কান, মন চোখ তৈরির আরেকটা উদাহরণ না দিয়ে পারছিনা। নিজের নয়। স্বনামধন্য লীলা মজুমদারের বই থেকে।
"রোজ সকালে ক্লাসের পরে কলাভবনে গিয়ে জল-রঙের ছবির সরঞ্জাম নিয়ে আমার ছোট নিচু ডেস্কটির সামনে বসতাম। কখনো একাই তালগাছ- টাছ আঁকতাম, কখনো সুরেন কর এসে পাশে বসতেন, অমনি কলাভবনে সে সময়ে যারা যারা উপস্থিত থাকত, সবাই এসে ঘিরে দাঁড়াত। এই হল সৃষ্টি কর্মের সব চাইতে ভালো পাঠের নিয়ম।'
ওটাই শিল্পচর্চার আঁতুড় ঘর । কান, চোখ, মন তৈরি হয় বাড়িতে exactly the way charity begins at home ।
আমার সেই কাকা বহুকাল প্রয়াত।
ইখ - কান তৈরী করতে গিয়ে শেষে বোধবুদ্ধি লোপ পেল গা
ন্যাড়া বাবু, আপনি জানতে চাইছেন 'কান কী করে তৈরি করতে হয়'! এখানে ব্যক্তিগত কথা না এনে পারব না। সবচেয়ে প্রথম হল প্রচুর গান শুনতে হবে। আমি ছোটবেলা থেকে এল পি রেকর্ড আর ক্যাসেটে হীরাবাঈ বরোদেকর, বেগম আখতার, কেসরবাঈ করকর, ওঙ্কারনাথ ঠাকুর, ভীমসেন যোশী, উস্তাদ আমীর খাঁ, বড়ে গুলাম আলী......গান শুনে আসছি।
সুচিত্রা মিত্র, কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ষাটের দশকের রেকর্ড শুনতাম। এ গুলো শোনার ফলে কান তৈরির সবচেয়ে বড় জায়গা হল গান গুলোর কোয়ালিটি সম্পর্কে একটা বোধ তৈরি হয়। যেমন ষাটের দশকে সুচিত্রা মিত্রের গান শোনার পরে, নব্বইয়ের দশকে ওঁর বেসুরো গলাটা সঙ্গে সঙ্গে নজরে আসে।
কান তৈরির ব্যাপারে এখানে আরেক টি স্মৃতিচারণ না করে পারছিনা। আমার এক কাকা, বাবার জেঠতুতো ভাই, রাঙা কাকু বলতাম চমৎকার গাইতেন। সাগর সেনের ছাত্র ছিলেন। আমার বয়েস তখন ১০/১১। কাকুর বাড়িতে কদিন আছি। কাকীমনি, দুই দিদি বাড়ি নেই। কাকু দেখি সিল্কের ধুতি পরে, একটা উত্তরীয় জড়িয়ে ডিভানে হারমোনিয়াম নিয়ে গানের খাতা খুলে একটার পরে একটা গান গেয়ে চলেছেন। আমাকে ডেকে পাশে বসালেন। গাইছেন এবং তার মধ্যেই জিজ্ঞেস করচ হেন 'তুমি এই গানটা জানো?' আমি নাড়ছি। উনি প্রত্যেকটা গানের লাইন গাইছেন, আমাকে বোঝাচ্ছেন। একবার বললেন গীতবিতান নিয়ে আসতে। গীতবিতান খুলে গানটা জোরে জোরে পড়তে বললেন। অক্লান্ত ভাবে গেয়ে চললেন একটার পর একটা গান। এই ভাবে বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে গেল। আমার সেদিনের মাঝ দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই দিনের স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে আছে।
শিল্পে সাধনা করতে হয়, শর্টকাটে কিছু হয়না।
আমাদের এখন একজন নীরদ চৌধুরী আর ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের দরকার যারা শাসন করে যাবে।
থিয়োরাইজ করার জন্য টই খুলে দিছি হখগ দা
"কান তৈরী করার পাঁচটি সহজ উপায়" - শ্রী রোদ্দুর রায় বিরচিত