@প্রবীরজিত, সবই 'মনে হয়' বলে চালালে তো তথ্য প্রমাণ বলে কিছু হয়না আর। যেখানে তথ্য প্রমাণ সহ বিচার হচ্ছে, সেখানে কোথায় তথ্য প্রমাণে কী ফাঁকফোকর আছে বলুন না। তার সপক্ষে তথ্য প্রমাণ থাক্ললেও দিন না। মেয়েটির মা বাবার ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। ওঁরা তো আবার কোর্টে নিজেরাই বলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ওখানেই তো বলতে পারতেন। কিছুই বলেননি। রিপোর্ট পড়ে দেখবেন। বাইরে এক এক সময়ে একেকরকম যা বলে গেছেন, তার কিছুই কোর্টে বলেননি। তদন্ত নিয়ে কোন অভিযোগও জানাননি। এই আচরণ কিকরে ব্যাখ্যা করবেন? যাঁরা বলছেন, বিচার হয়নি, অবিচার হয়েছে, সঞ্জয় দোষী নয়, অন্যরা ধর্ষণ খুনে জড়িত, তাঁদের কাছে তথ্য প্রমাণ আছে, সেই ভিত্তিতে বলছেন নাকি 'মনে হয়' বলে? থাকলে সিবিয়াই কে দেননি কেন? মামলা চকাকালীন জানাচ্ছেন না কেন? শ'খানেক সাক্ষীর শুনানি গল। শ'খানেক সিবিআই দপ্তরে বয়ান দিয়ে এসেছেন। কারুর দেওয়ায় কিছু বাধাও ছিল না। সেসবই তো সিবিয়াই কে দাখিলও করতে হচ্ছে। এবার সেখানে এসব কেন কিছু উঠে এল না? না এলে তাঁরাই বা কেন কিছু জানাচ্ছেন না? তথ্য প্রমাণ সমক্ষে আনছেন না?
উলটে এই নানা 'মনে হয়' যেসব 'তথ্যে'র ভিত্তিতে হয়েছিল, যেমন গণধর্ষণ, বহু লোকে মিলে খুন - ওই ১৫০ গ্রাম সিমেন, পেলভিক বোন ভাংা, ১১৩ টা কামড়,বপা ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়া - সব কিছু ফেক প্রমাণিত হয়েছে। ওগুলো মিথ্যাপ্রণোদিত গুজব ছিল এনিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশও নেই। যেসব ডাক্তার ময়নাতদন্তে ছিলেন, সই করেছেন, তাঁদের সবার জেরা হয়েছে, তাঁদের সই করা কাগজপত্রও বেরিয়ে পড়েছে। এঁদেরই কেউ কেউ আবার আন্দোলনেও ঢুকে বসেছিলেন, আকাউন্টে কোটি কোটি টাকা ঢুকিয়েছেন, সেও উলটে বেরিয়েছে। এসব অভিযোগ একে কোন কাউন্টারও ডাক্তাররা দিতে পারেননি।
ডাক্তারদের একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী, ওই মেডিকাল কাউন্সিল নির্বাচনে হারার পরে ( বিষাণ বসু, অর্জুন দাশ্ না সেনগুপ্ত আরো যেন কারা ছিওএন), এই আন্দোলন ব্যবহার করে মরিয়া ছিলেন কাউন্সিল বদলের জন্য, সেও এখন স্পষ্ট। কাউন্সিল নির্বাচন নিয়ে তো হাইকোর্টেও গেছিলেন ওঁরা, সে কোর্টেও কিছুই প্রমাণ করতে পারেননি। সেনিয়ে আর উচ্চবাচ্যাও করেননা।
উলটে এই আন্দোলন করে সরকারি ক্ষেত্রে কর্মবিরতি করে সাধারণ গরীব মানুষের চূড়ান্ত ভোগান্তি করিয়ে প্রায় ৬০০ জন জুনিয়র ডাক্তার বেসরকারি নার্সিংহোমে চুটিয়ে ব্যাবসা করেছেন, শুধু স্বাস্থ্য সাথীতেই কত কোটি টাকার বিল। উঠে আসা অভিযোগের কোন প্রত্যুত্তর ডাক্তাররা দিতে পারেননি। কেন, সেই প্রশ্ন করুন বরং।
এবাদে আর প্রাইভেট প্র্যাকটিসে কত ( সেটা৷ করাও বেয়াইনি), তার তো হিসেবও নেই। এই হিসেবগুলো বরং আসা উচিত। যেসব সিনিয়ররা এত উসকালেন, তাঁদের নিজেদের প্রাইভেট নার্সিংহোম বা প্র্যাকটিসেও বিরতি দিলেন নাকি সেসব আরো ফুলে ফেঁপে উঠল, তাও।
এই সরকারের হাজারটা সমস্যা আছে কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী আর ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট এক্ট করে যে বড় কর্পোরেটের লেজে পা দিয়েছিল আর তার ফল এই আন্দোলন ম্যানুফ্যাকচারিং এর ছত্রে ছত্রে পরতে পরতে ছিল, সন্দেহ নেই আর। বরং এইসব এবার সামনে আসা উচিত।
অনেক 'মনে হয়' হল।
আর হ্যাঁ, পিছনে অন্য বড় সাংগঠনিক সমর্থম, রাজনৈতিক দলের ব্যাকিং না থাকলে ১৪ আর তারপরের কিছুদিনের ওই 'স্বত:স্ফূর্ত' আন্দোলন কত হত, সেও তো বোঝা গেছে। দিদিমণিদের ( নানা ক্লেইম অনুযায়ী রিক্লেমের আসল কপিরাইট দাবি করা বিবদমান নারীরা) পরেরদিকের কলগুলোতে, যা কিনা আরো অনেক পরিকল্পনা করে, প্রভূত পোস্টারিং মাইকিং ব্যানারিং করেও, গাদা গাদা টাকা খরচ করেও ৫০- ১০০ র বেশি লোক আনতে পারছেনা, কখনো কখনো ৩০-৪০.উদ্যোক্তাগণ আর তাঁদের পরিবারবর্গই তার মধ্যে সিংহভাগ। এই তো অবস্থা।
তবে হ্যাঁ, এঁরা নিজেরা, কিছু ডাক্তারদের মতই ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর লাভবান হয়েছেন। প্রচুর ফুটেজ, কভারেজ, পুরস্কার, বই, বইয়ের প্রচার, মিনি সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস অর্জন এসবই হয়েছে। সেসবই ফলাও করে জানানও। কোন কাগজে নাম বেরল, ছবি বেরল, কোন চ্যানেলে কে বাইট দিলেন, মুখ হয়ে এলেন - ফলাও করে জানাতে কেউ ভোলেননা। এমনকি পেপারকাটিং এ নিজেদের নাম বাক্স করেও দাগিয়ে দেন।
মিছিল মিটিং এর ছবি ডিএসালরে উঠে দ্রোহের নান্দনিক ফটো গ্যালারি তৈরি হয়, এডিট করে দ্রোহের গান বসানো দ্রোহের মিছিল কার্নিভালের ভিডিও ফুটেজ দিয়ে রিল, কন্টেন্ট তৈরি হয়, দ্রোহের ইতিহাস রচনা হয়। অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান, অশ্রুতপূর্ব দ্রোহের চারণগাথা!