@এলেবেলে, কালই ভেবেছিলাম আপনাকে বলব 'অপ্রেমের কবিতা' 'বনলতা সেন' নিয়ে কিছু লিখতে।
ভাল লাগল।
জীবনানন্দ সংক্রান্ত কোনো একটি টইতে তুলে রাখুন।
@o
আপনিও।
"চারদিকে ছায়া জমে গেছে; বিকেলের ছায়ার সঙ্গে মিশেছে মেঘের গভীর অন্ধকার। নিবিড় নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টি আরম্ভ হল। বেশ লাগে আমার এই বৃষ্টি, খড়ের উপর সমসম শব্দ হয়, ধুলোমাটির নরম সোদা গন্ধ ভেসে আসে, কেমন একটু শীত-শীত করে, সুগন্ধি কেয়া-কদমের মতো দেহ কাটা দিয়ে উঠে। হৃদয় শিহরিত হয়ে ওঠে অবচেতনে। চারদিকে তাকিয়ে দেখি শুধু মৌসুমির কাজলঢালা ছায়া। কিশোরবেলায় যেকালোমেয়েটিকে ভালোবেসেছিলাম কোনো এক বসন্তের ভোরে, বিশ বছর আগে যে আমাদেরই আঙিনার নিকটবর্তিনী ছিল, বহুদিন যাকে হারিয়েছি—আজ, সেই যেন, পূর্ণ যৌবনে উত্তর আকাশে দিগঙ্গনা সেজে এসেছে। দক্ষিণ আকাশে সেই যেন দিগবালিকা, পশ্চিম আকাশেও সে-ই বিগত জীবনের কৃষ্ণা মণি, পূর্ব আকাশে আকাশ ঘিরে তারই নিটোল কাল মুখ। নক্ষত্রমাখা রাত্রির কালো দিঘির জলে চিতল হরিণীর প্রতিবিম্বের মতো রূপ তার—প্রিয় পরিত্যক্ত মৌনমুখী চমরীর মতো অপরূপ রূপ। মিষ্টি ক্লান্ত অশ্রুমাখা চোখ, নগ্ন শীতল নিরাবরণ দুখানা হাত, স্নান ঠোট, পৃথিবীর নবীন জীবন ও নবলোকের হাতে প্রেম বিচ্ছেদ ও বেদনার সেই পুরোনো পল্লীর দিনগুলো সমৰ্পণ করে কোনো দূর নিঃস্বাদ নিঃসূর্য অভিমানহীন মৃতু্যর উদ্দেশ্যে তার যাত্রা।
সেই বনলতা—আমাদের পাশের বাড়িতে থাকত সে। কুড়ি-বাইশ বছরের আগের সে এক পৃথিবীতে; বাবার তার লম্বা চেহারা, মাঝ-গড়নের মানুষ—শাদা দাড়ি, স্নিগ্ধ মুসলমান ফকিরের মতো দেখতে, বহুদিন হয় তিনিও এ পৃথিবীতে নেই আর। কত শীতের ভোরের কুয়াশা ও রোদের সঙ্গে জড়িত সেই খড়ের ঘরখানাও নেই তাদের আজ; বছর পনেরো আগে দেখেছি মানুষজন নেই, থমথমে দৃশ্য, লেবুফুল ফোটে, ঝরে যায়, হোগলার বেড়াগুলো উইয়ে খেয়ে ফেলেছে। চালের উপর হেমন্তের বিকেলে শালিখ আর দাঁড়কাক এসে উদ্দেশ্যহীন কলরব করে। গভীর রাতে জ্যোৎস্নায় লক্ষ্মীপেচা চুপ করে উড়ে আসে। খানিকটা খড় আর ধুলো ছড়িয়ে যায়। উঠানের ধূসর মুখ জ্যোৎস্নার ভিতর দু-তিন মুহূর্ত ছটফট করে। তার পরেই বনধুধুল, মাকাল, বঁইচি ও হাতিশুড়ার অবগুণ্ঠনের ভিতর নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
বছর আষ্টেক আগে বনলতা একবার এসেছিল। দক্ষিণের ঘরের বারান্দায় দাড়িয়ে চালের বাতায় হাত দিয়ে মা ও পিসিমার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বললে সে। তার পর আঁচলে ঠোট ঢেকে আমার ঘরের দিকেই আসছিল। কিন্তু কেন যেন অন্যমনস্ক নত মুখে মাঝপথে গেল থেমে, তারপর খিড়কির পুকুরের কিনারা দিয়ে, শামুকগুগলি পায়ে মাড়িয়ে, বাঁশের জঙ্গলের ছায়ার ভিতর দিয়ে চলে গেল সে। নিবিড় জামরুল গাছটার নীচে একবার দাঁড়াল, তারপর পৌষের অন্ধকারের ভিতর অদৃশ্য হয়ে গেল।
তারপর তাকে আর আমি দেখি নি।
অনেকদিন পরে আজ আবার সে এল; মনপবনের নৌকায় চড়ে, নীলাম্বরী শাড়ি পরে, চিকন চুল ঝাড়তে-ঝাড়তে আবার সে এসে দাঁড়িয়েছে; মিষ্টি অশ্রুমাখা চোখ, ঠাণ্ডা নির্জন দুখানা হাত, ম্লান ঠোঁট, শাড়ির ম্লানিমা। সময় থেকে সময়ান্তর, নিরবচ্ছিন্ন, হায় প্রকৃতি, অন্ধকারে তার যাত্রা—।" (কারুবাসনা)
কারুবাসনা বোধহয় ১৯৩৩ সালে লেখা, বনলতা ১৯৩৫-এ বেরোয়। কবিতাটিতে বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে এই গদ্যাংশে বর্ণিত ঘটনাপরম্পরার বেশ মিল আছে। ফলে মনে হয় এই অংশটা ও কবিতাটি একই ঘটনার দুটি সাহিত্যরূপ, যাদের তাৎপর্য অবশ্যই আলাদা।
প্রতিদিনের রবিবারের ম্যাগাজিনটি ছাড়া আর কিছুই আমি পড়ি না। প্রেমসন্ধান ব্যর্থ হতে বাধ্য কারণ আধুনিক পৃথিবীতে প্রেম নেই। এখানেই জীবনানন্দ দাড়িদাদুকে ছাপিয়ে চলে যান। আধুনিক জীবনের সংকটকে তিনি যেমন সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলেন তা গভীর মনোনিবেশ দাবি করে। সমর সেনের থেকে এখানেই তিনি আলাদা।
পোচ্চিমবঙ্গে বামেদের বিপর্যয় আধিদৈবিক আর বিজেপির উত্থান আধিভৌতিক সমস্যা। মাঝখানে মা সারদা, বুঝতেই পারছেন, একটি আধ্যাত্মিক সমস্যা। :-)
যাইহোক, আঁতলামো নিয়ে এত কথা হচ্ছিল। এখানে অজস্র আঁতেলের মধ্যে (includes me too) ব্রতীন-দা'কে আমার একদম আঁতেল লাগেনা। কিছুদিন আগে এখানে তসলিমা নাসরীনের একটা কবিতা পোস্ট করেছিলাম। ব্রতীন-দা কয়েক মুহূর্তের মধ্যে 'বাঃ বেশ ভাল' লিখল। বেশীর ভাগের ঠোঁট ওলটানো উক্তি পেলাম। কেউ কেউ বিরক্তি প্রকাশ করল। তসলিমা নাসরীনকে এখন অধিকাংশের অপছন্দ। তাই তার কবিতা, লেখা তার বক্তব্য সবই। ভাল লেগে থাকলেও ওপেনলি কি আর বলা তাও এমন জায়গায় যেখানে মেজোরিটারিয়ান ভিউ অপছন্দের।
অনাতেলরা আঁতেলদের থেকে অনেস্ট হয়।
ছ্যাবলামো চলবে না কেন? সেই ফতোয়াই বা কে দিল আর দিলেই বা মানছে কে? কবিতার পাঠ একমাত্রিক নয় বলেই তা কবিতা। কিন্তু কেন নাটোরই, কেন বিদিশাই, কেন শ্রাবস্তীই সেটা বুঝতে গেলে তো সামান্য পরিশ্রম করতে হবে মানে সেটাকে নিছক ছ্যাবলামো দিয়ে তো আর রিপ্লেস করা যাবে না। অবিশ্যি কঠোর বিকল্পের পরিশ্রম নেই!
সুকুমার রায় সবাই যে হতে পারেন না। হাজার চেষ্টা করলেও পারেন না। জীবনানন্দ সেই বিরলতম কবি যিনি ইহজীবনে ১৭০টির বেশি কবিতা 'ছাপাতে' পারেননি। কাজেই তিনি ব্যতিক্রম এবং সেটাকে অনুভব করা উচিত। আম আর আমড়া এক নয় কোনও কালেই।