বেশ অনেক কথাই লেখা হয়ে গেছে। অর্গানিক কেমিস্ট্রির প্রফেদের অ্যাবিউজ নিয়ে দেখলাম স্যান্ডি লিখেছেন। আমারও এরকমই অভিজ্ঞতা। অর্গানিক কেমিস্ট্রি ডিভিশনের এক দুজন প্রফের গল্প অন্যান্য ডিভিশনে বলাবলি হত। এর মধ্যে একজন নিজে এবং তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সবার জন্য বাঁধা রুটিন করে দিয়েছিলেন। ইউকেন্ড বলে কিছু নেই, সকাল সাতটায় আসতে হবে, সন্ধ্যে সাতটা অবধি কাজ, রোজ। বছরে এক সপ্তাহ ছুটি, ক্রিসমাসে। বাধ্যতামূলক ছুটি, ল্যাবের সবাই একসাথে ছুটিতে যাবে। একসাথে মানে দল বেঁধে একই জায়গায় যাবে, প্রফ এবং তাঁর পরিবারও যাবে। কতদিন ধরে এরকম চলছে আমি জানি না, ভদ্রলোক অল্পবয়সী, প্রি টেনিওর। ছাত্রছাত্রীদের কোন অভিযোগ রিপোর্টেড হয়নি তখনও। তবে অন্যরা অভিযোগ জানিয়েছিলো মনে হয়। এরপর কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট থেকে সার্ভে করে দেখা হয় সবার মানসিক স্বাস্থ্য কেমন আছে। সমীক্ষায় জানা যায় বিভিন্ন ডিভিশন বিভিন্ন লেভেলের ডিপ্রেশনে আছে, অর্গানিক কেমিস্ট্রির অবস্থা শোচনীয়ভাবে খারাপ, এক দুজন সুইসাইডাল। সার্ভে রেজাল্ট পাবলিক করা হয়েছিলো, ব্যবস্থা কী নেওয়া হয়েছিলো জানিনা। কিন্তু এটা জানি, ইউ এস এ'র অ্যাকাডেমিয়ায় খুবি কড়া শাস্তি দেওয়ার চল আছে। মাঝে মাঝেই খবরে আসে বিভিন্ন বিগ শট বরখাস্ত হয়েছেন। অনেক সময় নির্দোষ প্রফেসরও শাস্তি পান (শুধু ছাত্র ছাত্রী অ্যাবিউজের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নয়, আরো নানা চার্জেই)।
এবার, একটা জিনিস দেখলাম এখানে কেউ বলেনি যে, এই অ্যাবিউসিভ অধ্যাপকেরা কোথা থেকে আসছে? এরা তো কেউ অন্য গ্রহের বাসিন্দা নন। এরা তো অনেকেই অল্পবয়সী। অর্থাৎ মাত্র কিছু বছর আগে এঁরা নিজেরাও ছাত্রছাত্রী ছিলেন। যেকোন কারণেই হোক, তাঁরা সিস্টেমের এই কু অভ্যাসটি রপ্ত করেছেন, এবং হয়ত এটাকে সাফল্যের একটা প্যারামিটার হিসেবে মনে করেন। যদি কিছু পাল্টাতেই হয়, তাহলে এই জায়গাটা পাল্টাতে হবে। ভারতের অ্যাকাডেমিয়ায় এই ব্যাপারটা মারাত্মক, প্রায় কাল্ট হয়ে গেছে। অনেকটা এই আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্য টাইপের ব্যাপার। এবং ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর, কারণ সত্যিই ক্রিয়েটিভিটির দিক থেকে এইসব জায়গাগুলো বাকি পৃথিবীর থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে গেছে -- এরকম কোন খবর নেই। লাখ লাখ মানুষের থেকে কয়েকজনকে "বেছে" নেওয়া ছাড়া এই অ্যারোগেন্স অন্য কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে মনে হয়না।
অ্যাকাডেমিক এলিটিজ্ম, যা ভারতীয়দের মধ্যে মহামারীর মত তীব্র, সেটা না সারালে এই জিনিস বন্ধ হবেনা।
এর বাইরে, যদি সাধারণভাবে এই সমস্যাটা নিয়ে বলতে হয়, তাহলে বলব ট্রেনিং ছাড়া কিছু হয়না। ছাত্রদের থেকে এক্সপেক্ট করা হয় তারা ট্রেনিং এ মনোযোগী হবে। অধ্যাপকেদের ভালো মেন্টরশিপ ট্রেনিং নিতে (এবং নেওয়ার সময় অ্যাকচুয়ালি মন দিয়ে সেগুলো করতে) বাধ্য করা খুব মুশকিল হয়, ইদানীং এইসব ট্রেনিং প্রোগ্রামে নিজে থাকার সময় দেখছি। কিছু জনতা থাকে যারা এইসব ট্রেনিং এ ফাঁকি দেয়, শুধু অ্যাটেন্ড করে না করলে চাকরিতে চাপ হবে বলে। ভালো মেন্টর হওয়া, ছাত্রদের সাথে একটা দীর্ঘমেয়াদি রিলেশন তৈরী করার জন্য যে নিজেদেরও কিছু শেখার আছে, এবং সবার আগে যে নিজেদের গোলমালগুলো ঠিক করার দরকার আছে এটা এঁদের বোঝানো কঠিন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে এই সেটে থাকা অধ্যাপকেদের মধ্যেও সিংহভাগ ভারতীয়।