এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • মা কে নিয়ে

    pi
    অন্যান্য | ০৮ মে ২০১১ | ১০৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 72.83.***.*** | ০৮ মে ২০১১ ১৭:৩২469361
  • সুচেতাদি, খুলে দিলাম। এবার লিখতে থাকো :)
  • Sucheta | 202.63.***.*** | ০৮ মে ২০১১ ১৭:৫৮469364
  • পাই,

    থ্যাঙ্কস। বিশ্রি রকমের ছড়িয়েছিলাম।

  • Sucheta | 202.63.***.*** | ০৮ মে ২০১১ ১৮:০০469365
  • মায়ের দিন বলে আলাদা কিছু নেই আমাদের যদিও আমাদের মায়েদের কাছে প্রায় সব দিনই সন্তানের দিন। মজা, খুশী, আনন্দের ছোটো ছোটো কত মুহূর্ত মাকে ঘিরে মনে পড়ে কিন্তু ভাগ করে নেওয়াও হয় না সেসব অন্যের সাথে সব সময় কেননা বড় হয়ে গেলে বেশি মা মা করলে নিজেই নিজেকে কেমন মাম্মি’স গার্ল/বয় মনে হতে থাকে। তাই কত কত সুন্দর সময় নিজে নিজেই উলটে পালটে দেখা হয় শুধু, দেখানো হয় না কিংবা দেখানো যায় না। এখনতো আমরাও জেনে গেছি অন্যদের এইসব বিশেষ দিনের কথা অন্য অনেক কিছুর মতই। আর মাকে ঘিরে সামান্য সামান্য মুহূর্ত অসামান্য হয়ে আছে আমাদের সবারই মনে, সেরকম আমারও ---

    ঘন কুয়াশায় ভরা বাগান। ঘোলাটে অন্ধকার ছেয়ে আছে পাতায় পাতায়। ঘাসে ঘাসে শিশিরের বিন্দু জড়াজড়ি করে জমিয়ে আছে, থাকে যেমন। পাখীরা সবে আড়মোড়া ভাঙছে কি ভাঙেনি। গাঢ় শীতের কালিন্দীর ধারে আমবাগানের মধ্যে একটাই বাড়ি। অন্য বাড়িগুলোর থেকে বেশ কিছুটা দূরে। মাতা কালিন্দী এক কোপে অন্য বাড়িগুলোর সাথে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে থাকা আগের বাড়িটার গোটা শরীর ছিন্নভিন্ন করে কোনরকম মসলা-পাক ছাড়াই শুধুমাত্র জল দিয়েই গিলে ফেলেছে। মাতৃজঠরে সেই বাড়ির অবস্থান এখন। তাকে বুড়ো আঙুল দেখানোর জন্যই এই বাড়ি দূরে একলা দাঁড়িয়ে। সব মাতা সবার সয় না।

    মাত্রই কয়েকদিন হল ওরা পৌঁছেছে। এবার সাথে করে দুটো চটি এনেছে সে। আগের বার সবসময় পড়ার চটিটা বালির চরে আটকে গেল আর টানাটানির চোটে কিছুতেই ঠিকঠাক হাতে এলো না। খালি পায়ে হাঁটতে ভীষন ঘেন্না তার, চারদিকে এত কেল্লাই আর ড পিঁপড়ার দল। নদীর চর পেরিয়ে গ্রামে উঠতে না উঠতেই আমবাগান শুরু। বাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতেই পিছু পিছু চলতে থাকে যেন সব পোকামাকড়। গ্রীষ্ম-বর্ষা- শর্ৎ-শীত কখন নেই তারা? তার চোখ থাকে তাই সারাক্ষন মাটির দিকে। শুধু কি ঘেন্না, ভয়ও পাশাপাশি। ভয় কি আর এমনি এমনি, লম্বু বাবারাও বেড়িয়ে পড়েন যে ইচ্ছেমতন।

    তাদের জন্য নির্ধারিত ঘরের মধ্যে গরম জামাকাপড়, রোদ খাওয়া লেপ-কম্বল-বালাপোষ ডাঁই হয়ে আছে কাঠের সিন্দুকের ওপর। ক্রমেই শীত বাড়বে, আর চেপে বসবে তাদের বুকের ওপর আগে থেকে ভাল ব্যবস্থা না করে রাখলে। জোড়া বিছানার একধারেও বাড়তি বালিশ, চাদর, মশারি ভাঁজ করে রাখা। অন্যধারে চার ভাইবোন সারি দিয়ে সেঁধিয়ে আছে লেপের-কম্বলের তলায়, সেদিনের মত ঠিকঠাক।

    হঠাৎ লেপ ধরে টানাটানি। যত টানাটানি তত ঢুকে যায় সে লেপের ভেতর। “ওঠ ওঠ শিগগির। কী বলেছিলাম কাল তোকে ঘুমোনর আগে। সূর্যোদয় দেখাবো তোদের, যাবি না?” এক মুহূর্তমাত্র। লেপ ফেলে তড়াক করে উঠে বসে বিছানার ওপর। কৌতুহলে ভরে আছে টইটম্বুর। আগে কখনো কালিন্দী নদীর ধারের সূর্যোদয় দেখেনি সে। বিছানা থেকে নেমে দেখে বোন ততক্ষনে সোয়েটার, মাথায় রুমাল বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে মেঝের ওপর। যদিও ওর চোখের পাতায় ঘুমও আছে লেপ্টে। গলাবন্ধ সোয়েটার পরে, রুমাল মাথায় বাঁধতে না বাঁধতেই মা হাত ধরে টানতে শুরু করে, “চল চল, দেরী হয়ে যাবে। এই মেয়ের জন্য দেখাই যাবে না কিছু।” ততক্ষনে ও উবু হয়ে ঢুকে পড়েছে বিছানার নীচে, চটি বার করার জন্য। কিন্তু মায়ের তাতে বয়েই গেছে। একটানে বের করে নেয় তাকে বিছানার তলা থেকে। প্যাংলা মেয়েকে বগলদাবা করে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে মা। বারান্দার সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বোনের পায়ের দিকে চোখ পড়তে রীতিমত ককিয়ে ওঠে সে। জুতো মোজা পড়া বোন দিব্যি লাফ দিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠোনে নেমে যায়। “চুপ, মুখ বুজে থাক। দাদু ঘুম থেকে উঠে যাবে এখনই তোর আওয়াজে।” সেটাইতো সে চায়, তাহলে অন্তত খালি পায়ে এই অন্ধকারে তাকে নিয়ে বেরোনর সাহস কারও হবে না। কিন্তু কোথায় কী। ততক্ষনে, ঘর থেকে বেরিয়ে ডানদিকে বাগানের দিকে যাওয়ার দরজায় হাত ঠেকেছে মায়ের। বাড়িটাতে চারটে দরজা চারকোনায়। বাঁদিকের দরজার পাশে বৈঠকখানা। তারও পাশের ঘর দাদুর। মাঝখানে লম্বা বারান্দা, অতদূরে কি আর আওয়াজ পৌঁছবে। তবুও শেষবারের মত ডেকে ওঠে পরিত্রানের আশায়। এবার ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে দরজা খুলে ঝুপসী অন্ধকার বাগানে পা রাখে মা, খালি পায়ে। সামনের আমগাছের গোড়ায় মাটিতে ওকে নামিয়ে দিয়ে দু’বোনের হাত ধরে প্রায় দৌড়তে দৌড়তে বাগান পেরোতে থাকে মা। আর সে, নাচতে নাচতে লাফাতে লাফাতে কঁকাতে কঁকাতে চলতে থাকে মায়ের পাশে পাশে। এতক্ষনে পাখীরাও জানাতে থাকে নিজেদের অস্তিত্ব সদলবলে। বড় দাদুর ল্যাংরা বাগান পেরোলেই নদীর পার। “চেঁচাস না, একদিন খালি পায়ে হাঁটলে কী হবে? কেল্লাইগুলো কি সব ছেড়ে শুধু তোরই পায়ের তলায় আসে? কাজকর্ম নেই নাকি ওদের”- ধমকে ওঠে মা।

    অন্ধকার সামান্য কেটেছে এখন, নদীর একেবারে পারে এসে দাঁড়ায় মা দুই কন্যার হাত ধরে। ওপারের বালির চর দিনের বেলায় ঝকঝক করে রূপোর মত। এখন সর পড়া ঘন দুধের মত হালকা রঙ ধরেছে, তারও পরে কালোরঙের গাছের এলায়িত সরলরেখা। এপারে ছায়া ছায়া নদীর কিনারা। আমগাছের পাতা থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ছে শিশির খসে পড়া পাতার ওপর। থমথমে চারপাশ, জনমনিষ্যি কেউ নেই কোত্থাও মায়ের পাশে ওরা দুইবোন ছাড়া। শীতের খর কামড় বিঁধছে গরম জামাকাপড় ভেদ করে। খাড়া এই নদীর ধারে কাছে আসা ওদের মানা। পই পই করে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে নদীর ধারে না যাওয়ার জন্য। জিতনি, বুধুয়া দুজন পাহারাদার সব সময় আছে ওদের সাথে সাথে। তাদেরও কিইবা বয়েস, মাত্রই কয়েকবছরের বড়। তবু ওদেরই দিদি-দাদাগিরির তাঁবে চলে তাদের যাপন দিনের যেটুকু সময় বাগানে থাকে। বাগানের শেষ সীমায় কখনও যায় না তারা। বড়জোর ল্যাংরাবাগান আরম্ভ হওয়া পর্যন্ত। আর এখন কি না এই অন্ধকার ভোরে নিজেই মেয়েদের নিয়ে ধূলোপথে বাগানের মধ্যে দিয়ে খালি পায়ে ছুটছে তাদের মা। কী বলবে, বড়দের ব্যাপার এই রকমই।

    পারে এসে দাঁড়াতেই স্তব্ধ হয়ে যায় সে। কালিন্দীর বুক থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এমন অবাক হয়নি কখনও। জলের ভেতর থেকে ধোঁওয়া কেমন করে বেরোচ্ছে। এও সম্ভব কি? “তুই কি কথা কম বলতে পারিস না? চুপ করে থাক এখন। জলের দিকে তাকিয়ে থাক। এখনই দেখবি সূর্য কেমন লাল হয়ে উঠে আকাশ-পাতাল এক করে দেবে। মনে হবে মাটি ফুঁড়ে উঠছে। সামনের দিকে তাকা”– মায়ের সাথে কথা বলায় দায়, ঠিকঠাক কোন প্রশ্নের উত্তর দেবে না কখনও।

    বিশাল একটা লাল গোল্লা ধীরে ধীরে প্রকাশমান হতে থাকে। গোলাপি আভা ছড়িয়ে যায় সামান্য। হালকা লাল থেকে তীব্র লাল অনেক বড় একটা উলের বল একেবারে সামনে চলে আসে। দুই কন্যার হাত ধরে মা দাঁড়িয়ে থাকে ততক্ষণ, যতক্ষন না একটা বেশ বড়সড় চওড়া লাল কাঠের পাটাতনের মত আকাশ থেকে কালিন্দীর অন্দরের গভীর থেকে গভীরতম প্রদেশে অনায়াসে ঢুকে যায়। আকাশে-জলে-পাতালে সংযোগ স্থাপন করে। পাতাল ভেদ করে আবার রঙ ছড়াতে থাকে জলের ওপর। স্থির জলে রঙ ফুটে ওঠে গোলাপী, লাল হালকা গাঢ়। ধোঁওয়ার চিহ্নমাত্র দেখা যাচ্ছে না এখন। শুধু রঙ আর রঙ। লাল রঙে দোল খেলে কেউ যেন নিজের চুল এলিয়ে রূপ দেখাচ্ছে কালিন্দীকে। লাল এবার কমলা এরপর হলুদ। সামান্য নীলও যেন ছিটকে বেরিয়ে পড়তে চাইছে আশপাশ থেকে। “কী বলেছিলাম”– অসামান্য হাসে মা। নিশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে থাকে সে জীবনের প্রথম সূর্যোদয়ের দিকে। কটা মাত্রই বছর তো সে এসেছে পৃথিবীতে, কিছু দেখাই শুরু হয়নি এখনও। “পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সূর্যোদয় শুধু এখানেই দেখা যায়। এই কালিন্দীর ওপরে, এবার চল। দাদু উঠে পড়বে”– দুজনের দুহাত দুদিক থেকে ধরে বলে মা। কিন্তু কোন কথায় যে তার কানে ঢুকছে না এখন। দাদু, কেন্নো, লম্বুবাবা কাউকেই কেয়ার করে না সে। স্থানূ হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাকিয়েই থাকে। প্রশ্নই ওঠে না এখন বাড়ি ফেরার। হাত ছাড়িয়ে নেয় এক ঝটকায়। নাছোড় মা আবারও তাকে বগলদাবা করে লম্বা পা ফেলে হাঁটতে থাকে। একেবারে ঝকঝকে রোদ্দুর বেরিয়ে যাওয়ার আগেই যে দরজার সামনে পৌঁছে যেতে হবে। বোন জুতো পায়ে মচমচ করে আমপাতার ওপর দিয়ে অনেকটা এগিয়ে গেছে প্রশ্নহীন। ফিরতে যখন হবেই, ফেরে সে বারবার পেছনে তাকাতে তাকাতে। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দ্বিধাহীন খালিপায়ে আমপাতার ওপর দিয়ে বোনের পাশে চলতে চলতে পৌঁছে যায় দরজার সামনে। পেছনে মা। দরজার বাঁদিকে লীচুগাছের নীচে দাদু। গায়ে স্লেট রঙের ঊলের মোটা সোয়েটার, মাথা থেকে ঢাকা ছাই রঙা এণ্ডির গরম চাদর। চোখ মুখ শুধু দেখা যাচ্ছে। পায়ে পাতা ঢাকা কালো চটি, চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। রেডিওয় বাজছে সুজলাং, সুফলাং ---
    একমুহূর্ত থমকে যায় হয়তো বা মা। দাদুও হয়তোবা বলে “মেয়েকে জুতোটা পরিয়ে নিলে পারতে কিংবা জিতনির মাকে সঙ্গে নিয়ে গেলে পারতে।” কে জানে, দাদুর পক্ষে দুটৈ সম্ভব। সে শুধু জানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সেই রঙের মুহূর্ত ধরে আছে মায়ের অসামান্য হাসির সাথে, মাঝে মাঝে বদলে যায় হয়তো বা রঙের রকমফের।

  • Bratin | 117.194.***.*** | ০৮ মে ২০১১ ২০:৩৪469366
  • খুব সুন্দর লেখা । মন ছুঁয়ে যায়।

    কিন্তু আমার একটা দাবি আছে। এই যে পশ্চিমী দেশ গুলো তে ঘটা করে ফাদার'স ডে, মাদার'স ডে করা হয়। এই টা আমার কেমন একটা লাগে। মনে হয় বড় বড় দোকান গুলোর জিনিসপত্র বিক্রি করার ছল। বাবা ,মা ছেলে,মেয়েদের সারা জীবন স্বার্থহীন ভাবে জন্যে যা করেন সেটা কী ঐ এক দিন দামী গিফ্‌ট দিয়ে মিটিয়ে দেওয়া যায়? হয়তো আমারাও এখন এই সব করি পশ্চিমী সভ্যতার আদলে। কিন্তু ব্যাপার তা আমর বড় মেকি মেকি লোক দেখানো মনে হয় ।

    জনগন দু পয়সা দেবে এ ব্যাপারে?
  • Nina | 68.84.***.*** | ০৮ মে ২০১১ ২০:৪৬469367
  • বোতীন, দিনক্ষাল পাল্টে যাচ্চে তো! পোরিবত্তোনের হাওয়া ---টোনাটুনির সংসার , কোনওমতে একটি বড় জোর দুটি ছেলেপিলে ---টেম নেহি হ্যায় মেরে ভাই --এই দুরন্ত ছোটার মাঝে তবু যেন ধরে রাখার চেষ্টা মায়ের জন্য অন্তত শুধু একটা দিন। শুধু মায়ের নামেই থাক, থাক তার জন্য সবটুকু সময়----মা ও তুলে রাখে এই দিনটি --সব কাজ আজ থাক, আজ সে কাটাবে দিনটি তার সন্তানের সঙ্গে --দিনটি হবে শুধু তাদের--মা ও তার ছেলে-মেয়ে!
    ভালবেসে যাই করা হয় তাই সুন্দর ---সবের মাঝে বিশেষ মানুষটির জন্য বিশেষ দিন ---আগে তো বিবাহবার্ষিকী ও ছিলনা, তার আগে জন্মদিনপালনও ছিলনা ইত্যাদি--পোরিবত্তন হে বোতীন , হোকনা মন্দ কি!

  • Nina | 68.84.***.*** | ০৮ মে ২০১১ ২০:৪৮469368
  • সুচেতার লেখাটি মনের গহীনকোণে কত কি ছুঁয়ে গেল----অভিনন্দন।
  • hu | 98.226.***.*** | ০৮ মে ২০১১ ২৩:২৭469369
  • মাদার্স ডের সিনেমা : মাই মাদার্স ক্যাসেল http://www.imdb.com/title/tt0099266/

    সিনেমাটার নাম শুনিনি কখনো। এমনি এমনিই দেখতে বসলাম। মন খারাপ, মন ভালো - সব অনুভূতিগুলো মিলেমিশে গেল।
  • Susmita Chakrabarty | 180.149.***.*** | ০৯ মে ২০১১ ১৪:১৪469370
  • 'মা'কে মনে করে লেখা আর নিজের 'মা' হওয়ার প্রাক্কালে লেখা দুটো কবিতা আজ এখানে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করছি:
    bySusmitaChakrabartyonSunday, 08May2011at19:27

    মাতৃমূর্তি কাকীমার ছায়া

    রেয়াজ-রাগিনী সন্ধ্যা- সুরুচির বার্তা ভেসে আসে।

    খানিক দূরত্ব রেখে তাপদগ্‌ধ জ্যৈষ্ঠের বাতাসে;

    গন্ধ শুঁকি কাকীমার স্নেহে ঘেরা পল্লবিত নন্দনকাননে,

    সাপের খোলস ভেঙ্গে স্মৃতি নাচে সড়কের পরিপাটি উত্তুঙ্গ শিরিষে।

    উলুধ্বনি শঙ্খনাদ মঙ্গল প্রদীপ্ত-ঘট শুভ আপ্যায়নে;

    জেগে ওঠে কে০ম কোন আদিমাতা চিহ্ন ক্রোমোজোমে।

    মনে পড়ে একদিন আমরাও বর-বধু সেজে,

    তোমার আশিস জলে অনায়াসে পার হয়ে গেছি_

    রুক্ষ শুষ্ক কাঁটাতার, সামপ্রদায়িকের চোখ বিষাক্ত আগুন।

    যেমন কৈশোর বেলা কতবার বাঁচিয়েছ দ্রোহে!

    বৈষম্যের কড়াদাগ কেটে দিয়ে নিরাপদে লুকিয়ে লুকিয়ে;

    চেনা-জানা পাড়া ছেনে ছুটে গেছি সময়ের অচেনা শহরে।

    আজিকার সুরভিত রাত্রি পুষ্পতলে-

    রক্তের ভেতর বুঝি নড়েচড়ে স্মৃতির সম্ভাষ;

    সাঁঝের প্রদীপ হাতে উঠোনের পুরাতন কোণে,

    তুলসীতলার ছবি ছাপিয়ে যে মাতৃমূর্তি জ্বলে,

    শান্তির সুতীব্র দাহে সেই মুখ! সিঁথির সিঁদুরে;

    কাকীমার ছায়া গ'লে আদিমাতা আজো ঘরে স্বস্তয়নী-মন্ত্র পাঠ করে।

    আমার মা সবিতা ভট্টাচার্য: অনেক খুঁজে পেতে মায়ের এই ছবিটি অবশেষে পেলাম। (ছবিটি নিউটনের তোলা)

    তোকে পেটে নিয়ে

    তোকে পেটে নিয়ে রোদ দেখা, আর

    তোকে পেটে নিয়ে পদ্মাপাড়;

    তোকে পেটে নিয়ে হেঁটে যাই আমি

    নগরীর ভীড়ে কয়েকবার।

    তোকে পেটে নিয়ে রাতজাগা, আর

    তোকে পেটে নিয়ে আপিস-ঘর;

    তোকে পেটে নিয়ে হাজারো ভাবনা

    নি:সঙ্গতা রাত্রিভর।

    তোকে পেটে নিয়ে বন্ধুর ধ্যানে

    হাসি-খুশি সেজে দিন ফুরাই;

    তোকে পেটে নিয়ে আদরেরর ওমে

    একলা থাকার তাপ জুড়াই।

    তোকে পেটে নিয়ে তোর ছবি আঁকি:

    আধো আধো বোল, পা টলমল-

    আসছিস ভেসে আমাদের দেশে;

    দিন গুণে যাই ঘণ্টা-পল।

    * দুটো কবিতাই বেশ পুরোনো আর আলাদা আলাদাভাবে ছোটকাগজে (নাম-সাল এ মুহূর্তে মনে করতে পারছি না!) প্রকাশিত।

    লালন সুস্মিতা ও সুস্মিতা চক্রবর্তী: ক'দিন আগে হঠাৎ করে আমাদের বাসায় ... (নিউটন ছবিটি তুলেছে)
  • sucheta | 202.63.***.*** | ০৯ মে ২০১১ ১৮:৩৫469371
  • ব্রতীন, নিনা-
    পড়েছেন দেখে ভাল লাগল।

  • Anirban Roy Choudhury | 144.19.***.*** | ১০ মে ২০১১ ১০:৪৯469362
  • সুচেতা'দির লেখা খুব ভালো লাগলো ...
    জেঠুর একটা লেখা মনে পড়ল - "কাকা পিসিরা হারিয়ে যাচ্ছেন" - নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি'তে সত্যিই তো কাকা থাকলে নিজের পিসি হবে না - আর পিসি থাকলে জেঠু থাকবে না ...
    ভাগ্যিস মা'এর উপর সেটা হবার চান্স নেই ... তবুও ঐ "ফুটপাথের যীশু" 'দের কথা ভাবলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয় বৈকি ...

    ইদানিং প্রতিদিন'এর রবিবার'এ সঞ্জীব বাবুর স্মৃতিচারণ পড়ছি ... অনেক মিল খুঁজে পেলাম যেন এই লেখাতে ...
  • Mdsayful | ***:*** | ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:৫০469363
  • মা ছেলে ২০১৮ চটি গল্প
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন