি অবতারের মূর্তি তথা নবগ্রহের মুর্তি খোদাই করা রয়েছে।
    গর্ভগৃহে বিশঁউর মুর্তি অতীতে পুজিত হত।বিগ্রহটি টিকে আছে বতে কিন্তু তার পুজার্চনা বন্ধ হয়ে গেছে বহু শতাব্দী আগে। গর্ভগৃহ ঘিরে একটা সরু প্রদক্ষিনা পথ।সেই প্রদক্ষিনা পথে ঘুরতে ঘুরতে অবক হয়ে দেখলাম শুধু মন্দিরের বাইরের দেওয়াল নয় – ভিতরেও অগুন্তি অপ্সরা সুরসুন্দরীদের ভিড়।তাদের দেখতে দেখতে মনে হল সুদূর অতীতে নারী দেহের সৌন্দর্যের বিষয়টিকে পরিস্ফুট করার জন্য ভাস্করেরা মুখ মন্ডল,পীনোদ্ধত বক্ষ এঅবং নিতম্ব - দেহের এই তিনটি অঙ্গে বিশেষ ভাবে আলোকপাত করতে চেয়েছেন ।রস শাস্ত্রের কথা জানিনা এ আমার একান্তই ব্যক্তুগত পর্যবেক্ষণ।
  • DB | 125.187.***.*** | ২২ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:৪৯583152
  • মন্দিরের গড়ন এবং তার গায়ে বিবিধ ভস্কর্যের যে নিদর্শণ দেখেছি তার কথা লিখতে গিয়ে লক্ষণ মন্দিরের ভিতরে মন্ডপটার কথা বলা হয়নি।অবশ্য তার সৌন্দর্য বর্ণনা করি এমন ভাষার দৌড় আমার নেই।মন্ডপের চার কোনে চারটি থাম মন্ডপের অসাধারণ সুন্দর নক্সাকাটা চাঁদোয়াকে ধরে রেখেছে।প্রতিটি থামের মাথায় নানান ভঙ্গীমায় অপ্সরা মূর্তি।মন্দিরের দুই ধারে যে বারান্দার কথা উল্লেখ করেছিলাম সেখান দিয়ে বাইরের আলো এসে মন্দিরের ভিতরে আলোআঁধারি এক মায়বী পরিবেশ তৈরী করেছিল।সেই মায়াবী আলোআঁধারির মধ্যে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছিল জগতে আর যা কিছু আছে সব মিথ্যা – সত্য শুধু নিপুন হাতে গড়া এই সৌন্দর্যরাশি।আনন্দে ভরে ওঠে মন।
    লক্ষণ মন্দিরের ঠিক মুখোমুখি বরাহ মন্দির , আর বাঁপাশে প্রত্নতাত্বিক বিভাগের ঘেরা জায়গার ঠিক বাইরে মাতঙ্গেশ্বর মন্দির।সে মন্দিরে এখন মাতঙ্গেশ্বর শিবের নিত্যপূজা চালে আমরা সে মন্দিরে গেলামনা। বরাহমন্দিরে অতিকায় এক বরাহের প্রস্তর মূর্তি দেখা গেল।তার সারা গায়ে ছোটোছোটো অগুন্তি বিষ্ণু মূর্তি খোদাই করা।এটিকে ঠিক মন্দির বলা যায় কিন জানিনা।বরহাবতারের মূর্তির মাথার ওপরে চাদ একটা আছে – সে চাদকে ধরে রেখেছে আটতি থাম।ব্যাস বাদবাকি চার্দিক খোলা। ঝটপট ছবি তুলে নিয়ে পা বাড়ালাম কান্ডারিঅ মহাদেব মন্দিরের দিকে।
    দুপাশের সবুজ ঘাসের লনের মাঝখান দিয়ে কংক্রিটের পায়ে চলার পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে জেমসের মাথায় প্রশ্ন জাগল ”এত মন্দির কেন!সেকালে রাজাদের কি একাই জায়গায় একের পর আর একটা মান্দির তৈরী করান ছড়া আর কোন কাজ ছিলনা !” এ প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই – শুধু অনুমান করতে পারি হয়ত তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের নাম অক্ষয় করে রাখার লক্ষ্যে হয়ত মন্দিরগুলি স্থাপন করে গেছেন।তা ছাড়া একই জায়গায় শিব, বিষ্ণু এবং জইন মন্দির স্থাপনার ঘটনাটাকে হয়ত চান্দেলা রাজাদের সর্বধর্মসমন্বয়ের সচেতন প্রয়াস হিসেবে দেখা যেতে পারে।
    কথা বলতে বলতে আমরা হাজির হয়ে গিয়েছিলাম কান্ডারিয় মাদেবের মন্দিরের সামনে।লক্ষণ মন্দিরের প্রায় একশোবছর পরে একাদশ শতাব্দিতে(খৃঃ১০২৫-৫০) স্থাপিত মন্দিরটি সম্ভবত খাজুরাহো মন্দির গুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ ও সৌন্দর্যের বিচারেও সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়।
    লক্ষণ মন্দিরের মতই মাটি থেকে সাত কি আটফুট উঁচু দৈর্ঘে ১০২ফুট তিন ইঞ্চি প্রোস্থে চেষট্টিফুট দশ ইঞ্চি মাপের বিশালায়তন এক চাতেল্র ওপরে মন্দিরটি স্থাপিত।চাতালের সামনের দিকে এক কোনে একটি সিংহমূর্তি –একটি অসমসাহসী বালক সিংহের সঙ্গে লড়াই করছে।সিংহের সঙ্গে লড়াইরত বালকের মূর্তিটিই নাকি চান্দেলা রজশক্তির প্রতীক(emblem)রূপে গন্য করা হয়।
    চাতল থেকে পনেরো ধাপ সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয় মন্দিরের প্রবেশ তোরণে।সিন্ড়ির নির্মানেও অভিনবত্ব আছে দেখলাম।মূল সিঁড়ির দুইপাশ থেকে বেশ কয়েক ধাপ করে সিঁড়ি উঠে মূল সিঁড়ির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাঝ পথে।সেই অভিনবত্বের কারণেই একটু দুর থেকে সিঁড়ির সারিটাকে দেখতে অনেকটা পিরামিডের মত লাগে।
    লক্ষন মন্দিরের মতই এখানেও সেই মকর তোরণ পেরিয়ে একটা লম্বা বারান্দা পার হয়ে মূল মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়।ভারতীয় মন্দির স্থাপত্য কলায় এই বারান্দার নাম অর্ধমন্ডপ।মন্দিরের অভ্যন্তরে বিশাল যে হলঘরে প্রথম পা রাখলাম সেটি মন্ডপ।তার মাঝ বরাবর সামান্য উঁচু এবং অপেক্ষাকৃত ছোটো বর্গাকার ক্ষেত্রটি মহামন্ডপ। মহামন্ডপের পর গর্ভবৃহ যেখনে শ্বেত পাথরের শিবলিঙ্গ। গর্ভগৃহকে প্রদক্ষিন করে সরু যে প্যাসেজ তা প্রদক্ষিনাপথ। লক্ষণ মন্দিরেও আমরা এই অঙ্গগুলি দেখেছিলাম।কান্ডারিয় মহাদেব মন্দিরে তার অতিরিক্ত যা পেলাম তা হল অন্তরাল।মন্ডপের দুপাশের দেওয়ালে খোপ কেটে ছোটো ছোটো অনেক গুলি প্রকোষ্ঠ মত আছে – সম্ভবত এগুলিকেই অন্তরাল বলে।
    মহামন্ডপের চার কোনে চারটি থামের ওপরে ভর করে মাথার ওপরে ঘন্টাক্রিতি কারুকার্যময় চাঁদোয়ার সৌন্দর্য ভাশার অতীত।তবে লক্ষন মন্দিরের তুলনায় মহামন্ডপের থামগুলি অপেক্ষাকৃত নিরলঙ্কার।থামের মাথায় আছে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দাঁঋয়ে থাকা অপ্সরামূর্তি।ভারি সুন্দর তাদের দাঁড়ানর ভঙ্গি।মন্দিরের বাইরেরদেয়ালে অগুন্তি মূর্তি।তার মধ্যে আছে অনেকগুলি বিষ্ণু,শিব এবং ব্র্ম্হার মূর্তি।তার পাশাপাশি আছে বহু অপ্সরা ।তাদের দেহের ভঙ্গী চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।এখানে দেখলাম বিভিন্ন আসনে নরনারীর যৌন মিলনের বেশ কিছু দৃশ্য।লক্ষণ মন্দিরের চাতালের দেয়ালে যেমন দেখেছিলাম তাদের তুলনায় এই মূর্তিগুলি সম্পূর্ণ ভিন্ন জাতের। Kই অপূর্ব ছন্দময় তাদের দেহভঙ্গীমা।প্রায় জীবন্ত মূর্তিগুলির মুখেচোখে,সমস্ত অঙ্গপ্রতুঅঙ্গে মনোগত আবেগ যেন বাঙ্ময় হয়ে ফুটে উঠেছে !নীতিবাগিস মাথায় থাকুন যৌনতাকে শিল্পের এই পর্যায়ে তুলে নিয়ে যাওয়া যায় তা হলে !!
    একই চাতালে কান্ডারিয় মহাদেব পন্দিরের পাশেই অবস্থিত জগদম্বী মন্দির,মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী পার্বতী।
    কান্ডরিঅ অমহাদেব ও জগদম্বি মন্দির দেখা শেষ করে আমরা যখন বার হলাম ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে বারোটা বাজে।কিছুটা তাড়াহুড়ো করেই দেখে নিলাম বিশ্বনাতহ মন্দিরটি।একাদশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ায় তৈরী মন্দিরের চাতালে ওঠার জন্য সিঁড়ির দুপাশে দুটি হাতির চমৎকার প্রস্তর মূর্তির দেখা পেলাম।চাতালের এক পাশে শিবের মন্দিরটির গড়ণ অনেকটাই লক্ষমণ মন্দিরের মত। লক্ষণ মন্দিরের মুখোমুখি যেমন বরাহ মন্দির এখানেও তেমনি বিশ্বনাথ মন্দিরের মুখোমুখি নন্দী মন্দিরটি।
    বস্তুত আমাদের মত স্থাপত্য ও ভাষ্কর্য বিদ্যায় অদীক্ষিত লোকের চোখে এক একটি মন্দিরের নির্মাণশৈলীর পার্থক্য ধরা পড়েনা –তাই প্রায় সাড়েতিন ঘন্টা ধরে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে শেষ দিকে কিছুটা একঘেয়েমি এসে গিয়েছিল সেই সঙ্গে খিদে ও ক্লান্তির কথাও ভোলার নয়।মন্দিরের এলাকা ছেড়ে আহারের সন্ধানে বেরতেই হল।
  • শিবাংশু | 127.2.***.*** | ২২ ডিসেম্বর ২০১২ ১৯:১৩583153
  • সঙ্গে আছি।
  • DB | 125.187.***.*** | ২৪ ডিসেম্বর ২০১২ ১৭:৫৪583154
  • প্রত্নতাত্বিক বিভাগের সংরক্ষিত অঞ্চল থেকে বেরিয়ে রওয়ানা হলাম ”দাদাবৌদির হোটেল”এর উদ্দেশ্যে পুব মুখো।পশ্চিমভাগের মন্দির দেখতে ঢোকার আগে বাজারের মধ্যে একটা সাইনবোর্ডে দেখেছিলাম বাঙালী খাবারের দোকানটির নাম।তখনই জেমস ও আমি উভয়েই ঠিক করে রেখেছিলাম দুপুরে ঐ হোটেলেই খাব।
    হাঁটতে হল কিছুটা পথ একটা এঁদো গলির মধ্যে দোকানটিকে খুঁজে বার করতে। ডাদাবৌদির হোটেল নামেই হোটেল , আসলেতে একটা বড় দোকান ঘরে কয়েক সারি টেবিল চেয়ার নিয়ে হোটেলের ”ডাইনিং রুম।কাঁচা রাস্তা থেকে সেখানে ঢোকার মুখেই হাতমুখ ধোবার কল ও বেসিন।খাবার ঘরের ঠিক পিছনেই লাগোয়া রান্না ঘর – ঘরের সেদিকে দেওয়ালটা বিশ্রী রকমের তেলচিটে।আমার ভয় হল জেমস হয়ত এই নোংরা পরিবেশে খেতে রাজি হবেননা।কারণ খাওয়াদাওয়া নিয়ে তাঁর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতারব্যপারে খুঁতখুঁতুনির পরিচয় ইতিপুর্গেই পেয়েছি।আমাকে কিছুটা অবাক করে জেমস দেখলাম সে ব্যপারে কোন উচ্চবাচ্চ্য করলেননা।নির্বিবাদে হাত মুখ ধুয়ে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে গুছিয়ে বসলেন আমার মুখোমুখি।
    বছর তিরিশ বত্রিশ বয়সী এক যুবক দুজয়গয় ভাত,>Daala<,>aalubhaajaa<, আর আলুপোস্তো তরকারি এনে দিল আমাদের দেওয়া খাবারের ফিরিস্তি মিলিয়ে। সে খাবারের স্বাদ গন্ধএর ব্যাখান আর নাইবা করলাম।খিদের মুখে যা পাওয়া যায় তাই অম্রিত সমান।
    পেটে ভাত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হল একটু যেন ঝিমুনি লাগছে।সকাল নটা থেকে দুপুর একটা অবধি চারঘন্টা একটুও বসা হয়নি – উল্টে সিঁড়ি ওঠানামা করতে করতে কোমরে পায়ে ব্যথা ধরে গেছে – অতয়েব হোটেলে ফিরে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার সন্ধ্যাবেলা light and sound showদেখতে আসা যাবে বলে ফিরে গেলাম হোটেলে।
    Light and sound show দেখার জন্য সন্ধ্যে ছটার সময় মাথাপিছু একশো কুড়িটাকা দিয়ে খোলা মাঠের মধ্যে সাজানো কয়েক সারি চেয়ারের প্রথম সারিতে গিয়ে বসলাম বটে কিন্তু ঠিক জমলনা শো।অমিতাভ বচ্চনের কন্ঠে ধারাভাশ্য মারফৎ খাজুরাহোর ইতিহাস সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা গেল।তবে সে শুধু রাজাদের কথা মাত্র।খাজুরাহোর কথা লিখতে বসে যে লোক কথার গল্পটি পরিবেশন করেছিলাম সেটি এখান থেকে সংগ্রহ করা।
    তবে স্বীকার করতেই হবে যে দিনের আলোয় মন্দিরগুলিকে যখন দেখেছিলাম, তখন খুঁটিয়ে স্পষ্টভাবে সবকিছু দেখেছিলাম – সে এক রকম মুগ্ধতা,আবার রাতের বেলা কৃত্রিম আলোক সম্পাত কয়েক ঘন্টা মাত্র আগে দেখা মন্দিরগুলিকে ঘিরে দেখা-নাদেখায় মেশা এক রোমাঞ্চকর বিভ্রম সৃষ্টি করল।
    শহরে অশান্তির দরুণ জবলপুর এ একটি মাত্র দিন থেকেছি।ইচ্ছা থাকা সত্বেও শহরটা ঘুরে দেখা হয়নি,রাণী দূর্গাবতীর নামাংকিত সংগ্রহশালাটি না দেখেই আমরা চলে এসেছি খাজুরাহোতে।কাজেই খাজুরাহোতে আমাদের থাকতে হবে একটি অতিরিক্ত দিন।তাই মন্স্থ করলাম অবশিষ্ট পুর্বভাগের ও দক্ষিনভাগের মন্দিরগুলি আমরা দুদিনে রয়ে বসে দেখব।এবং মাঝে পশ্চিমের মন্দিরগুলিকে আরো একবার অন্তত দেখে নেব খাজুরাহো ছেড়ে যাবার আগে।
    পুর্ব ও দক্ষিন ভাগের মন্দির গুলিযে শুধু সংখ্যায় কম তাই নয় গ্ল্যামারের দিক দিয়েও পশ্চিমভাগের মন্দিররাজির তুলনায় ম্লান। পার্শ্বনাথ আদিনাথ প্রভৃতি জইনমন্দিরগুলি পশ্চিমেরা মন্দিরের আদলেই নির্মিত – যদিও আকার আয়তনে অনেকটাই ছোটো।কিন্তু পার্শ্বনাথ আদিনাতহ মন্দিরে এমন কিছু মূর্তির দেখা পেলাম মন্দিরের গায়ে যে সেগুলি না দেখলে খাজুরাহোর মন্দির দর্শন আমার অসম্পূর্ণই থেকে যেত।
    বেশ কিছু মিথুন মূর্তি এখানেও দেখা গেল তবে তাদের ছাপিয়ে বড় হয়ে দেখা দিল বিভিন্ন ন্R্তিত্য ভঙ্গীমায় রচিত অপরূপ কিছু নারী মূর্তি।এক সুন্দরী নৃত্যপটিয়সির মূর্তি দেখলাম পায়ে নুপুর পরছে ।যেন নুপুর পরা শেষ হলেই মেতে উঠবে নাচে। কাছেই নৃত্যরতা আরএকটি নারী মুখটির দেখা মিলল ।তার মুখ ঈষৎ ওপরের দিকে তোলা।ভাবের আবেশে যেন তার দুই চোখ মুদে এসেছে। মোহিত হয়েগেলাম তকে দেখে – মনে হল যেন সে জগৎসংসার ভুলে রুপের সাগরে ডুব দিয়েছে!তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার রক্তেও যেন লাগল ছন্দের দোলা।
    আর একটি মূর্তিকে দেখা গেল পিছন দিক ফিরে তার একটি পা মুড়ে ওপরের দিকে তুলে পায়ের পাতায় ফুটে থাকা কাঁটা তুলছে। তার দাঁড়ানর ভঙ্গীটিও ভারি আকর্ষনীয়।
    দক্ষিনে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে একে অপরের থেকে দুরে দুরে দাঁড়িয়ে আছে বিষ্ণুর অবতার বামন মন্দির,তার চাতালে দাঁড়িয়ে দেখা যায় জাভেরি মন্দির ও কিছুটা দুরে একটা খালের পড়ে নির্জনে একা দাঁড়িয়ে থাকা দুল্হাদেও মন্দির।এই মন্দিরগুলির দেয়ালেও দেখামিলল অপূর্ব সব সূরসুন্দরী ও অপ্সরাদের মূর্তির।তবে ভোলা যাবেন দুল্হাদেও মন্দিরের(শিব মন্দির) গর্ভগৃহের সামনের ফ্রেমে এক নৃত্যাঙ্গনার নৃত্যভঙ্গিমা আর মাথায় মুকুট ্র্ণালঙ্কারে ভুষিতা এক অপরূপা অপ্সরার আনত মুখের প্রস্তর মূর্তিটির কথা।ব্রীড়াবনতা অপ্সরার গলে গবাক্ষ পথে আসা বাইরের আলো এসে পড়েছে – সে আলূয় যেন রাইয়ে উঠেছে সূন্দরীর গন্ডদেশ!।এমনই অসাধারণ জীবন্ত সে মূর্তি!
    (আগামি পর্বে সমাপ্য)
  • ranjan roy | 24.99.***.*** | ২৫ ডিসেম্বর ২০১২ ০১:১১583155
  • বেঁচে থাকুক বাসুদা ও জেমসের দোস্তি! প্রতিবছর এমন বেড়ানোর গল্প শুনতে চাই।
  • DB | 125.187.***.*** | ২৬ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৫৯583156
  • ইস্স্স্স্স্স্স্স্স্স্স্স্স্স।টাইপো দানবের দৌরাত্মে সুন্দরীর গন্ডদেশ এ আলু মাখামাখি হয়ে কেলোর কীর্তি হয়েছে দেখছি। কথাটা আলু নয় হবে আলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন