এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে - ২

    pather pothik
    অন্যান্য | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ | ৬১৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • dri | 199.106.***.*** | ১৯ অক্টোবর ২০০৬ ০৬:২৮499839
  • ন্যারোজে পৌঁছতে বেলা গড়িয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচটা। এখানে এসে ক্যানিয়ন একদম সরু হয়ে গেছে। নদীর পাড় বলে আর কিছু নেই। দুপাশে উঁচু পাহাড়, মাঝে নদী, ব্যাস। ভাড়া করা জুতো আর মোজা পরে আমরা তৈরী হয়ে নিলাম। জলে পা দিতেই ছ্যাঁক করে ঠান্ডা লাগল। অন্য পা ফেলতে গিয়ে এই পায়ের তলার নুড়িটা প্রায় উল্টে গেল। লাঠি দিয়ে শেষরক্ষা হল। দু পা জলে পড়তে স্রোতের টানটা টের পেলাম। এতো দাঁড়ানৈ যাচ্ছেনা। এগোবো কি করে? খানিকক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে থাকার পর ঠান্ডায় পা অবশ হয়ে এল। ভয়টাও একটু একটু করে ফিকে হয়ে গেল। একটা হু কেয়ার্স ভাব জেগে উঠল। জল ঠেলাঠেলি করে লাঠি ঠুকে জলের গভীরতা মেপে সাবধানে পা ফেলে আমরা স্রোতের বিপরীতে এগোতে লাগলাম।

    নদী আর পাহাড়ের কোল হাত ধরাধরি করে হারিয়ে গেছে পাহাড়ের ঐ পাশে। গোটা দুয়েক বাঁক এগোনোর পরই আশেপাশের লোকেরা সব উবে গেল একে একে। কেউ নেই? না, ঐ তো দুটো লোক আসছে। গোড়ালি জল বেড়ে থাই অব্দি উঠেছে।

    যখন ফ্ল্যাশ ফ্লাড হয় তখন এই অংশটা খুব বিপজ্জনক। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিন চার মানুষ জল উঠে যায়। ডোবার হাত থেকে কোনমতে রক্ষা পেলেও স্রোতের ঠেলায় পাহাড়ের গায়ে মাথা ঠুকে মরার সম্ভাবনা প্রবল। আমরা অবশ্য খোঁজ নিয়ে এসেছি ফ্ল্যাশ ফ্লাডের কোন সম্ভাবনা নেই। মিছিমিছি ভয় পেতে বেশ লাগে।

    ভয়ভাবের সাথে একরকম সমঝোতা হয়ে গেলে জাগে বিস্ময়। এই নুড়িবিছানো নদীবক্ষ, পায়ে সুড়সুড়ি দেয়া জলস্রোত, পাহাড়ের গোড়ায় জমে থাকা শ্যাওলা, সূর্য্যের আলোয় চকচকে চূড়ো আর আলোআঁধারি পেট, শিরশিরে বাতাস -- এগুলো যেন কম্পিউটার স্ক্রীন, মাউস ক্লিক, ক্লাইমেট ক®¾ট্রালারের শোঁ শোঁ শব্দের থেকে আলাদা। প্রতিটি বাঁকেই আছে ক্যানিয়নের নতুন রূপ, নতুন রহস্য, পরের বাঁকে কি আছে জানার কৌতুহল।

    বিস্ময়ভাব কেটে গেলে চাপে হিসি। জলে পা দিলেই আমার হিসি পায়। ভয় বিস্ময়ের ঠেলায় সেটা এতক্ষণ টের পাইনি। একে দিনের আলো পড়ে আসছে, তায় হিসি চেপেছে। মিনিট চল্লিশ বাদে তাই ফেরার ডিসিহান নেওয়া হল।

    ডিনারে শুয়োর, ভেজ, গরু, বাছুর আমার সঙ্গীরা কেউ খাবেন না। অতএব পড়ে থাকে বিতত বিতংস। চমৎকার। যেমন আর্জব, তেমন তিগ্ম। তবে পেলব নয় মোট্টে, তাই কোক দিয়ে গিলতে হল।

    (ক্রমশ)
  • tania | 69.232.***.*** | ১৯ অক্টোবর ২০০৬ ০৮:৩৫499840
  • ভেরি গুড দ্রি! আপনাকে দেখে যদি আমার একটু শিক্ষা হয়!
  • Parolin | 213.94.***.*** | ১৯ অক্টোবর ২০০৬ ১৯:০৬499841
  • দ্রি , শেষের লাইনটা চমৎকার :-D
  • dri | 75.3.***.*** | ২০ অক্টোবর ২০০৬ ১২:২৯499842
  • পরদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি ঝলমলে সকাল। কুট্টি শহর স্প্রিংডেল। জায়ন পার্কের গেটের মুখে একদম। হোটেল থেকে জায়নের বড় বড় পাহাড়গুলোর আউটলাইন দেখা যায়। দিন শুরু হয়ে গেছে। ফুলের স্টলে দোকানী বসে গেছে ফুল আর খবরকাগজ সাজিয়ে। গিফ্‌ট শপের সামনের সাইন বলছে 'উই আর ওপেন'। একদল টুরিস্ট জুতো পরে লাঠি হাতে চলেছে বাস স্ট্যান্ডের দিকে। বোন বাবার ছবি তুলছে হোটেলের বাইরের চত্বরে। মা সুটকেস গোছাচ্ছে। বউ দুধের বোতল হাতে ঘুরঘুর করছে মেয়ের পেছনে। আমি জল কিনতে বেরোলাম।

    আজকে যাব ব্রাইস ক্যানিয়ন। একটু ঘুরপথে যাব যাতে আরো দু একটা জায়গা ছুঁয়ে যাওয়া যায়। প্রথমে কোলব ক্যানিয়ন। জায়নেরই লাগোয়া। এনট্রান্সটা অন্য দিকে বলে কিছুটা ড্রাইভ করে ঢুকতে হয়। জায়নের মত অত সেক্সি নয়। ভিন্ন উচ্চতায় বলে ফল কালার একটু বেশী। জায়নের পাহাড়গুলোরই উল্টোপিঠগুলো দেখা যায়। কিন্তু কোন নদী নেই। এখান থেকে বেরিয়ে সেডার সিটি দিয়ে রুট ফোর্টিনে ঢোকার মুখে দারুণ ফল কালার পেলাম। হলুদ অ্যাসপেন রোদে ঝিলমিল করছে। বহু ক্যামেরা ক্লিক পরে গাড়ী পাহাড় বেয়ে ঢুকতে শুরু করল ডিক্সি ন্যাশানাল ফরেস্টের পেটের ভেতরে। উঁচুতে রংধরা গাছের পাতারা সব ঝরে গেছে আসছে বছর আবার হবে বলে। রয়ে গেছে শুধু পাইনের মত চিরসবুজ ভেটেরানেরা।

    পরের স্টপ সেডার ব্রেক্‌স ন্যাশানাল মনুমেন্ট। চোদ্দ থেকে বেরিয়ে একশ তেতাল্লিশ ধরতে হল। প্রথম ভিউপয়েন্টে পৌঁছে কিছু দেখার আগে লাঞ্চ করলাম। তারপর হিহি করে কাঁপতে কাঁপতে (উচ্চতা ১০০০০ ফিটের বেশী) উঁকি মেরে দেখতে গেলাম কি আছে রেলিংএর ওপারে।

    লাল পাহাড়ের ঢাল সিঁড়ির মত স্টেপ কেটে নেমে গেছে অনেক নীচে। ওপরের অংশে জায়গায় জায়গায় গলা মোমের মত লেগে রয়েছে বরফ। রোদের আলোয় ঝিলিক মারছে। পাইনের জঙ্গলের ফাঁকে ছোট্ট একটা রেলিংএ ভর দিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছি আমি। ছোটবেলায় বারান্দা থেকে এভাবেই সুন্দরী মেয়েদের দেখতাম। কিছু স্কুলের বাচ্চা পেছনে বরফ ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। আমার গায়েও এসে লাগল এক টুকরো। বাবা নতুন ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে পাহাড়ের প্রতিটি স্কোয়্যার ইঞ্চির ফোটো তুলে রাখছে। কোন খুন হলে ডিটেকটিভ যেভাবে ছবি তোলে। মা আমাদের বলছে অনেক পুরোন বেড়াতে যাবার স্মৃতি, যেগুলো আগে কখনো শুনিনি। গাড়ী স্টার্ট করার পরও খানিকক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলাম।

    (ক্রমশ)
  • Samik | 125.23.***.*** | ২০ অক্টোবর ২০০৬ ১৫:৩৯499843
  • আরে:, আজ খেয়াল করলাম, সেই জলদাপাড়া তো শেষই করি নি, তার আগেই চক্রাতা পড়ে সব ভুলে মেরে দিয়েছিলাম।

    জঙ্গলের মধ্যে সূর্যোদয় দেখারও একটা আলাদা বিউটি আছে। ভিজে ভিজে গাছের পাতারা মুখ মাথায় বুলিয়ে যাচ্ছে, কনকনে ঠান্ডা, জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে উঠল লাল রংয়ের বিশাআল বড় সূর্য।

    মাহুত মাঝে মাঝেই ঐ জাম্বো অঙ্কুশ নিয়ে হাতিনীর মাথায় মারছে, আর হাতিনী তার কথা শুনছে। কী করে যে ঐ মার হাতিনী সহ্য করছিল, কে জানে! ... খোকা হাতি মাঝে একটুখানি চুকচুক করে মায়ের দুধ খেল, তার জন্য আমরা দশ মিনিটের ব্রেক পেলাম।

    সাতটায় হলংয়ে ফেরৎ এলাম। এসে জানলাম, যে জিপে আমরা এসেছিলাম, তার নাকি অ্যাক্সেল ভেঙে গেছে, সারাতে গেছে, সেরে এলে আমরা ফেরৎ যেতে পারব। কে জানে, আমাদের অ্যাবসেন্সে কোনও হাতি এসে বসেছিল কিনা জিপে! কিন্তু জলদাপাড়ার মত জায়গায় জিপ যদি অ্যাক্সেল পাল্টাতে যায়, সে সেই দিনই ফিরবে কিনা তার কী গ্যারান্টি?

    চার কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে ফিরলাম, কারণ জলপাইগুড়ির বাস হলংয়ের ওপর দিয়ে গেলেও স্টপেজ মাদারিহাটেই।

    এর পর অবশ্য গল্প আর বিশেষ কিছু নেই, সেদিন অনেক রাতে হস্টেল ফিরেছিলাম, কারণ মালবাজারের কাছে এসে জানা গেল কোন বাসে নাকি ডাকাতি হয়েছে তাই রুটে সমস্ত বাস বন্ধ, মাল থেকে রিক্‌শাভ্যানে করে কোন একটা জায়গায়, সেখান থেকে ট্রেকারে করে ময়নাগুড়ি। ময়নাগুড়ি থেকে বাস ধরে জলু ক্যাম্পাস।

    ফিরে এসে হিসেব করলাম। টোটাল খরচ একশো সত্তর টাকা। একশো সত্তরে বিদেশ ভ্রমণ।
  • Samik | 125.23.***.*** | ২০ অক্টোবর ২০০৬ ১৫:৪৪499844
  • জলদাপাড়ার আর ফুয়েন্টশেলিংয়ের কিছু ছবি আছে আমার অ্যালবামে:
    http://picasaweb.google.com/mukherjee.samik/Unnamed03
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন