কালকে আমার বাড়িতে অতিথি এসেছিল। হায়দরাবাদ থেকে একটা ফেমিলি, বর বৌ বাচ্চা। এমন অনেক আসে। স্টেশন কিংবা এয়ারপোর্ট থেকে তুলে আনি গাড়ি করে, বিশ্রাম করে, খায়, গল্প করে, আবার তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিই আমরা। এরকম অজস্র লোক আসে।তা রবিবারে যারা এসেছিল ইয়ং কাপল, বর বাঙালি, বৌ নেপালি। প্রচুর ইনকাম করে বারবার বলছিল। বছরে দেড়কোটি টাকা মাইনে পাচ্ছে মাইক্রোসফটে চাকরি করে। ৩৬ বছর বয়স। সাড়ে তিনকোটি দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছে, বাচ্চাটার ছবছর বয়স আইবি বোর্ডের ইস্কুলে পড়াচ্ছে। এরই মধ্যে ৫০ এর বেশি দেশ ট্র্যাভেল করে ফেলেছে।
এসেই বিরক্তি প্রকাশ করে ফেলল ইয়োরোপটাকে বাংলাদেশি এবং মুসলমানেরা ইল্লিগ্যালি এসে নষ্ট করে দিচ্ছে বলে।
সাধারণত আমি চুপচাপ শুনি এসব ক্ষেত্রে।
এর কিছুক্ষণ আগে আমাদের টাকাপয়সা কতটা সেটা মাপতে চাচ্ছিল, বাড়িটা কেনা কিনা, কীরকম ইনকাম করি, কোথায় চাকরি করি, এইসব। পাত্তা দিচ্ছিলাম না।
কিন্তু সে ছেলে থামেই না, রাতদিনের ঝি রেখেছে বাড়িতে সেটাও বলল। ইয়োরোপ নিয়েও খুব দুশ্চিন্তা তার, মুসলমানে ভরে গেলে ক্রাইম বাড়বে, বংশবিস্তার করে ছেয়ে ফেলবে ইয়োরোপ, চিন্তার শেষ নেই তার। পশ্চিমবঙ্গেও এরকম হয়ং গেছে বলে সে হাযদরাবাদে গিয়ে থাকছে।
আমি বললাম — তুমি জানো কি এইখানে আমারদের এই দেশে সবচেয়ে বেশি মাইগ্র্যান্ট কোন দেশগুলো থেকে আসে?
— বাংলাদেশ? আফ্রিকা? ইরাক? সিরিয়া?
— উঁহু।
— ইন্ডিয়া?
— না। ইতালি এবং জার্মানি থেকে হু হু করে ইমিগ্র্যান্ট ঢুকছে।
সে হো হো করে হাসল।
— হা হা, সে তো হবেই, নেবারিং কান্ট্রিজ। তাছাড়া ওরা কো সব ইয়োরোপিয়ান।
— এই একই যুক্তিতে বাংলাদেশও ভারতের প্রতিবেশি দেশ। ওরাও এশিয়ান।
খাইয়ে দাইয়ে ওদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে তবে আমাদের শান্তি।