এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • সুবিনয় রায়

    DB
    গান | ০৮ নভেম্বর ২০১২ | ১০৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • DB | 125.25.***.*** | ০৮ নভেম্বর ২০১২ ১৩:৩০577310
  • তারা বাংলার সৌজন্যে আজ মনে পড়ে গেল আজ রবীন্দ্রসঙ্গীতের অন্যতম অগ্রগণ্য শিল্পী সুবিনয় রায় এর বিরানব্বইতম জন্মদিন । তারা বাংলায় আজ সকালের আমন্ত্রিত শিল্পী ছিলেন লোকান্তরিত শিল্পীর পুত্র শ্রী সুরঞ্জন রায় । সুরঞ্জনের গায়নে তাঁর প্পিতার গায়নভঙ্গীর ছাপ চিনে নিতে এতটুকু অসুবিধা হয়না – এমনকি মধ্য সপ্তকের ষড়জ স্বরটি যেভাবে একটু চাপা গলায় উচ্চারণ করতেন সুবিনয় রায় সুরঞ্জনের কন্ঠে যেন তারই অনুরণন শুনলাম – এমনকি সুবিনয় রায়ের অতি পরিচিত(ক্ষেত্র বিশেষে বিরক্তিকর ও বটে ) ম্যানারিজম ,থেকে থেকে গলা ঝেড়ে নেওয়া , অবধি নিখুঁত ভাবে আয়ত্ব করে নিয়েছেন সুরঞ্জন রায় । শুধু সুরঞ্জনের গায়নে পাওয়া গেলনা সুবিনয় রায়ের কন্ঠ লাবণ্য এবং সুরের অতলে একটু একটু করে তলিয়ে যাবার সুখানুভুতিটুকু । অবশ্য “আজ সকালের আমন্ত্রনে” র মত একটি জনপ্রিয় “টক - শো”তে বিশুদ্ধ সঙ্গীত রস আশা করাটা হয়ত একটু বাড়াবাড়ি ।তাই আমার ব্যক্তিগত অপ্রাপ্তিজনিত আক্ষেপের কথা থাক – আমি বরং ফিরে যাই সুবিনয় রায়ের কথায় ।
    সুবিনয় রায় কে প্রথম চাক্ষুস দেখেছিলাম এবং সামনে বসে তাঁর গান শোনার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল জামশেদপুরের “টেগোর সোসাইটি” পরিচালিত সঙ্গীত শিক্ষায়তনের ক্লাস রুমে । প্রায় প্রতি মাসে একটি রবিবার তিনি টেগোর সোসাইটিতে “স্পেশাল ক্লাস” নিতেন এবং সেই ক্লাসে শিক্ষার্থী আমাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকতেন আমাদের শিক্ষকরাও । গান তো শেখাতেনই তার সঙ্গে চলত গাননিয়ে নানান আলাপ আলোচনা । স্বীকার করতে লজ্জা নেই অল্প বয়সে সে সব আলোচনায় যোগ দেওয়া তো দূরস্থান – তার অনেক কথাই বুঝতামনা । কিছুটা হয়তো বুঝেছি উত্তর কালে সঙ্গীত চর্চার মধ্য দিয়ে ।
    আলাপ আলোচনার মধ্যে ঢুকতে না পারলেও গানটা শ্রবণ মাধ্যমে প্রাণে অবশ্যই ঢুকত । মনে আছে প্রথম যে দিন আমি ওই “স্পেশাল ক্লাসে” যোগ দেবার যোগ্যতা অর্জন করে দুরুদুরু বক্ষে বয়জ্যেষ্ঠদের মাঝে এককোনে গিয়ে বসেছিলাম সেদিন সুবিনয় রায় আমাদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত গানের তালিকা চেয়ে নিয়ে শেখাতে শুরু করলেন “আমার না বলা বাণীর ঘনযামিনীর মাঝে , তোমার ভাবনা তারার মত বাজে” গানটি।
    বালখিল্য ঔদ্ধত্বে নিজের মনে প্রশ্ন জেগেছিল গানের তালিকায় থাকা কঠিন কঠিন গানগুলি ছেড়ে সুবিনয় রায় হঠাৎ এই সহজ কীর্তনাঙ্গ সুরের গানটিকে বেছে নিলেন কেন । এখন মনে হয় গানটির আপাত সরল সুরের মধ্য দিয়ে গীতি কবিতার সাবলাইম রূপের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই হয় তো তাঁর লক্ষ্য ছিল সেদিন। একালের রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের গানে এই বস্তুটির অভাব ব্যক্তিগত ভাবে পীড়িত করে আমাকে । শিল্পী সুবিনয় রায়ের কন্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে শুনতে বারে বারে আমার ওই সাবলাইম রূপের কথাই মনে হয়েছে ।আমি নিজেও আমার গানের পরিবেশনায় চেষ্টা করি ওই সাবলাইম রূপটিকে স্পর্শ করতে । বেতারে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর কন্ঠে শুনেছিলাম – “আমার পরাণ লয়ে কি খেলা খেলাবে ওগো পরাণ প্রিয়”। এ গান আর কারো কন্ঠে অমন করে জাগিয়ে তোলেনি আমার চেতনাকে । “বাড়াবাড়ি” করার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে আপত্তি নেই আমার –তবু এ গান আর কারো গলায় শুনতে রাজি নই আমি ।
    সুবিনয় রায়ের প্রতি মুগ্ধতার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষানবিশী বেলায় একটু সন্ত্রস্ত হয়েও থাকতাম ।কারণ গান শেখাতে শেখাতে মাঝে মাঝে ধৈর্যচ্যুতি ঘটত তাঁর । গানের কোথাও সুরটি যথাযোগ্য ওজনে লাগলনা বা সুরের সূক্ষ্ম কারুকাজটি পরিপাটি ভাবে সম্পাদিত হলনা – এ জিনিষ সহ্য করতে পারতেননা । আর ক্লাসের কনিষ্ঠতম সদস্য হওয়ার অপরাধে রসভঙ্গের যাবতীয় দায় এসে পড়ত আমারই ঘাড়ে । এটাই আমার কাছে একটা বড় পীড়ার কারণ ছিল সে কালে ।
    মনে পড়ে একবার এক সুন্দরী ছাত্রী গানের খাতার বদলে তিনখন্ড গীতবিতান নিয়ে ক্লাস করতে এসেছিল বলে সুবিনয় রায় কঠিন স্বরে তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন –“কলকাতায় কোন ছাত্র বা ছাত্রী খাতা না নিয়ে ক্লাসে এলে তাকে বলি বাইরে বাজার থেকে একটা খাতা কিনে নিয়ে তবে ক্লাসে আসতে । এখানে দোকান বাজার কাছে নেই বলে সে কথাটা বলতে পারছিনা । পরের দিন থেকে খাতা না নিয়ে ক্লাসে আসবেননা” । সুকন্ঠী এবং সুন্দরী মেয়েটির অবস্থা দেখে সেদিন দেখার মত হয়েছিল । মেয়েটি সুবিনয় রায়ের বিশেষ অনুরাগী তথা জামশেদপুরের এক প্রখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের আত্মীয়া বলেই বোধ হয় অল্পে রক্ষা পেয়েছিলেন সেদিন ।
    গান ছাড়া সুবিনয় রায়ের আর দুটি জিনিষ আমাকে আকর্ষণ করত ,তার প্রথমটি হল তাঁর বেশভূষা । পাটভাঙ্গা ধুতি পাঞ্জাবী পরেই তাঁকে বেশীরভাগ সময় দেখতাম ।সে সাজের মধ্যদিয়ে একধরণের আভিজাত্য প্রকাশ পেত ।আবার পুরোদস্তুর ড্রেস স্যুটেও দেখেছি খুব পরিপাটি ভাবে সাজতেন ।এমনি পোষাক সচেতন মানুষ আর এক জনকে দেখেছি আমি ,তিনি বিমলভূষন ।
    দ্বিতীয় যে জিনিষটি আমাকে আকর্ষণ করত তা হল তাঁর বাচনভঙ্গী ।এই বাচনভঙ্গী সম্ভবত কলকাতার সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মপরিবার সুত্রে পাওয়া । সে সময়ে বাজারে ছিল চিনির আকাল। সাধারণ লোকে গুড় দিয়ে চা খাওয়া অভ্যাস করতে বাধ্য হয়েছিল – চিনি দেওয়া চায়ের খোঁজ পড়ত শুধু মাত্র অতিথী অভ্যাগতদের আপ্যায়নের বেলায় । সেই চিনি দেওয়া স্পেশাল চা বরাদ্দ ছিল সুবিনয় রায়ের জন্য । যে লোকটির ওপরে চা দেওয়ার ভার ছিল সে একবার অন্যমনস্ক হয়ে সবার সঙ্গে সুবিনয় রায়কেও গুড়ের চা ই দিয়ে গেছে । আমরা দেখলাম কথার ফাঁকে সুবিনয় রায় চায়ের কাপে একবার চুমুক দিয়ে মুখটা বিকৃত করলেন এবং তার পর আর সে কাপ হাতে তুললেননা । জনৈক কর্মকর্তার চোখে ব্যপারটা পড়া মাত্রই গোলমালটি অনুমান করে নিয়ে অপ্রস্তুত কন্ঠে সুবিনয় রায় কে বলেন “ইসস ... বোধ হয় ভুল করে আপনাকেও গুড়ের চা ই দিয়ে গেছে । দেখি আর এক কাপ আপনার জন্য পাঠিয়ে দিতে বলি”। সুবিনয় রায় তাঁর পরিচিত বাচনভঙ্গীতে বললেন ...”আরে না না ব্যস্ত হবেননা ।গুড়ের চা খেতে আমার বেশ ভাল ই লাগে” । বলার ধরণের কারণে এই বাক্যটি নিয়ে আমরা হাসাহাসিও করেছি বহুদিন ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন