এই ভদ্রলোককে নিয়ে আমার মজার অভিজ্ঞতা আছে। উনি একদিন বলে একটা কাগজে কলাম লিখতাম। উনি ছিলেন সম্পাদক। মালিকও বোধহয়, আমি ঠিক জানিনা। সেটা ২০১১-১২-১৩ সাল। মমতার বিরুদ্ধে প্রথম আওয়াজগুলো শোনা যাচ্ছে। নোনাডাঙা ইত্যাদি। আমার কলামটা ছিল খিল্লির। তাতে আমি মমতাকে নিয়ে একটা খিল্লি করি। এবং আমাকে জানানো হয়, এই খিল্লি ছাপা যাবেনা।
তাতে আমি কিছু মনে করিনি। আমার যেমন লেখার অধিকার, সম্পাদকেরও তেমনই না ছাপার অধিকার। তাতে কোনো চাপ নেই। কিন্তু ইচ্ছেমতো লেখা না গেলে, আমি লিখিনা। অতএব ওখানে লেখা বন্ধ করি। এবং পয়েন্টটা নোট করি।
এরপর উনি যান এই সময়ে। কাগজটা চালু হয় সেই সময়। এবার ব্যক্তি আমি না, সুমন গুরুর হয়েই রবিবার দিন একটা পাতা করতে বলেন। পনেরো দিনে একটা। সেটার নাম ছিল প্যাঁচালি। কিছু সংখ্যা বেরোনোর পর, এটাতেও একটা ক্যাচাল হয়। ওঁর বিভাগীয় সম্পাদকের সঙ্গে। আমাদের পাতায়, শাক্যর একটা লেখা ছিল, যার প্রথম লাইন এরকম ছিল, "জ্যোতি বসুই বাংলার একমাত্র লোক যিনি শেখ হাসিনাকেও বলতে পারেন, আমিও হাসিনা"। এই লাইনটা ওঁরা ছাপতে চাননা। আপাতদৃষ্টিতে এতে নাকি জ্যোতিবাবুকে অপমান করা হচ্ছে। এইটা আমার হাস্যকর লাগে। এবং আমি এবার একটু খারাপ ভাবেই কথা বলি। ওই লাইন কাটা যাবেনাও বলি, কারণ, লেখকের উপর কলম চালানো যাবেনা। অতঃপর সেই পাতাটাও বন্ধ হয়। সে ঠিকই আছে, যার যা অবস্থান। কিন্তু পয়েন্টটা এবারও নোট করি। এর আগে যাঁরা মমতার সম্মান নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলেন, তাঁরা এবার জ্যোতিবাবুর সম্মান নিয়ে চিন্তিত হচ্ছেন খুব। যদিও কোনোটাতেই ব্যক্তিগত অসম্মান কিছু ছিলনা।
এরপর তো আর যোগাযোগ হয়নি, বইমেলায় দেখা ছাড়া। তারপর উনি জেলে-টেলে গেলেন। কোনো কাজের খবর এমনিও পাওয়া যায়না, মিডিয়া ব্ল্যাকআউটও করল। গৌতম ভট্টাচার্য নাকি উদ্যোগ নিয়ে করিয়েছিলেন। তা, ফিরে আসার পর, উনি দেখলাম, মমতা বা জ্যোতিবাবু কারও সম্মান নিয়েই বিশেষ চিন্তিত নন আর। এখন ওঁর অবস্থান সবাই জানে। ভুবনেশ্বরে কী হয়েছিল, সে নিয়ে কোনো উল্লেখ আর শোনা যায়না।
সব মিলিয়ে পাঁচিল থেকে মজাই লাগে। সে রামও নেই, সে রবিবারোয়রিও নেই, কিন্তু গপ্পোটা থেকে গেছে। আমি নাকি 'মমতাপন্থী', আমার থেকে উনি মমতার অসম্মান রুখেছিলেন। শাক্য হল সিপিএম লেখক, তার হাত থেকে জ্যোতিবাবুর অসম্মান আটকেছিলেন। তাপ্পর কী হল? না, কয়েকবছরের মধ্যে পাশা উল্টে গেল। উনি লাগাতার মমতার বিরুদ্ধে বলে চলেছেন। ইন্টারনেট-বিজেপি এবং ইন্টারনেট-সিপিএমরা একযোগে সেসব শেয়ার করে চলেছে। ওঁর এবং তাদের, কারোরই কোনো প্রশ্ন নেই। না, এসবই নাগপুরী ঐক্য বলে মনে করিনা। অত সরল কিছু না। কিন্তু মজার তো বটেই।