তবু মানে যাকে বলে "চোখে চোখ" রেখে বাক্যটা শেষ করলাম — আমাদেরকে সুপারমারকেটে নিয়ে যাবেন?মহিলার হুঁশ ফিরল। উনি য়েন অন্য জগৎ থেকে ফিরে এলেন গাড়ির মধ্যের জগতে। মুখের পেশী শিথিল হলো, কোনও উত্তর না দিয়ে গাড়ি চালালেন মিনিট খানেক, তারপর গাড়ি পার্ক হলো একটা লোকালয়ে, আশেপাশে কিছু দোকান পাট, সমস্তই একতলা এবং ছোট ছোট।
— ও আচ্ছা সুপারমারকেট তবে এখানেই?
আমি নামবার তোড়জোর করছি, উনি ইশারায় নিষেধ করে গাড়ি থেকে নেমে গটগটিয়ে হেঁটে একটু পেছন দিকে একটা দোকানটাইপের ঘরে গিয়ে ঢুকলেন।
কোনও কাজ টাজ আছে মনে হচ্ছে।
অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই। এবার একজন পুরুষ ড্রাইভার এসে গাড়িতে ঢুকলেন।
ইনিই আমাদের বাকি পথটুকু চালিয়ে নিয়ে যাবেন। পথে সুপারমারকেটেও গেলাম। এনার নাম ভিক্টর। অমায়িক মিষ্টি মানুষ। ভিক্টরের কাছেই জানা গেল যে প্রীটি নাম্নী ঐ মহিলাটি টুর কোম্পানীর বস এবং গাড়িগুলোর মালকিন। ভিক্টর নেহাৎই একজন চাকুরে।
সুপারমারকেটে ঢুকে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ। বিশাল দোকান। আমাদের সুইটজারল্যান্ডে দোকানপাট থাকে ছোট ছোট। এত বড় দোকান দেখলে মাথা ঘোরে, কোনদিকে যাব ঠাওর করতে সময় লাগে।
আমরা রুটি মাখন চীজ ফল স্যালাদ দই এবং কিছু ড্রিংক কিনতে চাই, দিনে একবারের বেশি আমিষ খাই না স্বাস্থ্য ঠিক রাখার তাগিদে। কিন্তু দাম দেখে কিছুই বুজছি না। হাজারে, দশ হাজারে, লাখের হিসেবে দাম লেখা। অফিশিয়ালি জিন্বাবুয়ের ডলারে এই দাম লেখা, কিন্তু কনভার্শান রেট আমরা জানি না। একজন কর্মীকে ডেকে একটা প্রোডাক্ট দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই হলো, ডলারে কেমন দাম হবে এ জিনিসের?
দাম শুনে মাথায় হাত।
না খরচের জন্য নয়, আমরা তো দুদিনের টুরিস্ট, থাকব বেড়াবো চলে যাব, কিন্তু স্থানীয় মানুষেরা, মধ্যবিত্ত বা গরীবেরা কেমন করে এসব জিনিস কেনে? তারা কী খায়? কেমন করে বেঁচে আছে?
প্রায় সব জিনিসই মেড ইন সাউথ আফ্রিকা। তাই দাম সাউথ আফ্রিকার থেকে বেশি তো হবেই, তদুপরি বিশাল লেভি দিতে হয় যে কোনও জিনিস ইমপোর্ট করতে। তার ওপর ট্যাক্স এবং প্রফিট জুড়ে সাউথ আফ্রিকার প্রায় ডবল দাম এবং সুইটজারল্যাল্ডের দেড়গুণ বা জার্মানির আড়াইগুণ। হ্যাঁ, জার্মানীর আড়াইগুণ কম করে হলেও।
প্রায় বাইশ ডলার লাগল একটু রুটি চীজ দই এবং ড্রিংক কিনতে। ক্যাশেই পেমেন্ট করলাম।
আর দেরী করে লাভ নেই। এতবড়ো সুপারমারকেটে খুব কম ক্রেতা, কী করে এরা ব্যবসা করছে ভগোমান জানে।
ফেরার পথে ভিক্টরকে বললাম, কাল আমরা চোবে যাচ্ছি। পরশু বিশ্রাম নেবো। তরশু আপনি একটু আসবেন আমাদের বেড়াতে নিয়ে যাবেন?
— কোথায় যেতে চান? নিশ্চয় নিয়ে যাব।
— আপনি ভেবে রাখবেন বরং।
আমরা ভিক্টের হোয়াটস্যাপ নম্বর নিয়ে রাখলাম।
অন্ধকার নেমেছে ভিক্টোরিয়া ফলস টাউনে।
হোটেলে ফিরে আমাদের সামনে দীর্ঘ রাত্রি। আজকের ভ্রমণ ছিল রকমারি অভিজ্ঞতায় ভরা। কিন্তু আমার মাথা হিসেব কিছুতেই মিলছে না। এরা চালায় কেমন করে?
ঠিক এমনি আরেকবার হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া বেড়াতে গিয়ে। জিনিসপত্রের দাম এবং দেশের মানুষজনের রোজগারের মধ্যে বিপুল বৈপরীত্য। সে প্রশ্নের উত্তর সেবার পেয়েছিলাম। তাই এবারেও উত্তর জানতে মন উদগ্রীব হয়ে উঠল। কিন্তু জিগ্যেস করব কাকে? এদেশে ঢোকার আগে জেনেছি রাজনৈতিক প্রশ্ন এবং পুলিশের ছবি নেওয়া নিষেধ। আর নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতিই আমার টান বরাবরের।
নাহ, এসব পরে হবে, আগে কাল চোবে ঘুরে আসা যাক।