বিয়ে হয়ে গেল। এবার সন্তান জন্মের রহস্য জেনে নিন।
n প্রথম চারপ্রকারের বিয়ের ফলে ভদ্রজনের মান্য বেদাধ্যয়ন করা তেজস্বী পুত্র হয় । রূপ,গুণ, যশ ও প্রচুর ভোগের অধিকারী হয় এবং তার একশ’ বছর আয়ু হয়। কিন্তু বাকি চারটে নিকৃষ্ট বিয়ের ফলে নিষ্ঠুর,মিথ্যেবাদী এবং বেদ ও যাগযজ্ঞের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন পুত্র জন্মায়।(৩/৩৯.৪০, ৪১)।
n শোণিতস্রাবযুক্ত প্রথম চার রাত্রি, একাদশ ও ত্রয়োদশ রাত্রি এবং অমাবস্যাদি মনুর বিধিতে নিন্দিত। বাকি সময়ে গৃহস্থ স্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে রতিকামনায় দারগমন করবেন।(৩/৪৫,৪৬,৪৭)।
n ওই প্রশস্ত রাত্রিগুলোর মধ্যে জোড় সংখ্যার রাতে, যেমন ষষ্ঠ ও অষ্টম, ছেলে হয় এবং বেজোড় সংখ্যার রাতে, যেমন পঞ্চম বা সপ্তম, মেয়ে। তাই ছেলে চাইলে য জোড় সংখ্যার রাত্রিতে দারগমন করিবেন(৩/৪৮)।
n পুরুষের শুক্র বেশি হলে পুত্র, স্ত্রীর শুক্র বেশি হলে কন্যা জন্মায়। দু’জনেরই সমান সমান হলে জোড়া সন্তান বা হিজড়ে জন্মায়। কিন্তু দুজনের শুক্র খুব অল্প হলে গর্ভ হয় না।(৩/৪৯)।
n প্রথম স্ত্রী তো নিজেদের বর্ণের হতে হবে।(প্রথম বিয়ে তো বংশরক্ষার জন্যে; পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা) কিন্তু কামবশঃ ফের বিয়ে করতে চাইলে কন্যার যোগ্যতা নীচে দেওয়া হলঃ
o ব্রাহ্মণ – ব্রাহ্মণী ও তিন বর্ণের মেয়েকে।
o ক্ষত্রিয়— ক্ষত্রিয়া এবং বৈশ্য ও শূদ্রের মেয়েকে।
o বৈশ্য— বৈশ্য ও শূদ্রের মেয়েকে।
o শূদ্র- শুধু শূদ্রে্র মেয়েকে। (৩/১২-১৩)।
n কিন্তু ব্রাহ্মণের শূদ্র বৌ নিয়ে মনুমহারাজের বড্ড অস্বস্তি ছিল। গোটা পাঁচেক শ্লোকে অমন বিয়ে করলে ব্রাহ্মণের কী কী ঝামেলা হতে পারে তা’ নিয়ে সতর্ক করেছেন। দুটো তুলে দিচ্ছিঃ
o ব্রাহ্মণ শূদ্রাকে শয্যায় নিলে অধোগতি প্রাপ্ত হয়।তাতে পুত্রোৎপাদন করলে ব্রাহ্মণত্বই চলে যায়।(৩/১৭)।
o যে ব্রাহ্মণ শূদ্রার অধররস পান করেন, তার শ্বাস নিজের শ্বাসে যুক্ত করেন এবং গর্ভে সন্তান উৎপাদন করেন, তাঁর শুদ্ধি হয়না(৩/১৯)।
মেয়েও পছন্দ হল, এবার বিয়ে। কিন্তু বিবাহ যে আট রকম। কোনটা করব কীভাবে ঠিক হবে? ঠিক হবে বরের জাত দিয়ে।
কতরকম বিয়ে?
n বিয়ে আট রকমঃ ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য, প্রাজাপত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস ও পৈশাচ। এর মধ্যে প্রথম চারটি (ব্রাহ্ম থেকে প্রাজাপত্য) ব্রাহ্মণের জন্যে, রাক্ষস ও গান্ধর্ব ক্ষত্রিয়ের জন্যে, বৈশ্য ও শূদ্রের জন্যে আসুর প্রশস্ত। পৈশাচ বিবাহ কারোরই করা উচিত নয়।(৩/২১.২৪ ও ২৫)।
n কিন্তু কার নাম দুন্দুভি? কাকে বলে অরণি?
o ব্রাহ্মঃ বিদ্বান চরিত্রবান পাত্রকে আহ্বান করে কাপড়চোপড় উপহার দিয়ে সম্মানিত করে কন্যাদান।(৩/২৭)
o দৈবঃ যজ্ঞের সময় কাপড়ে গয়নায় সাজিয়ে গুছিয়ে কন্যাকে পুরোহিতের নিকট দান।(৩/২৮)
o আর্যঃ বরের থেকে ধর্মার্থে একটি করে বৃষ ও গাভী নিয়ে কন্যাদান (৩/২৯)।
o প্রাজাপত্যঃ সোজা কথায় প্রজাপতির নির্বন্ধ। ‘দুজনে একত্র হয়ে ধর্মাচরণ কর’ বলে বরের পূজো করে কন্যাদান(৩/৩০)। আজকাল হিন্দুমতে এ’রকম বিয়েই আকছার হচ্ছে।
o আসুরঃ বর যদি মেয়ের বাবা বা জ্ঞাতিদের যথাশক্তি ধন দিয়ে নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে।এটাও বহুদিন ধরে আমাদের দেশে চলে আসছে। (৩/৩১)।
o গান্ধর্বঃ ‘গান্ধর্বঃ স তু বিজ্ঞেয়ো মৈথুনাঃ কামসম্ভবঃ।। (৩/৩২)
কন্যা ও বরের ইচ্ছানুসারে মিলন, মনুর মতে এই বিবাহ কামবশে মৈথুনেচ্ছায় ঘটে!আজকাল এরকমও হচ্ছে বটে, যাকে আমরা হরদম ‘লাভ ম্যারেজ’ বা প্রেম করে বিয়ে বলে থাকি।
o রাক্ষসঃ কন্যাপক্ষের লোকজনকে আহত বা হত্যা করে আর্তনাদ করতে থাকা কন্যাকে বলপূর্বক হরণ করে বিয়ে করা(৩/৩৩)।এটা হামলা এবং ধর্ষণ, যেমন ডাকাত দলের কান্ড ।
o পৈশাচঃ নিদ্রিতা, মদ্যাপানে বিহ্বল বা পাগল কন্যাকে নির্জনে সম্ভোগ করলে সর্বাধিক পাপজনক ও নিকৃষ্ট বিয়ে(৩/৩৪)। এটা অবশ্যই ধর্ষণ।
একটা জিনিস খেয়াল করার মত। তখন বরকে কন্যাপণ দিতে হত, যদিও এই প্রথাকে মনু কয়েক জায়গায় গর্হিত এবং মেয়ের বাপের দিক থেকে এটা টাকার লোভে কন্যা বিক্রয় বলে নিন্দে করেছেন।কিন্তু লক্ষণীয় যে তখন আজকের মত মেয়ের বাবাকে যৌতুক দিতে হত না।
অন্ততঃ মনুস্মৃতি তাই বলছে।বিয়ে হয়ে গেল। এবার সন্তান জন্মের রহস্য জেনে নিন।
n প্রথম চারপ্রকারের বিয়ের ফলে ভদ্রজনের মান্য বেদাধ্যয়ন করা তেজস্বী পুত্র হয় । রূপ,গুণ, যশ ও প্রচুর ভোগের অধিকারী হয় এবং তার একশ’ বছর আয়ু হয়। কিন্তু বাকি চারটে নিকৃষ্ট বিয়ের ফলে নিষ্ঠুর,মিথ্যেবাদী এবং বেদ ও যাগযজ্ঞের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন পুত্র জন্মায়।(৩/৩৯.৪০, ৪১)।
n শোণিতস্রাবযুক্ত প্রথম চার রাত্রি, একাদশ ও ত্রয়োদশ রাত্রি এবং অমাবস্যাদি মনুর বিধিতে নিন্দিত। বাকি সময়ে গৃহস্থ স্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে রতিকামনায় দারগমন করবেন।(৩/৪৫,৪৬,৪৭)।
n ওই প্রশস্ত রাত্রিগুলোর মধ্যে জোড় সংখ্যার রাতে, যেমন ষষ্ঠ ও অষ্টম, ছেলে হয় এবং বেজোড় সংখ্যার রাতে, যেমন পঞ্চম বা সপ্তম, মেয়ে। তাই ছেলে চাইলে য জোড় সংখ্যার রাত্রিতে দারগমন করিবেন(৩/৪৮)।
n পুরুষের শুক্র বেশি হলে পুত্র, স্ত্রীর শুক্র বেশি হলে কন্যা জন্মায়। দু’জনেরই সমান সমান হলে জোড়া সন্তান বা হিজড়ে জন্মায়। কিন্তু দুজনের শুক্র খুব অল্প হলে গর্ভ হয় না।(৩/৪৯)।
নিয়োগপ্রথা
প্রাচীন ভারতে নিয়োগপ্রথা ছিল । মহাভারতে কুরুবংশে দুই রাণী অম্বিকা ও অম্বালিকা নিঃসন্তান। তাই মাতা সত্যবতীর আগ্রহে সম্পর্কে দেবর বেদব্যাস এসে দুইরাণীর গর্ভে ধৃতরাষ্ট্র ও পান্ডু এবং শূদ্রাণীর গর্ভে বিদুরের জন্মের কারণ হয়েছিলেন। এবার দেখুন নিয়োগ নিয়ে মনু কী বলছেনঃ
n সন্তানের অভাবে পতি প্রভৃতি গুরুজনের দ্বারা সম্যকরূপে নিযুক্ত হয়ে নারী দেবর বা সপিন্ড [1](নীচের টীকা দেখুন)কারও থেকে সন্তানলাভ করতে পারে , কিন্তু একটির বেশি নয়(৯/৫৯)।
n বিধবা নারীতে, নিয়োগ ব্যাপারটা নিয়মমাফিক সম্পন্ন হলে তারপরে তারা দু’জন পুত্রবধূ ও বড় ভাইয়ের মতো আচরণ করবে(৯/৬২)।
n কিন্তু ব্রাহ্মণের বিধবা অন্য পুরুষের সঙ্গে এভাবে ‘নিযুক্ত’ হতে পারে না। তাহলে সনাতন ধর্ম নষ্ট হবে (৯/৬৪)।
মনে হয় নিয়োগ বা বিধবার যৌনতা নিয়ে মনু দ্বিধায় ছিলেন, তাই সাবধান করছেন- একের বেশি সন্তান নয়, এরপর কামবশে ফের মিলিত হওয়া পাপ।(৯/৬১, ৬৩)।
n কিন্তু বিবাহ সংক্রান্ত মন্ত্রে কোথাও ‘নিয়োগ’ এর উল্লেখ নেই। বিবাহ বিধায়ক শাস্ত্রে কোথাও ‘বিধবা-বিবাহ’এর কথা বলা হয়নি।
n পন্ডিত দ্বিজগণ এই ‘নিয়োগপ্রথা’কে পশুধর্ম বলেছেন। এসব অধার্মিক বেনরাজার কীর্তি। উনিই কামের পরবশ হয়ে এসব শুরু করিয়ে পৃথিবীতে ‘বর্ণসংকর’ (বাস্টার্ড) সৃষ্টি করেছিলেন।(৯/৬৬,৬৭)।
[1] সপিন্ডঃ মানে পিন্ড দানের অধিকারী।
যেমন, (১)কোন ব্যক্তির পিতার থেকে ঊর্ধ্বতন (ঠাকুর্দা, তার বাবা এইভাবে) ছয় পুরুষ, মানে ৭ জন তার সপিন্ড এবং নিজের থেকে অধস্তন (ছেলে, নাতি, তার সন্তান এইভাবে ছয় জেনারেশন)ছয় পুরুষ, মানে ৬ জন তার সপিন্ড।
এভাবে সে উপরের পিতা ও আরও ছয় জনের পিন্ডদানের অধিকারী এবং তার ছেলেকে ধরে নীচের ছয়জন তার উদ্দেশে পিন্ডদানের অধিকারী।
(২) কিন্তু মায়ের দিক থেকে উর্ধ্বতন চার পুরুষ এবং মায়ের অধস্তন চার পুরুষ তার সপিন্ড।