আর সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ, বিশেষতঃ ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জার অ্যাপের ব্যাপারে আমার সুষ্পষ্ট বক্তব্য এবং তীব্র পোতিবাদ আছে।
রমিতবাবুর নটা পঞ্চাশের উক্তি -
"এই কারণে হোয়াটস্যাপের বদলি হিসেবে সিগন্যাল app টা এখনো ঠিকমতো হালে পানি পেলো না, কিন্তু টেলিগ্রাম ভালোই চলছে।"
এর উপর টীকা হিসেবে জানাই -উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট, ফ্রী সফটওয়্যার মুভমেন্ট, মানে গ্নু লিনাক্স ইত্যাদি মুক্ত অ্যানার্কিস্ট ভাবধারায় তৈরি। সেই মুক্ত ইন্টারনেটের নিরপেক্ষতা মানে বাংলায় যাকে নেট নিউট্রালিটি বলেন সেই নেট নিউট্রালিটি ক্ষুন্ন হয় যদি কোন এক ব্যক্তি বা এক প্রতিষ্ঠানের হাতে কোন বিষয়ের অ্যবসলিউট কন্ট্রোল চলে যায়। এক্ষেত্রে মানে সোস্যাল ইন্স্ট্যান্ট মেসেঞ্জার, যেমন - হোয়াটস্যাপ, টেলিগ্রাম, সিগন্যাল, গুগুল চ্যাট বা মাইক্রোসফ্ট স্কাইপের ক্ষেত্রে এর পুরো কনট্রোল স্ব স্ব কোম্পানীর হাতে। ফলে ইলন মাস্ক ভোররাতে স্বপ্ন দেখলে পরের দিন টুইটারের নীলপাখি উড়ে গিয়ে কিম্ভুত কালো এক্স হয়ে যায়। লোগো যা খুশী হোক গায়ে লাগে না, কিন্তু হোয়াটস্যাপে থাকা আপনার মেসেজ পেতে আমাকে কেন হোয়াটস্যাপ ব্যবহার করতে হবে?আমি সিগন্যালে বসে কেন টেলিগ্রাম বা হোয়াটস্যাপের মেসেজ পাব না, কেন ঐসবে থাকা লোকজনকে আমার বক্তব্য জানাতে পারব না? এটা আর যাই হোক নিরপেক্ষ ব্যপার নয়।
আমার বাজি ঐ কনট্রোলড ফ্র্যাগমেন্টেড ইউনিভার্স নয়, ফেডারেটেড ফেডিভার্স। (সে আপনারা আমায় যতই পিসীপন্থী ফেডবাদী বলুন!!) ইলন মাস্কের হাতে চলে যাবার পর, পাখি ফুড়ুত হবার আগেই আমি টুইটার ছেড়ে ম্যাস্টোডনে চলে গেছি। আমার ২০০৮ সালের টুইটার অ্যাকাউন্ট, ত্যাগ করতে দুৃঃখ হয়েছিল বই কি! ঠিক একরকমের দুঃখ হয়েছিল ২০০৫ সালে পঞ্চাশ বছরের পুরোনো ক্যালকাটা টেলিফোনসের ল্যাণ্ডলাইন ছাড়তে। হয়ত এর চেয়েও বেশী কষ্ট হবে যদি কোনদিন বৌবাজারের ১০০ (ছ বছর কম) বছরের পুরোনো ভাড়াবাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে যেতে হয়। এ কষ্টে আমি আনন্দ পাই না, তাই আমি চাই সাস্টেনেবল ফেডারেটেড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে। ম্যাস্টোডনের প্রোটেকল কোন একটা কোম্পানীর কুক্ষিগত হওয়া থেকে একে বাঁচায়, ঠিক যেমন গ্নু জিপিএল, লিনাক্সকে ইউনিক্স হবার পরিনতি থেকে বাঁচায়। প্রতিটি ম্যাস্টোডন গ্রুপের/সার্ভারের পরিচালকের কিছু নীতি আছে, কোথাও ধর্মীয় আলোচনায় বাধা তো কোথাও পলিটিক্যাল আলোচনায় বা টেকনিক্যাল আলোচনায় আপত্তি। কারো সঙ্গে যদি আমার না পোষায় তো আমার নিজের ম্যাস্টোডন সার্ভার চালাতে কেউ বাধা দিচ্ছে না। যদি দেশের আইন পারমিট করে।
আজ আত্মসচেতন বা নিজের অধিকার সচেতন মানুষের অভাবে এই কোম্পানীগুলো সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আড়াল থেকে জনমত ম্যনিপুলেশনের বিশ্রী কারবার করতে পারছে। কিন্তু ক বছর আগেও দিন এমন ছিল না। তখন গুগুলচ্যাটের পূর্বসূরী গুগুল টক XMPP বা জ্যাবার প্রোটোকল ব্যবহার করত। আমি নিজে জ্যাবার ক্লায়েন্টই ব্যবহার করতাম। তাতে ইয়াহু, গুগুল টক, মাইক্রোসফট মেসেঞ্জার, এওএল মেসেঞ্জার আরো সমস্ত ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জারের মেসেজই একসঙ্গে একটি এপ্লিকেশনেই দেখা যেত এবং মেসেজ করা যেত, কারন সবাই ঐ জ্যাবার প্রোটোকল মেনে চলত। ক্রমে সবাই নিজের নিজের আয়ত্বে অশিক্ষিত জনগনকে টানতে পেরে এই ফ্র্যাগমেন্টেড মেসেঞ্জার ইউনিভার্সের সৃষ্টি করেছে। নিজে তাতে অংশ নিয়ে, এখন 'কি ছিল-কি হল' বলে আক্ষেপ করে কোনো লাভ নেই। কই, ইমেল তো এখনো ফেডারেটেড আছে, একটা কোম্পানীর কুক্ষিগত হয়ে যায় নি। সবাই পোস্ট অফিস প্রোটোকল মেনে চলে। কারন একটি কোম্পানীর আয়ত্বে না গেলেই লাভ সেইটা আগে বুঝতে হবে। আমার বন্ধু ঐ কোম্পানীর মেসেঞ্জার ব্যবহার করে বলেই আমাকেও সেই কোম্পানীর কাছে খত লিখে তাদের মেসেঞ্জার ব্যবহার করতে হবে এবং সে মেসেঞ্জারের মেসেজ বাইরের কেউ পাবে না (মাননীয় অমিতজী ছাড়া) এটা আপনারা শিক্ষিত লোক হয়ে মেনে নেন কি করে আমি তাই বুঝে পাই না। আজ মানূুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া নিরপেক্ষতা হারিয়েছে, কাল আপনাদের কাজে লাগিয়েই ইমেল প্রোভাইডাররা নিজেদের নিজেদের প্রোপ্রায়েটারী প্রোটোকল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়বে এবং তখন আপনারাই বলতে শুরু করবেন " হটমেলের বদলী হিসেবে ইয়াহু মেলটা হালে পানি পেল না, কিন্তু জিমেল ভালই চলছে। সেই অন্ধকার দিনে জিমেলের মেল পেতে সবাইকে জিমেলের সাবস্ক্রাইবার হতে হবে।
এয়ারটেল অলরেডী একবার চেষ্টা করেছে সফল হয় নি, সম্প্রতি কদিন হল আবার দেখছি জিওর সঙ্গে মিলে ভারতে নেট নিউট্রালিটি ভাঙ্গবার আপ্রান চেষ্টা করছে। ওদের বক্তব্য হল নেটফ্লিক্স বা আমাজন প্রাইম প্রচুর ডাটা স্ট্রীম করে, তাই ওদের নেটওয়ার্ক চোকড হয়, ওদের ইন্ফ্রাস্ট্রাকচার বাড়ানো প্রয়োজন, তাই তার ভার ওরা জনগনের ওপর চাপাতে চায় না, যেসব বড় কোম্পানী(Netflix, Amazon) ওদের ইনফ্রাস্ট্রাক্চারে স্ট্রেস সৃষ্টি করছে তাদের ওদেরকে পে করতে হবে। এটা নেট নিউট্রালিটির ঘোর বিরোধী। কারন, আমাজন বা নেটফ্লিক্স যে ব্যান্ডউইথ নিয়ে রেখেছে তারে বেশী ডাটা তারা নেটে ছাড়তে পারে না। তোমার (Airtel, Jio) নেটওয়ার্ক্ যদি চোক্ড হয় তবে তার একটি কারন অবশ্যই হতে হবে, যে- তুমি তোমার ক্লায়েন্টদের(মানে আমাদের) যে ব্যাণ্ডউইথ বলেছ তা তুমি দিচ্ছ না, অনেক লোককে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কম ইনফ্রাস্ট্রাকচার বরাদ্দ করেছ তাদের জন্য। এটাই এয়ারটেল বা জিও এবং অন্যান্যরা করে থাকে। আপনাকে বলে 'আপটু' এত এমবিপিএস স্পীড। আসলে তত এমবিপিএস ওরা দশজনের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ওরা জানে যে সবাই একসঙ্গে বসে নেটের পুরো ব্যাণ্ডউইথ ব্যবহার করে কিছু করবে না। ব্যাঙ্কে সব গ্রাহক একসঙ্গে টাকা তুললে ব্যাঙ্ক সে মূহুর্তে ফেল করবে, এরাও তাইই। এরা সবাই নিজেদের অক্ষমতার দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের নেটওয়ার্কে সাবস্ক্রাইবার বাড়িয়ে তারপর নিজেদের স্বাধীন ঘোষনা করতে চায়। আমরা সবাই জেনে বা না জেনে তাদের স্বার্থকে সমর্থন করে চলেছি।
ফেসবুকের উদ্দেশ্য জেনে আমি কোনদিন ফেসবুকে নামই লেখাই নি। হোয়াটস্যাপ ছেড়েছি সেটা ফেসবুকের হাতে যাওয়া মাত্র। সম্প্রতি ছাড়লাম টুইটার (অধুনা এক্স)। আমি সব ছেড়ে মাননীয় মোদীজীর মত ঝোলা উঠিয়ে চলে যাব না। এদের বিরুদ্ধে দাঁত কামড়ে ফেডারেটেড অ্যাপ দিয়ে ফাইট করব। উইকিতে জিতেছি, গ্লু লিনাক্সে জিতেছি, আবার জিতব। ভবিষ্যত আমাদের, অ্যানার্কিস্টদের।