@অরিন-দা'র সুন্দর মন্তব্যটির জন্যে একটি চমৎকার বইয়ের সামান্য অংশ তুলে দিচ্ছি। প্রাসঙ্গিক শোনাবে।
"রবীন্দ্রনাথকে একবার স্পর্ধা করে জিজ্ঞেস করেছিলুম, মাছের ডিমের ইংরেজি কি? আমার বয়েস তখন এগারো, রবীন্দ্রনাথের ষাট। গুমট গ্রীষ্মের দুপুরে কাঁচের শাসি বন্ধ করে তেতলার পশ্চিমের ঘরে একা বসে বসে লিখছিলেন। ডিকশনারি থেকে সবে আয়ত্ত করেছি শব্দটি। প্রচুর সাহস নিয়ে দুপুরের নির্জনতা ভঙ্গ করে তাঁর ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করলুম, আপনি তো এত দেশ ঘুরে এসেছেন, বলুন তো মাছের ডিমের ইংরেজি কি?
- মাছের ডিমের ইংরেজি- রো।
- হল না। স্পন। আমি ডিকশনারি দেখে এসেছি।
- ডিকশনারি নিয়ে আমার সঙ্গে যুদ্ধ ? বোস তা হলে, স্পন আর রো-র প্রভেদটা তোকে বোঝাই।
এই বলে লেখা- টেখা ছেড়ে দিব্য আমার সঙ্গে সমবয়সী সঙ্গীর মতো আলাপ শুরু করে দিলেন। "
- 'দক্ষিণের বারান্দা' বই থেকে উদ্ধৃত। লেখক মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় ।
এতক্ষণ একটি টিভি চ্যানেলে 'চোখের বালি' সিনেমাটা দেখছিলাম। রিলিজ করার সময় যখন দেখেছিলাম, তখন ভাল লাগেনি। এবার দেখে মনে হল, মন্দ নয় ছবিটি। থিম মিউজিক হিসেবে রবীন্দ্র সংগীতের অসাধারণ ব্যবহার আছে এই ছবিতে।
তবে এলেবেলে, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আমি মারের সাগর পাড়ি দেব' তে 'গো' শব্দটি জোড়া আর মূল শব্দ বদলে অন্য শব্দে বসিয়ে দেওয়া, তাও এমন একটি শব্দ যার অর্থ অভিধানে নেই, সেটা একদম এক নয়।
আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি।
ওরে বাপরে ! ঃ-)) @ব্রতীন-দা। খুব বেশী ক্রিকেট খেলিনি। 'দ্রাবিড়' র উপমাটা বেশ লাগল। :))
@এলেবেলে, হমম, এটার কথা জানি। কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচ্চারণ অনেক সময়েই বুঝতে অসুবিধে হয়।
রবীন্দ্রনাথ কখন 'অচলায়তন', কখন নন সেটা বলতে গিয়ে দুটো ঘটনা বলতে হয়।
'মেমসাহেব' ছবিতে অপর্ণা সেন যখন তার সাংবাদিক প্রেমিক উত্তমকুমারকে সাহিত্য রুচি তৈরি হওয়ার জন্যে অনেক বইয়ের সঙ্গে 'গীতবিতান'টি কিনে দেন এবং প্রেমিকের অবাককরা চখ দেখে বলে 'যখন হাতে কোনো কাজ থাকবেনা তখন গীতবিতানের পাতাগুলো ওলটাবেন। দেখবেন আপনি অনেক কিছু ভাবতে পারছেন। অনেক কিছু কল্পনা করতে পারছেন।'
আবার কবীর সুমন যখন বলেন ৭০র দশকে অস্থির রাজনৈতিক সময়ে তিনি রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে প্রতিদিনের লড়াই, জীবন ধারণের অস্থিরতার মিল খুঁজে পাচ্ছেন না। ইচ্ছে করছেনা সেই গান গুলো শুনতে। মনে হচ্ছে এই গানগুলোয় বড্ড সীমাবদ্ধ। এবং তারপর নিজেই গান লিখতে বসছেন।
মলয় রায়চৌধুরীকে নিয়ে গুরুতে মন্তব্য করা সামান্য চাপের ব্যাপার কারণ এখানে উনি লেখেন এবং গুরু থেকে তাঁর বই প্রকাশিত হয়। তবে কোনও ভাবেই পুরন্দর ভাট হাংরি প্রভাবিত নন।
একলহমা, আসলে লেখাটার লিঙ্ক দিলে আমার নামটা সবাই জেনে যাবেন! তবুও আপনি চাইলেন যখন তখন দিই।
দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব https://www.anandabazar.com/editorial/special-article-about-the-thought-process-and-history-of-hindu-mahasabha-1.1109451?ref=home-editorial-widget-stry-right-vertical-5
অর্জুন, আরেকবার কণিকার 'আমি মারের সাগর পাড়ি দেব'-টা শুনবেন? বলতে পারেন ঠিক তার পরে 'গো' শব্দটা গীতবিতানে আছে কি না? তাই নিয়ে কোনও হইচই হয়েছিল বলে শুনেছেন?
সে আপনার আপত্তি থাকতেই পারে, আমিও লিখি না। কিন্তু যাঁরা তা উচ্চারণ করেন বা লেখেন তাঁর মূল স্রোতের বাসিন্দা বলে মনেও করি না।
কমলকুমার কার দ্বারা প্রভাবিত সেসব বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই। তবে স্ট্রিম অফ কনসাসনেস তো ভার্জিনিয়া উলফ-এর অবদান। বঙ্কিমের রজনী সেই গোত্রীয় না হলেও রবি ঠাকুরের ঘরে বাইরে-তে তার হালকা ছাপ আছে; যেমন আছে সতীনাথের জাগরীতেও। আর ধূর্জটিপ্রসাদের যে ট্রিলজি মানে অন্তঃশীলা-আবর্ত-মোহনা পুরোটাই ওই টেকনিকের ফসল।
পুরন্দর ভাট সাব-অল্টার্ন। সেখানে হুতোম, খেউড় এবং আধুনিকতা হাত ধরাধরি করে চলে। কোথাও তাল কাটে না, বানানো মনে হয় না।
ডিসক্লেমার: আমি আমার কথাটা বলেছি মাত্র।
@সে 'তুমি' বলে বললেন বলে খুব ভাল লাগল। আশাকরি ভাল আছেন। :-)
@এলেবেলে, আপনি ঠিক বলেছেন 'রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে পজেসিভ ছিলেন তাঁর গান নিয়ে'। আমার বাংলার শিক্ষক বলতেন রবীন্দ্রনাথ এতই থরো ছিলেন তাঁর স্বরলিপির ক্ষেত্রে যে দিনু ঠাকুরকে দিয়ে তাঁর স্বরলিপি লিখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাতে সই করে দিতেন। পরে যখন তিনি অসুস্থ, দিনু ঠাকুর শান্তিনিকেতন ছেড়ে চলে গেছেন, মারাও গেছেন, শৈলজারঞ্জন মজুমদার স্বরলিপি লিখে নিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ লিখতে কষ্ট হলেও একটি সই করে দিয়েছেন। এই জন্যে তাঁর স্বরলিপি নিয়ে বিতর্ক নেই।
রবীন্দ্রনাথ থাকতেই তাঁর গানের বিবর্তন হয়েছে, তৈরি হয়েছে একাধিক ঘরানা । অমলা দাশ যখন এইচ এম ভি'তে রবীন্দ্রনাথের গান রেকর্ড করেন তখন ছিল 'রবি বাবু'র গান।
বেশ কিছু পরে শৈলজারঞ্জন ও শান্তিদেব ঘোষ। (ভুল বললে শুধরে দিন)
তাঁর মৃত্যুর পাঁচ, সাত বছরের মধ্যেই জর্জ বিশ্বাস, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় , সুচিত্রা মুখোপাধ্যায় (মিত্র)।
এদের কাউকেই 'অতিরিক্ত শব্দ' জুড়তে হয়নি।
'বিশ্বভারতীর দাদাগিরি' র সবচেয়ে নিষ্ঠুর ভিকটিম সর্বজন প্রিয় জর্জ বিশ্বাস।
'ব' অক্ষরের বিশেষ শব্দটি আমার উচ্চারণ করতে, লিখতে অসুবিধে আছে। আমি মূল স্রোতে ভাসতে ভালবাসিনা।
অর্জুন, রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে পজেসিভ ছিলেন তাঁর গান নিয়ে এবং মানতেন আর কিছু না টিকলেও তাঁর গান যুগোত্তীর্ণ হয়ে টিকবেই। কাজেই উনি ধারক চাইতেন সেই গানের। সেটা সাহানা দেবী হতে পারেন, কনক দাশ হতে পারেন, কণিকা হতে পারেন, শান্তিদেব হতে পারেন। শৈলজারঞ্জন বিশ্বভারতীতে এসেছিলেন কেমিস্ট্রি পড়াতে, তো তাঁকেও তিনি রসায়ন ছাড়িয়ে গানের রসে ঢুকিয়ে নেন। এখন প্রত্যেকেই কিন্তু হুবহু একই রকম গাননি। রবীন্দ্রনাথকে ভাঙিয়ে খাওয়া বিশ্বভারতীর দাদাগিরি থেকেই এই পিউরট্যানিজম-এর শুরু। যেখানে ট্রেনারের দৌলতে আশা ভোঁসলে পাশ অথচ পীযূষকান্তি ফেল!
ভিক্টোরীয় যুগের সাহিত্যের কথা তো বলিনি, ব্রাউনিং আমার অত্যন্ত প্রিয় কবি। বলেছি ভিক্টোরীয় শ্লীলতার কথা। এবং তাতে গুরুর লোকজনেও আক্রান্ত। আমি খোলাখুলি 'বাঁড়া' শব্দটা লিখেছি 'বাঁ*' লিখিনি। ইচ্ছাকৃতভাবেই লিখিনি কারণ শব্দটা এসেছে বৃহৎ>বৃহদ> বড্ড> বাড়া এই অনুক্রমে। বিদ্যাসাগর তাঁর নাতনিকে 'মাগী' বলে সম্বোধন করতেন। কাজেই অত উতলা হওয়ার কিছু নেই। রবীন্দ্রগানে একটি অতিরিক্ত শব্দ জুড়লে হা-হুতাশ করারও কিছু নেই।
এবং হ্যাঁ, শব্দ শব্দই; তাকে অযথা 'অপশব্দ বলার আমি ঘোরতর বিরোধী।
খ, আপনার দেওয়া গানটি খাসা।
একলহমা, এই সমালোচনা আমার প্রাপ্য ছিল। আমিও লিখে খুব তৃপ্ত হয়নি, শুধু দাঙ্গার বদলে গণহত্যা বলেছি মাত্র। বরং পারলে আমার হিন্দু মহাসভার ইতিহাসের লেখাটা পড়তে পারেন। এবং অতি অবশ্যই সমালোচনা করতে পারেন।
এ যুগের ছেলে, মেয়েরা একটা সমষ্টিগত ক্লাব জানতাম না। এরা সবাই এক রকম ? অর্থাৎ এক সময়ের সমবয়সী সবাই এক্রকমের হয়!!
দিন দিন আর এস এসের দল ভারী করছে যুবক, যুবতীরা আবার নো এন আর সি'র মিছিলে নকশাল ভাবাপন্ন ছেলে, মেয়ের সংখ্যাও মন্দ নয়!
@এলেবেলে,
রবীন্দ্রনাথের চিঠি সাহানা দেবীকে ‘‘তুমি যখন আমার গান করো, শুনলে মনে হয় আমার গান রচনা সার্থক হয়েছে— সে গানে যতখানি আমি আছি ততখানি ঝুনুও আছে— এই মিলনের দ্বারা যে পূর্ণতা ঘটে সেটার জন্য রচয়িতার সাগ্রহ প্রতীক্ষা আছে। আমি যদি সেকালের সম্রাট হতুম তাহলে তোমাকে বন্দিনী করে আনতুম লড়াই করে। কেননা তোমার কণ্ঠের জন্য আমার গানের একান্ত প্রয়োজন আছে।’’
বিষ্ণু দে তাঁর কবিতায় রবীন্দ্র পঙক্তি ব্যবহারের পূর্বেই রবীন্দ্রনাথ উপরে উল্লিখিত চিঠিটি লেখেন।
রবীন্দ্রনাথ শিল্প স্বাধীনতায় পূর্ণ বিশ্বাসী ছিলেন।
ইংরেজি সাহিত্যে ভিক্টোরীয় যুগ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমি নিজেও ইংরেজি পড়েছেন। ওটা শুধুই প্যুরিটন চর্চার যুগ নয়। নিয়ম ভাঙারও সময়। আপনি এক এলিয়েটের উল্লেখ করেছেন। তাঁর পূর্বসূরি জর্জ এলিয়ট নারীবাদী সাহিত্য চর্চার একটি উল্লেখযোগ্য নাম।
আমার মনে হয় আপনি রো.রা'র বিষয়ে বড্ড সরলীকরণ করে ফেললেন। ভাঙা এত সহজ নয়।
একটা ভাঙা, ভাঙা খেলা খেলা। বরং ভাঙার প্রথাটা বেশ একঘেয়ে।
আমি রো.রা'কে নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নই। আমি একটি বিশেষ ঘটনা সমালোচনা করেছি।
রো.রা'কে নিয়ে সকলচনাভাবে আলোচনা করছে তাতে তাকে আমার অবশ্য একটু বিপজ্জনক অ্যাজেন্সি মনে হচ্ছে।
আমি পূর্ণভাবে বিশ্বাস করি শিল্পের প্যুরিটন বেসকে সম্মান করা উচিত।
অচলায়তন ভাঙার আগে অচলায়তনকে জানাটা খুব জরুরী।