এই টইটাও দেখি এই জানুয়ারির মাঝ থেকে প্রায়, ১৭০০০ বার পঠিত!
এবার পুজোয় ঘরে থাকুন, গুরু ধরুন, গুরু পড়ুন!
ঘরে বসেই বই পেয়েও জান, তাও আবার বিশেষ ছাড়ে!!
শারদীয়া উপলক্ষ্যে অক্টোবরের ১৮,১৯,২০ এই তিন দিন গুরুচণ্ডা৯-র যেকোনো বই কিনলে পান ২৫%ছাড় আর পাঁচশো টাকার উপর কেনাকাটায় থাকছে ৩০% ছাড়
শুধুমাত্র তিন দিনের জন্য। ফোন অথবা হোয়াটসঅ্যাপ করতে পারেন, 9330308043 এই নাম্বারে।
অথবা এখান থেকে বই সম্বন্ধে পড়ে নিয়ে, পছন্দমত বই সরাসরি অর্ডার করে দিন!
আমহার্স্ট স্ট্রীটের বইমেলায় গুরু থাকছে না? কেন? অন্যরা সবাই তো প্রায় থাকছে দেখছি। গুরুর কোন অ্যাড দেখছি না তো।
আজকের বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান।
http://epaper.telegraphindia.com/imageview_353830_71130599_4_undefined_14-02-2021_9_i_1_sf.html
এ কোনো পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বই না। ১৯৩০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বাঙালির ইতিহাস লেখা অতি দুরূহ কাজ। সেই সম্পূর্ণতার ধারেকাছে যাওয়া এই লেখকের কম্মো না, এখানে সে চেষ্টা করাও হয়নি। স্রেফ কিছু ভুলে যাওয়া আখ্যানকে খাপছাড়া কিন্তু কালানুক্রমিক ভাবে সাজানো হয়েছে। ভয়াবহ কোনো মৌলিকতার দাবিও এই বইয়ে নেই। কিছু বিশ্লেষণ মৌলিক, কিন্তু তথ্য যা আছে, তার কোনোটাই অজানা কিছু না। সবই জনারণ্যে উপস্থিত। তাহলে এই বই লেখাই বা হল কেন, প্রকাশই বা করা কেন? কারণ একটিই। বাঙালির কোনো ইতিহাস নেই। তার কারণ এই নয়, যে, বাংলার নানা পর্বের ইতিহাস কেউ লেখেননি। বরং উল্টোটাই। বাঙালির ইতিহাস রচনার জন্য যা উপাদান প্রয়োজন, সবই নানা জায়গায় মজুদ। কিন্তু স্রেফ তথ্যই তো ইতিহাস না। দৃষ্টিভঙ্গিহীন কোনো ইতিহাস হয়না। বাংলার ইতিহাসে ভারতীয় জাতিয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিস্তর লেখালিখি হয়েছে, লেখা হয়েছে অ-ভদ্রলোকীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, এমনকি বিশ্বমানবতার দৃষ্টিভঙ্গিও অপ্রতুল না। কিন্তু বাঙালির দৃষ্টিকোণ থেকে বাঙালির ইতিহাস, এ বস্তু অপ্রতুল। যাঁরা লিখতে পারতেন, তাঁরা সযত্নে এই কোণটি এড়িয়ে গেছেন। আশ্চর্যের কিছু নেই, এও এক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রকে বহুস্বর থেকে এককেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিণত করার রাজনীতি। সে রাজনীতি মূলত স্বতঃসিদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে।
এই স্বতঃসিদ্ধকে প্রশ্ন করার জন্যই এই বই। পূর্ণাঙ্গ হলে ভালো হত। কিন্তু আপাতত সদর দপ্তরে পিংপং বল ছুঁড়েই শুরু করা যাক না।
বইটি ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
গুরুচন্ডা৯ : বিশেষ নজর (guruchandali.com)
মতামত দিন এখানে।
গুরুচন্ডালি : বুলবুলভাজা : ই-পুস্তক -- বাঙালির খাপছাড়া ইতিহাস (guruchandali.com)
পাড়াতুতো চাঁদ নিয়ে গল্পপাঠে আলোচনা
#পাঠপ্রতিক্রিয়া
বই - গোরা নকশাল
লেখক -- কল্লোল লাহিড়ী
প্রকাশক - গুরুচণ্ডা৯
প্রথম প্রকাশ -- ২০১৭
মূল্য ৬০ টাকা
"একজন কিশোর ছিল , একেবারে একা
আরও একজন ক্রমে বন্ধু হল তার ।
দুয়ে মিলে একদিন গেল কারাগারে;
গিয়ে দেখে তারাই তো কয়েক হাজার !"
জেলখানার কবিতা
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
একটা ছোট্ট লাল টুকটুকে বই , বাংলা চটি সিরিজের বই , একটি গুরুচণ্ডালী প্রকাশনা । বইটির পিছনের মলাটে লেখা আছে , এটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত উপন্যাস নয় । অথচ একটি দুপুর , একটি বিকাল জুড়ে হু হু করে পড়ে ফেললাম বইটি , অব্যক্ত অনুভূতিতে ।
একটি বালকের দৃষ্টিতে, বালকের জবানীতে যে উপন্যাস শুরু , আটের দশক জুড়ে যে বড় হয়ে উঠছে , গঙ্গার ধারে চটকল ও শ্রমজীবী মানুষের সুখ দুঃখ,সমস্যা ও লড়াইএর পটভূমিকায়, পূর্ববঙ্গের ছিন্নমূল উদ্বাস্তু পরিবারের সাংসারিক টানাপোড়েনে লালিত যার শৈশব কৈশোর , তার বয়ানে উপন্যাসটি একটু একটু করে পাঠককে আকর্ষণ করতে থাকবে পাতার পর পাতায় ।
দিনবদলের স্বপ্নদেখা , শারীরিক ভাবে ক্ষয়ে যাওয়া এক সন্তান যখন বইটির চতুর্থ পাতায় , উপন্যাসের রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করে , সমগ্র রচনাটিতে একটি আলাদা মাত্রা যোগ হয়ে যায় । একটু একটু করে বালক টুকনুর সাথে ভাব হয়ে যায় গোরা নকশালের । একটু একটু করে লালিমাযুক্ত হতে থাকে কাহিনিটি , সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে , ভাষায় , বর্ণনে , চরিত্রে , আদর্শবাদিতায় , মূল্যবোধে , মনুষ্যত্বে আর দুরন্ত গতিশীলতায় ।
বইটির বক্তব্যের আকূতি, লেখার স্টাইল , সমস্তরকম জীবনবোধকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া এই সবকিছু আমার ভালো লেগেছে । লেখক তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে ,তীব্র গতিতে, অন্তরের ভালোবাসায় উপন্যাসটিকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন পাঠকের তোয়াক্কা না করে । কাহিনি বুননের সময় কোথাও এতটুকু আপোস করেননি তিনি , যখন যেমন খুশি বিচরণ করেছেন , যে কোনো সময়কালে , যেকোনো চরিত্র চিত্রণে , আর তাঁর এই বেপরোয়া আচরণ উপন্যাসটিকে অপূর্ব সুন্দর করে তুলেছে অধ্যায়ে অধ্যায়ে । পাঠককে আকর্ষণ করেছে তীব্রভাবে।
এইখানে এই বই নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে যাওয়া ধৃষ্টতা হবে , উপরন্তু পাঠকের পাঠের মজা নষ্ট করা উচিত নয় । এ শুধু পড়ে দেখার বই , অনুভব করার কথন , এক বিকেল জুড়ে এ বই পড়ে উঠলে মন ভরে থাকবে বহুক্ষণ । রাতে শুতে যাবার সময় মনে পড়ে যাবে , গোরা নকশাল ঘুমের ওষুধ খেত না , পাছে সে ঘুমিয়ে পড়ে আর দেখতে না পায় দিনবদল ।
অনেক দিন পড়ে 'চিলিতে গোপনে' বইটির উল্লেখ পেয়ে আমার নিজের সংগ্রহের বইটি শেল্ফ থেকে টেনে বের করি , ২০০৯ এর বইমেলায় কেনা । আবার করে পড়তে ভালো লাগছে খুব । গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর ' ক্ল্যাণ্ডেস্টাইন ইন চিলি' বইটির যিনি ভাষান্তর করেছিলেন সেই শ্রদ্ধেয় মানুষ টির আরোগ্য কামনা করছি এই মুহূর্তে ।
শেষে বলি , বইটির ছাপা খুব পরিচ্ছন্ন , কিন্তু হয়তো আকারে আরেকটু বড় হলে পড়তে , হাতে ধরতে সুবিধা হতো ।
লেখক ও প্রকাশককে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।
ভাস্বতী দাশগুপ্ত
কলকাতা ২৬
বাসব রায় লিখলেন,
কল্লোল দাশগুপ্ত অতি সহজেই ফেসবুকে লভ্য। কয়েকটা পোস্ট পড়লেই বোঝা যায় তিনি আপাদমস্তক বামপন্থী। সম্প্রতি তাঁর দুটি বই পড়লাম, একটা বড় নাম – কারাগার বধ্যভূমি ও স্মৃতিকথকতা এবং আরেকটি হল তক্কোগুলি, চরিতাবলী ও আখ্যানসমূহ। প্রকাশক গুরুচণ্ডা৯।
লেখক ১৫ বছর বয়সে প্রথম জেলে যান। হ্যাঁ, তাঁকে তখনই নকশাল সন্দেহে ধরা হয়েছিল। কিছুদিন জেলে থাকার পর তিন বছর কলকাতায় থাকতে পারবে না এই শর্তে ছাড়া পান। দুটি বই প্রকৃতপক্ষে সিকোয়েল। প্রেক্ষাপট পশ্চিমবঙ্গ এবং আরও নির্দিষ্ট করে বললে কলকাতা। আর সময়কাল ১৯৭৪-১৯৮৬। দুটো বই টানা পড়লে মনে হবে একটিই গ্রন্থ পড়ছি।
বছর দশেক আগে শিলঙের হিরণ্ময় রায়ের একটি বই পড়েছিলাম, পুরনো শিলঙের সংস্কৃতি ও খেলাধুলো। সেখানে হিরণ্ময় অসাধারণ নির্লিপ্তিতে লিখেছেন ভীমসেন যোশি, অমিতাভ বচ্চন, রেখা, কেন ব্যারিংটন, মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, পিকে-চুনী-বলরামের কথা। একটা উদাহরণ দিই, ‘ভীমসেন আমাদের বাড়িতে থাকাকালীন খুব ভোরে উঠে রেওয়াজ করতেন। একদিন মাকে বললেন আপনি খুব চমৎকার লুচি বানান, এরকম জীবনে খাইনি।’ ব্যস ভীমসেন সম্পর্কে এটুকুই। আবার অমিতাভ বচ্চন সম্পর্কে তাঁর ওয়ান লাইনার, ‘খুব লম্বা। আমাদের দরজা দিয়ে ঢোকার সময় মাথা হেলিয়ে দিয়েছিল।’
কয়েক মাস আগে মারা গেছেন গুয়াহাটির নারায়ণচন্দ্র সরকার। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটেছিল ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দ, গান্ধীজি এবং শেখ মুজিবর রহমানের। নাহ্ এনিয়ে তিনি কখনোই উচ্চবাচ্য করতেন না।
কল্লোলের দুটি বইয়ে এরকম উদাহরণ যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে। চারু মজুমদার, কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতাল, শিবু সোরেন, অশোক মিত্র, ক্ষিতি গোস্বামী, যতীন চক্রবর্তীকে মিট করেছেন, কিন্তু কোনো অতিশয়োক্তি নেই। লেখকদের মধ্যে জ্যোতির্ময় দত্ত, শম্ভু রক্ষিত, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়, সমীর রায়, সংস্কৃতি জগতের হেমাঙ্গ বিশ্বাস, মৃণাল সেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, বাদল সরকার, প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। কিন্তু এঁরা নিছ্কই একেকটি চরিত্র, তেমন প্রশংসাও নেই, নিন্দাও নেই।
সত্তর দশক নিয়ে অনেকেই লিখেছেন, বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দশক। কল্লোলের এই দুটি বইকে ওই দশকের বাস্তব দলিল বললে একেবারেই ভুল বলা হবে না। প্রায় পঞ্চাশটা লিটল ম্যাগাজিন যেমন স্বদেশ, প্রস্তুতিপর্ব, অনুষ্টুপ, পদধ্বনি, পূর্বতরঙ্গ.. এগুলোর গুরুত্ব উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। পাশাপাশি রয়েছে অনেক গণসংগীতের দলের কথা। যেমন হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মাস সিংগার্স, উত্তরপাড়ার অরণি, এখানে গান গাইতেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়।
দুটি বইয়ের আখ্যানের অনেকটা জুড়ে রয়েছে জেলখানা পর্ব। প্রেসিডেন্সি জেলে রাজনৈতিক বন্দিরা জরুরি অবস্থার সময়ে কেমনভাবে থাকতেন, আদ্যোপান্ত লেখা রয়েছে। নকশালরা কেন ব্যর্থ হল, চারু মজুমদার কেন ধরা পড়লেন, বামফ্রন্ট সরকার গড়ার পর নকশালরা কেন ধীরে ধীরে মুছে গেল... লেখক নিজের মতো ব্যাখ্যা করেছেন।
যাঁরা সত্তর দশকের কলকাতা দেখেননি, এই বই দুটো ভ্রমণ করুন, দর্শন হয়ে যাবে। আড্ডা, আড্ডা এবং আড্ডা। কেওড়াতলা, কালীঘাট, রাসবিহারী, টালিগঞ্জ, ময়দান, ব্রিগেড, কলেজ স্ট্রিট, রাজাবাজার, লালবাজার, বেহালার রাস্তাঘাট মায় দোকানও উঠে এসেছে বইতে।
আজ মে দিবসের অনুষ্ঠান তো কাল ফ্যাসিবাদ বিরোধী কনভেনশন, পরশু গণসংগীতের অনুষ্ঠান.. হয়েই চলেছে। বৈকালিক আড্ডা শুরু হয়েছে কেওড়াতলার মোড়ে, সন্ধ্যায় ভবানীপুর আর রাসবিহারী মোড়ের শেষ যে চায়ের দোকান বন্ধ হয় সেখানে থেমেছে, তখন রাত্রি বারোটা।
নকশাল আন্দোলন, পুলিশি নির্যাতন, বামপন্থার আগুন, সংঘবোধ, লেখক-শিল্পীদের সামাজিক ক্রিয়াকলাপ ছবির মতো উঠে এসেছে বইদুটিতে। ওহ্ একটুকরো ফুটবলের গল্পও আছে।