আর জি কর ঘটনা নিয়ে কয়েকটি কথাঃ (এখানেও লিখি, মনে হল গুরুত্বপূর্ণ)
শোনা যাচ্ছে যে হসপিটালের অধ্যক্ষ সন্দীপ রায় নাকি সেখানে সেক্স র্যাকেট থেকে শুরু করে, ড্রাগ মানে ওষুধ পাচারের একটি চক্র চালাতেন। ভিক্টিম মেয়েটি নাকি সেসব জানতে পেরে যায় তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। শুধু সরিয়ে দেওয়াই নয়, চালানো হয় পাশবিক অত্যাচার, তাও তারই বন্ধু ইন্টার্ণদের দিয়ে।
কয়েকটি লজিকাল প্রশ্নঃ
1) সরিয়ে দেওয়ার কথা বুঝ্লাম কিন্তু ঐরকম পাশবিক অত্যাচার করতে হবে কেন?
2) যদি ডাক্তার ইন্টার্ণরাই খুন করবে তো তাদের আরও অনেক উপায় জানা থাকার কথা। স্বাক্ষ্য প্রমাণ রেখে অত্যাচার করে খুন করার দরকার ছিল কি?
3) আর সন্দীপ রায় ঐ ইন্টার্ণ যারা এককালে ভাল ছাত্র ছিল, এখন ইন্টার্ণ, ভবিষ্যতে ডাক্তার হবে মানে একেবারেই নভিশ খুনী তাদেরই খুনের বরাত দেবে? যিনি এইরকম একটি ভয়ং্কর চক্র চালান তার তো আরও দাগী আসামী হাতে থাকার কথা। সুপুরী কিলার কি কম পড়িয়াছে?
4) হাসপাতাল থেকে স্বাক্ষ্য প্রমাণ লোপ করার জন্য আরও অন্য একটি বোধহয় জঘন্যতম অপরাধের স্বাক্ষ্য প্রমাণ হাসপাতালেই রেখে দেওয়া হল? খুন করার কি আর কোন জায়গা ছিল না?
এর সাথে কিছু হোয়াটস্যাপ বা ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার আছে যেমনঃ
ক) এমন ভাবে গলা টেপা হয়েছে যে চোখ দিয়ে রক্ত বেরিয়েছে, আসলে চশমার কাঁচ ভেঙে চোখে ঢুকেছিল
খ) পেলভিক বোন ভেঙে গিয়েছিল, অটোপসি রিপোর্টে কোন ফ্র্যাকচারের কথা লেখা নেই
গ) মৃতার দেহ থেকে নাকি ১৫০ গ্রাম সিমেন পাওয়া গেছে, এর জন্য ১০০ জন পুরুষ লাগে।
এর পরে জ্নৈক সোমা মুখার্জীর একটি ভয়েস ভাইরাল হয়েছে সেখানে বক্তব্য শুরু হয় "জানিস পঃবঃ এর সমস্ত সরকারী হাসপাতালে নাকি অধ্যক্ষরা এইরকম দুর্নীতি চালায়" দিয়ে। তাহলে বিশ্বাস করে নিতে হয় গত এগার, বারো বছরে যত ডাক্তার সরকারী হাসপাতাল থেকে পাশ করেছে সবাই দুর্নীতি করেছে, আসলে ডাক্তার হবার কোন যোগ্যতা তাদের নেই। কিন্তু বেসরকারী হাসপাতালের কথা কিছু বলা নেই। সেগুলো সব ভালো।
তা এসবের অংক মেলে নি, মিলল না যখন তখন আরও একটু ভাবলাম। তাতে মনে হল, আরে পুরো ন্যারেটিভটাই সুচতুর ভাবে ফেক খবর, ইন্ফোর মাধ্যমে বদলে দেওয়া হচ্ছে। কেন? মমতার রাজ্যে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে কার লাভ? হয় বিজেপির নয় সিপিএমের মানে যারা ওনাকে গদি থেকে সরাতে চাইছে। ইমোশন এখন হাই তাই সেই সুযোগ নেওয়া যাক।
তা সে নিক, মমতা নিজেও নিয়েছিলেন সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের সময়।
আপত্তিটা অন্য জায়গায়, ধর্ষণ একটি পাশবিক ঘটনা। বহুভাবে প্রমাণিত যে ধর্ষক কামের জন্য ধর্ষণ করে না, করে ক্ষমতার আস্ফালন দেখাতে, তারপরে পাশবিক ভাবে খুন আরও ভয়ংকর। দরকার সঠিক তদন্ত এবং অপরাধীর মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা যাতে এর থেকে সমাজে পরিবর্তন আনা যায়। সেটা না হলে দুটো ভয়ঃ একতো, যদি অপরাধী ধরা না পরে, তাহলে ভবিষ্যতে সে আবারও এরকম একটি অপরাধ করতে পারে, দুই, যে স্টাডি করা সম্ভব সেটা হবে না, তাতে লংটার্মে যে চেঞ্জ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তাও হবে না।
আর সবথেকে বড় কথা, মেয়েটির পরিবারের একটা ক্লোজার দরকার। জন আন্দোলন যা হচ্ছে তা যদি এদিকে ঘোরে তাহলে ভালো হয়। গদি পাল্টানোর রাজনীতি যাদের করার তাদের করতে দিন না।