@আনসার্টেনটি, আপনার কনজেকচারটি ইন্টারেস্টিং।
এভাবে কখনও ভাবি নি। দেখুন, পূর্ব ভারত সবস্ময় বেয়াড়া। মোগল সাম্রাজ্যের সময়ও বার ভুঁইয়ারা ছিলেন। বাংলার মুসলমান রাজারা মনে হয় দিল্লিকে টোকেন কর দিয়ে একধরণের অটোনমি এনজয় করতেন।
মহাভারত ও রামায়ণে অশ্বমেধের ঘোড়া পুবদিকে সমতটে কামরূপে খুব একটা দৌড়ে ছিল কি? ঠিক মনে পড়ছে না। প্রাগজ্যোতিষপুর থেকে ভগদত্তের হস্তিবাহিনী কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল বটে।
আর আদি বৌদ্ধধর্মের ক্ষেত্র অবশ্যই উত্তর বিহারের মগধ, শ্রাবস্তী, ওড়িষ্যা বা কলিঙ্গ এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশের কিছু অংশ, বড়জোর মালবের মালভুমি।
কাজেই রামায়ণে যেমন উত্তর ভারতের আর্য সভ্যতার সঙ্গে বিন্ধ্য পর্বতের অপর পাড়ের দ্রাবিড় সভ্যতার সংঘর্ষের পট ভূমি , তেমনই মহাভারতের রচনার পেছনে উত্তর ও পশচিম ভারতের হিন্দুধর্মাশ্রিত রাজন্য ও পূর্বের বৌদ্ধ সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। প্রবল পরাক্রান্ত মগধের রাজা জরাসন্ধের ভয়ে শ্রীকৃষ্ণকে পশ্চিম সমুদ্রের দ্বারকায় গিয়ে লুকিয়ে থাকতে হয়।
মহাভারতের গ্রন্থরূপ যদি পুষ্যমিত্র শুঙ্গের সময়ে (যখন বৌদ্ধদের দমিত করে হিন্দু রাজত্বের পুনরুত্থান) লেখা হয়ে থাকে তাহলে এটা অন্যতম সম্ভাবনা।
তবে আমি বোধহয় এ নিয়ে কথা বলার যোগ্য লোক নই। এর জন্যে অনেক বড় মাপের পড়াশুনো দরকার।
আসলে আমার আসক্তি ইতিহাস বা পুরাণের চেয়েও বেশি দর্শন চর্চায়।
বুঁদ হয়ে পড়তে থাকি ন্যায়ের সঙ্গে বৌদ্ধ দর্শনের প্রমাণ সম্বন্ধিত বিতর্ক গুলো। এবং নাগার্জুনের কূটতর্ক। বর্তমানে মাধ্যমিক কারিকা ও 'বৈদুর্য' নিয়ে পড়ছি, অবশ্যই বিশুদ্ধ দার্শনিক খোঁজে।
পেলাম শংকরের মায়াবাদে প্রযুক্ত 'অবিদ্যা' শব্দটি উপনিষদে কোথাও নেই,, আছে নাগার্জুনের দর্শনে। মনে হয় শংকর তাঁর পূর্বসূরী নাগার্জুনের থেকে ধার নিয়েছিলেন দুটো জিনিস।
এক, 'অবিদ্যা' শব্দটি। উপনিষদে এটি নেই, আছে ব্রহ্মের 'মায়িক শক্তি' বা মায়ার কথা বলা আছে যা রামানুজ এবং অন্য বৈদান্তিকেরা উপযোগ করেছেন। ব্রহ্মসূত্রের বিতর্কগুলো পড়লে মনে হয়, উপনিষদের ঝোঁক শংকরের অদ্বৈতবাদের চেয়ে রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈতবাদের দিকে। তাই শংকর আনলেন নতুন শব্দ 'অবিদ্যা'।
দুই, সমস্ত তর্কপদ্ধতিকে কেবল ব্যবহারিক বলে নস্যাৎ করে দেওয়া। এ ব্যাপারে নাগার্জুন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
তাই কি শংকরকে একসময় প্রচ্ছন্ন বৌদ্ধ বলা হত? এ নিয়ে পরে লেখার ইচ্ছে আছে।
আমার বর্তমান আগ্রহ যুদ্ধের নৈতিকতা এবং হিংসার আবশ্যকতা নিয়ে। মাইকেল ওয়ালজারের জাস্ট ওয়ার থিওরি পড়েছি, পুরোটা মানতে পারি নি।
বড় হয়েছি বাম-রাজনীতির আবহাওয়ায়, সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ অন্যায়, সব মুক্তিযুদ্ধ ন্যায় মেনে।
এই বয়সে আমার উপলব্ধি-- এই ন্যায়/অন্যায় যুদ্ধ বোধটি আপেক্ষিক, সাব্জেক্টিভ। সব আক্রমণকারীই বলে আমরা আক্রান্ত।
এই দৃষ্টিকোণ থেকেই গীতা নিয়ে লেখাটি লেখা, কিন্তু একক যেমন বলেছেন --অসম্পূর্ণ।
এরপর ক্রিশ্চান থিওলজিতে এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর মাইকেল ওয়ালজারের ন্যায় যুদ্ধ নিয়ে তর্ক/বিতর্ক নিয়ে লিখব।
আজ মনে হয় সব যুদ্ধ নিষ্ফলা, কোন স্থায়ী সমাধান নয়। যুক্তি তো রাশিয়ারও আছে,
উক্রাইনেরও।