এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • ঐতিহ্যমন্ডিত বাংলা চটি সিরিজ

    sumeru
    বইপত্তর | ২৯ জানুয়ারি ২০১০ | ৯৭৫৫২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ১৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৫:১৪434990
  • পাই, লাস্ট বইমেলায় যেতে পারি নি। সেই সময় আর তার পরে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বই সংগ্রহ করতে পারি নি।

    এবারে করে নেবো
  • গুরুচণ্ডা৯ | 172.68.***.*** | ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:০৫729491
  • নৈ:শব্দ্যের পত্রাবলী: My Letters to Silence-এ অর্চন অভিজিতের ক্যামেরাকলমের যুগলবন্দির পর নৈ:শব্দ্যের কথা, আরও একবার, অর্চন মুখার্জির ক্যামেরায়। এবার কলোনিয়াল কলকাতার গল্প... নৈ:শব্দ্যের আখ্যান: A Silent Saga
    কলমে অর্চন, জয়দীপ, চন্দ্রনীভ এবং অভিজিত।

    তবে এবার বই নয়, না-বই। না-বই কেন?
    উত্তর ক্রমে আসিতেছে।

    আপাতত প্রচ্ছদটুকুনি।

    প্রকাশিত হতে চলেছে গুরুচণ্ডা৯ থেকে। পাওয়া যাবে কোলকাতা বইমেলায় ৪৪৬ নং স্টল থেকে। করুণাময়ীর ৮ নং গেট দিয়ে ঢুকেই, একদম সামনে! ৭ নং আর ৯ নং গেটের থেকেও কাছেই।

    আর রইল নৈঃশব্দের পত্রাবলী নিয়ে আজকের সাপ্তাহিক বর্তমানে পাঠপ্রতিক্রিয়া। যদিও অর্চনের ছবির কথা বাদই চলে গেছে, যে ছবি নৈঃশব্দের কলমের কথার চেয়ে কিছুমাত্র কম বাঙ্ময় নয়! এ বই ছিল যুগলবন্দির!


  • pi | 172.69.***.*** | ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:২৯729507
  • এখান থেকে নানা প্রকাশিত পাঠপ্রতিক্রিয়া, সমালোচনা কেউ এক একটা ছবি করে একটা ফাইলে লিনক দিলে বড় উপকার হত!
  • tester | 172.69.***.*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:০১729527
  • guru | 172.69.***.*** | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:২৩729540
  • এসে গেছে, এসে গেছে, ২০২০ -র লিস্ট এসে গেছে - দেখে নিন - https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=17020
  • pi | 162.158.***.*** | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:০১729548
  • আনন্দবাজার পত্রিকায়। পুস্তক পরিচয়।
    নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান নিয়ে।
    ১৯৯৩-এর ৩১ অক্টোবর ভোর রাতে, অথবা ৩০ অক্টোবর শেষ রাতে হুগলির ভিক্টোরিয়া চটকলের শ্রমিক ভিখারি পাসোয়ানকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। ফাঁড়িতে পুলিশের অত্যাচারে ভিখারির মৃত্যু হয়, এমন সম্ভাবনার খবর অনেক পরে, অমর মিত্রের উপন্যাস প্রকাশেরও (একুশ শতকের শুরুতে) প্রায় দেড় দশক পরে পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায়, যদিও সে মামলার আজও নিষ্পত্তি হয়নি। ভিখারি পাসোয়ান হারিয়ে যাওয়ার পরে আরও কত নিরুদ্দেশ-কাহিনি সংবাদ শিরোনামে এসেছে, গিয়েছে। তাঁদের স্পর্শও যেন-বা আছে অমরের ‘নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান’-এ। আরও চারটি গল্প আছে এ-বইয়ে— গাছ ও মানুষ, ঊনচল্লিশের পরের জন, প্রাণবায়ু, রূপকথায় প্রবেশ। উপন্যাসের সঙ্গে গল্পগুলি মিলিয়ে পড়লে মনে হয় যেন অমর মিত্র পাঠককে সে ভাবেই তাঁর আখ্যান পাঠের জন্যে প্রস্তুত করেছেন, যাতে তাঁদের চেতনা ব্যেপে এই বোধটিই সঞ্চারিত হতে থাকে— এমনই এক দেশ-কাল-দুনিয়ায় আমাদের বসবাস, এমনই এক সংসার-সমাজ-রাষ্ট্রের ঘেরাটোপে, যেখানে নিরুদ্দেশ না-হওয়াটাই আশ্চর্যের, যেখানে হারিয়ে যাওয়াটাই সঙ্গত, বিপন্নতার বাড়তি কোনও হেতু যেখানে নিষ্প্রয়োজন, বিপদ-মুক্তির দিশা যেখানে লোপাট। সরব-নীরব, প্রতিবাদী-ভীরু, সকলের জীবনেরই এক অনিশ্চিত যাপন। এই প্রচ্ছন্ন সন্ত্রাসের কাহিনি কী অনায়াস নিচু স্বরের কথনে বলে যান অমর: ‘‘সহচরী শ্বাস নিচ্ছিল। নাকে আসছে নিমফুলের গন্ধ। কতদিন বাদে! ছেলেটিকে সে বুকে আঁকড়ে ধরল। তার ভয় করছিল। গন্ধটা চিনেছে ছেলে, একে কি ঘরে রাখতে পারবে?’’ ভূমিকায় লিখেছেন রুশতী সেন, লেখকের ‘‘আখ্যানধর্ম রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক সন্ত্রাসকে, সাধারণের অস্তিত্বের সংকট আর অনিশ্চয়কে ফিরে ফিরে নিয়ে আসে পাঠকের বোধচৈতন্যের মুখোমুখি। অথচ সে আবাহনের ভিতরে প্রচারের ভঙ্গিটি অনুপস্থিত। সম্ভবত এই অনুপস্থিতিই আখ্যানের চলনকে এতখানি মর্মস্পর্শী করে তোলে।’’
  • π | ১২ জুলাই ২০২০ ১৯:৫২732387
  • অনির্বাণ দত্ত চৌধুরী লিখলেন,

    "গুরুচণ্ডা৯ ক্রয়-প্রতিক্রিয়া
    যাঁরা আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন তাঁরা জানেন যে আমি খুবই নীচ ও কৃপণ প্রকৃতির মানুষ। আমি সেই ধরনের মানুষ যে আমাজনে প্রচুর সময় ব্যয় করে ১০-১২ টা ফিল্টার যুক্ত কাস্টমাইজড সার্চ বুকমার্ক করে সেকেন্ড হ্যান্ড বই কেনে এবং ২৫-৫০ পাউন্ডের বই ২৫০ টাকায় কিনে আল্লাদিত হয়। কিপটে বললে লঘু শোনায় তাই কষ্ট করে কৃপণ কথাটা টাইপ করলাম। তাতে তো আর পয়সা লাগছে না।
    যাজ্ঞে, আমার বদ্ধমূল ধারনা আমার মত অনেক কৃপণ মানূষ লোকলজ্জার ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে পারেন না, তাঁদের জানাই ঘরে বসে সুলভ পাঠালয়ে যোগ দিন। সাথের ছবিতে দেখতে পাবেন মোট বাইশ টি বই। নিচে লিস্ট ও সাথে ছবি দিলাম। ২০% ছাড়ে মোট ১৪২৮ টাকায় কিনেছি - নো ডেলিভারি চার্জ - অর্থাৎ লেস দ্যান ৬৫ টাকা পার বই। রিসিটের ছবি রইল। আপনি ধারণা করতে পারবেন না এতে এই কৃপণ কত তৃপ্ত - আমি দেখতে ভালো হলে আমার আনন্দাশ্রুর ছবিও নিশ্চয়ই দিতাম। তাতে তো আর পয়সা লাগছে না।
    লোকাল ট্রেনে ১০ টাকায় দশটা পেন বিক্রি দেখেছেন? প্রথমে সৌরভ গাঙ্গুলি পেন, যাঁরা নিচ্ছেন তাদের জন্যে কোম্পানি থেকে বিনামূল্যে জ্যোতির্ময়ী শিকদার পেন - ৪০০ মিটার এবং ৮০০ মিটার এশিয়াড পদকের জন্য টু ইন ওয়ান পেন, একই পেনে এদিকে টিপলে লাল, ওদিকে টিপলে নীল ইত্যাদি ইত্যাদি করে মোট দশটা পেন। গুরুচণ্ডা৯ সেরকম বুকমার্ক দিয়েছেন - সাথের ছবির মধ্যমণি। ফ্রিতে, কোন প্রতিশ্রুতি ছিল না। সাধারণ পাঠক হলে বুকমার্কের সংখ্যা গুনতো না। কৃপণরা গোনে - আমি গুনেছি। ঠিক বাইশটা। আনন্দে চোখের জল চিবুকে এসে যাওয়ার জোগাড় মশাই। পুরো রাজযোটক। মানে এরাও আমার মত হিসেব করে দিচ্ছেন। গৌরী সেন কেস নয়। হিসেবপত্র আছে। লিস্টে ২০ টাকা দামের বইও আছে, ওরকম বিলিয়ে দিলে চলবে নাকি? এই না হলে কৃপণে কৃপণে কোলাকুলি। তাতে তো আর পয়সা লাগছে না।
    আর হ্যাঁ এদের কোন বইতে কোনরকম সই নেই, আধা, কাঁচা, পাকা, বিখ্যাত, অখ্যাত, কিংবদন্তী, লেখক, নপুংসক, প্রকাশক, চিটিংবাজ, বিক্রেতা, ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট ডিলিটকারী, বাংলা, হিন্দী, ইংরেজী কোনরকম সই নেই। জাস্ট নেই। চল্লিশের দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে এই কৃপণ, খুব সম্প্রতি, জীবনে প্রথমবার, ল্যা ল্যা করতে করতে, একটি বইতে সই নিতে গিয়ে আক্কেলসেলামি দিয়েছে। কৃপণ মারধোর খেতে পারে, না খেয়ে থাকতে পারে। কিন্তু কৃপণকে যদি কেউ পয়সা নিয়ে ঠকায় তাহলে যে কী বিভীষণ মনখারাপ হয়, সে সহমনা কৃপণ ছাড়া কেউ বুইতে পারবেন না। যাজ্ঞে গুরুচণ্ডা৯ এর বইতে শুধু লেখা আর ছবি, ছবি আর লেখা। সই নেই, তা হোক, তাতে তো আর পয়সা লাগছে না।
    বাজে বকা শেষ - এবার কাজের কথা বলি। একজন তরুণ কলেজ স্ট্রীট থেকে সাইকেল চালিয়ে বই ডেলিভারি দিয়ে গেলেন - তার মেদহীন শরীরের দিকে তাকিয়ে ঈর্ষা হচ্ছিল। কুড়ি-বাইশ বছর আগে আম্মো পারতাম বি টি রোড দিয়ে, হাত ছেড়ে হুহু করে সাইকেল চালাতে। যাকগে, আজ থেকে আবার ২ কিলোমিটার করে হাঁটবো। ওই তরুণ আমাকে আবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে বেসিকটা আবার শিখিয়ে দিয়ে গেলেন। তাতে তো আর পয়সা লাগছে না।

    হিরণ্যরেতাঃ - অজিত রায়
    হাম্বা হাম্বা - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    উদ্বাস্তু কলোনির কথা : একটি স্মৃতিকথা সংকলন - সম্পাদনা : কল্লোল
    এক গাঁয়ের ডাক্তারের গল্প - ড: অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত
    সিজনস অফ বিট্রেয়াল - দময়ন্তী
    সিমোন দ্য নেলসন - রোশনারা মিশ্র ও চিরঞ্জিৎ সামন্ত
    দিনগুলি, রাতগুলি - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    গোরা নকশাল - কল্লোল লাহিড়ি
    বাংলা স্ল্যাং, সমুচয় ঠিকুজিকুষ্ঠি - অজিত রায়
    বস্টনে বংগে - বর্ন ফ্রি
    বৃহৎ ন্যানোপুরাণ - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    অ(ন)ন্য মহীন - গুরুচন্ডালি
    মহেঞ্জোদারো - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    অপ্রকাশিত মরিচঝাঁপি - সম্পাদনা: তুষার ভট্টাচার্য
    অসুখ সারান - ঈপ্সিতা পালভৌমিক
    খান্ডবদাহন - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    শিন্টু ধর্মাবলম্বী রাজা সবুজ ভদ্রমহিলা এবং একজন অভদ্র সামুকামী - আবু মুস্তাফিজ
    আমার যৌনতা – সংকলন - গুরুচন্ডা৯
    বন্দরের সান্ধ্যভাষা - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    লা জবাব দিল্লি - শমীক মুখোপাধ্যায়
    হাম্বা - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়
    আমার সত্তর - দীপ্তেন
  • π | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২৩:৪৩732754
  • এই  টইটাও দেখি এই জানুয়ারির মাঝ থেকে প্রায়, ১৭০০০ বার পঠিত! 

  • π | ১০ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৩২732902
  • সায়ন কুমার দে লিখলেন,
    গুরুচন্ডাঌ থেকে গত বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে একটি অসামান্য বই "হারিয়ে যাওয়া গল্প: প্রথম খণ্ড", বর্ষীয়ান সাহিত্যিক অমর মিত্রর সংকলন ও সম্পাদনায়। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী চিরঞ্জিৎ সামন্ত, মন ভরে যায় এমন মেদুর প্রচ্ছদ দেখলে, নামাঙ্কনের কাজটিতে বিশেষ করে। ভূমিকায় অমর মিত্র উল্লেখ করেছেন,
    "গল্প পড়তে পড়তেই গল্প লিখতে শেখা। লিখতে লিখতে, পড়তে পড়তে লিখতে শেখা হয় যেমন, তেমন পড়তেও শেখা হয়। জীবন-জন্ম সম্পর্কে অনেক অনাস্বাদিত অনুভবের জন্ম হয়। সকলে কি লেখেন? কত নিবিষ্ট পড়ুয়া আছেন, খুঁজে খুঁজে বের করে আনেন সাহিত্যের মণিমুক্তোগুলি। ভালো পড়ুয়া আছেন বলেই অনেক মহৎ লেখক বেঁচে ওঠেন বিস্মৃতি থেকে।” তেমনই কয়েকজন পাঠকের সহায়তায় অমর মিত্র সংকলন করেছেন গল্পগুলির। সতেরটি গল্প নিয়ে তাঁর এই উপাচার। এই সংকলনে যে লেখকদের গল্প পড়লাম, তাঁদের কারোর লেখাই পড়িনি আগে। অথচ কি অসামান্য সবকটি গল্পই, একটির প্রকাশ থেকে অন্যটির প্রকাশ ভিন্ন। একটির থেকে অন্যটির আঙ্গিক আলাদা। কেউই প্রতিষ্ঠিত গল্পকার নন সেভাবে, কারোর গল্প প্রকাশ পেয়েছে খুব কমই — তারপর চলে গেছেন বিস্মৃতির আড়ালে। কেউ গল্পের আঙ্গিক ছেড়ে বেছে নিয়েছেন কবিতার প্রকাশমাধ্যম। কিন্তু তাঁদের গল্প যে কিরূপ শক্তিশালী, তা এই সংকলন থেকে বোঝা যায়।
    "সকল রকম অনিশ্চিত অস্থিরতার দ্বন্দ্বসংঘাত ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যেও যেমন পাইন গাছ ক্রমে ঋজু ও টানটান হয়ে বেড়ে উঠে স্পর্শ করতে চায় প্রকৃত আকাশকে তার সকল তৃষ্ণা ও আকাঙ্খা নিয়ে, তেমনি সেও এবার সমুদ্যত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায়। এবং হায়, তখনই অন্তরাল থেকে ঈষৎ চাপা, ভারী ও গম্ভীর কণ্ঠের নির্দেশ ভেসে আসে ফায়ার। সঙ্গে সঙ্গে একঝাঁক রাইফেলের গুলি এসে যুবকটির সারা শরীর বিদ্ধ করে দিনের প্রথমার্ধেই। সেই মুহূর্তেই সভ্যতার শেষ বারান্দায় যেন-বা চুরমার হয়ে ভেঙে পড়ে প্রকৃত সুন্দর ফুলদানি।
    রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত সে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। তার দেহটা কাঁপতে থাকে রৌদ্রময় সবুজ ঘাসের ওপর। সকল জাগতিক বোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রাক-মুহূর্তে সে অনুভব করে আবার কেউ যেন তাকে দু-নম্বর প্লাটফর্ম থেকে একটি ট্রেনের দীর্ঘ অন্ধকার কামরায় তুলে দিচ্ছে আর-এক দীর্ঘ অনিবার্য যাত্রার জন্য। চৈতন্য বিলুপ্তির এই শেষ মুহূর্তেই সে বুঝে যায়, কোনো নতুন স্টেশনে নামার সময় সশস্ত্র অবস্থায় প্রস্তুত হয়ে নামা আবশ্যক।”
    অসীম চক্রবর্তীর গল্প "রণক্ষেত্রে অস্ত্রহীন একা"-র কিছু অংশ রাখলাম এখানে। ভাবতে অবাক লাগে এমন শক্তিশালী লেখনী কিভাবে কালের সম্মার্জনীতে বিস্মৃত হয়ে পড়েন! এই গল্প তো চিরকালীন, এমন এক সময়ের অভিক্ষেপ তুলে ধরে যা ফিরে আসে বারবার।
    ‘কোভ অ্যান্ড জন’-এর রৌহন আলি আরেকটি অসামান্য গল্প। গায়নার পটভূমিতে লেখা এই গল্পটি আর তার ভাষার ব্যবহার গল্পটিকে করেছে স্মরণীয়। অথচ লেখক ব্রজমাধব ভট্টাচার্য এখন বিস্মৃত পাঠকের কাছে। গল্পের শুরুতে সংকলক লেখকজীবন সম্পর্কে যে তথ্য তুলে ধরেছেন, তাতে প্রতীত হয় তাঁর জীবনও কম আকর্ষণীয় ছিল না! ব্রজমাধব সৈয়দ মুজতবা আলীর ঘরানার লেখক। কানাই কুণ্ডুর "ঢোলিয়া"ও অসামান্য গল্প, গ্রামীণ কৌম জীবনের এক বিশ্বস্ত ছবি, ঢোলবাদক গেনুর যন্ত্রনা-কষ্টের জীবনের উত্তরণ খুঁজে পাই এই গল্পে। কথনভঙ্গির গুণে গল্পটি হয়ে উঠেছে অসামান্য। প্রভাত চৌধুরী মূলত কবি, কিন্তু তাঁর "একটি চিঠি এবং তার টীকাটিপ্পনী" কি যে অসামান্য গল্প! প্রকাশ আঙ্গিকেই তা বিশিষ্ট স্থান করে নেবে। জ্যোৎস্নাময় ঘোষের "বিদ্যাসাগরের জন্মসার্ধশতবর্ষ ও গ্রাম মধুবনীর নকুল মণ্ডল" এক কৌতুককর অথচ করুণ আখ্যান। তেমনই আরেকটি গল্প রাধানাথ মণ্ডলের "চালে যখন কাক গলছে"। শিবতোষ ঘোষ তাঁর "খেলনাপাতি" গল্পে ধরেছেন সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারার এক অন্তঃশূন্য ছবিকে। চণ্ডী মণ্ডলের গল্প "জীবনজন্ম" পড়ে বিস্মিত হয়েছি, একটি মৃত্যু আর তার ব্যাবচ্ছেদকে কেন্দ্র করে গল্পটির সীমা আবর্তিত হয়েছে, এই গল্পের রূপক স্তব্ধ করে দেয় পাঠককে। পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি গল্পকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সমাজ হয়েছিল উত্তাল, বামমনোভাবসম্পন্ন মানুষেরা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন পত্রিকাটিকে। আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগে লেখা সেই গল্পটি লিখেছিলেন প্রিয়তোষ মুখোপাধ্যায়, গল্পটির নাম "শ্রীকৃষ্ণের পট"। ইডিপাস কমপ্লেক্সকে আধার করে লেখা এই গল্প সেকালের চোখে তো ব্যতিক্রমী হবেই, কিন্তু অস্বীকার তো করা যায় না এর সত্যকে। এ গল্প সময়ের আগে লেখা। শৈবাল মিত্রর "খয়ের খাঁর ইন্তেকাল" বা সুতপন চট্টোপাধ্যায়ের "বুকের ছবি" ভালোলেগে যায় তার কাহিনিগুণেই। আর এখানেই গল্পকারের সার্থকতা।
    এই গল্প সংকলনটি নিয়ে কিছু অপূর্ণতার কথা জানাই এবার, হয়তো ধৃষ্টতা তবুও। এই সংকলন যেমন পাঠকের জন্যে, তেমনি ভবিষ্যতের লেখকদের জন্যেও, এ যে পূর্বসূরীদের চেনার অভিজ্ঞান! কয়েকটি গল্পে লেখক পরিচিতি থাকলেও সব গল্পে নেই, তেমনই নেই গল্পগুলির প্রকাশকালের তথ্য। তাই জানা যায় না কোন সময়ের প্রেক্ষিতে উঠে এসেছিল এমন লেখা। লেখকের পরিচিতি যে কত প্রয়োজনীয় এই বিস্মৃতপ্রায় গল্পকারদের জন্য! এ বই যে ভাবীকালের জন্য, তাই সম্পাদকের তো দায় থাকেই সেই সব লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচয়কে জানানোর। তা দেওয়া যেতে পারে গল্পটির পাদটীকায় বা বইটির শেষে পরিশিষ্ট অংশে। সন্ধানী পাঠক যে খুঁজে পড়বেন সেই লেখকের লেখা। আশা রাখি পরবর্তী সংস্করণে এই সংযোজনটি ঘটবে। একটা আশার কথা এমন একটি সংকলন খন্ডে খন্ডে প্রকাশের মাধ্যমে আমরা, পাঠকেরা খুঁজে পেয়ে যাচ্ছি অন্য ভুবনের গল্পকারদের, সাহিত্যের ইতিহাস যাঁদের মনে রাখেনি।
    ছবিতে থাকতে পারে: টেক্সট
     
     
     
    আপনি, Prativa Sarker, Amar Mitra এবং আরও 32 জন
    13টি কমেন্ট
    6 বার শেয়ার করা হয়েছে
    লাইক করুন
     
    কমেন্ট করুন
     
    শেয়ার করুন
     
     
  • π | ১৮ অক্টোবর ২০২০ ১১:৫৮733021
  • এবার পুজোয় ঘরে থাকুন, গুরু ধরুন, গুরু পড়ুন!

    ঘরে বসেই বই পেয়েও জান, তাও আবার বিশেষ ছাড়ে!! 

    শারদীয়া উপলক্ষ্যে অক্টোবরের ১৮,১৯,২০ এই তিন দিন গুরুচণ্ডা৯-র যেকোনো বই কিনলে পান ২৫%ছাড় আর পাঁচশো টাকার উপর কেনাকাটায় থাকছে ৩০% ছাড়

    শুধুমাত্র তিন দিনের জন্য। ফোন অথবা হোয়াটসঅ্যাপ করতে পারেন, 9330308043 এই নাম্বারে।

    অথবা এখান থেকে বই সম্বন্ধে পড়ে নিয়ে, পছন্দমত বই সরাসরি অর্ডার করে দিন! 

    https://www.guruchandali.com/book.php

  • | ২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৯:৪৫733590
  • আমহার্স্ট স্ট্রীটের বইমেলায় গুরু থাকছে না? কেন? অন্যরা সবাই তো প্রায় থাকছে দেখছি। গুরুর কোন অ্যাড দেখছি না তো। 

  • Guruchandali | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০১:১২733676
  • ফেসবুকঃ মুখ ও মুখোশ, গুরুচণ্ডা৯র এই বইটির উদ্বোধনের জন্য কলকাতায় আছেন পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা। তিনি এবং অর্ক দেব, বইয়ের দুই লেখক, একটি সাক্ষাৎকার দিলেন বর্গীকে। শুনে দেখুন কী বললেন পরঞ্জয়রা।
    বইটির উদ্বোধন ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, কলকাতা প্রেস ক্লাবে। ভিডিওর ইউটিউব লিংকঃ
  • Guruchandali | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০১:৩৩733677
  • Guruchandali | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৫৫733678
  • আজকের বইপ্রকাশ অনুষ্ঠান।









  • Guruchandali | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:৫৯733679






  •  
  • Guruchandali | ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৯:০২734095
  • এ কোনো পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস বই না। ১৯৩০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বাঙালির ইতিহাস লেখা অতি দুরূহ কাজ। সেই সম্পূর্ণতার ধারেকাছে যাওয়া এই লেখকের কম্মো না, এখানে সে চেষ্টা করাও হয়নি। স্রেফ কিছু ভুলে যাওয়া আখ্যানকে খাপছাড়া কিন্তু কালানুক্রমিক ভাবে সাজানো হয়েছে। ভয়াবহ কোনো মৌলিকতার দাবিও এই বইয়ে নেই। কিছু বিশ্লেষণ মৌলিক, কিন্তু তথ্য যা আছে, তার কোনোটাই অজানা কিছু না। সবই জনারণ্যে উপস্থিত। তাহলে এই বই লেখাই বা হল কেন, প্রকাশই বা করা কেন? কারণ একটিই। বাঙালির কোনো ইতিহাস নেই। তার কারণ এই নয়, যে, বাংলার নানা পর্বের ইতিহাস কেউ লেখেননি। বরং উল্টোটাই। বাঙালির ইতিহাস রচনার জন্য যা উপাদান প্রয়োজন, সবই নানা জায়গায় মজুদ। কিন্তু স্রেফ তথ্যই তো ইতিহাস না। দৃষ্টিভঙ্গিহীন কোনো ইতিহাস হয়না। বাংলার ইতিহাসে ভারতীয় জাতিয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিস্তর লেখালিখি হয়েছে, লেখা হয়েছে অ-ভদ্রলোকীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, এমনকি বিশ্বমানবতার দৃষ্টিভঙ্গিও অপ্রতুল না। কিন্তু বাঙালির দৃষ্টিকোণ থেকে বাঙালির ইতিহাস, এ বস্তু অপ্রতুল। যাঁরা লিখতে পারতেন, তাঁরা সযত্নে এই কোণটি এড়িয়ে গেছেন। আশ্চর্যের কিছু নেই, এও এক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিই। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রকে বহুস্বর থেকে এককেন্দ্রিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিণত করার রাজনীতি। সে রাজনীতি মূলত স্বতঃসিদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছে। 

    এই স্বতঃসিদ্ধকে প্রশ্ন করার জন্যই এই বই। পূর্ণাঙ্গ হলে ভালো হত। কিন্তু আপাতত সদর দপ্তরে পিংপং বল ছুঁড়েই শুরু করা যাক না।

    বইটি ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


    গুরুচন্ডা৯ : বিশেষ নজর (guruchandali.com)


    মতামত দিন এখানে। 

    গুরুচন্ডালি : বুলবুলভাজা : ই-পুস্তক -- বাঙালির খাপছাড়া ইতিহাস (guruchandali.com)

     

  • π | ১৯ মে ২০২১ ২৩:২৪734419
  • #পাঠপ্রতিক্রিয়া

    বই  -  গোরা নকশাল
    লেখক -- কল্লোল লাহিড়ী
    প্রকাশক - গুরুচণ্ডা৯
    প্রথম প্রকাশ -- ২০১৭
    মূল্য ৬০ টাকা

    "একজন কিশোর ছিল , একেবারে একা
    আরও একজন ক্রমে বন্ধু হল তার ।
    দুয়ে মিলে একদিন গেল কারাগারে;
    গিয়ে দেখে তারাই তো কয়েক হাজার !"

    জেলখানার কবিতা
    কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    একটা ছোট্ট লাল টুকটুকে বই , বাংলা চটি সিরিজের বই , একটি গুরুচণ্ডালী প্রকাশনা । বইটির পিছনের মলাটে লেখা আছে , এটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত উপন্যাস নয় । অথচ  একটি দুপুর , একটি বিকাল জুড়ে হু হু করে পড়ে ফেললাম বইটি , অব্যক্ত অনুভূতিতে ।

    একটি বালকের দৃষ্টিতে, বালকের জবানীতে  যে উপন্যাস শুরু  , আটের দশক জুড়ে যে বড় হয়ে উঠছে , গঙ্গার ধারে চটকল ও শ্রমজীবী মানুষের সুখ দুঃখ,সমস্যা ও লড়াইএর পটভূমিকায়, পূর্ববঙ্গের ছিন্নমূল উদ্বাস্তু পরিবারের সাংসারিক টানাপোড়েনে লালিত যার শৈশব কৈশোর , তার বয়ানে উপন্যাসটি একটু একটু করে পাঠককে আকর্ষণ করতে থাকবে পাতার পর পাতায় ।
    দিনবদলের স্বপ্নদেখা , শারীরিক ভাবে ক্ষয়ে যাওয়া এক সন্তান যখন বইটির চতুর্থ পাতায় , উপন্যাসের রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করে , সমগ্র রচনাটিতে একটি আলাদা মাত্রা যোগ হয়ে যায় । একটু একটু করে বালক টুকনুর সাথে ভাব হয়ে যায় গোরা নকশালের । একটু একটু করে লালিমাযুক্ত হতে থাকে কাহিনিটি , সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে , ভাষায় , বর্ণনে , চরিত্রে , আদর্শবাদিতায় , মূল্যবোধে , মনুষ্যত্বে আর দুরন্ত গতিশীলতায় ।

    বইটির বক্তব্যের আকূতি, লেখার স্টাইল , সমস্তরকম জীবনবোধকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাওয়া  এই সবকিছু আমার ভালো লেগেছে । লেখক তাঁর   নিজস্ব ভঙ্গিতে ,তীব্র গতিতে, অন্তরের ভালোবাসায়  উপন্যাসটিকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন পাঠকের তোয়াক্কা না করে । কাহিনি বুননের সময় কোথাও এতটুকু আপোস করেননি তিনি , যখন যেমন খুশি বিচরণ করেছেন , যে কোনো সময়কালে , যেকোনো চরিত্র চিত্রণে , আর তাঁর এই  বেপরোয়া আচরণ উপন্যাসটিকে অপূর্ব সুন্দর করে তুলেছে অধ্যায়ে অধ্যায়ে । পাঠককে আকর্ষণ করেছে তীব্রভাবে।
    এইখানে এই বই নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে যাওয়া ধৃষ্টতা হবে , উপরন্তু পাঠকের পাঠের মজা নষ্ট করা উচিত নয় । এ শুধু পড়ে দেখার বই , অনুভব করার কথন , এক বিকেল জুড়ে এ বই পড়ে উঠলে মন ভরে থাকবে বহুক্ষণ । রাতে শুতে যাবার সময় মনে পড়ে যাবে , গোরা নকশাল ঘুমের ওষুধ খেত না , পাছে সে ঘুমিয়ে পড়ে আর  দেখতে না পায় দিনবদল ।

    অনেক দিন পড়ে 'চিলিতে গোপনে' বইটির উল্লেখ পেয়ে আমার নিজের সংগ্রহের বইটি শেল্ফ থেকে টেনে বের করি , ২০০৯ এর বইমেলায় কেনা । আবার করে পড়তে ভালো লাগছে খুব । গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর ' ক্ল্যাণ্ডেস্টাইন ইন চিলি' বইটির যিনি ভাষান্তর করেছিলেন সেই শ্রদ্ধেয় মানুষ টির আরোগ্য কামনা করছি এই মুহূর্তে ।

    শেষে বলি , বইটির ছাপা খুব পরিচ্ছন্ন , কিন্তু হয়তো আকারে আরেকটু বড় হলে পড়তে , হাতে ধরতে সুবিধা হতো ।
    লেখক ও প্রকাশককে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।

    ভাস্বতী দাশগুপ্ত
    কলকাতা ২৬

  • π | ১৯ মে ২০২১ ২৩:২৭734420
  • π | ১৯ জুন ২০২১ ০০:০৬734618
  • বাসব রায় লিখলেন, 


    কল্লোল দাশগুপ্ত অতি সহজেই ফেসবুকে লভ্য। কয়েকটা পোস্ট পড়লেই বোঝা যায় তিনি আপাদমস্তক বামপন্থী। সম্প্রতি তাঁর দুটি বই পড়লাম, একটা বড় নাম – কারাগার বধ্যভূমি ও স্মৃতিকথকতা এবং আরেকটি হল তক্কোগুলি, চরিতাবলী ও আখ্যানসমূহ। প্রকাশক গুরুচণ্ডা৯।


    লেখক ১৫ বছর বয়সে প্রথম জেলে যান। হ্যাঁ, তাঁকে তখনই নকশাল সন্দেহে ধরা হয়েছিল। কিছুদিন জেলে থাকার পর তিন বছর কলকাতায় থাকতে পারবে না এই শর্তে ছাড়া পান। দুটি বই প্রকৃতপক্ষে সিকোয়েল। প্রেক্ষাপট পশ্চিমবঙ্গ এবং আরও নির্দিষ্ট করে বললে কলকাতা। আর সময়কাল ১৯৭৪-১৯৮৬। দুটো বই টানা পড়লে মনে হবে একটিই গ্রন্থ পড়ছি। 


    বছর দশেক আগে শিলঙের হিরণ্ময় রায়ের একটি বই পড়েছিলাম, পুরনো শিলঙের সংস্কৃতি ও খেলাধুলো। সেখানে হিরণ্ময় অসাধারণ নির্লিপ্তিতে লিখেছেন ভীমসেন যোশি, অমিতাভ বচ্চন, রেখা, কেন ব্যারিংটন, মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, পিকে-চুনী-বলরামের কথা। একটা উদাহরণ দিই, ‘ভীমসেন আমাদের বাড়িতে থাকাকালীন খুব ভোরে উঠে রেওয়াজ করতেন। একদিন মাকে বললেন আপনি খুব চমৎকার লুচি বানান, এরকম জীবনে খাইনি।’ ব্যস ভীমসেন সম্পর্কে এটুকুই। আবার অমিতাভ বচ্চন সম্পর্কে তাঁর ওয়ান লাইনার, ‘খুব লম্বা। আমাদের দরজা দিয়ে ঢোকার সময় মাথা হেলিয়ে দিয়েছিল।’


    কয়েক মাস আগে মারা গেছেন গুয়াহাটির নারায়ণচন্দ্র সরকার। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটেছিল ভারত সেবাশ্রম সংঘের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দ, গান্ধীজি এবং শেখ মুজিবর রহমানের। নাহ্ এনিয়ে তিনি কখনোই উচ্চবাচ্য করতেন না। 


    কল্লোলের দুটি বইয়ে এরকম উদাহরণ যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে। চারু মজুমদার, কানু সান্যাল, জঙ্গল সাঁওতাল, শিবু সোরেন, অশোক মিত্র, ক্ষিতি গোস্বামী, যতীন চক্রবর্তীকে মিট করেছেন, কিন্তু কোনো অতিশয়োক্তি নেই। লেখকদের মধ্যে জ্যোতির্ময় দত্ত, শম্ভু রক্ষিত, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়, সমীর রায়, সংস্কৃতি জগতের হেমাঙ্গ বিশ্বাস, মৃণাল সেন, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, বাদল সরকার, প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। কিন্তু এঁরা নিছ্কই একেকটি চরিত্র, তেমন প্রশংসাও নেই, নিন্দাও নেই। 


    সত্তর দশক নিয়ে অনেকেই লিখেছেন, বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দশক। কল্লোলের এই দুটি বইকে ওই দশকের বাস্তব দলিল বললে একেবারেই ভুল বলা হবে না। প্রায় পঞ্চাশটা লিটল ম্যাগাজিন যেমন স্বদেশ, প্রস্তুতিপর্ব, অনুষ্টুপ, পদধ্বনি, পূর্বতরঙ্গ.. এগুলোর গুরুত্ব উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। পাশাপাশি রয়েছে অনেক গণসংগীতের দলের কথা। যেমন হেমাঙ্গ বিশ্বাসের মাস সিংগার্স, উত্তরপাড়ার অরণি, এখানে গান গাইতেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। 


    দুটি বইয়ের আখ্যানের অনেকটা জুড়ে রয়েছে জেলখানা পর্ব। প্রেসিডেন্সি জেলে রাজনৈতিক বন্দিরা জরুরি অবস্থার সময়ে কেমনভাবে থাকতেন, আদ্যোপান্ত লেখা রয়েছে। নকশালরা কেন ব্যর্থ হল, চারু মজুমদার কেন ধরা পড়লেন, বামফ্রন্ট সরকার গড়ার পর নকশালরা কেন ধীরে ধীরে মুছে গেল... লেখক নিজের মতো ব্যাখ্যা করেছেন। 


    যাঁরা সত্তর দশকের কলকাতা দেখেননি, এই বই দুটো ভ্রমণ করুন, দর্শন হয়ে যাবে। আড্ডা, আড্ডা এবং আড্ডা। কেওড়াতলা, কালীঘাট, রাসবিহারী, টালিগঞ্জ, ময়দান, ব্রিগেড, কলেজ স্ট্রিট, রাজাবাজার, লালবাজার, বেহালার রাস্তাঘাট মায় দোকানও উঠে এসেছে বইতে। 


    আজ মে দিবসের অনুষ্ঠান তো কাল ফ্যাসিবাদ বিরোধী কনভেনশন, পরশু গণসংগীতের অনুষ্ঠান.. হয়েই চলেছে। বৈকালিক আড্ডা শুরু হয়েছে কেওড়াতলার মোড়ে, সন্ধ্যায় ভবানীপুর আর রাসবিহারী মোড়ের শেষ যে চায়ের দোকান বন্ধ হয় সেখানে থেমেছে, তখন রাত্রি বারোটা। 


    নকশাল আন্দোলন, পুলিশি নির্যাতন, বামপন্থার আগুন, সংঘবোধ, লেখক-শিল্পীদের সামাজিক ক্রিয়াকলাপ ছবির মতো উঠে এসেছে বইদুটিতে। ওহ্ একটুকরো ফুটবলের গল্পও আছে।

  • π | ২৭ জুন ২০২১ ১২:৩১734652
  • সুকি | 49.207.***.*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৫734929
  • "নিমো গ্রামের গল্প" নিয়ে সাম্য দত্ত লিখলেনঃ
     
    আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অলিন্দে ঘোরাঘুরি করলে দুই ধরনের লেখকের সঙ্গে আপনার মোলাকাত হতে বাধ্য। এক, যাঁরা আদ্যন্ত ক্যালকেশিয়ান। গল্প যে জঁরের‌ই হোক,  তার প্রেক্ষাপট শহর কলকেতা, বা বলা ভালো, দক্ষিণ কলকাতার বাইরে নড়ে না। এঁদের ধ্যানধারণায় পশ্চিমবঙ্গের প্রান্ততম বিন্দুটির নাম হাওড়া স্টেশন, সুতরাং কল্পনার মাসল বেধড়ক ফুলিয়ে যখন গ্রামবাংলার প্রেক্ষাপটে কোনও গল্পকে নিয়ে গিয়ে ফেলেন, তখন গল্পে বর্ণিত সেই গ্রামের সঙ্গে মঙ্গলগ্রহের বিশেষ ফারাক থাকে না। অবশ্য দ্বিতীয় একটি শ্রেণীও আছেন, যাঁরা বেশক গ্রামবাংলার হার্ড রিয়ালিটির সঙ্গে পরিচিত, কিন্তু কলকাত্তাই সাহিত্যসমাজে গ্রহণযোগ্যতা লাভের মরিয়া প্রয়াসে তাঁরা তাঁদের লেখায় অ্যায়সা ফিল্টার লাগান যে, পাঠকের চোখে গ্রামবাংলার যে রূপটা ধরা পড়ে, সেটা সতত‌ই সেই 'সুজলা সুফলা' আর 'রাঙামাটির পথ'-এর গাঁজাখুরি কম্বিনেশন। 
     
    লেখক সুকান্ত ঘোষের কৃতিত্ব এখানেই যে, তিনি সযত্নে এই থোড়-বড়ি-খাড়ার গাড্ডা এড়িয়ে এক স্বতন্ত্র রাস্তার সন্ধান করেছেন। 'নিমো গ্রামের গল্প' তাই দিনের শেষে কোনও জাদু আয়না হয়ে ওঠেনি, যে আয়না মুখের সামনে ধরলে পচাকে মার্লন ব্র্যান্ডো মনে হবে। এই আয়না নির্ভেজাল আপনার শ্রীমুখখানিই দেখাবে- যে মুখে তিনদিনের না-কামানো দাড়ি, মেচেতার দাগ, অথচ প্রাণখোলা হাসলে দিব্যি ধরা পড়ে আপনার ভিতরের অমলিন চিরশিশুটির অস্তিত্ব। 
     
    পরিশেষে বলি, 'নিমো গ্রামের গল্প' গল্প‌ও বটে, আত্মজীবনী‌ও বটে। পেশাগত কারণে নিমোবাসী এবং তাঁদের জীবনযাত্রার সঙ্গে যৎকিঞ্চিৎ পরিচয় থাকায় বেশ কিছু চরিত্রের বাস্তবতা সম্পর্কে আমার মনে প্রশ্ন উঠি-উঠি করেও মিলিয়ে গেছে। তবে অনভিজ্ঞ পাঠক ক্যালকেশীয় গ্রামদর্শনের সম্পূর্ণ উল্টোবাগের এই পথচলায় বিস্তর হোঁচট খেতে পারেন। অবিশ্যি তা'তে গল্পের রসগ্রহণে তারতম্য হ‌বার কথা নয়!
     
  • সুকি | 49.207.***.*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:০১734930
  • "নিমো গ্রামের গল্প" নিয়ে বিশ্বজিত ঠাকুর লিখলেনঃ
     
    'বহুবিশ্ব' বা 'মাল্টিভার্সে'র ধারণার রমরমা এখন সাহিত্যে বা অন্য দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যমে। তাত্ত্বিক বা ফলিত বিজ্ঞানে এই ধারণা ঠিক কতটা সমর্থিত বা পরিত্যক্ত তা বোঝার মত পড়াশোনা নেই এই অধমের। কিন্তু দুচোখ মেলে এই দীনদুনিয়ার দিকে তাকালে মনে হয় প্রতিটি চেতনা তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার বিশ্ব বুনে চলেছে নিরন্তর - যারা কিছুটা এক, আবার একে অন্যের থেকে অনেকটাই স্বতন্ত্র। এই আধবুড়ো বয়সে শিল্প-উপভোগের যে সংজ্ঞা আমার কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে, তা হলো - নিজের অভিজ্ঞতার সম্ভাব্য বিশ্বটির সীমানা পের হয়ে অন্য কারো অভিজ্ঞতার অনন্য বিশ্বটিতে উঁকিঝুঁকি দেওয়া। কিশোর কুমার বহুদিন আগে সহজ করে গেয়ে গিয়েছিলেন: "শীতল শীতল পরের কথা আসুক বন্ধু কানে / মন জানলা খুলে দে না - বাতাস লাগুক প্রাণে"। 
     
    সুকান্ত ঘোষ এই বইয়ে এরকমই অনেকগুলো জানলা খুলে দিয়েছেন জোড়ালো কলমের অনায়াস খোঁচায় - আর সেই বাতাসের কী স্বাদ!!! আহা!!!
     
    বই: নিমো গ্রামের গল্প
    প্রকাশক :  গুরুচণ্ডা৯
    বিনিময়মূল্য: ৩৩০ টাকা
     
     
  • π | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৫৭734950
  • নিমো নিয়ে মানসী ভট্টাচার্য লিখেছেন, আমি এখন "নিমো গ্রামের গল্পে" ডুবে আছি। বলতে পারেন নিমোর নেশায় বুঁদ। সত্যি বলতে কি, আমার এতো বছরের জীবনে আপনার মতো লেখকের দেখা আগে পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। ভাববেন না যেন বাড়িয়ে চাড়িয়ে বলছি। আগেও বলেছি এখন আবার বলছি, এমন কিছু শব্দ আছে যা লেখার আগে অনেক লেখকই দু'বার ভাববেন। কেননা এলিট শ্রেণীর কাছে তা ভালগারিটির প্রকাশ। অথচ কী অবলীলায় আপনি লিখে গেছেন। পড়তে পড়তে কিন্তু এতটুকুও অপ্রস্তুত হচ্ছি না। 
    সত্যি, "নিমো গ্রামের গল্প" গল্পও বটে, আত্মজীবনীও বটে।
    মনেই হচ্ছে না কোথাও এতটুকু অতিরঞ্জিত আছে। কী পরিষ্কার ঝরঝরে সাবলীল লেখা। আপনার লেখার এই বিশেষ গুণটাই আপামর পাঠককুলকে বাধ্য করেছে নিমো গ্রামকে, আপনার লেখাকে এবং আপনাকে আপন করে নিতে।
    গোগ্রাসে গিলছি না ভয়ে। শেষ হয়ে গেলে তারপর?????
    পড়তে পড়তে ভেতর থেকে দমকা হাসি রোখা দায়।
     
    সবশেষে বলি, এরপর আর কারো লেখা পড়তে ভালো লাগবে তো!!!!!
     
    অনেক ধন্যবাদ এইভাবে নিমো গ্রামকে আমাদের সামনে এনে তুলে ধরার জন্য।
  • π | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৫৯734951
  • অরিন্দম মণ্ডল লিখেছেন, আজ বইটা হাতে পেলাম,অসাধারণ....আমার ফেলে আসা গ্রাম কে ফিরে পেলাম আমার, এ যেন আমার মুর্শিদাবাদ জেলার নিজের গ্রামেরই গল্প।
  • Guruchandali | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৬:১১734988
  • গুরুচণ্ডা৯ থেকে প্রকাশিত হয়েছে কমলেশ পালের গল্প সংকলন 'গুল্মদের গল্পস্বল্প'। এই সংকলনের সাতাশটি গল্পে জীবনের বয়ে চলা—মূলত প্রান্তিক। প্রতিটি গল্পই যেন আপন মুদ্রাদোষে একলা—কোথাও নর-নারীর সম্পর্কের বিচিত্র নকশা, কোথাও প্রান্তিক মানুষের অদৃশ্য শক্তিকে উপরতলার মানুষের গোপন ভয়, কখনও বা তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব গল্পের চেহারা নিয়েছে। কোথাও গল্প সাদামাটা শুরু হয়ে শেষে বিস্ফোরক, কোথাও বা অগ্রজ লেখকের কোনো গল্পের ছায়া চকিতে উঁকি দিয়েই একদম মিলিয়ে গেছে অনন্য ট্রিটমেন্টে। গল্পের শেষ কবিতার রূপ নেয় কোথাও, চিরন্তন সত্যি কথা আশ্চর্য সব উচ্চারণে বলা হতে থাকে বারবার, রোদ রক্তের বাস্তব থেকে জ্যোৎস্নার মায়ায় ঢুকে পড়ে গল্পের মানব-মানবী, আবার নাটকের কুশীলবের দৈনন্দিন ছাপিয়ে স্বপ্নে মঞ্চ আসে—সে নাটকেও মুশকিল আসান হয় না—মঞ্চ অদৃশ্য হয়ে ফিরে আসে ভাঙা আয়না, নায়ক নিজেকেই ভেংচি কাটে। অণুগল্পগুলি কখনও বিস্ফোরক,  কিংবা ষণ্ডচক্ষু বিদ্ধ করে অনায়াস শ্লেষে। সামন্ততান্ত্রিকতা কোনোদিন অ্যান্টিকে পরিণত হবে এ-বিশ্বাসেও দ্বিধা থাকে—গল্প তৈরি হয়ে যায়। কোনো কোনো গল্পে এক লেখক আসেন, আসে গল্প লেখার গল্প--হয়তো কল্পনার পক্ষীরাজ উড়তে গিয়ে এবড়োখেবড়ো জমিতে আছাড় খায় অকস্মাৎ;  কোথাও আবার শহুরে সাংবাদিক নতুন চোখে জীবনকে চিনতে চায়। সিলিং ফ্যানে ঝুলতে গিয়েও মানুষ ফিরে আসে—নবজাতকের মুখ দেখবে বলে; ভটচায বাড়ির উঠোনে ছাবিরের অশক্ত হাত মাটি খুঁড়ে চলে জন্মের নাড়ির সন্ধানে… 
     
    লেখক কমলেশ পাল। এই বিশিষ্ট বর্ষীয়ান কবি প্রচার-উজ্জ্বল হ্যালোজেন বৃত্তের বাইরে মেদুর আলোবাসী। কবিতায় সমর্পিত যাপনের হাত গলে যে ক-টি গল্প, প্রতিটিই অনন্য। তাদের একত্রে গ্রন্থনা এই প্রথম।
     
  • π | ১৫ মার্চ ২০২২ ১৭:০৯736031
  • শক্তি দত্তরায় লিখলেন, 
     
    অরূপ বৃন্দাবন ও অনান‍্য পদ
    সোমনাথ রায়

    সোমনাথ রায়ের কবিতার সঙ্গে আমার পরিচয় ফেসবুকেই। কবিতা যখন পড়লাম ভালো লাগলো। সেই ভালো কবিতার মধ্যে একটা অভিনবত্বের আবেশ যেন বহুযুগ সঞ্চিত মদিরার মতো আকৃষ্ট করলো। ছন্দ, স্তবকবিন‍্যাসে বিশৃঙ্খলা নেই আবার রক্ষনশীলতা ও প্রকট নয়। কিন্তু প্রথম সাক্ষাতে চমকে দিল তাঁর ভাষা। সহসা প্রবল ঝাঁকুনি দিল ব্রজবুলির চকিত ব‍্যবহার। তারপর লক্ষ্য করলাম পুরনো বোতলে নূতন মদ না নূতন বোতলে পুরনো মদ। চিরকালের বৃন্দাবন,আদ‍্যিকালের কানু। কানু  ছাড়া গীত নাই। বাংলা, মৈথিলভাষীবিহার, ওড়িষা, আসাম, মণিপুর, ত্রিপুরায় কতযুগ ধরে রাজঅন্তঃপুরে, গ্রামে, অরণ‍্যে কাণু ছাড়া গীত নাই। শুধু কি গোবিন্দ দাস? কতো চাষী, শ্রমিক, গোয়ালা, কেরানী, নারীপুরুষ নির্বিশেষে বলেছেন,---পাপ পরাণ আন নাহি জানত কানু কানু করি ঝুর।    এই আর্তি কিন্তু একবার হরিনামে যত পাপ হরে.....সেজন‍্য না।তাহলে তো হরিনাম ভরসা, ব্রজবুলি দরকার নেই, কানু না মৃত্যু ভয়ে, পাপমোচনে হরিনাম না। কানুকে ভালোবেসে রাধার পাপ পরাণ কানু কানু করে অশ্রুমোচন করে। এই কানু দ্বারকাধীশ কৃষ্ণ বা বিপদভঞ্জন মথুরাপতি নন তিনি ব্রজের রাখাল বংশীধারী যাঁর প্রেমকথা লেখার জন্য কবিরা সৃষ্টি করলেন, ব্রজবুলি। ইংরেজি থেকে নেওয়া বাংলা শব্দের সঙ্গে পরমনিপুনতায় ব্রজবুলির ব‍্যবহার মুগ্ধতা আনলেও আমার মতো অনতিবুদ্ধির পাঠকের মনে কিছু প্রশ্ন ছিল কিন্তু তার কাছে প্রশ্ন  রাখার সুযোগ তখন এখন কখনো হবে না। তবে উত্তর মনে হয় পেয়েছি। তাই লিখবো, সমালোচনা নয়।

    বাঙালি এবং তাদের প্রতিবেশী অঞ্চলে নবীন কিশোর রাখালরাজা প্রিয়, বৃন্দাবন যে ছেড়ে গেলে কি হল তারপর?  মাখলে গায়ে রাজার শোণিত/যুদ্ধ এবং সন্ধি খুঁজে চললে নিরন্তর।(বৃন্দাবনের গান)। শেষ স্তবক--ব্রজের গোপী করেন মথন ইতিহাসের অমৃতধন/অসমপ্রেমে উভয়ে পান শ্রীরাধার আধান/সেই নিত‍্যলীলাই বাংলাজুড়ে বৃন্দাবনের গান।  
    ভাষায় বৈশিষ্ট্য, বিষয় চিরন্তন। ব্রাহ্মন‍্য কঠোরতা দ্বারকাধিপতি বাধ‍্য হয়ে মেনেছেন, প্রিয়তমা সুন্দরী রুক্মিণী প্রবল গ্রীষ্মের দুর্বাসার রথ পায়েসলিপ্ত দেহে মহারাজ স্বামীর নির্দশে বিনা প্রতিবাদে টানতে বাধ‍্য হয়েছেন, আর ব্রজের রাখাল রাজা-- "ঐ চরণে কৃষ্ণ বাঁধা/ শ‍্যাম বিরহে স্থির পৃথিবী রইল রাধার কাছে।" ঐ চরণে কৃষ্ণ বাঁধা আছে। আছেন কি? কে জানে কিন্তু বলতে পারার অধিকার তো আছে। সুতরাং তথাপি আসিও রাধা..........যদিও এ মরা গোঠে বিতান শূন্য করে নগরী গড়িয়া ওঠে। মাধব মথুরা মত্ যাও---স্টেশনে বাঁধিনু হাত     দয়া জেনো প্রাণনাথ 
                       জনপদ ছোড়কে না যাও
    পুরানো হামার ভিটা               তোঁহা পরসাদ মিঠা
                      যশোদাকে লাল ফিরে আও
                      মাধব মথুরা মত্ যাও।
    মথুরায় যেতে দিওনা যে ঘাটে স্টীমার থামে/শুনাও মিনতি শ‍্যামে.......
    মাধব মথুরা মত্ যাও।

    মা যশোদাকে অনুরোধ, খুলোনা ওর হাতের দড়ি/আটকে রাখো রান্নাশালে।     কোলে রেখে খাওয়াও ঘি দুধ কামড় দাও ওর কণিষ্ঠাতে।

    স্বয়ংসমপূর্ণ  সাম‍্যবাদী গোকুলের ব্রজবাসী, নারীপুরুষ দুইই দুধ বেচে গোচারণ করে তাকেই দেবতা জেনে আখড়ায়,ঘরের কোণে, তুলসীতলায় পুজো। সোমনাথ রায়ের মতো তরুণ কবি সেই চিরন্তনকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন, ছেপেছে সার্থকনামা গুরুচন্ডালী প্রকাশনা। 
    মৌলবাদ থেকে বহুদূরে পৌঁছে গেছে তাঁর চেতনা।চর্যাপদ ছুঁয়েছেন। পাদ্রি পোড়ে শিশুটির সাথে, বিধর্মী পোড়ে-----আগুন জ্বালান ভগবান। কবি তাকে চেনেন তিনি প্রেমের ঠাকুর নন ঘৃণার বিস্তারী। আরো কবিতা আছে রাষ্ট্র নিয়ে  এমনকি কিষেনজীকে নিয়ে,আছেন রবীন্দ্রনাথ, আল্লাহ বিষয়ক, কুরবানি, আল্ মাহমুদের প্রতি শীর্ষক কবিতা তাঁকে শুধুই বৈষ্ণব পদকর্তার গণ্ডি থেকে মুক্তি দিয়েছে।

    সব লেখকের যেমন কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে, পাঠকেরও তেমন থাকে। সেই ত্রুটি মেনে নিয়ে থামছি। তার আগে কবিকে আমার প্রিয়সম্ভাষন জানাচ্ছি।

    সবশেষে বলি সমালোচনা করিনি আমি, পরীক্ষামূলক উদ‍্যোগের জন্য লেখক প্রকাশক উভয়কেই ধন্যবাদ দিচ্ছি। এক্সপেরিমেন্ট সর্বক্ষেত্রে স্বাগত, সাহিত‍্যে অবশ‍্য।
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন