খোরাক ,ইন্টারেস্টিং :3 :-
উফ বাবা বাবাঃ ,তিতিবিরক্ত হয়ে গেলাম ,একে নুপূর শর্মা ঘটনার জের মিটলো কি না মিটলো ,আবার মহুয়া মৈত্র র বক্তব্য নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে , আমি একজন সাধারণ হিন্দু ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বলব , মহুয়া মৈত্র মা কালীকে মদ্য-মাংস উৎসর্গ করার যে প্রথা উল্লেখ করেছেন , তা অনেক জায়গাতেই হয় ও তথ্যটি সঠিক ,এই প্রথা আমাদের নিজেদের শাক্ত গৃহে কুলাচারী বামাকালী পুজোতে বহু বছর হয়ে আসছে আবার পশ্চিমবঙ্গ ,উড়িষ্যা ,আসাম,অন্ধ্র,ত্রিপুরা ব্যাপী যে কালীকুল তন্ত্রসাধনা পীঠস্থল ,সেখানে বহু তান্ত্রিক পূজাতেই দেবীকে তাঁর ভিন্ন ভিন্ন রূপে আরাধনাকালে মদ্য-মাংস অর্পণ করা হয় , যদিও তন্ত্রশাস্ত্রে মদ্য,মাংস,মৎস্য,মৈথুন ও মুদ্রা এই পঞ্চ ম-কার এর আলাদা আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আছে ,কিন্ত তামসীপূজায় দেবীকে জাগতিক মদ্য,মাংস,মৎস্য উৎসর্গ করা হয় , তারাপীঠেও দেবী তারাকে পোড়া শোলমাছ ,দূর্গাপুজোয় দশমীতে দেবীকে মাছ-ভাত বা নেপালের মতো হিন্দুরাষ্ট্রে পশুপতিনাথকে বা উজ্জ্বয়িনীর কালভৈরবকে মদ্য প্রদান সবই হয় হিন্দু বিভিন্ন উপাসনাস্থলে ,আমাদের দেবতারা অন্য ধর্মের দেবতাদের মতো গোঁড়া ,কঠোর এবং নিষ্ঠুর ,নির্মম ,পাষাণ,অপার্থিব ,অলৌকিক নন ,তাঁরা আমাদের মতোই গাঁজা থেকে আরম্ভ করে সমস্ত নেশা করেন ,মাংস খান ,ফলমূল খান , মিষ্টান্ন খান ,অন্তত আমরা আমাদের দেবতাকে ,আমরা যা খাই ,যা পরি ,যেমনভাবে প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রা চর্চা করি ,সেরূপেই আমরা আমাদের দেবতাদের দেখি ,আমাদের ঈশ্বর আমাদের কাছে আমাদের মতো হয়েই ধরা দেন মাটির পৃথিবীতে , আমাদের দেবতারা মানুষী দোষ-গুণ সম্বলিত হয়ে আমাদের ,মানুষদের কাছে নেমে আসেন ,মানুষেরই মধ্যে দেবত্বের উন্মেষ ঘটানোর জন্য ,তাঁরা নিজেরাও ভুলত্রুটির উর্ধ্বে নন , সেই সব দোষগুণ নিয়েই তাঁরা আপন মহিমায় দেবতারূপে ভাস্বর , ঠিক যেমন দোষগুণে আমরাও মানুষ।
সুতরাং মহুয়া মৈত্রর বক্তব্য সঠিক ও হিন্দুশাস্ত্র সম্মত।এবার আসি নুপূর শর্মার বক্তব্যে , তাঁর বক্তব্য ও ইসলামী ধর্মগ্রন্থ অনুসারে সঠিক । কিন্ত সমস্যা হলো ,মহুয়া মৈত্র যখন মা কালীকে মদ্যপায়ী ,মাংসভুক দেবী বলছেন ,তখন কোনো অপমান বা নাকসিঁটকোনোর সুর ব্যবহার করেননি ,কিন্ত নুপূর শর্মা ঠিক সেই সুর ব্যবহার করেই নবী মহম্মদের সাথে অপরিণতবয়স্কা কন্যার বিবাহের কথা উল্লেখ করেছেন ,ভীমরুলের চাক ,অর্থাৎ গোঁড়া ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক হিংস্র বর্বর অশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরাট যে জেহাদী অংশটি ,তাদের আঘাত করে উত্তেজিত করে তুলতে ,এবং ফল যা হবার তাই হয়েছে ,ট্রেন-বাস পুড়েছে ,অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ,মানুষের প্রাণ গেছে , এখানে নুপূর শর্মার কথাটি ভুল ছিল না ,কিন্ত তাঁর ব্যবহৃত টোনটি ও এই টোনে কথা বলার পিছনে hidden agenda টি ভুল ছিল,তিনি জানতেন , তাঁর এই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য ,কটু সত্যি কথা হলেও ,ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ও হিংসাত্মক কার্যকলাপের কারণ হবে , সবার তো সত্যি কথা হজম করার ক্ষমতা থাকে না , মুসলিমদের ও অধিকাংশের নেই , কিন্ত এই মুসলিমদের অসহনশীলতার কথা জেনেও তিনি পাবলিক মিডিয়ায় এই মন্তব্য করেছেন ,তাঁর মন্তব্য ভুল বলেনি কিন্ত সুপ্রিম কোর্ট ,কিন্ত তাঁর জনপ্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব জ্ঞানহীন উস্কানিমূলক মন্তব্য করার প্রবণতাকে তিরস্কার করেছে। একে বলা যায় "কথার দোষে বার্তা নষ্ট।"
এখানে কারোর মনে আছে কি না জানিনা , আগেকার দিনে স্কুলে কোন মারকুটে ছাত্রের সাথে কেউ যদি পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া বাধাত (ন্যয্য কথা বললেও) ও তারপর মার খেয়ে বাড়ি আসত , তবে বাড়িতে ও তাকে আরেক প্রস্থ মার খেতে হত ,কেন সে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে গেছিল মারকুটে বদমাইশ ছাত্রদের সাথে , নুপূর শর্মা ও তাই করেছেন , পায়ে পা দিয়ে , তেতো সত্যি কে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গের ছলে বলে ঝগড়া,দাঙ্গা-কাজিয়া লাগিয়েছেন ,তাই সুপ্রিম কোর্ট ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ভারতবাসী (গোঁড়া মুসলিম ব্যতীত অন্যন্যরা) তাঁর বিরোধিতা করেছেন বা সমালোচনা করেছেন , মুসলিম ধর্মান্ধদের খোঁচা দিতে গিয়ে তিনি প্রায় জাতীয় বিপর্যয় ডেকে এনেছিলেন , কিন্ত মহুয়া মৈত্রের উদ্দেশ্যই সম্পূর্ণ অন্য ছিল , তাই দুটি পরিস্থিতির তুলনা চলে না , এখন বিজেপি নেতৃত্বের অতিসক্রিয়তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার দিকেই নির্দেশ করছে ,যা কখনোই কাম্য নয়।
আর হ্যাঁ, নুপূর শর্মার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযোগ যারা নবীর "অপমানের" বদলা নিতে করেছে , তারা কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয় , মানুষ নয়, তারা নির্বোধ অশিক্ষিত মুসলিম । কিন্ত আজ আমরা হিন্দুরা যদি ওদের স্তরে নেমে গিয়ে মহুয়া মৈত্রের শাস্ত্রসম্মত ও স্বাভাবিক সুরে বলা মন্তব্যের জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলি ,তাহলে তো ঐ ধর্মান্ধ জানোয়ার মুসলিমদের সাথে আমাদের কোনো তফাতই থাকবে না ,যা তসলিমা নাসরিন ও লিখেছেন , তাই এরকম whataboutary অর্থাৎ " আমাদের দলের লোক দাঙ্গাবাজ মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের শাস্ত্র ব্যবহার করেই তাদের নবীকে pedophile বলে উসকানি দিয়ে দেশ জুড়ে দাঙ্গার প্ররোচনা দিয়েছে বলে ঝাড় খেয়েছে , তাই আমাদের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিন্দু দেবীকে নিয়ে শাস্ত্রসম্মত প্রথা , তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করায় শুধুমাত্র ,তাঁকেও সবক শেখাতে হবে।" এ মানসিকতা স্কুলবেলায় মানাত , পরিণত বয়সে মানায় না , অন্যে দোষ করে শাস্তি পেল কি না তা দেখার আগে নিজের দোষ শুধরোনোই মঙ্গল।
শেষ করি এই বলে , নুপূর বলতে চেয়েছেন , নবী মহম্মদ শিশুকামী , যে সুর তাঁর বক্তব্যে প্রচ্ছন্ন , ও এই ধুনোর গন্ধ দিয়ে তিনি মা মনসা ,অর্থাৎ ধর্মান্ধ মোছলমানদের নু নু ভূতিতে ঘা দিয়েছেন ইচ্ছা করেই ,তাই বিষও উঠেছে তেমনি , সেই বিষ নিবারণের দিকেই এবার মনোযোগ দেওয়া দরকার , মহুয়া মৈত্র কিন্ত দেবীকে মদ্য-মাংস প্রদান করা হয় বলেছেন ,দেবীকে "মাতাল" বা "মাংসলোলুপ" বলে কোন কটাক্ষের সুর আরোপ করেননি তাঁর বক্তব্যে , তাই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা-টরা যুক্তিহীন , তাঁর বক্তব্যের সুর উস্কানিমূলক নয় ,এবার যেসব হিন্দুদের নিজেদেরই দেবীর মহিমার উপর ভরসা নেই , তাঁরা লাফালাফি করতেই পারেন ,আমার অন্তত হিন্দুধর্মে বিশ্বাস অনেক বেশি , আমার মা ,আমার দেবী মদই খান ,মাংসই খান,তিনি আমার মা ,আমার দেবী ,তাঁর সম্মান তিনি নিজেই রক্ষা করতে পারেন ,তিনি সদাজাগ্রত , তাঁর আপত্তি থাকলে তিনি স্বয়ং তা জানাতেন , আসলে এই হয়, কালীকে মাতাল ,নবীকে পেডো বললে কালী ও খাঁড়া হাতে তেড়ে আসেন না , নবী ও বেহেস্ত বা দোজখ থেকে আসেন না ,মানুষরাই মানুষের সাথে কামড়াকামড়ি করে মরি , " যার বিয়ে তার ধুম নেই ,পাড়াপড়শির ঘুম নেই" । আর রইল বাকি ধর্মরক্ষা , ধর্ম নিজেই নিজেকে রক্ষা করে ,আবার যে তার আশ্রয় নেয় তাকেও বাঁচায় ,এ তো শাস্ত্রবচন , "ধর্মো রক্ষতি রক্ষতঃ।" সুতরাং বিবেকানন্দকে দেবী ক্ষীরভবানী রূপে যে মার্গদর্শন করিয়েছিলেন তাই ঠিক ,তিনিই আমাদের রক্ষা করেন ,আমরা কবে থেকে নিজেদের এতো বড়ো ভেবে অহংকার করতে শুরু করলাম , যে আমরা তাঁকে , তাঁর সম্মানকে রক্ষা করব? তিনি নিজেই সে ব্যবস্থা করে নেবেন ,আমরা আমাদের কাজ করে যাই ,অর্থাৎ মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো , আর অশিক্ষা ,ধর্মান্ধতা ,হিংসা , খুনোখুনি দূর করা ।
কলমে :- পৌষালি ঘোষাল ©