এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা  রাজনীতি

  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা

    বকলমে
    আলোচনা | রাজনীতি | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ৪৬৩৯ বার পঠিত
  •  
    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৫১
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ১ 
       
      ইসরায়েল সমর্থনে লন্ডনে আর ম্যানচেস্টারে দুটি মিছিল করেছে সংঘের লোকজন। বেশ বড়ো বড়ো এইদুটো মিছিলের (দুটোতেই ১০০ ২০০ লোক হয়েছিল) মোটামুটি সব লোকজন ৫০ উর্ধ। ওদের ভীষণ আক্ষেপ যে ওদের ছেলেমেয়েরা সবাই ট্রাফালগার স্কোয়ারে "জিওনবাদ নিপাত যাক, মুক্ত করো গাজা" মিছিলে যোগদান করেছে।


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৫৮
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ২ 
       
      আমরিকী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টেলিফোনে কথা বলছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনয়ামিন নিতান্যহুর সঙ্গে। নিতান্যহুর ভয় গাজাতে বোমা ফেলবার সময়ে পাচ্ছে ইরান লেবানন থেকে রকেট আর মিসাইল ছোড়ে। জো বাইডেন অভয় দিয়ে বললেন, "চিন্তা করবেননা, যত পারুন বোমা মারুন আমরা আপনাদের পাশে আছি।" প্রেসিডেন্ট ফোনটা রাখতেই তার কাছে আরেকটি ফোন। এবার ইরাক থেকে। ইরাকের আম্রিকি রাষ্ট্রদূত জানাচ্ছেন, "মিস্টার প্রেসিডেন্ট বড় সমস্যা। ইরানীরা ইস্রায়েল নয় আমাদের ইরাকি ঘাঁটিতে মিসাইল দিয়ে হামলা করছে বারবার।"


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১২:০২
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩ 
       
      কয়েকদিন আগে গাজার একটি খ্রীষ্টান হাসপাতাল আর প্রায় ৮০০ বছর পুরোনো একটি চার্চে ইসরায়েলের তরফ থেকে বোমা বর্ষণ করাতে বেশ কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সমস্যা হচ্ছে যে ইসরায়েলের সরকার (এর সঙ্গে আম্রিকার জো বাইডেন, ভারতের জামাই ঋষি সুনক, ফ্রান্সের মাক্রু) ইতিমধ্যেই এর জন্য হামাসকে দায়ী করে ফেলেছেন কিন্তু টুইটারে আমাদের সঙ্ঘের বীরেরা (এর সঙ্গে তাদের জিওনবাদী বন্ধুরা) অলরেডি ইসরায়েলকে এর ক্রেডিট দিয়ে বলছেন, "কি রে গাজার ইঁদুর ছুঁচোরা আর আমাদের জ্বালাতে আসবি? দেখলি তো বাঘে ছুঁলে ১৮ ঘা আর ইস্রায়েল ছুঁলে ৫০০০ ঘা"। তাহলে কে মেরেছে এদের?


    • guru |২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৪৮
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৪

      বর্তমান ইসরায়েল প্যালেস্টাইন সংঘর্ষে সবচেয়ে চাপে ​​​​​​​বোধহয় ​​​​​​​আরব ​​​​​​​ও ​​​​​​​মুসলীম ​​​​​​​আমেরিকানরা। এরা 9/11 এর ​​​​​​​ঘরপোড়া ​​​​​​​গোরু, তাই ​​​​​​​বেশ ​​​​​​​ভয়ে ​​​​​​​ভয়েই ​​​​​​​কাটান। গাজার খবর সামনে আসামাত্র একটি ৬ বছরের মুসলিম আমেরিকান শিশুর তার প্রতিবেশী এক শ্বেতাঙ্গ বৃদ্ধের হাতে ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর  ঘটনা সামনে আসে। বর্তমান ইসরায়েল প্যালেস্টাইন ​​​​​​​সংঘর্ষের ​​​​​​​সময়ে ​​​​​​​তাই আপাতত ​​​​​​​এরা ​​​​​​​ভীষণভাবে ​​​​​​​নিজেদের ​​​​​​​কোনঠাসা ​​​​​​​ও ​​​​​​​একঘরে ​​​​​​​হিসেবে ​​​​​​​অনুভব ​​​​​​​করছেন। 2020 সালে ​​​​​​​এরা ​​​​​​​সবাই ​​​​​​​মিলে ​​​​​​​বাইডেনকে ​​​​​​​জিতিয়েছেন ​​​​​​​ট্রাম্পের ​​​​​​​বিরুদ্ধে ​​​​​​​অনেক ​​​​​​আশা ​​​​​​​নিয়ে যে 9/11 এর ​​​​​​​পরের ​​​​​​​ইসলামোফোবিয়া ​​​​​​​যা ​​​​​​​কিনা ​​​​​​​ট্রাম্পের ​​​​​​​আমলে ​​​​​​​ভয়াবহ ​​​​​​​রূপ ​​​​​​​ধারণ ​​​​​​​করেছিল ​​​​​​​সেটি ​​​​​​​কিছুটা ​​​​​​​কমবে ​​​​​​​ও ​​​​​​​প্যালেস্টাইন ​​​​​​​সুবিচার ​​​​​​​পাবে ​​​​​​​সে ​​​​​​​সবই ​​​​​​​এখন ​​​​​​​"আশার ​​​​​​​ছলনে ​​​​​​​ভুলি"। এখন কথা ​​​​​​​হলো ​​​​​​​এরা ​​​​​​​ভোট ​​​​​​​দেবেন ​​​​​​​কাকে ?? ট্রাম্প ​​​​​​​বা ​​​​​​​অন্য ​​​​​​​রিপাবলিকান ​​​​​​​প্রার্থীদের ​​​​​​​ভোট ​​​​​​​দিলে ​​​​​​​কোনোই ​​​​​​​লাভ ​​​​​​​নেই ​​​​​​​যেহেতু ​​​​​​​তাতে ​​​​​​​তাদের ​​​​​​​স্বার্থসিদ্ধি ​​​​​​​হবেনা ​​​​​​​কিন্তু ​​​​​​​আবার ​​​​​​​বাইডেনকে ​​​​​​​ভোট ​​​​​​​দিলেও ​​​​​​​আশাভঙ্গ ​​​​​​​হোবে। তাহোলে ​​​​​​​তাদের ​​​​​​​উপায় ​​​​​​​কি ?


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৪৭
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৫ 
       
      মুসলিম আমেরিকানদের ডাইলেমার কথা আগের মিনি কড়চা তে লিখেছি। ঘটনা হচ্ছে আমেরিকাতে যেসব মুসলিম আমেরিকানরা থাকতে আসেন তারা নিজেদের দেশেই যথেষ্ট অত্যাচারিত এবং একপ্রকার বাধ্য হন শরণার্থী হিসেবে আমেরিকাতে আশ্রয় নিতে। প্যালেস্টাইন থেকে আশা এরকমই একটি পরিবারের ৬ বছরের ছেলে ওয়াদিয়া আল-ফাওয়ামে। গত অক্টোবরের প্রথম দিকে এই ইস্রায়েল প্যালেস্টাইন বর্তমান সংঘর্ষ শুরু হবার পরেই ছেলেটি ও তার মাকে বাড়িতে একা পেয়ে তাদের উপরে চড়াও হয় বাড়িওলা ৭১ বছর বয়স্ক জোসেফ জুবা। এই জুবা ভদ্রলোকের মুখে একমাত্র চিৎকার ছিল, "আমার দেশ ছেড়ে চলে যা টেরোরিস্টরা"। প্রায় ২৬ বার ছুরির আঘাতের পরে যখন ছেলেটিকে তার মা (যিনি নিজেও আহত হয়েছিলেন) কোনো রকমে উদ্ধার করেন ছেলেটির মুখে একটাই কথা ছিল, "মা আমার জন্য ভেবোনা আমি ঠিক আছি"। এটাই ছিল ছেলেটির শেষ কথা।
       
      পুলিশ আপাতত ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করছে। ছেলেটির মা আপাতত প্রাণহানির আশংকার বাইরে কিন্তু মানসিকভাবে ডিপ্রেশনে।


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:১৯
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৬ 
       
      গাজাতে বর্তমান ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম আমেরিকানদের ভোটের প্রসঙ্গটি আস্তে আস্তে আমেরিকান প্রচারমাধ্যমে সামনে আসছে। দুটি প্রদেশ মিশিগান ও পেনসিলভানিয়াতে গতবার বাইডেন ট্রাম্পকে একচুলের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছিলেন। ঘটনা হচ্ছে সমগ্র আমেরিকাতে মুসলিমদের ডেমোগ্রাফিক পার্সেন্টেজ মাত্র ১ পার্সেন্টের মতো কিন্তু এদুটো প্রদেশে সংখ্যাটা কিছু বেশী যেকারণে ২০২৪ এর ভোটে অন্ততঃ এদুটো প্রদেশে বাইডেনকে মুসলিম ভোট পুরোটাই নিজের পক্ষে টানার দরকার। এর কারণ নির্বাচনী পাটিগণিত।
       
      পেনসিলভানিয়ার নির্বাচনে ২০১৬ সালে ট্রাম্প যেতেন ৪১ হাজার ভোটে আর 2020 সালে বাইডেন জেতেন প্রায় ৮১০০০ ভোটে। এই স্টেটটির রেজিস্টার্ড মুসলিম ভোটার এর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ্য ৮০ হাজার অর্থাৎ যে ব্যক্তি এই ভোট বেশি পাবেন তিনি জিতবেন এই সুইং স্টেট। এই সুইং স্টেট অন্তত ২০ টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।
       
      একই ভাবে মিশিগানে গতবার বাইডেন ট্রাম্পকে মাত্র দেড়লক্ষের ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন। মিশিগানে রেজিস্টার্ড মুসলিম ভোটার এর সংখ্যা প্রায় ২  লক্ষ্য ৪০ হাজার অর্থাৎ এখানেও বাইডেনের ট্রাম্পকে হারাতে প্রায় পুরো মুসলিম ভোট হাতে দরকার। এই সুইং স্টেট অন্তত ১৬ টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে।
       
      এখন দেখা যাক গাজাতে বর্তমান ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে এবং ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়েরই ইসরায়েলকে অকুন্ঠ সমর্থনের পরে মুসলিম আমেরিকানরা কাকে ভোট দেন !  


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৩২
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৭ 
       
      ইউক্রেইন্ ও গাজার যুদ্ধের ব্যাপারে পশ্চিমা শক্তিদের মনোভাবের মধ্যে একটি তুলনা।
       
      পশ্চিমারা রাশিয়ার ইউক্রেইন্ আগ্রাসন  নিয়ে : ইউক্রেইন্ এর ব্যাপারে রাশিয়ানরা আগ্রাসনকারী ওরা ইউক্রেইন্ এর বিদ্যুৎ জ্বল বন্ধ করেছে বুচাতে অসংখ্য নিরপরাধ নারী ও শিশুকে হত্যা করেছে।
       
      পশ্চিমারা গাজার ইসরায়েলি হামলাতে ব্যাপারে : ইসরায়েল এর অধিকার আছে যা খুশি করবার। প্যালেস্টিনিয়ানরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেনা কেন? আমরা ইসরাইলের পাশে আছি ছিলাম থাকবো।
       
      এখন পশ্চিমা মিডিয়াতে ইসরায়েল নিয়ে বেফাঁস কিছু বললেই চাকরি যাবার সম্ভাবনা !!!


    • guru | ২৫ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৫৩
    • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৮ 
       
      আমি ব্যক্তিগত ভাবে গত প্রায় ২৩ বছর ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছি এই পশ্চিম এশিয়ার সমস্যা নিয়ে পড়াশোনা করার ও পুরো ব্যাপারটি নিয়ে বিস্তারিত জানবার। তবে সত্যি কথা বলতেকি এবারের মতো এতো আলোড়ন এদেশে এই পশ্চিম এশিয়ার সমস্যা নিয়ে আমি আগে দেখিনি কখনোই।টুইটার দেখলে মনে হবে যে এদেশে এখন বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলছে তাকেও ছাড়িয়ে গেছে ইসরায়েল প্যালেস্টাইন সমস্যা। আমার নিজের একজন সহকর্মী আমাকে সেদিন বললেন "কাটার বাচ্চা আর কতদিন থাকবি এদেশে " যখন আমি তাকে বলেছিলাম যে দেখুন ইস্রায়েল আর মোসাদ না থাকলে হামাসের নামই কেউ জানতোনা। হামাসকে মোসাদ সৃষ্টি করেছিল আরাফাতকে সাইজ করতে। এই প্রথম দেখছি এতো সুদূর বিদেশের একটি এতো জটিল বহুমাত্রিক সমস্যা এইভাবে এদেশেও মেরুকরণ তৈরী করছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • guru | 103.2.***.*** | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:০৩741135
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ২৫

    ইসরায়েল কড়চা : জিওনবাদ ২

    মেসায়ার গাধা

    এর আগের মিনি করচাতে আমরা দেখেছি জায়নবাদের গোড়ার দিকের নেতারা প্রায় সবাই সেক্যুলার ইউরোপীয় সংস্কৃতিতে বড়ো হয়েছিলেন এবং তৎকালীন ইউরোপীয় ওরিয়েন্টালিজম ধারণার বশবর্তী ছিলেন যারা মোটামুটি আরবদের অশিক্ষিত গ্রাম্য গরীব যারা রাজনৈতিক বা আর্থিক কোনো ব্যাপারেই ইহুদীদের সঙ্গে একাসনে বসারই যোগ্য নয় , যারা বড়োজোর ইউরোপীয় ইহুদীদের কৃপা পেতে পারে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে এবং এদের সঙ্গে কোনোভাবেই কোনো সিরিয়াস আলোচনা হতে পারেনা প্যালেস্টাইনের রাজনৈতিক ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে তো নয়ই !!!

    প্যালেস্টাইনের আরবদের সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিক আলোচনার বদলে এইসব প্রথমদিকের জায়নবাদী নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তৎকালীন সুপারপাওয়ারদের সংগে একটা ডিল করে নিজেদের আখের গোছাতে। প্রথমে অটোমান সুলতান তারপরে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের সময়ে বালফুর ঘোষণা এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আম্রিকি সাম্রাজ্যের এজেন্ডার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে চলা এগুলো এই নীতিরই প্রকাশ। এখনো ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় নীতি এটাই যেটিকে "বাইডেন পিস প্ল্যান" বা "আব্রাহাম একোর্ড" বলা যেতে পারে যার মাধ্যমে ইসরায়েল সৌদী আরবের মতো একটি দেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করবে অন্যান্য আরব দেশগুলো এটি মেনে নেবে , সব কিছুই হবে আম্রিকার ছত্রছায়াতে এবং প্যালেস্টিনিয়ানরা থাকবে ব্রাত্য হয়ে। প্রসঙ্গতঃ মিশর ও জর্ডনের সঙ্গে ইসরায়েলের আম্রিকি ছত্রছায়াতে শান্তিচুক্তির পরে ইসরায়েলী নেতারা মিশরকে গাজা ও জর্ডনকে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক অধিকার করতে বলেছিলেন যাতে প্যালেস্টিনিয়ানদের নিয়ে কোনো সমস্যাই না থাকে।

    আমি নিজে এই ইসরায়েলের প্যালেস্টাইনের আদি বাসিন্দা আরবদের বাদ দিয়ে এলাকার বড়দাদের সঙ্গে একটি ডিল করার ব্যাপারটিকে "মেসায়ার গাধা" নীতি বলি। এটি একটি বহু প্রাচীন ইহুদি প্রবাদ যার রাজনৈতিক অর্থ হচ্ছে নিজের স্বার্থে কোনো কাউকে ব্যবহার করা যেখানে একটি খুব কঠিন কাজ যেটি নিজের দ্বারা হবার নয় সেটি এমন কাউকে দিয়ে করানো যাকে খুব সহজেই ম্যানিপুলেট করে যেকোনো কাজ করিয়ে নেওয়া যায় । ইহুদী ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মেসায়া বা মসীহা একজন ঈশ্বর প্রেরিত পুরুষ যিনি ইহুদীদের খুব খারাপ সময়ে গাধায় চড়ে আবির্ভূত হবেন এবং ইহুদীদের স্বর্ণযুগ ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু মেসায়াকে আবির্ভূত হতে গেলে গাধায় চড়েই তাকে আসতে হবে। অর্থাৎ জায়নবাদীদের কাছে সুপারপাওয়ারদের প্রয়োজন ওই মেসায়ার গাধার মতো যাদের উপরে চড়ে জায়নবাদীরা নিজেদের স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করবে।

    তো গুরুচণ্ডালীর পাঠকেরা আপনারা যারা টিভিতে বা অন্তর্জালে যখন দেখছেন যে ইসরায়েল বর্তমানে গাজাতে হাসপাতাল চার্চ বেকারী গোরস্থান সব জায়গাতে বোমা ফেলে যাচ্ছে আর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষ আম্রিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেটাকে পুরোপুরি সমর্থন করছেন আর এসব দেখে ভাবছেন যে এসব কেন হচ্ছে তাদের বলি আম্রিকার জায়নবাদ প্রভাবিত দুই পার্টির রাজনীতিতে আম্রিকার সব নেতাই আসলে "মেসায়ার গাধা" যদি তারা ধরে রাখতে চান গদি। এখন ঘটনা হচ্ছে ভারতের অনেক দেশপ্রেমিকের অন্তর্জালে গত তিন সপ্তাহের গাজা নিয়ে টুইটগুলো দেখলে মনে হয় তাদের মধ্যে এখন কম্পিটিশন চলছে কে হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো মেসায়ার গাধা !!! বিশ্বকাপের ক্রিকেটে এতো কম্পিটিশন হলে মনে হয় এতো একপেশে একটা বিশ্বকাপ দেখতে হতোনা !!!

    এবার আবার ফিরে আসছি ইসরায়েলের ঘরোয়া রাজনীতিতে। এখানেও "মেসায়ার গাধা" ফ্যাক্টর কাজ করে তবে সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গে। আগেও বলেছি যে ইসরায়েলের রাজনীতিতে ইসরায়েল সৃষ্টি করার থেকে শুরু করে ১৯৮০র দশক পর্যন্ত সেক্যুলার সোশ্যালিস্ট মনোভাবাপন্ন লেবার পার্টির প্রাধান্য ছিল। ইসরায়েলের বর্তমান রাজনীতিতে কিন্তু এই লেবার পার্টি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। একটা কথা চালু আছে ইসরায়েলী রাজনীতিতে যে সেক্যুলাররা ইসরায়েলে সৃষ্টির পর থেকে প্রথম তিরিশ বছরের খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়টা কাজ করেছেন "মেসায়ার গাধা" হিসেবে এখন তাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এখন মেসায়া স্বয়ং অর্থাৎ ইসরায়েলের গোঁড়া মুসলিম বিদ্ধেষী রাজনীতিবাজদের সময়।
  • guru | 103.2.***.*** | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১৪741136
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ২৬

    ইসরায়েল কড়চা : জিওনবাদ ৩

    লৌহ প্রাচীর

    আমি এর আগের মিনি করচাগুলোতে দেখাবার চেষ্টা করেছি কিভাবে জায়নবাদএর প্রথম দিকের নায়কেরা প্রায় সবাই প্যালেস্টাইনের আরবদের খুব নিচু চোখে ও বেশ একটা করুণার পাত্র বলেই মনে করতেন। কিন্তু সব জায়নবাদী এরকম ছিলেননা। এই বাতিক্রমীদের মধ্যে প্রধান ছিলেন জিভ জাবোটিনস্কি। এই পোলিশ জায়নবাদী নেতাটির মূল বক্তব্য ছিল যে প্যালেস্টাইনের আরবেরা ইহুদীদের থেকে নিকৃষ্টতর হলেও তাদের মধ্যে নিজস্ব রাজনৈতিক চেতনা আছে এবং খুব সহজে শুধু মাত্র মেসায়ার গাধার(পড়ুন সুপার পাওয়ার) দেওয়া কিছু আর্থিক ললিপপের লোভে তারা রাজী হবেনা তাদের নিজস্ব জমি ছাড়তে তাই তাদের উৎখাত করতে সেজন্য দরকার "লৌহ প্রাচীরের"। এখন এই লৌহ প্রাচীর হচ্ছে চরমতম আঘাত করা সামরিক ও অসামরিক সব দিক থেকে প্যালেস্টাইনের আরবদের উপরে যাতে তারা ইসরায়েলের কাছে আত্মসমর্পনে বাধ্য হয়।

    এই জাবোটিনস্কির বর্তমান আদর্শিক উত্তরাধিকারী হলেন "বিবি" নেতানিয়াহু এবং নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি মূলতঃ জাবোটিনস্কির আদর্শেই অনুপ্রাণিত। বর্তমানে ইসরায়েল যে ২০০৭ থেকেই গাজার উপরে নিষ্ঠুর এক আর্থিক ব্লকেড চাপিয়ে রেখেছে এবং গত তিন সপ্তাহের গাজার যত শিশুদের মেরেছে তাকে বুঝতে গেলে এই "লৌহ প্রাচীরের" জাবোটিনস্কি নীতিকে বুঝতে হবে।

    গুরুচন্ডালীর পাঠকদের অনুরোধ করবো যারা আমার এই মিনি কড়চার লেখাগুলো পড়েছেন তারা এই "লৌহ প্রাচীরের" জাবোটিনস্কি নীতিকে আরো ভালো করে বুঝতে avi shlaim নামক বিখ্যাত ব্রিটিশ ইহুদী ঐতিহাসিকের "Iron Wall" গ্রন্থটি পড়ুন। আমি নিজেও অনেক কিছুই জেনেছি ওই বইটি থেকে।

    প্রসঙ্গতঃ বলি ইসরায়েলের রাজনীতিটার মধ্যে এই সেক্যুলার মডারেট বনাম জাবোটিনস্কি বিতর্কটি দেখে আমার একসময়ের নাৎসিদের অভ্যন্তরীণ ইহুদী বিতর্ক মনে পড়ে গেলো। মডারেট নাৎসিরা মনে করতেন যে ইহুদীরা অবমানব কিন্তু তাদের উৎখাত না করে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখাই ভালো কিন্তু হার্ডলাইনাররা বলতেন না ইহুদীরা অবমানব হলেও বড়ো বিপজ্জনক ওদের সমূলে উৎপাটিত করতেই হবে। বলাই বাহুল্য যে এই বিতর্কে শেষমেশ হার্ডলাইনাররাই জিতলেন ও ইহুদীদের জন্য গ্যাস চেম্বার তৈরী হলো। এই জায়নবাদী আর নাৎসী ইন্টারনাল ডিবেটের কি অসাধারণ মিল !!!

    ঘটনা হচ্ছে ইসরায়েলে লৌহ প্রাচীর শুধুমাত্র যে প্যালেস্টিনিয়ানদের জন্য বরাদ্দ তা নয় বরঞ্চ আরবদের সঙ্গে আপসকামী প্রায় সব ইহুদীদের জন্যই এটাই বরাদ্দ। আজ ৪ঠা নভেম্বর ২৮ তম বর্ষপূর্তি ইৎজযাক রাবিনের খুনের ঘটনার যেটি খুব সম্ভব ইসরায়েলের ইহুদী আপোষকামীদের কফিনে শেষ রাজনৈতিক পেরেক। বর্তমান ইসরায়েলেও গাজার ঘটনার পরে গত কয়েকসপ্তাহে প্যালেস্টিনিয়ানদের সঙ্গে আপসকামী যারা তাদের খুবই খারাপ সময় চলছে। প্যালেস্টাইনের সমর্থনে রাস্তায় নামলেই পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে এমন ঘটনাও শোনা যাচ্ছে মাঝে মাঝে ।
  • guru | 2401:4900:3140:7a7:b800:3813:3a5d:***:*** | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:০৮741137
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ২৭

    ইসরায়েল কড়চা : জায়নবাদ ৪

    ৪ ঠা নভেম্বর

    গত মিনি কড়চাটিতে অমি দেখিয়েছি কিভাবে ইসরায়েলের মাটিতে শান্তিকামীদের মুভমেন্ট ধাক্কা খায় প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী য়িতঝাক রাবিনের মৃত্যুতে। আজকের দিনেই আজ থেকে ২৮ বছর আগে একটি জনসভাতে একজন ইহুদী কট্টরপন্থী টেরোরিস্টের গুলিতে প্রাণ যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাবিনের যিনি কিনা এর কয়েক বছর আগেই আরাফাতের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে সই করে সেবছরের শান্তির নোবেল পুরস্কার পান। সেসময়ে যারা রাবিনের বিরোধিতা করে প্রকাশ্য জনসভাতে তাকে গদ্দার এর তকমা দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ইতামার বেন গাভীর আজকে ইসরায়েলে মন্ত্রী আর "বিবি" নেতানিয়াহু আজকে প্রধানমন্ত্রী।

    সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ !!!!
  • ar | 71.174.***.*** | ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৪৯741140
  • "আ খোঁ | 27.58.61.99 | ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ০১:৩৪"
    "এরমধ্যে সাত লক্ষেরও বেশি ফিলিস্তিনি শত শত বছরের বাসভূমি থেকে উৎখাত হয় বলপ্রয়োগে। এই ঘটনাই তো নাকবা।"

    নাকবা তো শুধু বলপ্রয়োগে উৎখাত নয়, বলপ্রয়োগে সংগঠিত নিধনও বটে।
    আমরা রবেরটো বেনিনির "লা ভিটা এ বেললা" দেখেছি, তার সাথে দারিণ জে সালামের "ফারহা" দেখে নিলে ভালো হয়।

    অ-পশ্চিমী সূত্রঃ

    https://www.pcbs.gov.ps/Portals/_pcbs/PressRelease/nakba%2060.pdf
  • guru | 103.17.***.*** | ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৪৫741142
  • @আ খোঁ এবং ar

    আজকে একবার গুরুচন্ডালীতে হিরেনবাবুর লেখাটি "পবিত্র ভূমি" পড়ে নিন। গাজাতে এখন যেটি হচ্ছে বা পরে যা হবে তার একটা ব্যাখ্যা খুঁজে পাবেন।
  • guru | 103.17.***.*** | ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৫৩741144
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ২৮ 

    গাজার উপরে পরমাণু বোমা ?

    ইসরায়েলের হেরিটেজ মন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েল গাজার উপরে পরমাণু বোমা ব্যবহার করবে। গত একমাসে যা যা হয়ে চলেছে গাজাতে এটাই হয়তো বাকি ছিল। এবারো হয়তো জো বাইডেন বলবেন যে ইসরায়েলের অধিকার আছে পরমাণু বোমা ফেলবার গাজার নিরস্ত্র নারী আর শিশুদের উপরে। 
  • guru | 103.17.***.*** | ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৫৫741146
  • @আ খোঁ এবং ar

    হলোকাস্টকে বিন্দুমাত্র লঘু না করেই বলছি হলিউডের তাবড় তাবড় সিনেমা তৈরী হয়েছে এই হলোকাস্টকে নিয়ে কিন্তু নাকবাকে নিয়ে কটি সিনেমা হয়েছে ??? গাজার এতো মৃত্যুর পরে মানুষ কি অন্ততঃ নাকবাকে নিয়ে একটু অন্যরকম ভাববে ?
  • আ খোঁ | 2402:3a80:1cd1:8a7e:278:5634:1232:***:*** | ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:০৭741147
  • @গুরু
    ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ইম্প্রেরিয়ালিস্ট ক্যাপিটালিজমে সেটা কি করে আশা করেন? যাই হোক ar ফারহার কথা বললেন। নামিবিয়ার জার্মান জেনোসাইড নিয়েও সম্প্রতি সিনেমা হয়েছে। কিছু আশার আলো।
     
    @ar
    ফারহা দেখার ইচ্ছে থাকলেও পারিনি। আমার নেটফ্লিক্স নেই। :(
  • মনমাঝি | ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:১০741148
  • রিঃ ইসরায়েল কড়চা : জিওনবাদ
     
    জিওনবাদ সম্পর্কে বেশি কিছু জানতাম না,কিন্তু সম্প্রতি ইউটিউবে এক ইহুদী র‍্যাবাইর একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জিওনবাদ সম্পর্কে মূলত তার ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেয়ে বেশ চমকিত হলাম। এই দারুন (অন্তত আমার কাছে) ইন্টারেস্টিং সাক্ষাৎকারটা এখানে পাবেনঃ 
  • guru | 103.2.***.*** | ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:২৩741149
  • @মনমাঝি 

    অনেক অনেক ধন্যবাদ।
  • guru | 103.2.***.*** | ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১০:১৩741150
  • @সকলে

    অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে যারা সবাই এই টইটাতে কন্ট্রিবিউট করছেন। অনেক কিছু শিখছি আপনাদের কাছ থেকে। আমি এখানে আ খোঁ, ar, মনমাঝি, তর্ক, গঙ্গারাম, LCM লসাগুদা সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

    হিরেনবাবুও প্যালেস্টাইন নিয়ে খুব ভালো অনেক কিছু লিখছেন। ওনার থেকেও শিখছি অনেক কিছুই।

    ইসরায়েলের রাজনীতি নিয়ে আরো কিছু মিনি কড়চা আর আরব রাজনীতি টেররিসম এইসব নিয়েও আরো লিখবো এই টইটাতে। ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন প্লিজ।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:57ff:3efc:f63e:***:*** | ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৩৭741151
  • "এবারো হয়তো জো বাইডেন বলবেন যে ইসরায়েলের অধিকার আছে পরমাণু বোমা ফেলবার গাজার নিরস্ত্র নারী আর শিশুদের উপরে।"
     
    না বলার তো কোন কারণ নেই। আজ অবধি আমেরিকাই একমাত্র দেশ যারা সিভিলিয়ানদের ওপর পরমাণু বোমা ফেলেছে, একাধিকবার। সেটা নিয়ে এমনকি লাজুক মুখও করেনি। অতএব।
  • guru | 103.2.***.*** | ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৪৬741152
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ২৯ 
     
    ইসরায়েল কড়চা : জায়নবাদ ৫ 
     
    Prejucrimination democracy ১ : নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ 
     
    আমি ইসরায়েলী গণতন্ত্রের জন্য Prejucrimination democracy (prejudice + discrimination = prejucrimination)  শব্দদুটি ব্যবহার করেছি। অনেক সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইসরায়েলী গণতন্ত্রকে এথনিক ডেমোক্র্যাসি বা অপারথেইড ডেমোক্র্যাসি বলে বর্ণনা করেছেন। এইভাবে ইসরায়েলকে ব্যাখ্যা করবার কারণ হচ্ছে যে এধরণের গণতন্ত্রে একটি খুব শক্তিশালী এথনিক মেজরিটি থাকে (ইসরায়েলের ক্ষেত্রে যেটি হচ্ছে ইহুদী মেজরিটি) এবং এটিকেই কোর মেজরিটি বলা হয়। কোর মেজরিটি নন কোর ডেমোগ্রাফিক (আরব সংখ্যালঘু) দের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধা দেয়না কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো আরব নেতা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হননি। অর্থাৎ ইসরায়েলে ডেমোগ্রাফিক কোর, সংখ্যালঘুর অধিকারসমূহকে ভীষণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। 
     
    ইসরায়েল নিয়ে একটি আশ্চর্য্য তথ্য হচ্ছে যে ইসরায়েলের জনসংখ্যার প্রায় ১৮ থেকে ২০ শতাংশ হচ্ছে আরব।  কিন্তু ২০০১ সালের আগে ইসরায়েলী ক্যাবিনেটে কোনো আরব মন্রী ছিলোনা। ২০০১ সালের পর থেকে কিছু আরব দপ্তরহীন মন্ত্রী হয়েছেন বটে কিন্তু অনেকের ​​​​​​​মতেই এটি একটি eyewash মাত্র পশ্চিমী বিশ্বের জন্য। 
     
    এইবার কিছু তথ্য দেখা যাক ইসরায়েলের গত কয়েকটি ​​​​​​​নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে।
     
    এপ্রিল ​​​​​​​২০১৯ ইসরায়েলী ইলেকশন। নেসেটের (ইসরায়েলী পার্লামেন্টের হিব্রু নাম) মোট সংখ্যা ১২০।
     
    এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন : লিকুদ পার্টি ৩৫ ও নীলসাদা পার্টি ৩৫ 
    মোট জয়ী আরব আসন : ১০ 
     
    যেহেতু দুটি দলই সমান সমান আসন পেয়েছে এবং কেউই কোনো শরিককে নিয়েও ম্যাজিক সংখ্যা ৬১ পেরুতে পারেনি তাই আবার স্ন্যাপ নির্বাচন ২০১৯ সেপ্টেম্বরে। কোনো দলই আরবদের নিয়ে সংযুক্ত সরকার বানাতে চায়নি তাহলে তো আরবদের ক্যাবিনেটে অনেক আসন দিতে হতো যে !!!
     
    সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইসরায়েলী ইলেকশন। নেসেটের মোট সংখ্যা ১২০।
    নীলসাদা পার্টি               ৩৩ 
    লিকুদ পার্টি                   ৩২ 
    মোট জয়ী আরব আসন : ১৩  
     
    এবারো প্রবল ভাবে দরকষাকষির পরেও যখন প্রধান দুটি দলের কেউই রাজি হয়নি আরবদের নিয়ে সরকার বানাতে যদিও আরবরা তুলনামূলকভাবে কিছুটা মডারেট নীলসাদা পার্টিকে সমর্থন করতে রাজী ছিলেন আরবদের আরো সুযোগসুবিধার বিনিময়ে, তখন আবার স্ন্যাপ ইলেকশনের সিদ্ধান্ত হয়।
     
    ২০২০ ইসরায়েলী ইলেকশন। নেসেটের মোট সংখ্যা ১২০ |
    লিকুদ পার্টি                   ৩৬ 
    নীলসাদা পার্টি               ৩৩
    মোট জয়ী আরব আসন : ১৫ 
     
    এবারে আরবদের আর কোনো সুযোগ না দিয়ে লিকুদ পার্টি  ও নীলসাদা পার্টি কোবিদের অজুহাত দেখিয়ে একটি ন্যাশনাল ইউনিটি সরকার গঠন করে। মূলতঃ আরবদের ক্ষমতার বাইরে রাখবার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু এবারেও কোনো দীর্ঘমেয়াদী সরকার কায়েম করা যায়নি মূলতঃ লিকুদ নেতা "বিবি" নেতানিয়াহু আর  নীলসাদা পার্টির নেতা বেনি গান্টজ এর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের জন্য। ফল বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার নির্বাচন।
     
    ২০২১  ইসরায়েলী ইলেকশন। নেসেটের মোট সংখ্যা ১২০।
    লিকুদ পার্টি                   ৩০ 
    ইশ অতিদ পার্টি              ১৭ 
    নীলসাদা পার্টি                 ৮ 
    মোট জয়ী আরব আসন :  ১০ 
     
    এবার নেতানিয়াহু সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড় না করতে পাড়াতে ইশ অতিদ পার্টির নেতা লাপিদ আর  নীলসাদা পার্টির নেতা বেনি গান্টজ  নিয়ে একটা যুক্তফ্রন্ট সরকার বানান। কিন্তু এই সরকারটিরও নেতাদের নিজেরদের মধ্যে কূটকচালিতে একবছরের মধ্যেই পতন হয়।
     
    ২০২২  ইসরায়েলী ইলেকশন। নেসেটের মোট সংখ্যা ১২০।

    লিকুদ পার্টি                   ৩২ 
    ইশ অতিদ পার্টি              ২৪  

    মোট জয়ী আরব আসন :  ১০ 
     
    এবারে আবার নেতানিয়াহু ক্ষমতায় এসে গেলেন অতি দক্ষিনপন্থীদের নিয়ে এবং আরবদের বাইরে রেখে। কিন্তু গত একবছরে ভয়াবহ আন্দোলন ইসরায়েলে দেখা যাচ্ছে নেতানেয়াহ তার ইসলামোফোবিক শরিকদের চাপে সুপ্রিম কোর্টের ডানা ছাঁটে চাইলে। গাজার বর্তমান যুদ্ধনীতি তাই নেতানিয়াহুর জন্য একটি আশীর্বাদস্বরূপ। তবে দেখা যাক তিনি কতদিন গদি ধরে রাখতে পারেন।
     
    ইসরায়েলের গত ৪ বছরে ৫ টি নির্বাচন এটাই দেখায় যে যেনতেন প্রকারেন সবকয়টি জায়নবাদী দলই চায় আরবদের বাইরে রেখে সরকার গড়তে কিন্তু নিজেদের মধ্যেও তাদের কূটকচালি এতো বেশি যে কোনো সরকার খুববেশীদিন টেকেনা ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতাও খতম হতে চায়না। আরবদের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করলেই হয়তো এই সমস্যা থাকেনা কিন্তু  ইসরায়েল যেহেতু Prejucrimination democracy (prejudice + discrimination = prejucrimination) বা এথনিক ডেমোক্রেসি সেখানে আরবদের ক্ষমতার বাইরে রাখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক স্টেবিলিটির চেয়ে। একেই বোধয় বলে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা।
  • গঙ্গারাম | 115.187.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ০২:২০741158
  • @গুরু 
    আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আরব রাজনীতির টেরোরিজম নিয়ে লিখুন প্লিজ। সঙ্গে প্যান ইসলামিক মৌলবাদের ভু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আর অযৌক্তিক ইসলামোফোবিয়া নিয়েও কিছু আলোকপাত করুন। 
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2406:b400:b4:15df:2cfc:e389:29d8:***:*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৪৭741168
  • "যে জিনিষটা কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না - ফিলিস্তিনিদের নিজেদের দেশ থাকার কোন বাসনা কোনকালে ছিল - এরকম প্রমান।" এরকম বিচিত্র কমেন্ট আমি এই প্রসঙ্গে আগে কখনো দেখিনি। এবার থেকে নিজের বাড়িতে শুধু থাগলে হবে না, মরার ঢের আগের আত্মজীবনী তে লিখে রাখতে হবে, এ বাড়িতে আমি থাকতে চেয়েছিলাম। বিচিত্র ইল্লি। 
    নানাবিধ  আত্মজীবনী ছাপার অবশ্য আজকাল নানা ভালো বন্দোবস্ত হয়েছে। 
     
    গুরুচন্ডালি তে ​​​​​​​আমার ​​​​​​​যে ​​​​​​​কটি ​​​​​​​কুমীর ​​​​​​​ছানা ​​​​​​​লেখ রয়েছে, তার ​​​​​​​মধ্যে ​​​​​​​একটি ​​​​​​​হল, ​​​​​​​লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির গবেষক-্ছাত্র, ​​​​​​তুল্কেরাম ​​​​​​​এ যার  আদি ​​​​​​​বাড়ি ​​​​​​, যেখানে কদিন আগে গ্রাউন্ড অ্যাটাকে ১২ জন মরলেন, ​​​​​​​সোভি ​​​​​​​সামুর ​​​​​​​এর ​​​​​​​একটা ​​​​​​​লেখা ​​​​​​​২০০৮ ​​​​​​​অনুবাদ ​​​​​​​করে ​​​​​​​ছাপা। 
     
    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=18491
     
    লসাগু, আজকাল নাম লেখার জায়গাটা কোথায় সরিয়ে দিয়েছো রে বাবা। 

    Further Reading
    Novels, Poetry etc.
    - Ghassan Kanfani -Men in the Sun and other Palestinian Stories (transl. by Hilary Kilpatrick)
    - Mahmoud Darwish et al.-Victims of a Map: A Bilingual Anthology of Arab Poetry
    - Emile Habibi - The Secret Life of Saeed: The Pessomist
    - Fawaz Turki - The Disinherited: Journal of a Palestinian Exile
    - Sahar Khalifeh- The Inheritance (transl. by Aida Adib Bamia)
    - Mahmoud Darwish- Memory for Forgetfulness: August, Beirut, 1982 (Paperback)
    - Mahmoud Darwish - Unfortunately, It Was Paradise: Selected Poems (Paperback)
    Added by Bodhi
    Writings of Elias khoury
    Online Sources, News etc:
    - Middle East Research and Information Project (MERIP): Primer on the Uprising in Palestine
    See also : Palestine, Israel and the Arab-Israeli Conflict - A Primer
    - Regular updates, background information:
    - Supports Israelis who refuse to join the army, website:
    - The Palestinian Right to Return Coalition:
    - Updates, news, background information:
    - The Grassroots Palestinian Anti-Apartheid Wall Campaign:
    - Palestinian Center for Human Rights:
    - The Electronic intifada : background info, commentary etc:
    - News, Commentary etc:
    - Daily news on
    History:
    - Sami Hadawi - Bitter Harvest: A Modern History of Palestine, NY: Olive Branch Press, revised and updated ed. 1990.
    - Walid Khalidi (ed.), All that Remains - The Palestinian Villages Occupied and Depopulated by Israel in 1948, Washington, D.C.: Institute for Palestine Studies 1992, 636 pp
    - Ilan Pappe A History of Modern Palestine - One Land, Two Peoples (Paperback)
    Films:
    - Elia Suleiman -Chronicle of a disappearance
    - Hany Abu-Assad - Paradise now
    - James Longley - Gaza Strip
    - John Pilger - Palestine is still the issue
    - Mohamed Bakri - Jenin, Jenin
    Miscelleneous.
    - Rafi Segal (Editor), David Tartakover (Editor), Eyal Weizman (Designer) -
    A Civilian Occupation: The Politics of Israeli Architecture (Hardcover)
    - Arthur Neslen Occupied Minds- A Journey Through the Israeli Psyche (Paperback)
    - Alternative Tourism Group- Tour Guide: Palestine & Palestinians
    - Haim Gordon, Rivca Gordon, Taher Shriteh - Beyond Intifada: Narratives of Freedom
    Fighters in the Gaza Strip (Hardcover)
    - Joe Sacco - Palestine (Palestine explained in comic version)
    - Julie Marie Peteet - Landscape Of Hope And Despair: Palestinian Refugee Camps (The
    Ethnography of Political Violence) (Hardcover)
    Since Oslo:
    - Roane Carey (ed) - The New Intifada: Resisting Israel's Apartheid
    - Tanya Reinhart - The Road Map to Nowhere: Israel/Palestine Since 2003 (Paperback)
    - Edward W. Said -Peace And Its Discontents: Essays on Palestine in the Middle East Peace
    Process
    - Ray Dolphin - The West Bank Wall - Unmaking Palestine
    - Joseph Massad - The Persistence of the Palestinian Question –
    - Edward Said - After the last sky: Palestinian lives
    আমার সংযোজন
    - অপ্ক্সফোর্ড এর লেবানীজ আরব অধ্যাপক আলবার্ট হুরানি র হিস্টরি অফ আরব পিপল টা আর কিসু পড়ার আগে পড়ে নেবা ভালো। এটা বোধ হয়, আমি, অরিজিত আর ব্ল্যাংকি এক সংগে কাছা কাছি সময়ে পড়েছিলাম। তখন আমাদের মনে হয়েছিল, সইকতের কলে এসে যা কিছু পড়ি টড়ি লিখে রাখি, বাংলা লেখালিখি সমাজের কাজে লাগবে। তো সে বিষয়ে অবশ্য সলিড প তে ল খাওয়া গেছে :-))))) বাংলা পত্র পত্রিকার ভারি বয়ে গেছে, আমাদের রেফারেন্সিং পড়তে, তাদের ভারি বয়ে গেছে। 
     
    মধ্য প্রাচ্যের অসংখ্য প্রোপাগান্ডা মেটেরিয়ালের মধ্যে নইলে তাল রাখা মুশকিল। অফ অল পিপল ডিডি দা মাইরি একবার খচরামো করেই বোধ হয়, লিওন ইউরিস কে ঐতিহাসিক বলে চাঅলিয়ে দিছিল। :-)))))
     
    - লেবানন ​​​​​​​ও ​​​​​​​সিরিয়ার ​​​​​​​নানা ​​​​​​​ঘটনা ​​​​​​​নিয়ে, রবার্ট ​​​​​​​ফিস্ক নেশন ​​​​​​​অ্যাট ​​​​​​​ওয়ার ​​​​​​​ইত্যাদি ​​​​​​​পড়া ​​​​​​​যেতে ​​​​​​​পারে। ফিলিপ ​​​​​​​গ্লাস er কিছু ​​​​​​​লেখা ​​​​​​​আছে সম্ভবতঃ 
     
    আর কুয়েত ইরাক সিরিয়া ইত্যাদি নিয়ে পড়তে গেলে, আলেকসান্ডার কোবার্ন পড়া যেতে পারে।  ইরাক যুদ্ধের সময়কার ইংল্যান্ডের প্রোটেস্ট নিয়ে, গার্ডিয়ানের করা সংকলন, দ্য ওয়ার উই  কুড নট স্টপ পড়া যেতে পারে। 
     
    -- এছাড়া শিমোন জাভার বলে এক পাগল পেসিফিস্ট ও শখের মাইকোলোজিস্ট এর , হাউ টু লুজ আ ওয়ার ইত্যাদি পড়া যেতে পারে।
  • তর্ক  | 136.226.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৫741171
  • বোধির লিষ্ট আলাদা করে রাখলাম। সোভি সামুর লেখাটার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ। 
     
    আসলে গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই মূহুর্তে আমার আগ্রহ একটু কম। বুঝতে চাইছি, দুপক্ষেরই এই যে "নিজের জমি" নিয়ে হাই মরাল গ্রাউন্ড - তার রুট কোথায়! আদি কানানাইটরাই যদি ফিলিস্তিনিদের পূর্বপুরুষ হয়, তবে ইরাক থেকে তুরস্ক ঘুরে আসা একদল লোক, যাদের ইস্রায়েলাইট বলা হবে, তাদের থেকে প্যালেস্টাইনিয়ানদের মরাল গ্রাউন্ড গলার জোর একটু বেশিই হওয়া উচিত।  হয়ত লিস্টের কিছু বইতে এবিষয়ে বিস্তারিত পাওয়া যাবে। 
     
    তাতে যে একটা লোক কম মরবে - তা হয়ত নয়। তবে ঐ আর কি - যার যেমন ক্ষ্যাপামো! 
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 2401:4900:33a7:133c:8577:9e23:aaca:***:*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১০:২৫741172
  • অদ্রীশ বিশ্বাস বলে একজনের একটা লেখাও ছিল সাধারণ ভাবে বর্ডার ইত্যাদি নিয়ে। 
     
    আসলে নর্থ গাজায়, গুঁড়িয়ে না যাওয়া অব্দি বম্বিং থামবে না তাই আপনার ওসব ইতিহাসে আগ্রহ হইসে।
     
    শোনেন ইজরায়েল স্টেট স্থাপনের তোড়জোড় আরম্ভ আগে, এমনকি ১৯১৭-র বালফুর ডিক্লেয়ারেশনের আগেও ইরাক মিশর সিরিয়া এখনকার লেবানন সর্বত্র প্রচুর আরব ক্রী্শ্চান ও ইহুদী লোকজন ছিল, এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও ছিল, আরব ন্যাশনালিজমের নানা ধারা ছিল, আর ট্রাইব আর ভাষা আইডেেনটিটির গল্প ছিল, যেটা কখনো বাথ পার্টিগুলোর সেকুলার ন্যাশনালিস্ট গল্পের সাথে যেত, কখনো যেত না। ইরাক, তুরস্ক কেউই যেমন কার্ডিশ-দের জমি ছাড়তে রাজি হয়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরের ইম্পেরিয়াল রিট্রিটের সময় যেখানে যা পারা গেছে করেছে। 
    ইয়েসার আরাফাত ইস্ট জেরুসালেমে, ক্রীসমাসের বক্তৃতা দিতেন যতদূর মনে পড়ছে। হোলি ল্যান্ডে ফেরার গল্পটা আমেরিকা ইউরোপকে ইহুদী মুক্ত রাখার গল্প।
  • guru | 115.187.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৩৮741187
  • @বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত

    অনেক ধন্যবাদ। এই টইটা খোলবার পরে কত ইন্টারেষ্টিং জিনিস পাওয়া যাচ্ছে।
  • guru | 115.187.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৭741188
  • @বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত ও তর্ক

    আমার তো মনে হয় প্যালেস্টাইনের নামটা ইতিহাসে তোলবার জন্য কিন্তু ওই অঞ্চলের খ্রিস্টান আরব একাডেমিক স্কলারদের অবদান কম নয়। সোভি সামুর, এডওয়ার্ড সাঈদ, ঘাসান কানাফানি, মাহমুদ দারবিশ, সামি হাদাবী, জোসেফ মাসাদ এরা প্রত্যেকে নিজের কলমে এমন একটা সময়ে প্যালেস্টাইনের মানুষের মূলচ্ছেদের দুঃখের কথা বলেছেন যখন সারা পৃথিবী সেভাবে জানতোই না প্যালেস্টাইনের ব্যাপারে। এদের প্রত্যেকেরই ইউরোপ আম্রিকার তাবড় তাবড় নামকরা ইউনিভার্সিটিগুলোতে আরাম আয়েশে পার্মানেন্ট প্রফেসর-এর কাজ নিয়ে মজাতে থাকার কথা, কিন্তু তা না করে এরা নিজেদের ফেলে আসা জমিটার আর মানুষগুলোর জন্য লিখতে লাগলেন। আজকে যখন ইউরোপ আমেরিকার এতগুলো নামকরা ইউনিভার্সিটিগুলোতে নতুন প্রজন্ম (ধর্ম জাতি নির্বিশেষে) গাজার মানুষের জন্য মিছিল করছেন, বলতেই হবে এটাই ওই সব স্কলারদের সাফল্য। এদের ইনস্পিরেশন আর মোটিভেশন কি ছিল জানতে খুবই ইচ্ছে করে আমার। আপনারা কি বলেন ??
  • guru | 115.187.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:১৬741189
  • @বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত 
     
    স্টিফেন ওয়াল্ট আর জন মার্শেমেইর এর "ইসরায়েল লবি" আমি কিছু কিছু পড়েছি। বিটেক করবার সময়ে যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তাম তখন "ফরেন পলিসি" ম্যাগাজিনে স্টিফেন ওয়াল্ট আর জন মার্শেমেইর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে লেখাগুলো রেগুলারলি গিলতাম। একটা ফেলে আসা বেলার স্মৃতি জাগাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। |
     
    তবে সোভি সামুর, এডওয়ার্ড সাঈদ, ঘাসান কানাফানি, মাহমুদ দারবিশ এদের ইসরায়েলের যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে বা পশ্চিম এশিয়াতে আম্রিকি নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনা আর স্টিফেন ওয়াল্ট আর জন মার্শেমেইর-এর "ইসরায়েল লবির" ইসরায়েলকে সমালোচনা ঠিক এক জায়গা থেকে নয়। খৃস্টান আরব স্কলারেরা প্রায় সবাই সোসালিস্ট বামপন্থী এরা নিজেদের ইসরায়েলের বিরোধীতা করছেন সাম্রাজ্যবাদের ইডিওলজিক্যাল বিরোধী হিসেবে। অন্যদিকেস্টিফেন ওয়াল্ট আর জন মার্শেমেইর হচ্চেন রিয়ালিস্ট, এরা মনে করছেন ইসরায়েলের মতো একটা জায়গাতে এতো বেশি বেশি করে ইনভেস্ট করতে গিয়ে আম্রিকা, ওদিকে চীন বা রাশিয়ার মতো বড়ো শক্তিকে মোকাবিলা করার জায়গাতে হেরে যাচ্ছে। কাজেই দুজনের ইসরায়েলের সমালোচনা এক জায়গা থেকে নয় কিন্তু ইন্টারেষ্টিং এটাই যে দুই দলের স্কলাররাই আম্রিকি বিদেশনীতিতে ইসরায়েলের এতখানি দাপটের ঘোরতর বিরোধী যদিও সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন কারণে।
     
    আপনাদের মতামতের অপেক্ষাতে থাকলাম।
  • বোদাগু | 2406:b400:b4:15df:8577:9e23:aaca:***:*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৪০741190
  • পলিসি রিসার্চের লোক, জার্নালিসট, তাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক এগুলো আলাদা আলাদা পেশা, তাই দৃষ্টিকোণ এবং প্রবলেম স্টেটমেন্ট ও আনালিটিকাল স্কোপ আলাদা হবে, সেটা অবভিয়াস। আর ভাগ্যের ফেরে দেশ চুরি যাওয়া অভিবাসী যুবক আরো আলাদা।
  • export | 185.207.***.*** | ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:১৪741196
  • ইজরায়েল বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হাইম ফেইগলিন কিছুদিন আগে আমেরিকার একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, সে দেশের নির্মাণশিল্পে কর্মরত ৯০ হাজারের বেশি প্যালেস্তিনীয়কে ছাঁটাই করা হবে। পরিবর্তে ভারত থেকে আনা হবে এক লক্ষ শ্রমিককে।
  • guru | 103.17.***.*** | ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১১:০৭741212
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩০

    গাজায় গ্যাসের ভান্ডার?

    গাজায় ঘটে চলা যুদ্ধের মধ্যেই একটা অন্যরকম খবর উড়ে এসেছে অন্তর্জাল থেকে। একটি ব্রিটিশ কোম্পানি এতদিন গাজার উপকূলে গ্যাসের ভান্ডার খুঁজছিলো এবং ২০২৪ সালে তাদের কন্ট্রাক্ট শেষ হলে হামাস একটি রাশিয়ান কোম্পানিকে সেই বরাত দেবে এরকম ঠিক ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই "বিবি" নেতানিয়াহু জানিয়ে দিয়েছেন যে ইসরায়েলের হাতেই এখন থেকে গাজার পুরো দখল থাকবে।

    তাহলে কি গাজার এতোদিনের যুদ্ধটা শুধু গ্যাসের ভান্ডারের বরাত নিয়ে?
  • guru | 103.17.***.*** | ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৫741219
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩১

    চুপ, যুদ্ধ চলছে এখন।

    আম্রিকা দেশটা বিখ্যাত মুক্ত গণতন্ত্রের জন্য। অবাধ বাকস্বাধীনতা এই মুক্ত গণতন্ত্রের প্রথম ও প্রধান শর্ত। গাজার বর্তমান যুদ্ধ অনেক দিক থেকেই ব্যাতিক্রমী এবার সে আরেকটি ব্যাতিক্রমী নজির বানালো আম্রিকার অবাধ বাকস্বাধীনতার অধিকারে আঘাত হেনে। এখনো পর্যন্ত টুকটাক MSNBC থেকে মুসলিমদের দূরে রাখা, ইসরায়েলের ব্যাপারে ছোটোখাটো সেলফ সেন্সর, বিভিন্ন প্যালেস্টাইনের পক্ষে বলা মানুষজনকে মিডিয়ার থেকে দূরে রাখা এসব চলছিলো। তবে এবার ঘটনা ঘটলো স্বয়ং আম্রিকি কংগ্রেসে। আম্রিকার একমাত্র প্যালেস্টিনিয়ান অরিজিন কংগ্রেসম্যান রাশিদা তলাইবকে যুদ্ধচলাকালীন বারবার যুদ্ধবিরতির ও শান্তির কথা বলার জন্যে চুপ করিয়ে দিলো আম্রিকি কংগ্রেস।

    রাশিদার অপরাধ ??? গাজাতে ইসরায়েলের যুদ্ধনীতির বিশেষ করে বাচ্চাদের মেরে ফেলার নিন্দা করা ও আম্রিকি কংগ্রেসে বক্তৃতা দেবার সময়ে "From the mountains, to the sea. Palestine will be free" এই গানটি গাওয়া।
  • guru | 103.2.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০২৩ ২১:১১741238
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩২

    জিপ, অলিভ গাছ আর একজন মা

    নিচের ছবিটা প্যালেস্টাইনের গত ৭৫ বছরের লড়াইয়ের প্রতীক। খুব বেশী কিছু কথা বলতে চাইনা। অলিভ গাছ প্যালেস্টাইনের সংস্কৃতির প্রতীক। জনশ্রুতিতে বলা হয় যে এই গাছ নাকি কয়েকশো বছরও বাঁচতে পারে। এই নিচের ছবিতে এরকমই একটা অলিভ গাছ দেখা যাচ্ছে। তাকে জড়িয়ে ধরে একজন প্যালেস্টিনিয়ান মা। কেন জানিনা ওনাকে মা বলেই মনে হচ্ছে আমার। গুরুচণ্ডালীর পাঠকেরা আমার কথা ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন যদি ভুল করে ফেলি। ছবির এই প্যালেস্টাইনের মা কোন ধর্মের মুসলিম না খ্রিস্টান শিয়া না সুন্নি অর্থোডক্স না ক্যাথলিক জানিনা। দূরে এক ইসরায়েলী সৈনিক তার মিলিটারি জিপ নিয়ে দাঁড়িয়ে। ছবিতে ধরা পড়ছেনা কিন্তু হয়তো অদূরেই কোনো বুলডোজারও আছে এই পাতা ঝরে যাওয়া শুকনো অলিভ গাছটাকে মাটিতে উপরে ফেলতে। কিন্তু ছবির প্যালেস্টাইনের মা তাও গাছটাকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন গাছটাই তার অস্তিত্ব। এটাই প্যালেস্টাইনের লড়াই। সব কিছু হারিয়ে ফেলে, সব অস্তিত্ব মুছে যাবার মুখেও নিজের শরীর ও মনের সবটুকু জোর দিয়ে আঁকড়ে ধরা নিজের মাটিকে, গাছকে, নিজের স্মৃতিকে।

  • দীমু | 182.69.***.*** | ১১ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:৪৮741243
  • guru, ছবিটা দেখার পর একটু খোঁজাখুঁজি করছিলাম। এটা মনে হয় ২০১৪ সালে ফ্র্যাঙ্ক এম রফিক বলে একজন ফিলিস্তিনের তোলা। অনেকদিন জার্মানিতে থাকেন।
  • ~ | 185.22.***.*** | ১২ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:২৯741247
  • India was one of the 145 nations voting in favor of a UN resolution against Israel’s settlement activities in “the Occupied Palestinian Territory, including East Jerusalem, and in the occupied Syrian Golan” on Saturday.

    As many as seven countries(Canada, Hungary, Israel, Marshall Islands, Federated States of Micronesia, Nauru, United States) voted against the resolution, while 18 abstained. The UN resolution was passed two days after its draft resolution was approved on Thursday.
  • guru | 146.196.***.*** | ১২ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:১১741249
  • প্যালেস্টাইন মিনি কড়চা ৩৩

    বুলডোজার ও একটা মেয়ের গল্প

    বুলডোজার বস্তুটির রাজনৈতিক ব্যবহার এখন আমাদের দেশে একেবারেই অপরিচিত নয় এবং গোবলয়ের এক বিশেষ রাজনীতিবিদ তো এই বস্তুটিকে মোটামুটি নিজের ফ্যাশন স্টেটমেন্টই বানিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে যে অন্য অনেক ভালো ভালো ব্যাপারের মতো এটিরও পেটেন্ট ইসরায়েলের। আমি এখানে এরিয়েল শ্যারনের কথা বলছি যে কঠোর ইসরায়েলী জায়নবাদী নেতাটিকে প্যালেস্টাইনের মানুষ "বুলডোজার" নাম দিয়ে ডাকতেন এবং এই নামে ডাকার কারণটিও সহজেই বোধগম্য, এই নেতাটি ইতিহাসে কুখ্যাত বুলডোজার দিয়ে অধিকৃত প্যালেস্টাইনের জমিজিরেত অলিভ গাছ ঘরবাড়ী ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য । এই মানুষটির আরো একটি অন্যতম কৃতিত্ব হচ্ছে ১৯৮২ সালে অধিকৃত বেইরুটের সাবরা ও শাতিলা নামক দুটো প্যালেস্টিনিয়ান রিফুজি ক্যাম্পে বেশ কয়েক হাজার মানুষের গণহত্যার নেতৃত্ব দেওয়া।

    তা এহেন বুলডোজারের সামনে অনেক সময়ে সাধারণ মানুষও এসে যেতেন অনেকে। যথারীতি মেনস্ট্রিম পশ্চিমী মিডিয়া (দুর্ভাগ্যজনক ভাবে যেটি এখনো অনেক বাঙালীর কাছে ওই এলাকা থেকেই কোনো খবর আসার প্রথম ধাপ ) তাদের নাম প্রকাশ করেনি যেমন এখনো গাজার হাসপাতালের ইসরায়েলের বোমাতে মৃত শিশুদের নাম প্রকাশ করছেনা। তবে একটি মানুষের নাম প্রকাশ করা হয়েছিল এই বুলডোজার নিয়ে আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের একটি ঘটনাতে। আমি অবশ্য এই মানুষটির নাম জেনেছিলাম আল জাজিরা থেকে তবে আমার নিজের প্যালেস্টাইন নিয়ে ভাবনাচিন্তা পুরোপুরি বদলে গেছিলো এই মানুষটির নাম জানার পর থেকে।

    এই মানুষটাই হলো রাচেল কোরি। এই মেয়েটা আজকে বেঁচে থাকলে আমার থেকে কয়েকটা বছরে বড়োই হতো। এর প্রথম খবর পাই ২০০৩ সালে যেখানে বলা হয় যে গাজাতে একজন শান্তিকামী (পিস এক্টিভিস্ট) আম্রিকি যুবতী ইসরায়েলের বুলডোজারের সামনে মারা গেছে। আমি তখন সবে শুরু করেছি এই পশ্চিম এশিয়ার ব্যাপারে একটু আধটু পড়াশোনা করতে। সেসময়ে পশ্চিম এশিয়াতে আকাশে বারুদের গন্ধ, সদ্য ইরাকে হামলা করেছেন বুশ মহোদয়, শোনা যাচ্ছে ইরাকের পরে এবার সিরিয়া ও ইরানের পালা, মাত্র দুবছর আগেই 9/11 হয়ে গেছে আর আফগানিস্তানে তখনো আম্রিকি সেনা যদিও তালিবান হোমল্যান্ড সিকিউরিটি আর ইসলামোফোবিয়ার নাম মাঝে মাঝে শোনা যাচ্ছে । এই পরিবেশেই ইসরায়েলে গদীতে বসছেন শ্যারন আর শুরু হচ্ছে লেবার পার্টির রাজনীতিটারই শেষ হবার পালার যে ব্যাপারটি আমি এর আগে এই সিরিজের ইসরায়েল করচাতে উল্লেখ করেছি । প্যালেস্টাইন অপেক্ষা করছে ঠিক যেভাবে হাঁড়িকাঠে মাথা দেওয়া বলির পাঁঠা কাপালিকের জন্য অপেক্ষা করে। পশ্চিম এশিয়াতে চারদিকেই তখন একটা ত্রাহিত্রাহি ভাব তার মধ্যেই প্রথম সামনে এলো এই তেইশ বছরের মেয়েটার ব্যাপারটা।

    রাচেল কোরি (১৯৭৯ - ২০০৩ )

    ২০০৩ সালে একটি সৌদি নিউস চ্যানেলকে দেওয়া রাচেলের শেষ ইন্টারভিউ। এই ইন্টারভিউটির কয়েকদিন পরেই ইসরায়েলের বুলডোজারের সামনে রাচেলের মৃত্যু হয়। (সূত্র The গার্ডিয়ান পত্রিকা)

    আম্রিকার ওয়াশিংটন প্রদেশের অলিম্পিয়া শহরে বেড়ে ওঠা মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই নব্বই দশকের বেড়ে ওঠা আর পাঁচটা আম্রিকি মেয়ের মতো ছিলোনা। ডায়েরি লিখতে ভালোবাসতো আর দশ বছর বয়েস থেকেই ওর মনে হতো পৃথিবীতে সব কিছু ঠিকঠাক নয়, আম্রিকাতে ওরা একটা খুব নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে কিন্তু আসে পাশের বাইরের দুনিয়াটা এতো সহজ সরল নিরাপদ নয়। এর পরেই এলো 9/11 আর সারা আম্রিকাতে তখন বদলা নেবার আর ইসলামোফোবিয়ার হিড়িক পরে গেছে। তার মধ্যেই মেয়েটার মনে হলো যে চারদিকে ওর নিজের দেশে প্রতিশোধ আর ঘৃণা এতো বেড়ে গেছে যে শুধু আম্রিকাতে বসে বক্তৃতা দিয়ে আর মোমবাতি জ্বালিয়ে কিছু হবেনা কিছু একটা করতে হবে।

    গুরুচন্ডালির পাঠকদের আবার মনে করিয়ে দিতে চাই যে এইটা সেই সময় যখন রাচেলের বয়সের গড়পড়তা ছেলেমেয়ে হয় আম্রিকি মিলিটারিতে যোগ দিয়ে আফগানিস্তানে বা ইরাকে ট্যুর অফ ডিউটি তে যাচ্ছে অথবা ইয়েল হার্ভার্ড সিলিকন ভ্যালি ওয়াল স্ট্রিট বা নিদেনপক্ষে হলিউডে যাবার কথা ভাবছে। আর এই মেয়েটা তখন কি করলো ? ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি মুভমেন্ট (ISM) একটি NGO যেটি মূলতঃ অহিংস ভাবে প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলের চন্ডনীতির বিশেষ করে যত্রতত্র বুলডোজার চালাবার নীতির বিরোধীতা করে তাতে যোগ দিয়ে গাজাতে চলে এলো । রাচেল এদের সঙ্গে গাজাতে মূলতঃ ইসরায়েলের বুলডোজার চালিয়ে বাড়িঘর অলিভ গাছ উপড়ে ফেলবার বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদ করতো।

    এখানেই ২০০৩ সালের এপ্রিল মাসে গাজার রাফা এলাকাতে ইসরায়েলের বুলডোজার চলছিলো ইচ্ছেমতো। পুরো এলাকার বাড়িঘর উপড়ে সাফ করে ফেলাই ছিলো উদ্যেশ্য। রাচেল আর ওর সঙ্গের কয়েকজন আম্রিকি আর ব্রিটিশ ছেলেমেয়ে যেখানে যেখানে ইসরায়েলী বুলডোজার চলতো সেখানেই বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে মাইক নিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করতো ইসরায়েলের বুলডোজার ড্রাইভারদের যে এলাকার মানুষদের বাড়িঘর উপড়ে না ফেলবার জন্য। ওরা দাঁড়িয়ে পড়তো বুলডোজারের সামনে যাতে ওদের অল্পবয়েসী মুখগুলো দেখে ইসরায়েলী বুলডোজারের ড্রাইভাররা ছেড়ে দেয় গাজার কিছু নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি জমি অলিভ গাছ।


    গাজাতে ইসরায়েলী বুলডোজারের সামনে রাচেল।

    গাজার রাফা অঞ্চলে ২০০৩ সালের ১৬ই মার্চ এরকমই একটা ইসরায়েলী বুলডোজারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলো রাচেল। ওর আশা ছিলো যে হয়তো ওর নিষ্পাপ মুখটা দেখে ইসরায়েলী ড্রাইভার বুল্ডোজারটা থামাবে। কিন্তু অন্যদিনের তুলনাতে সেদিন অন্য একটা ব্যাপার ঘটেছিলো। অন্যদিনে বুলডোজারের ড্রাইভাররা হয় তাদের বুলডোজার থামিয়ে দিতো অথবা গতি কমিয়ে দিতো। কিন্তু সেদিন থামেনি বুলডোজার। জোরে এসে সোজা উঠে পড়েছিলো ............ রাচেলের উপরে। রাচেলের জীবনের ওটাই শেষ মুহূর্ত ছিলো।

    রাচেলের জীবনের শেষ মুহূর্ত। গাজাতে ইসরায়েলী বুলডোজারে চাপা পড়বার পরে। (সূত্র বিবিসি )

    যে বুলডোজারটি এই কাজটি করে সেটি আম্রিকি ক্যাটারপিলার সংস্থারই তৈরী ছিল। তবে পশ্চিম এশিয়া কোনো পশ্চিমের মানুষকে এরকম ভাবে আগে দেখেনি। পশ্চিম এশিয়া অভ্যস্ত পশ্চিমের মানুষকে ক্রুসেডার কলোনিয়ালিস্ট occupier বা সেটলার হিসেবে দেখতে যে পশ্চিম এশিয়ার মাটিতে পা রাখে শুধু সেখানকার মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করতে, পশ্চিম এশিয়ার মানুষের অনেক দিনের গড়ে তোলা বিশ্বাস আর সংস্কৃতি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ার মানুষের জন্য লড়তে এবং প্রাণ পর্যন্ত দিতে !!!! নাহ এরকম পশ্চিম এশিয়া খুব বেশি দেখেনি। রাচেল তাই এমন একজন শহীদ যাকে গাজার মানুষ কখনো ভোলেনি ভুলতে পারবেনা।

    রাচেলের বাবা মা, তার NGO অনেক চেষ্টা করেছে এবং এখনো করছে রাচেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী যারা তাদের জন্য ন্যায়বিচার আনতে। কিন্তু না আম্রিকা না ইসরায়েল কোথাওই এখনো ন্যায়বিচার হয়নি। তবে আমার নিজের মনে রাচেলের মৃত্যু একটা প্রশ্ন জাগিয়ে দিয়েছিলো যার উত্তর এখনো পাইনি। কেন এইরকম কিছু মানুষ এইরকম কিছু করে ? কিসের জন্য ? ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে পপুলারিটি পেতে ? নাকি অন্য কিছু ? জানিনা মেলেনি উত্তর এখনো।

    পুনঃশ্চ : রাচেলের বাবা মা কি তার জন্য সুবিচার পাবে ? জানিনা। শুধু জানি রাচেলের মতো মানুষদের জন্যই নিচের কথাগুলো বলেছিলেন তৎকালীন প্যালেস্টাইনেরই একটি মানুষ যিনিও আজ থেকে ২০০০ বছরের কিছু বেশি সময় আগে তৎকালীন ইহুদী সমাজের চক্ষুশীল হয়েছিলেন এইসব কথাবার্তা বলবার জন্য এবং শেষ পর্যন্ত তাকে তৎকালীন ইহুদী সমাজের বিচারে "ব্ল্যাসফেমি" অপরাধে অপরাধী হয়ে নিজের প্রাণ পর্যন্ত হারাতে হয়েছিলো।

    Blessed are the pure in heart,
    for they will see God.
    Blessed are the peacemakers,
    for they will be called the Sons of God.
    Blessed are those who are persecuted because of righteousness,
    for theirs is the Kingdom of Heaven.

    (সূত্র sermon on the mount, Gospel of Mathew, New Testament)
  • guru | 146.196.***.*** | ১২ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:২৫741250
  • @দীমু

    অনেক ধন্যবাদ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন