(Ref ২৮.১/০০:৪৩)
“গুরুতে লেখালিখি, আলাপচারিতায় এমন বহু বাগবিধি আছে যেগুলো ঠিক ব্যাখ্যা করা যায় না, বুঝে নিতে হয়, … আমরা ধরে নিই পাঠক জানেন … যিনি হিচ হাইকারস গাইড টু দ্য গ্যালাকসি পড়েন নি, তাঁর কাছে কেউ যদি বলে মশাই, জগতে ৪২ ই শেষ কথা, জীবনের সারার্থ, তো যাঁকে বলা হল তাঁর কাছে কথাটা শিশিবোতল ঠেকবে বই কি। এটার মধ্যে কিন্তু উন্নাসিকতা বা কাউকে আঘাত করার ব্যাপার নেই, কিছু অব্যক্ত ব্যাপার বুঝে নিতে হয়।”
আপনার উপরোক্ত রেসপন্স থেকে মনে হয়েছে আপনি আমার মন্তব্যে “উন্নাসিকতা” প্রসঙ্গের বুলস আইটা মিস করেছেন। অথচ আমি বিশদে, প্রাঞ্জলভাবে বলেছিলাম। আবার এই ভাটের পাতাতেই একবার আপনার একটি জিজ্ঞাসা দেখে মনে হয়েছিল, এটা তো না বোঝার মতো কিছু নয়? সে প্রসঙ্গটা শিশিবোতল বা ৪২ গোছের ইংগিতে ছিল না - সপাট আলোচনা ছিল। সামনের জন কিন্তু আপনার জিজ্ঞাসার উত্তর ব্যঙ্গ না করে সহজভাবে দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গটা মনে পড়লে আপনাকে জানাবো।
হযবরল পড়ি নি। ফলে বাঙ্গালী হিসেবে আমার সাংস্কৃতিক চেতনা অসম্পূর্ণ। মেনে নিচ্ছি। তাই আমি :।: এর মন্তব্যে “শিশিবোতল” শব্দটা বুঝতে পারিনি। আপনার ফর্মুলা অনুযায়ী পাবলিক ফোরামে করা মন্তব্যে ইংগিত না বুঝলে চেপে যাওয়া উচিত ছিল। তাতে অন্ততঃ আমার বোকামি উন্মুক্ত হোতোনা। তবে জিজ্ঞাসা করলে আমার নিম্ন-বুদ্ধিমত্তা উন্মুক্ত হয়ে যাবে জেনেও লিখেছিলাম - “শিশিবোতল” শব্দটি আগে শুনিনি। এর মর্মার্থ জানালে খুশি হবো।” - কারণ কনফুসিয়াসের বাণীটি মনে ধরেছিল The man who asks a question is a fool for a minute, the man who does not ask is a fool for life.
শিশিবোতল প্রসঙ্গে r2h কিন্তু বিদ্রুপ না করে সটান জানিয়েছিল - ওটা হযবরল তে নেড়ার গানের অংশে আছে। উনি শিশিবোতল-এর মর্মার্থ জানলেও আমায় তা জানাননি। শব্দটা কোথায় আছে, শুধুমাত্র সেই সূত্রটুকু দিয়েছেন। তাতেই আমি বিনীতভাবে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে (@র২হ - সূত্র দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ) লিখেছিলাম - এবার :।:- এর মন্তব্য “এইটা বেশ শিশিবোতল লাগলো।” - বোঝা গেল। অর্থাৎ আমার দেওয়া শিরোনাম - “শংকর ভাষ্যে - বশী বন্দনা” - :।: এর কাছে হযবরল-তে নেড়ার গানে বর্ণিত শিশিবোতল সদৃশ মাথামুন্ডুহীন লেগেছে। অর্থাৎ ওটা থেকে - লেখাটির যে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় - শংকরের লেখনীতে বশী বন্দনা - এটা বোঝার কোনো সম্ভাবনাই নেই। বেশ। একটা নতুন পার্সপেক্টিভ পেলাম।”
আমি তো মর্মার্থের বদলে “শিশিবোতল” এর সূত্র পেয়ে মর্মাহত হইনি, তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে যা বোঝার আমার মতো করে বুঝে নিয়েছিলাম। তবু কেন যে আপনি সেটা “ব্যাখ্যা” অবধি টানলেন বুঝলাম না। তবে নিম্নমেধা সত্ত্বেও এটা বুঝেছি সব জিনিস সবাইকে পাবলিকলি বা প্রাইভেটলিও ব্যাখ্যা করা যায় না। তাছাড়া মন্তব্যের মাঝে শিশিবোতল বা ৪২ গোছের কিছু শব্দবন্ধ ব্যবহার করাকেও আমি আপনার বর্ণিত “ভাষাগত উন্নাসিকতা” ভাবিনি। এখানে আপনার চিন্তাতরঙ্গ বুলস আই থেকে ডিভিয়েট করে গেছে। বলেছি - কাউকে এমন শব্দবন্ধ বোঝার সূত্র দিলে (ব্যাখ্যা নয় - যেমন আমি কায়দা না মেরে সরলভাবে চেয়েছি ও r2h সহজভাবে দিয়েছে) যখন কেউ তা “মানে বই” বলে উল্লেখ করে, তখন তাকে আর যাই হোক, আমার পক্ষে অন্ততঃ, কোনো প্রফেট অনুসরণকারী বলে মনে হয় না।
এই প্রেক্ষিতেই এসেছে সুমন গুপ্তর - “অতীতচারী গর্বিত বাঙালি ও এক 'উড়ে'র গল্প” পোষ্টের উল্লেখ। বিহারী, ওড়িয়া, মাড়োয়ারীদের একদা আঁতেল বাঙ্গালী যথাক্রমে খোট্টা, উড়ে, মাওড়া বলে উল্লেখ করতো। এখনও কেউ কেউ ভাবে হয়তো। এই তাৎপর্যটা r2h ধরতে পারলেন না। তেমনই এক খোট্টা ইলেকশন স্ট্র্যাটেজিস্ট পিকে কখনো মোদী, কখনো মমতাকে ভোটে জেতাতে সাহায্য করে। আর ইন্টেলেকচুয়্যাল বাঙালি তা নিয়ে ভার্চুয়ালি ছদ্মবেশে আলোচনা করে। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।
বর্তমান প্রসঙ্গে বলি - ভাটে পাই ম্যাডামের ডেভিল খাওয়ার ছবি নিয়ে ডিসির হালকা রসিকতার ওপর আমিও একটা হালকা রসিকতাই করেছিলাম। তো ডিসি কিছু বললেন না। যাঁকে নিয়ে রসিকতা করেছিলাম সেই পাই ম্যাডামও অফেন্স নিলেন না (এখনো অবধি) কিন্তু সুকুমার থেকে নবারুণে অবলীলায় যাতায়াতে সক্ষম উবের ইন্টেলেকচ্যুয়াল :-) টপাস করে আমায় বিদ্রুপ করলেন এই বলে - “হযবরল কি পাগলা দাশুর রেফের সাথে যাদের মানেবই দিতে হয় তাদের মজা ঘাস বিচালি টাইপ।”
অর্থাৎ স্মাইলিবাবুর (বা বিবির বা অন্যকিছুর) দর্শন ভিন্ন - On stupid question - sarcastic answer is obligatory. (বাণীটা নেট থেকে নেওয়া)। তবে কিনা হলেই বা নিম্নমেধার তবু ৬৩+ কোনো বয়স্কজনকে নিকের আড়াল থেকে পাবলিকলি হিউমিলিয়েট করার উদগ্ৰ বাসনা দমন করাও কবীর সুমন বর্ণিত, r2h উল্লেখিত, প্রফেট সুকুমার রায়ে সংম্পৃক্ত কারুর পক্ষে কঠিন। সুমনও পারেননি। তাই রেকর্ড হচ্ছে না জেনে ফোনে অকথ্য গালাগালি দিয়ে সুমন যথেষ্ট ট্রোলড্ হয়েছিলেন। স্মাইলি থেকে সুমন - পাবলিকলি এমন আচরণ আবার আমার চোখে হাঁসজারু বা বকচ্ছপ গোছের লাগে। তাই অধমের মনে হয় - Acquiring knowledge is relatively difficult but imbibing its essence is far more difficult. এটা নেট থেকে ঝাড়িনি, আমার নিজস্ব অনুভব, ৩৮% প্রেক্ষাপট থেকে ব্যক্ত করলাম।
বিগত চার বছর ধরে গুরুচণ্ডালিতে এলেও ভাটের পাতায় কালেভদ্রে গিয়েই মনে হয়েছে ওখানে আলপিন থেকে এ্যাটম বম্ব অবধি বিস্তৃত ক্ষেত্রে এবং সদা পরিবর্তনশীল কারেন্ট টপিকে আলোচনা হয়। বানভাসি শ্যাওলার মতো টপিক বদলাতে থাকে। বহুজন তাদের বিবিধ এবং অমেয় জ্ঞানের ভাণ্ডার তথায় উজাড় করে দেন। আমার কাছে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরাছোঁয়ার অতীত এবং distraction বলে মনে হয়। তাই ওখানে বিশেষ যাই না, মন্তব্যও করি না।
বরং নিজের বা অন্যের লেখার ওপর মন্তব্য পড়তে পছন্দ করি। তার ফলে ঐ লেখার ওপর নানাবিধ পার্সপেক্টিভ পাওয়া যায়। কখনো অন্যের লেখার ওপর মন্তব্য করতেও স্বচ্ছন্দ বোধ করি। তবু তখনও যথাসম্ভব Appreciative comment or constructive feedback দিতে চেষ্টা করি। এবং কেউ খোঁচামারা কথা না বললে আমিও অযথা শ্লেষাত্মক আঙ্গিক এড়িয়ে চলি। সেখানে তবু একটু ফোকাসড্ আলোচনা হয়। যেমন আমার সাম্প্রতিক লেখা - “শংকর ভাষ্যে - বশী বন্দনা”। ওখানে বেশ কিছু সুচিন্তিত মন্তব্য দেখলাম। আপনারও ছিল। শেষে জনৈক =)) ২৪.১/১৮:৩০ বেশ কিছু রেফারেন্স দিলেন। মনে হয় বেশ অন্বেষণ করতে হয়েছে তাকে। তাই তাকে জানাই কুর্নিশ।
তবে কখনো পাঠকের মন্তব্য লেখার বিষয়বস্তু ছেড়ে স্টিয়ারিং রড কাটা গাড়ির মতো এদিক ওদিক দৌড়ায়। যেমন - আগেও বলেছি - রঞ্জন রায়ের “কন্যাকুমারী” লেখায় কিছু পাঠক লেখার একটি ছোট্ট বিষয় - উপোষ নিয়ে উদোম আলোচনা শুরু করে দিলেন। এইসব দেখে, নিম্নমেধার আমারও হাসি পায় তবে পাবলিকলি হাসি না। সুকুমার বোঝা এবং না বোঝা পাবলিকের মধ্যে লেভেলের নানা তফাতের মাঝে - এটাও একটা। কখন কীভাবে হাসতে হয়।