দেশ
(১)
এই শান্ত সকালবেলা;
যখন নিঃশব্দ বারিষ ঝরছে একেলা ,
নীরবে ঝরে পড়ছে আমার দেশ
আমার দেশের বুকের পরে;
তখন ,এলে তুমি----
নীরব অখন্ড আলাপ বেয়ে ,
সব ধুনোগন্ধী ধূপছায়া অলঙ্কার ছেড়ে ,
সারা গগন জুড়ে শ্যামল ছায়া ছেয়ে
ওগো প্রিয় আমার|
(২)
তবে আনো ফুলডোর,
ষড়জ থেকে গান্ধার ,গান্ধার থেকে মধ্যম
আবার ঋষভে ফিরে ,ছুঁয়ে আলতো শৈশব
পূর্ণ বিকাশ হোক তব,
কৃন্তন কর বন্ধনডোর।
আগল খোল ,আগল খোল
ওহে অনির্বাণ অনিকেত!
ঢালো তব অশ্রুত সুররেতঃ।
(৩)
এ দেশ পঞ্চম বেয়ে উঠেছে নিষাদে
আবার কেন ফিরে যেতে চায় ,হায়?
মরি ,এ কেন যেতে চায় কোমল -নিষাদ পানে-
হ্যাঁচকা মেরে তুলি তারসপ্তকে এক বিশাল টানে ।
এবার উঠি ষড়জ বেয়ে কোমলগান্ধারে
ঋষভে নিয়ে যতি-বিশ্রাম ,
যাত্রা শুরু তব পদপানে অবিরাম।
(৪)
আঘাত'পরে আঘাত আসে যায়
দুরন্ত প্রত্যয় তবু জেগে রয়।
সুরধারা ঝরে ভুল সুরের ঠিকানায়;
মেঘ আঁচলে বীণাপাণির অবাধ প্রশ্রয়।
তানপুরোর ওপর চুপ করে এসে বসে
গাংফড়িঙের ছোট্ট ছানা,ধূমল,ঘোলাটে
কাচের মতো ডানা মেলে ,চুপচাপ
দেখে বৃষ্টি,ওড়ে ঝিরিঝিরি হাহাকারে।
(৫)
ঘোর হয়ে আসে আকাশ।
ঘন হয় রং জলরঙের বাটিতে
টিপটিপে রঙের ফোঁটায় দিগন্ত ফুটে ওঠে
দম নিয়ে আবার ছাড়ি শ্বাস;
ঠিক তক্ষুনি---
জাদু ঘটে যায় অলখ নিভৃতে
তানে তানে লাগে প্রাণে প্রাণে ঝঙ্কার
ষড়জ-শৃঙ্খল ছাড়িয়ে মধ্যম পেরিয়ে
উড়াল দেওয়া ডানা থিতু হয়ে
আশ্রয় খুঁজে পায় পঞ্চমে।
অশ্রুমুক্তো গেঁথে সাজিয়ে তুলি
তোমার ঘনশ্যাম উত্তরীয়--
রোদের হাসিতে তোমার পূর্ণ মহিমা
ফুটে ওঠে জমকালো হয়ে ।
পূর্ণতা পাও তুমি ,আমার দেশ-
আমার দেশ ,খাম্বাজ সাজ
ছেড়ে এসেছ আপন রাজত্বে
নমি চরণে রাজাধিরাজ।
(৬)
এবার তবে বিদায়ের পালা।
সিংহাসনে বসেছ এখন
তবে মিলন হোক এবার
পলে পলে ,তিলে তিলে অনুখন।
সকল প্রদীপ জ্বেলেছি তব তরে
সকল দিন্য ,গর্ব করেছি দূর।
বন্দনাগানে ঢালো তবে সুর ।
নাথ আমার ,গাগরি ভরে দাও
ভরে দাও ,ভরে দাও ...ভরে দাও,
অতলস্পর্শী, গগনচুম্বী সব সুরে সুরে।
কুঁড়িগুলি দেখি প্রতিটি সকালে
অল্প স্বল্প বাড়ে, শুকিয়েও যায় কেউ
জল কম-বেশি, সার মাটি কীটনাশকের হেরফের
হয়ে গেলে বুঝতে পারি না।
পাখি দেখে চুপ থাকি, ধীরে ধীরে কাছে আসে
নাগালের মধ্যে রাখা দানা খেতে শেখে
এইভাবে বহু অভ্যাসে কেউ এসে হাতেও বসলে
দেখি ফুলগুলো আচমকা সব ফুটে গেছে।
কাছে গিয়ে আশা নিয়ে বলেছি সে-কথা।
মৃদুস্বরে বলেছে সে — আজও শিখলে না?
সামান্য কাকতাড়ুয়ার কাজও তোমার হবে না।
১
যে কথা নৈঃশব্দ্য বিয়োয় নি
আমি তাকে অর্থহীন বলি
তাই সে স্থলে জলে অন্তরীক্ষে
বিজ্ঞাপিত হয়েছে।
তাই, দেহাতীত হ'তে চেয়ে যে সৌন্দর্যগুলি
ফুলের অবয়ব ছেড়ে, পাখির ঠোঁট ছেড়ে
নারকেল পাতার ফাঁক দিয়ে আসা জ্যোৎস্না ছেড়ে
চলে গেছে জীবনের অন্য সংজ্ঞার খোঁজে —
তার পিছু নেব ভাবি, ইত্যবসরে।
২
এক একটি কুকুর কে দেখে মনে হয় — এ,
বেড়ালের মতো মিউ মিউ করলে বেশ হ'ত
যেভাবে পাকানো দড়ি ফোঁস করে ওঠে —
বলে গেছে পূর্বজরা।
অন্য স্বরে বলার কথা ভাবি, যেভাবে
রাতের রেলগাড়ি পেরোয়
ভরা জোৎস্নায় মরা নদীর বালিধারা।
ঘুমের মধ্যে সর্বস্ব খুইয়ে ডুকরে ওঠে
মাঝবয়েসী সংসার-মাঝি।
ভাবি, সব ছেড়ে দিয়ে শুধু নৈঃশব্দ্য লিখি।
৩
বক্তব্য রাখাকালীন চোখ খোলা থাকলেও
দেখা যায় না অনেক সময়েই।
কানও বন্ধ থাকে অনেকাংশ।
ফলতঃ সে কথা ঠিক কীভাবে কোথায় পৌঁছল
আমরা জানিনি ঠিকঠাক।
মশার মতো কেউ তাকে হাত নেড়ে তাড়িয়েছে
একজন সে মশার পিছু নিয়ে মারবে বলে উদ্যত
কারও খুব ঘুম এল বুঝি,
ফেরার পথে আটা আনতে হবে —
আচমকা মনে পড়ে অন্যজন কিছুটা বিড়ম্বিত।