এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • ঝিনুক খোঁজার ছলে

    Tanayaa
    অন্যান্য | ২১ এপ্রিল ২০০৬ | ১২৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tanayaa | 131.95.***.*** | ২১ এপ্রিল ২০০৬ ০০:২৫563105
  • আগেরদিনের গল্পের সুতো কোথায় হারিয়ে গেছে।তাই এখনে নতুন করে।ঝিলিক ঝিলিক ঝিনুক খোঁজা....

    ঘরের ভিতরে স্নিগ্‌ধ অন্ধকার। শোঁ শোঁ করে ফ্যান ঘুরছে।বাইরে তপতপে গ্রীষ্ম দুপুর। ইস্কুলে গরমের ছুটি। পুবের ঘরের খাটে মা ঘুমায় ছোটো ভাইটাকে বুকের কাছে নিয়ে,এই মাঝের ঘরে ঠাকুমার পাশে আমি,মাঝের খোলা দরজা দিয়ে ওঘরের হাওয়া এঘরে আসে,এঘরের হাওয়া ওঘরে যায়। কোণের বন্ধ জানালার সরু সরু সূক্ষ্ম রেখা ধরে কেমন আলোছায়ার জাফরি পড়েছে!
    চুপি চুপি উঠে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ি। সবুজ ঝোপের বেড়ার কাছে হাল্কা ছায়া, সেখানে দাঁড়াই। বেড়ার বাইরে একটুকরো ফাঁকা মাঠের পরেই বিরাট ধানক্ষেত,সেই দক্ষিণের বাঁশঝাড় অব্ধি চলে গেছে। দুপুরবেলার ঝিমধরানো আলো কেমন আশ্চর্য! সকালের সোনালী আলো আর সন্ধের রাঙা আলোর সঙ্গে এর অনেক অনেক তফাৎ!
    কাঁঠালগাছের ডালে ঘুঘু ডাকছে শান্ত ঘুমেলা স্বরে, ঘুঘঘু ঘুঘঘু ঘুঘঘু....
    মা বেরিয়ে এসে আমায় জোর করে ভেতরে নিয়ে যায়। দুপুরবেলা নাকি বাইরে থাকতে নেই একা।আমি ভেতরে থাকতে চাইনা, ঝটাপটি করি, গোলমালে ঠাকুমা উঠে পড়ে।
    আহ,আহ, লাগছে! মায়ের হাত থেকে মুখমাথা ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে চলে যাই বাইরে, আমায় ধরতে পারে না,দুয়ো! নির্জন অরণ্যে চিত্রব্যাঘ্রিনীর মতন রোঁয়া তুলে দাঁড়িয়ে থাকি কুয়োর পাশে,ধরতে এলেই কুয়োয় ঝাঁপিয়ে পড়বো।
    অনেক দূরে,ঐ দিকচক্রসীমায় গাছের ঘন সবুজ রেখার ঐপার থেকে আমার দিকে চেয়ে দেখে কারা যেন, দেখতে পাইনে তাদের, শুধু নীল উত্তরীয় আর কমলা আঁচলের আভাস পাই, দুচোখ অশ্রুতে ঝাপসা হয়ে যায়,দেখবো কেমন করে? ।
    ******
    আশিনের রোদে খুশী হয়ে আছে পৃথিবী,জ্বরে পুড়ে যাচ্ছি আমি, ঠাকুমার চৌকিতে শুয়ে আছি, জানালার বাইরে থেকে শিউলির সুঘ্রাণ আসছে। পুজো এসে গেল। আমায় বোর্ডিং এ পাঠিয়ে দিতে চায় মা বাবা, পুজোর পরে পরীক্ষা হয়ে গেলে,নতুন বছরে। ঠাকুমা রাজি না, বলে,"না না।মেয়েরে দেখতে পারে না মায়ে, তাই বোর্ডিং এ দিতে চায়।"
    গতকাল আমার সঙ্গে খেলতে খেলতে ভাই পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলো, তাই মা রাগ করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে খোয়াভাঙার উপরে ফেললো। ঠোঁট কেটে গেলো,রক্ত বন্ধ হয় না দেখে চিনি দিলো মা।খুব জ্বর হয়েছে রাত থেকে,আহ,মরে গেলেই ঐ দিগন্তপারের বাপমায়ের কাছে যাবো।
    "না না তুমি না তুমি না...."প্রলাপের ঘোরে হাত সরিয়ে দিই, কে যেন কপালে বরফঠান্ডা হাত রেখেছিলো!

    ******
    এলানো চুলের রাশি উড়ে এসে পড়ে, হাল্কা কমলা রেশমী শাড়ীর আঁচলা, শিউরে উঠে মুখ রাখি সেই সুন্দরী দেবীর কাঁধে। এমন শিউরানো অনুভূতি কখনো তো হয় না ! তিনি ওর সোনালী হাতে জড়িয়ে ধরেন আমায়, এখন আর ছুটে পালান না।আমার সমস্ত পার্থিব মলিনত্ব সত্বেও না।আহ, আহ, কি মধুর এ অনুভূতি,কি স্নিগ্‌ধ ওর হাত দুখানা! প্রথমে আস্তে তারপরে জোরে চেপে ধরেন আমার বাহু,আনন্দে জ্বরের মতো কাঁপুনি ওঠে আমার সমস্ত ইহলোক পরলোক জুড়ে।
    প্রথম যেদিন স্বপ্নে ওঁদের খুব কাছে দেখেছিলেম,সেদিন কিন্তু আমায় দেখা মাত্র ছুটে পালিয়ে যান ভদ্রমহিলা। কিন্তু ভদ্রলোক পালান নি, আমায় পাশে বসিয়ে ওঁর অদ্ভুৎ ডাইরি খুলে দেখাচ্ছিলেন রথে চড়া এক যোদ্ধার ছবি। ঐ ছবিগুলি নাকি আসলে কথা,একরকম ভাষা। ঐ রথের উপরের বীরমূর্তিটি আসলে নাকি বোঝাচ্ছে একটি কথা, "অনুসন্ধানী"। কিভাবে বোঝাচ্ছে যেই উনি বলতে গেলেন,ঘুম ভেঙে গেলো। "উ:, কী গরম", বলে চাদর গায়ের উপর থেকে সরিয়ে দিলাম। মাথার কাছেই কাঁচের জানালা দিয়ে ভরা চাঁদের আলো এসে পড়েছিলো অন্ধকার ঘরে। বাইরে দীর্ঘ পাইনগাছটির মধ্যে জড়িয়ে উঠে গেছে লতারা।এই গভীর নিশীথরাতে এই মাত্র কদিনের চেনা জনপদ কী অদ্ভুৎ অন্যরকম লাগছে!
    জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকি,কি দেখলাম কাদের দেখলাম ,কেন দেখলাম? এ কি হলো? সত্যি সত্যি কি কোনো সত্যতা আছে এইসবের? সবই কি লঘুভার বস্তুবিরল কল্পনার পালকমেঘ নয়?

    *******
    চুপ করে শুয়ে আছি চৌকিতে। খুব শ্বাসকষ্ট,খুব জ্বর। সারারাত শ্বাসকষ্ট চলেছে। ডাক্তার দাদুকে সকালে খবর দিতে গেছে বাবা।
    আমি অর্ধ আচ্ছন্ন চোখে ঘর দেখি, আর কতক্ষণ দেখবো? আর কতক্ষণ পরে হে সোনালী আলোর দেবী, নেবে আমায় তোমার কাছে? শ্বাসকষ্ট কাল রাতে যখন খুব বেড়েছিলো,ভেবেছিলাম রাত্রেই নেবে।কই নিলো না তো! কারা যেন কাঁদছিলো রাতে,কারা? ঠাকুমা,মা নাকি অন্য কেউ? হয়তো কেউ না,জ্বরের ঘোরে ভুল শুনেছি।
    এই ঘরেই দক্ষিণের হাওয়া, দক্ষিণে খোলা মাঠ একেবারে ঐ অতদূর অবধি, উত্তরের জানালা খুলে দিলেও সেদিকে মাঠ,খেজুরগাছ,তারপরে পড়শীদের বাড়ী। আধো ঘুমে আধো জাগরণে স্বপ্ন-স্বপ্ন লাগে জগৎখানি, আর থাকতে ইচ্ছে করে না এখানে। তবু যেন কি রয়েছে, কোনো চেনা রঙ,চেনা গন্ধ, চেনা আকার, ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে একবার দুইবার আবার আবার!
    মাথা ধুয়ে দিচ্ছে কে যেন, কানের কাছে জল লাগলে খুব বিশ্রী লাগে, আমি কি যেন বলছি জ্বরের মুখে, মুখ জুড়ে কেমন করোলা ভাজার স্বাদ! মুছে দিচ্ছে মাথা,হাওয়া করছে গোল হাতপাখা দিয়ে। কে করছে এসব,মা?
    আহ,কে কাঁদছে বিছানায় বসে? চোখে মেলি, ঐ তো পায়ের দিকে বসে আছে মা, মুখে আঁচল চেপে আছে।চোখ বুজে ফেলি,সোনালী আলোর দেবী, আমায় কখন নেবে তুমি?
    দাদু এসে গেলো, জাগিয়ে দেখে ওষুধপত্তর দিয়ে বিদায় নিলো।ট্যাবলেট গিলতে পারিনা, কাপে দিয়ে চূর্ন করে জল দিয়ে গুলে দিচ্ছে মা।ইচ্ছে করে না ওষুধ খেতে, তবু খাই, খুব শ্বাসকষ্ট, জ্বরও অনেক।
    দুদ্দুর,নেয়ও না, এদিকে খালি অসুখ। বিরক্ত লাগে, এদের কত অসুবিধা হচ্ছে এদিকে! কোনো মানে হয়!

    ধাপকাটা খাড়া সিঁড়ি, পাহাড়ের উপরে মন্দির। নির্জন,খুব নির্জন। এদিকে বেশী লোক আসে না। তাই ভক্তের ভীড় নেই, পাহাড়ে কালীমন্দির। সিঁড়ি দিয়ে সেদিকে উঠে যাচ্ছে দুজন,নতুন বিয়ে হওয়া স্বামীস্ত্রী,হাতে হাত ধরে আছে। ছবিটা মিলিয়ে গেলো।

    ওষুধে কাজ করতে শুরু করেছে, শ্বাসকষ্ট কমে যাচ্ছে। জ্বরও কমে যাচ্ছে হয়তো, অত শীত করছে না আর। নেবে না আমায়, এবারেও নিলো না। কান্না লুকিয়ে ফেলি, সোনালী আলো মিলিয়ে যাচ্ছে,খুব ঘুম আসছে,শান্তির ঘুম, জ্বরের ঘোর নেই তাতে।
    (ক্রমশ:)
  • Tanayaa | 131.95.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০০৬ ০৩:২৫563106
  • রাতের গাড়ী ছুটে যাচ্ছে দক্ষিণে,কুউউউ ঝিক্‌ঝিক্‌ঝিক্‌। উপরের বাঙ্কে ঘুমের মধ্যে অদ্ভুৎ দুলুনি,সমুদ্রের মতন। আড়াইদিন এভাবেই আমরা চলমান যানের ভিতরে কখনো দিন কখনো নিকষকালো রাত্রি দেখতে দেখতে পার করে দিচ্ছি যাত্রাপথ।
    অনেক অনেক পরে, এই শোঁ শোঁ হাওয়ার শব্দ আবার শুনবো, এক অদ্ভুৎ শূন্যযানে টানা কুড়িঘন্টা উড়তে উড়তে দিবারাত্রির মালা পার হতে হতে....
    ঐ যে বলে ইতিহাস পুনরাবৃত্ত হয়? কথাটা কি আমাদের জীবনেও সত্য? কোথাও কোনো লুকানো সরল দোলগতি রয়ে গেছে রক্তের লাবনিক স্রোতে?
    নিজেকে দেখতে পাচ্ছি অন্ধকার রাত্রির মাঠে, আকাশমুখী। সেইযে, যে বছর ধূমকেতু নিয়ে ঘোর উন্মাদনা! "ধূমকেতু আসবে ধূমকেতু আসবে, হ্যালীর ধূমকেতু আসবে পঁচাত্তর বছর পরে। সেই এসেছিলো দশ সালে।"
    রক্তের মধ্যে দোলা লাগে, হেসে ওঠে কারা নীল দেয়ালের ওপারে, শুকতারা পত্রিকায় যত্ন করে লেখা জার্মান চাষী পালিৎসের গল্প- যে নাকি নিজের বানানো টেলিস্কোপে প্রথম দেখেছিলো হ্যালীর ভবিষ্যদ্বানী করা ধূমকেতুটিকে। হ্যালী তখন ইহলোকে নেই, কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর কথা, তিনি প্রথম অংক কষে বলে গেছিলেন একটি ধূমকেতুর আসার সময়কাল। সবাই বারণ করেছিলো তাঁকে, তখনো মানুষ অভ্যস্ত হয়নি ভাবতে যে আকশের বস্তুরা নিয়ম মেনে চলে, তখনো নিউটনের প্রিন্সিপিয়ার গায়ে নতুন নতুন গন্ধ, সবাই ভয় পেলো যদি না মেলে প্রেডিকশন,হয়তো সবাই হ্যালীকে দুয়ো দেবে, অন্যসব ভালো ভালো কাজগুলোও ভুলে যাবে। কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলেছিলো,উনি এমন কায়দা করে এক ভবিষ্যদ্বানী করছেন যে তা না মিললেও ওনার গায়ে আঁচড়টি লাগবে না,উনি তো ততদিন আর বাঁচবেন না! এই আশানিরাশার দোলা থেকে উদ্ধার হলো জগৎ,প্রথম যেদিন ধূমকেতুটিকে দেখতে পেয়ে গেলো পালিৎস! হ্যালীর সঙ্গে সঙ্গে সেও শান্তমুখে ঢুকে পড়লো ইতিহাসে।
    ধান কেটে নেয়া ক্ষেতের উপরে দাঁড়িয়ে আমরা খুঁজি সেই ধূমকেতুটি, কথা দেয়া যে ওর, প্রতি পঁচাত্তর ছিয়াত্তর বছর বাদে বাদে আসবে পৃথিবীর কাছে।আমাদের চোখে ধরা পড়ে না, উত্তর আকাশে কারখানার আলোয় আলো হয়ে আছে, প্রগাঢ় অন্ধকার নেই।

    আবার দেখি সেই গাড়ী, কু উ উ উ ঝিকঝিক করে আমাদের গাড়ী রাত্রি ভেদ করে চলেছে দক্ষিণে দক্ষিণে আরো দক্ষিণে, বাঁপাশে রেখে যাচ্ছে বিশাল উপসমুদ্র।

    মায়ের কোলে মুখ রেখে শুয়ে পড়ি, রেশমী কমলা শাড়ীর মধ্যে কিরকম সুন্দর একটা গন্ধ। মায়ের চুলেও সেই গন্ধ, মা আস্তে আস্তে হাত রাখে আমার মাথার চুলে।আমি ঘুমেলা চোখে তাকিয়ে থাকি,তাকিয়ে থাকি, মায়ের কপালে জ্বলজ্বলে একটা টিপ। দুহাতে আমায় ধরে আছে মা, আমি দুহাত বাড়িয়ে ধরতে যাই মাকে, পাইনা, কিছু নেই কিছু নেই, শূন্য।
    দুচোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে ভিজে যায় বালিশ, স্বপ্ন এত সুখের আর দুখের কেন? তুমি যদি সত্যি পালিয়ে যাবে,তবে কেন কেন কেন আসো আরো আরো আরো কষ্ট দিতে?

    নীল কুয়াশা মিলিয়ে যায়, পুবের অল্প আলো ফোটা দিগন্তের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস পড়ে, "Woods are lovely dark and deep/But I have a promise to keep/ And miles to go before I sleep/ And miles to go before I sleep..."

    সত্যি কি কথা দেওয়া আছে, কোথাও, কারো কাছে? ঐ বন্ধু ধূমকেতুটির মতন, যে কিনা ফিরে ফিরে আসে? চোখে যাকে দেখা গেলো না বলে এই নির্জন হৃদয়ে সে চিরস্থান নিয়েছে? ঐ তো প্রথম আমায়
    বলে গেলো,..... কি বলে গেলো? মনে পড়ে পড়ে, পড়ে না, অনাদ্যন্ত গায়ত্রীমন্ত্রের মতন অনাহত সুর বেজে যায় নিসর্গে, আমার বিশ্রামতৃপ্ত দুচোখ ভরে ওঠে নোনাজলে, কেন কেন কেন এত অল্প জানি আমি?

    মাইলের পর মাইল বালির সমুদ্র ভেঙে হেঁটে যাচ্ছি যাচ্ছি যাচ্ছি। কি তীব্র শুষ্ক গরম হাওয়া! মস্ত ঝোলা পোশাকে উড়ুনিতে মুখমাথা দেহ ঢেকে আমরা চলেছি চলেছি। বাঁকানো চাঁদের মতন পথ আমাদের, নেমে আসছে উত্তর থেকে দক্ষিণে, দুর্ভিক্ষপীড়িত উত্তরদেশ ছেড়ে দক্ষিণের সমৃদ্ধ দেশে, মরুর শস্যভান্ডার বলে যে দেশকে। এভাবেই কতবার এ পথে আসতে আসতে যেতে যেতে কেমন করে এই গল্পটুকু ছড়িয়ে যাবে গোটা দুনিয়া জুড়ে, দ্বীপ থেকে দ্বীপে লাফিয়ে লাফিয়ে, মুখহীন অগণ্য মানুষের অশেষ অভিযাত্রার কাহিনি।
    মরুদ্যানে স্বচ্ছ জলের উৎসের পারে খেজুরকুঞ্জছায়ায় তাঁবুর পর তাঁবু পড়ে। সন্ধ্যার তরল অন্ধকারে একে একে তারারা ফুটতে থাকে, অন্ধকার ঘনতর হয়,ছায়াপথের ঝাপসা ওড়নায় কোটি কোটি তারার মেলা, সমুদ্রকিনারের বালুকণার মতো অগণ্য।
    লুটিয়ে পড়ে উড়ুনি আমার, চিৎ হয়ে শুয়ে দেখি আর দেখি ঐ জ্যোতির্ময় দুর্দর্শরূপ! এ কী আশ্চর্য জগৎ! এ কী অপরূপ মহাকাশ! দিগন্তের কাছে জ্বলে ওঠে উল্কা, প্রথমে একটি দুটি তারপরে অজস্র অজস্র।
    উল্কার ঝড়ের মধ্যে কি কোনো ইঙ্গিত থাকে, যেমন থাকে মস্ত লেজওয়ালা ধূমকেতুর মধ্যেও? ঐ দূর অসীম আকাশ আর এই চেনাগন্ধের মাটির পৃথিবীকে কে অলখ সুতোয় গেঁথেছে? ঐ তো গুহামুখে জলধরা ঝরে ঝরে পিছল হয়ে আছে,ভেতরে কোন্‌ ফাঁকফোকড় দিয়ে আলো পড়ে ঝিকিমিকি করছে....
    কোথায়, কোথায়, কোথায় দেখেছিলাম কোন্‌ বিস্মৃত পূর্বজন্মে?
    ******
    পাহাড়ের চূড়ায় কালীমন্দির, খাঁড়া ধাপকাটাকাটা সিঁড়ি উঠে গেছে উপরে, তরুণ নবদম্পতি সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে দেবীদর্শন করতে। ছেলেটি হাত ধরে আছে ওর বৌয়ের। উঠতে উঠতে হাঁপ ধরছে মেয়েটির , ফর্সা মুখে রোদ লেগে লালচে দেখাচ্ছে। কেন জানি সেদিকে চেয়ে ভারী ভালো লাগছে ছেলেটির, ঐ নরম মুখটা ছুঁতে ইচ্ছে করছে নিজের মুখ দিয়ে। ভেবেই লালচে হয়ে গেলো ছেলেটা, যাহ,তাই আবার হয় নাকি কখনো? ঠাকুর দেখতে যাবার সময় এ আবার কিরকমের বেয়াদপি?
    নিজে নিজে হাসছে দেখে নতুন বৌ জানতে চায়, "কি হলো? " ছেলেটা মাথা নেড়ে বলে,"কিছু না। "

    মন্দির এমন বেপট জায়গায় বলেই বোধহয় ভক্তটক্তের ভীড় বেশী নেই। গর্ভগৃহটি খুব অন্ধকার, সেখানে কোনো দেবীমূর্তি নেই, কালো একটি শিলাই দেবী। শিলায় রক্তচন্দনচিহ্ন, সিঁদুরও।
    মেয়েটির হঠাৎ মাথা ঘুরে যায়, বসে পড়ে সে, গভীর অন্ধকারের মধ্যে ঝলকে ঝলকে আলো অবশ করে দেয় ওকে।কোটি কোটি তারা ঝরে পড়ছে সমস্ত আকাশপৃথিবী জুড়ে,কালির মত কালো অন্ধকারে অনির্বচনীয় জ্যোতিরুৎসব! ঐ অত আলোর মধ্যে কাউকে যেন সে দেখতেও পায়,কিন্তু তারপরেই সব নিবিড় নিকষ অন্ধকার! কতক্ষণ অমন ছিলো সে? চোখেমুখে জলের ঝাপটা অনুভব করতে পারে সে,আস্তে আস্তে জ্ঞান আসে। একটু সুস্থ হয়েই পাহাড় থেকে নামছে তারা, স্বামীস্ত্রী আগের মতই হাত ধরাধরি করে।

    খুব জ্বরের ঘোরের মধ্যে বারে বারে ঐ অচেনা তরুণ তরুনীকে দেখেছি, বারে বারে দেখা দিয়ে বারে বারে মিলিয়ে গেছে ওরা। কেন দেখেছি? কারা ওরা? এই ঘূর্ণ্যমান পরিবর্তমান জগতের অজস্র ছবিমালার মধ্যে কোথায় ওরা? চেনা পরিচিত কোনো মুখের সঙ্গে ওদের মিল পেয়েছি কি? ঘোরের মধ্যে স্বপ্নের সোনালী কুয়াশা, এত অস্পস্ট বলেই বোঝা যায় না ওরা কি সত্যিই অচেনা নাকি চেনা?
  • Tanayaa | 131.95.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০০৬ ০২:৪০563107
  • দক্ষিণের শহরগুলো ভারী পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন। মন্দিরগুলোও। নারকোল প্রসাদ দেয় ওরা, রাত্রে বাতি দিয়ে রোজ নানা আলাদা প্যাটার্নে সাজায় দেবদেবীর মূর্তি ও পারিপার্শ্বিক।
    একটি পাথুরে শহরে আশ্চর্য এক মন্দির।মন্দিরের এক অংশে কতগুলো পাথরের স্তম্ভ, একটায় কোনো ধাতু দিয়ে ঠুকঠুক করলে সবকটায় অদ্ভুৎ সুরতরঙ্গ শোনা যায়! থামে কান ঠেকিয়ে অজস্র মুগ্‌ধ পর্যটক, একজন একটি সিকি দিয়ে ঠুক ঠুক করে অল্প আঘাত করলেন কোণের থামটির গায়ে,মুহূর্তে সব থামে সুরমূর্ছনা!!!!
    অবাক হয়ে কান চেপে আছি থামের গায়ে, অদ্ভুৎ শিহরণ সর্বাঙ্গে!! এমন হয়? ঐ অতদূরে ঐ সামান্য আলোড়ন,এই মুহূর্তমধ্যে কিকরে চলে এলো এইখানে? তবে কি এই চেনা জগতের বাইরে অচেনা রহস্যময় কিছু আছে? কি সে?
    আলোছায়ার মধ্যে তিন ঘর জুড়ে শুয়ে থাকা বিরাট এক দেবমূর্তি, শায়িত বিষ্ণু। যোগনিদ্রায় আচ্ছন্ন। এই জগৎ নাকি তার স্বপ্নমাত্র!!! তিনি জেগে উঠলেই সোনালী কুয়াশার মতন মিলিয়ে যাবে সবকিছু। তাঁর স্বপ্নের মধ্যে জেগে উঠেছে ঐ সূর্য, এই পৃথিবী, ঐ কোটি কোটি তারা। জেগে উঠেছি আমরা, জেগে উঠেছে ঐ গাছেরা, কোটি কোটি প্রাণী!

    দক্ষিণে বর্ষা দুবার, একবার শীতে, একবার গ্রীষ্মশেষে। এখন শীত, কিন্তু মেঘে মেঘে ছেয়ে গিয়ে শুরু হলো ধারাবর্ষণ।বৃষ্টির শেষে রাত্রির আকাশ ধোয়ামোছা,নিবিড় মধ্যরাত্রিনীলে ফুটে ওঠে অগণ্য তারা! ওপরে ঐ জ্যোতির্লোকের দিকে চেয়ে সেই যোগনিদ্রামগ্ন দেবতাকে মনে পড়ে, ঐ সমস্ত নক্ষত্ররাশি,এই বিপুল জগৎ যাঁর গভীর নিদ্রার স্বপ্ন।

    আবার ট্রেন , ঝিকঝিকঝিক, কাবেরী নদীর স্বল্পতোয়া দেহ,রেললাইনের্দ উপাশে যেমন হয়, অজস্র মাঠ, ধানক্ষেত, এই শীতে সোনালী ফসল তোলার মরশুম,মাঠে মাঠে স্তুপ করে রাখা কাটা ধানের গোছা।
    দেখতে দেখতে একেবারে দক্ষিণতম অংশে চলে এসেছি। অন্তরীপে। সম্মুখে শুধু মহাসমুদ্র। সাগরবেলায় তিনরঙা বালি, হলদেটে সাদা,লাল কালো-পায়ে পায়ে শিরশিরে জলবালি মাড়িয়ে জলের দিকে এগিয়ে যাওয়া, মহাসমুদ্রের হাওয়া চুলগুলি ওড়ায়, সমুদ্র কী গভীর নীল,ঢেউয়ের মাথায় ফেনারা কি দুধেল!
    কি আশ্চর্য এই জগৎ! কি অপূর্ব এইসব গাছেরা, ঐ মহাসমুদ্র, ঐ রঙীন বালুবেলা, ঐ সমুদ্রদিগন্তে ভোরের লাল বলের মতন সূর্যের লাফিয়ে ওঠা!!!
    ঢেউ আসে,ঢেউ যায়,বালিতে ঝিনুক পড়ে থাকে। বালিতে অদ্ভুত প্যাটার্ন তৈরী হয় জলের টানে, দেখতে দেখতে অবাক আর খুশী হয়ে ওঠে নতুন কিশোরী, যার আকাশী ফ্রকে সমুদ্র আর আকাশ জেগে থাকে একই সঙ্গে। ঐ তো দেখতে পাচ্ছি সে নীচু হয়ে ঝিনুক কুড়িয়ে নেয়, ঝিনুকের গায়ে চিত্রবিচিত্র নক্‌শা!!!
    সমুদ্রে স্নান খুব সুন্দর ব্যাপার।ঢেউ আর বালিতে লুকোচুরি খেলা। খালি চোখে নুন লেগে জ্বালা করে অল্প। অনেক মস্ত মস্ত শিলা সমুদ্রে, একটি শিলায় বিবেকানন্দের মন্দির,সেখানে স্টিমারচালিত জলযানে দর্শনার্থীরা যায়।
    একটি দুটি শিলায় বহির্সমুদ্রের ঢেউআটকানো ছোটো অংশে ভোরেরবেলা স্নান করতে এসেছি। জলে লালসবুজ ছোট্টো ছোট্টো মাছ সাঁতরে বেড়ায়। এত বোকা মাছগুলো, ওদের গামছায় ছাঁকাদিয়ে ধরে ফেলা যায়। ভাই সমুদ্রের মাছ পুষতে চায় বাড়ীতে,বাবা হাসে,বলে তা অসম্ভব,কিন্তু ভাই কাঁদে। জলের মগে নেওয়া হয় দুখানা মাছ।নিয়ে আসা হয় গেস্ট হাউসে, কিন্তু দুপুরে মাছগুলো মরে যায়,ভাইয়ের কান্না থামাতে বাবা কিনে আনে ক্যালাইডোস্কোপ! চোখের সামনে সেই ম্যাজিক নল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাজার হাজার নক্সা দেখি ভাইবোনে! চৌকো গোল ষড়কোণ অষ্টকোণ সোজা বাঁকা লাল নীল সবুজ চকমকে ম্যাড়মেড়ে কত কত অজস্ররকমের প্যাটার্ণ! কান্না ভুলে গিয়ে মস্ত মস্ত চোখ করে দেখে ভাই।ছোট্টো ভাইটা,সুন্দর নরম ওর শিশুমুখ, মাত্র নার্সারিতে পড়ে ও।ওর গালে হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে,কিন্তু মা যদি বকে? দেওয়া হয় না, ক্যালাইডোস্কোপ ওর হাতে দিয়ে আমি সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাই
    নীচে শিশু নারকেল গছের বাগানে, বিকেলে এখানে পর্দা টাঙিয়ে সিনেমা দেখানো হয়।
    এ অন্তরীপে আমার এটা দ্বিতীয়বার,আগে নাকি এসেছিলাম যখন আমার মাত্র দুইআড়াই বছর। তখনো নাকি এই গেস্ট হাউসেই উঠেছিলো বাবামা,তখন নাকি সব খুব অন্যরকম ছিলো।
    আগেরবারের বেশ কয়েকটা ফোটো দেখেছি, মাবাবা তখন কত অল্পবয়সী, কী অন্যরকম দেখতে! দুজনেই অনেক সুন্দর। আমিও অন্যরকম ছবিতে! ঈশ কি রোগাই না ছিলাম!
    নারকেলকুঞ্জে একা একা জলের মতন ঘুরে ঘুরে কথা কইতে ইচ্ছে করে, রোদ্দুরে ছায়ায় হাল্কা মেঘের ওড়াউড়ির খেলায় ডুবে যেতে ইচ্ছে করে! আচ্ছা,কেমন হয় আমি যদি একলা একলা কোথাও হারিয়ে যাই? কেউ আর না খুঁজে পায় আমায় কোনোদিন? খুব মনে পড়ে অনুকে, আমার খেলার সাথী, মনে পড়ে ঠাকুমাকে। ওদের কি মনে পড়বে আমায়?
    (ক্রমশ:)
  • Tanayaa | 131.95.***.*** | ২৯ এপ্রিল ২০০৬ ০০:২৮563108
  • রবিবার, সকালে পড়াশুনোর পরে আজ আর ইস্কুলে যাওয়া নেই। খেলতে এসেছি তাই অনুদের বাড়ীতে। ওদের বাড়ীতে ছাদে যাবার সিঁড়ি আছে,সেটা খুব দারুণ ব্যাপার আমার কাছে। চিলেকোঠা ব্যাপারটাও।
    রোদে মিহিন নরম রঙ। ছুটির দিনের রোদ কি অন্যরকম হয়? ছাদে বসে অনু আর আমি খেলি, ছোটো ছোটো পুতুল ওর অনেক, আমরা বলতুম আলুর পুতুল।নরম পলিমারের গোলাপীসাদা মিষ্টিমুখ পুতুল,বেশীরভাগই মেয়ে পুতুল,মাত্র দুটি ছেলে পুতুল। ছাদের উপরে মাদুর পেতে বসে পুতুল-টুতুল আর হাড়িকুড়ি ছড়িয়ে ভরিয়ে আমরা মিছিমিছি সংসার সংসার খেলি। পাতার তরকারি,ধুলোর চাটনি, সাদা পাথরের ভাত। ওর তিনটে মেয়ে একটা ছেলে আর আমার দুটো মেয়ে একটা ছেলে। আমরা তাদের খাওয়াতে শোয়াতে ঘুমপাড়াতে আর রান্নাবান্না করতে বেজায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু খেলতে খেলতে সে খেলা কেমন একঘেয়ে হয়ে যায়। ছাদে বেশীক্ষন খেলতে আমাদের আর ভালো লাগে না,জিনিসপত্তর গুছিয়ে আমাদের বাড়ীতে দৌড়ে আসি দুজনে।মাত্র কয়েকটা বাড়ীর পরেই আমাদের বাড়ী। কিন্তু আমাদের বাড়ী একতলা, সিঁড়ি টিঁড়িও নেই ছাদে ওঠার, বস্তুত বাড়ীর সামনের তিনধাপ সিঁড়ি ছাড়া আর কোনো সিঁড়ি কোথাও নেই। উঠানে নতুন মাটি ফেলানোর পরে সবচেয়ে নীচের ধাপটা ডুবে গেছে মাটির নীচে।
    উঠানের একধারে কুয়ো, সেখানে দুখানা পেয়ারা গছে অজস্র ফল ধরে বর্ষায় আর বর্ষার পরে। উঠানের পুবধারে ছোটো একটা নারকোল গাছ, বন্যার বছরে গাছটা জলে ডুবে ছিলো নাকি একদিন পুরো, তাই কমজোর। কিন্তু বেঁচে আছে,বাড়ছেও।
    বাড়ীর দক্ষিণে আর পশ্চিমে দিগন্ত অবধি খোলা, ধানক্ষেত। বর্ষায় যখন জলে ভরে যায় তখন ধানচারা লাগায়,অন্যসময় খালিই থাকে,অল্প অল্প অংশে মটরশুঁটি করোলা উচ্ছে ঝিঙা এইসব লাগায় গ্রীষ্মে।
    আমাদের বাড়ীটা অনুর তাই খুব ভালো লাগে, এতখানি খোলা মাঠ,এমন বড়ো ধানক্ষেত! আর আছে একটা শিমূলগছ, বাড়ীর লাগোয়া দক্ষিণের একটুখানি ফাঁকা জমিতে। ওটা ধানক্ষেতের পাশেই। আশ্চর্য গাছ এই শিমূল, শীতে পাতাটাতা সব ঝরে ন্যাড়া দালপালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, শীতের শেষে হঠাৎ ভরে যায় কুঁড়িতে,সেই কুঁড়ি ফুটে টকটকে লাল ফুলের মেলা বসে যায় বসন্তে, একটাও পাতা নেই,শুধু ফুল আর ফুল! তারপরে ফুল থেকে ফল হতে থাকে আর সবুজ পাতায় ঢেকে যেতে থাকে, সেই সবুজের কী মিহিন কোমল রঙ! গ্রাষ্মে ঘন সবুজ হয়ে যায় পাতারা, গাছের নীচে ঘন স্নিগ্‌ধ ছায়া পড়ে। শিমূলের পুরো চেহারাটাই অতি সুন্দর, পাতা যখন থাকেনা, তখনো তার গঠন অতি সুন্দর। পাতা থাকলে আরেক রূপ, ফুলেভরা অবস্থায় আরেক রুপ,সকালে তাকে একরকম লাগে,সন্ধ্যায় বিরাগী সন্ন্যাসীর মতন সে দাঁড়িয়ে থাকে পশ্চিমের রক্তলাল আকাশের পটের উপরে,সন্ন্যাসী-রাজার
    মতন! এই গাছটির সঙ্গে বেড়ে উঠতে উঠতে আমাদের আস্তে আস্তে দিনে দিনে পলে পলে এইসব মৌহূর্তিক অনুভূতিগুলি এসেছিলো,একবারে নয়।
    অনেক পরে যখন জমির মালিক গাছ কেটে বিক্রি করে দিলো, তখন পাড়াটাই কত বদলে গেছে,কত বেশী বেশী বাড়ীঘর,কত নতুন লোকজন, আগের মতন গোটা পাড়া জুড়ে একটিই পরিবার এইরকম ভাবটা আর নেই, তখনও কিন্তু সেই দিগনতজোড়া ধানক্ষেত রয়ে গেছে তেমনই। সেই শিশিরে ভিজে নুয়ে পড়া ধানক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে শিমূলহীন খালি জায়গাটার দিকে চেয়ে বিষন্ন হয়ে গেলো তরুণী অনু, অনেকদিন পরে সেবার ও এসেছিলো আমাদের বাড়ী! চোখে জল লুকিয়ে ফেললো,তবু ঐ অদৃশ্য অশ্রুবিন্দুগুলি আমি দেখছিলাম, ওরা ছিলো সেই গানের কলিটির মতন যে চলে গেছিলো কবির কাছ থেকে, অনেক অনেক দিন পরে কবি যাকে খুঁজে পেয়েছিলেন এক বন্ধুর হৃদয়ে!
    (ক্রমশ:)
  • Tananyaa | 131.95.***.*** | ০৬ মে ২০০৭ ০৫:৩১563109
  • তখন আমরা দুজনেই ছোটো, অনু পড়তো ক্লাস ওয়ানে আর আমি কেজি টুতে।একটা ভাঙা রেডিও পেয়ে আমাদের দুজনের উৎসাহ আর ধরে না।রেডিওর পেছনের ভাঙা ঢাকনাটা সরিয়ে আমরা অবাক,ছোটো ছোটো মানুষেরা তো নেই গানবাজনার ছোটো ছোটো যন্ত্রপাতি নিয়ে? তার বদলে আছে অনেক জড়ানো মড়ানো তার,ছোট্টো ছোট্টো খাঁড়া খাঁড়া টিউব,ছোট্টো ছোট্টো চকচকে চকচকে আরো কত কী!
    উত্তেজনায় দুজনের প্রায় চোখ ঠেলে বেরিয়ে এসেছে,নতুন মহাদেশ প্রথম দেখে ফেলার মতন অবস্থা! এইসব জিনিস থেকে অত গান অত কবিতা অত নাটক অত খবর কিকরে আসে?
    রোজ সকাল বেলায় ঐ যে "আকাশবানী: খবর পড়ছি অমুক" বলে? ঐ যে শনিবারের দুপুরে হয় শনিবারের বারবেলা! ঐ যে শুক্রবারের রাত্রিবেলা হয় নাটক যখন মা রান্না করে রাতের খাবার!
    এইসব বেরিয়ে আসে এই এত এত টুকরো টুকরো জিনিসপত্রের কেরামতিতে!একজন আরেকজনের হাত চেপে ধরি,উত্তেজনায় নি:শ্বাস নিতে পারছি না।কিকরে এইসবের ভিতর থেকে এতকিছু শোনা যায়?
    হুমড়ি খেয়ে পড়ে আমরা আরো ভালো করে দেখতে থাকি,কিন্তু আমাদের কৌতূহল মেটে না,এদিকে বড়োদের কাউকে জিগ্গেস করে তো কোনো ফল নেই,ওরা বলবে বড়ো হলে বুঝবি।
    অনুর দাদা টোটো আমাদের থেকে বছর পাঁচেকের বড়ো,বানের মুখে কুটোর মতন তাকেই ধরে পড়া গেলো। অনু ওর দাদাকে জিজ্ঞেস করলো এসব নিয়ে। কিন্তু সেও কিছু বলতে পারলো না, তবে বিজ্ঞের মতন ঘুরেফিরে দেখলো।
    নিশ্চয় কিছু আছে,কোনো একটা রহস্য,চোখে দেখতে পাওয়া জগতের বাইরে,সেসব জানা অনেকদিনের কাজ।
  • bozo | 68.239.***.*** | ০৬ মে ২০০৭ ০৭:০৯563110
  • "but I have promises to keep"
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন