এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পিঙ্কি প্রামাণিক প্রমান দিক

    মৌ
    অন্যান্য | ২১ নভেম্বর ২০১২ | ৮০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মৌ | 233.223.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৪১576945
  • একটি ধর্ষণের অভিযোগ জমা পরেছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। রোজই কোথাও না কোথাও ধর্ষণ ঘটে, কোথাও না কোথাও অভিযোগ জমা পরে। সামাজিক দৈনন্দিন ঘটনা। নিউজ চ্যানেল বা পেপার খুললেই দেখা যায়। শুধুমাত্র স্থান-কাল ও নাম পরিবর্তন। পুরোনো কাসুন্দি। তাই আমরা মেরুদণ্ড যুক্ত সভ্য সমাজের সরীসৃপ প্রাণীরা শুধুমাত্র হেডলাইন পড়েই চক্ষু ঘুরিয়ে নি। বেশীর বেশি ‘কোন স্থান’এ ঘটেছে সে নাম’টা দেখি, বাদ বাকি খবরের ভিতরের মাল মশলার ‘টেস্ট’ সেই একই। বোরিং।

    তবে 14th June, 2012, পশ্চিমবঙ্গে, ধর্ষণের অভিযোগে যাকে গ্রেফতার করা হয় তা দেখে শুধু আমরা বাঙালিদের না, গোটা ভারতের চক্ষু ঠুকরে বেরিয়ে পিংপং বলের মতন মাটিতে লাফাতে শুরু করেছে। যিনি অভিযুক্ত, তিনি হলেন পিঙ্কি প্রামাণিক। ‘পিঙ্কি’ নাম’টি শুধুমাত্র মেয়েদের মতন শোনায় না, উনি প্রকৃত একজন মেয়ে। বিশ্লেষণ করে বললে, উনি ‘জেন্ডার’ হিশাবে একজন মহিলা। বড় আশ্চর্য, বড় আশ্চর্য। একজন মহিলা আর একজন মহিলাকে ধর্ষণ করেছে! একি সম্ভব! যোনি দ্বারা যোনি ধর্ষণ সম্ভব, না’কি পিঙ্কির যোনির ভিতরে লিঙ্গ লুকানো আছে! পরীক্ষা করা দরকার। এই রকম গরমা গরম ধর্ষণের খবর রোজ রোজ পাওয়া যায় না। পাবলিকের মনে ভীষণ কিউরিসিটি। পিঙ্কিকে নিয়ে যাওয়া হয় মেডিক্যাল টেস্ট করতে, হাসপাতালের বাইরে লোকজনের ভিড়, ফল কি বেরোয়- পিঙ্কি পোলা না পুলি। ঘণ্টার পর ঘন্টা কাটে, দিনের পর দিন, টেস্টের পর টেস্ট, মাসের পর মাস কিন্তু ডাক্তাররা কোন রেজাল্ট দিতে পারেন না। ওদিকে আমাদের সাধারণ পাবলিকদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে পরেছে। যদিও আমাদের ‘ধৈর্যের বাঁধ’ একটু হিশাব নিকাশ করে ভাঙ্গে। লক্ষ-কোটি টাকার কারাপশান, কিংবা গন ধর্ষণ, শিশুদের উপর যৌন পীড়ন অথবা ঠাকুর দাদার ঠাকুরদা আমল থেকে চলে আসা ধর্মীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে আমাদের ‘ধৈর্যের বাঁধ’ অম্বুজা সিমেন্টের মতন অটুট থাকে। কিন্তু পিঙ্কি ছেলে কি মেয়ে তা জানবার জন্য আমাদের ধৈর্যের বাঁধে ফাটল দেখা দেয়। আমাদের সকলের মনে কমোন প্রশ্ন- এতো টেস্টের কি দরকার, প্যান্ট খুলে দেখলেই তো হল। এতে তো সময় লাগবে না। পিঙ্কি’কি জামাকাপড় খুলছে না!
    যাকেই জিজ্ঞাসা করি ‘পিঙ্কি কে? কেন সে খবরের শিরনামে? তার পরিচয় কি?’ সে উত্তর দেয়- ‘ঐতো, মেয়ে হয়ে একটা মেয়েকে রেপ করেছে। আচ্ছা, পিঙ্কি কি সত্যিই মেয়ে, না কি ছেলে হয়ে মেয়ে সেজে থাকত?’ ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে পিঙ্কির ছবি তুলে জেনারেল নলেজ হিশাবে একই প্রশ্ন- এ কে? কেন সে খবরের শিরনামে? ফেসবুকে পাবলিকদের উত্তর একই- ‘ঐতো, মেয়ে হয়ে একটা মেয়েকে রেপ করেছে’। সেই সাথে আরও একটা লাইন যোগ, “আচ্ছা পিঙ্কির MMS লিঙ্কটা কেউ দিতে পারবেন প্লিজ, খুব খুজেছি কিন্তু পাচ্ছি না কোথাও”।
    আমিও পিঙ্কির নাম জেনেছি ‘ধর্ষণ’এর খবর পড়ে। আমার মনেও প্রচণ্ড কিউরিসিটি পিঙ্কি কেস নিয়ে। এই পিঙ্কি মাল’টা কে?

    পিঙ্কি প্রামাণিক। পুরুলিয়ায় জন্ম, বয়স ২৬। পিঙ্কি একজন প্রাক্তন ভারতীয় ট্রাক মহিলা অ্যাথলিট। ৪০০ মিঃ এবং ৮০০ মিঃ রেসে উনার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৭ বছর বয়সে Asian Indoor Athletics Championship’এ দুটো ব্রোঞ্জ মেডেল পান। 2005 Asian Indoor Games, 2006 Asian Games’এ উনি সোনা জেতেন। 2006 Commonwealth Games’এ উনি রূপো জিতেছিলেন। এবং 2006 South Asian Games’এ উনি তিন’টি সোনা জেতেন (৪০০ মিঃ, ৮০০ মিঃ এবং রিলে)। বাংলার হয়ে All India open national championships’এ উনি তিন বার জিতেছেন। পরবর্তী কালে বিভিন্ন ইঞ্জিওরি বিশেষ করে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায়ে রেসিং ট্রাক উনাকে ছাড়তে হয়।

    কিন্তু এই সব ফালতু জিনিস। কোন বাঙালি, বাংলার এমনকি সমগ্র ভারতের নাম সোনা-রূপো জিতে উজ্জ্বল করলো, কি প্রাইজ পেলো, কি মেডেল পেলো এই সব নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। একশো কোটির উপরে দেশের নাগরিকদের কোন প্রতিযোগিতা থেকে সোনা-রূপো আনতে কালঘাম ছুটে গেলেও আমাদের রিলিজিয়ান ক্রিকেট, অবশ্যই পুরুষদের ক্রিকেট। ধোনি চুলের স্টাইল পালটালে তা আনন্দবাজারে প্রথম পাতায় আদ পাতা জুড়ে বিশাল বড় করে ধোনির ‘নতুন চুলের স্টাইলের’ ছবি প্রকাশ করা হয়, কিন্তু ভারতের জাতীয় খেলা হকি এশিয়া কাপ জিতলে কিংবা ঝুলোন গোস্বামী ICC থেকে পুরস্কার পেলে তা শেষের পাতায় চার লাইনে মেরে দেওয়া হয়। IPL জিতলে লক্ষ লক্ষ টাকা উপহার দেওয়া হয়, আর মেয়েদের কাবাডি টিম ওয়ার্ল্ড কাপ জিতলে কাপ হাতে রাস্তায়ে দাড়িয়ে অটো ধরে যে যার বাড়ি ফেরে। সেখানে পিঙ্কির মতন একজন ইংরেজি না জানা, নট সো সেক্সি, ট্রেনের টিকিট কালেক্টারের কীর্তি নিয়ে কারু আগ্রহ না থাকাটাই ভারতীয় হিশাবে স্বাভাবিক। আমাদের কাছে মূল বিশয় পিঙ্কি ছেলে কি মেয়ে, উনি ধর্ষণ করতে সক্ষম কি অক্ষম। অভিযোগকারিণী দীর্ঘ দিন ধরে পিঙ্কির সাথে সহবাস করে হঠাৎ পিঙ্কির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, এবং সেই সঙ্গে বলেন পিঙ্কি একজন পুরুষ। পিঙ্কির লিঙ্গ জানবার জন্য হাসপাতালের সামনে টাক ফাটা রোদ্দুরে সাংবাদিক সেই সঙ্গে আমারা সাধারণ পাবলিকরা যে হারে ভিড় জমিয়েছি তার ১% ভিড় আমারা পিঙ্কির বাড়ির সামনে জমিয়েছিলাম কি না সন্দেহ যখন পিঙ্কি ‘সোনা’ জিতে আনেন।

    পিঙ্কি ছেলে কি মেয়ে তা পুলিশ সেই সঙ্গে সমাজের জানার প্রয়োজন। কারণ উনি ধর্ষণ করেছেন। একটি মেয়ে আর একটি মেয়ে’কে ধর্ষণ করেছে, এটা ঠিক মানা যায় না। সুতরাং পিঙ্কির লিঙ্গ বা অন্য কিছু বলবে সে ধর্ষণে সক্ষম কি অক্ষম। এটা আমাদের অজ্ঞতা, মূর্খতা, উন্মুক্ত শিক্ষার অভাব, আধা শিক্ষার ফল। যে দেশে পেপার খুললেই ধর্ষণ কিংবা শিশু নির্যাতন খবরের ছড়াছড়ি কিন্তু যৌনতা বা ‘সেক্স-জেন্ডার’ নিয়ে শিক্ষামূলক আলোচনা ধর্মীয় নিষেধ। সমকাম আমাদের কাছে কু-কাম, কিন্নর আমাদের কাছে আগের জন্মের পাপের শাস্তি এই জন্মে, আমাদের কাছে সেক্স ও জেন্ডারের মানে একই। সেই দেশে এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা অবাক করে না।

    আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ‘ধর্ষণ’ শুধুমাত্র পুরুষ দ্বারা নারীর উপর যৌন নিপীড়ন বর্তায়ে না। পুরুষ-পুরুষ, নারী-নারী, এমনকি নারী দ্বারা পুরুষের উপর যৌন নিপীড়ন ধর্ষণের পর্যায়ে পরে। পিঙ্কি ধর্ষণ করেছেন কিনা তা জানবার জন্য পিঙ্কিকে ছেলে/পুরুষ হবার প্রয়োজন নেই। পিঙ্কি কোন অপোরাধ করে থাকলে যথাযোগ্য শাস্তি উনার প্রাপ্য। উনি ধর্ষণ করলে উনি একজন অপরাধী ব্যাতিত কিছু নন। কিন্তু, কারু অপরাধ প্রমান করবার এ কি ধরন! কোন ভদ্র সমাজে এ ধরনের হীন কাজ ঘটে!

    জেন্ডার হিশাবে পিঙ্কি মহিলা। একজনের শারীরিক গঠনগত বৈশিষ্ট্যর উপর নির্ভর করে বিচার করা হয় ‘সেক্স’এর। পরীক্ষার বা অন্য কোন ফর্মে যখন ‘জেন্ডার’ মেনশান করা থাকে তখনও আমারা নিজেদের শারীরিক গঠনগত বৈশিষ্ট্যর উপর নির্ভর করে লিখি ‘মেল/ফিমেল’। আমরা সেক্স ও জেন্ডারের অর্থ একই মনে করে থাকি। আমি যদি বলি আমার জেন্ডার ‘ফিমেল’ তাহলে সবার কাছে আমি শারীরিক গঠনগত বৈশিষ্ট্য হিশাবে ‘মেয়ে’। পিঙ্কি জেন্ডার হিশাবে মহিলা কিন্তু সেক্স হিশাবে মহিলা নন। সমাজের প্রশ্ন, তাহলে পিঙ্কি এতো দিন পুরুষ হয়ে মেয়ে সেজে থেকেছে, মিথ্যা কথা বলে মেডেল জিতেছে, চিটিং বাজ...।
    না, নিজের পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে পিঙ্কির কোন দোষ নেই। দোষ আমাদের, আমাদের ধরি মাছ না ছুই পানি নীতি, আমাদের যৌনতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা থেকে নাক শিটকে রাখা। আমাদের এই সকল দোষের ফল ভোগ করে পিঙ্কি আর পিঙ্কির মতন হাজার হাজার নাম না জানা পিঙ্কি যারা নিজেদের Sexual Identity না বুঝতে পারেন, না কাউকে বোঝাতে পারেন।

    অ্যানাটমির প্রবীণ চিকিৎসক এবং ন্যাশানাল মেডিক্যালের উপাধাক্ষ্য শ্রী পার্থপ্রতিম প্রধানের মতে —
    ‘সেক্স’- জন্মের সময় সদ্যজাত শিশুর যৌনাঙ্গ দেখে ডাক্তাররা যে লিঙ্গ নির্ধারণ করেন, তা হল সেক্স।
    ‘জেন্ডার’- এর সাথে মানসিক, সামাজিক ও আইনত লিঙ্গসত্তা মিলিয়ে হয় জেন্ডার।

    পিঙ্কিকে তাঁর বাবা-মা মেয়ে হিশাবে প্রতিপাল করেছেন। পাড়া-প্রতিবেশী, স্কুল, আত্মীয় পরিজনের কাছে পিঙ্কি ‘মেয়ে’এর পরিচয় পেয়েছেন। নিজেকে মেয়ে হিশাবে গড়ে তুলেছেন, সবার কাছে ‘মেয়ে’ বলেই পরিচয় দিয়েছেন, পরিচয় পেয়েছেন। পিঙ্কি ‘জেন্ডার’ হিশাবে একটি মহিলা। স্কুল জীবন, খেলোয়াড় জীবন, কর্ম জীবনে যত ধরণের কাগোজি নথি আছে সবেতেই তাঁর জেন্ডার মেয়ে।
    তবে ‘সেক্স’ হিশাবে উনি ‘মেয়ে’ নন। তাঁর স্ত্রী জননাঙ্গ নেই। তাই বলে পিঙ্কিকে পুরুষ বলা চলে না।
    সাম্প্রতিক মেডিক্যাল রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পুলিশ পিঙ্কিকে অ্যারেস্ট করে এই বলে ‘মেডিক্যাল রিপোর্ট অনুযায়ী পিঙ্কি পুরুষ এবং ধর্ষণে সক্ষম’। পিঙ্কি ধর্ষণে সক্ষম কি অক্ষম তা পরের খবর, কিন্তু মেডিক্যাল রিপোর্টে বলছে পিঙ্কি পুরুষ এটা আশ্চর্যের। যদিও এখনও অবধি সম্পূর্ণ রিপোর্ট পাওয়া যায়ে নি, তবে যতটুকু জানা গেছে তাতে প্রকাশ হয়- পিঙ্কির স্ত্রী জননাঙ্গ নেই তাঁর বদলে আছে অপরিণত পুরুষ জননাঙ্গ। (অপরিণত, পরিনত নয়)।
    ডিম্বাশয় নেই আছে অপরিণত শুক্রাশয়ের কিছু টিস্যু। (এখানেও অপরিণত, সম্পূর্ণ নয়)।
    পিঙ্কির শরীরে পুরুষ হরমোন অ্যানন্ড্রোজেন স্ত্রী হরমোনের তুলনায়ে বেশি মাত্রায়ে পাওয়া গেছে। কিন্তু এতটা বেশি না যে তাকে ‘পুরুষ’ আখ্যা দেওয়া যাবে। কারণ ক্রীড়ামহলে মায়েদের অ্যানন্ড্রোজেন মাপার যে সীমা নির্ধারণ করা হয়ছে পিঙ্কির হরমোন তা অতিক্রম করেনি। সেই কারনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়ে মেয়ে হিশাবে পাশ করতে তাঁর আসুবিধ হয় নি। জেন্ডার হিশাবে পিঙ্কি একদমই পুরুষ নন। তাহলে কিসের ভিত্তিতে উনি পুরুষ এবং পুরুষ বলেই তাকে গ্রেফতার!!

    পিঙ্কি’কে নিয়ে কেন এতো হোই হুল্লোড়, কেন এতো মাতামাতি? মেডেল জিতে যে নাম পিঙ্কি কামাতে পারেননি, ‘ছেলে-মেয়ে’র ভেজালে এক নিমেষেই তার শতগুণ বেশি নাম কামিয়ে ফেলেছেন! দিনের পর দিন খবরের কাগজের ফ্রন্ট পেজে ওনার ছবি! এতো সোনা জেতার পরও ফ্রন্ট পেজে ওনার এতো ছবি এসছে কি না সন্দেহ। আমরা বাঙালি। আমাদের রক্তে রাজনীতি। উঠতে বসতে, শুতে জাগতে, প্রতিটি পদে রাজনীতি। পিঙ্কি কেস’এ রাজনীতি থাকবে না, তা ভাবা যায় না। এখানেও রাজনীতি ও শক্তিশালী প্রমোটিং। 2006 সালটা ছিল পিঙ্কির কাছে সোনার সাল। চূড়ান্ত সাফলতা লাভ করেন সেই সময়। তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী প্রয়াত সুভাষ চক্রবর্তীর উদ্যোগে কিছু আথলিটদের জমি বিতরণ করা হয়। পিঙ্কিও পান কসবা এলাকায়ে জমি। তিন কাঠা জমি, প্রতি কাঠা জমির বর্তমান মুল্য প্রায় ৩০ লক্ষ। প্রাক্তন বাংলার অ্যাথলিট ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রাক্তন এম.পি জ্যোতির্ময়ীইয়ের স্বামী, প্রভাবশালী প্রমোটার অবতার সিংহের কাছে পিঙ্কি সমগ্র জমি মাত্র ৪০ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন(কিছু সূত্র অনুযায়ী পিঙ্কি পায় ২৫ লক্ষ, লিখিয়ে নেওয়া হয় ৪০ লক্ষ)। অবতার সিং জানতেন পিঙ্কি উভয়লিঙ্গ। পরবর্তী কালে পিঙ্কি যাতে জমির দাম হিশাবে আরও বেশি টাকা না চাইতে পারে তার জন্য পিঙ্কিকে চাপে, ফেলতে অবতার সিং পিঙ্কিকে পুরুষ প্রমান করতে উঠে পড়ে লেগে যান। অনামিকা আচার্য (অভিযোগকারিণী) এবং পিঙ্কির ব্যক্তিগত কলহলের সুযোগ তিনি নেন, তিনিই বলেন পিঙ্কির নগ্ন ছবি তুলে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে। অনামিকা পিঙ্কির নগ্ন ছবি তুলে পুলিশকে দেখায়ে, পিঙ্কি যৌন অঙ্গ নারীসুলভ না সুতরাং পিঙ্কি ছেলে(!!)। আর আমাদের ভদ্র সমাজের ভদ্র পুলিশের কাছ থেকে সে ছবি চলে যায় আমাদের সেই সব শিক্ষিত ভদ্র সুশীল সমাজের মোবাইলে যারা ‘যৌন শিক্ষার’ নাম শুনলে রাম নাম করেন কিন্তু কাউ’কে নগ্ন দেখবার জন্য তীর্থের কাকের মতন বসে থাকেন।

    পিঙ্কির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ। এখনো প্রমানিত হয়নি উনি সত্যি ধর্ষণ করেছেন কি না। শুধু মাত্র অভিযুক্ত। তবুও ধরে নিলাম উনি দোষী। কিন্তু পিঙ্কির প্রতি যে ব্যাবহার পুলিশ, প্রশাসন এবং অনেকাংশে আমাদের সমাজ দেখিয়েছে তাই কি সত্যিই গ্রহণযোগ্য! সুসভ্য! নৈতিকতা পূর্ণ! সর্বপরি মানবিকতার দৃষ্টি রাখে! বাঙালি জাতি নিজের শ্রেষ্ঠত্বের ঘণ্টি বাজিয়ে বেড়ায়ে, কলকাতা The city of joy। The city of joy’এ প্রকাশ্য দিবালোকে কোন নারীর শ্লীলতাহানি ঘটলে শ্রেষ্ঠ জাতের কোন বাঙালি এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করে না। এই The city of joy’এ কোন বৃদ্ধা/বৃদ্ধ রাস্তায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বাঙালি জাতি চারিদিকে ভিড় জমিয়ে দেয় কিন্তু কেউ এগিয়ে এক ফোটা জল দেয় না। জয় বাংলা, জয় বাঙালি, বাংলায় অতীত গৌরবের কথা শুনে আর বর্তমান বাঙালীদের দেখে মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমি কি এতো দিন ভুল শুনে এসছি! বাঙালি জাতি কি বরাবরই এই রকম! না কি বাংলায়ে ভেজাল মিশেছে!

    পিঙ্কির কি বিচার হবে তা সময়সাপেক্ষ, তবে পিঙ্কি প্রামাণিকের গল্প দেখিয়ে দিল আমরা কতটা নিম্ন মানসিকতার মানুষ (মানুষই বললাম, জীবজন্তুর নাম নিয়ে গালি দিয়ে অবোলা জীবদের হেনস্থা করতে চাই না)-
    পিঙ্কির লিঙ্গ জানবার জন্য হাসপাতালে উপচে পড়া ভিড়।
    পুলিশের কাছে জমা দেওয়া পিঙ্কির নগ্ন ছবি সমাজে বিতরণ।
    পিঙ্কি ছেলে না মেয়ে তা সঠিক সিদ্ধন্তে না আসা সত্ত্বেও পুরুষ পুলিশ কর্মী দ্বারা (অত্যন্ত অশ্লীল ভাবে) পিঙ্কিকে জাপটে পুলিশ ভ্যানে তোলা।
    পুরুষ লকআপে দীর্ঘদিন রাখা।
    হাসপাতালে নগ্ন অবস্থায়ে পিঙ্কির শারীরিক পরীক্ষার ভিডিও এম.এম.এস করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া...।
    (পুলিশ ও সেই হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয় নি এখনো অবধি, কারণ এই ধরণের প্রতিবাদ আমাদের কালচারে পরে না)।
    ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে মুখরোচক আলোচনা, ব্যাঙ্গ ছবি, যাকে তাকে ‘পিঙ্কি’ নাম দিয়ে ব্যাঙ্গ করা... আমাদের মতন সভ্য, শিক্ষিত মানুষ দ্বারাই সম্ভব।

    সত্যিই, এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে না’কো তুমি...
  • মৌ | 233.223.***.*** | ২১ নভেম্বর ২০১২ ১৯:৪৪576955
  • এই সময় পত্রিকায়ে তৃতীয় লিঙ্গ নিয়ে লেখা (Page 2)-- http://www.epaper.eisamay.com/
  • jhumjhumi | 127.194.***.*** | ২৩ নভেম্বর ২০১২ ২১:৫৯576958
  • রোববার এ স্বপ্নময় চক্রবর্তীর ধারাবাহিকে এবারে এই ধরনের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে লেখা রয়েছে। পিংকি কে নিয়ে যা হচ্ছে তা সত্যিই জঘন্য।
  • ranjan roy | 24.98.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:৫৬576960
  • তাই! ভালো লাগল।
  • কল্লোল | 111.63.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:৪২576961
  • আশা করি পিঙ্কি এবার ঐ নার্সিংহোম, সেই পুলিশ কর্মীটি (যার ছবি আছে সমস্ত গণমাধ্যমের কাছে) যে পিঙ্কিকে ভ্যানে তোলার সময় শ্লীলতাহানী করেছিলো, ঐ মহিলা ইনি মিথ্যা ধর্ষ্ণের অভিযোগ করেছিলো - এদের বিরুদ্ধে মামলা করবে।
  • Abhyu | 81.9.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:৫০576962
  • "ডাকাবুকো পিঙ্কি এ দিন বাড়ি থেকে বলছিলেন, “ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে আদালতে যাব ঠিক করেছি। যে ভাবে আমাকে হেনস্থা করা হয়েছিল তখন, কোনও দিন ভুলব না। কত দিন যে আদালতে গিয়ে বসে থাকতে হয়েছে।” ...“মুক্তির আনন্দ হচ্ছে। তবে এখনও আমার আরও অনেক কিছু প্রমাণ করা বাকি আছে।” "
  • ish | 127.2.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:৫৩576946
  • কল্লোলের সাথে একমত ঐ পুলিশ কে কোনো মতে ছাড়া যায় না
  • Ishan | 183.17.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:৫৪576947
  • পিঙ্কিকে নিয়ে যাচ্ছেতাই হয়েছে, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মজা হচ্ছে, এই ধর্ষণ আইনটাও অদ্ভুত। পুরুষ হলে সবকটা চার্জই বহাল থাকত। "বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস = ধর্ষণ" এই সূত্রানুযায়ী। মেয়ে প্রমানিত হওয়ায় সব খালাস। ওদিকে একজন আইনজীবী বলেছেন, "ধর্ষণ করার জন্য শরীরের যা থাকা দরকার, তা পিঙ্কির নেই। ডাক্তাররা সেটা পরীক্ষা করে রায় দিয়েছেন।" অদ্ভুত। ধর্ষণের জন্য লিঙ্গের প্রয়োজন নেই, সে তো নতুন আইনেই বলা আছে। যেটা নেই, সেটা হল, সমকামীরা জোর করলে ধর্ষণ হবেনা কেন?

    এবং এটাও ভারি অদ্ভুত, এখানে অভিযোগকারিণীর নামধাম সব প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। অ্যাজ ইফ অশোক গাঙ্গুলীর বিরুদ্ধে যিনি অভিযোগ এনেছিলেন, তাঁর প্রাইভেসি মানসম্মান গুরুত্বপূর্ণ, এই মেয়েটির নয়।

    এইসব ডাবল স্ট্যান্ডার্ড অতীব বিচ্ছিরি লাগে।
  • Arpan | 52.107.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:১৬576948
  • ঈশানকে ক।
  • Ishan | 183.17.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:১৮576950
  • ইন ফ্যাক্ট একটা স্টাডি পড়েছিলাম, বলপূর্বক যৌনতার অভিযোগ লেসবিয়ানদের মধ্যে, গে দের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। তার নানা প্রকার সামাজিক ব্যাখ্যা ছিল। গাদা গাদা বুকমার্কের মধ্যে এখন আর খুঁজে পাচ্ছিনা।
  • Abhyu | 81.9.***.*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:১৮576949
  • ক্ক
  • ranjan roy | 132.176.***.*** | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৩:৪৫576951
  • ঈশানকে ক।
    ধর্ষণের মূল ব্যাপারটা যে গা-জোয়ারি সেটা এইসব ডাক্তারবাবুরা বুঝতেই পারেন নি।
  • pi | 192.66.***.*** | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৫:৫৭576952
  • 'ধর্ষণ করার জন্য শরীরের যা থাকা দরকার, তা পিঙ্কির নেই। ডাক্তাররা সেটা পরীক্ষা করে রায় দিয়েছেন।" হ্যাঁ, এটা পড়ে সত্যি অদ্ভুত লেগেছিল। তবে হ্যাঁ, আইনটাই তো অদ্ভুত। 'Gupta stated before the court that under Indian law only a man can be accused of rape and as such charges of rape and cheating against Pramanik be quashed.'

    মামু কি এটার কথা বলছিলে ?
    30% of lesbians report having experienced sexual assault or rape by another woman (not necessarily an intimate partner) (Renzetti, 1992)
    15% of men living with a male intimate partner report being raped, assaulted or stalked by a male cohabitant (CDC, 1999)
  • anirban | 172.238.***.*** | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২২:২০576953
  • এই স্টাডিগুলির স্যাম্পল সাইজ এবং কোন দেশের তথ্য - এই দুটো খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই ভিত্তিতে আজকে এই জেনারালাইজেশন টানা যায় কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে। ১৯৯২ এর পৃথিবী আর আজকের পৃথিবী (অন্তত ওয়েস্ট) -অনেক তফাত LGBT র সামাজিক, আইনী ও রাজনৈতিক গ্রহনযোগ্যতা ও অধিকারের দিক থেকে। তবে ইশানের ৯:৫৪র পোস্টের সঙ্গে একমত।
  • anirban | 172.238.***.*** | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২৩:২৫576954
  • এই বিষয়ে একটা ইন্টারেস্টিং পোস্ট দেখলাম। এখানেও বলা হয়েছে যে এইটা নিয়ে ৮০-৯০ এর দশকে কিছু কাজ হলেও রিসেন্ট কাজ কমই।
    http://www.autostraddle.com/when-women-rape-everything-were-not-talking-about-185931/
    এখানে পুলিশ/আইনের অ্যাটিটিউড নিয়েও বলেছন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন